#মম_চিত্তে
#পর্ব_২৫
#সাহেদা_আক্তার
রিয়ান মমকে নিয়ে সকালবেলা বাড়িতে ঢুকল। ঐ দিনের পর দুইজনে নিজের মতো করে ঘুরে বেড়িয়েছে। কেউ কাছে এসে কিছু বলেনি। বলতে গেলে অনেকটা ফ্রি স্পেস পেয়েছে দুজনে। বাড়িতে ঢুকতেই রিতু দৌঁড়ে এসে বলল, সেই কখন থেকে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি আর তোমরা এখন এলে? রিয়ান বোনের গাল টিপে দিয়ে বলল, রাস্তায় জ্যাম ছিল। তা না হলে দেখতি ভোরবেলা এসে তোকে ভূতের ভয় দেখাতাম। রিতু মুখ ফুলিয়ে বলল, দেখলে ভাবি, কেমন ভাই? খালি বোনকে ভয় দেখানোর ধান্দা। মম হাসল। রিয়ান এসে সোফায় বসল। ফেরদৌসী কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, ভালো আছিস বাবা? রিয়ান হাসিমুখে বলল, হুম আম্মু। তিনি ওর গালের কাঁটার দিকে তাকিয়ে বললেন, ব্যাথা করছে?
– না। আমি ভালো আছি। তোমার বউমাকে দেখো। হাত কেটে কি করেছে।
রিতু জিজ্ঞেস করল, দুইজনে কি ডাকাত ডাকাত খেলেছো নাকি? কাটল কি করে? রিয়ান কান টেনে দিয়ে বলল, তোর মতো নাকি? ডাকাতরানী একটা। রিতু কান ছাড়িয়ে বলল, আম্মু কিছু তো বলো। ফেরদৌসী রান্নাঘরে যেতে যেতে বললেন, দুজনে ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। নাস্তা করবি। রিয়ান মমকে নিয়ে রুমে চলে এল।
ব্যাগ রেখে হাত মুখ ধুয়ে এসে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে বসল। মম বের হয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল, এটা দিয়ে কি করবে? রিয়ান ওকে কাছে টেনে এনে বসালো। ওর ডান হাতটা নিয়ে আগের ব্যান্ডেজ খুলে নতুন ব্যান্ডেজ পরিয়ে দিল। মমও একটা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ রিয়ানের গালে লাগিয়ে দিয়ে বক্সটা রেখে এল।
রিয়ান ও আসার আগেই বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ল। মম পাশে বসে বলল, নিচে যাবে না? রিয়ান চোখ বন্ধ করে বলল, হুম। নিজের বাসার শান্তি আর কোথাও নেই মম। মম হুট করে রিয়ানের পেটে কাতুকুতু দিয়ে বলল, আমাকে তো থাকতে দিলে না নিজের বাসায়। হুহ্। এখন শান্তি করতে এসেছে। এই? তোমার কাতুকুতু নেই? রিয়ান ডাকাতের মতো হেসে ওকে বিছানায় ফেলে বলল, নোপ৷ তারপর ওকে সুড়সুড়ি দিতে লাগল। মম হাসতে হাসতে বলল, আমার আছে। আর দিও না। প্লিজ থামো। কিন্তু রিয়ান থামল না। মম হাসতে হাসতে লাল হয়ে গেল।
দরজায় কেউ নক দিতেই রিয়ান থামল। রিতু এসেছে। আবার নক করে বলল, কি রে ভাই? খাবি না? রিয়ান উত্তর দিল, আসছি৷ ও বিছানা থেকে নেমে গেল। মম উঠে বসে বড় করে একটা শ্বাস নিল৷ সুড়সুড়ি দিয়ে একেবারে কাহিল করে দিয়েছে। রিয়ান দরজা খুলে ওর দিকে এমন একটা লুক দিয়ে বের হলো তা দেখে মম ঢোক গিলল৷ সুযোগ পেলে আবার কখন সুড়সুড়ি দেয় কে জানে।
নাস্তা করে এসে রিয়ান শুয়ে গেল বিছানায়। গাড়ি চালিয়ে হাত ঘাড় সব ব্যাথা হয়ে গেছে। মম আসছে না দেখে একটা কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করল। কোথায় থেকে মম এসে কোলবালিশটা কেড়ে নিয়ে বলল, এই তোমার কয়টা লাগে? আমাকে দিয়ে হয় না? আবার কোলবালিশও লাগবে? রিয়ান বলল, তুমি রুমে নেই তাই…। মম রিয়ানকে শেষ করতে না দিয়ে বলল, হ্যাঁ, এখন আমি রুমে নেই তাই কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমাচ্ছো। আর যখন আমি একদম থাকবোই না তখন…। রিয়ান ওকে টেনে এনে শুয়ে দিয়ে মুখে হাত দিয়ে বলল, এমন কথা বললে তোমার খবর আছে। মম হাত সরিয়ে বলল, আমার যখন বালিশে শোয়া নিষিদ্ধ তোমারও কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমানো নিষিদ্ধ। রিয়ান হেসে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। মম ওর বুকে মুখ গুঁজে দিল। দুইজনেই মুহূর্তে ঘুম।
মমর ঘুম ভাঙল একটার দিকে। মুখ তুলে রিয়ানের দিকে তাকাল। আসতে আসতে ওর মতো হয়ে যাচ্ছে। বলে না সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। মম মুচকি হাসল। সাবধানে হাত সরিয়ে নিজেকে বাঁধন মুক্ত করে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে এল। দুপুরের খাবারের আয়োজন চলছে। মম মাথার চুলে খোঁপা করে বলল, আম্মু আর কি বাকি আছে? আমি করে দেই। ফেরদৌসী বলল, ওমা! চলে এসেছো! আরেকটু বিশ্রাম নিতে। মম কাজে হাত লাগিয়ে বলল, আর লাগবে না আম্মু, আমি ঠিক আছি। আর কি বাকি আছে করা? নাহার বললেন, সব হয়ে গেছে। বাকি টুকটাক আমরা করে নিতে পারব। তোমার হাত ঠিক আছে? মম মাথা নাড়ল। কনক চাচি বললেন, তুমি এক কাজ করো। গোসল সেরে নিচে চলে এসো। মম অভিযোগ করে বলল, বিয়ের পর থেকে তো কিছুই করতে পারলাম না। কনক চাচি বললেন, আচ্ছা আজকে তুমি খাবার পরিবেশন করো। হবে তো? মম হেসে বলল, খুব হবে। তাহলে আমি গোসল সেরে আসি। মম চলে গেল উপরে। ফেরদৌসী হেসে বললেন, মেয়েটা আসলেই ভালো।
.
.
.
.
অফিসে ঢুকতেই চারদিকের গুঞ্জন মমকে অস্বস্তিতে ফেলল। সবাই হয়ত ওদের নিয়ে কথা বলছে। ও চুপচাপ নিজের ডেস্কে গিয়ে বসল। তৌসিফা পাশেই ছিল। মম ডেস্কটপ খুলতেই ও বলল, ফারিজার সাথে তোর কোনো কিছু হয়েছে? মম ওর দিকে একবার তাকিয়ে পাশে থাকা ফাইলগুলোর দিকে হাত বাড়ালো। বলল, হঠাৎ ওর সাথে ঝামেলা হতে যাবে কেন?
– গতকাল বড় স্যারের কাছে দুটো রেজিগনেশন লেটার জমা পড়েছে। একটা রাসেল ভাইয়ের আর দ্বিতীয়টা ফারিজার।
মম একটু অবাক হয়ে বলল, সে চলে গেছে কেন? তৌসিফা বলল, জানি না। সবাই এটা নিয়ে কানাঘুষা করছে। কেউ বলছে রিয়ান স্যারের সাথে তোর বিয়ের কথা জানতে পেরে মনের কষ্টে চলে গেছে। আবার কেউ বলছে তোর সাথে কোনো ঝামেলা হওয়ায় সে তার পজিশন ছেড়ে চলে গেছে। আরো কত কথা বাতাসে উড়ছে। ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ব্যাপারটা কেমন যেন ঘোলাটে। হঠাৎ এভাবে চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়ার মেয়ে ফারিজা না। এটা মম এত দিন থেকে বুঝেছে। তাহলে হঠাৎ ছেড়ে যাওয়ার কারন কি!?
কিছুক্ষণ পর রিয়ানের রুম থেকে ডাক পড়ল মমর। মম ফাইল নিয়ে ঢুকল ওর রুমে। সাথে সাথে রিয়ান অন্য কারো প্রবেশ বন্ধ করে পর্দা টেনে দিল। মম ফাইল রেখে চেয়ারে বসে বলল, আপনার মাথায় কি ঘুরছে মি. রিয়ান? রিয়ান চেয়ার ঘুরিয়ে ওর দিকে ঝুঁকে বলল, তোমাকে ভালোবাসার চিন্তা ঘুরছে। মম হালকা সরিয়ে বলল, ফাজলামি না করে বলো কি জন্য ডেকেছো। রিয়ান মুখ গোমড়া করে বলল, ধুর, বউটা একটা পঁচু। মম দাঁত দেখিয়ে হাসল। রিয়ান চেয়ারে বসে ওর দিকে একটা ভাঁজ করা কাগজ এগিয়ে দিল। মম নিয়ে বলল, এটা কি?
– খুলেই দেখো।
মম খুলে দেখল। পার্সনাল এসিস্ট্যান্ট হিসেবে জয়েনের লেটার। রিয়ান দুই হাত ভাঁজ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বলল, বউ থাকতে আর অন্যকাউকে কেন জয়েন দেই? সুযোগ পেলে একটু রোমান্সও করা যাবে।
– এই ব্যাপার? মাথায় শুধু এগুলো ঘোরে এখন।
রিয়ান হাসল। মম বলল, আমি উঠি। রিয়ান জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাচ্ছো? মম উত্তরে বলল, কাজ করতে। তোমার সাথে এখানে বসে বসে রোমান্স করলে আমার সব কাজ ঘাড়ের উপর এসে পড়বে। রিয়ান এক চোখ টিপে একটা ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে দিল। মম হাসতে হাসতে ওর রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
দুই সপ্তাহ পর,
মম সকালে ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভাঙল। রিয়ান নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে ওর পাশে। ও গোসল সেরে তৈরী হয়ে নিল। আজকে ওদের বিয়ের এক মাস পূর্ণ হয়েছে। সেই কারণে কাল রাতে রিয়ান বলেছে ওকে নিয়ে ঘুরতে যাবে। তাই একটা খয়রী শাড়ি ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছে পরতে যাওয়ার সময়। এখন সেই শাড়ি সুন্দর কুঁচি করে পরে নিল। গলায় ওর দেওয়া লকেটটা। কানে ছোট ঝুমকা। হাতে চুড়ি পরল। মাথার চুল খোলা। চোখে কাজল দেওয়া শেষে নিজেকে একবার দেখে নিল কেমন লাগছে। তারপর বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখল রিয়ান এখনো ঘুমাচ্ছে। মম কোমরে দুই হাত দিয়ে আস্তে আস্তে বলল, আজকে ঘুরতে যাওয়ার কথা আর আজকেই মহারাজ মহিষের মত ভস ভস করে ঘুমাচ্ছে। ও কাছে গিয়ে রিয়ানকে ডাকতে লাগল, কি হলো? উঠবে না? দেখো ক’টা বাজে। আটটা বেজে গেছে। এই? রিয়ান আস্তে করে বলল, একটু পর। মম আরেকটু জোরে ধাক্কা দিয়ে বলল, আর একটুও না। ওঠো বলছি। রিয়ান ওকে একটান দিয়ে বিছানায় ফেলে জড়িয়ে ধরে বলল, ঘুমাও। ও বাঁধন ছেড়ে বলল, কষ্ট করে সুন্দর করে সাজলাম বাইরে যাওয়ার জন্য। দিলে তো নষ্ট করে? রিয়ান এবার চোখখুলে পিটপিট করে তাকিয়ে দেখল ওকে। তারপর কপালে একটা চুমু দিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে বলল, সমস্যা নেই। সুন্দর থাকলেও আমি দেখবো, কাকের বাসা হলেও আমি দেখবো। সো ইট’স ওকে। এখন ঘুমাও তো। রিয়ান এমনভাবে ধরেছে যে নড়তে পারছে না। শেষমেশ হাল ছেড়ে দিয়ে রিয়ানের মাঝে মুখ লুকিয়ে ফেলল। এই একটা জায়গায় আসলে মমর এত ঘুম পায়! কি যে আছে জায়গায়টায় বুঝতে পারে না।
আধা ঘন্টা ঘুমিয়ে তারপর উঠল দুজনে। অনিমা ডাকতে এসেছে নাস্তার জন্য। রিয়ান ওর দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল। মম মুখ ভার করে বলল, একদম হাসবে না। তোমার জন্য আমার সাজটা নষ্ট হয়ে গেছে। রিয়ান মুখে হাত দিয়ে বলল, আচ্ছা আচ্ছা। তারপর ফ্রেশ হতে চলে গেল। মম আবার আয়নার সামনে এসে মাথার চুল আঁচড়াতে লাগল। সব জট পাকিয়ে গেছে। শাড়িটাও এদিক ওদিক কুঁচকে গেছে। সব ঠিকঠাক করে মম রিয়ানের টিশার্ট আর জিন্স বের করে রাখল। রিয়ান বের হলে বলল, এগুলো পরে তৈরী হয়ে নাও। আমি নিচে যাচ্ছি। রিয়ান কিছু বলার আগেই ও নিচে চলে এল।
সবাই টেবিলে বসে আছে। নাস্তা রান্নাঘর থেকে এনে দিচ্ছে ফুলি। মম গিয়ে হাত লাগালো। তুলি ভাবি ওকে মানা করে বলল, কি করছো? কোথায় বের হবে; গিয়ে নাস্তা করবে। তা না করে কাজে লেগে যাচ্ছো। মম মানা করে দিয়ে বলল, আমি ঠিক আছি। একটুই তো। রিয়ান এর মাঝে তৈরী হয়ে চলে এল। নাস্তা সব আনা শেষ হলে সবাই বসে পড়ল খেতে। রিতু জুস নিতে নিতে বলল, কোথায় যাবি ভাইয়া? রিয়ান স্যান্ডুয়েচে কামড় দিতে দিতে বলল, মৈনট যাবো ভাবছি। বর্ষা প্রায় চলে এল। বৃষ্টিও হয়েছে মাঝে মধ্যে। ভালো লাগবে। তারপর দেখি টুকটাক ঘুরবো। নীলিমা বলল, লং ড্রাইভে যাবে তাহলে। রিয়ান বলল, কারেক্ট। তারপর সবাই টুকটাক কথা বলে খাওয়া শেষ করল।
রিয়ান আর মম বেরিয়ে পড়ল। ওদের অন্তত দুই তিন ঘন্টা লাগবে মৈনটে যেতে। মম জানালা খুলে রেখেছে। বাতাসে ওর চুল উড়ছে। ও উৎসুক হয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। রিয়ান বলল, আমাকে কেমন লাগছে বললে না তো? মম ওর দিকে ফিরে বলল, মহারাজাকে তো প্রতিদিনই ভালো লাগে। রিয়ান একটা হাসি দিল। মম বলল, জানো, আব্বু আমাদের দুই বোনকে নিয়ে অনেক আগে একবার মৈনটে এসেছিল। কি যে মজা হয়েছিল!
– আসলেই তো। এতদিন হয়ে গেল এখনো আমার সাথে তোমাদের দুই বোনের গল্প করোনি।
– আজকে করব তাহলে। যেদিন গিয়েছিলাম সেদিন সকালবেলা ও ঘুম থেকে উঠেছিল আগে। তাই আম্মু ওকে আগে তৈরী করে দিয়েছিল। আমি যখন উঠে দেখলাম ও তৈরী হয়ে গেছে। আমার সেকি কান্না। ভেবেছিলাম আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছে। আম্মু এসে অনেক বুঝালো। তাও কান্না থামে না। তারপর আব্বু এসে একটা চকলেট দিতেই নাক টানতে টানতে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। আম্মু আমাকে তৈরী করে দিয়ে নিজে তৈরি হয়ে নিল।
– তোমাকে কেমন লাগছিল বলতো? চিন্তা করলে কেমন লাগবে? চোখ দিয়ে আর নাক দিয়ে পানি পড়ছে।
ভেবেই হেসে ফেলল রিয়ান। মম রিয়ানকে আসতে করে একটা চাপড় মেরে হাসতে লাগল।
ওরা তিন ঘন্টা পর মৈনটে এসে পৌছালো। গাড়ি থেকে নামতেই বাতাসে মন জুড়িয়ে গেল। মম জুতা খুলে পানির কাছে এসে দাঁড়ালো। নদীর ঢেউয়ে পা ভিজে যাচ্ছে। রিয়ানও এসে ওর পাশে দাঁড়াল। মম বলল, আমি আর আমার বোন ঘাটের কাছে এসে পানিতে পা ভিজিয়ে ছিলাম। কিন্তু জুতা না খুলে। সেজন্য যা বকুনি খেয়েছিলাম আম্মুর কাছে! আমি তো পিছলে পড়েও যেতাম নদীতে। আব্বু থাকায় সময়মতো ধরে ফেলেছিল। রিয়ান ওর হাত ধরে বলল, তুমি পড়ে গেলে আমার বউ কে হতো? মম হেসে ওর নাক টেনে দিল।
দুইজনে হাঁটা ধরল। কায়াকিং পয়েন্টে যাবে। দুপুর হয়ে গেছে। রিয়ান ওকে নিয়ে গেল ভাসমান রেস্টুরেন্টে। সেখান থেকে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বের হতেই মম বায়না ধরল নৌকায় চড়বে বলে। আর কি করা। ওকে নিয়ে নৌকা চড়তে গেল। দুইজনে উঠে অনেকটা দূর গেল নৌকা বেয়ে। মম রিয়ানকে বলল, জানো, আমরা দুইজনেই নৌকা চড়ার জন্য বায়না ধরেছিলাম। আব্বু টিকেট নিতে আমার আর ওর মধ্যে প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে গেল কে আগে উঠবে। আমাদের এমন করা দেখে আম্মু দিল বকা। তখন এত মানুষের মাঝে নাকের চোখের পানি এক করে এমন কান্না দিলাম দুজনে। মম হাসল। রিয়ান ওকে বলল, ও এর নামটাই এখনো জানলাম না৷ মম মাথায় হাত দিয়ে বাড়ি দিয়ে বলল, এত কিছু বললাম আর নামটাই বলিনি!? মৌনী। আমার বোনের নাম ফারজানা আফরিন মৌনী।
মৌনী নামটা শুনে এক বড় ধাক্কা খেল রিয়ান। নৌকা চালানো থেমে গেল। মম একলা চালাতে পারছে না। পানিতে গোল হয়ে ঘুরছে। মম জিজ্ঞেস করল, কি হলো? নৌকা চালাও। পাড়ে যেতে হবে তো। আমি একলা পারছি না। তাও রিয়ানের কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। পাঁচ মিনিট পর রিয়ান নৌকা বেয়ে পাড়ে চলে এল। নৌকা থেকে উঠে এল দুজনে। রিয়ান হাঁটা ধরল সামনের দিকে। মম তাল মিলাতে পারছে না ওর গতির সাথে। হঠাৎ রিয়ানের কি হলো মমর মাথা কাজ করছে না। ও ভীড় সামলে দেখল রিয়ান গাড়িতে গিয়ে বসে আছে।
মমও গাড়িতে গিয়ে বসল। রিয়ানকে জিজ্ঞেস করল, আমরা কি ব্যাক করব? রিয়ান উত্তর না দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল। সারারাস্তা কোনো কথা হলো না ওদের। বাড়িতে এসেও সোজা রুমে চলে গেল। ফ্রেশ হয়েও বিছানায় শুয়ে রইল। সন্ধ্যায় নাস্তা করতেও নামল না। রুম অন্ধকার করে শুয়ে রইল। রাতে ঘুমানোর সময়ও ওর জন্য অপেক্ষা করল না। ঘুমিয়ে গেল ওর আগে। মম বালিশে মাথা রেখে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। রিয়ান চোখের উপর হাত দিয়ে শুয়ে আছে। মম মন খারাপ করে অন্য দিকে ফিরে শুয়ে গেল। হুট করে রিয়ানের এমন পরিবর্তনে ওর চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল।
চলবে…