#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২৭
রেস্টুরেন্টের ছাদের প্রায় একপাশ রুদ্রিক নিয়ে নিয়েছে।বেশ খোলামেলা ছাদটা।হরেকরকমের বাহারি ফুল গাছের ছড়াছড়ি ছাদটায়। সেই গাছে কয়েকটায় ফুলও ফুটেছে।এতে যেন ছাদের সৌন্দর্য আরও দ্বিগুন হয়ে গিয়েছে।দু টো ছোটো খাটো ওয়াটার ফলও আছে।সেখানে আবার ছোটো ছোটো মাছ ছাড়া হয়েছে।পাশেই আবার বড়ো একটা খাচায় নানান রঙের লাভ বার্ডসও আছে।ছাদের এদিক সেদিক চার পাঁচটা খরগোশকেও দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা যাচ্ছে।রুদ্রিক আর অথৈয়ের সব ফ্রেন্ডরা একসাথে বসেছে একটা টেবিলে।বিশাল বড়ো টেবিলটা।মূলত রুদ্রিক এই রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারকে বলে এই ব্যবস্থা করিয়েছে।এদিকে অথৈ খরশোশ দেখেই সেইগুলোর পেছনে লেগেছে। উদ্দেশ্য যে করেই হোক একটাকে ধরে আদর করবে।সাদা সাদা পশমযুক্ত ওই গা টা ছোঁয়ার জন্যে সে মরিয়া হয়ে গিয়েছে।রুদ্রিক চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে একধ্যানে তাকিয়ে আছে অথৈয়ের দিকে।মেয়েটা মাঝে মাঝে যে বাচ্চাদের মতো ব্যবহারগুলো করে তা রুদ্রিক বেশ উপভোগ করে।এই মেয়েটার যে আর কতো রূপ আছে কে জানে?রুদ্রিক যে আর কতোবার এই মেয়ের প্রেমে পরবে।রুদ্রিকের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।
অথৈ খরগোশের পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে হাপিয়ে উঠেছে।কিন্তু একটাও ধরতে পারেনি। অথৈ মুখ ফুলিয়ে রুদ্রিকের পাশে ধপ করে বসে পরল।অথৈয়ের মুখ ফুলানো দেখে হাসল রুদ্রিক।দৌড়াদৌড়ি করার ফলে অথৈয়ের মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়েছে।রুদ্রিক ট্যিশু দিয়ে অথৈয়ের ঘার্মাক্ত মুখশ্রীটা যত্নসহকারে মুছে দিল।এতোগুলো মানুষের সামনে রুদ্রিকের এহেন কান্ডে অথৈ লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিলো।মিনমিন করে বলে,’ কি করছেন?’
রুদ্রিক ভাবলেশহীনভাবে বলে,’ কি করছি?কিছুই করছি না।শুধু বউয়ের ঘর্মাক্ত মুখশ্রীটা মুছে দিলাম।আর এতো লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।চুমু তো আর খাইনি।এতো লজ্জা পেও না।তোমার ওই লজ্জামাখা মুখশ্রী দেখলে কিন্তু সত্যি চুমুটুমু খেয়ে ফেলতে পারি।তখন আমাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।’
ভয়ংকর লজ্জা পেয়ে অথৈ ঠিক কি বলবে ভাষা খুঁজে পেল না।এই লোকটার বিন্দুমাত্র লজ্জা নেই।আর মুখে লাগামও টানে না।কিসব বলে ফেলে।যা শুনে অথৈয়ের মন চায় একগ্লাস পানিতে ডুবে মরে যেতে।এইযে এখন মাত্র বলা লোকটার কথা শুনে অথৈয়ের কথা গলায় আটকে গিয়েছে।হৃদস্পন্দন তীব্র থেকে তীব্র হয়ে গিয়েছে।গাল দুটো লজ্জায় ফুলফেপে উঠেছে।অথৈয়ের গলা শুকিয়ে কাঠ।কোনোরকম হাত বাড়িয়ে একগ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো।হঠাৎ কানের কাছে রুদ্রিকের ফিসফাস করা কণ্ঠ শুনতে পেল,’ চুমু খাব?বলেছিলাম লজ্জা পেতে নাহ।বেষামাল হয়ে যাচ্ছি আমি।’
অথৈ টানটান হয়ে কাঠ হয়ে বসে রইলো।শরীর তার বরফের ন্যায় জমে গিয়েছে।শ্বাস আটকে গিয়েছে তার।
_____________
ইহানের ঠোঁটের কোণে মুচঁকি হাসি।বোনটা যে তার এতোটা সুখে শান্তিতে থাকবে সেটা দেখেই তার প্রাণ জুড়িয়ে গেল।
যাক,তার আর কোনো চিন্তা নেই।আজ রুদ্রিকের অথৈয়ের প্রতি কেয়ার দেখে ইহানের সকল দ্বিধা দ্বন্দ্ব দূর হয়ে গিয়েছে।ইহান তার দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।কিন্তু হঠাৎ করে চোখ আটকে যায়।ঠিক তার বরাবর বসা অপরপ্রান্তের রিধির দিকে।গাঢ়ো লাল রঙের কামিজ সেটে মেয়েটাকে একদম বউ বউ লাগছে।সুন্দর লাগছে অনেক দেখতে।নজর ফিরাতে পারছে না সে।ইদানিং তার সাথে যে কি হচ্ছে সে বুঝতেই পারছে না।এই মেয়েটাকে নিয়ে মনের মাঝে আলাদা একটা অনুভূতি কাজ করে তার।অদ্ভূত সব ইচ্ছে জাগে মনে।যার কোনো কূল কিনারা সে পাচ্ছে না।রিধির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কথাগুলো ভাবল ইহান।হঠাৎ তার কপাল জোড়া কুচকে এলো। আজকের রিধিকে তার অন্যরকম লাগছে।অন্যান্য দিন রিধির সাথে ওর দেখা হলে।বা ওরা কোনো কারনে একসাথে হলে।রিধি দু এক মিনিট বাদে বাদেই ইহানের দিকে তাকাতো।চোরা দৃষ্টিতে পরখ করে যেতো ওকে।ইহানের থেকে যতোই লুকোতে চেষ্টা করত মেয়েটা।ইহান তাকে দেখেই ফেলত।তবে ইহান কোনোদিন কিছু বলেনি।কিন্তু আজ একবারও তার দিকে তাকাচ্ছে না মেয়েটা।কি হয়েছে?সে তো কিছু করেনি রিধিকে।বা কোনো খারাপ কথাও বলেনি।তবে এমন কেন করছে ও?ভালো ভালো মনটা মুহূর্তেই খারাপ হয়ে গেলো ইহানের।কিন্তু রিধি তার দিকে তাকালেই কি বা না তাকালেই বা কি? তার কেন এতো কষ্ট লাগছে?বুকের বা পাশে এতো জ্বাপাপোড়া করছে।জানে না সে কিছুই জানে না।
____________
সিয়া বিরক্ত হয়ে বার বার অনিকের দিকে তাকাচ্ছে।এই ছেলের মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।বা মাথার তাড় ছিড়ে গিয়েছে বোধহয়।কিসব যে শুরু করে দিয়েছে।অনিক একেবারে সিয়ার গায়ের সাথে লেপ্টে বসেছে।এই নিয়ে সিয়া কয়েকবার বলেছে অনিককে সরে বসতে।কিন্তু সে সিয়ার কথা শুনেও না শোনার ভাণ ধরে একইভাবে বসে।এতোগুলো মানুষের সামনে অনিকের এমন কান্ডে সিয়ার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে।সহ্য করতে না পেরে এইবার দাঁতে দাঁত চিপে বলে,’ কি সমস্যা এমন করছেন কেন?’
সিয়ার এই কথাটুকু শোনার জন্যেই যেন মনে হয় অনিক অপেক্ষায় ছিলো।অনিক বলল,’ আবার আপনি করে বলছিস?এখন তুই কি চাচ্ছিস? তোর ওই সুন্দর ঠোঁটজোড়া দিয়ে যে আমায় বার বার আপনি বলে সম্বোধণ করছিস সেই ঠোঁটে আমি সবার সামনে চুমু খেয়ে বসি?চয়েজ ইজ ইয়্যোরস!’
সিয়া হা হয়ে গেল অনিকের কথায়।এই মাত্র এসব কি বলল অনিক তাকে?তাদের রিলেশন থাকাকালীন অবস্থাতেও তো অনিক এমন লাগামহীন কথাবার্তা বলেনি। তাহলে ইদানিং এই অনিকের কি হলো?আর কেনই বা এইভাবে হাত ধুয়ে ওর পিছনে পরেছে। সে তো বলেছিলো ওদের ব্রেকআপের দিন।অনিকের নাকি সিয়াকে পছন্দ হয় না।তার বিরক্ত লাগে সিয়াকে।তবে হঠাৎ কি এমন হলো যে অনিক এমন মরিয়া হয়ে উঠেছে।ওর পিছনে লেগেই থাকে।তবে কি অনিক আবারও তার মোহ পরেছে?সেই মোহে পরেই আবারও অনিক তার কাছে আসতে চাইছে?একসময় মোহ কেটে গেলে আবারও তাকে আগের মতো ছুড়ে ফেলে দিবে?কিন্তু সিয়া তো তা চাইছে।অনিকের দেওয়া সেই প্রথম কষ্টের রেশ এখনও সে ভুলতে পারেনি।প্রতিরাতে তার জন্যে চোখের পানি ফেলে সে বালিশ ভেজায়।আবারও সেই কষ্ট সিয়া পেতে চায় না।প্রথমবারের কষ্টে তো কোনোরকম সে বেঁচে যাবে।দ্বিতীয়বার আবার সেই কষ্ট পেলে সিয়া এইবার বাঁচতে পারবে না। কোনোমতেই বাঁচতে পারবে না।তাই অনিককে থামাতে হবে।তাকে বোঝাতে হবে।এইভাবে ওর পিছনে পরে থেকে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।যে করেই হোক অনিককে থামাতে হবে।আর আগাতে দেওয়া যাবে না।
সিয়া উঠে দাঁড়ালো নিজের চেয়ার থেকে।তারপর সোজা হেটে গিয়ে ইহানের কাছে গেল।ইহানকে উদ্দেশ্য করে বলে,’ ইহান তুই গিয়ে অনিকের পাশো বোস না গিয়ে।আমার ওইখানে আনকোম্ফোর্টেবাল ফিল হচ্ছে।প্লিজ ভাই যা না।’
ইহান সিয়ার এতো রিকুয়েস্ট ফেলতে পারল না।তাই উঠে গিয়ে বসল সিয়ার পাশে।আর সিয়া সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ইহানের জায়গায় বসে পরল।এদিকে সিয়ার এমন কাজে অনিকের রাগে মাথা ফেটে যাবার জোগাঢ়।সাহস কিভাবে হলো এই মেয়ের ওর পাশ থেকে উঠে চলে যাবার?কিভাবে পারল এইভাবে উঠে চলে যেতে?অনিকের সান্নিধ্য কি ওর এতোটাই খারাপ লাগছিলো?কই আগে রিলেশনে থাকাকালীন তো এমন করত না।উলটো অনিকের সাথে আরও চিপকে থাকত।এখন কি তার স্পর্শটাও এই মেয়ের সহ্য হয় না।এতোটা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে এই মেয়ের মধ্যে?অনিক দীর্ঘশ্বাস ফেলল।হঠাৎ করেই রাগটা পরে গেল তার।এটা ভেবেই যে দোষ তো তারই।কম অপমান করেনি ও সিয়াকে।তবে এতো সহজে কেন মেয়েটা মেনে নিবে?কঠিন শাস্তি পাওয়া দরকার তার।সেখানে তো এই মেয়ে তাকে কিছুই বলেনি।অনিকের নিজের প্রতি রাগ লাগছে।কেন সেদিন সিয়াকে ওভাবে অপমান করেছিলো সে? সিয়াকে ছেড়ে অন্য মেয়ের মোহে পরে গিয়েছিল সে।এই মেয়ের কথা শুনেই সেদিন সিয়ার সাথে বাজে ব্যবহার করে ফেলেছিলো।রাগে দুঃখে অনিকের মন চাচ্ছে এই সাততলা বিল্ডিংয়ের ছাঁদের উপর থেকে লাফ দিয়ে পরে মরে যেতে।হঠাৎ কাধে কারও হাতের ছোঁয়া পেয়ে সেদিকে তাকায় অনিক।অনিক তাকাতেই ইহান বলে উঠল,’ ধৈর্য ধর।ধৈর্য ধরলে মোয়া ফলে।মেয়েটাকে যে পরিমান কষ্ট তুই দিয়েছিস।তার কাছে এসব কিছু না।ইনফেক্ট সিয়া তো তোকে কিছু করেই নি।এমন কি কিছু বলেও নি।এখন একটাই উপায় বলব।নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা কর ওর অভিমান ভাঙাবার।যেই অভিমানের পাহাড় তুই নিজে সৃষ্ট করেছিস।তা ভালোবাসা দিয়ে ভেঙে ফেল।হাল ছাড়বি না কোনো।দরকার পরলে সারাজীবন চেষ্ট করবি।ভালোবাসলে তো মানুষ কতোকিছুই করে।তুইও হাল ছাড়িস না।’
অনিক ইহান কথা মনোযোগ দিয়ে শুনল।তার ঠোঁটের কোণে হাসি।এতোক্ষনের খারাপ লাগা দূর হয়ে গিয়েছে।এখন ইহানের কথাগুলোও বাজছে। যে ভাবেই হোক সিয়াকে সে মানিয়েই ছাড়বে।হাল ছাড়বে না কোনো।
#চলবে___________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন।হঠাৎ করেই আপনাদের রেস্পন্স কমে যাওয়ায় হতাশ আমি।গল্পটা কি ভালো লাগছে না আপনাদের?তাহলে বলবেন।
আর কয়েকদিন একটু ছোটো পর্ব পাবেন।কারন ঈদের আমেজ চারদিকে।ঘোরাঘুরি করছি ফ্যামিলির সাথে।তাই লিখার টাইম পাচ্ছি না।একটু মানিয়ে নিয়েন।