মন_পাড়ায়
পর্ব_৫১
#নিলুফার_ইয়াসমিন_ঊষা
সৈকত জ্যোতির বাসায় যেয়ে বসেছিলো ড্রইংরুমে। একটি ছেলে এসে বলল,
“স্যার কিছু নিবেন?”
সৈকত হেসে বলল,
“আরে তুমি কেমন আছো? আর তোমাকে না বলেছিলাম ভাইয়া বলে ডাকবে?”
“মেডাম মানা করেছে৷ বলেছে আপনাকে ভাই বলে ডাকলে চাকরি থেকে বাহির করে দিবে।”
সৈকতের মুখটা মুহূর্তে মলিন হয়ে গেল। মানুষগুলো একটু উপার্জনের জন্য এত কষ্ট করে, আমাদের কাজগুলো করে দেয়, আমাদের জীবন সহজ করে দেয় অথচ তারা বিন্দু পরিমাণ সম্মানও পায় না। তাদের নিচু দেখাতে দেখাতে মানুষরা মনুষ্যত্বই ভুলে যায়।
সৈকত গভীর নিশ্বাস ফেলে বলল,
“জ্যোতিকে শুধু একটু ডেকে দেও। আর কিছু লাগবে না। আর হ্যাঁ আজকের পর থেকে দেখা হলে ভাইয়া বলে ডাকবে।”
“কিন্তু মেডাম…..”
“আজ আজকের পর থেকে আর এখানে আসা হবে না তাই বললাম।”
ছেলেটা বিস্মিত দৃষ্টিতে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো সৈকতের দিকে। এরপর মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ-সূচক উওর দিয়ে চলে গেল। আর কিছু সময় পর এলো জ্যোতি। জ্যোতি এসেই সৈকতের হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল,
“তুমি কোথায় ছিলে এতদিন? একবারও কল ধরে আমার সাথে কথাও বলতে পারো নি?”
“সরি জ্যোতি।”
“আরে না সমস্যা নেই। আমি আসলে রাগ করি নি।”
“আমি এইজন্য সরি বলছি না।”
“তাহলে?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করে জ্যোতি।
“আমি…. আমি……” বারবার তার গলায় কথা আটকে আসছে। সৈকত বহু কষ্টে গভীর নিশ্বাস ফেলে বলল,
“আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি তাই। আমি শুধু তোমার সাথে এইজন্য সম্পর্ক রেখেছি যেন প্রভা ভাবি নির্দোষ তা প্রমাণ করতে পারি। ভাইয়ার কাছে এইটা প্রমাণ করতে পারি যে বিনয় ভাইয়া আর নূহার সম্পর্ক ছিলো।”
সৈকত কথাগুলো এক নিশ্বাস বলে তাকাল জ্যোতির দিকে। তার মুখটা রাগান্বিত দেখাচ্ছে কিন্তু সে যতটা ভেবেছিল ততটা না।
জ্যোতি জিজ্ঞেস করল,
“তাহলে প্রমাণ পেয়েছ? এবার তাহলে আমার জীবন থেকে চলে যাবে?”
সৈকত কেশে তার গলা পরিষ্কার করে বলল,
“আমি বিবাহিত জ্যোতি। ঝিনুকের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে সাত মাসের মতো হবে।”
চকিতে জ্যোতি তাকায় সৈকতের দিকে। উঠে দাঁড়িয়ে সাথে সাথে এক চড় মেরে বসে সৈকতের গালে। চেঁচিয়ে উঠে,
“আমাকে কী মনে হয় তোমার? আমি কোনো খেলনা যে দুইবছর নিজের স্বার্থের জন্য খেলে ফালিয়ে দিয়েছ?”
সৈকত মাথায় নিচু করে রেখেই বলল,
“আমি জানি জ্যোতি আমার ভুল হয়েছে। তোমার সাথে অন্যায় করেছি আমি।” আবার মাথা তুলে তাকায় জ্যোতির দিকে। বলে, “কিন্তু এতে অধিকাংশ অবদান তোমারও আছে।”
“আমার!”
“তুমি জানতে তোমার বোনের মানসিক সমস্যা আছে, তুমি জানতে তোমার বোন অর্ক ভাইয়াকে ধোঁকা দিচ্ছে সাথে একটা সংসার নষ্ট করছে, তুমি জানতে যে নূহা আর বিনয় ভাইয়ার মৃত্যুর পিছনে প্রভা ভাবি কিছু করে নি। জানতে না? তুমি জানতে যে প্রভা ভাবির হাত নেই বিনয় ভাইয়া ও নূহার মৃত্যুর পিছনে তবুও তুমি কিন্তু তবু্ও যখন ভাবির উপর আরোপ লেগেছিল তুমি তখনও কিছু বলোনি। কেন জ্যোতি কেন? শুধু তোমার বোনের কথাই চিন্তা করলে? অন্যকারো জীবনের মূল্য নেই তোমার কাছে?”
জ্যোতির মুখে বিন্দু পরিমাণ সংশয় দেখা গেল না। সে আগের সুরেই বলল,
“কারণ আমি যখন রাতে অসুস্থ থাকতাম তখন মানুষ এসে আমাকে দেখতো না, যখন আমি
না খেয়ে ঘুমাতাম বা কাঁদতাম তখন মানুষ এসে আমার পাশে বসতো না, যখন আমি একা রাতে ভয় পেতাম তখন কেউ এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতো না, যখন আমার মা ছয় বছরের আমাকে ফেলে অন্য লোকের সাথে চলে গিয়েছিল তখন মানুষ এসে আমার যত্ন নেয় নি। শুধু আমার আপু নিয়েছে। মানুষ শুধু কথা শুনিয়েছে। এইজন্য আমি মানুষের কথা চিন্তা করা ছেড়ে দিয়েছি। আমার জীবন ঘিরে শুধু ছিলো আমার বোন ও বাবা। আর তুমি যুক্ত হলে কিন্তু তুমি….. আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে ভালোবাসো না। আমি জানতাম তবুও তোমাকে কখনো কিছু বলি কি কিন্তু তুমি তো আমাকে ধোঁকা দিচ্ছিলে।”
“তোমার বোনও তো ধোঁকা দিয়েছে আমার ভাই ও ভাবিকে। ভাবি কত কিছু সহ্য করেছে তুমি জানো? তোমার এখন যে কষ্ট লাগছে না তা হাজারোগুণ বেশি করো। এর মধ্যে আবার তার উপর দুইটা খুনের আরোপ লেগেছিলো। তুমি বুঝতে পারছ তার সাথে তার দুইটা বাচ্চার জীবন নষ্ট হয়ে যেত।”
“ওই মেয়ের জন্য আমার বোন মারা গেছে। নূহা আপু বিনয়কে ভালোবাসতো, প্রভা কেন আমার বোনের খুশির মাঝে আসছে?”
সৈকত এবার উঠে দাঁড়িয়ে উঁচু স্বরে বলে,
“ভাবি মাঝে এসেছে? আর ইউ সিরিয়াস? তোমার বোন একটা বিবাহিত পুরুষের সাথে সম্পর্ক করেছে। এটাকে পরকীয়া বলে। আফসোস এই পৃথিবীতে দেহের খুন করার শাস্তি তো আছে। আত্নার খুনের শাস্তি নেই। শাস্তি থাকলে…….”
জ্যোতি সৈকতের কথা কেটে বলল,
“শাস্তি থাকলে তুমিও শাস্তি পেতে।”
কথাটায় সৈকত একটুখানি সময় চুপ করে থাকলো। তারপর বলল,
“আমি জানি আমি তোমার সাথে ভুল করে এইজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।”
“তোমার এই ক্ষমা দিয়ে আমি কী করব? যাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ তোমার লাইফ আমি হেল করে ছাড়ব। নাউ গেট লোস্ট।”
সৈকত একটু সময় সেখানেই স্থির থেকে কিছু একটা ভাবলো। তারপর বলল,
“তুমি তোমার সে বোনকে নিয়ে এতকিছু করেছ কিন্তু তোমার সেই বোন তোমার উপর আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিলো।”
“আপু অসুস্থ ছিলো তাই এমন করেছ। মেন্টাল ডিসওর্ডার ছিলো আপুর। আপু কত কষ্ট করেছে তুমি জানো? আমাদের অতীত কত জঘন্য ছিলো তা বুঝতে পারবে? মা আমাদের ছোট বেলায় ফেলে চলে গেছে। বাবার কাছে আমাদের খোঁজ নেবার জন্যও সময় হতো না। প্রতি রাতে দেখতাম বাবা একেক মেয়েকে এনে তার রুমে যাচ্ছে। এদিকে আমরা না খেয়ে বসে থাকলেও তার হুস নেই। এতটুকু বয়সে কখনো এইসব সহ্য করেছ? এতকিছু সহ্যের পর তোমার মনে হয় মনে কারও জন্য মায়া-দয়া বাকি থাকে? মন পাথর হয়ে যায়।”
সৈকত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“সবার জীবনেই কষ্ট থাকে জ্যোতি। কিন্তু আমি বুঝি ছোটবেলার কষ্টগুলো যে মস্তিষ্কে ও হৃদয়ে গভীর ছাপ ছেড়ে যায়। তুমি কি অবস্থায় জীবন পাড় করেছ হয়তো আমি ভাবতেও পারব না কিন্তু আমাদের অতীতে নয় বর্তমানে বাঁচা উচিত। তুমি এত খারাপ না যত দেখাও শুধু নিজের চিন্তাভাবনাটা পাল্টাও। আবারও বলছি পারলে মাফ করে দিও আসি।”
সৈকত বেরিয়ে আসার পর জ্যোতি সেখানে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। তার চোখে তখনও বিন্দুমাত্র জল ছিলো না। সে তার রুমে যেয়ে দরজা বন্ধ করে। নিজের চুল টেনে ধরে হঠাৎ চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে আর নিজের রুমের জিনিসপত্র তছনছ করে দেয়। ভাঙচুর করতে শুরু করে রুমের কাঁচের জিনিস।
সৈকত জ্যোতির বাড়ির বাহিরে এসে মোবাইল বের করে রেকর্ডিং অফফ করল। আর তা এডিট করে প্রথম ও শেষের কথোপকথন কেটে দেয়। যদিও সে এখানে এসেছিলো শুধু মাফ চাইতেই কিন্তু যখন ড্রইংরুমে বসে সে জ্যোতির অপেক্ষা করছিলো তখন তার মাথায় এলো অর্ক হয়তো শুধু নূহার রোগ জেনে বিনয় ও নূহার সম্পর্কের কথা বিশ্বাস নাও করতে পারে। তাই সব রেকর্ড করে রেখেছিল। সাথে সাথে নূহার রোগ সম্পর্কে লিখে সাথে এই রেকর্ডিং পাঠিয়ে দিলো।
.
.
অর্ক তার কেবিনে বসে বেখেয়ালিভাবেই চিঠিগুলো দেখছিলো। আর তার বুকের ভেতর বইছিলো অজস্র অগ্নি ঢেউ। তার এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে তিনটি মানুষকে তার জীবনে এতটা শ্রেষ্ঠ স্থান দিয়েছে সে মানুষগুলোই যেন অচেনা। তার বাবা, বিনয় ও নূহা তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো আর আজ তাদের চেনাটাও যেন জটিল। বিনয় ও নূহা তার সাথে এত জঘন্য কাজ করতে পারলো? এই তার বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার পরিণাম। সবাই কী এমন বিশ্বাসঘাতক এই পৃথিবীতে?
হোয়াইটস এপ-এ মেসেজ এলো অর্কের ফোনে। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে সৈকতের মেসেজ। সাথে সাথে সে ফোনটা হাতে নিলো। সৈকত তাকে ব্লক করে রেখেছিলো তাই সৈকতের মেসেজ পেয়ে সে ব্যাকুল হয়ে পড়লো। সে সাথে মেসেজে যেয়ে দেখে প্রথম মেসেজটা হলো নূহার অসুস্থতা নিয়ে তা একটু পড়ে সে ভয়েস রেকর্ডিং চালু করলো।
‘তুমি জানতে তোমার বোনের মানসিক সমস্যা আছে, তুমি জানতে তোমার বোন অর্ক ভাইয়াকে ধোঁকা দিচ্ছে……… ”
রেকর্ডিং শোনার পর সে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সৈকতকে কল দিলো কিন্তু সৈকত তা ধরলো না। পরিবর্তে মেসেজ দিলো,
“আমি ভালো আছি। দয়া করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না। নিজের পথ নিজে তৈরি করার চেষ্টা করছি আমি, পিছুটান রেখে আটকাবে না। আর একটা জিনিস চাইব, ঝিনুক আজ তোমাকে জ্যোতির কথা জিজ্ঞেস করবে। ওকে এই রেকর্ডিং শোনাবে। থ্যাঙ্কিউ ভাইয়া, ফর এভরিথিং। আর সরি তোমার মনে অনেক কষ্ট দিয়েছি। তুমি আজ পর্যন্ত আমার জন্য এতকিছু করলে অথচ তোমার সাথে আমি কতই না দুর্ব্যবহার করলাম। আর শোনো, যেদিন আমি তোমার মতো নিজের পরিচয় তৈরি করব সেদিন আমরা আবার একসাথে ভায়োলিন ও পিয়ানো বাজাব। যদিও পিয়ানো বাজানোর কিছুই মনে নেই তবুও, হাহা-হা । তোমার দোয়া সবসময় সাথে রেখো ভাইয়া। আমি চাই না যে তুমি আমার জন্য আমার পথ সহজ করো, আমি চাই সে কঠিন পথে তুমি আমাকে সাহস দিয়ে কাঁধে হাত রেখে বলো যে ‘পথ কঠিন হোক কিন্তু তবুও তুই তোর লক্ষ্য জয় করতে পারবি। এগিয়ে যা।’ ওহ হ্যাঁ শেষ কথা, আমি আমার জীবনে হয়তো সবচেয়ে বেশি তোমাকে ভালোবাসি নি কিন্তু তোমাকে ও প্রভা ভাবিকে সবচেয়ে বেশি সম্মান করেছি। ধন্যবাদ ভাইয়া, আমার জীবনটা এত সুন্দর করার জন্য।”
অর্কের চোখদুটো সিক্ত হলে এলো আর হৃদয়ে ছেলে গেল উষ্ণতা। আজ এত বছর পর সৈকত তাকে ভাইয়া ডেকেছে!
সে মৃদু হাসলো সে ফোনের দিকে তাকিয়ে। মৃদুস্বরে বলল,
“না সবাই বিশ্বাস নিয়ে খেলতে জানে না। যে আপন সে কখনো তোমার বিশ্বাস নিয়ে খেলবে না, যদি কেউ তোমার বিশ্বাস নিয়ে খেলে তাহলে ভেবে নেওয়া উচিত সে কখনোই তোমার আপন ছিলো না।”
.
.
রাত তখন ১১.৩০। বাসায় সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। প্রভা দরজা খোলার পর থেকে শব্দ করছে না। বারবার উঁকি মেরে দেখছে তা ভালোভাবেই খেয়াল করল অর্ক। সে হেসে বলল,
“কী দেখছ এভাবে?”
প্রভা বাচ্চাদের মতো মাথা ডানেবামে নাড়িয়ে বলল,
“কিছু না তো।”
অর্ক প্রভার বাহু ধরে এক টানে তার কাছে নিয়ে এলো। দুই হাত প্রভার পিঠে জড়িয়ে তাকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে বলল,
“কিছু তো আছে। না বললে ছাড় নেই।”
“কী করছেন? বাচ্চারা অথবা বাবা দেখলে কী ভাববে?”
“ভাববে বউটা আমার কথা মানে না।”
কথাটাতেই লালিমা মেখে গেল প্রভার মুখখানায়। সে মাথা নিচু করে বলল,
“আপনি রাগ করবেন ভেবে জিজ্ঞেস করি নি। খেয়ে এসেছেন?”
“না। তুমি খেয়েছ?”
প্রভা মাথা উঁচু করে তার থুতনি অর্কের বুকে ঠেকিয়ে বলল,
“না।”
সাথে আয়াথে অর্ক প্রভাকে ছেড়ে দিলো। পিছিয়ে যেয়ে রাগান্বিত স্বরে বলল,
“খাও নি কেন? তোমার শরীর খারাপ করার ইচ্ছা আছে?”
প্রভার মুখ মুহূর্তে ম্লান হয়ে গেল। সে বলল,
“আপনিও তো খান নি।”
“আমি সারাক্ষণ অফিসে এক কেবিনে বসে কাজ করি আর তুমি সারাটাদিন এই ঘরে থেকে রান্না কর, ছোট বড় সবকিছু জায়গায় আছে কি’না আর পরিষ্কার কি’না খেয়াল রাখো, বাচ্চাদের পিছনে দৌড়াদৌড়ি করো সাথে সবার খেয়াল রাখছ তা তো আছেই। এখন কার বেশি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করা উচিত? তুমি অসুস্থ হলে আমার বাচ্চা দুইটার কী হবে? আমার কী হবে? তোমাকে আমি আগে বলেছি না যে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করবে?”
প্রভা বুঝতে পারলো না এই মুহূর্তে তার ঠিক কেমন অনুভূতি হচ্ছে। একবার কান্না আসছে বেশ অর্কের রাগ দেখে আবার খুশিও লাগছে তার যত্ন দেখে।
সে চিকন সুরে বলল,
“আমার আপনার অপেক্ষা করতে ভালো লাগে।”
অর্ক বলল,
“সোজা রুমে যেয়ে বসে থাকবে।”
“কেন?”
“যেতে বলেছি।”
ধমকটা খেয়ে প্রভা এক দৌড় দিলো রুমের দিকে। বিছানায় বসে রইলো।
অর্ক খানিকক্ষণ পর এক বড় প্লেটে ভাত ও তরকারি নিয়ে এলো। ভাত মাখিয়ে প্রভার দিকে খাবারের লোকমা এগিয়ে দিলো। প্রথমে প্রভা একটু অবাক হলো অর্কের এমন কান্ডে কিন্তু পরক্ষণেই তার ঠোঁটের কোণে এঁকে এলো মুচকি হাসি। সে খাবার খেয়ে নিতেই অর্ক বলল,
“আমিও ক্ষুধার্ত খাইয়ে দিবে না?”
প্রভাও হেসে যেয়ে হাত ধুয়ে এসে একই প্লেট থেকে খাইয়ে দিলো অর্ককে।
প্রভা অর্কের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখছিল। অর্ক গেছে শাওয়ার নিতে। অর্কের এই এক বাজে অভ্যাস সে রাতে গোসল করে ঘুমায়। অর্ক বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখে প্রভা আলমারির কাছে দাঁড়িয়ে কিছু একটা করছে। অর্ক তার দিকে এগোল। প্রভা আলমারি লাগিয়ে পিছনে ঘুরতেই সে জোরে তার মাথা নাড়ালো আর প্রভার মুখখানি ভরে গেল জলের ছিটায়। প্রভা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো অর্কের দিকে৷ কিছু বলতে যাবে আর অর্ক আলমারিতে হাত রেখে প্রভার দিকে ঝুঁকে এলো। তার মুখোমুখি হয়ে আঙুল দিয়ে তার গাল ছুঁয়ে দিয়ে বলল,
“তুমি জানো তুমি আমার করা সবচেয়ে সুন্দর ভুল।”
কথাটা শুনতেই প্রভার মুখ এক মুহূর্তের জন্য মলিন হয়ে গেল অতীতের কিছু কথা মনে করে। পরক্ষণেই সে মৃদু হেসে অর্কের কপালে চুমু খেয়ে বলল,
“আর আপনি আমার জীবনের সবচেয়ে উওম সত্য।”
অর্ক অন্যহাত দিয়ে প্রভার কোমর জড়িয়ে ধরে এক টানে তাকে কাছে টেনে নিলো। প্রভার খোলা কৃষ্ণকেশে নাক ডুবিয়ে বলে,
“প্রভা….”
প্রভা অর্কের উষ্ণ নিশ্বাসের অনুভূতিতে কেঁপে উঠছে বারবার। সে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে অর্কের গেঞ্জিটা।
তার নিশ্বাস ভারী হতে থাকে তার উন্মুক্ত কোমরে অর্কের ছোঁয়ায়।
আর অর্ক মাতাল হতে থাকে প্রভার মাতোয়ারা ঘ্রাণে। সে এই নেশায় আসক্ত হয়েই আনমনেই বলে দেয়,
“ভালোবাসি…..ভালোবাসি প্রভা। বহু বছর ধরে তোমায় ভালোবাসি আর সারাজীবন তোমাকেই ভালোবাসতে চাই।”
চলবে…….
[আশা করি ভুল ক্রুটি ক্ষমা করবেন ও ভুল হলে দেখিয়ে দিবেন।]
পর্ব-৫০ঃ
https://www.facebook.com/828382860864628/posts/1268170120219231/