#মম_চিত্তে
#পর্ব_২১
#সাহেদা_আক্তার
নাস্তা সেরে দুইজনই তৈরী হয়ে নিল অফিসে যাওয়ার জন্য। মম ওর আগের পোশাকে ফিরে গেল। একটা ছিমছাম সুতি থ্রিপিস, মাথায় বেণী, হাতে সেই পুরাতন ঘড়ি, কানে ছোট দুল। মম ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগলে রিয়ান বলল, কোথায় যাচ্ছো? মম বলল, অফিসে। আর কোথায় যাবো? রিয়ান টাই হাতে নিয়ে বলল, দেখছো তোমার জামাই এখনো তৈরী হয়নি। আর তুমি তাকে ফেলে চলে যাচ্ছো? টাইটা বেঁধে দাও। মম ব্যাগ বিছানায় রেখে এসে টাই বেঁধে দিতে দিতে বলল, বিয়ের আগে কে বেঁধে দিতো শুনি?
– কে আর বেঁধে দেবে। নিজে নিজেই করতে হতো।
– তাহলে এখন আমাকে লাগছে কেন?
– বউ তো ভালোবাসছে না তাই কিভাবে ভালোবাসতে হয় শেখাচ্ছি।
– আসছে আমার শিক্ষক। নিন বেঁধে দিলাম।
– এটা কি!?
মম ব্যাগ নিতে নিতে বলল, টাই। রিয়ান জিজ্ঞেস করল, এভাবে বেঁধেছো কেন? মম কোনোমতে গিট্টু দিয়ে টাই বেঁধে দিয়েছে। রিয়ানের কথা শুনে মম এসে ওর মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলল, সরি জামাই, তোমার বউ সিনেমার নায়িকাদের মতো টাই বাঁধতে জানে না। রিয়ান মুখ চেপে রাখলেও পরে হাসতে হাসতে বলল, যাক এতক্ষণ পর একটা মনের মতো কথা বলেছো। দেখো কিভাবে টাই বাঁধতে হয়। আজ শিখিয়ে দিচ্ছি। কাল থেকে কিন্তু তোমাকে করতে হবে। প্রথমে টাইটা অসমান করে ঝোলাবে গলায়। ডান পাশটা বাম পাশ থেকে একটু বড় রাখবে। তারপর বাম অংশের নিচ দিয়ে ডান অংশটা ঘুরিয়ে আনবে। এবার উপরের ডান অংশের সাথে গিঁট দেবে পিছন দিক দিয়ে এনে। বাম পাশটা সামনে এনে ডান পাশটা টেনে শক্ত করে দেবে। এরপর গিঁট দেওয়া অংশটা গলা পর্যন্ত টেনে দেবে। ব্যাস, হয়ে গেল। এবার বেঁধে দাও। রিয়ান মমকে বলে দিতে লাগল। মম টাই বেঁধে দেওয়া শেষ হলে রিয়ান ওর ডান হাতটা ধরে বুকের বাম পাশে রেখে বলল, এভাবে সারাজীবন বেঁধে দেবে তো? মম মুচকি হেসে বলল, হুম। এখন চলুন দেরি হচ্ছে। রিয়ান বলল, কোট পরিয়ে দেবে না? মম এক পলক তাকিয়ে কোটটা নিয়ে পরিয়ে দিতে দিতে বলল, এই এক কোট কয়দিন পরবেন?
– তুমি চাইলে প্রতিদিন পরতে পারি।
– এত ভালো ফ্লার্ট করতে পারেন জানতাম না তো।
– আরো কত কিছু জানতে পারবে! সারাটা জীবন তো রইল।
সারাজীবন শব্দটা ওর কাছে কত বড় পাওনা তা একটা মেয়ে কেবল জানে৷ সারাজীবন একই রকম ভালোবাসতে কয়জন পারে? ওর কপালে এমন থাকতে পারে ভাবতেই মমর ভেতরটা কেমন শান্ত হয়ে এল। রিয়ানের ছোঁয়া পেতেই ও বাস্তবে ফিরে এল।
– যাবে না?
– হুম, চলুন।
দুইজনেই বেরিয়ে এল বাসা থেকে। রিয়ান গাড়ি বের করতেই মম বলল, আপনি চলে যান। আমি আব্বুর স্কুটি করে চলে যাবো। রিয়ান মুখ ভার করে জানালা দিয়ে মাথা বের করে বলল, কেন? জামাইর সাথে গেলে কি হবে? মম নাকটা টেনে দিয়ে বলল, জামাইর সাথে গেলে সবাই সন্দেহ করবে। কয়েকমাস যাক, তারপর তোমার সাথে যাবো। রিয়ান তাও মুখ গোমড়া করে বেরিয়ে গেল। মম হালকা হেসে স্কুটি স্টার্ট দিল।
রিয়ানের জন্য আজ পাঁচ মিনিট লেট হয়ে গেল ওর। কি যে বাচ্চাদের মতো আবদার করে বসে। মম চেয়ারে বসতেই তৌসিফা জিজ্ঞেস করল, কালকে এলি না যে? মম ব্যাগ রাখতে রাখতে বলল, একটা জরুরি কাজে ছুটি নিয়েছিলাম। তৌসিফা ওর হাত দেখে বলল, মেহেদী দিয়েছিস! ব্যাপার কি বল তো। তলে তলে বিয়ে করে ফেলিসনি তো? মম হেসে বলল, খালাতো বোন লাগিয়ে দিয়েছে। মানা করে ছিলাম শোনেনি৷ মম কোনোভাবে কাটিয়ে গেল। বৃষ্টি জোর করে বিয়ের আগের দিন লাগিয়ে দিয়েছে। অফিসে আসলে যে কেউ হাতভরা মেহেদী দেখলে সন্দেহ করবে। কিন্তু কিছু করারও নেই। অনেকটাই উঠে গেছে। তাও যতটুকু আছে তাও সন্দেহ জাগাতে পর্যাপ্ত। মম নিজের কাজে মন দিল। কম্পিউটার আর ফাইল দেখে বলল, নতুন ডিলের ফাইলগুলো কোথায়?
– ও, তোকে ত বলাই হয়নি। কালকে কাজ শেষ হয়ে গেছে।
– তাহলে তো ভালো।
– হুম।
ওদের কথার মাঝেই ফারিজা এসে সবার মনোযোগ নিয়ে বলল, আমরা সবাই এতদিনের পরিশ্রম সার্থক করে নতুন ডিলের কাজটা গতকালকে শেষ করেছি। এই ডিলটা কোম্পানির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই কোম্পানির পক্ষ থেকে একটা বিশাল ট্রিট দেওয়া হয়েছে। যারা এই ডিলের সাথে যুক্ত ছিল তারা আগামী শুক্র এবং শনিবার সেন্টমার্টিন একটা ট্যুর করতে যাচ্ছে। শুবে সবাই খুশিতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগল। ফারিজা ওর দিকে আড়চোখে তাকাল। মম সেদিকে পাত্তা না দিয়ে তৌসিফার সাথে কথা বলতে লাগল। ফারিজার তাকানোটা ভালো লাগে না ওর। কিন্তু কিছু করার নেই। একই জায়গায় কাজ করলে ঠোকাঠুকি লাগবেই।
কাজ শেষ হতে হতে মমর সাড়ে নয়টা বাজল। এর মধ্যে অনেকে চলে গেছে। অফিস আওয়ারও শেষ নয়টায়। কাজ শেষ করে কম্পিউটার অফ করতে করতে নিজেকে বলল, আর ছুটি নেওয়া যাবে না। ছুটি নিলেই কাজ ঘাড়ের উপর এসে পড়ে৷ ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বের হতেই পেছন থেকে ডাক পড়ল। মম দাঁড়িয়ে গিয়ে পেছন ফিরে দেখল রিয়ান ওর রুমের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিয়ান এগিয়ে এসে বলল, আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছো? মম বলল, আলাদা এসেছি, আলাদাই তো যাবো। কাজ শেষ হয়নি আপনার?
– হয়েছে অনেক আগে। তোমার জন্য বসে ছিলাম। আলাদা এসেছি বলে আলাদা যেতে হবে এটা কোন কথা?
– ঠিকই তো বললাম। কেউ দেখলে সন্দেহ করবে।
– তাহলে সবার শেষে যাই।
– পাগল নাকি!? বাসার সবাই অপেক্ষা করবে না?
– করুক। তুমি আমার সাথে যাবে। ব্যাস।
– তাহলে স্কুটিটার কি হবে?
– ওটা থাক। কাল নিয়ে যেও।
দুইজনে কথা বলতে বলতে অফিস থেকে বেরিয়ে এল। রিয়ান মমকে কিছুতেই ছাড়ল না। জোর করেই গাড়িতে বসিয়ে বাসায় নিয়ে এল। বাসায় এসে দেখল মাধুরী খালা খাবার টেবিলে নিয়ে এসেছেন। ওরা ফ্রেশ হয়ে সোজা চলে এল টেবিলে৷ রায়হান সাহেব টুকটাক জিজ্ঞেস করলেন খেতে খেতে। খাওয়া শেষে উনি রিয়ানকে নিজের রুমে ডেকে নিয়ে গল্প জুড়ে দিলেন। মম মাথা বেঁধে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ল। তাও এদের গল্প শেষ হয় না। কথার আর হাসির আওয়াজ আসছে।
মমর চোখটা লেগে গিয়েছিল। হঠাৎ মাথার তলা ফাঁকা হয়ে যেতে ভেঙে গেল। রিয়ান ওর মাথা নিজের বুকের উপর রাখছিল। ওকে জেগে যেতে দেখে বলল, ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম! মম ঘুম ঘুম চোখে বলল, বালিশে কি ঘুমানো যায় না!? কেন যে বাচ্চামো করো! রিয়ান ওর কপাল একটা আদর এঁকে দিয়ে বলল, না যায় না৷ তোমাকে অভ্যাস করাতে হবে না? না হলে দেখবো আমাকে ছেড়ে বাপের বাড়িতে এসে শান্তি মতো ঘুমাবে আর আমার নির্ঘুম রাত কাটবে।
– ওরে বুদ্ধি রে! এত বুদ্ধি নিয়ে ঘুমান কেমনে?
– বউকে জড়িয়ে ধরে।
রিয়ান মমকে জড়িয়ে ধরল। মমও আষ্টেপৃষ্টে রইল ওর সাথে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই রাজ্যের ঘুম নেমে এল চোখে।
সকালে ঘুম ভাঙতে দেখল ও বালিশে। রিয়ান ওর আগে উঠে গেছে। ও চোখ কচলে দেখল রিয়ান আলমারীর সামনে দাঁড়িয়ে। উঠে এসে জিজ্ঞেস করল, এত তাড়াতাড়ি তৈরী হচ্ছেন। কোনো কাজ আছে? রিয়ান ওর পোশাক কিছু বের করে লাগেজে নিয়ে বলল, বাড়িতে যাবো আজকে। মম আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বলল, তাহলে আপনি শেষমেশ যাচ্ছেন। রিয়ান ওকে শুধরে দিয়ে বলল, আপনি না আমরা। ও আড়মোড়ার মাঝে থেমে বলল, আমরা মানে। আমি তো এখন যাবো না। রিয়ান জামাকাপড় ঢুকিয়ে লাগেজের চেইন বন্ধ করতে করতে বলল, আব্বু কালকে যেতে বলেছেন। বলেছেন যদি না যাও ধরে বেঁধে নিয়ে যেতে।
– মানে কি?
রিয়ান দুই বাহু ওর কাঁধের উপর রেখে পেছনে দুইহাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলল, মানে তুমি আমার সাথে যাবে৷ মম ওর বাহুর নিচ দিয়ে বাঁধন থেকে বেরিয়ে এসে বলল, জ্বি না। আমি আব্বুকে ফেলে কোথাও যাচ্ছি না।
– যাবে না তো?
– না।
– সত্যি তো। যাবে না?
– উহু।
মম অন্যদিকে ফিরে রইল। রিয়ান হুট করে ওকে কোলে নিয়ে বলল, এই আমি বাইরে পা বাড়ালাম। মম সাথে হাত পা ছুড়ে বলল, এই না না। আমাকে নামাও। বাসার সবাই দেখলে কি বলবে? নামাও আমাকে। রিয়ান আরো শক্ত করে ধরে বলল, দুইটা শর্তে নামাবো। এক, আমাকে এভাবেই তুমি করে বলতে হবে। আর দুই, যেহেতু আব্বু অনুমতি দিয়েছেন; আমার সাথে বাড়ি ফিরতে হবে। মম অন্যদিকে ফিরে বলল, আমি যাবো না।
– তাহলে এই পা বাড়ালাম।
– এই, যাবো যাবো। নামান।
– আবার আপনি?
– নামাও। প্লিজ।
রিয়ান মমকে নামিয়ে দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। কাঁধে চিবুক দিয়ে বলল, আবার যদি মত পরিবর্তন করেছো তো যেখানে থাকবে সেখান থেকেই কোলে করে নিয়ে যাবো। এবার যদি অফিসেও থাকো তো, বুঝতেই পারছো। মম কাঁপতে কাঁপতে বলল, হবে না। হবে না। ছাড়ুন। রিয়ান সরে দাঁড়িয়ে বলল, জিনিস গুছিয়ে নাও এখন। মম জিজ্ঞেস করল, কেন?
– ড্রাইভার আমাদের লাগেজ নিয়ে যাবে। আমরা অফিস থেকে সোজা বাড়ি যাবো।
মম মুখ ফুলিয়ে একবার রিয়ানের দিকে তাকাল। রিয়ান হাসছে৷ টোলপড়া হাসিটাতে কেন এত কিউট লাগে ওকে মম বুঝে পায় না। এমনিতে ভেতরে ভেতরে মিচকে বাদর। মম কাপড় গোছানোয় মন দিল। আধা ঘন্টায় লাগেজ গুছিয়ে ঘড়ি দেখে ওর চোখ কপালে উঠল৷ আটটা বেজে গেছে। রান্নাঘরে গিয়ে দেখল মাধুরী খালা নাস্তা বানিয়ে ফেলেছে। ওকে দেখে বলল, তুমি উঠসো মা? হাত মুখ ধুইয়া আসো। আমি টেবিলে খাওয়া দিতেসি।
– আজকে চলে যাবো খালা। তাই গোছগাছ করতে করতে দেরি হয়ে গেল। তোমাকে সাহায্য করতে পারিনি।
– আইজকাই যাবা গা? বলো নাই যে?
– তোমাদের জামাই তো আমাকে বলেনি। সকালে উঠে ব্যাগ গোছাতে বলল।
– কারো কোনো বিপদ হয় নাই তো?
– আরে না খালা। এমনিই চলে যাবো। আব্বুও তো জানে। তোমাদের জামাই বলল।
– অ, খালু জানলে ঠিক আছে। তুমি তৈরী হই নাও। আমি খাবার দিতেসি।
– আচ্ছা খালা।
মম রুমে এসে দেখল রিয়ান লাগেজ দুটো নিয়ে গেছে। বারান্দা দিয়ে উঁকি মারতেই ওকে দেখা গেল। ড্রাইভারের হাতে লাগেজগুলো দিয়ে দিচ্ছে। কোথায় ভেবেছিল রায়হান সাহেবের সাথে থেকে সেবা যত্ন করবে। তা না তিনিই চলে যেতে উৎসাহ দিচ্ছে। আরেক পাগল তো ওকে ছাড়ছেই না। কেমন বেঁধে রাখছে। এত পাগল কি করে হয় বুঝে পায় না মম। কেউ কারো জন্য এত পাগল হতে পারে! মম একটা জামা নিয়ে তৈরী হতে গেল।
বেরিয়ে এসে দেখল রিয়ান অর্ধেক তৈরী হয়ে বসে আছে৷ মম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে টাইটা হাতে নিয়ে ওর গলায় বাঁধা শুরু করল। তারপর কোট পরাতে রিয়ান ওর দুই গাল আলতো করে ধরে কপালে একটা চুমু এঁকে বলল, এটা তোমার বকশিস। মম ওকে সরিয়ে বলল, বকশিস না ছাই। আসো নাস্তা করতে। দেরি হয়ে গেছে এর মধ্যে। তোমার সাথে বিয়ে হয়ে এখন রোজই কেন যেন লেটে উঠি৷ ঘুমটাই ভাঙে দেরিতে।
– আমার বুকে ঘুমাও তো তাই।
মম কিছু না বলে বেরিয়ে গেল। আরো কিছু বললে আরো কথা বাড়িয়ে ওর লেট করাবে। গিয়ে নাস্তার টেবিলে বসতেই রায়হান সাহেব ওর কথা জিজ্ঞেস করলেন। মম উত্তরে বলল, আসছে। রিয়ান এসে চেয়ারে বসতে বসতে বলল, আজকে যাচ্ছি আব্বু। তোমার মেয়ে তো যেতেই চায় না। জোর করে নিয়ে যাচ্ছি। রায়হান সাহেব হাসলেন। মম খেতে খেতে বলল, তুমি নাকি যেতে বলেছো আব্বু?
– হ্যাঁ। কালরাতে জামাইকে বলেছিলাম। দুই দিন তো হচ্ছে। তুই নাকি শর্ত দিয়েছিস এখানে থাকার।
– হুম। কিন্তু থাকতে দিলে কই?
– দেখ আমি সুস্থ। মাধুরী আর জাবেদ তো আছে। তুই শান্তিতে একটু সংসার কর। তাহলেই আমি ভালো থাকব।
মম চুপচাপ খেয়ে উঠে গেল। ওর পেছন পেছন রিয়ানও শেষ করে উঠল। রুমে গিয়ে দেখল মম চোখ মুছছে। ওকে দেখে ব্যাগে হাত দিয়ে বলল, চলো। রিয়ান ওকে থামিয়ে মুখ উঁচু করে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল, আরে আমি কি আসতে মানা করছি নাকি? যখন মনে হবে চলে আসবে। কিন্তু এভাবে থাকলে কত মানুষ কত কথা বলবে। মম জিজ্ঞেস করল, কে কি বলবে? কেউ তো জানেই না বিয়ের কথা।
– ওমা! পরে জানবে না? এখানে থেকে অভ্যাস করলে পরে তো আমার কাছে যেতেই চাইবে না।
মম ওকে সরিয়ে দিয়ে বলল, হয়েছে ফাজলামো? এখন চলো। মম রুম থেকে বেরিয়ে রায়হান সাহেব থেকে বিদায় নিয়ে নিল। রিয়ানও এসে হাজির হলো। রায়হান সাহেব ওর পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন, আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো বাবা। রিয়ান অভিযোগের সুর করে বলল, আমি তো দেখেই রাখতে চাই৷ আপনার মেয়েই তো দেয় না। মম চোখ গরম করে ওর দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে গেল। রায়হান সাহেব হাসলেন। রিয়ানও তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে বলল, আসি আব্বু। দোয়া করবেন। তিনি বিদায় দিতেই ও বেরিয়ে গেল।
অফিসে আসার পর থেকে মমর আর দেখাই মিলল না। নিজের টেবিলে বসে রইল টানা। রিয়ান কয়েকবার ডেকে পাঠালেও সাড়া মিলল না। ফোন করল, ম্যাসেজ করল। তাও পাত্তা দিল না। অফিস ব্রেকে এসে দেখল মম নেই। তারপর ব্যস্ততায় আর খোঁজ নেওয়া হল না। রাত নয়টা বাজতেই রিয়ান একটা ম্যাসেজ দিল, আজকে বাড়িতে যাবো। একসাথে বের হতে হবে না হলে সবাই খারাপ ভাববে। ম্যাসেজটা সেন্ড করে অফিস থেকে বেরিয়ে এসে ভবনের নিচে দাঁড়াল। তার দশ মিনিটের মাথায় মমকে দেখা গেল। ও এসে পাশে দাঁড়িয়ে বলল, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে!
– হুম। ম্যাসেজ দেখেছিলে তাহলে।
মম চুপ করে রইল। রিয়ান বলল, সারাদিন এত ম্যাসেজ দিলাম, ডাকলাম, ফোন দিলাম। পাত্তাই দিলে না। মম রাগের সুরে বলল, আব্বুর সামনে ওসব না বললে চলছিল না? কি ভাবলো? দুইজনেই সামনের দিকে তাকিয়ে কথা বলছে। রিয়ান ওর কাছে হালকা ঘেঁষে নিজের কনিষ্ঠ আঙুল দিয়ে ওর হাতের কনিষ্ঠ আঙুল ধরে বলল, বউকে ভালোবাসার কথা বললে সেটা নিয়ে কে কি ভাবলো না ভাবলো তাতে কিছু যায় আসে না আমার। কারণ আমি জানি আমি আমার বউকে ভালোবাসি।
চলবে…