মহব্বত পর্ব ৮

0
1234
  • #তাসনিম_তামান্না
    #মহব্বত
    পর্ব -৮

    🍁🍁🍁

    মিথিলা সকালে ঘুম থেকে উঠে ফোন হাতে নিয়ে ওয়ানলাইনে যেতেই ঝটকা খেলো। মাথা ফাঁকা লাগতে শুরু করলো। মন একটা কথায় বলছে ‘এটা সত্যি না!’

    ফাইয়াজ আর মডেল রাহির ঘনিষ্ঠ ছবি। একরাতের মধ্যে একপ্রকার তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। ছবি গুলা দেখার পর মিথিলার মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে অনুভূতি শূন্য লাগছে ওকে। কি করবে না করবে ভেবে পাচ্ছে না। মিথিলা ছবিগুলো ভালো করে দেখলো না ও ভুল দেখেনি এটা সত্যি। মিথিলা সবার কমেন্ট দেখে সেখানে ভালো খারাপ সবরকম কমেন্টই আছে। মিথিলা কয়েকটা কমেন্ট পড়লো ‘ফাইয়াজ আরহাম মুখোশ পরে থাকেন ওনার নাকি মেয়েতে এলার্জি এদিকে আবার গোপনে ফষ্টিনষ্টি করে’ ‘ফাইয়াজ আরহাম কখনো এমন করতে পারে না ওনি একজন ভালো মানুষ’ এমন হাজার ও কমেন্ট।

    মিথিলা আর কিছু না ভেবে ফাইয়াজের কাছে ফোন দিলো কিন্তু ফোন সুইচস্টপ। ফাইজার কাছে ফোন দিলো একই অবস্থা। মিথিলা দু’হাতে মুখ চেপে কেদে দিলো বার বার ফোন দিতে লাগলো ফাইয়াজের ফোনে কিন্তু একই অবস্থা।
    .
    প্রায় ২ঘন্টা পর মিথিলা ফাইয়াজকে ফোনে পেলো। কিন্তু ফাইয়াজ ফোন ধরলো না ইতি মধ্যে মিথিলার বাসার সবাই জেনে গেছে কিন্তু তারা বিশ্বাস করলেন না। মিথিলা বার বার ফোন দেওয়ায় ফাইয়াজ ফোন ধরে ধমকে উঠে বলল’কি সমস্যা বার বার ফোন দিচ্ছো কেনো?বিজি এখন আমি ফোন রাখো আর একবারও ফোন দিবে না’

    মিথিলাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিলো ফাইয়াজ। ফাইয়াজ মিথিলার সাথে আগে কখন এমন ভাবে কথা বলে নি মিথিলা রাগে অভিমানে কান্না বেরে গেলো। মিথিলার কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।
    .
    সন্ধ্যা হয়ে গেছে মিথিলাকে মিথিলার আম্মু অনেক বার ডেকেছে কিন্তু মিথিলা শোনে নি। বালিশে মুখ চেপে কান্না করছে। মিথিলা সারাদিন নাওয়াখাওয়া বাদ দিয়ে শুধু কান্নায় করে যাচ্ছে। কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে গেলো রাতে।
    .
    মাঝরাতে ফাইয়াজ মিথিলার রুমে আসলো। মিথিলার মাথায় আলত করে ওষ্ঠদয় ছোঁয়ালো। কানে কাছে গিয়ে বলল ‘আ’ম সরি মিথুরাণী আমি জানি তুমি আমার বিহেবিয়ারে কষ্ট পেয়েছ কালই সব প্রমানিত হয়ে যাবে এত কষ্ট দেওয়ার জন্য খুব সরি জান’
    .
    .
    সকালে ৯টার দিয়ে মিথিলার ঘুম ভাঙ্গলো। ঘুম ভাঙতেই মিথিলার মাথা ভার ভার লাগতে লাগলো। এটা কাল সারাদিন কাঁদার ফল। মিথিলা ফোন হাতে নিয়ে অনলাইনে ডুকতে গিয়েও ডুকলো ফাইয়াজের নিয়ে বাজে কথা লেখা থাকবে সেগুলা আর দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে না। ফোন চার্জে দিয়ে রুমের বাইরে এসে কারোর সাথে কোনো কথা না বলে। রান্নাঘরের ফ্লাক্স থেকে চা ঢেলে বিস্কিট নিয়ে খেলো। মিথিলার অবস্থা দেখে আফরোজা বেগমের বুকটা হু হু করে উঠলো।
    .
    আবার যে সেই সকালে রুমে ঢুকলো আর দুপুরে খেতেও বের হয়নি। সন্ধ্যার দিকে বাইরে থেকে অনেকের গলার আওয়াজ ভেসে আসছে মিথিলার কানে আজ সোসালমিডিয়াতেও যানি ফাইয়াজের নিয়ে বাজে কথা লেখা দেখতে হবে তাই। তাই তো স্লিপিংপিল খেয়ে সারাদিন ঘুমিয়ে ছিলো। বাইরে আওয়াজ শুনতে পেলো হাসিঠাট্টার। মিথিলা এটাতে অবাক না হয়ে পারলো না। শোয়া থেকে উঠে দরজার দিকে তাকাতেই চোখ থমকে গেলো ‘ফাইয়াজ’কে দেখে। ফাইয়াজ দরজা বন্ধ করে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুজে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে। মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট মিথিলা সেটা বুঝলো মিথিলার মন চাইছে ছুটে গিয়ে ফাইয়াজকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু গেলো না পৃথিবী সমান ভারী অভিযোগ, অভিমান হয়েছে তার ফাইয়াজের ওপরের। ফাইয়াজের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মিথিলার চোখ জালা করে কান্না আসলো। ফাইয়াজ চোখ খুলে মিথিলার দিকে তাকাতেই মিথিলা চোখ ফিরিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো। ফাইয়াজ বলল ‘কাঁদা শেষ নাকি আরো বাকি আছে। তোমার একটুও বিশ্বাস নাই আমার ওপর হাহ থাকবেই বা কেনো কে আমি?’

    -‘কি বলছেন আপনি? আমি একবার ও বলছি আমি আপনাকে বিশ্বাস করি না? উল্টো আমার ওপর রাগ দেখালেন! একবার তো আমাকে পুরোটা বলতে পারতেন’

    -‘আস্তে কথা বলো। দু’দিন ঠিক মতো খাওনি কেনো?’

    -‘আপনি খেয়েছিলেন?’

    -‘হ্যাঁ। না খেয়ে থাকার কি আছে?’

    মিথিলা অবাক হলো ফাইয়াজের কথায় এর প্রতি উত্তরটার খুঁজে পাচ্ছে না। ফাইয়াজ আবার বলল

    -‘থাক এতো ভাবতে হবে না। যাও ফ্রেশ হয়ে এসো আর দেখছ দু’দিনে নিজের চেহারা কি করেছ?’

    -‘ভালো করছি। আপনাকে নিয়ে সবাই খারাপ কথা লিখছে আর আপনি বলছেন আমি খাই নাই কেনো? সেগুলা দেখলে কার খেতে মন চাইবে?’

    -‘মিথু আমি তোমাকে আস্তে কথা বলতে বলছি এতো হাইপার হচ্ছো কেনো?’

    মিথিলা বিরক্তি নিয়ে তাকালো ফাইয়াজের দিকে ফাইয়াজ আবার বলল

    -‘আচ্ছা কোথায় খারাপ কথা লেখা আমিও একটু দেখি দেখাও তো’

    -‘আপনি আমার সাথে ফাইজলামি করতেছেন এটা কি ফাইজলামি করার সময়?’

    -‘আরে তুমি কাঁদছ কেনো বাচ্চাদের মতো’

    -‘আপনি ঔ মেয়েকে বিয়ে করবেন? ঔ মেয়ের সাথে সংসার করবেন? আমাকে ছেড়ে…. এ্যাঁ এ্যাঁ’

    -‘হ্যাঁ প্লানটা কিন্তু খারাপ না কি বল তুমি?’

    মিথিলা বিছানা থেকে উঠে। ফুলদানি নিয়ে ফাইয়াজের মাথায় মার গেলে ফাইয়াজ ধরে নেই। মিথিলাকে বুকে জড়িয়ে ধরে। মিথিলাও ফাইয়াজের বুকে মুখ গুঁজে কান্না করতে থাকে। ফাইয়াজ মিথিলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল

    -‘কি ভাবে ভাবলি পাগলি তোকে ছেড়ে চলে যাবো তুই জানিস তোকে আমি কত কষ্ট করে পেয়েছি।’

    মিথিলার কান্না কমে আসতেই ফাইয়াজ বলল

    -‘কান্না কাটির পর্ব শেষ করো ত তাড়াতাড়ি একটা জিনিস দেখাবো’

    মিথিলা চোখ মুছে নাক টেনে বলল ‘কি’

    মিথিলার ফোলা চোখ লালচে নাক ফাইয়াজের কাছে মিথিলাকে আদুরে লাগলো। পকেট থেকে ফোন বের করে মিথিলাকে একটা ভিডিও ফুটেজ দেখালো ভিডিওটা এমন ছিলো ফাইয়াজ টেবিলে বসে জুস খাচ্ছিল রাহি হঠাৎ করে এসে ফাইয়াজের ওপরে পড়ে কিন্তু এটা পিছন দিক থেকে মনে হবে ওরা কিস করছে আসলে সেটা না ওদের মধ্যে অনেক দূরত্ব ছিলো সুযোগ সময় বুঝে কেউ পিছন থেকে ছবি তুলে নেয়। ফাইয়াজ রাহিকে ঠেলে দাড় করিয়ে অবশ্য অনেক কথা শুনিয়েছে। বিস্ময়ে মিথিলার ওষ্ঠ যুগল ফাঁক হয়ে গেলো। সেটা দেখে ফাইয়াজ ঠোঁট চেপে হাসলো।

    -‘কেমন ছিল? পুরাই ফ্লমি তাই না এটা ট্রেইলার ছিলো পিকচার আভি বাকি হে’

    মিথিলা ফাইয়াজের দিকে ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকালো। কি বলবে কিছু বুঝতেছে না কিন্তু রাহি যে একটা ভিডিও তে কাঁদতে কাঁদতে বলছিল ‘ফাইয়াজ ওকে ঠকিয়ে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছে আর রাহিই বা কেনো এসব ফাইয়াজের নামে উল্টো পাল্টা কথা ছড়াবে কিছু মাথায় ডুকছে না ওর মাথায় চিনচিন করে ব্যাথা করলো হালকা।

    #চলবে
    #Tasnim_Tamanna

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here