#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৫০
সিয়া মুখে হাত চিপে কাঁদছে।আর অনিক দূর্বল নয়নে তার প্রেয়সীর দিকে তাকিয়ে আছে।সিয়ার কান্নারত মুখখানা আর হৃদয়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করছে।মেয়েটা এভাবে কাঁদছে কেন?অনিকের খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে যে,সিয়া তুই কাঁদিস না।আমি একদম ঠিক আছি।
কিন্তু চাইলেও বলতে পারছে না।কারন সে তো কথা বলতে পারছে না।অনিক অনেক কষ্টে হাতের ইশারায় সিয়াকে ওর কাছে যেতে বলল।চোখে তার আকুলতা ভড়পুর।অনিকের ইশারা পেতেই সিয়া গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় অনিকের দিকে।টুলটা টেনে বসে পরল সেখানে।অনিক চোখের ইশারায় ওকে কাঁদতে বারন করল।সিয়া অনিকের হাতটা স্পর্শ করল।ধুকড়ে কেঁদে উঠে বলে,’ কেন নিজেকে এতো কষ্ট দিলে?তোমার ভালোর জন্যেই তো আমি সরে গিয়েছিলাম।তবে আজ কেন তোমার এই অবস্থা অনিক।আমি সহ্য করতে পারছি না।’
অনিকের কষ্ট হলেও হাতটা উঠিয়ে সিয়ার চোখের পানি মুছে দিলো।চোখের ইশারায় বুঝালো যে ও ঠিক আছে।
সিয়া ভেজা কণ্ঠে বলে,’ বেশি প্রেসার নিও না।তোমার এখন রেস্টের প্রয়োজন।এখন ঘুমাও।’
অনিকের বেশ ভালো লাগছে।সেই আগের মতো সিয়ার মুখে ওকে তুমি করে ডাকাটা।এই ডাকটা বড্ড মিস করছিলো অনিক।তবে কি সিয়া ওকে ক্ষমা করে দিয়েছে?মেনে নিয়েছে ওকে?অনিক অস্থির হয়ে উঠল।প্রশ্ন করতে চাইলো অনেক কিছু।কিন্তু পারলো না।এর মধ্যেই ডাক্তার আসল।অনিককে মেডিসিন দিবে।আর ঘুমের ইঞ্জেকশন দিবে।ঘুমালে অনিক দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।সিয়া উঠে দাঁড়ালো।যাওয়ার জন্যে পা বাড়ালে অনিক সিয়ার হাত ধরে আটকে দেয়।সিয়া পিছনে ফিরে তাকায় অনিকের দিকে।অনিকের ব্যাকুলতা বুঝতে পারে।হালকা হেসে বলে,’ কোথাও যাবো না আমি আর।কোনোদিন যাবো না।এখানেই আছি,আর সারাজীবন থাকব।তুমি ঘুমাও।নিশ্চিন্তে ঘুমাও।’
অনিক যেন খুশিতে ফেটে পরল।সিয়ার এইটুকু কথাতেই যেন ওর সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলো।সিয়া অনিককে শান্ত করে বাহিরে চলে গেলো।আর ডাক্তার অনিককে চেক-আপ করতে লাগল।ইঞ্জেকশন দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই অনিক ঘুমিয়ে গেলো।আজ যেন বহুদিন পর শান্তির ঘুম দিচ্ছে অনিক।আরামের ঘুম।
_____________
রাত অনেক হয়ে গিয়েছে।চেয়ারে বসে বসে ঢুলছে অথৈ।রুদ্রিক আর ইহান নিচে গিয়েছিলো খাবার আনতে।সবাই তো না খাওয়া।এসে অথৈয়ের এই অবস্থা দেখে ইহান রুদ্রিকের হাত থেকে দুটো খাবারের প্যাকেট বাদে সব খাবারগুলো নিয়ে বলে,’ তুই ওর কাছে যা।আমি সবাইকে খাবার দিচ্ছি।’
রুদ্রিক সম্মতি দিয়ে এগিয়ে গেলো অথৈয়ের কাছে।অথৈয়ের পাশে বসে পরল।রুদ্রিকের অস্তিত্ব টের পেতেই সজাগ হয়ে সোজা হয়ে বসে অথৈ। আলতো হেসে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে,’ এসেছেন।’
অথৈয়ের কপালে কিছু ছোটো ছোটো চুল এলোমেলো হয়ে আছে।রুদ্রিক হাত বাড়িয়ে অথৈয়ের চুলগুলো গুছিয়ে ওর কানের পিঠে গুজে দিয়ে বলে,’ হুম।তোমার ঘুম পাচ্ছে?’
অথৈ মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো।রুদ্রিক ভ্রু-কুচকে বলে,’ মিথ্যে বলছ কেন?একটু আগেই তো দেখলাম ঘুমে ঢুলছ।’
‘ ও তো এমনিই।’
‘ হয়েছে আর মিথ্যে বলতে হবে না।খাবার এনেছি।নেও খেয়ে নেও।’
‘ আপনি খাবেন না?’
‘ হ্যা আমিও খাব।’
রুদ্রিক অথৈয়ের হাতে খাবারের প্যাকেটটা খুলে তারপর দিলো।বিরিয়ানি এনেছে ওরা।অথৈ আর রুদ্রিক খাবারটুকু খেয়ে নিলো। খাবারের পালা শেষ হলে রুদ্রিক বলে,’ চলো যাওয়া যাক। ‘
অবাক হয়ে অথৈ বলে,’ কোথায় যাবো?’
‘ কেন বাড়ি যাবে না?নাকি এখানেই থাকার প্লানিং আছে?’
‘ না মানে।আপনিও তো থাকবেন।’
‘ অথৈ তুমি ছোটো না।আমি থাকা আর তুমি থাকা এক না।অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।তোমাকে বাড়িতে দিয়ে আসব।এভাবে হাসপাতালে থাকা ঠিক না।’
গম্ভীর কণ্ঠে বলল রুদ্রিক।অথৈ আর কথা বাড়ালো না।সে জানে রুদ্রিক যা বলছে ঠিক বলছে।তবে হালকা অভিমান করল।এভাবে বলার কি আছে?সুন্দর ভাবেও তো বলা যেতো।অথৈ উঠে দাঁড়ালো।পা বাড়াবে তার আগেই রুদ্রিক অথৈয়ের হাতটা শক্ত করে ধরে আগলে নিলো নিজের হাতের মাঝে।তারপর এগিয়ে গেলো বাকিদের কাছে।রুদ্রিক শান্ত কণ্ঠে বলে,’ কোনো সমস্যা হলে আমাকে কল দিস।আমি ওকে বাড়িতে পৌছি দিয়েই ফিরে আসছি।আর নীল তুই কি মারিয়াকে দিয়ে আসবি?নাকি ও আমার সাথে যাবে?’
নীল বলে,’ সমস্যা নেই তুই যা।আমিও মারিয়াকে এখনই বের হব।ওকেও বাসায় পৌছে দিবো।’
মারিয়া এতে সহমত হতে পারল না। ও বলে,’ সিয়া এখানে একা একটা মেয়ে কিভাবে থাকবে?কোনো দরকারও তো হতে পারে তাই নাহ?আমি যাবো না।’
সবাই কথাটা যুক্তি সংযত মনে করল।আসলেই এতোগুলো ছেলের মাঝে একা সিয়া থাকবে।সিয়ারও তো কোনো ব্যক্তিগত সমস্যা হতে পারে।তখন ও কার কাছে বলবে?মারিয়ার যুক্তির কাছে সবাই হার মেনে মারিয়াকে এখানে থাকতে দেওয়া হলো।এতোগুলো মানুষ থাকার দরকার নেই।কিন্তু কেউ যেতে চাইছে না।রুদ্রিক,ইহান,নীল,সাফাত,সিয়া আর মারিয়া।ছ’জন সবাই থাকবে।কেউ আর জোড়াজুড়ি করল না।রুদ্রিক কথাবার্তা শেষ করে অথৈকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসল।অথৈ রুদ্রিকের হাত ধরে মাথা নিচু করে ওর সাথে সাথে হাটছে।অথৈকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজেও উঠে বসল রুদ্রিক।আঁড়চোখে অথৈয়ের দিকে তাকালো।তার মনপাখি যে অভিমান করে আছে তা বেশ বুঝতে পারল। কিন্তু তবুও কিছু বলল না রুদ্রিক।গাড়ি স্টার্ট দিয়ে রওনা হলো।পথে কোনো কথা হলো না ওদের মাঝে।এতে যেন অথৈয়ের অভিমান আরও গাঢ় হয়েছে।লোকটা এতো খারাপ কেন?একটাবার ওর দিকে তাকালও না।ও যে অভিমান করে আছে তা কি লোকটা বুঝতে পারছে না?মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো অথৈ। গাড়িটা অথৈয়ের বাড়ির সামনে থামতেই অথৈ নিজের সিটবেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নামার প্রস্তুতি নিলো।যেই না গাড়ির দরজা খুলতে যাবে তার আগেই রুদ্রিক ওর বাহু আঁকড়ে ধরে অথৈকে টান দিলো।আকস্মিক টানে অথৈ হুমড়ি খেয়ে পরে রুদ্রিকের বুকে।রুদ্রিক সাথে সাথে দুহাতে অথৈয়ের কোমড় পেচিয়ে ধরে।একদম শক্ত করে নিজের সাথে বক্ষস্থলে আগলে নেয়।অথৈ ছটফটিয়ে উঠে।ছাড়া পেতে চায় রুদ্রিকের কাছ থেকে।ওর এমন মোচড়ামুচড়ি দেখে রুদ্রিক আরও শক্ত করে ধরে।শেষে না পেরে অথৈ বলে, ‘ কি করছেন?নিশ্বাস আটকে মেরে ফেলবেন নাকি?’
রুদ্রিক বাঁকা হেসে বলে,’ এভাবে তো তোমায় মারব না সুন্দরী।তোমাকে মারার পদ্ধতি তো ভিন্ন।যেদিন একেবারে আমার বাড়িতে পার্মানেন্টভাবে নিয়ে যাবো।সেদিন বোঝাব কিভাবে মারব তোমায়।’
রুদ্রিকের কথার মানে বুঝতে পেরেই লজ্জায় অথৈয়ের কান গরম হয়ে গেলো।রুদ্রিকের বুকে দুহাতে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলে,’ ছাড়ুন আমায় অসভ্য লোক।’
রুদ্রিক এইবার একহাত রাখল অথৈয়ের গালে।আলতো স্পর্শ করে বলে,’ রাগ করেছ?’
অথৈ মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলে,’ না রাগ করব কেন?’
‘ রাগ না করলে ওইদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলে কেন?আমার দিকে তাকাও।’
অথৈ তাকালো।অথৈয়ের সেই অভিমানি দৃষ্টি দেখে রুদ্রিক মুচঁকি হাসে।অতঃপর মাথা ঝুকিয়ে আনতেই অথৈ চোখ বন্ধ করে নিলো।রুদ্রিক অথৈয়ের দুচোখের পাতায় চুমু খেলো।আবেশে রুদ্রিকের শার্ট খামছে ধরে অথৈ।রুদ্রিক আবার চুমু খেলো অথৈয়ের দুগালে,থুতনিতে।তারপর কপালে চুমু খায়।স্বামির ভালোবাসাময় স্পর্শে দেহ আর মনে শিহরণ বয়ে যায় অথৈয়ের।রুদ্রিক নেশাময় চোখে তাকায় চোখ বন্ধ করে থাকা অথৈয়ের দিকে।ধীর আওয়াজে বলে,’ তাকাও অথৈ। ‘
অথৈ ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকায়।রুদ্রিকের দিকে তাকালে রুদ্রিক বলে,’ অভিমান কমেছে?নাকি আরও আদর লাগবে?’
লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয় অথৈ। কোনো জবাব দেয় না।রুদ্রিক হাত বাড়িয়ে ফের মুখোমুখি করে অথৈকে।বলে,’ আমার দিকে তাকাও মেয়ে।এদিক ওদিক কি?’
‘ উফ,আমার লজ্জা করে না বুঝি?’
হেসে ফেলে রুদ্রিক অথৈয়ের এহেন বাচ্চামো কথায়।
‘ আচ্ছা?’
ফের বলল,’ তাহলে আরেকটু লজ্জা দেই?’
‘ যাহ!’
অথৈ সরে আসতে নিলেই রুদ্রিক আবার ওকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।হাত দিয়ে অথৈয়ের ঠোঁট স্পর্শ করলে কেঁপে উঠে অথৈ। রুদ্রিক ঘোরলাগা কণ্ঠে বলে,’ কতোদিন হলো বলো তো?তোমার এই নরম ঠোঁটজোড়ায় স্পর্শ পাই না।সেইযে মেঘালয়ে চুমু খেয়েছিলাম।সেখান থেকে এসেছি আজ কতোদিন হলো বলো তো?চুমুর অভাবে আমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।সেই খেয়াল কি তোমার আছে?’
তাজ্জব বনে যায় অথৈ। চুমুর অভাবে মানুষ আবার অসুস্থ হয় কিভাবে?এই লোকের কাছে যতো আজগুবি কথাবার্তা। আর তা ওর সামনেই বলে লোকটা।অথৈ নাক মুখ কুচকে বলে,’ চুমুর অভাবে মানুষ অসুস্থ হয়ে যায় এই প্রথম শুনলাম।’
‘ আরেহ তুমি দেখছি কিছুই জানো না।এইযে আমি দিনদিন শুকিয়ে যাচ্ছি।কেন শুকোচ্ছি জানো?এইযে আমার একটা বউ আছে।বউ থাকতেও আমি বউকে প্রতিদিন চুমু খেতে পারছি না।এই চুমুর অভাবেই তো আমি দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।আর শুকিয়ে যাচ্ছি।যেই দেখে সেই বলে,আরেহ রুদ্রিক তুমি এতো শুকোচ্ছ কেন?এখন তো আমি আর বলতে পারি না তাদের।যে বউ আমাকে প্রতিদিন চুমু খেতে দেয় না তার ওই গোলাপি ঠোঁটজোড়ায়।এইকারনেই আমার এই অবস্থা।অবশ্য আমার কোনো সমস্যা ছিলো না বলতে।কিন্তু তুমি তো লজ্জায় আমার সামনেই আসবে না।চুমু খাওয়া তো দূরে থাক।তোমার কথা ভেবেই বলি না।’
অথৈ হা করে রুদ্রিকের এই বেহুদা কথাগুলো সব শুনল।সব যেন অথৈয়ের মাথার এক হাত উপর দিয়ে গিয়েছে।কি থেকে কি বলল এই লোক?পাগল টাগল গয়ে গেলো নাকি আবার?না জ্বর এসেছে?অথৈ হাত বাড়িয়ে রুদ্রিকের গালে কপালে স্পর্শ করল।জ্বর এসেছে নাকি চেক করতে।রুদ্রিক ভ্রু-কুচকে বলে,’ আরেহ কি করছ?’
‘ চেক করছি।আপনার জ্বর টর এলো নাকি আবার?নাহলে এমন আবল তাবল বকছেন কেন?’
রুদ্রিক অথৈয়ের হাত ধরে বলে,’ কোনো জ্বর আসেনি আমার।আমি একদম ঠিক আছি।তবে আমার এখন একটা ডিপলি লিপ কিস লাগবে।ঝটপট আমার ঠোঁটে একটা চুমু খাও তো।’
লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেলো অথৈয়ের।এ কোন পাগলের পাল্লায় পরল ও।অথৈ রুদ্রিকের হাত কোমড় থেকে সরানোর চেষ্টা করতে করতে বলে,’ ইশ,ছাড়ুন তো।আমি কোনো চুমু খেতে পারব না।বাড়ি যাবো আমি।’
‘ তা তো হচ্ছে না সুন্দরী।তুমি চুমু না দিলে কি হবে। আমারটা আমিই আদায় করে নিতে পারি।’
কথাগুলো বলতে দেরি রুদ্রিকের অথৈয়ের অধরে অধর মিলিয়ে দিতে দেরি নেই।অথৈ বিড়ালছানার ন্যায় গুটিয়ে গেলো রুদ্রিকের বুকের মধ্যে।এভাবে কতোক্ষণ সময় অতিবাহিত হলো কেউ বলতে পারল না।দীর্ঘ ওষ্ঠচুম্বনের সমাপ্তি ঘটিয়ে সরে আসে রুদ্রিক অথৈয়ের কাছ থেকে।রুদ্রিক সরে আসলে লজ্জায় অথৈ আর একমুহূর্ত দাঁড়ায় না।গাড়ির দরজা খুলে দৌড়ে চলে যায় বাড়ির ভীতরে ঠোঁট কামড়ে হেসে দেয় রুদ্রিক।অথৈ নিজের রুমে গিয়ে রুদ্রিককে মেসেজ করে দেয় সে রুমে এসেছে।মেসেজটা পেয়েই রুদ্রিক গাড়ি ঘুরিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে চলে যায়।এদিকে বারান্দায় আড়াল করে দাঁড়ানো অথৈ রুদ্রিকের যাওয়ার পাণে তাকিয়ে থাকে লাজুক হেসে।
#চলবে_______________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কারেন্ট না থাকায় আজ বড়ো করে দিতে পারিনি ক্ষমা করবেন।কাল আরেকটা পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করব।