মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না পর্ব ৩

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০৩
রুদ্রিককে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাফাত ওকে হালকা ধাক্কা দিলো।এতে যেন হুশ ফিরে আসে ওর।সাফাত জিজ্ঞেস করল,’ কিরে কি হয়েছে?এমন স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’

রুদ্রিক এদিক ওদিক তাকালো।ঘাড়ের পিছনের চুলগুলো খামছে ধরল।ভীতরের অস্থিরতাকে দমিয়ে নিলো। শক্ত কণ্ঠে বলে,’ নাহ কিছু হয়নি।এমনি বিরক্ত লাগছে।দাঁড়িয়ে থাকতে।’

রুদ্রিক জোড়ে শ্বাস নিলো।হঠাৎ কি হয়েছিলো ওর?এমন কেন হলো ওর সাথে?ও তো এতো দূর্বল সত্তার মানুষ নাহ।যে একটা মেয়ের দিকে এইভাবে হ্যাংলার মতো তাকিয়ে থাকবে।রুদ্রিক মাথা ঝাড়া দিয়ে চিন্তাটুক ফেলে দিলো।এটা হবার নয়।আরিহান রুদ্রিক মির্জা কখনই এতো দূর্বল না। কিন্তু আদৌ কি কখনও তা সম্ভব হয়?প্রেমের বসন্তের হাওয়া গিয়ে যার হৃদয়ে একবার দোলা দিয়ে যায়। তাহলে কি আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারে কেউ?সেই প্রেমের বসন্তের বাতাসে নিজেকেও ভাসিয়ে দিতে হয়।
________
প্রিয়ান দূর থেকে অথৈ আর রিধিকে দেখেই বলে উঠল,’ ওই দেখ দুই শাকচু’ন্নি আসছে।’

অথৈ আর রিধি আসতেই আহিদ বলে,’ এতোক্ষণ লাগলো তোদের আসতে?সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি।’

অথৈ রিধির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তাক করে বল,’ আমার কি দোষ?আমি তো তাড়াতাড়িই রেডি হয়ে গিয়েছিলাম।এই রিধি কু’ত্তিটা আমায় ধরে বেধে শাড়ি পরিয়েছে।’

পিহু উড়ন্ত চুমু ছুড়ে মারল রিধির দিকে।বলল,’ জান তোকে তো একশ একটা চুমু দেওয়া দরকার।এই গাধিটাকে শাড়ি পরিয়ে এনেছিস।’

অথৈ রাগি গলায় বলে,’ তুই এর পেছনে আছিস তা আমি ভালোভাবেই জানি।’

পিহু দাঁত কেলিয়ে হাসল।প্রিয়ান হাত দিয়ে বাতাস করার অভিনয় করে বলে,’ উফ সুন্দরীদের রূপের আগুনে তো ঝলসে যাচ্ছি।এতো গরম কেন তুই বলছিস আহিদ?এইবার নিজেই কারনটা দেখে নেহ।’

আহিদ অথৈ,রিধি,পিহুর দিকে তাকিয়ে শয়তা’নি হাসি হেসে বলল,’ কে যেন একটু আগে বলছিল আটা ময়দা মেখে শাকচু’ন্নি সেজে এসেছে ওরা।’

তিন রমনীগণ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাল প্রিয়ানের দিকে।প্রিয়ান থতমত খেয়ে গেল এমন দৃষ্টিতে। ভয়ার্ত কণ্ঠে বলে,’ এ..এভাবে তাকাচ্ছিস কেন আজব?’

রিধি ধরাম করে একটা মুষ্ট্যাঘাত করল প্রিয়ানের পিঠে।প্রিয়ান ‘ও মা গো।’ বলে চেঁচিয়ে উঠল।আহিদ ফিকফিক করে হেসে উঠল।প্রিয়ান ব্যথাতুর কণ্ঠে বলে উঠল,’ ওই চুন্নি।আমারে মারলি ক্যান?’

অথৈ মুখ ভেংচি মেরে বলে,’ তো?তোকে মারবে না তো কি চুমু খাবে?সা’লা হারামি।আমাদের পিঠ পিছনে আমাদের বদনাম করে বেড়াস।তোরে তো পঁচা পানিতে চুবিয়ে মা’রা উচিত।’

প্রিয়ান পিঠের ব্যথাযুক্ত জায়গায় জাত ঢলতে ঢলতে বলে,’ তোর কপালে এমন জামাই জুটব দেখিস যার কথায় তোর উঠ বস করতে হইবো।হা*গু মু’তু ধরলেও তার পারমিশন ছাড়া যাইতে পারবি না দেখিস।আর তুই রিধির বাচ্চা কিধি।তুই যেমনে আমার কিলাইলি ঠিক এমনেই তোর জামাইও তোরে উঠতে বসতে কিলাইবো।আর তুই ফকিন্নি ছেমরি তোর রূপচর্চা আর মেক-আপ করার অনেক শখ তাই নাহ?বিয়ার পর জামাইয়ের পেদানির চোটে তুই চুল আঁচড়ানোর ও সময় পাবি নাহ দেখিস।হাতের নখের তো খুব যত্ন তোর।এই দুই হাত দিয়া তুই সারাদিন তোর বাচ্চার হা’গু মু’তু সাফ করতে থাকবি।তুই আহিদ্দার বাচ্চা তোর বউ তোর মুখ বাড়াইয়া এমন ঘুষি দিবো দেখিস।তুই আর তোর আর তোর এই বিশ্রি দাঁতগুলো দেখাইয়া ছাগলের মতো হাসতে পারবি না।এইটা আমার মতো নম্র,ভদ্র ইনোসেন্ট একটা পোলার অভি’শাপ তোগো উপর। প্রিয়ান কা স্রাপ হ্যে ইয়ে স্রাপ তুম লোগো কে উপার।’

প্রিয়ানের অভি’শাপ দেওয়ার ধরণ দেখে সবাই হেসে দিলো।ওদের খিলখিল করা হাসিতে চারপাশ মুখোরিত হলো।
_________
রুদ্রিকদের গ্রুপের খুব কাছেই ছিলো অথৈদের গ্রুপ।ওদের এমন হাসির শব্দে না চাইতেও রুদ্রিকের দৃষ্টি সেদিকে চলে গেল।বাকিদেরও একই অবস্থা।সাফাত অথৈ’র হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।মুগ্ধতা বিরাজমান সেই দৃষ্টিতে।অন্যমনস্ক হয়ে মুখ ফসকে ও বলে উঠল,’ ল্যাভেন্ডার রঙের শাড়ি পরা মেয়েটা অনেক সুন্দর।তার হাসিটাও মারাত্মক।’

রুদ্রিকের কর্ণকুহরে কথাটা যেতেই সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো সাফাতের দিকে।বাকিদের দৃষ্টিও সাফাতের দিকে।সাফাত হকচকিয়ে গেল এভাবে সবাইকে ওর দিকে তাকাতে দেখে।মুখ ফসকে কথাটা বলে নিজেই বাজেভাবে ফেসে গিয়েছে বুঝতে পারলো ও।সাফাত আমতা আমতা করে বলে,’ ক…কি এ..ভাবে তাকানোর কি আছে আজব?মানুষ কি সুন্দর কে সুন্দর বলতে পারে নাহ?’

ইহান সাফাতের মাথায় থাপ্প’ড় দিয়ে বলে,’ তোর নজর সরিয়ে রাখ সালা।ও আমার বোন হয়।আমার বোনের দিকে তাকাবি নাহ।’

ইহানের এই বাক্যে যেন চারিদিকে বিস্ফো’রণ ঘটলো।অনিক অবাক কণ্ঠে বলে,’ কিহ?তোর বোন? কিন্তু ও এখানে কি করে?’

অনিকের এমন বোকা বোকা প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে রুদ্রিক বলল,’ এমন বোকার মতো কথা বলছিস কেন অনিক?যেহেতু ইহানের বোন এখানে এসেছে।সেহেতু সে এখানকার স্টুডেন্টই হবে তাই নাহ?’

অনিক ইহানের উদ্দেশ্যে বলে,’ কিরে এটা সত্যি?’
‘ হ্যা আমার বোন।এমনকি ওদের ফ্রেন্ডসরাও এই ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে।আর আল্লাহ্’র রহমতে সবাই একই ডিপার্টমেন্টেই আছে।আমার বোনটা যেই বন্ধু পাগল।একটা বন্ধুর থেকে আলাদা হয়ে গেলেই ওর আহাজারিতে আর টিকে থাকা যেতো নাহ।’

সবারই বেশ ভালো লাগল কথাটা শুনে।নীল বলল,’ তা যা বলেছিস।আমাদের অবস্থাই দেখ।রুদ্রিক আর তুই ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েও আমাদের কারনে ও সেখানে গেলি নাহ।’

ইহান লাফ দিয়ে রুদ্রিক আর নীলের কাধ জড়িয়ে ধরে বলে,’ কারন তোদের এক একটাকে ছাড়া আমরা সবাই অচঁল।’

ইহানের এমন কান্ডে রুদ্রিক বিরক্ত হয়ে ওকে ছাড়াতে চেষ্টা করতে লাগলো।আর বলছে,’ হোয়াট ইছ দিছ ইহান?কি শুরু করলি?তুই কি এখনও বাচ্চা?’

নীল ইহানের কাছ থেকে ছাড়া পাবার জন্যে ছোটুছুটি করতে করতে বলে,’ ওই সা’লা নাম আমার উপর থাইক্কা।হাতির মতো শরীর নিয়া আমার উপরে উঠলে কি আমি বাঁচমু?নাম,নাম বলছি।’

সাফাত আর অনিক একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসল।তারপর হৈ হৈ করে উঠল,’ আমরা বাদ যাবো কেন?আমরাও বাদ যাবো নাহ।’

তারপর তারাও ঝাপিয়ে পরল রুদ্রিক,ইহান আর নীলের উপর।পাঁচজন মিলে ধস্তাধস্তি শুরু করে দিল।
———
অথৈ নিজেদের থেকে কিছুটা দূরে নিজের ভাইকে তার বন্ধুদের সাথে হুরোহুরি করতে দেখে নাক মুখ কুচকে ফেলল।অসহ্য কণ্ঠে বলে,’ আম্মুর দাম’ড়া ছেলেটা আর ভালো হলো না।কেমন গরুর নতো করছে।’

রিধি অথৈকে বিরবির করতে দেখে বলে,’ কিরে কি এতো ফুসফুস করছিস?তোর আবার কি হলো?’

অথৈ রিধিকে ইশারায় ইহানকে দেখিয়ে বলল,’ তোর রাম ছাগলের কথা বলছি।’
রিধি ইহানকে দেখছিল।অথৈর কথা শুনে ভ্রু-কুচকে বলে,’ কিসের ছাগল মাগল বলছিস?সে তোর ভাই এটা ভুলে যাস কেন?সে ছাগল হলে তুইও ছাগলনি মনে রাখিস।’

অথৈ রেগে গেলো রিধির কথায়।ফুঁসে উঠে বলে,’ এই তুই কি বললি?আমি ছাগলনি?তুই আগে বল তুই কি আগে আমার বেস্টফ্রেন্ড না কি ওই হনুমানের বউ?’

পিহু নিজের চুল ঠিক করতে করতে অথৈ আর রিধির ঝগড়ার মাঝে ঢুকে গেল।দুজনের উদ্দেশ্যে বলল,’ ওই দেখ তো আমার চুল ঠিক আছে কিনা?’

অথৈ আর রিধি এইবার নিজেদের রাগ ঢাললো পিহুর উপর।অথৈ চেঁচিয়ে বলে,’ এই তুই থামবি?খালি এটা ঠিক আছে কিনা?ওটা ঠিক আছে কিনা শুরু করেছিস।সর সামনে দেখে। ‘
রিধিও একই সুরে বলে,’ হ্যা আর একবার এইগুলো জিজ্ঞেস করলে লাত্থি মেরে তোরে ড্রেনে ফেলে দিবো।’

প্রিয়ান আর আহিদ ওদের ঝগড়া দেখছে।কিছুই বলছে না ওদের।কারন এখন ওরা কিছু বলাই মানে যেচে বাঘের গুহায় যাওয়া।প্রিয়ান আহিদের কাধে হাত রেখে বলে,’ দেখেছিস?আমি বললেই দোষ?এখন তো নিজেরেই চুলোচুলি করছে।’

আহিদ চট করে সরে গেল।প্রিয়ান পরতে পরতে নিজেকে সামলে নিল।আহিদ বলল,’ ছেলেদের দোষ একটু বেশিই থাকে মেয়েদের কাছে।জেনেও কেন যাস ওদের সাথে লাগতে?
প্রিয়ান হাসতে হাসতে বলে,’ আরে বুঝিস নাহ?এরা ক্ষেপে যায় দেখেই তো ওদের ক্ষ্যাপাতে ভালো লাগে।’

এদিকে অথৈ,রিধি আর পিহু কথা কাটাকাটির মাঝে ব্যাঘাত ঘটে যায়।কারন ওদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে অনার্স তৃতীয় বর্ষের কিছু ছাত্ররা।অথৈ কপাল কুচকে তাকালো।কতোগুলো ছেলেকে এইভাবে ওদের সামনে সং সেঁজে দাঁড়িয়ে থাকতে ওর মেজাজ খারাপ হচ্ছে।অথৈ এমনিতেই ক্ষিপ্ত মেজাজের মানুষ।অল্পতেই রেগে মেগে ফায়ার হয়ে যায়।অথৈ শক্ত কণ্ঠে বলল,’ কি চাই?এইভাবে সামনে এসে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেন?’

অথৈ সামনে দাঁড়ানো লম্বা চওড়া ফর্সা করে ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে।অথৈর কথায় বাঁকা হেসে বলে,’ বাহ?প্রথম কথাতেই এতো তেজ?আই লাইক ইট!’
‘ কিন্তু আপনাদের আমাদের সামনে এইভাবে সং সেজে দাঁড়িয়ে থাকাটা আমার মোটেও পছন্দ হলো নাহ।আই ডোন্ট লাইক ইট এট ওল।’
‘ রূপের সাথে সাথে তোমার সাহসেরও প্রশংসা করতে হয় লাভলি লেইডি।’

অথৈ সারা শরীর রাগে কাঁপছে।ইচ্ছে করছে কষিয়ে থাপ্প’ড় মারতে এই বেয়াদপকে।অথৈ কিছু বলবে তার আগে আহিদ আর প্রিয়ান এসে দাঁড়ায় ওদের মাঝে।আহিদের রাগ লাগলেও নিজেকে যথাসম্ভব দমিয়ে রাখল।ভার্সিটির সিনিয়র এরা।কথাতে বুঝিয়ে শুনিয়ে দিতে পারলে অযথা ঝামেলা করে লাভ নেই।প্রিয়ান তেড়েমেড়ে কিছু বলবে তার আগে আহিদ ওকে থামিয়ে দিল।যথাসম্ভব ভদ্রতা বজায় রেখে বলল,’ কিছু কি হয়েছে ভাই? ‘

আহিদ আর প্রিয়ান এইভাবে সামনে আসায় ছেলেটা বিরক্ত হয়ে বলে,’ কিছু হয়নি।তোমরা সামনে থেকে সরে দাঁড়াও।’

আহিদ আর প্রিয়ান আরও আটশাট হয়ে দাঁড়ালো।অথৈদের আড়াল করে রাখল। তারপর আহিদ বলল,’ কিছু হয়নি তাহলে এখানে কেন এসেছেন?আর আমার ফ্রেন্ডসদের ডিস্টার্ব করছেন কেন?’
‘ ডিস্টার্ব করছি না কি করছি সেটা তোমাদের বলতে যাব কেন? দেখো ভালোই ভালোই বলছি আমার কাজ আমাকে করতে দেও।নাহলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে।’

আঙুল তুলে শাসালো ছেলেটা।প্রিয়ান এতোক্ষন আহিদের কারনে চুপ ছিলো।এখন তার নিজেকে সামলে রাখতে পারল নাহ।ক্রোধে লাল হয়ে বলল,’ কি খারাপ করবেন হ্যা?আমি বলছি জাস্ট পাঁচ মিনিট দিলাম এখান থেকে চলে যান।নয়তো আপনাদের জন্যে ভালো হবে নাহ।’

ছেলেটা প্রিয়ানের হুমকিতে রেগে গেল।হাত উঠিয়ে প্রিয়ানকে মারতে নিতেই ওর হাতটা কেউ ধরে ফেলল।সাথে সাথে কানে এসে বারি খেলো কারো পুরুষালি গম্ভীর কণ্ঠস্বর,’ এখানে কি হচ্ছে এসব?’

#চলবে________________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।সবার রেস্পন্স অনেক কম।ভালো লাগছে না বুঝি গল্পটা?তাহলে বলবেন।অতি দ্রুত শেষ করে দিবো।অযথা কাহিনি বড়ো করে লাভ নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here