#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০৪
অনার্স ৩য় বর্ষের ছেলেদের এই গ্রুপটার মেইন লিডার হলো রাফি।ছেলেটা চরম লেভেলের বখা’টে।শুধু ও না ওর পুরো গ্যাং টাই এমন।ওদের কাজই হলো ভার্সিটির মেয়েদের জ্বালা’তন করা।আজও তাই করতে এসেছিল।কিন্তু এখন ভয়ে সিটিয়ে আছে।কারন সামনে রুদ্রিক আর ওর বন্ধুরা দাঁড়িয়ে আছে।রুদ্রিকের বাঘের ন্যায় ধারালো দৃষ্টি দেখেই ওর ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে।তাও নিজের ভয়টাকে প্রকাশ না করে রাফি বলে উঠল,’ রুদ্রিক ভাই আপনি এখানে কেন এসেছেন?আমাদের ঝামেলা আমরা মিটিয়ে নিতে পারব।আপনার এখানে হস্তক্ষেপ করার দরকার নেই।’
রুদ্রিক শান্ত কণ্ঠে বলে,’ সে তো দেখতেই পাচ্ছি আমি।যে কিভাবে তোরা ঝামেলাটা মিটাচ্ছিস।আগের ডোজটা বুঝি কম হয়ে গিয়েছিল?সমস্যা নেই এইবার ধরলে একেবারে বছর খানিক লাগবে তোর সেরে উঠতে।’
রুদ্রিকের শান্ত কণ্ঠের অপমানে রাফির রাফে ফেটে পরল।রাগি গলায় বলে,’ দেখেন আপনারা আমাদের সিনিয়র, তাই বলে যখন তখন আমাদের গায়ে হাত তুলতে পারবেন নাহ।এইবার কিন্তু ফলাফল ভালো হবে নাহ।আর কি এমন করছি আমরা?ভার্সিটিতে এসে একটু আকটু মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করলে কি এমন হয়?’
ইহান চরমভাবে রেগে গেল রাফির কথায়।রাফির দিকে তেড়ে যেতে যেতে বলে,’ রুদ্রিক তুই অযথা কথা বারাচ্ছিস কেন?এই সা’লাকে পিটিয়ে ওর ফ্লার্ট করার মজা আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।’
রুদ্রিক ইহানকে থামিয়ে দিলো।বলল,’ আহ,থাম ইহান।আজ ভার্সিটিতে একটা পোগ্রাম হচ্ছে।অযথা ঝামেলা করিস নাহ।’
সাফাত রুদ্রিকের কথা সম্মতি জানিয়ে বলে,’ হ্যা ইহান।থেমে যাহ।একে পরে দেখে নেওয়া যাবে।’
ইহান শান্ত করল নিজেকে।তারপর বোনের কাছে গেলো জলদি করে।অথৈর গালে হাত রেখে বলে,’ঠিক আছিস তুই?ওরা তো কিছু করেনি তাই নাহ?’
অথৈ শ্বাস ফেলে বলে,’ নাহ ভাইয়া। আমি ঠিক আছি।আর কার এতো সাহস যে জাফ্রিন অথৈকে কিছু করবে।’
বলেই অথৈ ফু দিয়ে সামনের চুলগুলো উড়িয়ে দিয়ে একটু ভাব নিলো।ইহান হেসে দিলো অথৈর কান্ডে।হেসে হেসেই বলে,’ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম শেওড়া গাছের শাক’চুন্নিকে কেউ কিছু করতে পারে নাকি।উলটো না তার ঘাড় মট’কে দিবে।’
ইহানের হাসি দেখে গাল ফোলালো অথৈ।ইহান অথৈর সেই ফুলো গাল ধরে টেনে দিলো।তারপর রিধি আর পিহুর উদ্দেশ্যে বলল,’ তোমরা ঠিক আছ?’
‘ হ্যা ভাইয়া ঠিক আছি।’ বলল পিহু আর রিধি।
রিধি ফের বিরবিরালো,’ ভাইয়ার গুষ্টি কিলা’ই।আপনি তো হবেন আমার ছাইয়া।’
ইহানের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগল।প্রিয়ান ওকে রিধিকে হাসতে দেখে ওর কানে কানে বলে,’ যেভাবে দেখছিস, মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে গিলে খেয়ে ফেলবি।ছিঃ মার্কা নজর তোর।’
রিধি প্রিয়ানের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাল।দাঁতেদাঁত চিপে বলে,’ আমার ইহানকে আমি চোখ দিয়ে গিলে খাবো নাকি ঠোঁটে চুমু খাবো তাতে তোর কি?’
রিধির এমন লাগামছাড়া কথায় শুনে প্রিয়ান ‘ আসতাগফিরুল্লাহ! আসতাগফিরুল্লাহ!’ বলতে বলতে সরে গেল।আহিদ,পিহু হাসতে হাসতে শেষ।
এদিকে রাফিদের এখনও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুদ্রিক শক্ত কণ্ঠে বলে,’ যাচ্ছিস না কেন?’
রাফি রুদ্রিকের এমন শক্ত কণ্ঠস্বর শুনে হকচকিয়ে গেল।তারপর চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়ালো।নীল রাগি গলায় বলে,’ এটাই লাস্ট ওয়ার্নিং তোদের জন্যে।নেক্সট টাইম এমন কিছু চোখে পরলে তোরা আর জীবনেও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবি কিনা সন্দেহ হবে।সো বি কেয়ারফুল।’
রুদ্রিক,সাফাত,নীল,অনিক হেটে চলে গেল ইহানের কাছে।রাফি ওদের দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,’ এই অপমানের বদলা তো আমি নিবই নিবো।আজ ওই মেয়ের কারনে আমাকে এইভাবে অপমান অপদস্ত হতে হলো।ছাড়বো না ওই মেয়েকে।সাথে ওর বন্ধুদেরও।আর রুদ্রিকদের কথা নাহয় বাদই দিলাম।ওদেরও ছাড়ব নাহ।’
———
ইহান কথা বলছিল মানে কথা বলছিলো বললে ভুল হবে।অথৈকে রাগাচ্ছিলো নানান কথা বলে।আর অথৈ রেগেও যাচ্ছে ইহানের কথায়।সাফাত অথৈর রাগি মুখশ্রী দেখে হেসে এগিয়ে গিয়ে বলে,’ কিরে ইহান তোর বোন আর তার ফ্রেন্ডসদের সাথে আমাদের পরিচয় করাবি নাহ?’
অথৈর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে সাফাত।সাফাতকে দেখে অনিক রুদ্রিকের কানে কানে বলে,’ এই সালা ইহানের বোনের উপর ফুললি ক্রাশ খেয়ে উলটে গিয়েছে।’
রুদ্রিক অনিকের কথা শুনে সাফাতের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকল।
ইহান সাফাতের কথা শুনে বলে,’ আরে কি বলিস না যে তুই।পরিচয় তো অবশ্যই করাবো।এখন যেহেতু ওরা এই ভার্সিটিতে পড়ালেখা করে। তাহলে তোদের সাথে পরিচয় হতেই হবে।ভালোমন্দের কথা বলা যায় নাহ।আমি না থাকলে তোদের কাছেই তো আসবে সাহায্যের জন্যে।’
ইহান এইবার অথৈ,রিধি,পিহু,প্রিয়ান,আর আহিদের পরিচয় করিয়ে দিলো।সাফাত পরিচয় শেষ হতেই সাফাত মুচকি হেসে বলে,’ হাই,আমি সাফাত।তোমাদের সাথে পরিচয় হয়ে ভালো লাগল।’
ওরা সবাই ধন্যবাদ জানালো।বলল,’ আমাদের ও ভালো লাগল।’
নীল এগিয়ে এসে বলে,’ আমি নীল।ভালো লাগল পরিচয় হয়ে।’
অনিক বলল,’ আমি অনিক।নাইস টু মিট ইউ গাইস।’
রুদ্রিক চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।নীল তা দেখে বলে,’ কিরে তুইও নিজের নাম বল?নাহলে ওরা তোকে চিনবে কিভাবে?’
রুদ্রিক তাকিয়ে ছিলো অথৈ আর সাফাতের দিকে।সাফাত নানানভাবে অথৈর সাথে কথা বলে ভাব জমাতে চাচ্ছে।বিরক্ত লাগছে রুদ্রিকের।সাফাতের সাথে অথৈর এইভাবে হেসে হেসে কথা বলা ওর সহ্য হচ্ছে না একদম।কিন্তু কেন ওর এমন লাগছে?ওর বন্ধু একজনকে পছন্দ করেছে।তার পছন্দের মানুষের সাথে সে কথা বলতে চাইবে এটাই তো স্বাভাবিক তাই নাহ?তাহলে ঠিক কি কারনে ওর এতো রাগ হচ্ছে?জানা নেই রুদ্রিকের।নিজের উপরেই নিজে বিরক্ত।নীলের কথা শুনে সে নড়েচড়ে দাঁড়ালো।গম্ভীর স্বরে বলল,’ আমি আরিহান রুদ্রিক।ভার্সিটিতে কোনো সমস্যা বা ঝামেলায় পরলে। অথবা কেউ তোমাদের বিরক্ত করলে আমার অথবা আমার বন্ধুদের কাছে এসে জানাবে।বাকিটা আমরা সামলে নিব।’
থেমে গিয়ে বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলে,’ আমি যাচ্ছি।তোদের হাসি ঠাট্টা শেষ হলে চলে আসিস।পোগ্রাম শুরু হতে যাচ্ছে।’
এই বলেই আরও একপলক সাফাত আর অথৈকে দেখে হনহন করে চলে গেল।
অথৈ পিহুর কানে কানে বলে,’ ইস,দেখ ছেলের কি এটিটিউট।মনে হচ্ছে সে একেবারে কাজ করে উলটে ফেলে দিচ্ছে।এমন একটা ভাব করল।’
পিহু অথৈর কথায় মাছি তারানোর মতো করে বলে,’ হুর,কি বলিস এসব?রুদ্রিক ভাইয়াটা কি জোস।তাকে দেখতে পুরো চকোলেট বয়দের মতো লাগে।আর তার কথাবার্তা চালচলন তো পুরাই জোস।’
‘ হয়েছে থাম তুই।তোর কাছে কিছু বলা আর নিজের কপাল নিজেই দেয়ালে ঠুকা একই ব্যাপার।’
ইহান অথৈদের উদ্দেশ্যে বলে,’ অথৈ তুই আর তোর ফ্রেন্ডসরা আমাদের সাথে আয়।আমাদের সাথে থাকলে কোনো সমস্যা হবে নাহ।’
অথৈ না বলতে যাবে তার আগেই রিধি ওর হাত খামছে ধরল।ব্যথা পেয়ে রাগি চোখে তাকাল অথৈ।রিধি জিভে কামড় দিয়ে হাত ছেড়ে দিল।কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলতে লাগল,’ সরি দোস্ত।আসলে ইহান উনাদের সাথে যেতে বলছে।কিন্তু তুই মানা কর দিতি আমি জানি।এইজন্যেই থামালাম।প্লিজ দোস্ত মানা করিস নাহ।দেখ তোর ভাইয়ের সাথে যতো বেশি সময় থাকবো ততই তো ভালো আমাদের জন্যে তাই নাহ?’
অথৈ শ্বাস ফেলে বলে,’ ঠিক আছে বুঝলাম।কিন্তু আমার হাতের এই বেহাল দশা বানানোর জন্যে তোকে আমি ছারছি নাহ।’
‘ আচ্ছা সেটা নাহয় পরে দেখা যাবে।এখন চল।’
প্রিয়ান এসে ওদের মাঝে দাঁড়িয়ে গেল।বলল ‘ এই তোরা সারাদিন কি এতো ফাসুরফুসুর করিস?আমরা যে এখানে দাঁড়িয়ে আছি সেটাও তোদের চোখে পরে নাহ?’
পিহু দুম করে কিল বসিয়ে দিলো প্রিয়ানের পিঠে।প্রিয়ান ব্যথা পেয়ে একলাফে আহিদের কাছে চলে গেল।কাঁদো কণ্ঠে বলে,’ দোস্ত মারল।’
আহিদ হেসে বলে,’ একদম ঠিক আছে।শুধু শুধু বা হাত ঢুকাতে কেন গেলি?’
‘ তাই বলে এইভাবে আমার মতো একটা আলাভোলা মাসুম ছেলের উপর দুমদাম কিল মেরে অত্যাচার করবে।’
প্রিয়ানের কথা অথৈ বুকে দুহাত ভাজ করে হেসে বলে,’ তোর জন্মই হয়েছে আমাদের মার খাওয়ার জন্যে।’
সবাই হেসে দিলো।অতঃপর ইহান তারা দিতেই ওরা চলল আরেক ইহানদের সাথে।
#চলবে______________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।আপনাদের মূল্যবান মন্তব্য আমায় লিখার অনুপ্রেরণা দেয়।