মরুর বুকে বৃষ্টি 💖 পর্ব-৩৫

0
1666

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি 💖
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৩৫

★ভার্সিটির মাঠের পাশে গাছের নিচে বসে আছে নূর। এমনি এমনি বসে নেই। কারও জন্য অপেক্ষা করছে ও। আসলে আজকে হিস্ট্রি প্রফেসর ওদের সবাইকে একটা প্রজেক্ট দিয়েছে। প্রজেক্ট টা দুজন মিলে করতে হবে। সবাইকে ফোর্থ ইয়ারের একজন সিনিয়রের সাথে এই প্রজেক্ট করতে হবে। কার সাথে কার পেয়ার হবে সেটাও প্রফেসর ডিসাইড করে দিয়েছে। নূরের কার সাথে পেয়ার হয়েছে তা সে জানেনা। তাই সে এখানেই বসে আছে। প্রফেসর বলেছে ওর যার সাথে পেয়ার হয়েছে সে নাকি এখানেই এসে দেখা করবে।

অনেকক্ষণ ধরে বসে থেকে নূর বিরক্ত হয়ে গেছে। নূর বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে চলে যেতে নিল। হঠাৎ একটা ইটের টুকরার সাথে পা বেজে পরে যেতে নেয় নূর। তবে পরে যাওয়ার আগেই কেউ এসে ওকে ধরে ফেললো। নূর মাথা তুলে দেখলো একটা ছেলে ওকে ধরে আছে। নূরের ব্যাপার টা কেমন যেন ভালো লাগলো না। নূর দ্রুত নিজেকে ছাড়িয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। ছেলেটা এখনো কেমন যেন হা করে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের পলকই যেন পরছেনা।

লোকটাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নূরের খুব অস্বস্তি লাগছে। নূর একটু গলা খাঁকারি দিয়ে উঠলো।
ছেলেটার এতক্ষণে ঘোর কাটলো। ছেলেটা তার ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে বললো।
–সরি সরি আপনাকে এতক্ষণ অপেক্ষা করানোর জন্যে। আসলে আমার ক্লাস চলছিল তাই আসতে দেরি হয়ে গেল।

নূর বুঝতে পারলো,তারমানে এই লোকটাই ওর প্রজেক্টের পার্টনার। নূর জোরপূর্বক মুচকি হেসে বললো।
–ইটস ওকে।

–প্রথমে পরিচয় পর্বটা জেনে নেয়া যাক? হাই অ্যাম শিশির।
কথাটা বলে শিশির ওর ডান হাতটা নূরের দিকে বাড়িয়ে দিল হ্যান্ডশেক করার জন্য।

নূর অনিচ্ছা সত্ত্বেও সৌজন্যবোধ দেখানোর জন্য সে নিজের ডান হাতের আঙুল গুলো শিশির হাতে হালকা করে ছুঁইয়ে বললো।
–অ্যাম মেহরুমা নূর।

শিশির নূরের হাত ধরে থেকেই বললো।
–ওয়াও নূর। ইটস রিয়েলি নাইস নেম। একদম তোমার মতোই তোমার নামটাও সুন্দর।

নূর তাড়াতাড়ি ওর হাতটা সরিয়ে নিয়ে একটু সৌজন্যমূলক হাসলো। লোকটার কথাবার্তায় চরম অস্বস্তিবোধ করছে নূর। তাই টপিক চেঞ্জ করে বললো।
–আমরা কাজ শুরু করি প্লিজ? এমনিতেও দেরি হয়ে গেছে অনেক।

–ইয়া ইয়া শিওর। লেটস গো।

দুজন ওদের প্রজেক্টের কাজ শুরু করে দিলো। তবে শিশিরের চোখ যেন নূরের ওপর থেকে সরছেই না। কাজের ফাঁকে ফাঁকে শুধু নূরকেই দেখে যাচ্ছে। কিন্তু নূরের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। ও ওর মতো কাজ করে যাচ্ছে।
_____

বিহান আদিত্যের রুমে এসেছিল একটা জরুরি ফাইল নিতে। আদিত্যই ওকে বলেছিল। ফাইল টা নিয়ে বের হয়ে করিডর দিয়ে হেঁটে আসতে নিলে হঠাৎ কিছু কথা কানে আসতেই বিহান কদম আপনাআপনি থেমে গেল। পাশেই আয়াতের রুম। রুমের ভেতর আয়াত আর ওর বেস্ট ফ্রেন্ড কথা বলছে। সেসব কথাই বিহানের কানে এসেছে। আয়াতের বেস্ট ফ্রেন্ড সামিয়া আয়াত কে বলছে,
–তুই রাফিন সাহেবের প্রপোজাল মানা করে দিলি কেন? উনার মতো একজন ছেলে তোকে প্রপোজ করেছে সেটাতো তোর সৌভাগ্য।জানিস উনাকে বিয়ে করার জন্য কতো মেয়ে হাহাকার করছে? আর তুই কিনা সোজা মানা করে দিলি? আরে একবার ভেবেও তো দেখতে পারতিস?

আয়াত বলে উঠলো।
–ইয়ার তুইতো সব জানিসই তাও কেন এসব বলছিস?

–হ্যাঁ হ্যাঁ জানি জানি। তুই আর তোর পাগল ভালোবাসা। আরে সারাজীবন কি মানুষ একটার পেছনেই পরে থাকে নাকি? জীবনে মুভ অন করা শেখ। অন্য কাওকে ভালোবাসার চেষ্টা করে দেখ। দেখবি অনেক সুখী হবি।

আয়াত হতাশার সুরে বললো।
–এইটাই তো আমার দ্বারা সম্ভব নারে। তুই জানিস আমি চেষ্টা করলে হয়তো সবই পারবো। হয়তো একবারের জন্য চেষ্টা করে এভারেস্টও জয় করতে পারবো,হয়তো বা চেষ্টা করে সাতরে সমুদ্রও পার হতে পারবো। তবে অন্য কাওকে ভালোবাসার বিন্দুমাত্র ক্ষমতা আমার নেই। আমার দ্বারা সেটা কখনোই হবে না। অন্তত এই জনমে তো আর সম্ভব না। মানুষ এক জীবনে যতটুকু ভালোবাসতে পারে আমি তার সবটুকু শুধু একজনকেই উজাড় করে দিয়েছি। এখন আর অন্য কাওকে দেওয়ার মতো কিছুই বাকি নেই আমার মাঝে। তুই জানিস? আমার সেই কিশোরী কাল থেকে। যখন আমি ভালোবাসা কি সেটা ভালোকরে জানতামও না। তখন থেকেই আমার এই ছোট্ট মনে শুধু একজনেরই বাস হয়েছে। শুধু একজনকেই আমার শয়নেস্বপনে মনের কোঠায় বসতবাড়ি করে দিয়েছি। ধীরে ধীরে যতো বড় হয়েছি সে আমার সবটা জুড়ে দখল করে নিয়েছে। এখন যে সে ছাড়া আমার মাঝে আমি বলতে আর কিছুই বাকি নেই। হ্যাঁ সে না হোক কোন বড়ো ব্যাক্তিত্য। তবুও আমার কাছে সে সবচেয়ে দামি। তার সবকিছুই আমার ভালো লাগে। তার কথা,তার চলাফেরা এমনকি তার বকাটাও আমার কাছে ভালো লাগে। জানি লোকে হয়তো আমাকে পাগল বলবে। তবে এটাই সত্যি। তাকে ভালোবাসা শুধু আমার ইচ্ছে না,আমার প্রয়োজন। তাকে ভালোবাসা বন্ধ করা মানে আমার নিঃশ্বাস ফুরিয়ে যাওয়া। এখন তুই বল আমি কিভাবে অন্য কাওকে ভালোবাসবো? শুধু শুধু কাওকে আমি মিথ্যে আশা দিতে চাইনা।

সামিয়া এবার একটু রাগী সুরে বললো।
–তা তুই যার জন্য এতো দিওয়ানি হয়ে আছিস, তার কি তোর কোন কিছুতে আসে যায়? সেতো তোকে পাত্তাই দেয়না। তোকে কুকুর বিড়ালের মতো তাড়িয়ে দেয়। তাহলে তুই কেন ওই নিষ্ঠুর জালিম লোকের জন্য নিজেকে জ্বলাচ্ছিস? ওই স্বার্থপর বদমাইশ লোকটা তোর এতো ভালোবাসার যোগ্য না।

আয়াত ধরা গলায় বললো।
–এভাবে বলিস না। উনিও উনার জায়গায় ঠিক আছেন। উনারাও নিজের বাধ্যবাধকতা আছে। তাই তার প্রতি এখন আর কোন অভিযোগ নেই আমার। হয়তো আমিও উনার জায়গায় থাকলে এটাই করতাম।
কথাগুলো বলতে বলতে আয়াতের চোখ ভরে উঠলো। আয়াত একটু থেমে আবার ব্যাথিত কন্ঠে বলে উঠলো।
–তবে একটা কথা কি জানিস? যতই উনার সামনে স্ট্রং আর স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করিনা কেন। ভেতরে ভেতরে আমি প্রচুর ভেঙে পড়ি। আমার এই অবুঝ মনটাকে কিছুতেই বুঝাতে পারিনা। এই পাগল মনটা যে এখনো তাকে পেতে চায়। তাকে অতি আপন করে কাছে পেতে চায়। তার বুকে মাথা রেখে একটু শান্তি পেতে চায়। তার হাতে হাত রেখে অনেক দূর চলতে চায়। জানিস, যখন আশেপাশে সবাইকে তার প্রিয়জনের সাথে হাসিখুশি দেখি। তখন আমার অনেক হিংসে হয়। মনে হয় আমার সাথেই কেন এমন হলো? কেন আমি আমার প্রিয়জনকে কাছে পাইনা? কেন তার সান্নিধ্যে পাইনা। আমাকে চাওটা কি খুব বেশি? বলনা সামিয়া আমি কি খুব বেশি লোভি হয়ে গিয়েছি?
বলতে বলতে আয়াতের চোখের পানি অঝোরে গড়িয়ে পড়ছে।
সামিয়া আয়াতকে জড়িয়ে ধরে ওকে শান্ত করতে লাগলো। আসলে আয়াতকে শান্তনা দেওয়ার কোন ভাষাই নেই ওর কাছে। মেয়েটার জন্য খুব খারাপ লাগে ওর।

এতক্ষণ ধরে এদের কথাবার্তা শুনে বিহান পুরো স্তব্ধ হয়ে গেল। হাত পা অসাড় হয়ে এলো। আয়াতের ভালোবাসা যে এতো গভীর তা কখনো বুঝতেই পারেনি বিহান। ওর নিজেকে আজ সত্যি সত্যিই দুনিয়ার সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ মনে হচ্ছে। ও কিভাবে পারলো এই মেয়েকে এতো কষ্ট দিতে। কিভাবে পারলো ওকে কাঁদাতে। এসব ভেবে নিজের অজান্তেই বিহানের চোখে পানি এসে গেল। বিহান হাতের আঙুল দিয়ে নিজের চোখের পানি ধরে সামনে এনে অবাক চোখে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো।
–তুই কি কাঁদছিস বিহান। হ্যাঁ তোর তো কাঁদারই দরকার। শুধু পানি না তোর চোখ দিয়ে তো রক্ত ঝড়া দরকার। এমন হিরাকে পায়ে ঠুকরানোর জন্য তোর ভয়ংকর শাস্তি হওয়ার দরকার। কতো কষ্ট দিয়েছিস তুই মেয়েটাকে।
বিহান নিজেকে একটু ঠিক করে নিয়ে মনে মনে বললো।
–তবে আর না। অনেক হয়েছে। এবার আমিও একটু স্বার্থপর হবো।এবার আর অন্য কিছুর কথা ভাববো না আমি। এই মেয়েটাকে দুনিয়ার সব খুশী দিয়ে ভরিয়ে দেব। এখন থেকে আমার জীবনের শুধু একটাই উদ্দেশ্য। আয়াতকে সর্বসুখ দেওয়া।
কথাটা ভেবে বিহান ওখান থেকে চলে গেল।
_____

ক্লাস শেষে নূর গেটের কাছে এসে দাড়িয়েছে। আদিত্য প্রায় সময়ই ওকে নিতে আসে। আর নূর না মানলেও মনে মনে ও নিজেও আদিত্যের অপেক্ষা করে। আদিত্যের সাথে সময় কাটাতে তার ভালো লাগে। যদিও নূর উপরে উপরে সেটা দেখায় না। তবে তার মনটা ঠিকই আদিত্যের মায়ায় আটকে পরেছে।

নূরের ভাবনার মাঝেই একটা গাড়ি এসে ওর সামনে থামলো। নূর তাকিয়ে দেখলো ওই শিশির ছেলেটা। শিশির গাড়ি থেকে নেমে নূরের সামনে এসে বললো।
–আরে নূর বাসায় যাচ্ছো বুঝি? চলো আমি তোমাকে ড্রপ করে দিবো।

নূর জোরপূর্বক মুচকি হেসে বললো।
–না না তার কোন দরকার নেই। আমি চলে যেতে পারবো। আপনাকে কষ্ট করতে হবে না।

–এটা কেমন কথা নূর? আমরা তো এখন ফ্রেন্ডস তাইনা? তো আমাদের মাঝে এতো ফর্মালিটির কি আছে? আর তোমাকে ড্রপ করে দিলে আমার কষ্ট না বরং আরও ভালো লাগবে। প্লিজ আই ইনসিস্ট।

নূর পরে গেল এক মহা মুশকিলে।নূরের ইচ্ছে নেই শিশিরের সাথে যাওয়ার। তবে লোকটা এতো রিকুয়েষ্ট করছে না গেলেও কেমন অভদ্রতা দেখায়। তাছাড়া লোকটা নূরের প্রজেক্টে অনেক হেল্প করেছে। যার জন্য নূরের এসাইনমেন্ট ক্লাসে সবচেয়ে ভালো হয়েছে। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও লোকটার কথা রাখত হবে। নূর একবার আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো আদিত্যর গাড়ি এসেছে কিনা। নাহ কোথাও দেখতে পেল না। তাই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অগত্যা শিশিরের সাথে যেতে রাজি হয়ে গেল। শিশিরের খুশি আর দেখে কে। শিশির হাসিমুখে গাড়ির দরজা খুলে নূরকে গাড়িতে উঠে বসতে বললো। নূর শেষমেশ এগিয়ে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।

আর ওই সময়ই আদিত্য ওর গাড়ী নিয়ে চলে এলো। রাস্তায় একটু জ্যাম থাকায় আদিত্যর পৌঁছাতে একটু দেরি হয়ে গেছে। আদিত্য গাড়ির ব্রেক কষতেই সামনে তাকিয়ে দেখলো নূর অন্য একটি ছেলের গাড়িতে উঠছে। আর ছেলেটি কেমন হাসিমুখে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। এই দৃশ্য দেখে আদিত্যের চোয়াল আর হাতের মুঠো শক্ত হাতে এলো। আর দেখতে দেখতেই ওদের গাড়ি স্টার্ট হয়ে চলতে শুরু করলো। আদিত্যও রাগী চোখে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ওদের পেছনে পেছনে ছুটলো। পুরো রাস্তা আদিত্য ওদের গাড়ির পেছনে পেছনেই এলো।

বাসার সামনে এসে নূরদের গাড়ি থামলো। আদিত্যও ওর গাড়িটা ওদের থেকে কিছুটা দূরে থামালো। গাড়ি থামিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো। নূর গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালে শিশিরও বেড়িয়ে এলো। হ্যান্ডশেক করার জন্য নূরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে হাসিমুখে বললো।
–ওকে দেন, বাই নূর। আজকের দিনটা অনেক স্পেশাল ছিল। থ্যাংক ইউ সো মাচ নূর। কাল আবার দেখা হচ্ছে তাহলে।

নূর অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভদ্রতার খাতিরে শিশিরের হাতে হালকা হাত ছোয়ালো। তারপর শিশির চলে গেল। আর নূরও ভেতরে ঢুকে গেল।
আর আদিত্য শুধু রাগে ফেটে যাচ্ছে। আদিত্য ওর এক লোককে ফোন করে বললো।
–শোন আমি তোমাকে একটা গাড়ির নাম্বার বলছি। এই গাড়ির মালিকের সব ডিটেইলস চাই আমার। আজকের ভেতরেই।
কথাটা বলে আদিত্য ফোন কেটে দিয়ে একটু পরে সেও বাসার ভেতর ঢুকলো।

নিজের রুমে এসে আদিত্য যেন কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছে না। কেমন অস্থির অস্থির লাগছে ওর। সবকিছু ভেঙে গুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।আদিত্যের হঠাৎ বিহানের বলা কথাটা মনে পড়লো,”আদি নূরের জীবনে যদি অন্য কেও চলে আসে, আর নূরের যদি তাকে ভালো লেগে যায় তাহলে কি করবি তুই? “।
নাহ না না কখনোই না। নূর শুধু আমার, শুধুই আমার। ওর জীবনে আসা তো দূরে থাক। ওর দিকে চোখ তুলে তাকানোরও অধিকার কারোর নেই। কারোর না। আর যে চোখ ওর দিকে তাকাবে তাকে এই দুনিয়ার আলো থেকে বঞ্চিত করে দেব আমি।

নূর একটু ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে এসে আদিত্যের রুমের দিকে উঁকিঝুকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে আদিত্য এসেছে কিনা। তখনই ওর মা এসে যথারীতি নূরের হাতে কফির মগ ধরিয়ে দিয়ে বললো।
–যা আদিত্যকে কফি দিয়ে আয়।

আজ আর নূরের রাগ হলোনা। বরং মনে মনে খুশিই লাগলো। এই উছিলায় আদিত্যকে দেখা যাবে এটা ভেবে। নূর বিনাবাক্যে কফির মগ নিয়ে আদিত্যের রুমের দিকে এগুলো। রুমের দরজায় এসে কয়েকবার টোকা দিল।কিন্তু ভেতর থেকে কোন সাড়াশব্দ এলো না। তাই নূর এবার দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। ভেতরে এসে দেখলো আদিত্য বেডের ওপর দুই হাতে মাথার চুল চেপে ধরে মাথা নিচু করে বসে আছে। নূর আদিত্যের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো।
–আপনি ভেতরেই আছেন তাহলে কথা বললেন না কেন?

আদিত্য কিছুই বলছে না। এখনো আগের মতোই আছে। নূর একটু ভ্রু কুঁচকে বললো।
–কি হয়েছে চুপ করে আছেন কেন?

আদিত্য তাও চুপ।

নূর এবার একটু চিন্তিত সুরে বললো।
–আপনার কি মাথা ব্যাথা করছে? এইযে গরম গরম কফি খেয়ে নিন।মাথা ব্যাথা সেরে যাবে।

আদিত্য তবুও আগের মতোই আছে। নূরের এবার বিরক্ত লাগছে। ও কখন ধরে কথা বলে যাচ্ছে আর লোকটা কোন জবাবই দিচ্ছে না। নূর তাই কফির মগটা বেডের পাশে ছোট টেবিলের ওপর রেখে বললো।
–আপনার কফি রাখলাম খেয়ে নিয়েন।
কথাটা বলেই নূর চলে যেতে নিলে আদিত্য আগের মতোই মাথা নিচু অবস্থায়ই গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো।
–ছেলেটা কে ছিল?

আদিত্যের কথায় নূর থেমে গেল। আদিত্যের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো।
–ছেলে? কোন ছেলে?

–যার সাথে গাড়িতে আসলে সেই ছেলেটা কে ছিল?

নূর কিছুক্ষণ ভাবার পর বুঝতে পারলো আদিত্য শিশিরের কথা বলছে। নূর ব্যাপার টা একটু আচ করতে পারলো। তাহলে কি উনি শিশিরের সাথে আমাকে দেখে এমন মুখ ফুলিয়ে আছেন। কথাটা ভাবতেই নূর একটা বাঁকা হাসি দিল। আব আয়েগা মাজা। কাল আমাকে জ্বালিয়ে ছিল না, আজ আমার পালা। আজকে আমিও ওনাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে একদম কয়লা করে দেব। মাথার ভিতরে এসব সয়তানি বুদ্ধি পাকিয়ে নূর একটু আহ্লাদী কন্ঠে উঠলো।
–ওওও উনার কথা বলছেন? উনি আমার ফ্রেন্ড। বলতে গেলে একদম স্পেশাল ফ্রেন্ড। অনেক ভালো লোক উনি। দেখতেও মাশাল্লাহ একদম হি,,,,

নূরের কথা পুরো হওয়ার আগেই আদিত্য এক ঝটকায় মাথা তুলে অগ্নিলাল চোখে নূরের দিকে তাকালো। আদিত্যর এমন ভয়ংকর চাহনি দেখে নূরের অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল। ভয়ে ওর কন্ঠনালী বন্ধ হয়ে গেল। আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে নূরের হাত চেপে ধরে দেয়ালের সাথে আটকে দিয়ে চোয়াল শক্ত করে রাগী কন্ঠে বললো।
–ডোন্ট ইউ ডেয়ার নূর। অন্য কাওকে হিরো বলার চেষ্টাও করবে না তুুমি। তোমার হিরো শুধু আমি বুঝতে পেরেছ তুমি। আর কিসের ফ্রেন্ড হ্যাঁ? একটা কথা মনে রাখবে নূর, আমি সবকিছু সহ্য করতে রাজি আছি। তবে এমন কিছু করোনা যা আমি কখনো মাফ করতে পারবো না।

আদিত্যের কথা নূর পুরোটা বুঝতে না পারলেও, আদিত্য যে ভয়ংকর রেগে আছে সেটা ঠিকই বুঝতে পারছে ও। তাই ভয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো।
–আ আমার ভার্সিটির সিনিয়র ভাইয়া উনি। আজকে উনার সাথে একটা প্রজেক্টে কাজ করতে হয়েছে। ত তাই একটু পরিচিত হয়েছি। আর কিছু না।

নূরের কথায় আদিত্যর রাগ একটু কমে এলো। আদিত্য চোখ বন্ধ করে নিজেকে একটু সামলে নিল। তারপর নূরকে ছেড়ে দিয়ে বলে উঠলো।
–ঠিক আছে এখন যাও।

নূর যেন এটারই অপেক্ষায় ছিল। আদিত্য বলতেই এক দৌড়ে ছুটে পালালো রুম থেকে।
_____

নীলা বারবার আবিরকে ফোন করে যাচ্ছে তবে আবির ফোন ধরছে না। আসলে আবির নীলাকে কাল দেখা করতে বলেছিল কিন্তু নীলা বাসা থেকে বেরো বার সুযোগ পায়নি। আর সেই জন্যই আবির রেগে বম হয়ে আছে। নীলা কাল থেকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু ফোন ধরছেই না। এভাবে আরও একবার ফোন দিল নীলা। এবার ফোনটা রিসিভ হলো। নীলা একটু খুশী হয়ে যেই কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবির কাঠ কাঠ গলায় বলে উঠলো।
–বারবার ফোন দিয়ে বিরক্ত করছ কেন? তুমি থাকো তোমার কাজ নিয়ে। আমার মতো নগগ্ন ব্যাক্তিকে আবার তোমার মনে পরছে কেন?

–আরে আমার কথাটা তো শুনবেন,,

–কোন কথা নেই আর। আজ থেকে তোমার আমার ব্রেকআপ। আমার বাবা সুন্দর একটা মেয়ে দেখেছেন আমার জন্য। সে আমাকে সময় আর চুমু দুটোই দেওয়ার জন্য এভার রেডি হয়ে বসে আছে। তাই আমি তাকেই বিয়ে করবো। তোমাকে সময়মত বিয়ার কার্ড পৌঁছে দেব। এসে আমার সুন্দর বউটা দেখে যেও।
কথাটা বলেই আবির খট করে ফোনটা কেটে দিল। তারপর বাঁকা হেসে মনে মনে বললো, এখন দেখ কেমন লাগে। আমাকে ইগনোর করা তাইনা?

এদিকে ফোন কাটতেই নীলা রাগে কটমট করে উঠলো। আবিরের কথা শুনে ওর রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। এতো বড়ো সাহস, আমার সাথে ব্রেকআপ? আবার আমাকে রেখে বিয়ে করার ধান্দা হচ্ছে? করাচ্ছি বিয়ে। এমন মজা দেখাবো বাপের জন্মে বিয়ের নাম ভুলে যাবে।ঘুঘু দেখেছ ঘুঘুর ফাঁদ দেখোনি। আজতো তোমাকে দিনের বেলায় যদি আকাশের তারা না দেখিয়ে দিয়েছও তো আমার নামও নিলা না। মনে মনে একটা প্ল্যান ভেবে সয়তানি হাসি দিল নীলা।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here