মন_পাড়ায় পর্ব_৪৮

মন_পাড়ায়
পর্ব_৪৮
#নিলুফার_ইয়াসমিন_ঊষা

সকাল ১১.১০ বাজে। অর্ক স্কুলের মাঠের এক কোণায় দাঁড়ানো। এক পকেটে হাত রেখে ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে মাঠে ছেলেদের দৌড়াদৌড়ি করতে ও খেলতে। আর স্মৃতির সাগরে উথাল-পাথাল খাচ্ছে হাজারো মুহূর্ত। এভাবে তারাও একসময় বাঁচত এই স্বাধীন দিনগুলো। যখন না কোনো চিন্তা থাকতো আর না এই স্বার্থপর পৃথিবীর পরিচয়।

টিফিন টাইম শেষ হওয়ার ঘন্টা বাজল। অর্ক অপেক্ষা করছিলো এই সময়েরই। মাঠ খালি হওয়ার পর সে একটি গাছের নিচে যেয়ে বসল। যন্ত্রপাতি নিয়ে মাটি খুড়িয়ে বের করল একটি টিনের বাক্স। অনেকটা সময় লাগলো এতে তবুও ব্যর্থ হয় নি।

ছয়দিন আগে সে রাগে গিয়েছিলো বিনয়দের বাসায় তার প্রশ্নগুলোর উত্তর নিতে। সেদিন ঘরে ফাতেমা ছাড়া কেউ ছিলো না। তার উপরই রাগই বর্ষণ হয় অর্কের। সে রাগান্বিত স্বরে বলে, “তোদের আমি এতটা আপন মনে করলাম আর তোরা আমার জীবনটা নিয়ে এভাবে খেললি? আর তোর মা? উনাকে তো আমি কত আপন মনে করেছি আর উনি কী করল? আমি জানতাম উনি আমার সুবিধা নিয়ে উনার কাজগুলো করাচ্ছে। তবুও আমি কখনো কিছু বলি নি কিন্তু উনি আমাকে প্রভার ব্যাপারে মিথ্যা বলে যে প্রভার জীবন নষ্ট করাতে চাইলো তা আমি কোনোমতে সহ্য করতে পারব না।”
ফাতেমা এতক্ষণ ধরে অর্ককে চুপ করাতে চাইছে। কিন্তু অর্কের চুপ করার নাম নেই। অর্কের যখন কথা শেষ হলো তখন সে অর্ককে বলল,
“ভাইয়া দয়া করে বাহিরে আসো, তোমাকে আমি সব বলছি।”

বাহিরে আসার পর ফাতেমা দরজা লাগিয়ে বলল,
“ভাইয়া ভেতরে ঘুমাচ্ছে। মা নেই বলে ভাইয়াকে রেখে গেছে বাসায়। অর্ক ভাইয়া বিশ্বাস করো, আমি কত চেয়েছি তোমাকে বলতে যে প্রভা ভাবি কোনো দোষ নেই কিন্তু কখনোই সুযোগ পাই নি। মা আমার থেকে ফোন নিয়ে গেছে, আমাকে বাসা থেকে বের হতে দেয় না আর টেলিফোনের লাইনও কেটে দিয়েছে। মা সবসময় চোখে চোখে রাখে আমায়। গতকাল উনার মামা মারা গেছে তাই গ্রামে গেছে।”
কপাল কুঁচকে গেল অর্কের। সে বলল,
“তুই ভার্সিটিতে যাস। সেখান থেকেও তো যোগাযোগ করতে পারতি।”
“আমি ভার্সিটিতে যাই না ভাইয়া। ভর্তি হয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু মা পড়াশোনা বন্ধ করিয়ে দিয়েছে।”
অর্ক বিস্মিত সুরে বলল,
“আমি তো কয়দিন আগেও বেতন….. ”
কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই ফাতেমা থামিয়ে দিলো। অর্ককে সে বলল,
“মা কখনো ভার্সিটিতে টাকা দেয় নি। তুমি আমাকে নিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে এনেছিলেন এই যে ঘরে বসে মা আপনাকে যে গালাগালি করেছে যে সে টাকাগুলো হাতিয়ে নিতে পারে নি। আমি কয়েকবার তোমার সাথে ও প্রভা ভাবির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি মা’য়ের ফোন দিয়ে৷ মা যখনই দেখেছে অনেক মেরেছে আমাকে। একবার যখন তোমাকে কল দিয়ে পেলাম না তারপর ভাবিকে কল দিলাম কথা বলার মাঝে মা ফোন নিয়ে ভাবিকে কী বিশ্রী গালি-গালাজ করলো তা বলতেও ঘৃণা লাগে। এরপর আমাকে মারলো সে হিসাব আলাদা। তাতে আফসোস নেই। আফসোস এইটা যে বিনয় ভাইয়ার বলা শেষ কথাটা তোমার কাছে পৌঁছাতে পারলাম না আমি।”
“শেষ কথা? কী সে শেষ কথা?”
“ভাইয়া আমাকে কল দিয়ে বলেছিলো যে তার কিছু হলে আপনাকে বলতে আপনার জন্য কিছু রেখে গিয়েছে সে।”
“কোথায়?”
ফাতেমা মাথা নাড়িয়ে বলল,
“তা বলে নি। শুধু বলেছে তুমি ভাবলেই পেয়ে যাবে।”
অর্ককে চিন্তিত দেখালো বেশ কিছুক্ষণ। তারপর সে ফাতেমার মাথায় হাত রেখে বলল,
“তুই চিন্তা করিস না, তোকে সামনে আমি পড়াবো। আজকের কথা তোর পরিবারে কাউকে জানানোর প্রয়োজন নেই। ক’দিনের মধ্যে সব সত্যি বের করে আমি তোকে সাথে নিয়ে যাব। আমাদের বাসায় আমার বোনের মতো থেকে পড়াশোনা করবি।”
বিস্ময়ে ফাতেমার চোখ দুটো বড় হয়ে গেছে। পরের মুহূর্তে তার চোখে জল এসে পড়ে। সে বিস্মিত কন্ঠে বলে,
“বিনয় ভাইয়া, মা আর আমার পুরো পরিবার তোমার আর প্রভা ভাবির সাথে এতকিছু করার পরও এমন বলছেন?”
“তারা করেছে তুই না। তোদের আমি নিজের ভাই বোনের মতোই ভাবতাম ছোট থেকে।”
“ভাইয়া জানো তুমি যে কারণেই বিয়ে করো না কেন ভাবিকে আমি জানতাম তুমি তাকে বেশিদিন কষ্ট দিতে পারবে না। এই বাসায় অনেক সহ্য করেছে ভাবি। তাকে খুশিতে রেখেছ তো?”
“চেষ্টা করছি।”
“ভাইয়া প্লিজ একটা অনুরোধ৷ ভাবির পড়াশোনার অনেক ইচ্ছা ছিলো যা আর কখনো হলো না। আমি জানি অনেক দেরি হয়ে গেছে কিন্তু তবুও কী ভাবির পড়াশোনার কথা একবার চিন্তা করে দেখতে পারো?”
অর্ক হেসে বলল,
“প্রায় পনেরোদিন আগেই ভার্সিটিতে ভর্তির জন্য এপ্লাই করেছি। একটু ঝামেলা হচ্ছে কিন্তু ওকে পড়াশোনা করাব। ওর কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ থাকতে দিব না। কিছুতেই না।”
কথাটা শুনে ফাতের ঠোঁটে এক সসন্তুষ্টির হাসি এঁকে এলো।

সে টিনের বাক্স থেকে মাটি ঝেরে এক কোণায় বেঞ্চে বসলো অর্ক। এতদিন সে বুঝে এসেছিলো প্রভার কথাই বলেছিলো বিনয়। ওরে আমানত হিসেবে রেখে গিয়েছিলো তার জন্য। অথচ গতরাতেই বিনয়কে এক চিঠি লিখতে যেয়ে তার মনে পড়লো এই চিঠির বাক্সতেও হয়তো কিছু রাখা। পকেট থেকে একটি চাবি বের করে অর্ক তালার কাছে নিয়েই দুই হাত আপনা-আপনি অবশ হয়ে গেল৷ শরীরটা অবশ লাগছে অর্কের। নিশ্বাসটা আটকে আসছে। সবকিছু সহ্য করা যায়, আপন মানুষগুলোর বিশ্বাসঘাতকতা না।
.
.
সৈকত নতুন একটা চাকরির জন্য জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়ে এলো। গত সাপ্তাহে দুইটা চাকরির আবেদন করেছিলো বিশেষ কোনো লাভ হয় নি। তাই বেশ দুশ্চিন্তায় ভুগছে সে। সন্ধ্যায় চা-নাস্তা করার পর আবার বাহিরে যাওয়ার কথা। পরীক্ষার জন্য ফ্রম ফিলাপ করতে হবে জলদিই। তাই একটা চাকরি ভীষণ প্রয়োজন। সৈকত ও ইকবাল তার রুমে এই বিষয়ে কথা বলছিলো তখনই সৈকতের মা রুমে প্রবেশ করল। আর বলল,
“তোমাদের বিশেষ কোনো কথা চলছে?”
ইকবাল সাথে সাথে উঠে জায়গাটা ছেড়ে বলল,
“না না আন্টি আসেন। এইখানে বসুন।”
রোমা বেগম সেখানে বসলেন। আর ইকবাল সামনে একটি মোড়া নিয়ে বসলো। রোমা বেগম তার হাত থেকে একটি স্বর্ণের চুড়ি খুলে সৈকতের হাতে রেখে বলল,
“এইটা বিক্রি করে তোর আর ইকবালের পরীক্ষার ব্যবস্থা কর।”
ইকবাল সাথে সাথে বলে উঠে,
“ছিঃ ছিঃ আন্টি কী বলেন এইসব? এই বছর পরীক্ষা দিতে না পারলে আগামী বছর চেষ্টা করব। তবুও আপনার চুড়ি বিক্রি করতে পারব না।”
সৈকত চুড়িটা মা’য়ের হাতে আবার পরিয়ে বলল,
“ইকবাল ঠিক বলেছে মা। আমরা এত বড় হওয়ার পরও নিজের মা’য়ের গয়না বিক্রি করে নিজেদের প্রয়োজন মিটাতে পারি না। এছাড়াও এইটা তোমার স্বামীর দেওয়া গয়না। আমি আর উনার কোনো দয়া চাই না।”
“এটা উনার না আমার মা’য়ের দেওয়া স্মৃতি। উনি উনার শেষ আমানত আমাকে দিয়ে গিয়েছিলেন।”
সৈকতের মুখে একটু সংশয় দেখা গেল কিন্তু সে কিছু জিজ্ঞেস করলো না।
রোমা বেগম নিজ থেকেই বললেন,
“আমি জানি তুই ভাবছিস এত বছরেও তো আমার পরিবার আমার খোঁজ নেয় নি, তোকে কখনো দেখাও করাই নি তোর নানুর বাড়ির কারও সাথে কিন্তু কেন তাই তো?”
“না মা এমন কিছু না।”
“তুই না বললেও তোর চেহেরা দেখে বুঝা যাচ্ছে। আর আমি এটাও জানি যে তোর মনে হাজারো প্রশ্ন তোর আসল বাবাকে নিয়ে। কিন্তু আমাকে জিজ্ঞেস করছিস না কারণ তুই আমাকে কষ্ট দিতে চাস না।”
সৈকত মাথাটা নামিয়ে নিলো। এইটা সত্যি যে সে জিজ্ঞেস করতে চায় তার আসল বাবা কে? কোথায় সে? তার কাছে নেই কেন? তাকে ছেড়ে গিয়েছিলো কেন? আর কেনই-বা সে জানতো না তার আসল পরিচয়? কিন্তু এইসব জিজ্ঞেস করে মা’কে লজ্জিত করার কথা ভাবতেও পারে না সে।

রোমা বেগম নিজ থেকেই বলতে শুরু করলেন,
“তখন আমার বয়স ছিলো পনেরো। চট্টগ্রামে থাকতাম আমরা। আমাদের বাড়িওয়ালার এক ভাতিজা প্রায়ই বাসায় ঘুরতে আসতো। আমাদের বাসায়ও আসতো মাঝেমধ্যে, ছাদে দেখা হতো প্রায়ই। এক দেড়বছর এমন চলতে থাকে। একটি ছেলেটা বলে ও আমাকে পছন্দ করে। আমিও পছন্দ করতাম বিধায় হ্যাঁ বলে দেই। একমাস পরই হঠাৎ আমার ডাক পড়ে। আমি তখন রুমে বসে গল্পের বই পড়ছিলাম। ভাই এক শাড়ি হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল আমি যেন দ্রুত এটা পরে ড্রইংরুমে আসি কারণ আমার বিয়ে। আমি মানা করায় আমাকে মেরে হলেও জোর করে বিয়ে পরানো হয়। দেখি আমার স্বামীর বয়স আমার দ্বিগুণ। তার দুইটা ছেলে আছে। বড় ছেলের বয়সই দশ বা এগারো বছর তখন। আর ছোট ছেলেটা একটু অসুস্থ। আমি এতটুকু বয়সে বিয়ের কথাই ভাবতে পারছিলাম না এর উপর এত বড় দায়িত্ব! এর উপর অর্ক তো আমারকে ওর মা মানতেই চাইছিলো না। আমি দিনদিন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছিলাম৷ দুইবার আত্নহত্যার চেষ্টা করি। এর মাঝেই ওই ছেলেটার সাথে যোগাযোগ করি। ও বলে বিয়ের সব গায়না নিয়ে যেন ওর কাছে পালিয়ে যাই। আমিও গাঁধার মতো তাই করি। যাওয়ার পর আমি ওর সাথে আবারও বিয়ে করি। চারমাস পর দেখি ওর আর খোঁজ নেই। আরও দুইমাস চলে যায় ও আর আসে না। এদিকে বাড়ির মালিক নানাভাবে দুর্ব্যবহার করে আমার সাথে। এর মধ্যে আমি ছিলাম তিনমাসের অন্তঃসত্ত্বা। এই অবস্থাতেই বেরিয়ে পড়ি ওকে খুঁজতে। যেয়ে শুনি ওর বিয়ে হয়েছে একমাস আগে। ও আমাকে চিনতেই বারণ করে দিলো। বিয়ের কাগজটাও ছিলো নকল। আমার পরিবারের কাছে গেলাম কিন্তু ভাইয়া বলে দিলো কেউ আমার মতো নষ্টা মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখতেও রাজি না। আমি এত বড় লজ্জা নিয়ে সে বাসায় ফেরত যেতেও রাজি ছিলাম না। আমি বসে ছিলাম দরজায়। আমাকে বাসার বাহিরে ফালিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় ভাইয়া। তারপর তোর দাদী আসে বাসায়। পাশের বাড়ির এক আন্টি যে আমাদের বিয়ে ঠিক করেছিলো তোর দাদীমা’কে। উনি এসে আমাকে নিয়ে যান। অর্কের বাবা আমাকে মানতে না চাইলেও তার মা’য়ের কথা ফেলতে পারে নি। এরপর তুই এসেছিস এই পৃথিবীতে। তোকে নিয়ে বাহিরে কোনো কথা না হলেও বাসায় অনেক ঝগড়া হয়েছিলো। অর্কের খালামণিরা চাইতো যেন তোকে এতিমখানায় দিয়ে আসি। কিন্তু অর্ক পরিষ্কার মানা করে দেয় আর এটাও সবাইকে জানায় যে কেউ যেন ভুলেও উচ্চারণ না করে এইসব ঘটনা তোর সামনে। তখন অর্ক তেরো বছরের ছিলো।এতটুকু বয়সেই ছেলেটা আমার আর তোর দুইজনের জীবন বাঁচিয়েছে, নাহয় আমি কোথায় যেতাম তোকে নিয়ে? কীভাবে লালন-পালন করতাম?”
রোমা বেগম কথাগুলো বলে এক দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললো। এখনও তার হাত-পা কাঁপছে অতীতের সে ভয়ানক দিনগুলোর কথা মনে করে। সে সৈকতের দিকে তাকিয়ে দেখল সে মাথা নিচু করে বসে আছে। বিশেষ পরিবর্তন নেই তার ভাব-ভঙ্গিতে। সে আবারও বলল,
“তোর বাবা যাই করুক না কেন অন্তত আমাদের একটা ঠিকানা দিয়েছে থাকার জন্য। তোকে এত ভালো জায়গায় পড়াশোনা করিয়েছে। তোর সব আবদার পূরণ করেছে।”
“আর তোমার সাথে জানোয়ারদের মতো আচরণ করেছে।”
“উনার রাগটা একটু বেশিই। রাগে কী বলে ফেলেন নিজেও জানেন না। আর ওদিন যে কথায় রাগ করলি উনি ভুল তো বলে নি।”
চকিতে সৈকত তাকাল তার মা’য়ের দিকে। রোমা বেগম আবারও বললেন,
“কোনো স্ত্রী বিয়ের পর স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে গেলে তাকে……”
“মা প্লিজ আমার সামনে এইসব বলবে না।”
“সব সম্পর্কে একজন ভুল থাকবে আর একজন সঠিক থাকবে এমন কিছুর প্রয়োজন নেই। আমাদের সম্পর্কে আমাদের দুইজনের ভুল ছিলো। উনার প্রচুর রাগ আছে আমার উপর। ঘৃণা আসে তার আমার উপর। যেমন তোরও এমন তোর মা’য়ের উপর রাগ উঠছে। জীবনে প্রথমবার রাগ উঠছে।”
সৈকত মাথা নিচু করেই বলল,
“এমন কিছু না মা। মা তুমি তাকে কখনো ভালোবাসতে পেড়েছ?”
“সব জায়গায় ভালোবাসা থাকার প্রয়োজন পড়ে না। একবার ধাক্কা খেয়ে দ্বিতীয়বার এই ভুলটা করার সাহস ছিলো না। এইবার তুই নিজেকে দায়ী করতে থাকবি যে তোর জন্য আমি এতটা বছর তার সাথে সংসার করেছি আর নিজেকে অপরাধী ভাববি। তবে বলে দেই এমন কিছু নয়, স্বামী স্ত্রীর মাঝে কোনো ভালোবাসা থাকুক বা না থাকুক। কিন্তু একসময় সংসার করতে করতে একসময় মায়ায় জড়িয়ে যায় দুটো মানুষ। উনার সাথেও আমি মায়ায় জড়িয়ে পড়েছি। এখনও প্রতি মুহূর্তে চিন্তা করি কী করছে উনি? ঠিকাছে তো? ঠিক ভাবে খাচ্ছে? ঠিক ভাবে ঔষধ নিচ্ছে?”
সৈকত এই বিষয়ের মাঝেই রোমা বেগমকে বলে দিলো,
“মা আমি ঝিনুককে তালাক দিচ্ছি।”
বলেই তাকাল মা’য়ের দিকে। ভেবেছিল মা বকতে শুরু করবে অথচ সে হাসছে। সে মৃদু হেসে বলল,
“এই’যে একটু আগে বললাম সংসারে ভালোবাসা না থাকলেও সংসার করা যায়। অথচ তুই ওকে এত বছর ধরে ভালোবাসিস কিন্তু সংসার করতে চাচ্ছিস না। কী আজব মন মানুষের! পৃথিবীতে কতজন ভালোবাসা না পেয়ে ভিতরে পুড়ে আর কতজন ভালোবাসা পেয়েও তার এত অবহেলা করে। তোর কী মনে হয় বাবা তুই একবার ঝিনুককে হারালে আবার পাবি?”
সৈকত হতদম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো তার মা’য়ের দিকে। বলল,
“মা তুমি কীভাবে জানো যে আমি ঝিনুককে আগের থেকেই ভালোবাসি?”
তাচ্ছিল্য হাসলো মা। বলল,
“তোর কী মনে হয় তোর ঝিনুকের সাথে বিয়েটা এমনিতেই হয়ে গেছে? হঠাৎ বিয়ের দিন ছেলেপক্ষ বিয়ে ক্যান্সেল করেছে আর আমরা তোকে ওর সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি? এইসব অর্ক করেছে।”
সৈকত ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো তার মা’য়ের দিকে। শেষের কথাটা সে মোটেও আশা করে নি।

চলবে……

[আশা করি ভুল ক্রুটি ক্ষমা করবেন ও ভুল হলে দেখিয়ে দিবেন।]

পর্ব-৪৭ঃ
https://www.facebook.com/828382860864628/posts/1262910197411890/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here