#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪৪
সবাই হাপাচ্ছে।এতোগুলো সিড়ি।তার উপর আবার বৃষ্টি নেমেছে।ফলে সিড়িগুলো বেশ পিচ্ছিল হয়ে আছে।সবাই বেশ সাবধানে পা ফেলছে।রুদ্রিক শক্ত করে অথৈয়ের হাত ধরে আছে।ওর মনটা বেশ ছটফট করছে।কিন্তু অথৈয়ের হাসি মুখখানা দেখে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।অথৈ চারপাশ দেখছে।আবার হাত দিয়ে রুদ্রিককে এটা সেটা দেখাচ্ছে।সেখানে কিছুদূর পর পর কয়েকটা বাড়ি ঘর দেখা যাচ্ছে।বাড়িঘর গুলো বেশ সুন্দর।এই গ্রামটা অনেক নিরিবিলি।আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।সবারই বেশ ভালো লাগছে।প্রাকৃতির মাঝ দিয়ে হাটবে তাও আবার প্রিয় মানুষগুলোর সাথে।আবার এর মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে।অবশ্য সবাই জানতো বৃষ্টি হবে।এইজন্যে সবাই নিজেদের জন্যে রেইনকোট ক্যারি করে এনেছিলো।বৃষ্টি শুরু হবার সাথে সাথেই তা গায়ে জড়িয়ে নিয়েছে।রুদ্রিক ওর ভাড়া করা লোকটাকে জিজ্ঞেস করল আর কতোক্ষন লাগবে?লোকটা জানালো এইতো বেশি না আর শখানেক সিড়ি আছে।সব শুনে মারিয়া স্তব্ধ হয়ে হা করে রইলো।ওকে এমন থেমে যেতে দেখে নীল বলে,’ কি হলো?থামলে কেন?’
মারিয়া অবাক হওয়া অবস্থাতেই বলে,’ এই লোক বলে কিনা আরও শ’খানেক সিড়ি আছে।মানে সিরিয়াসলি?নামার সময়েই এতোটা কষ্ট হচ্ছে।তাহলে আবার উপরে উঠার সময় তো মনে হয় জীবন বের হয়ে যাবে।তার উপর আবার বৃষ্টি।সিড়িগুলো যেই পিচ্ছিল হয়ে আছে।’
নীল মারিয়ার হাত ধরে বলে,’ টেন্সন করছ কেন জান?আমি আছি না?তুমি ক্লান্ত হয়ে গেলে আমি তোমাকে কোলে তুলে নিবো ঠিক আছে?’
মারিয়া ঝটকা মেরে নীলের হাত সরিয়ে বলে,’ ফাউ কথা আমার সাথে একদম বলবে না।তুমি আমাকে কোলে তুলবে।মানে কতো সহজ তাই নাহ?এই বৃষ্টির মধ্যে, পিচ্ছিল সিড়িগুলো বেয়ে তুমি আমাকে কোলে নিয়ে উপরে উঠবে কিভাবে?’
নীল আবারও মারিয়ার হাত ধরল,’ আরে চলো তো তুমি।আমি পারব।ওতো টেন্সন করো না।’
এই বলে যেই না নীল এককদম সিড়িতে দিলো।ওমনি স্লিপ কেটে পরে যেতে নিলো।মারিয়া সাথে সাথে দুহাতে নীলকে আঁকড়ে ধরে।সাফাতও হ্যাল্প করে ওকে।নাহলে নীলের মতো ওমন হৃষ্টপুষ্ট ছেলেকে কি মারিয়া একা সামলাতে পারতো।সবাই বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।সাফাত ধরে নীলকে সোজা করে দাঁড় করালো।নীল সবার দিকে তাকিয়ে বোকার মতো হাসি দিলো।বলে,’ আরে চিন্তা করার কিছু নেই।আমি ঠিক আছি।’
মারিয়া রাগে চিরবিরিয়ে বলে,’ নিজেই নিজেকে সামলাতে পারছে না।আবার বলে কিনা আমাকে কোলে নিয়ে এই সিড়ি পার হবে।ধান্ধাবাজ কোথাকার।’
মারিয়া একাই হনহন করে সিড়ি দিয়ে নেমে যেতে লাগল।নীল নিজেকে সামলে নিয়ে মারিয়ার পিছন পিছন যেতে লাগল।এদিকে এই দুটোর কান্ড দেখে সবাই হেসে কুটিকুটি।রুদ্রিক অথৈয়ের হাত ধরে আছে।ইহান রিধির হাত ধরে আছে।নীল গিয়ে মারিয়ার হাত আগলে নিয়েছে।প্রিয়ান পিহুর হাত ধরে রেখেছে।একা আছে শুধু আহি,সাফাত,সিয়া আর অনিক।আহিদ তো কষ্টে শেষ।আজ যদি মাইশা এখানে থাকতো।তাহলে ও-ওতো এইভাবে মাইশার হাত ধরে এই দূর্গম রাস্তা পারি দিতো।ইশ,মেয়েটাকে বড্ড মিস করছে।ওই মায়া মায়া মুখটা,সুন্দর কোমড় অব্দি কোকড়ানো চুলগুলো।ওই ডাগর ডাগর আঁখিজোড়া।স্নিগ্ধ হাসি ছড়ানো গোলাপি ঠোঁটজোড়া।সব সবকিছু আহিদ বড্ড মিস করছে।মেয়েটার সাথে দু তিনদিন যাবত কথা হচ্ছে না।আচ্ছা? ও যেভাবে মাইশাকে মিস করছে।মাইশাও কি সেভাবে ওকে মিস করছে?নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হলো আহিদ।ও তো মাইশাকে ভালোবাসে।তাই মাইশাকে মিস করছে।কিন্তু মাইশা তো আর ওকে ভালোবাসে।তাহলে মিস করবে কিভাবে?কিন্তু ও তো মেয়েটার সাথে বন্ধুত্ব করেছিলো।তবে কেন একটাবারও খোঁজ নিলো না ওর?হঠাৎ আহিদের খেয়াল হলো।আরে মাইশার ফোন নাম্বার তো নিয়েছিলো।কিন্তু ওর ফোন নাম্বার মাইশাকে দেয়নি।তাহলে মেয়েটা ওকে ফোন দিবে কিভাবে?নিজের মাথায় নিজেই চাপড় মারল আহিদ।না এখান থেকে কটেজে ফিরতেই মাইশাকে একবার ফোন দিবে।মেয়েটার সাথে কথা না বলে আর থাকা যাবে না।মেয়েটার ওই মিষ্টি কণ্ঠটা শুনতে পেলে তবেই না এই অস্থির হৃদয়টা শান্ত হবে।আহিদ নিজের মনে এসব ভেবে মুচঁকি হাসল।
সিয়া একা একাই এই সিড়িগুলো অতিক্রম করছে।একটু সমস্যা হচ্ছে।কিন্তু ওতোটাও খারাপ না।অনিক মন চাইছে গিয়ে সিয়ার হাতটা শক্ত করে ধরতে।ওকে আঁকড়ে ধরে নিজের মাঝে আগলে নিয়ে এই সিড়িগুলো অতিক্রম করতে।কিন্তু ও চেয়েও তা পারছে না।পারছে না গিয়ে মেয়েটাকে বলতে,’ এই সিয়া নেহ।আমার হাতটা শক্ত করে ধর তো।’
ওর কারনেই তো আজ ওদের মাঝে এতো দুরূত্ব।আর পাঁচটা ভালোবাসার মানুষদের মতো ওরা এই প্রকৃতিকে অনুভব করতে পারছে না।অনিকের বুকে তীব্র দহন হচ্ছে।অসহনীয় দহন।এই দহনের জ্বালা যে ও আর সহ্য করতে পারছে না।কবে মিটবে ওদের এই দুরূত্ব।কবে আবার আগের মতো… এখানে ভাবতেই থেমে যায় অনিক।অনিক বিরবির করল,’ আগের মতো?নাহ নাহ,আগের মতো আর কিছুই হবে না।আমাদের ভালোবাসা হবে।কিন্তু আগের মতো না।আগে তো ভালোবাসতো না।ওটা তো শুধু অভিনয় ছিলো।কিন্তু এখন! এখন আমি সিয়াকে অনেক ভালোবাসি।আমাদের মাঝে সবকিছু নতুনভাবে শুরু করব আমি।নতুন নতুন ভালোবাসাময় স্মৃতি তৈরি করবো।সেই স্মৃতিগুলো এতোটাই মধুর হবে যে। তুই আমার দেওয়া পুরনো কষ্টগুলো সব ভুলে যাবি।’
কিন্তু মন তো বলছে অন্যকিছু।আদৌ কি ওদের সম্পর্কটা ঠিক হবে?কোনোদিন কি অনিক পাবে সিয়ার মন জয় করতে?সিয়া কি পারবে সব ভুলে গিয়ে আবার অনিকের হয়ে যেতে?উত্তর আসল,অনিক আর হবে না এসব।সব শেষ।তুই নিজ হাতে সব শেষ করেছিস।আর কিছু ঠিক হবে না।কিছুই ঠিক হবে না।অনিকের চোখ জ্বালা করছে।কান্না পাচ্ছে প্রচুর।কিন্তু ছেলে মানুষ যে চাইলেও কাঁদতে পারে নাহ।
এদিকে সিয়া আনমনা হয়ে হাটছে।সবাই কি সুন্দর একে-অপরের হাত ধরে হাটছে।কিন্তু ওর হাতটা আঁকড়ে ধরার মতো কেউ নেই।কেউ-ই নেই।দীর্ঘশ্বাস ফেলল সিয়া।দরকার নেই ওর কারো।চায়না সে কারো হাতের ভড়সা।যেই হাত ওকে আগলে রাখার ভড়সা দিয়েও মাঝ পথে ছেড়ে চলে যায়।ও একাই পারবে ওর জীবনের সকল দূর্গম পথ পারি দিতে।দেখিয়ে দিবে যে জীবনের চলার পথে ওর কাউকে প্রয়োজন নেই।এসব এসব ভাবনায় এতোটাই বিভোর ছিলো সিয়া।সে অসাবধানতা বশত সিড়িতে এমনভাবে পা ফেলে যে ও পিছলে পরে যেতে নেয়। সিয়া ভয়ে মৃদ্যু চিৎকার করে উঠে।অনিকও আঁতকে উঠে।সিয়াকে যে ও গিয়ে ধরবে সেই সময়টুকুও নেই।এদিকে সিয়া ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে।হঠাৎ একটা শক্তপোক্ত হাত এসে ওর নরম হাতটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে।ওকে পরে যাওয়া থেকে বাচিয়ে নেয়।সিয়া পিটপিট নজরে তাকায় চোখ মেলে তাকায়।মূলত ব্যক্তিটি ওর পিছনে।আর সিয়া ছিলো ওর সামনে।সিয়া পরে যেতে নিতেই ওই ব্যক্তিটি সেইভাবেই ওর হাত ধরে ফেলে।সিয়া সামনের দিকেই উবু হয়ে আছে।চোখ মেলতেই শুকনো ঢোক গিললো সিয়া।আজ এখান থেকে স্লিপ কেটে পরলে নির্ঘাত হাড্ডি-গুড্ডি আস্ত থাকতো নাহ।আকস্মিক সিয়া হাতে টান অনুভব করে।এক ঝটকায় টান দিয়ে সিয়াকে সেই ব্যক্তিটি ওকে দাঁড় করিয়ে দেয়।সিয়া এতে ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছিলো।যখন অনুভব করল সব ঠিক আছে।তখন চোখ মেলে সামনে তাকায়।তাকাতেই দেখতে পায় ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটা ছেলে।গায়ে লম্বা কালো রেইন কোট জড়ানো,চোখে সানগ্লাস পরা,সেই সাথে মুখে মাস্ক লাগানো।এই বৃষ্টির মধ্যে চোখে সানগ্লাস লাগায় কে?আজব ব্যাপার-স্যাপার।এমন অদ্ভূত লোক সিয়া ওর লাইফে দেখেনি।এদিকে লোকটা সিয়ার হাত ছেড়ে দিলো।গলা খাকারি দিয়ে কথা বলল।কণ্ঠে তার স্পষ্ট বিরক্তি,’ মেয়ে মানুষ মানেই ঝামেলা।এমন দূর্গম পথে হাটতে পারবে না জেনেও সেখানে নেচে-কুঁদে চলে আসে।জাস্ট ডিসগাস্টিং।’
সিয়া হা হয়ে গেলো কথাটা শুনে।লোকটা মাস্ক পরে আছে।আর সিয়া লোকটার অনেকটাই কাছে।তাই কথাটা সিয়াই শুনতে পেয়েছে।আর কেউ শোনেনি।লোকটা ওকে ডিসগাস্টিং বলল? এদিকে হা করে থাকা সিয়াকে রেখে লোকটা গমগম করতে করতে চলে গেলো।অনিক দ্রুত পায়ে এসে দাঁড়িয়েছে সিয়ার কাছে।অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে,’ আর ইউ ওকে সিয়া?ব্যথা পেয়েছিস কোথাও?’
অনিক সিয়াকে ধরার জন্যে হাত বাড়াতে নিতেই সিয়া পিছিয়ে যায়।অনিকের এমন ব্যবহার সিয়ার সহ্য হয় না।একদম হয় না।এতো আদিক্ষেতা ওর ভালো লাগে না।এদিকে সিয়ার এমন পিছানো দেখে অনিকের মনটা যেন ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেলো।মেয়েটা এখন ওকে এতোটাই ঘৃনা করে যে।এখন ওর ছোঁয়াটুকুও সহ্য করতে পারছে নাহ?অনিকের চোখে থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে পরল।আর তা বৃষ্টির পানির ফোঁটার সাথেই মিশে গেলো।অনিকও সামনের দিকে পা বাড়ালো।বুকের এই তীব্র যন্ত্রণা সে এখন কিভাবে সইবে? এদিকে সবাই এসে সিয়াকে জিজ্ঞেস করল সিয়া ঠিক আছে কিনা।সিয়া জানালো সে ঠিক আছে।সাফাত বলে উঠল,’ সিয়া তুই আমার হাত ধর।আবার যদি কোনো কিছু হয়ে যায়।ভাগ্য ভালো লোকটা তোকে ধরে ফেলেছে।নাহলে আজ কি যে হতো।’
সাফাত হাত এগিয়ে দিতেই সিয়া সাফাতের হাত ধরে।এদিকে সিয়া মনে মনে ভাবছে।আসলেই তো সেই লোকটা যদি ওর হাত না ধরতো।আজ ওর সাথে অনেক বড়ো একটা দূর্ঘটনা ঘটে যেতো।লোকটা ওর এতো বড়ো উপকার করল।আর ও কিনা অকৃতজ্ঞ মানুষদের মতো একটা ধন্যবাদও দিলো না।না লোকটাকে খুঁজে বের করতে হবে।একটা ধন্যবাদ তো সে প্রাপ্য।
এদিকে আরহা দূর থেকে সিয়া আর সাফাতের দিকে তাকিয়ে আছে।তার কেন যেন অনেক খারাপ লাগছে।সাফাতের হাতে সিয়ার হাত দেখে।সাফাত কেনো ওর হাতটা ধরলো না।কষ্টে আরহার বুক ভাড় হয়ে আসল।মনকে বার বার বোঝালো।তারা বন্ধু।আর বন্ধু বন্ধুর হাত ধরতেই পারে।এতে এমন কষ্ট পাবার কি আছে?এটা তো সাধারণ একটা বিষয়।কিন্তু বলে না ভালোবাসার ক্ষেত্রে মন বড়ো বেহায়া হয়ে যায়।সিয়ার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে
#চলবে__________
আমি ভীষণরকম দুঃখিত।দুদিন পর এইতো একটু আগে কারেন্ট এসেছে।আজ তারপরেই ফটাফট এইটুকু লিখে ফেলেছি।গরমের কারনে প্রচুর অসুস্থ হয়ে পরেছি।সারা শরীরে র্যাসেছ উঠে ভড়ে গিয়েছে।ভুলগুলো ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।ছোটো হওয়ার জন্যে দুঃখিত।সময় পেলে আমি পুষিয়ে দিবো।