মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না পর্ব ৫

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০৫
রুদ্রিকের সামনে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে।আসল কথা একটু আগেই মেয়েটা গোলাপ ফুল দিয়ে রুদ্রিককে প্রেম নিবেদন করেছে।রুদ্রিক শান্ত দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।অনিক বলল,
‘ কিরে রুদ্রিক! চুপ করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?মেয়েটা তোকে প্রপোজ করল।মেয়েটাকে রিপ্লাই দিবি নাহ।’

রুদ্রিক অনিকের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ তোর এতো মায়া লাগলে তুই কেন এক্সেপ্ট করে নিচ্ছিস নাহ?’
‘ আরে ধুর কি বলিস এসব?’

রুদ্রিক শান্ত কণ্ঠে সামনে ফুল হাতে দাঁড়ানো মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,
‘ দেখুন!এইসব প্রেম ভালোবাসা আমার জন্যে নাহ।আর আপনিও পড়ালেখা ছেড়ে এইসব বেহুদা কাজে নিজেকে জড়াবেন নাহ।সময়টা এসব ছাইপাশ করে ব্যয় না করে।কাজে লাগান।ভবিষ্যতে আপনার জন্যেই ভালো হবে।’

রুদ্রিকের কথা শুনে মেয়েটার মুখ মুহুর্তেই কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল।ক্রদনরত কন্ঠে বলে উঠল,
‘ কিন্তু আমি তো আপনাকে সত্যিই ভালোবাসি।’

রুদ্রিক গম্ভীর গলায় বলে,
‘ এটা ভালোবাসা নাহ।আপনি জাস্ট আমার বাহ্যিক সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন।আমার বাহিরের রূপটাকে আপনার ভালো লেগেছে।ভালোলাগা আর ভালোবাসা এক নাহ।’
‘ আমি আপনাকে ভালোবাসি।প্লিজ আমাকে এইভাবে ফিরিয়ে দিবেন নাহ।আপনি যা বলবেন আমি তাই করব।তবুও আমায় ফিরিয়ে দিয়েন নাহ।’

রুদ্রিকের রাগ লাগছে।রাগ কন্ট্রোল করার জন্যে এদিক ওদিক তাকাল।বাম পাশের ভ্রু চুলকে ক্রোধ সংবরন করার চেষ্টা চালাল।অতঃপর বলে,’
‘ আমি যা বলব তাই করতে পারবেন?’

মেয়েটা হকচকিয়ে গেল।তবে তা বুঝতে দিল নাহ রুদ্রিককে।বলে উঠল,
‘ হ্যা পারব।’
‘ আচ্ছা আমি যা বলব তা যদি করতে পারেন।তাহলে আমি আপনার প্রেম নিবেদন গ্রহন করব।’

এদিকে রুদ্রিক আর ওই মেয়েটার কথপোকথন শুনে নীল ইহানের কানে কানে বলে,
‘ কিরে এই রুদ্রিক কি করতে চাচ্ছে?সা’লায় আবার কি বুদ্ধি পাকাচ্ছে ওর ওই ড্যাঞ্জারাস মাথায়।’

ইহান বাঁকা হেসে বলে,
‘ দেখতে থাক কি করে রুদ্রিক। প্রচুর বিনোদন পাবো মনে হচ্ছে।’

°°°°
‘ সাতার জানেন?’

রুদ্রিকের এহেন প্রশ্নে হকচকিয়ে গেল মেয়েটা।মেয়েটা আসলে সাতার জানে নাহ।আমতা আমতা করে বলল,
‘ আমি সাতার জানি নাহ।’
‘ এসেন আমার সাথে।

রুদ্রিক গটগটিয়ে হাটা ধরল সামনের দিকে।মেয়েটা পিছনে ফিরে ওর ফ্রেন্ডসদের দিকে তাকাল।ওর ফ্রেন্ডসরা বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অল দ্যা বেস্ট জানালো।
মেয়েটা যেন সাহস পেলো।রুদ্রিকের পিছনে পিছনে হাটা ধরল।ইহান হেসে দিল।সাফাতের কাধে চাপড় মেরে বলে,
‘ চল দেখে আসি।খেলা এবার জমবে।’

সাফাত ইহানের চাপড় মারা জায়গায় হাত ঢলতে ঢলতে বলে উঠল,
‘ উহু সালা! মারোস ক্যান? এমনেই তো যাবো বা*।’

ইহান সাফাতের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে চলে গেল।ওকে যেতে দেখে বাকিরাও চলল।
°°°°°
ভার্সিটির পিছনে একটা পুকুর আছে।সেখানে এসে থামল রুদ্রিক।মেয়েটাও থেমে গেল ওকে থামতে দেখে।রুদ্রিক পুকুরের সচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে ভরাট গলায় বলে উঠল,
‘ আমি যা বলব তাই করবেন বলেছেন যেহেতু।এখন আমি বলছি আপনি যদি আমায় সত্যিই ভালোবাসেন।তাহলে এখন এই মুহূর্তে এই পুকুরে ঝাপ দিন।যদি এটা করতে পারেন তাহলে আমি আপনার প্রেম নিবেদন গ্রহন করব।’

মেয়েটা ভয় পেয়ে গেল।ও তো সাতার জানে না।এখন কি করবে?কিন্তু রুদ্রিকও আবার বলছে এটা করলে ওর প্রেম নিবেদন গ্রহন করবে।মেয়েটা শুকনো ঢোক গিলে বলে,
‘ এটা করা কি জরুরি?’
‘ আপনিই তো বললেন আমি যা বলব তাই করতে পারবেন।তাহলে এখন ভয় পাচ্ছেন কেন?’
‘ কো…কোথায় ভয় পাচ্ছি?আমি কোনো ভয় পাচ্ছি না।আমি ঝাপ দিচ্ছি গো।এখনি দিচ্ছি।’

মেয়েটা কাঁপা কাঁপা শরীরে এগিয়ে গেল পুকুর পাড়ের দিকে।গভীর পুকুরের পানির দিকে তাকালেই গলা শুকিয়ে আসছে ভয়ে।মেয়েটা চোখ বন্ধ করে দোয়া পড়ে ঝাপ লাগাল পুকুরে।ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করা রাখা তার।হঠাৎ অনুভব করল সে পুকুরে পরেনি।কেউ তার হাত ধরে আছে।জলদি চোখ মেলে তাকাল মেয়েটা।অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখল রুদ্রিক ওর হাত ধরে আছে।মেয়েটার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে রুদ্রিক।রুদ্রিক এক টানে মেয়েটাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিল।তারপর প্রায় একপ্রকার ছুড়ে মারল মেয়েটাকে।মেয়েটা উপুর হয়ে পরে গেল মাটিতে।ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠল মেয়েটা।অনিক দ্রুত এসে টেনে তুলল মেয়েটাকে।চিৎকার করে বলল,
‘ পাগল হয়ে গিয়েছিস রুদ্রিক?এইভাবে মেয়েটাক ছুড়ে মারলি ক্যান?’

মেয়েটা কাঁদছে।রুদ্রিকের একটু সহ্য হচ্ছে না মেয়েটাকে।এইসব ন্যাকা কান্না জাস্ট ওর অসহ্য লাগে।রুদ্রিক ভয়ানক রেগে বলে,
‘ একে বল আমার সামনে এমন ন্যাকা কান্না যেন না করে।নাহলে এই মেয়েকে আমি জাস্ট খু’ন করে ফেলব।’

রুদ্রিকের কথায় মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বলে,
‘ কিন্তু আপনি তো বলেছিলেন আমি পুকরে ঝাপ দিলে আপনি আমার সাথে রিলেশন করবেন।তাহলে এখন আমাকে আটকালেন ক্যান?’

রুদ্রিক উচ্চস্বরে ধমক দিয়ে উঠল,
‘ সাট আপ।জাস্ট সাট আপ।একটা কথাও আপনি বলবেন নাহ।’

রুদ্রিক ভয়ানক রেগে এদিক সেদিক তাকাল।তারপর হুট করে মেয়েটার হাত টেনে নিয়ে পুকুরের সামনে আনল।তারপর মেয়েটাকে পুকুরের দিকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার মতো করলে মেয়েটা ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে।তারপর কান্না করে দেয়।রুদ্রিক টেনে মেয়েটাকে উঠিয়ে আবার ধাক্কা মারল।অনিক ধরে ফেলল মেয়েটাকে।রুদ্রিক চিৎকার করে বলে,
‘ এখন ভয় পাচ্ছেন কেন?ম’রার খুব শখ তাই নাহ?আমাকে ভালোবাসে মর’তেও রাজি ছিলেন।তাহলে এখন ভয় পাচ্ছেন কেন?বলুন এখন ভয় পাচ্ছেন কেন?’

অনিক রুদ্রিককে বোঝানার জন্যে বলে,
‘ আহ রুদ্রিক।হয়েছে তো থাম নাহ।মেয়েটা বুঝতে পারেনি।থেমে যাহ।’

রুদ্রিক রাগি গলায় বলে,
‘ বুঝতে পারেনি মানে?আরে নিজের ভালো তো পাগ’লও বুঝে।আর এ তো সুস্থ্য পুরোপুরি।এরপরেও এই কিসব স্টুপিট ভালোবাসি ভালোবাসি করে আমি যা বললাম তাই করল। যেই মেয়ে নিজেকেই ভালোবাসতে জানে নাহ।সেই মেয়ে আমায় কিভাবে ভালোবাসবে?আর তুই বলছিস আমায় শান্ত হতে? একে যেতে বল আমার সামনে থেকে।নাহলে কিন্তু বা’জে কিছু ঘটে যেতে পারে।’

অনিক রাগান্বিত রুদ্রিকের কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।তারপর মেয়েটাকে বলে,,
‘ তুমি চলে যাও।রুদ্রিক ভয়া’নক রেগে আছে।’

মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে চলে গেল ওর ফ্রেন্ডসদের কাছে।ওর ফ্রেন্ডসগুলো মেয়েটাকে শান্তনা দিতে লাগল।এমন সময় ভার্সিটিতে এসে পৌছায় অথৈ,রিধি,পিহু,প্রিয়ান আর আহিদ।অথৈ দূর থেকে মেয়েটাকে কাঁদতে দেখে দ্রুত পায়ে সেখানে এসে পৌছালো।সাথে আসল বাকি চারজনও।প্রিয়ান পিহুর কানে কানে বলে,
‘ আরে এটা তো সেইদিনের মেয়েটাই নাহ?যেই মেয়েটাকে কয়েকজন বখাটে ছেলে মিলে হ্যারেস করেছিল মাঝ রাস্তায়।আর আমাদের অথৈ সুপার উইমেন এর মতো হেব্বি ক্যালিয়েছিল ছেলেগুলোকে।’

পিহু প্রিয়ানকে এইভাবে বিস্তারিতভাবে সব বলতে দেখে বিরক্ত কণ্ঠে বলল,
‘ আরে বা* তোরে এমন টকিং মেশিনের মতো এক্সপ্লেনেশন দিতে কে বলছে? তুই কি ভুলে গেছিস আমিও সেদিন ওখানেই ছিলাম।’

প্রিয়ান থাপ্পড় মারল পিহুর মাথায়। পিহু রাগি চোখে তাকালে প্রিয়ান বলল,
‘ তুই যেই ভুলাক্কার।সব তো আটা ময়দা মাখতে মাখতে ভুলে যাস।’

রিধি এদের দুটোকে ঝগড়া করতে দেখে রেগে বলে,
‘ তোরা দুইটা থামবি?অলওয়েজ একটার সাথে একটা খুচাখুচি করতেই থাকিস।’

প্রিয়ান নাক মুখ কুচকে বলে,
‘ এগলা কি কস?এমন আস্তাগফিরুল্লাহ মার্কা কথা কছ ক্যান?কিয়ের খুচাখুচি করুম আমরা?ভালো হইয়া যা রিধি তুই।ভালো হইতে পয়সা লাগে নাহ।’

রিধি বিরক্ত হয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল।কথা বাড়ালেই কথা বাড়ে।তাই আর কিছু বলল নাহ রিধি।প্রিয়ান ওকে জ্বালাতে আরও কিছু বলবে তার আগেই আহিদ ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
‘ আর কিছু বলিস নাহ।চুপ যাহ।দেখছিস এখানে সিরিয়াস কিছু হচ্ছে।তাও তুই তোর ফাইজলামি বন্ধ করলি নাহ।’

প্রিয়ান বিরক্ত হলো আহিদের কথায়।রাগি গলায় বলে,
‘ কিসের সিরিয়াসন্যাস হ্যা?এই মেয়ে ন্যাকা মেয়েদের না কেঁদে পারে না নিজের প্রতি হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে। পারে না কিছু করতে।শুধু ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদে।আমাদের অথৈ,রিধি,পিহুকেই দেখ।যতোই ন্যাকামি,আহ্লাদি হোক না কেন।পরিস্থিতি বুঝে তারা রণচণ্ডী রূপ ধারন করতে পারে।নিজেদের সাথে কোনো অবিচার হলে নিজেরাই রুখে দাঁড়াতে পারে।’

আহিদ শ্বাস ফেলে বলে,
‘ সেটা তো বুঝলাম।কিন্তু আমাদের এই তিন রমনীর মতো কজনেই বা হয় বল?’
‘ হবে না কেন?হতে হবে।একবার যেহেতু দেখেছে ওর সাথে এমন বাজে একটা ঘটনা ঘটেছে।তখন আমরা গিয়ে ওকে হ্যাল্প করলাম।অথৈদেরও দেখলো কিভাবে মারামা’রি করছিল।তো এখন দ্বিতীবার এমন হলে কেন পারল না প্রতিবাদ করতে?এখানে এসে ভ্যা ভ্যা করছে।’
‘ আচ্ছা শান্ত হো।কিছু না জেনে আগেই মানুষকে নিয়ে ভালোমন্দ বলা ঠিক নাহ।আগে শুনে নেই কি হয়েছে?তারপর নাহয় মেয়েটাকে দু চারটে কথা শুনিয়ে দিস উপদেশ হিসেবে।’

আহিদের কথায় প্রিয়ান চোখ উল্টিয়ে বলল,
‘ আ`ম নট ইন্টেরেস্টেড এট অল।’

প্রিয়ানের এক্সপ্রেশন দেখে হেসে দিল আহিদ।

#চলবে___________

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।বৃষ্টি বাদলের দিন জানেনই তো কি একটা অবস্থা। একটু বাতাস ছারলেই কারেন্ট বাবাজি দৌড়ে পালায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here