#তাসনিম_তামান্না
#মহব্বত
পর্ব-৭
🍁🍁🍁
মিথিলা খেয়াল করলো এটা ওদের বাড়ির বিপরীত রাস্তা তাই ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলো ‘এদিকে কোথায় যাচ্ছেন এটা তো আমার বাসার রাস্তা না’
-‘আমি তোমার বাসার রাস্তা চিনি’
-‘তাহলে এদিকে কোথায় যাচ্ছেন’
-‘গেলেই দেখতে পাবে’
মিথিলা আর কিছু বললো না জানে এখন বোম ফাটালেও ফাইয়াজ মুখ খুলবে না। তাই চুপচাপ বসে রইলো।
.
গাড়ি থামাতেই মিথিলা অবাক হলো ফাইয়াজের বাসায় মানে মিথিলার শশুর বাড়ি। মিথিলা ভুলেই গিয়েছিল এটা তার শশুড়বাড়ির রাস্তা মাথায় ওতটা আসেনি। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো ফাইয়াজ এখানে কেনো এখন নিয়ে আসলো। মিথিলা নিজ মনে উত্তর খুঁজে না পেয়ে। মিথিলা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো ‘হঠাৎ এখানে?’
-‘হুম চলো গেলে দেখতে পাবে’
মিথিলা বাসায় ভিতরে আসতেই আরেক দাফা অবাক হলো মিথিলার মা-বাবা, বোন আর বোনের বররা এখানে কিন্তু কেনো কেউ তো তাকে কিছু বলে নি যে আজ এখানে আসবে এমনকিছু তো তার জানা নেই। কেউ কেনো বলল না তাকে? মিথিলাকে দেখে ফাইজা এগিয়ে এলো। মিথিলা ফাইয়াজের বাবা সাথে কুশল বিনিময় করে টুকটাক কথা বলল। রান্নাঘর থেকে মিথিলার মা আর ফাইয়াজের মার গলার আওয়াজ ভেসে আসছে সাথে মিথিলার বড় বোন আর মেঝ বোন ও আছে। কি হচ্ছে না হচ্ছে মিথিলার মাথায় কিছু ডুকছে না।
-‘ফাইজা এগুলা কি হচ্ছে?’
-‘কই কি হচ্ছে?’
-‘মানে সবাই একসাথে কেনো? আমাকে তো কেউ কিছু বলে নি’
-‘হি হি হি আমি বলতে বারণ করছিলাম তোমাকে চমকাবো তাই’
-‘তুমি বড্ড দুষ্টু পাজি’
-‘হি হি আমি জানি’
-‘আচ্ছা হইছে রান্নাঘরে চলো’
মিথিলা রান্নাঘরে এসে সবার সাথে কথা বলল। তারপর ফাইজার সাথে ওর রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখে সবাই গল্পে মেতে আছে। দুপুরে খেয়ে মিথিলার বড়বোন আর তার বর চলে গেলো ইনপটেন কাজ থাকায় তার পর পরই মিথিলার মেঝ বোনরাও চলে গেলো। সন্ধ্যার দিকে মিথিলারা বের হবার সময় সারাদিনের আকাশের গুমোট ভাবটা ভেঙে বৃষ্টি নামলো। এমন অবস্থা দেখে ওদের আর বাসায় যেতে দিলো না। পকড়া, চা, বিস্কুট নিয়ে বসলো আবার আড্ডা। মিথিলার সামনে এক্সাম হওয়ায় মিথিলা ফাইজার রুমে গিয়ে পড়তে বসলো। রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে মিথিলা ফাউজার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। মিথিলার ঘুমঘুম ভাব আসতেই দরজায় টকটক আওয়াজ হলো। ফাইজা বসে ফোন টিপছিল। মিথিলা উঠতে নিলেই ফাইজা বলল ‘দাড়াও আমি দেখছি’
মিথিলা কে এসেছে কৌতূহল মিটানোর জন্য দরজার দিকে তাকিয়ে রইলো। ফাইজা দরজা খুলতেই ফাইয়াজ একপ্রকার ঠেলে রুমে ডুকে ধমকে উঠে বলল ‘এতোক্ষণ লাগে দরজা খুলতে?’
ফাইজা পিটপিট করে তাকিয়ে বলল ‘মাত্র কয়েক সেকেন্ড লাগছে এমন করিস কেন? আর এখন এখানে তোর কি কাজ?’
-‘এখানে আমার কোনো কাজ নাই। মিথিলা আসো!’
মিথিলা চমকে বলল ‘আমি কই যাবো’
ফাইয়াজ সোজা উত্তর দিয়ে বলল
-‘আমার রুমে ঘুমাতে যাবে’
মিথিলা আর ফাইজা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো ফাইয়াজের দিকে। ফাইয়াজ গলা ঝেড়ে বলল -‘কি হইছে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? আমার বউকে আমি নিতে আসছি তাতে এতো রিয়াক্ট করার কি আছে বুঝলাম না’
ফাইয়াজ কথাটা বলে মিথিলাকে হাত ধরে বেড থেকে নামিয়ে হাটা দিলো রুমের দিকে মিথিলা তখনও তাকিয়ে আছে ফাইয়াজের দিকে। পিছন থেকে ফাইজার হাসির শব্দ আসছে আর বলল -‘হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝি বুঝি তো আগেই তোর বউকে নিয়ে যেতে পারতি এমন করার কি আছে আজব!…’
আর কোনো কথা কানে আসলো না মিথিলার। ফাইয়াজ রুমে এসে ধরাম করে দরজা আটকে দিলো মিথিলার কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না এমন কেউ করে কি না ওর জানা নেই।
-‘শোনো তুমি আর তোমার জামাই একবাড়ি তে থেকেও জামাই ছাড়া অন্য রুমে থাকতেই পারো বাট আমি পারি না’
কথাটা বলে ফাইয়াজ ওয়াসরুমে চলে গেলো। মিথিলা বেকুব হয়ে দাড়িয়ে রইলো ফাইয়াজের কথা যেনো মাথার উপর দিয়ে গেলো।
– ‘জামাই মানে ফাইয়াজই তো ওর জামাই তাহলে? কি বলে গেলো বউ ছাড়া থাকতে পারে না মানে আমি তো ওনার বউ দূর কি বলে এগুলা ওফ্ফ বুঝি না’
মিথিলার ভাবনার মাঝে ফাইয়াজ এলো।
-‘কি হলো দাড়িয়ে আছো কেনো? ঘুমিয়ে পড়ো তোমার না ঘুম পাচ্ছে’
মিথিলা ঢোক গিললো ফাইয়াজের সাথে একরুমে আবার থাকতে হবে ভেবে জড়তা কাজ করছে। অস্তিত্ব নিয়ে বলল
-‘আমি ফাইজার রুমে গিয়ে ঘুমাই?’
-‘ফাইজার ভাই ফাইয়াজের সাথে ঘুমাতে কি সমস্যা?’
মিথিলা ফাইয়াজের ব্যবহারে অবাক না হয়ে পারছে না তাই অবাক নিয়েই বলল -‘আপনি আজ হঠাৎ এমন অদ্ভুত বিহেব করছেন কেনো?’
-‘কি করছি ব্যাখ্যা সহ প্রাকটিকাল দেখাও’
-‘মানে কি? এদেখেন এখনো আজিব বিহেব করছেন’
-‘আজিবের এখনো কিছুই দেখো নি। পিকচার আভি বাকি হে!’
মিথিলা মনে মনে ভয় পেলো এই ছেলের মাথায় কি ঘুরছে সেটা বোঝা মুশকিল। মিথিলা আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর মিথিলা টের পেলো ফাইয়াজ লাইট ওফ করে মিথিলার পাশে কম্বল টেনে শুয়ে পড়ছে। মিথিলাও আর কিছু না বলে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো। মিথিলার ঘুমঘুম ভাব আসতেই ওর পেটেও ওপর ঠান্ডা শুড়শুড়ি অনুভব করতেই লাফিয়ে উঠে। ফাইয়াজ তাও হাত সড়ালো। উল্টো ধমক দিয়ে বলল -‘দেখো বেশি ছটফট করলে কিন্তু আরো বেশি কিছু করে ফেলবো তখন কিছু বলতে পারবে না’
মিথিলা দমলো না ফাইয়াজের দিকে ফিরে আরো ছটফট করতে লাগলো। ফাইয়াজ মিথিলার ওষ্ঠ যুগল এক করে দিলো। মিথিলা স্থির হয়ে গেলো।
.
.
মিথিলার পরিক্ষার দিন এসে গেলো। ফাইয়াজ মিথিলাকে দিয়ে আসতো নিয়ে আসত। মিথিলার পরিক্ষা শেষ হওয়ার দু’দিন পরেই সবাই মিথিলা আর ফাইয়াজের বিয়ে নিয়ে আলোচনায় বসলো বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করার জন্য। বিয়ের ডেট ঠিক হতেই ফাইয়াজও প্রেস মিডিয়াকে জানিয়ে দিলো। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো ‘ফাইয়াজ আরহাম’ এর বিয়ের খবর। যে মেয়েগুলা ফাইয়াজের ক্রাস ছিল তারা ছেঁকা খেলো। মিথিলা তাদের কমেন্ট পড়ে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
.
মিথিলা সকালে ঘুম থেকে উঠে ফোন হাতে নিয়ে ওয়ানলাইনে যেতেই ঝটকা খেলো। মাথা ফাঁকা লাগতে শুরু করলো। মন একটা কথায় বলছে ‘এটা সত্যি না!’
#চলবে
#Tasnim_Tamanna
[আসালামু আলাইকুম। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন গঠন মূলক কমেন্ট করবেন। রি-চেক করি নাই]