মরিচাধরা_মনের_খাঁচা লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা পর্বঃ ০২

#মরিচাধরা_মনের_খাঁচা
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ০২

এই কে আপনি হ্যাঁ আর আমার বাড়িতে কী করছেন ?

নিঝুম কথাটা শেষ করে দাঁড়ালো না। ছেলেটাকে সাইড কাটিয়ে ভেতরে চলে গেলো। ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো নিঝুমের দিকে। নিঝুম কাঁধের ব্যাগটা ড্রয়িংরুমের সোফায় ছুঁড়ে ফেললো।

জোরে জোরে বললো, মা কোথায় তুমি ? মা এই লোকটা কে আর আমাদের বাসায় কী করছে ?

নিঝুমের মা সেলিনা হোসেন কিচেন থেকে দ্রুত বের হয়ে রাগি গলায় বললো, কী হয়েছে এভাবে অভদ্রের মতো চেঁচামেচি করছিস কেনো ঝুম ?

মা এই লোকটা ক,,,

নিঝুম কথাটা শেষ করার আগেই তার মায়ের পেছন থেকে আরেকজন ভদ্র মহিলাকে বের হতে দেখে চুপ করে গেলো। ভদ্র মহিলা কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছে নিঝুমের দিকে।

সেলিনা নিঝুমের পেছনে অয়নকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বুঝলো নিঝুম কেনো চেঁচামেচি করছে।

সেলিনা হোসেন মুচকি হেঁসে বললো, এটা তোর আন্টি অহনা আর অহনার ছেলে অয়ন। এতোদিন দেশের বাইরে ছিলো তাই ওদের সাথে যোগাযোগ ছিলো না। কিছুদিন আগে দেশে ফিরেছে আর আমাকে খোঁজে বের করেছে। অহনা আমার অনেক ছোটবেলার বান্ধবী, বান্ধবী কম বোন বেশি।

নিঝুম খানিকটা লজ্জা পেলো নিজের কাজে। জোর পূর্বক হেসে দুজনকেই সালাম দিলো। অয়ন কপাল কুঁচকে সালামের উত্তর নিলেও অহনা জাবেদ মুচকি হেসে সালামের উত্তর নিলেন। নিঝুম নিজের ব্যাগটা সোফা থেকে তুলে অনেকটা দৌড়ে চলে গেলো নিজের রুমে। অহনা হেসে দিলো নিঝুমের কাজে।

সেলিনা হোসেন একটু লজ্জিত হয়ে বললো, আসলে আমার মেয়েটা খুব দুষ্টু।

অহনা হাসিটা বজায় রেখে বললো, সেটাই দেখছি।

৪.
মুখে পানির ফোঁটা পরতেই চোখ মেলে তাকালো নিঝুম, পাশেপাশে তাকিয়ে মানুষের ছুটে চলা দেখতে লাগলো। বৃষ্টি থেকে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করছে সবাই। কারণ এই সময়ের বৃষ্টিটা ভালো নয় স্বাস্থ্যের জন্য। গরম শেষে শীতের আগমনের অপেক্ষায় আছে সবাই। এই সময়ের বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর কিংবা সর্দিকাশি অনিবার্য। তবু নিঝুম নিজের জায়গা থেকে নড়লো না। চোখ বন্ধ করে উপরের দিকে মুখ তুললো। বৃষ্টির ফোঁটা আছড়ে পড়ছে মায়াবী মুখটায়। অয়নকে প্রথম দেখেই ভালোলেগে গিয়েছিলো নিঝুমের। এরপর থেকে নিঝুমের বাড়িতে প্রায় মাকে নিয়ে আসতো অয়ন আবার কখনো বা নিঝুম তার মায়ের সাথে অয়নের বাড়ি চলে যেতো। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতো অয়নকে। ভালোলাগা একসময় ভালোবাসায় রুপ নেয়। তবে অয়ন সবসময় নিজের অ্যাটিটিউড বজায় রেখে চলতো। নিঝুম আড়ালে অয়নকে মিস্টার অ্যাটিটিউড বলেই ডাকতো। তার ঠিক দু’মাস পরেই অয়নের সাথে নিঝুমের বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। নিঝুম সেটা জানতে পেরে রুমের দরজা বন্ধ করে গান বাজিয়ে ইচ্ছে মতো নেচেছিলো সেদিন। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলো মিস্টার অ্যাটিটিউডের অ্যাটিটিউড সে ভেঙে ছাড়বে। কিন্তু বিয়ের পর এতো যত্নে আগলে রাখা অনুভূতিগুলো বৃথা মনে হয়েছিলো নিঝুমের কাছে।

আপা আপনে বৃষ্টিতে ভিজতাছেন কেনো ?

নিঝুম তাকিয়ে দেখলো সাথী দাড়িয়ে আছে, মাথায় একটা পলিথিন কাগজ দিয়ে।

বৃষ্টি দেইখা ঐ ছাউনির নিচে দাঁড়াতেই দেখি আপনে এহনো এইহানে বইয়া রইছেন।

নিঝুম কাঁপা গলায় বললো, তুমি বৃষ্টিতে ভিজছো কেনো ? তোমার মেয়ের তো সমস্যা হবে।

আপনে এইখানে বইয়া থাকলে আপনেরও জ্বর হইবো। দেখেন কেমন শীতে কাঁপতাছেন আপনে। তাড়াতাড়ি চলেন আমার সাথে।

সাথীর সাহায্যে পাশের একটা ছাউনির নিচে গিয়ে দাঁড়ালো নিঝুম। সত্যি এখন বেশ শীত লাগছে তার। গায়ের কালো শাড়ীটাও ভিজে একাকার হয়ে গেছে। মাথার হিজাব ভিজে কপাল বেয়ে পানি পড়ছে। নিঝুম আশপাশে তাকিয়ে বুঝলো সন্ধ্যা নেমে আসছে। কখন এতোটা সময় পার হয়ে গেছে টের পায়নি।

সাথী আমায় বাড়ি যেতে হবে, অনেক দেরি হয়ে গেছে।

এই বৃষ্টি মাথায় নিয়া কেমনে যাইবেন ?

আমার সমস্যা হবে না, তুমি থাকো আমি আসছি।

নিঝুম বের হতে গেলে সাথী বললো, আপা আপনে দাঁড়ান আমি আগে আপনের জন্য একটা রিকশা ঠিক কইরা আসি।

নিঝুমকে কিছু বলতে না দিয়েই সাথী চলে গেলো। সাথীর আচরণে বুঝতে পারলো সেও নিঝুমের মতো খুব চঞ্চল। একটু পরই সাথী আবার ফিরে এলো।

চলেন রিকশা পাইছি।

তোমার কাছে ফোন আছে ?

সাথী সাথে সাথে পলিথিনে মুড়ানো একটা বাটন ফোন বের করে বললো, হ আছে তো। আপনে কাউরে কল দিবেন ?

নিঝুম সাথীর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিজের নাম্বার তুলে ডায়াল করলো। তারপর আবার ফোনটা সাথীর দিকে এগিয়ে দিলো।

এটা আমার নাম্বার কোনো প্রয়োজন হলে ফোন দিও।

সাথী মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। রিকশায় উঠার পর সাথী হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালো নিঝুমকে। কিছু কিছু খনিকের পরিচয় সারাজীবন আমাদের মনে একটা দাগ কেটে যায়। নিঝুমের জীবনেও সাথী মেয়েটা তেমন একটা দাগ কেটে গেলো। বাসায় গিয়ে কলিংবেল চাপতেই দরজা খোলে দিলো অহনা।

নিঝুমকে দেখে ব্যস্ত হয়ে বললো, কোথায় ছিলি সারাদিন ? চিন্তায় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো জানিস ?

নিঝুম অহনার গালে হাত রেখে বললো, এতো চিন্তার কী আছে, আমি কী বাচ্চা মেয়ে ?

অহনা খপ করে নিঝুমের হাত ধরে বললো, একি তোর হাত এমন বরফের মতো ঠান্ডা কেনো ?

অহনা অস্থিরতায় প্রথমে খেয়াল করেনি নিঝুম পুরো ভেজা।

ব্যস্ত হয়ে বললো, এভাবে ভিজলি কী করে ?

বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে সেটা হয়তো বুঝতেই পারোনি।

রুমে ছিলাম তাই খেয়াল করিনি। তুই যা তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নে গিয়ে। এই সময়ের বৃষ্টি একদম ভালো না, ভিজলেই অসুখ করবে।

নিঝুম মুচকি হেসে খুঁড়িয়ে সামনে এগিয়ে যেতেই অহনা আবার নিঝুমের হাত ধরে ফেলে।

পায়ে আবার কী হয়েছে ?

একটু কেটে গেছে মা।

কই দেখি দেখি।

অহনা চমকে উঠলো নিঝুমের পা দেখে, ব্যান্ডেজটা রক্তে ভিজে গেছে।

একি এখনো রক্ত বের হচ্ছে তো আর তোর পায়ের জুতো কোথায় ?

নিঝুম ক্লান্ত গলায় বললো, রাস্তায় জুতো ছিঁড়ে গিয়েছিলো আর খালি পায়ে হাঁটতে গিয়ে কাঁচের টুকরো গেঁথে গেছে পায়ে ৷

অহনা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, একটুও খেয়াল নেই তোর নিজের উপর। কেনো এতো কেয়ারলেস তুই ?

একটু কেটেছে তো, ঠিক হয়ে যাবে।

তুই তাড়াতাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ব্যান্ডেজ চেঞ্জ করে নে। কাঁদা আর রক্ত গিয়ে একদম বাজে অবস্থা এটার।

নিঝুম ছোট করে বললো, হুম।

অহনা নিঝুমকে ধরে তার রুমে নিয়ে গেলে নিঝুম নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। অহনা বাইরে এসে দেখলো ফ্লোরে কাঁদা আর রক্ত মিশ্রিত পায়ের ছাপ। ব্যাথিত মুখ করে গৃহপরিচারিকা খুশিকে বললো পরিষ্কার করে ফেলতে। সে কাটাছেঁড়া সহ্য করতে পারে না, নাহলে নিজেই নিঝুমের পা নতুন করে ব্যান্ডেজ করে দিতো। সে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। তার কিছুক্ষণ পরই আবার কলিংবেল বেজে উঠলে একটু পর খুশি গিয়ে দরজা খোলে দিলো। অয়ন কপাল কুঁচকে দরজার সামনের ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। কাঁদা আর রক্ত মিশ্রিত পায়ের ছাপ সেখানে স্পষ্ট। খুশিকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই ভেতরেও একই ছাপ দেখতে পেলো। খুশিকে কিছু না বলে ছাপ অনুসরণ করে নিঝুমের রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো। রুমের দরজা খোলা ছিলো, ভেতরে তাকিয়ে সোফায় দেখতে পেলো নিঝুমকে। সোফায় পা তুলে বসে পায়ের ব্যান্ডেজ খুলছে ধীরে ধীরে।

অয়ন ভেতরে ঢুকে বললো, তোমার পা কাটলো কীভাবে ?

হঠাৎ আওয়াজে একটু চমকে উঠলো নিঝুম। সামনে তাকিয়ে অয়নকে দেখে নিজেকে সামলে নিলো।

বেশ শান্ত গলায় বললো, কাঁচের টুকরো দিয়ে।

অয়ন নিঝুমের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো, তুমি পারবে না দাও আমি করে দিচ্ছি।

নিঝুম আগের ন্যায় শান্ত গলায় বললো, নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যকারো হাতে তুলে দেওয়ার মতো কঠিন কাজ করতে পারলাম আর এটা করতে পারবো না ? চিন্তা করবেন না আমি নিজেরটা করে নিতে পারবো।

অয়ন নিঝুমের কথায় পাত্তা দিলো না। কারণ নিঝুম সবসময় এমন স্পষ্ট কথা বলে। যে কথায় কোনো জড়তা আর আড়ষ্টতা থাকে না। যা বলার একদম মুখের উপর বলে দেয়।

অয়ন নিঝুমের পায়ের ব্যান্ডেজ খুলতে শুরু করলে নিঝুম বললো, কৃতজ্ঞতা দেখাতে এসেছেন ?

অয়ন স্বাভাবিক গলায় বললো, আমি তোমাকে বলিনি নয়নাকে খোঁজে বের করে তার ভুল ভাঙাতে।

নিঝুম ব্যাথিত গলায় বললো, আর কতদিন আপনার চক্ষুশূল হয়ে থাকতাম বলুন। দেড় বছর তো কম সময় না।

অয়ন কিছু না বলে তুলোয় মেডিসিন লাগিয়ে কাটা জায়গা পরিষ্কার করতে লাগলো। মেডিসিন লাগতেই নিঝুম ব্যাথায় মুখ কুঁচকে ফেললো।

তা দেখে অয়ন বললো, নিজেকে যতই কঠিন দেখানোর চেষ্টা করো, তুমি সেটা নও।

নিঝুম তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, তাহলে আপনি আমাকে কেমন দেখতে চেয়েছিলেন ? স্বামী আরেকজনের কাছে চলে যাচ্ছে বলে বাংলা সিনেমার নাইকার মতো কেঁদে ভাসাবো ? মিস্টার অয়ন আমি কোনো অবলা নারী নই। নিজের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে কেনো আপনাকে আপনার প্রাক্তনের কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছি সেটা আপনি কোনোদিন জানতে পারবেন না। আমি হেরে গিয়ে আপনাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি না। প্রয়োজন হলে গত দেড় বছরের মতো সারাজীবন কাটিয়ে দিতাম তবু অন্যকারো হতে দিতাম না আপনাকে। কিন্তু আমি আজ নিরুপায়।

অয়ন শান্ত কন্ঠে বললো, নিরুপায় হয়েই হোক আর যে জন্যেই হোক তুমি হেরে গেছো।

নিঝুম মুচকি হেঁসে তাকিয়ে রইলো অয়নের দিকে আর অয়ন ভ্রু কুঁচকে। ব্যান্ডেজ করা হয়ে গেলে অয়ন চলে গেলো আর নিঝুম ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিলো। মাথাটা ভারী ভারী লাগছে তার।

৫.
বউ সেজে বসে আছে নিঝুম, বিয়েটা নিয়ে ভীষণ খুশি থাকলেও এখন বেশ ভয় লাগছে। অয়ন তার সাথে কখনো প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেনি। আর যখন কথা বলেছে নিঝুমের কাছে তাকে প্রাইমারি স্কুলের হেড মাস্টার মজাই মনে হয়েছে। নিঝুমের ভাবনার মাঝে রুমে ঢুকে আসে অয়ন। নিঝুম বেড থেকে নেমে অয়নকে সালাম করতে গেলে অয়ন হাত ধরে নিঝুমকে দাড় করিয়ে ফেলে।

শক্ত গলায় বলে, ভুলেও আমার স্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করবে না।

নিঝুম একহাতে নিজের ঘোমটা তুলে অবাক কণ্ঠে বললো, বউ হওয়ার চেষ্টা করতে কেনো যাবো ? আমি তো অলরেডি আপনার বউ।

অয়ন এবার নিঝুমের দুবাহু চেপে ধরে বললো, একদম স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা করবে না। আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি আর তাই আমার থেকে তুমি যত দূরে থাকবে তোমার জন্য তত ভালো।

নিঝুম দিগুণ রেগে বললো, তাহলে বিয়ে করছেন কেনো আমাকে ? আমি কী নাচতে নাচতে আপনার কাছে এসে বলেছিলাম বিয়ে করেন আমাকে ?

অয়ন নিঝুমের হাত ছেড়ে হতাশ গলায় বললো, মা জোর করে আর ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করে বিয়ে করিয়েছে।

নিঝুম হাত তালি দিয়ে বললো, বাহ্ কী সুন্দর কাহিনি ? মা জোর করে বিয়ে দিয়েছে। কেনো আপনি কী বাচ্চা ছেলে, যে ধরে বিয়ে দিয়ে দিলো ?

মা বলেছিলো আমি বিয়েটা না করলে সে সুইসাইড করবে। আমি তাও মানতে না চাইলে সত্যি সত্যি ঘুমের মেডিসিন খেয়ে হসপিটালে ভর্তি হয়েছিলো।

নিঝুম শান্ত ভঙ্গিতে বেডে বসে বললো, তো আপনার কী মনে হলো ? মায়ের কথায় বিয়ে করে বাসররাতে আমাকে এসে বলবেন আমি অন্য মেয়েকে ভালোবাসি, তোমাকে স্ত্রী হিসাবে মানি না। আর আমি কাঁদতে কাঁদতে বললো ঠিক আছে আমি চলে যাবো, আপনি আপনার প্রেমিকাকে বিয়ে করে নিয়েন। এসব ভেবে থাকলে সেগুড়েবালি। আপনাদের মা ছেলের জন্য আমি কেনো কোরবানি গরু হতে যাবো। আমি কোথাও যাচ্ছি না, আমাকেই সারাজীবন আপনার স্ত্রী হিসাবে সাথে নিয়ে চলতে হবে।

অয়ন রেগে বললো, তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো ?

নিঝুম উঠে দাঁড়িয়ে অয়নের শেরওয়ানির কলার ধরে নিজের উচ্চতার ব্যবধান একটু কমিয়ে বললো, আসলে আমি আপনাকে ভালোবাসি। তাই আমিও প্রতিজ্ঞা করছি, এই বাড়ি থেকে আর আপনার জীবন থেকে কোথাও যাচ্ছি না আমি।

অয়ন শক্ত গলায় বললো, আমিও দেখবো তুমি কীভাবে থাকো আমার জীবনে। তুমি নিজে সেচ্ছায় চলে যাবে এই বাড়ি থেকে আর আমার জীবন থেকেও।

নিঝুম বললো, ওকে চ্যালেঞ্জ ?

অয়ন নিজের কলার থেকে নিঝুমের হাত ছাড়িয়ে বললো, চ্যালেঞ্জ একসেপ্ট।

মাথায় শীতল স্পর্শ পেয়ে অতীত থেকে বেড়িয়ে এলো নিঝুম। চোখ খুলতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে তার। পায়ের ব্যাথা আর বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর এসে গেছে তার। নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে অহনাকে ঝাপ্সা দেখতে পেলো নিঝুম।

অহনা ব্যস্ত গলায় বললো, তোর তো জ্বরে গা পু্ড়ে যাচ্ছে। আমি এখনই অয়নকে ডেকে আনছি হসপিটালে যেতে হবে। নিঝুম দুর্বল হাতে অহনার হাত টেনে ধরলো।

অহনা আবার পাশে বসে বললো, কিছু লাগবে তোর ?

নিঝুম জিহ্বা দিয়ে নিজের শুষ্ক ঠোঁট ভিজিয়ে ধীর গলায় বললো, উনাকে ডাকবেন না মা। আমার জীবনের কোনো কিছুর সাথেই আর উনাকে জড়াতে চাই না আমি। দেড় বছরে অনেক জ্বালিয়েছি তাকে আর জ্বালাতন করতে চাই না।

অহনা ডুকরে কেঁদে উঠে বললো, আমি তোর জীবনটা নষ্ট করে দিলাম তাই না রে মা ?

নিঝুম একটা শুকনো ঢোক গিলে বললো, আমাদের হাতে কিছু থাকে না মা। আল্লাহ তাআলা যেমন ভেবে রাখেন তেমনই হয় আমাদের জীবনে। তাই নিজেকে দোষ দিবেন না দয়া করে।

অহনা ব্যস্ত গলায় বললো, তোর কষ্ট হচ্ছে তুই কথা বলিস না চুপ করে শুয়ে থাকে। আমি তোর মাথায় জলপট্টি দিচ্ছি।

নিঝুম চোখের পলক ফেলে বললো, এতো রাতে জেগে থাকলে আপনার শরীর খারাপ করবে।

অহনা ধমক দিয়ে বললো, চুপ করে শুয়ে থাক তুই। আগে এই মেডিসিনটা খেয়ে নে।

অহনা নিঝুমের মাথাটা একটু উঁচু করে ধরে মেডিসিন খাইয়ে দিলো। আবার ভালো করে শুইয়ে দিয়ে মাথায় জলপট্টি দিতে লাগলো।

অহনা মনে মনে বললো, তুই বড় অভাগা রে অয়ন। কাঁচের আঘাতে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচাতে এতো প্ল্যান করে তোকে হীরা এনে দিলাম। কিন্তু তুই বোকার মতো হীরা ফেলে সেই কাঁচের পিছনে ছুটে চলেছিস। একদিন ঠিক নিজের ভুল বুঝতে পারবি কিন্তু সেদিন হয়তো কিছু করার থাকবে না তোর।

চলবে,,,,,
❌কপি করা নিষেধ❌

(নিজের কষ্টে তৈরি জিনিসটা যদি অন্যকেউ নিজের বলে দাবি করে সেটার যন্ত্রণাটা সেই বুঝে যে তৈরি করেছে। এটা কারো সাথে না হওয়া পর্যন্ত কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারবে না কেউ। মাঝে মাঝে অনেকে ম্যাসেজ করে বলে আপু তোমার গল্প কপি করে নিজের নামে চালাচ্ছে। গল্পের লেখিকার জায়গায় নাম কেটে নিজের নাম বসিয়ে দিব্বি চালিয়ে দিচ্ছে। দু একটা কথা শুনানো আর রিপোর্ট করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। ক’জনকেই বা বলা যায়, এভাবেই চলতে থাকে৷ গল্পের মাঝে মাঝে নিজের নাম দিয়ে দেওয়ায় অনেকেই অনেক কিছু বলেছেন। তাদের বলার মতো কিছু নেই আমার। আগেই বলেছি যার গল্প নিয়ে কোনোরকম প্রবলেম আছে নিরবে এড়িয়ে যেতে পারেন। আগের গল্পটা নিয়েও অনেকে অনেক কাহিনি করেছেন। অপরিচিত মানুষের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় সেটাও অনেকে শিখেনি, সেটা তাদের কমেন্টের ভাষা দেখলেই বুঝা যায়। আমি তো কাউকে ডেকে আনিনি গল্প পড়তে। যারা আমাকে ভালোবাসে, আমার গল্পকে ভালোবাসে তারা এমনই পড়বে। আপনাদের আচরণে মাঝে মাঝে লেখার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলি। আপনাদের এমন আচরণের জন্যই মাঝে একটা গ্যাপ দিয়েছি, ভেবেছিলাম আর গল্পই লিখবো না। একটা বই প্রকাশ করার স্বপ্ন ছিলো পূরণ হয়ে গেছে৷ পরে আবার অনেককিছু ভেবে গল্পে ফিরে এলাম। কিন্তু আবার আপনারা একই রকম আচরণ শুরু করবেন ভাবিনি। আমি ঠিক করে নিয়েছি গল্প লেখা বাদ দিবো না বরং কমেন্ট পড়া বাদ দিবো। যার যা ইচ্ছে বলতে থাকেন। আমাকে যারা ভালোবাসে, আমার গল্প যারা ভালোবাসে আমি শুধু তাদের জন্য লিখবো। সবাই ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here