মন_পাড়ায় পর্ব_৫২

মন_পাড়ায়
পর্ব_৫২
#নিলুফার_ইয়াসমিন_ঊষা

“ভালোবাসি…..ভালোবাসি প্রভা। বহু বছর ধরে তোমায় ভালোবাসি আর সারাজীবন তোমাকেই ভালোবাসতে চাই।”
কথা বলে অর্ক নিজেই চমকে গেল। তার মতে এখন এইসবের সঠিক সময় না। যদি প্রভা তাকে ভুল বুঝে অথবা রাগ হয়?

অর্ক আশঙ্কা নিয়ে মুখ তুলে তাকায় প্রভার দিকে। প্রভা স্বাভাবিক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“বহুবছর?”
অর্ক উত্তর দিলো না। নিজের উপর রাগ উঠছে তার।কেন সে কথাটা বলতে গেল। বিনয় তার উপর জেদ করে প্রভার সাথে বিয়ে করেছে তা প্রভা জানতে পারলে কষ্ট পাবে। হোক বিনয় শত খারাপ কিন্তু প্রভার ভালোবাসা সে। আর অর্ক অনুভব করতে পারে সে আজও কোথাও না কোথাও বেঁধে আছে আগের সে ভালোবাসার বাঁধনেই।
অর্ক প্রভার কাছ থেকে দূরে সরে বিছানার কাছে যেয়ে বলল,
“রাত হয়েছে তাই না? আমাদের ঘুমিয়ে পড়া উচিত।”
“সেদিন রাহানও এমন কিছু বলেছিলো তাই না?”
প্রভার প্রশ্ন শুনে অর্ক চোখ বন্ধ করে নিলো। সে চেয়েছিল মেয়েটাকে তার অতীত থেকে দূর রাখতে। সে অতীতের কষ্টগুলো থেকে দূর রাখতে কিন্তু আফসোস তা কোনোভাবেই হয় না। মাঝেমধ্যে তার মনে প্রশ্ন আসে, অন্যকেউ কী প্রভাকে তার থেকে বেশি খুশি রাখতে পারতো না?

প্রভা আবারও জিজ্ঞেস করল,
“উওর দিলেন না যে? রাহান ওদিন যা বলেছে সবই স্মরণে আছে আমার। এতদিন শুধু ঘরের এমন অবস্থায় কিছু জিজ্ঞেস করি নি।”
“অতীতের কথাগুলো না টানলে হয় না। অতীত তো চলেই গেছে।” অর্কের কন্ঠে অসহায়তা।
প্রভা বলল, “অতীত চলে যেতে পারে মনের প্রশ্ন নয়।”
অর্ক গভীর নিশ্বাস ফেলে বলল,
“তোমাকে আমি বলেছিলাম এক মেয়ের কথা? আমার প্রথম ভালোবাসার কথা? আমার সে প্রথম ভালোবাসা তুমি ছিলে।”
প্রভা অবাক হলো আবার হলোও না। রাহানের সেদিনের কথায় সে এতটুকু আন্দাজ করতে পেরেছিলো যে অর্ক তাকে আগে থেকে পছন্দ করতো। কিন্তু ভালোবাসতো? এই কথা সে কখনো ভাবে নি। যে মেয়েটাকে আজও ভালোবাসার কথা অর্ক ক’দিন আগে বলেছি সে নিজে প্রভা ছিলো?
বুকের ভেতর যে তীক্ষ্ণ বেদনার আভাস ছিলো তা মিথ্যে ছিলো?

প্রভা নিঃশব্দে যেয়ে বসলো অর্কের পাশে। মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করল,
“ক’বছর ধরে?”
“তেরো বছর।”
চকিতে প্রভা তাকায় অর্কের দিকে। তার চোখে ভয়ানক বিস্ময়। সে বিস্মিত সুরে বলে উঠে,
“কীভাবে?”
অর্ক তাকায় না প্রভার দিকে। আনমনে অন্যকোথাও দৃষ্টি আবদ্ধ করে বলে,
“ছিলো এক চমৎকার সকাল। বছরের প্রথম দিনে তোমার হাসির দর্শনে আমি আমার জীবনের দর্পন দেখেছিলাম। আমি তোমার সেদিন থেকে চারবছরে শুধু চারদিন দেখেছিলাম অথচ সারাটা জীবন সে হাসিটি আমার চোখের সামনে ভাসতো। আজও ভাসে। আমি নিদ্রার রাজ্য থেকে বের হতেই সর্বপ্রথম সে হাসিটি আমার দিন সুন্দর করে তোলে।”
“আপনি চারবছর ধরে শুধু আমাকে চারদিন দেখে ভালোবেসেছেন! কীভাবে সম্ভব?”
অর্ক তাকাল প্রভার দিকে। বলল,
“ভালোবাসা তো কোনো তিথি দেখে হয় না প্রভা। ভালোবাসা কার, কখন, কীভাবে হয় কেউ বলতে পারে না। আর সত্যি বলব? তখন আমি তোমাকে যতটা ভালোবাসতাম শুধু সে হাসিটার জন্য আর আজ ভালোবাসি সম্পূর্ণ তোমার জন্য। আজ কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে যে আমি কেন তোমাকে ভালোবাসি তাহলে হয়তো আমার কাছে উওর হবে না অথবা এতগুলো উওর হবে যা শেষ হবে না।”
অর্ক এক মুহূর্তের জন্য থেমে জিজ্ঞেস করে,
“তুমি কী আমার উপর রাগ করেছ?”
“রাগ করব কেন?”
“তোমাকে ভালোবাসি যে তাই। তুমি কখনো চাইতে না আমি তোমায় ভালোবাসি।”
প্রভা অদ্ভুতভাবে হেসে বলল,
“তখন আর এখনের মাঝে অনেক পার্থক্য মিঃ অর্ক। আমি চাই আপনি আমাকে ভালোবাসেন এবং আমাকে নতুন করে ভালোবাসা শেখাতে পারেন।” হঠাৎ করে ভেজা হয়ে এলো প্রভার কন্ঠ,
“আমি না…..আমি কখনো চাই নি আবার কাউকে ভালোবাসতে। আমি হাজার নিজেকে বুঝাতাম যে বিশ্বাস মানুষের উপর ভাঙে সম্পর্কের না। কিন্তু ভালোবাসাটা একবার ভাঙলে তা যে জোরা লাগানো যায় না। ভয় লাগতো। যদি আবার যে যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়? যদি আবার….আবার নিজের আত্নার টুকরোগুলোকে সামলাতে না পারি? যদি আবার মরতে ইচ্ছে হয় তখন…..”
কথাটা প্রভা সম্পূর্ণ করতে পারলো না। এর পূর্বেই অর্ক প্রভার বাহু ধরে টান দিয়ে তার কাছে এনে বলল,
“এইসব কথা ভুলেও কখনো মুখে আনবে না প্রভা। তুমি আমার থেকে দূরে থাকো আমি সহ্য করতে পারব কিন্তু মৃত্যুর কথা ভুলে মুখেও আনবে না।”
প্রভা অর্কের চোখে থেকে চোখ সরাতে পারলো না। অর্কের চোখজোড়া সিক্ত। অর্কের চোখে তার জন্য জল? মানুষটা না সহজে কারও জন্য কাঁদে না?
আসলে এতটা ভালোবাসে মানুষটা? যদি প্রভার জীবনে কখনো বিনয় নামক মানুষটা না আসতো তাহলে কী অর্কই হতো তার প্রথম ভালোবাসা?
আর এই পোড়াকপালে কতগুলো দুঃখের পর মানুষটা জুটলো। সে নিজে কখনো কি পারবে আবার ভালোবাসবে? খুব করে চায় যে। খুব করে চায় আবার ভালোবাসতে, অর্ককে ভালোবাসতে। পারবে কী? পারবে সে অতীতের বাঁধন থেকে মুক্ত হতে? পারবে আবার ভালোবাসতে?

অর্ক প্রভার গালে হাত রেখে বলল,
“আমি শুধু চাই তুমি আমার পাশে থাক। ভালোবাসার দাবি আমি তোমার থেকে কখনো চাইব না।”
প্রভা অর্কের সে হাতের উপর হাত রেখে জোরপূর্বক হাসলো। তবে কিছু বলল না।
অর্ক প্রভার কপালে এক ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বলল,
“ঘুমিয়ে যাও। সকালে আবার বিনু ও অদিনের স্কুল আছে।”
“আপনি ঘুমান আমি লাইট অফফ করে আসি।”

প্রভা বাতি বন্ধ করে বিছানায় এসে বসে। একপলক অর্কের দিকে তাকিয়ে আবার তাকাল নিজের পায়ের দিকে। ছোট এক নিশ্বাস ফেলে পায়ে পরা নুপুরটা খুলে রাখলো। আজ প্রথম এই নুপুরটা খুলেছে সে। তাও সারাটা জীবনের জন্য। ভীষণ স্বাধীন লাগছে তার নিজেকে। মনে হচ্ছে বড় কোনো এক জঞ্জাল থেকে আজ মুক্তি পেয়েছে সে। এইটা যেন সুন্দর নুপুর নয় যেন শিকল ছিলো এই জীবনের। সে উঠে এক টেবিলের ড্রয়েরে রেখে দিলো নুপুরটা। রেখেই মৃদু হাসল। বিছানার কাছে এসে মৃদু নীল আলোয় সে দেখে অর্ক তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে হেসে জিজ্ঞেস করল,
“ঘুমান নি?”
“তুমি কী করছিলে?”
“অতীতের বাঁধন থেকে মুক্তি নিচ্ছিলাম যেন বর্তমানটা ভালো লাগে। কিন্তু অবাক কান্ড হলেন আমার অতিরিক্ত ভালো লাগছে।”
অর্ক একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো প্রভার দিকে। হাতের ইশারায় বলল কাছে আসতে। প্রভা বিছানায় বসে জিজ্ঞেস করল,
“কিছু বলবেন?”
অর্ক কিছু বলল না, শুধু একটানে ভরে নিলো প্রভাকে নিজের বুকের মাঝারে।

প্রভা একটুখানি হকচকিয়ে যায় প্রথম প্রথম। এরপর বলে,
“আমার দুর্ভাগ্য আমি আপনাকে এখনো ভালোবাসতে পারি নি কিন্তু এর মানে এই নয় যে আপনার সাথে মনের কোনো সম্পর্ক নেই আমার। এই মন পাড়ায় মায়ানগরীটাই আপনার।”
অর্ক মৃদু কন্ঠে বলল,
“এতটুকুই আমার জন্য বহুত।”
.
.
সকালে অর্ক নাস্তার জন্য বসবে আর তখনই নিজের বাবাকে নাস্তা করতে দেখে উল্টো পথ ধরলো। অর্কের বাবা ডাক দিলো,
“অর্ক বাবা তোমায় যাচ্ছ?”
“অফিসে।”
“নাস্তা করে নেও। তারপর আমরা একসাথে যাব।”
“আপনার সাথে যাওয়ার আমার আর ইচ্ছা নেই।”
অর্ক যেতে নিলেই পিছন থেকে অদিন দৌড়ে এসে তার পা জড়িয়ে ধরে। অর্ক নিচে তাকিয়ে দেখে অদিনকে কোলে তুলে বলে,
“গুড মর্নিং প্রিন্স।”
অদিন অর্কের মুখের ওপর আঙ্গুল তুলে বলে,
“নো গুড মর্নিং। প্রিন্স রাগে আছে।”
“কেন? আমার প্রিন্স রাগে আছে কেন?”
“কেউ নিজের পাপার সাথে এভাবে কথা বলে? ব্যাড ম্যানারর্স। এক্ষুনি দাদুভাইকে সরি বলো।”
“আচ্ছা বাবা পরে……”
অদিন উঁচু স্বরে বলল,
“এক্ষুনি।”
“আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।”
“তোমার বাবাকেই তো সরি বলতে বলেছি।”
অর্ক অদিনকে একটা চেয়ারে বসিয়ে তার বাবার দিকে তাকালো। একটু কেশে বলল,
“সরি।”
“গুড বয়। এখন চুপচাপ খেতে বসো।”
অদিন আদেশের সুরে বলল। আবার অর্কের দাদুর দিকে তাকিয়ে বলল,
“দাদু এইবার তুমি হ্যাপি তো?”
অর্কের বাবা উওর দিলেন না। অর্ক তার বাবার পাশের চেয়ারে বসতে বসতে বলল,
“দেখেছেন আপনি যে বাচ্চাদের দুইদিন আগে হোস্টেলে পাঠানোর কথা বলেছেন তারাই আজ আপনার চিন্তা করছে। সৈকতও আপনাকে কম ভালোবাসতো না। আপনি কবে বুঝবেন বাবা আপনি আপনজনদেরকেই নিজের থেকে দূর করছেন শুধু।”
ইতিমধ্যে ভাদ্র ও বিনুকে নিয়ে এলো প্রভা। দুইজনকে দুই চেয়ারে বসে খাবার প্লেটে দিচ্ছিল। ভাদ্র সৈকতের কথা শুনে উৎসুক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“সৈকত! সৈকত আসবে ভাইয়া? মাও আসবে?”
বলেই হাত তালি দিতে শুরু করলো। আবার পাশে বসা বিনুকে বলল,
“সৈকত আসলে আমরা অনেক খেলব।”
অর্ক কিছু মুহূর্ত অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তারপর তার বাবার দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলল,
“আমাদের ভাদ্রের ব্যবহার বাচ্চাদের মতো। এমনকি অদিন থেকে বেশি বাচ্চামি করে আর ওকে বিয়ে করাতে চাচ্ছেন আপনি? এর দ্বারা শুধু অঞ্জলির না আমাদের ভাদ্রের জীবনও নষ্ট হয়ে যাবে। আপনার কী মনে হয় ও বিয়ের মতো একটা সম্পর্কের ভার নেওয়ার যোগ্য? যা যেমন চলছে তেমন চলতে দিন। এতগুলো জীবন নষ্ট করেন না। যদি ওর চিন্তা করে এইসব করছেন তাহলে বুঝে রাখুন ভাদ্রের জন্য ওর দুইটা ভাই আছে। আর সৈকত সেদিন শুধু অঞ্জলি আর ওর মা’য়ের জন্য আপনার সাথে ঝগড়া করে নি। ভাদ্রের জন্যও করেছে। সৈকত আপনার ও আমার থেকে বেশি ভালোবাসে ভাদ্রকে। সেদিন আপনি ভুল ছিলেন বাবা, আপনি ভুল ছিলেন।”
বলেই উঠে দাঁড়ায় অর্ক। প্রভা বলল,
“নাস্তা….”
“আমি অফিসে নাস্তা করে নিব। ওদের ঠিক মতো খাইয়ে দেও।”
বলেই অর্ক বেরিয়ে পড়ে।
.
.
ঝিনুক ঘুম থেকে উঠে সকাল দশটায়। তাও ফোনের শব্দে। চোখ খুলে দেখে অঞ্জলির ফোন। সে ঘুম ঘুম চোখেই ফোন রিসিভ করে।
“হ্যালো ঝিনুক…….”
“হুঁ।”
“আজ দুপুরে ফ্রী আছিস? অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।”
“তোকে আবার বিয়ের কথা বলেছে না’কি?”
“তেমন কিছু না। তুই আয় তারপর জানবি। কারও সাথে দেখা করাব। বারোটায় ভার্সিটিতে থাকবি।”
উওর না শুনেই অঞ্জলি কল কেটে দিলো। ঝিনুকও আর কল দিলো না। ফোনটা পাশে রেখে আবার চোখ বন্ধ করতেই লাফ দিয়ে উঠে বসলো। সকাল দশটা বাজে অর্থাৎ তার দুলাভাই চলে যেতে পারে বাসা থেকে। সে গতরাতে দুইটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়েছিলো বলে সময়ের হুশই ছিলো না। সে দৌড়ে গেল প্রভার রুমে। সেখানে কেউ-ই ছিলো না। সে রান্নাঘরে প্রভাকে যেয়ে জিজ্ঞেস করে,
“আপু দুলাভাই কী চলে গেছে?”
“সে তো সাড়ে সাতটায় অফিসে চলে গেছে। কি কাজ চলছে তাদের। কেন রে?”
“আপু তোমার ফোনটা দাও। আমার ফোনে টাকা নেই।”
“আমার রুমে আছে। ড্রেসিং টেবিলের উপর।”

ঝিনুক আবারও সে রুমে যেয়ে আপুর ফোন নিয়ে অর্ককে কল দিয়ে বলে যে সে অর্কের সাথে দুপুর তিনটায় দেখা করতে আসবে। ফোনটা রাখতে যেয়ে পারফিউমের বোতলের নিচে একটা ছবি পেল সে। ছবিটা কাছে নিয়ে দেখে সে একটা ছবি দেখলো। ছবি দেখেই বুঝা যাচ্ছে ছবিটা অনেক বছর আগের। ছবিতে তিনটা মেয়ে ও দুইটা ছেলে বসা। যেখানে তার মা-ও আছে। ঝিনুক কিছু না বলে ছবিটা রেখে চলে গেল সেখান থেকে।

ঘুমাই লাই ছাড়ানোর জন্য গোসল করে নিলো। এরপর নাস্তা ও কফি নিয়ে বসলো। কাল রাত পর্যন্ত সৈকতের সাথে দেখা করবে বলে তার মন বেশ ফুরফুরে ছিলো কিন্তু সকালে তার মা’য়ের ছবিটা দেখার পরপরই তার মেজাজ বিগড়ে গেল।

ঝিনুক রুটি এক টুকরো করে মুখে নিতে যাবে তখনই আবার ছবিটা তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সে খাবার প্লেটে রেখে দৌড়ে যায় আবার প্রভার রুমে। তার মাঝে অস্থিরতা। সে ছবিটা নিয়ে আবার দেখল। কাঁপছিল সে রীতিমতো। তার চোখদুটো বড় বড় হয়ে আছে। সে ছবিটা নিয়ে প্রভার কাছে গেল।

প্রভা রান্না করছিলো। ঝিনুক দৌড়ে এলো তার কাছে। সে বলল,
“আপি…আপি….”
প্রভা বলল, “বল সোনা শুনছি।”
“এদিকে তাকাও।”
“রান্না করছি তো। তরকারি পুড়ে যাবে তুই বল।”
ঝিনুক খালি হাতেই তরকারির কড়াই নিচে নামিয়ে রেখে বলল,
“এবার শুনো।”
প্রভা ঝিনুকের কান্ড দেখে বাকরুদ্ধ। সে ঝিনুকের হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল,
“তুই পাগল হয়ে গেছিস না’কি? কত গরম ছিলো কড়াইটা। দেখি হাত দেখা।”
“আপি এই ছবি আগে দেখো। খালামণি বলেছিলো আমার….আমার মা আর বাবা বন্ধু ছিলো তাই না? এখানে আছে সে?”
প্রভা মলম আনতে যেতে নিলেই ঝিনুক আবার উঁচু স্বরে বলল,
“আপি আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি। বলো এখানে আছে না’কি?”
“তোর হাতে…..”
“বাদ দেও আমার হাত। তুমি বলো….বলো না আমার বাবা আছে এইখানে?”
বলতে বলতে কেঁদেই দিলো ঝিনুক। তার কন্ঠের কম্পনে প্রভার নিজের বুকের ভেতরটাও ছ্যাত করে উঠলো। সে বলল,
“সম্ভবত। খালামণি সবসময়ই এই ছবি রাখতেন নিজের কাছে। ছবিটা দেখে কাঁদতেন। ওই লোককে আমরা কেউ কখনো দেখি নি। কিন্তু এই দুইজনের মধ্যে থাকতে পারে।”
কথাটা শোনা মাত্রই ঝিনুক দৌড় দিলো। প্রভাও গেল তার পিছনে। নিজের রুমের থেকে ব্যাগ নিয়ে বের হতে নিলেই প্রভা তার সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো,
“কোথায় যাচ্ছিস তুই?”
“এসে বলব আপি। এখন থামানোর চেষ্টা করো না প্লিজ।”

চলবে…….

[আশা করি ভুল ক্রুটি ক্ষমা করবেন ও ভুল হলে দেখিয়ে দিবেন।]

পর্ব-৫১ঃ
https://www.facebook.com/828382860864628/posts/1270398523329724/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here