#তাসনিম_তামান্না
#মহব্বত
পর্ব-৬
🍁🍁🍁
আজ আকাশে সূর্যের দেখা মেলেনি। সূর্য আর মেঘ লুকোচুরি খেলায় ব্যাস্ত সেই সকাল থেকেই। আজ আওহাবাটা শীতল শান্ত মৃদু ঠান্ডা বাতাস বইছে। ক্যাম্পাসের স্টুডেন্টরা আজ আর কেউ ক্লাসে নেই সবাই মাঠে আড্ডায়, গল্প, গানে মেতে উঠেছে সবাই পরিবেশ উপভোগ করছে। মিথিলাও তাদের সাথে যোগ দিয়েছে মনটা তার আজ অকারণেই খুব ভালো লাগছে। অবশ্য সেদিনের পর মিথিলার মন খারাপ হয়নি বললেই চলে। সেদিনের পর ফাইয়াজ মাঝে মাঝে ফোন দেই। ফাইয়াজের কন্ঠ শুনলেই মিথিলার খারাপ মনটা হুট করেই ভালো হয়ে যায়। আর ফাইয়াজের ছোট ছোট কেয়ার মেসেজগুলা মিথিলার মনের অন্য রকম টেউ খেলে যায়। মিথিলা আর মিথিলার ফেন্ডরা আড্ডা ছেড়ে উঠে পড়ে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে এমন পরিবেশে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না কিন্তু বাসায় যেতে দেরি হলে সবাই টেনশন করবে। মিথিলা আর মিথিলার ফেন্ডরা মাঠ পেড়িয়ে আসার সময় জিসানের ডাকে ওরা সবাই চমকে দাড়িয়ে গেলো। জিসান ওদের সামনে আসতেই জিসানকে অবস্থা দেখে ওরা অবাক হলো চোখগুলো লাল, চুল এলোমেলো। এমন না জিসান খারাপ সে অত্যন্ত ভালো ছেলে বলে সবাই যানে তার এমন অবস্থা দেখে যেকেউই চমকে যাবে।
-‘আপনার এমন অবস্থা কেনো ভাইয়া?'(সেতু)
জিসান হেসে বলল ‘সেটা তোমাদের বান্ধবীই ভালো জানে!’
জিসানের হাসির কারণ বা কথার মানে সামনে থাকা কোনো রমণীই বুঝতে পারলো না। মিথিলা না বুঝেই বলল
-‘মানে কি বলছেন ভাইয়া এগুলা? আমি তো আপনাকে সেদিনই বলেছি কেনো রিলেশন করবো না তারপরও আপনি এসব কথা কেনো বলছেন? এসব কথার তো কোনো মানেও দেখছি না তাহলে?'(মিথিলা)
জিসান আবারও হাসলো সে হাসির প্রাণ নেই নিঃপ্রাণ। অদ্ভুত দেখাছে জিসানকে।
-‘মিথু তুমি ঠিক করো নি এটা সেদিন তুমি আমাকে মিথ্যা বলছিলে খুব বড় মিথ্যা'(জিসান)
মিথিলা অবাক হলো জিসানের কথায় সে কোনো মিথ্যা বলে তাহলে জিসান বলল কেনো সে বড় মিথ্যা বলছে।
-‘ভাইয়া আপনি কি বলছেন এগুলা আমি কখন আপনাকে মিথ্যা বললাম? আর আপনাকে মিথ্যা বলার কোনো কারণ দেখছি না'(মিথিলা)
-‘হ্যাঁ তুমি মিথ্যা বলেছ আমার মনে আশার আলো জাগিয়েছ'(জিসান)
-‘আরে থামেন ভাইয়া একটু পরিষ্কার করে বলবেন আপনি কি বলতে চাইছেন?'(মিথিলা)
-‘কি বলতে চাইছি বুঝতেছ না আচ্ছা আমাকে কি তোমার এতোটাই খারাপ মনে হয় যে তোমার বিয়ে হয়ে গেছে শুনে আমি এমন কিছু করবো যাতে তুমি কষ্ট পাও?'(জিসান)
মিথিলা থমকালো তাহলে কি জিসান সবাইকে বলে দিবে ওর বিয়ে হয়েছে? সবাই জেনে যাবে ওর বিয়ে হয়ে গেছে তাও ‘ফাইয়াজ আরহাম’ এর সাথে জিসান কি জানে কার সাথে ওর বিয়ে হয়েছে? ভীত দৃষ্টি তাকিয়ে রইলো জিসানের মুখশ্রীতে জিসান আবারও হাসলো
-‘জানো মিথিলা আমি মনে করি ভালোবাসতে দুইটা মন লাগে দু’জন দুজনের প্রতি বিশ্বাস ভরসা লাগে, সম্মান লাগে যেখানে এগুলা নাই সেখানে ভালোবাসা ও নাই তুমি যখন আমার প্রপোজাল একসেপ্ট করছিলে তোমাকে হইতো বোঝাতে পারবো না কতটা খুশি হয়েছিলাম কিন্তু যখন তুমি আমাকে বলছে ভালোবাসো না তখন যেনো দুনিয়া থমকে গিয়েছিলো কিন্তু তুমি যখন পরক্ষণে বললে প্রেমে তুমি বিশ্বাসই নও বিয়েতে বিশ্বাসই তখন মনের কোণে আশার আলো জেগে উঠে ছিলো ভেবেছিলাম তোমাকে নিজের আপন করে নিয়ে আমার ভালোবাসাটা তোমায় অনুভব করাবো কিন্তু না…(দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে আবার বলল)….ঔ যে বলে না ভাগ্য আসলে তুমি আমার ভাগ্যে নাই আমার বাবা-মাকে পাঠিয়ে ছিলাম তোমায় বউ করে আনার জন্য কিন্তু তারা গিয়ে শুনলো তোমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে তুমি আগে থেকেই বলতে পারতে তুমি ম্যারিড তাহলে এতো কষ্ট পেতে হতো না…(একটু থেমে আবার বলল) যাইহোক ভালো থাকো যার সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে খুব ভাগ্যবান আর টেনশন করো না তোমাদের মাঝে আসবো না জোর করে আর যাই হোক ভালোবাসা হয় না আর ক’দিন পর তোমার এক্সাম ভালো করে দিও আসি'(জিসান)
জিসান কথাগুলো বলে চলে গেলো। মিথিলা সেগুলা শুনলো কিন্তু কিছু বলল না শুধু দীর্ঘ শ্বাস আর এক চিলতে হাসি ফুটলো। সত্যিই অদ্ভুত! সব কিছু অদ্ভুত ওর বিয়ে টাও অদ্ভুত! এই অদ্ভুত সবকিছুই রহস্যে ঘেরা যার উত্তর পাও খুব কঠিন।
.
কিছু মানুষের সবটা জানতে নেই তার আড়ালে না হয় কিছু গল্প থাকুক।
✍️~তাসনিম তামান্না
.
-‘আ হা রে বেচারার মুখটা দেখে খুব মায়া লাগতেছে রে'(সেতু)
-‘তাহলে যা গলায় ঝুলে পড়'(নাফু)
-‘আরে দূর ছেঁকা খাওয়া পোলা নিবো না ছেঁকা না খেলে ঝুলে পড়তাম'(সেতু)
-‘ছেঁকা খাওয়া ব্যাক্তিই কিন্তু প্রচন্ড রকমের ভালোবাসাতে পারে। পারলে জানটাও দিয়ে দিতে পারে'(সুমু)
-‘তাহলে সেটা কেমন ভালোবাসা যে কি না প্রথম ভালোবাসাকে ভুলে দ্বিতীয় বার ভালোবাসে এমন ভালোবাসার গুল্লি মারি'(তানু)
-‘তা প্রথম জনের জন্য কি তার জীবনে আর কেউ আসতে পারবে না? সে দ্বিতীয় বার ভালোবাসতে পারবে না?প্রথম জন তো অদ্ভুত ভাবে সুখেই থাকবে অন্য কাউকে নিয়ে তাহলে অপর ব্যাক্তিটি কেনো পারবে না? হোয়াই?'(সুমু)
-‘ও এম জী কি বলেন আফারা আমার মাথা ঘুরাই!'(সেতু)
-‘আরে থামতো তোরা কি সব বকবক করেই যাচ্ছিস কিছুই মাথায় ঢোকে না'(মিথিলা)
-‘তুই বদল তাই তোর মাথায় ঢুকবে না'(নাফু)
মিথিলা এদের কথায় হাই লেভেলের বিরক্ত হয়ে আছে। গেট পেরোতেই মিথিলার চোখ আটকে গেলো ব্লাক কারের সাথে হেলান দিয়ে ওফ হোয়াইট টিশার্টের সাথে কালো জিন্স মুখে ব্লাক মাক্স আর মাথায় হেট পরে দাড়িয়ে থাকা সুদর্শন যুবকের দিকে সাথে সাথে বিরক্তি কর্পূরের মতো উড়ে গিয়ে একরাশ ভালো লাগা কাজ করলো। মিথিলাকে দেখে ফাইয়াজ ওদের সামনে এসে দাড়ালো। মিথিলার ফেন্ডরা বুঝতে না পেরে বলল ‘আবার কার আশিক আসলো? কে ভাই আপনি? আপনি কার আশিক? ‘(সেতু)
ওর কথা শুনে ফাইয়াজের পেট ফেটে হাসি আসলো কিন্তু সেটা গিলে নিলো। মিথিলা ভরকে গেলো ওর কথায় তাই চোখ দিয়ে ইশারায় কিছু বোঝাতে চাইলো ও না বুঝেই আবার বলল ‘কি? এমন করিস কেন? মুখে বলতে কষ্ট হয়?'(সেতু)
মিথিলা লজ্জায় পড়ে গেলো ফাইয়াজের সামনে তাই আর কিছু না বলে মনে মনে ওদের গুষ্টি উদ্ধার করতে থাকলো। ফাইয়াজ শুকনো কাশি দিয়ে কথা বলতে যাবে তার আগেই আবার বলে উঠলো ‘ভাই আপনি কি যক্ষা রুগী এই অবেলায় কাশি দেন কেন?'(তানু)
ফাইয়াজ এবার শব্দ করেই হেসে ফেললো ওরা বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে রইলো। তা দেখে ফাইয়াজ বলল ‘বাহ! শালীগুলা ভালোই পাইছি?’
ওরা ফাইয়াজের কন্ঠ শুনে বুঝে গেলো এটা ফাইয়াজ। ওরা লজ্জা পেয়ে হাসার চেষ্টা করে বলল ‘সরি সরি ভাইয়া আসলে না বুঝে ফাজলামি করে ফেলছি! প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড! ‘(নাফু)
-‘আরে না ইট’স ওকে। তো আপনারা কেমন আছেন?'(ফাইয়াজ)
ওরা কুশল বিনিময় করে ফাইয়াজ মিথিলাকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো। অবশ্য কয়েক জন আড়চোখে দেখছিলো কে ছেলেটা? কইদিন আগে প্রপোজাল একসেপ্ট করলো এটা একটু অস্বাভাবিক লাগলো।
.
গাড়ি চলছে আপন গতিতে। ওদের মধ্যে চলছে পিনপতন নীরবতা। মিথিলা নিরবতা ভেঙে বলল ‘আচ্ছা আপনার সঠিক সময় আসবে কখন?’
-‘কেনো? আমার ভালোবাসার আগুনে পুড়ার খুব শখ হচ্ছে’
ফাইয়াজের কথায় মিথিলা লজ্জা পেয়ে আর কিছু বলল না আবারও নিরবতা গ্রাস করলো। মিনিট কয়েক পর ফাইয়াজ নিজে থেকেই বলল ‘সঠিক সময় সঠিক সময়েই আসবে ব্যাক্তিটা যখন একান্তই আমার তখন এতো তাড়াহুড়ার কিছুই দেখছি না এক্সাম খারাপ হলে তোমার সঠিক সময় আসবে না’
#চলবে
#Tasnim_Tamanna
[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। নেক্সট নাইস না লিখে গঠন মূলক কমেন্ট করবেন খুশি হবো। রি-চেক করি নাই ]