মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না পর্ব ৬

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০৬
অথৈ উদ্বিগ্ন চোখেমুখে কান্নারত মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।অতঃপর কাছে গিয়ে মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।মেয়েটাও তার সাথে একই ক্লাসে পরে।তবে ডিপার্টমেন্ট ভিন্ন।অথৈর হাতের ছোঁয়ায় মেয়েটা তাকায় অথৈর দিকে।পর পর আবার কেঁদে দেয়।অথৈ নরম গলায় সুধাল,
‘ কি হয়েছে?কেন কাঁদছ তুমি?আজও কি কেউ তোমায় ডিস্টার্ব করেছে?করলে বলতে পারো আমায়।কোনো ভয় নেই।আমি আর আমার বন্ধুরা আছি তো।’

মেয়েটা কিছুই বলল নাহ।তবে পাশে থেকে ওর বান্ধবী বলল,
‘ ও কাঁদছে কারন ওইযে রুদ্রিক ভাইয়া আছে নাহ?তাকে আমাদের লিয়া পছন্দ করে।তাই আজ সাহস করে নিজের মনের কথা বলেছে ও গিয়ে। রুদ্রিক ভাইয়া তা গ্রহন তো করলই নাহ।সাথে লিয়াকে সবার সামনে অপমান করেছে।ওকে ধাক্কা মেরে আঘাত ও করেছে।’

সবটা শুনে অথৈর রাগ আকাশচুম্বি।কাউকে ভালো লাগতেই পারে।আর তাকে গিয়ে মনের কথাও জানাতে পারে।কিন্তু তাই বলে এইভাবে একটা মানুষকে হেনেস্তা করার কোনো মানে হয় নাহ।অথৈ রাগে ফুসতে ফুসতে বলে,
‘ কোথায় আছে এখন তারা।’
‘ ভার্সিটির পিছনে ওই পুকুরের কাছে।’

অথৈ এইবার রিধি,পিহু,আহিদ,প্রিয়ানের সামনে দাঁড়াল।রাগি গলায় বলে,
‘ চল আমার সাথে।’

প্রিয়ান যতোই খামখেয়ালি করুক না কেন! যতোই হাসিঠাট্টায় মেতে থাকুক। কিন্তু ওদের বন্ধুদের মাঝে বিপদের সময় ওই সবচেয়ে বুদ্ধিমান হয়ে উঠে।প্রিয়ান অথৈর হাত ধরে থামিয়ে দিল।ফলে রাগি চোখে তাকায় অথৈ।প্রিয়ান অথৈকে বোঝানোর চেষ্টা করল।
‘ দেখ অথৈ রাগের মাথায় কিছু করিস নাহ।আগে ভালোভাবে সব জেনে নেহ।মনে রাখিস এক হাতে তালি বাজে নাহ।মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ দুপিঠই থাকে।তাই আগে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিয়ে এরপর কিছু বলিস।’

অথৈ প্রিয়ানের হাতের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল।সামনের দিকে অগ্রসর হতে হতে বলল,
‘ আমি বাচ্চা নই।সবটা জেনে শুনেই যা করার করব আমি।’

———–
রুদ্রিক পুকুর পাড়ে বসে সিগারেট টানছে।প্রচন্ড রাগ লাগলে বা কষ্ট পেলে রুদ্রিক এই কাজটা করে।ইহান রাগান্বিত রুদ্রিকের কাধে হাত রাখল।হেসে বলল,
‘ আরে রাগ ঝেরে ফেল।হয়েছে তো।’

রুদ্রিক সিগারেটে লম্বা টান মেরে তার ধোঁয়াগুলো বাতাসে উড়িয়ে দিল।ইহানের কথায় ঘাড় ফিরিয়ে বলে,
‘ তুই আমায় রাগতে মানা করছিস?মানে আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না।মেয়েটা কি পরিমান চাইল্ডিস হলে আমার কথা মতো সত্যি সত্যি পুকুরে ঝাপ দিতে চলে গিয়েছিল।মানে এতো বোকা মানুষ হয় কিভাবে?এইসব ফালতু প্রেম ভালোবাসার কথা বলে নিজের জীবনটা দিয়ে দিতে রাজি হয়ে যায়। নিজের পরিবারের কথাও একবার ভাবল নাহ।’

ইহান রুদ্রিকের কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলল,
‘ ভালোবাসায় মানুষ অন্ধ হয়ে যায়।তখন আর কোনো হুশ জ্ঞান থাকে না।তুই যখন কাউকে ভালোবাসবি।তখন বুঝবি।’

রুদ্রিক রাগি গলায় বলে,
‘ যদি এটাকে ভালোবাসা বলে।তাহলে বলব স্যরি টু স্যে আরিহান রুদ্রিকের জন্যে ভালোবাসা নাহ।’

ইহান শান্ত স্বরে বলে,
‘ হয়েছে থাক।আজ যেই শিক্ষা দিয়েছিস মেয়েটাকে এতে সুধরে যাবে মেয়েটা।’
‘ হোপ সো।’

নীল,সাফাত,অনিক ওদের সামনেই বসে ছিল।হঠাৎ সাফাত দূর থেকে অথৈকে এদিকে আসতে দেখে উঠে দাঁড়াল।ওকে এইভাবে দাঁড়াতে দেখে সকলের দৃষ্টি সেদিকে চলে যায়।ইহান নিজের বোনকে এইভাবে রনচণ্ডী রূপে এদিকে তেড়ে আসতে দেখে হকচাকাল।বলে উঠল,
‘ এর আবার কি হলো?ওমন বাঘিনী রূপে এমন তেড়েমেড়ে আসছে কেন?’

নীল ইহানের ভয়ার্ত মুখশ্রী দেখে হেসে বলে,
‘ নিশ্চয়ই তুই কিছু করেছিস।এইজন্যে তোকেই ক্যালাতে আসছে।’

ইহান নীলের কথায় চিন্তার জগতে চলে গেল।ভাবতে লাগল ও এমন কিছু কি করেছে যাতে অথৈ রেগে যাবে?কিন্তু নাহ এমন কিছুই করেনি।অন্তত ওর মনে পরছে নাহ।ইহান চিন্তিত কণ্ঠে বলে,
‘ আমি এমন কিছুই করিনি যে ও এমন রেগে থাকবে।না জানি কি হয়েছে। ‘

অনিক বলে উঠে,
‘ উফ বাদ দে তো।আগে এসে নিক তারপর নাহয় বোঝা যাবে।’

একটু পরেই অথৈ থমথমে মুখে এসে দাঁড়াল ওদের সামনে।সাফাত হেসে হাত নাড়িয়ে বলে,
‘ হাই অথৈ।কেমন আছ?’
‘ হাই হ্যালো পরে।আর হ্যা আপাতত আমি ভালো নেই।একদম নেই।’

অথৈর এমন শক্ত কণ্ঠের কথা শুনে সাফাতের মুখটা একটুখানি হয়ে গেল।এ বেচারা অথৈকে ভীষণ পছন্দ করে।সেদিন শাড়িতে অথৈকে দেখে প্রথম দেখাতেই ওকে ভালোলেগেছিল।বন্ধুর বোন জেনেও পিছুপা হয়নি।এতোটাই পছন্দ হয়েছে।সেদিন লুকিয়ে চুড়িয়ে অথৈর একটা ছবিও তুলেছিল।এখন দিনরাত যখনই সময় পায় অথৈর ওই ছবিটা দেখে।ভীষণ ভালালাগে ওর।কিন্তু আজ অথৈ ওর সেই ভালোলাগায় তীক্ষ্ণ কথার ধ’নুক ছুড়ে মেরে তাকে আহত করে দিয়েছে।সাফাতের চুপসানো মুখটা দেখে অনিক সাফাতের কাধে হাত রাখল।সাফাত তাকালে তাকে চোখের ইশারায় শান্তনা দিল।
এদিকে ইহান এগিয়ে গেল অথৈর কাছে।নরম বলল,
‘ কিরে?এতো রেগে কেন তুই?কিছু কি হয়েছে? ভার্সিটিতে কেউ তোকে কিছু বলেছে?নাকি আমি কিছু করেছি?’

অথৈ ধারাল দৃষ্টি নিক্ষেপ করল ইহানের দিকে।তারপর বলে,
‘ আমায় কেউ কেউ কিছু বলেনি আর করেওনি।কারন সেই সাহস করার আগেই আমি অথৈ কি করতে পারি তা তুমি ভালোভাবেই জানো।কিন্তু ঘটনা তো কিছু হয়েছে অবশ্যই।আমার সাথে না অন্য একটা মেয়ের সাথে।আর সেটা তুমি না করে থাকলেও করেছে তোমার বন্ধু।’

অথৈ অগ্নিদৃষ্টি গিয়ে ঠেকল রুদ্রিকের দিকে।ইহান সেটা লক্ষ্য করে বলতে চাইল,
‘ দেখ রাগিস না অথৈ।আগে সবটা শুনে নেহ।’
‘ যা শোনার আমি তোমার বন্ধুর থেকেই শুনতে চাই।আর যা বলার আমি তাকেই বলব।সো প্লিজ ভাইয়া চুপ থাকো।’

অথৈ ইহানের পাশ কাটিয়ে গিয়ে রুদ্রিকের সামনে দাঁড়াল।রুদ্রিকের কোনো হেলদোল নেই।ওর সামনে যে অথৈ এসে দাঁড়িয়ে আছে সেটার বিন্দুমাত্র আভাস ও পায়নি এমন একটা ভান ধরে আছে।নির্বিকার ভঙিতে সিগারেট টেনে যাচ্ছে।এতে যেন অথৈর রাগ আরো বারল।ও হাত উঠিয়ে রুদ্রিকের ঠোঁটে গুজে থাকা সিগারেটটা টেনে নিয়ে মাটিতে ফেলে দিল।তারপর তা পা দিয়ে পি’ষে ফেলল।অথৈর এমন ভয়ানক এক কান্ডে সবার মুখে হাত।কারন রুদ্রিকের সাথে এমন আচরণ করার সাহস আজ পর্যন্ত কেউ করতে পারেনি।কিন্তু আজ সেটা অথৈ করে দেখিয়েছে।এদিকে যাকে নিয়ে সবাই এতো ভয় পাচ্ছে সে নিজেই শান্ত হয়ে বসে।চুপটি করে অথৈর রাগান্বিত লাল হয়ে থাকা মুখশ্রীতে তার দৃষ্টি মেলে রেখেছে।রুদ্রিককে এখনও এমন শান্ত দেখে অথৈ রেগে বলে,
‘ আপনার লজ্জা করে না একটা মেয়ের সামনে এভাবে বসে সিগারেট খেতে।’
‘ নাহ করে না।কারন আমি মেয়েটার সামনে গিয়ে সিগারেট খায়নি।উলটো মেয়েটা আমার সামনে এসেছে।দ্যান হোয়াট ক্যান আউ ডু?’

রদ্রিক কথাগুলো বলে আবারও একটা সিগারেট বের করে আগুন ধরাতে যাবে।অথৈ তা টেনে নিয়ে আবারও পানিতে ফেলে দিল।রুদ্রিক আবারও একই কাজ করলে অথৈও নিজের কাজ রিপিট করে।এভাবে চার পাঁচটা সিগারেট ফেলে দিয়ে অথৈ বিরক্তির চরম শিখায় পৌছে গিয়েছে।রুদ্রিক এইবার সিগারেটের গোটা প্যাকেটটাই অথৈর দিকে এগিয়ে দিল।অথৈ রাগে ফেটে যাচ্ছে।ও প্রায় একপ্রকার রুদ্রিকের হাতে খামছি মেরেই রুদ্রিকের হাত থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে পানিতে ফেলে দিল।রুদ্রিকের হাতে নখের আঁচড়ে খানিক র’ক্তও বেরিয়েছে। তবে ও খুব শান্ত।শান্ত স্বরেই বলে,
‘ সব সিগারেট ফেলে দিয়েছ।নাউ হ্যাপি?যদি খুশি হয়ে থাকো তাহলে তুমি এখন আসতে পারো।’

অথৈ দাঁতেদাঁত চেপে বলে,
‘ বাট আমার আপনার সাথে কথা আছে।’
‘ ওকে ফাইন।বলতে থাকো।আমি শুনছি।সময় মাত্র পাঁচ মিনিট।’

অথৈর মন চাচ্ছে এই রুদ্রিকের মাথায় বড় একটা ইট মে’রে এর মাথা ফা’টিয়ে দিতে।নাহলে জোড়েসোড়ে একটা খুশি মেরে এই পুকুরে ফেলে দিতে।তারপর আচ্ছামতো একে চুবিয়ে চুবিয়ে আধম’রা করে তারপর উঠাতে।এতো এটিটিউট কাকে দেখাচ্ছে এই হনুমানটা।অথৈকে চুপ থাকতে দেখে রুদ্রিক হাত ঘড়িয়ে সময় দেখে নিয়ে বলে,
‘ তোমার ৪৫ সেকেন্ড অলরেডি শেষ।তাড়াতাড়ি করো।’

অথৈ চোখ বন্ধ করে জোড়ে শ্বাস ফেলল।নিজের রাগটুকু সামলে নিয়ে বলে,
‘ আপনায় একটা মেয়ে আজ প্রপোজ করেছিল।আপনি এক্সেপ্ট করেননি তাই নাহ?’
‘ হুঁ!’
‘ আপনি কি মেয়েটাকে পুকুরে ঝাপ দেওয়ার জন্যে ফোর্স করেছিলেন?’
‘ উহু ভুল বললে।আমি ঝাপ দিতে বলেছি।কিন্তু ফোর্স করেনি ওকে।ও সেচ্ছায় গিয়েছে।’

রুদ্রিক শুধরে দিল অথৈর কথায়।অথৈ আবার বলে,
‘ আপনি মেয়েটাকে অপমান করেছেন?’
‘ হুঁ! সি ডিজার্ব ইট।’

অথৈ দাঁতেদাঁত চেপে বলে,
‘ মেয়েটাকে দুই দুইবার ধাক্কা মেরেছেন।’
‘ হুঁ!করেছি তো.?’

রুদ্রিক অথৈর সকল প্রশ্নের জবাব সোজাসাপ্টা দিয়ে দিয়েছে।কোনো ভণিতা করেনি।কিন্তু রুদ্রিকের এমন আচরণে রেগে এক অবিশ্বাস্য কান্ড ঘটিয়ে ফেলল।একেবারে রাগে বাঘিনী হয়ে রুদ্রিকের শার্টের কলার ধরে ফেলল।

#চলবে___________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।দুদিন গল্প দেয়নি এইজন্যে সবাই অভিযোগ করছেন।আর আমি নটিশ দেয়নি কেন?এটাও বললেন।বলব কিভাবে?বৃষ্টির কারনে কারেন্ট ছিল নাহ।তাই ফোনে চার্জও ছিল নাহ।এখন বলেন আমি নোটিশ কিভাবে দিতাম?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here