#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১৪
পানি টানি খাইয়ে প্রিয়ানের জ্ঞান ফিরানো হয়েছে।বেচারা এখনও হা করে তাকিয়ে আছে অথৈয়ের দিকে।বাকি বন্ধুরাও প্রচন্ড ঝটকা খেয়েছে।অথৈ মাথা নিচু করে বসে আছে।একটু আগেই সম্পূর্ণ ঘটনা বিস্তারিতভাবে বলেছে ও।নিরবতা প্রথমে আহিদই ভাঙলো,
‘ যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।এখন আর এইভাবে মুড অফ করে বসে থাকা লাগবে না।সবটা আনএক্সপেক্টেড ছিলো।তুই নিজেও এটা জানতি না যে তোর এইভাবে হুট করে বিয়ে হয়ে যাবে।’
অথৈ করুণ চোখে তাকালো আহিদের দিকে।বলল,
‘ কিন্তু তোদের কষ্ট দিয়ে ফেললাম তো আমি।আমাদের সবার বিয়ে নিয়েই আমাদের সব বন্ধুদের অনেক এক্সপেক্টেশন আছে।সেখানে আমি এইভাবে হুট করে বিয়ে করে তোদের সব আশায় পানি ঢেলে দিয়েছি।’
রিধি দীর্ঘশ্বাস ফেলল।অথৈকে বলল,
‘ আমরা কেউ কষ্ট পায়নি অথৈ।কষ্ট পেতাম কখন জানিস?যখন বিষয়টা এমন হতো যে তুই ইচ্ছে করে আমাদের না জানিয়ে বিয়ে করে নিয়েছিস।তাহলে রাগ করতাম মানে।প্রচুর রাগ করতাম। কিন্তু এখন ঘটনা উল্টো।তোর যে গতকাল বিয়ে হবে সেটা তো তুই নিজেই জানতি।এখানে আমরা আর কি করব?তাছাড়া বিষয়টা যে একেবারেই আমাদের জানাস নি এমন না কিন্তু।তুই তো আমাদের ফোন করে জানিয়ে ছিলিস যে তোকে কাল দেখতে আসবে।আর এর পরের ঘটনা সম্পূর্ণ তোর অজানা ছিলো।তাই আমরা কেউ কষ্ট পায়নি।’
অথৈ ঠোঁট হাসি ফুটে উঠল,
‘ সত্যি বলছিস?’
‘ একশ পার্সেন্ট।’
পিহু হেসে বলে উঠল,
‘ আর তাছাড়া আমাদের আশায় পানি ঢেলে দিয়েছিস সেটা তোকে কে বলল?তোর মাত্র বিয়ে হয়েছে।কিন্তু রুদ্রিক ভাইয়ারা তো আর তোকে এখনও উঠিয়ে নেয়নি।সেটার অনেক দেরি আছে এখনও।তখন তো নিশ্চয়ই ঢাকঢোল পিটিয়েই তোকে বউ বানিয়ে নিয়ে যাবে।তখন আমরা জম্পেশ মজা করব।একদম আহিদের কথা মতো একমাস আগে থেকেই তোর বাড়িতে এসে পরব।এখন বল আমরা কেন শুধু শুধু মন খারাপ করব?’
পিহুর কথায় অথৈ,রিধি,আহিদ হেসে দিলো।কিন্তু হঠাৎ ওদের সবার নজর প্রিয়ানের দিকে যায়।ও বেচারা এখনও একইভাবে বসে আছে।আর ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে অথৈয়ের দিকে।এইবার যেন রাগ উঠে গেল অথৈয়ের।আশ্চর্য! ওর এমন ব্যবহারের মানে কি?অথৈ উঠে গিয়ে মারল একধাক্কা প্রিয়ানকে।ধাক্কা খেয়ে প্রিয়ান মাঠে পরে গেল।এইবার যেন হুশ আসল প্রিয়ানের।মৃদ্যু আর্তনাদ করে উঠে বলে,
‘ ও মা গো! কোমড়টা আমার মনে হয় ভেঙেই ফেলেছে।’
‘ বেশ করেছি।তুই ওমন আহাম্মকের মতো তাকিয়েছিলিস কেন?’
‘ তো আমি কি করব?তুই যেই শক দিয়েছিস।সেটা আমার হজম করতে সময় লাগবে নাহ?এখন আমাকে ধরে উঠা প্লিজ।’
অথৈ হাত বাড়িয়ে দিলো প্রিয়ানের দিকে।প্রিয়ান অথৈয়ের হাত ধরে শয়তা’নি হাসি দিলো।তারপর অথৈকেও টেনে মাঠের মধ্যে ফেলে দিলো।প্রিয়ান উঠে বসল তারপর হু হা করে হেসে দিলো অথৈয়ের অবস্থা দেখে।এদিকে অথৈ দ্রুত উঠে বসল।তারপর রেগেমেগে তাকাল প্রিয়ানের দিকে।দাঁত খিচে বলল,
‘ প্রিয়ানের বাচ্চা তোকে আজ আমি খু’ন করে ফেলব।তুই শুধু দারা।’
অথৈয়ের মুখে এমন কথা শুনে প্রিয়ান উঠে দৌড় লাগালো।যেতে যেতে বলে,
‘ আমি শুধু প্রিয়ান।কারন প্রিয়ানের এখনও বাচ্চা হয়নি।’
‘ তুই শুধু দারা হা’**! তোকে যদি আমি মে’রে আলুভর্তা না বানাই।’
প্রিয়ান ছুটছে পিছে পিছে ছুটছে অথৈ।এদিকে রিধি,পিহু আর আহিদ হাসতে হাসতে শেষ।অনেক কষ্টে প্রিয়ানকে ধরতে পারল অথৈ।অতঃপর প্রিয়ানের পিঠে অথৈয়ের হাতের কয়েকটা কিল পরল।
______________
এদিকে রুদ্রিক,ইহান,সাফাত,নীল, মারিয়া,জেনি ওরা সবাই অথৈ আর প্রিয়ানের এমন ছোটাছুটি দেখছিল।রুদ্রিকের বেশ ভালোই লাগে অথৈয়ের এমন বন্ধুদের সাথে বাচ্চামো করতে দেখতে।এই কঠোর,রাগি মেয়েটা বন্ধুদের কাছে এলেই একদম বাচ্চাদের মতো হয়ে যায়।রুদ্রিকের মনটা বেশ হালকা লাগছে অথৈকে হাসিখুশি দেখতে।ওর মনটা খারাপ ছিলো।শুধু ভেবেছিলো মেয়েটাকে বেশি চাপ দিয়ে ফেলল না তো বিয়ের জন্যে?যে ও পরিবারের চাপে পরে বিয়ে করে নিয়েছে।কিন্তু এখন অথৈকে হাসিখুশি দেখে সেই মন খারাপটা নিমিষেই উড়ে গিয়েছে।আর তাছাড়া যতোই হোক রুদ্রিক অথৈকে ছাড়তে পারবে না। কখনই পারবে না।অথৈকে ভালোবাসে ও।প্রচন্ড রকম ভালোবাসে অথৈকে।আর এখন তো নিজের নামে করে নিয়েছে।শুধু অপেক্ষা নিজের ভালোবাসা দিয়ে অথৈর মনে ভালোবাসা সৃষ্টি করা।রুদ্রিকের ঠোঁটের কোণে মৃদ্যু হাসি ফুটে উঠল।
‘ ইহান তোর বোনটা একদম পুরাই বাচ্চা।দেখ বাচ্চাদের মতো কেমন করছে।অনেক কিউট লাগছে দেখতে।’ হঠাৎ সাফাত বলে উঠল।
সাফাতের কথাগুলো রুদ্রিকের কানে গিয়ে পৌছাতেই রুদ্রিকের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।রাগে হাতদুটো মুঠো করে নিলো।ইহান ভয়ার্ত চোখে রুদ্রিকের দিকে তাকিয়ে।রুদ্রিকের যেই রাগ।না জানি রাগের কারনে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে সাফাতকে ঘু’ষি টুষি মে’রে না বসে।তাহলে ক্যালেংকারি হয়ে যাবে।বন্ধুত্বের মাঝে ফাটল ধরে যাবে।যেটা ইহান কখনও চায়না।তবে ও আগ বাড়িয়ে কিছু বলতেও চায়না।রুদ্রিকের উপর সবটা ছেড়ে দিয়েছে।ও এটাও জানে রুদ্রিক এমন কিছুই করবে না যাতে ওদের বন্ধুত্বের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়।
এদিকে জেনি সাফাতের কথা শুনে বলল,
‘ এটাকে কোন এংগেলে তোর কিউট মনে হচ্ছে।সরি টু স্যে ইহান। বাট তোর বোনকে পুরো ইডিয়টদের মতো লাগছে।এতো বড়ো হয়েও কেউ এমন করে নাকি?’
ইহান রাগি চোখে তাকালো জেনির দিকে।দাঁত চিবিয়ে বলে,
‘ মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ জেনি।আর কি বললি আমার বোনকে ইডিয়টদের মতো লাগছে?বন্ধুদের সাথে হাসি,ঠাট্টা,আনন্দে মেতে থাকবে সবাই এটাই তো স্বাভাবিক তাই নাহ? নাকি তোর মানে বন্ধুত্ব এটা যে সারাদিন কার বয়ফ্রেন্ড কি করল?কার বয়ফ্রেন্ড কাকে কি গিফট করল?কে কার সাথে রুমডেট করল এইসব নিয়ে গোসিপ করা।এইসব করলেই ভালো তাই নাহ?তবে তুই ভুল।সাবধান করে দিলাম আর কোনোদিন আমার বোন সম্পর্কে এসব বলার আগে দশবার ভাববি।আর তুই আমার বন্ধু দেখে বেঁচে গেলি।আমার জায়গায় অথৈ হলে তোক এক থাপ্প’ড় দিয়ে বেহুশ করে ফেলত।’
‘ ইহান তুই তোর স্টুপিট বোনটার জন্যে আমাকে বলতে পারলি?’
রুদ্রিক এইবার রাগিস্বরে বলে উঠল,
‘ কে স্টুপিট সেটা সময়েই বলে দিবে।আর তাছাড়া তুই ইহানের বোনের সম্পর্কে কতোটুক জানিস?যে তাকে নিয়ে এইভাবে কটুক্তি করলি?ম্যানার্স শিখে নিস জেনি।আর না পারলে আমার কাছে আসিস।তোকে এমন স্পেশাল ক্লাস করে ম্যানার্স শিখিয়ে দিব।যে তুই তা আর জীবনেও ভুলতে পারবি না।’
লাস্ট কথাগুলো দাঁতেদাঁত চেপে বলল রুদ্রিক।এদিকে জেনি ন্যাকাস্বরে বলে উঠল,
‘ তুমিও আমার সাথে এমন করলে?আমি আম্মুর কাছে বলে দিবো দেখো।আমাকে এইভাবে সবার সামনে তুমি ধমকিয়েছ।’
‘ জাস্ট গো না?তুই মনে করিস তোর এই সস্তা থ্রেডে আরিহান রুদ্রিক মির্জা ভয় পেয়ে যাবে?যা ফুপির কাছে গিয়ে বিচার দে গিয়ে। পারলে আরও দু চারটা মিথ্যে বানিয়ে বলিস।’
রুদ্রিকের ধমকে জেনি ন্যাকা কান্নাজুড়ে দিল।রুদ্রিক এইবার জোড়ে ধমক দিলে ও সেখান থেকে চলে যায়।রুদ্রিক মাথার পিছনে হাত দিয়ে চুল খামছে ধরল।তারপর করুণ স্বরে ইহানকে বলল,
‘ সরি ইয়ার।তুই রাগ করিস না।আসলে ফুপির কারনে ওকে কিছু বলতে পারি না।বুঝিসই তো তাদের একমাত্র মেয়ে।কিছু বললে ও গিয়ে ফুপির কাছে বলে।আর ফুপি বাড়িতে এসে হইহুল্লোড় করে বাবা আর দাদুর মাথা খেয়ে ফেলে।এই কারনে ওকে কিছু বলি না আমি।’
ইহান মৃদ্যু হেসে বলে উঠল,
‘ ইটস ওকে।তুই যে অথৈয়ের সাপোর্টে এতোটুক বলেছিস এতেই আমি খুশি।আর বাকিটা আমি বুঝি।’
‘ ভুলে যাস না এখন এটা আমার দায়িত্ব।’
ইহান হেসে মাথা দুলালো।এদিকে রুদ্রিকের কথা শুনে সাফাত ভ্রু-কুচকে বলল,
‘ তোর দায়িত্ব মানে?কিসের দায়িত্বের কথা বলছিস?’
রুদ্রিক শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করল সাফাতের দিকে।শান্ত কণ্ঠে বলল,
‘ জেনি যেহেতু আমার কাজিন।আর ও অন্যায় করেছে এভাবে ইহানের বোনকে কটুক্তি করে।আর ইহান আমার বন্ধু।সেই হিসেবে প্রতিবাদ করাটা আমার দায়িত্ব।আর বাকিটা সময় হলেই বুঝবি। এখন আর কথা প্যাচিয়ে লাভ নেই।ক্লাসে যেতে হবে।’
কেউ আর বেশি ঘাটাঘাটি করল না।রুদ্রিকের কথা সবাই একে একে ক্লাসের দিকে চলে গেল।ইহান যেতে নিয়েও থেমে গেল।রুদ্রিককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,
‘ তুই যাবি নাহ?’
‘ আসছি তুই যা।’
‘ আচ্ছা,জলদি আসিস।’
‘হুঁ!’
ইহান চলে যেতেই রুদ্রিক মোবাইল বের করে একটা মেসেজ লিখল তারপর সেন্ড করে দিল একটা নাম্বারে।পর পর ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল।এরপর দ্রুত পায়ে ক্লাসের দিকে চলে গেল।
#চলবে_______________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।আজ বেশ ক্লান্ত আমি।এইজন্যে আর লিখা সম্ভব না।ছোটই মানিয়ে নিন কষ্ট করে।