#মায়াপরি
#সাদিয়া_আহমেদ_রোজ
#শেষ_পর্ব
– ” জ্বীনহুজুর শুনছেন? এখানে গোসল করার জায়গা কোনটা? গোসলখানার মতো কোনোকিছুই তো চোখে পড়ছে না। ”
মায়ার কথায় পেছন ঘুরে তাকালো মুহিব। এতক্ষন সামনে থাকা ঝর্ণার দিকে চেয়ে ছিলো ও।
– ” ঝর্নায় করতে পারো। এদিকটায় কেউ আসবে না।”
মায়া নিচে তাকিয়ে দু পা পিছিয়ে গেলো ভয়ে।
– ” এতো নিচে? আপনিও চলুন। একা গোসল করতে যাবো না। আচ্ছা আপনি গোসল করবেন না? ”
– ” গোসল? ”
মুহিব কিছু একটা ভেবে মায়াকে কোলে তুলে নেয়। মায়া চোখ বুজে মুহিবের গলা জরিয়ে ধরে। মুহিব মায়াকে কোলে নিয়ে ঝর্ণার একেবারে কাছে চলে আসে। ছিটে ছিটে পানি এসে পড়ছে মায়ার মুখে। ঝর্ণার পানি মায়ার শরীরের যে অংশে পড়ছে সে অংশটুকু ক্রমোশ নীল হচ্ছে। পানিতে মায়ার ছাঁয়া ছটফট করছে। মায়া আধুবুলিতে বলে
– ” আমার হাতে আর কতটুকু সময় আছে মুহিব? আমি আর কতদিন এখানে থাকতে পারবো? ”
মায়ার কথায় ভড়কে যায় মুহিব। নিজেকে সামলে উত্তর দেয়।
– ” রাদ আর ছাঁয়ার বিনাশের পর আমরাও শেষ হয়ে যাবো। তোমার আর আমার জন্ম হয়েছে জ্বীন জাতিকে রক্ষা করার জন্য। তাই আমাদের এইটুকু ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে। ”
মায়া হাসলো মুহিবের কথায়। মুহিবের কোল থেকে নেমে পানিতে পা রাখলো। পা দুটো অসম্ভব জ্বলছে তবুও মায়া পা সড়ালো না। মুহিব এসে মায়ার পাশে বসে।
– ” তবে কেন বলেছিলেন আমাদের তাজওয়ার আসছে? আপনি কি অভিশাপটার কথা ভুলে গেছেন? আমার বাবা নিজে আমাকে অভিশাপ দিয়ে গেছে আমার ছেলে জ্বীন হয়ে জ্বীনজাতিকে ধ্বংস করবে, আমার বোন বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবে আর আপনার ভাই জ্বীনরাজ্যে হাসিনের শাষন চালাবে। ”
– ” জানতাম তোমার সব মনে পড়ে যাবে। ”
– ” স্বাভাবিক নয় কি? আমি সেই মায়া যে নিশিষে সবটা শেষ করতে পারে আবার রক্ষা করতেও পারে। আমি সেই মায়াজান যে শুধু ধ্বংসে খুশি হয়। আমি কোনো মায়াপরি নই যে ভালোবাসা দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে পারে। কাউকে ভালোবাসি না আমি। শুধু নিজেকে ছাড়া। তাই আজ থেকে এটা মায়ারাজ্য হবে। মায়াজানের মায়ারাজ্য। ”
মায়ার কথায় মুহিব বিষ্ময়ের ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারে না। এতোবছরের এতো কিছু কি তবে বৃথা হয়ে গেলো? মায়া কি আগের মতোই আছে?
মায়া নিজের চোখ রাখলো প্রাসাদের দিকে। সাথে সাথে সেখান দিয়ে আগুনের ফুলকি ছড়িয়ে পড়ে । মুহিব মায়ার কাজে হকবাক। জ্বীন আগুনের তৈরি হলেও প্রাসাদের আগুন নেভানোর ক্ষমতা ওদের নেই। এটা একমাত্র তাজওয়ারের মা’ই নেভাতে পারবে।
– ” মায়া আগুন নেভাও। দয়া করে আগুন নেভাও মায়া। ”
মায়া শব্দ করে হাসে। পানির নিচ থেকে ছাঁয়াকে উঠিয়ে নিজের পাশে বসিয়ে দিলো মায়া। তারপর সদর দরজায় ইশারা করলো। রাদ দাড়িয়ে আছে।
– ” ভেতরে আসুন রাদ। নিজের প্রাসাদ, নিজের রাজ্যে প্রবেশ করুন।”
– ” ধন্যবাদ তোমাকে মায়াজান। ”
মায়া উঠে রাদকে হুকুম করে।
– ” সবাইকে বন্দি বানিয়ে রাখো। কাল আমার তাজ অভিষেকের পর এদের শেষ করবো আমি। ”
মুহিবের চোখ জ্বলছে। মায়া কি করতে যাচ্ছে? তবে কি রাদের অশুভ শক্তি মায়ার ভেতরে চলে এসেছে? মায়াও দুষ্টুপরিতে পরিনত হয়েছে।
আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করছে মায়া। রাদ পেছন থেকে মায়ার কোমর জরিয়ে ওর কাধে নিজের চিবুক রাখে। মায়া কিছু বলছে না। শুধু নিজের সাজসজ্জা নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। রাদ মায়ার ঘাড়ে নিজের ঠোট রাখলো।
– ” রাদ বাইরে যাও। আমার সাজতে অসুবিধা হচ্ছে। বিরক্ত লাগছে তোমার এই স্পর্শ। ”
– ” কাল থেকে তুমি আমার হবে মায়াজান,, আমার স্বপ্ন সত্যি হবে। আমার মন আজ খুব ভালো। মুহিবকে শেষ করবো আমি। ”
– ” হুম। শেষ করো সবাইকে। এতোগুলো বছর আমাকে অন্ধকারে রাখার জন্য ওদের শাস্তি পেতে হবে। আমার বোনকে ওরা রাজ্য থেকে বের করে দিয়েছিলো, তোমাকে বের করে দিয়েছিলো এই সবের শাস্তি পাবে ওরা । ”
– ” আমি গিয়ে দেখি ওদের কি অবস্থা। ”
রাদ চলে যেতেই মায়া নিজের কোমরে ছুরি গুজে দিলো। রক্ত আটকে দিলো ওরনা দিয়ে বেধে। পেট ব্যাথায় পা দুটো থরথর করে কাঁপছে। বিছানায় বসে পা দুটো নাড়াতে নাড়াতে আয়নায় তাকালো মায়া। ছাঁয়াপরিও একই যন্ত্রণায় কাঁপছে।
– ” তুই ভুল করছিস মায়া। তুই কিছুতেই ওকে মারতে পারিস না। আমাদের বাবার স্বপ্নের কথা ভুলতে পারিস না। এতোটা স্বার্থপর হতে পারিস না তুই। ”
– ” মায়াজান হলো পরিলোকের সব থেকে খারাপ পরি। তোর থেকেও খারাপ। আর আমি যেটা চাই সেটা যেকোনো মুহূর্তেই আমি পূরন করবো। ”
– ” ওদের মেরে পস্তাবি তুই। ”
ছাঁয়ার চোখের দিকে তাকালো মায়া। তারপর নিজের শক্তি দিয়ে ছাঁয়ার বাকশক্তি কেড়ে নিলো।
– ” তোকে কিছুক্ষন চুপ থাকতে হবে বোন। নাহলে যে তুই’ই আমার পথের কাটা হয়ে উঠবি। সেটা মায়াজান কিভাবে হতে দিতে পারে? ”
ছাঁয়া ছটফট করছে মায়ার কথা শুনে। মায়া একটা চাদর এনে আয়না ঢেকে দিলো।
মুহিবকে মায়াজাল দিয়ে বেধে রাখা হয়েছে। রাদ মায়াচাবুক দিয়ে আঘাত করছে মুহিবকে। মায়া ওখানে গিয়ে রাদের হাত থেকে চাবুকটা ছিনিয়ে নেয়।
– ” এবার আমি। তুমি গিয়ে বিশ্রাম নাও রাদ। ”
– ” যেমন তোমার ইচ্ছা। তবে একেবারে মেরো না। কাল আমি নিজে শেষ করবো ওকে। ”
মায়া মুচকি হাসলো। রাদ চলে যেতেই মুহিব মায়ার দিকে অসহায় চোখে তাকালো।
– ” তুমি যাই করো না কেন মায়া, মুহিব কখনো তোমাকে ঘৃণা করবে না। শেষ হয়ে যাবে মুহিব তবুও তার মায়াপরিকে সে ভালোবেসে, ভালো দেখে, ভালো রেখে যাবে। ”
– ” অতি উত্তম কথা। তবে মায়াপরি না, মায়াজান আমি। আর এখানে আসার কারন টা হলো তোমাকে একটা কথা জানানোর ছিলো। ”
– ” কি কথা? রাদ কি তোমাকে কোনো ভয় দেখিয়েছে? তার জন্য তুমি এমন করছো? আমাকে বলো আমি সব ঠিক করে দিবো। ”
– ” জ্বি না। কথাটা হলো আপনি যে সন্তানকে আমার গর্ভে দিয়েছিলেন? সে এখন নিশ্চিন্তে জান্নাতে বসে খেলছে। ”
মায়ার কথা শুনে কয়েক মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে গেলো মুহিব। মায়া কি করে পারলো বাচ্চাটাকে শেষ করে দিতে? এটা কি সত্যিই সেই সাদিয়া যে একটু কষ্ট পেলেই কাঁদতো, ভয় পেতো, বাচ্চা ভালোবাসতো।
– ” আমি সাদিয়া নই মুহিব আমি মায়াজান,, যার ভেতরে কোনো মায়া নেই। আছে শুধু রাগ, ধ্বংস। ”
– ” তোমার শত্রুতা তো আমাদের সাথে ছিলো মায়া। আমার বাচ্চার সাথে না। ”
– ” তোমারই তো বাচ্চা। তাই শত্রুতা সরাসরি তৈরি হয়ে গেলো। জানোই তো মায়াজান নিজের কোনো শত্রুকেই রেহাই দেয় না। ”
মুহিব ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিলো। মায়া শব্দ করে হাসছে। তারপর মায়াচাবুক তুলে মুহিবকে আঘাত করতে শুরু করে।
আজ মায়াজানের অভিষেক। মায়াকে তাজ পড়াবে ফারহান তাজওয়ার, আর তারপরেই মায়া হয়ে উঠবে সবচেয়ে শক্তিশালি পরি। রাদ তাজ হাতে নিয়ে দূরে দাড়িয়ে আছে। ফারহানকে মায়ার পায়ের কাছে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
মায়া হাতের ইশারায় তাজ আনতে বলে।
– ” মুহিব তাজ পড়িয়ে দাও আমাকে। ”
– ” অসম্ভব। আমার সন্তানের খুনিকে আমি তাজ পড়াবো না। কিছুতেই না। ”
– ” মায়াচাবুক আনো। ”
মুহিবকে মায়াচাবুকের বারি দিতেই আৎকে ওঠে মুহিব।মায়া মুহিবের গাল চেপে ধরে ওর হাতে তাজের স্পর্শ করালো।
– ” স্পর্শেই হবে। এখন তাজ আমি নিজেই পড়ে নিতে পারবো। ”
কথাটা বলে মায়া তাজ নিজের মাথায় রাখলো। মুহিব চিৎকার দিয়ে মায়াকে থামতে বলছে। মায়া তাজ পড়ে শূণ্যে ভেসে ওঠে। সারা শরীরে সোনালি আভা ফুটে উঠছে। মায়ার চোখের পুরো অংশটা কালো হয়ে গেছে।
– ” আম্মুজান কষ্ট হচ্ছে আমার। ”
একটা বাচ্চাকন্ঠ শুনে চমকে আকাশের দিকে তাকালো সবাই। মায়ার পাশে ছাঁয়া ভাসছে। সেহের আর রিফাতকে আনা হয়েছে। সেহের নিজের খঞ্জর বের করে শূণ্যে উঠে আসলো। মায়াজান নিজের মায়া দিয়ে সেহেরকে নিচে নামিয়ে দেয়। তারপর সেহেরের দিকে তাকিয়ে একটা তীর্যক রশ্মি ছুড়ে দেয়।
– ” রাদ বিবাহ করবে না আমাকে? ”
রাদ খুশিতে আটখানা হয়ে উত্তর দিলো।
– ” কবুল। ”
– ” কবুল। ”
মুহিবের শক্তি কমে আসছে। মুহিব মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে কেঁদে উঠলো। মায়া রাদকে নিজের পাশে দাড়াতে বললো। তারপর মুহিবের দিকে তাকালো।
– ” মুহিব! আপনার মায়াপরি আজ অন্যকারোর হয়ে গেলো। আপনি কিছু করতেই পারলেন না? আফসোস আপনার বাচ্চাটা এগুলোর স্বাক্ষী হতে পারলো না। ”
মুহিব রেগে মায়াজাল থেকে নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে। সফলও হয়। মুহিব নিজের সব শক্তি কাজে লাগিয়ে উঠে দাড়ায়।
– ” মায়াজান আর রাদকে শেষ করার দায়িত্ব আমাকেই দিয়েছিলো আব্বুজান। যদিও আমি আমার মায়াপরিকে কখনো আঘাত করতে পারতাম না। তবে মায়াজানকে শেষ করতে পারবো, আমার বাচ্চার খুনিকে শেষ করতে হাত কাঁপবে না আমার। ”
বলেই নিজের তরবারি প্রদর্শন করলো মুহিব। রাদের দিকে মুহিব এগিয়ে আসতেই মায়া মুহিবের পথ রোধ করে। মুহিব মায়ার হাতে তরবারি দিয়ে আঘাত করে। মায়া লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। মুহিব নিজের তরবারির এক আঘাতে রাদের মস্তক কাধ থেকে আলাদা করে ফেলে। মুহিব পেছনে ফিরে ছাঁয়ার দিকে তাকাতেই মায়া উঠে দাড়ায়। মায়ার হাত বেয়ে রক্ত পড়ছে। মুহিব অবাক হয় এটা দেখে, কারন পরিকন্যাকে একমাত্র তার স্বামী মারতে পারবে, তবেই সে আঘাতপ্রাপ্ত হবে। কিন্তু মায়া তো এখন রাদের স্ত্রী। মায়ার চোখের ইশারায় সেহেরের হাতের খঞ্জর মায়ার হাতে চলে আসে। ছাঁয়া চিৎকার দিয়ে বলে।
– ” তুই এটা ঠিক করলি না মায়া। এর জন্য তোকে পস্তাতে হবে। তোকেও শেষ হতে হবে। রাদকে মারার ফল তুই তোর জীবন দিয়ে পাবি। কিভাবে বাঁচাবি এই রাজ্য? নিজের সন্তান? ”
মায়া আলোর বিপরীতে দাড়ালো। যার কারনে ছাঁয়া ঠিক মায়ার সামনে উপস্থিত হয়। মায়া ছাঁয়ার গলা চেপে ধরে ওর বুকের বা-পাশে খঞ্জর ঢুকিয়ে দেয়। নিমিষে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো ছাঁয়া।
মুহিব মায়ার কাছে আসতেই মায়া আকাশের দিকে উঠে যায়। চারপাশ থেকে কালো ধোয়া এসে মায়াকে আষ্টেপিষ্ঠে বেঁধে ফেলছে। সেহেরের পেট থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে।
– ” আম্মুজান। আমাকে আপনার সঙ্গে নিয়ে যান। ”
আবারও বাচ্চাকন্ঠ শুনে সেহের নিজের পেটের দিকে তাকায়। পেটটা ফুলে আছে। রিফাত অবাক হয়ে সেহেরকে ধরে আসনে বসিয়ে দিলো। মুহিবের হাত-পা কাঁপছে। মায়াকে নিচে পড়তে দেখে মুহিব ছুটে যায় মায়ার কাছে। মায়ার সারা শরীর কালোবর্ণ ধারন করেছে।
– ” আপনার বাচ্চা সুরক্ষিত আছে মুহিব। সেহেরের গর্ভে আছে। আপনার মায়াপরি কখনো মায়াজান হতে পারবে না। কারন আপনার ভালোবাসায় সিক্ত সে। আপনাকে যত আঘাত করেছি তার দশগুন আঘাত নিজে সহ্য করেছি। আপনি ভাবলেন কিভাবে একজন মা তার সন্তানকে মারবে? যদিও ভেবে ভালোই করেছেন।মায়া পরির তো নিজের স্বামীর আঘাত আর ঘৃণার প্রয়োজন ছিলো। আজ সেটা নিয়েই আমার সমাপ্তি হোক। ‘ মাহতাব ‘ কোনো শক্তি পাবে না। একজন মানুষের মতো হবে ও। দয়া করে ওকে পৃথিবিতে আব্বু আম্মুর কাছে রাখবেন। আমার অপূর্ণতা ও পূরন করবে। আসছি আমি। ”
– ” মায়াপরি!!!! ”
– ” একবার ভালোবাসি বলবেন? শেষ মুহূর্তে খুব ইচ্ছে করছে এটা শুনতে।”
– ” ভালোবাসি মায়াপরি,, খুব ভালোবাসি তোমাকে। দয়া করে আমাকে ছেড়ে যেওনা। আমি তোমাকে ঠিক করবো। ”
– ” রাদের সব অশুভ শক্তি যাদের মধ্যে রেখে গিয়েছিলো তাদেরকে মুক্ত করে দিয়েছে আপনার মায়াপরি। আর এখন মায়াপরির যাওয়ার সময় হয়েছে। নিজের সাথে সাথে সব অশুভ শক্তিকে শেষ করতে হবে। সবাইকে রক্ষা করতে হবে তো। ”
– ” তুমি এমন করতে পারো না মায়াপরি। তোমার মাহতাব তোমাকে চায়। ”
– ” ওর জন্য সবাই আছে। সবার ভালোবাসা পাবে ও। তখন ও ভুলেই যাবে আমার কথা। আল্লাহ হাফেজ।”
– ” মায়াপর ”
মুহিবের কথা শেষ হবার আগেই মায়ার শরীর অদৃশ্য হতে শুরু করে। মুহিব মায়াকে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে জরিয়ে ধরে।
🥀🥀🥀
পরিশিষ্ট:-
ছোট ছোট পাঁচটা পৃষ্ঠা হাতের ভাজে নিয়ে গুটি গুটি পায়ে সাফিন চললো ওর মায়ের কাছে। রান্নাঘরে না ঢুকে মন খারাপ করে বললো।
– ” আম্মু আমি তো এখন বড় হয়েছি। তাহলে বলো না মায়াপরি কেন, কিভাবে এসব করেছে? মায়াপরির এই গল্পটা পড়লে কেন আমার এতো কান্না আসে?”
সাফিনের কথা শুনে ওর মা গ্যাসের চুলা বন্ধ করলো। সাফিনকে কোলে নিয়ে ঘরে এসে খাটে বসিয়ে দিলো। সাফিন ওর মায়ের কোলে গুটিসুটি মেরে বসে আছে।
– ” সত্যি তো আমার সাফিন তো অনেক বড় হয়ে গেছে। তা আমার সাফিন বাবু কি জানতে চায়?”
– ” মায়াপরি কেন মারা গেলো? পুরোটা বলবা। অর্ধেক শুনতে চায় না সাফিন। ”
– ” মায়াপরিকে অভিশাপ দিয়েছিলো ওর বাবা,, যে ওর ছেলে জ্বীনদের ধ্বংস করবে। সেই শক্তি ওর ছেলের মধ্যে থাকবে। মায়াপরি চেয়েছিলো সবার খারাপ শক্তি নিজের ভেতর নিয়ে পুরো রাজ্যকে সুরক্ষিত করতে। ”
– ” তাহলে ওর বাবু ও সেহেরকে কেন দিলো? ”
– ” কারন মায়াপরি মারা যাবে। মা যদি মারা যায় তাহলে কি বাবু বাঁচে? বাবুও তো দম আটকে মারা যাবে। তাইনা? ”
– ” হ্যা তাই তো। আচ্ছা ও কেন মুহিবকে কষ্ট দিলো? মুহিব কেন ওকে মারলো? মুহিব পচা। ”
– ” কে বলেছে মুহিব পচা? মুহিবও ভালো। মায়াপরিও ভালো। মায়াপরি তো মুহিবকে মিথ্যা বলেছিলো। বলেছিলো ও বাবুটা মেরে ফেলেছে। পরিরা মিথ্যা বললে পাপ হয় তাই মুহিব রেগে গিয়ে মায়াকে ঘৃণা করে।”
– ” ওহ,, রেগে গেলে বুঝি মানুষ ঘৃণা কররে? আমি কখনো কারোর ওপর রাগ করবো না। রেগে গিয়ে ঘৃণা করলে তো তাকে মেরে ফেলবো আমি। ”
– ” আমার সাফিন বাবু তো খুব সুইট। ও কারোর ওপর একটুও রাগ করে না। ”
– ” কিন্তু ওখানে কেন বলা হয়েছে? স্বামী মারলে মায়াপরি মরে? মুহিব তো ওর স্বামী না।রাদ ওর বর। ”
– ” এখানে মায়াপরি নিজের মায়ার সাহায্য নিয়েছিলো। মায়াপরি মায়া দিয়ে রাদকে বশ করে রেখেছিলো। তাই মায়া নিজেই রাদের মুখ দিয়ে কবুল বলেছে। ”
– ” তার মানে ওদের বিয়ে হয়নি। মুহিবই মায়ার বর? ”
– ” আমার ইন্টেলিজেন্ট সাফিন বাবু সব বুঝে গেছে। ”
– ” আমি ইন্টেলিজেন্ট যে তাই। আচ্ছা মায়াপরি নীল কালো হয়েছে কেন? ”
– ” নীল হয়েছিলো কারন তখন মায়ার মধ্যে ছাঁয়া ছিলো। আর কালো হয়েছিলো কারন অশুভ লক্ষনের চিহ্ন কালো, মায়াপরি তখন পরিলোকের জ্বীন রাজ্যের সবার খারাপ শক্তি নিজের মধ্যে নিয়েছিলো তাই ও কালো হয়ে গিয়েছিলো। ”
– ” আচ্ছা মায়াপরি বাবুটাকে মারেনি কেন? তাহলেই তো সব মিটে যেতো। ”
– ” তুমি বুঝবে না সাফিন। এটা মায়ের ভালোবাসা। প্রতিটা মা নিজের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও নিজের সন্তানকে রক্ষা করে। যদি তার প্রাণও চলে যায় তবুুও আফসোস করে না। তুমি বড় হয়ে যখন বাবা হবে তখন বুঝবে সন্তানদের মা-বাবা কতটা ভালোবাসে। ”
হঠাৎ সাফিন খিলখিল করে হেসে ওঠে। মুখ হাত দিয়ে ঢেকে বলে।
– ” একটা জিনিস দেখেছো আম্মু। আমার নাম সাফিন মাহতাব। তুমি সেহের, বাবা রিফাত আর বড়আব্বু মুহিব। আমাদের নামের অনেক মিল তাইনা? শুধু একটা মায়াপরি নেই। ”
মুহিব দরজা বাইরে থেকে এটা শুনেই দাড়িয়ে যায়। সেহেরের চোখে পানি চলে এসেছে। রিফাত নিচ থেকে সাফিন সাফিন বলে ডাকতেই সাফিন দৌড়ে নিচে চলে যায়। মুহিব ঘরে ঢুকে সেহেরের দিকে একনজর তাকালো।
– ” মায়াপরি আছে। সাফিনের মধ্যেই আছে।মাহতাবের মা হয়ে। আর সর্বদা এভাবেই থাকবে। মায়াপরি কোথাও যায়নি, কোথাও না। ”
মুহিবের কাঁপাকন্ঠের কথাটা যেন দেওয়ালের সাথে বার বার বারি খেয়ে ফিরে আসছে। চারপাশ থেকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
– ” মায়াপরি কোথাও যায়নি। মায়াপরি আছে। মিশে আছে, মাহতাবের সাথে। ”
❤️সমাপ্ত❤️
[ 💙💙
আপনাকে আমি যতবার দেখেছি ততবারই আমার হৃদয়স্পন্দন বেড়ে বেড়ে লাস্ট ডিগ্রী ছাপিয়ে গেছে। যদি আমি হার্টএট্যাক করতাম? তখন সে দায় কে নিতো? আপনি নিশ্চই নিতেন না। আপনার চোখদুটো অসম্ভব রকমের সুন্দর এটা কি জানেন? যখন আপনি রেগে চোখ গোল গোল করে তাকান কিংবা ভ্রু কুচকে তাকান তখন আপনাকে সবথেকে বেশি কিউট লাগে। আপনার হাসি যে মারাত্মক ভয়ংকর সেটা কি জানেন? এ পর্যন্ত একবারই আপনার হাসি দেখার সুযোগ পেয়েছি। যেদিন আমি চলে আসছিলাম ঠিক তার আগের দিন। কেন আমি থাকাকালীন হাসেন নি? এটা অনেক বড় অন্যায়। বুঝেছেন?
শুনুন আর সিগারেট খাবেন না। জানেন না? সিগারেট স্বাস্থের পক্ষে ক্ষতিকর। তবুও সকালে বিকালে কিসের এতো সিগারেট টানা? ছ্যাকা খেয়েছেন বুঝি? যে ছেড়ে যাওয়ার সে গেছে। তাকে ভেবে নিজেকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছেন কেন? শুনুন বাড়ির সবার খেয়াল রাখবেন। বাবামায়ের একমাত্র আদরের ছেলে বলে কি হাতির পাঁচ পা দেখেছেন? রাতবিরাতে বাইরে ঘুরাঘুরি করেন কেন? জানেন আপনার টেনশনে আমার ঘুম হতো না। যতক্ষন না আপনি আসতেন ততক্ষন জানালার দিকে তাকিয়ে থাকতাম আমি। আপনার জন্য আমার চোখের নিচে কালি পড়েছে। যে আপদটা এতোকাল ছিলো না সেই ব্রণ বেড়িয়েছে আমার গালে। অবশ্য একটা বেড়িয়েছে তাতে কি? বেড়িয়েছে তো। এখন তো আমি আরও খারাপ দেখতে হয়ে যাবো। সব দোষ আপনার। ইশ দু পৃষ্টা হয়ে গেছে। বাকিটা আবার পরের চিঠিতে জানাবো। ভালো থাকবেন, সবাইকে ভালো রাখবেন। আল্লাহ হাফেজ।
ইতি
নাম বলবো না। যদি আমাকে খোজার ইচ্ছা বা নাম জানার ইচ্ছা থাকে তাহলে নিজেই খুজে নিবেন।
💙💙
নতুন গল্প ” প্রেমাসক্তি ” এর খন্ডাংশ। নতুন বছরের শুরুটা নতুন গল্প দিয়েই করবো। আশা করি মেঘরোজের নতুন চরিত্র আপনাদের ভালো লাগবে। ]
মায়াপরি গল্পটা তিনপার্টের হওয়ার কথা ছিলো। দুপার্ট বেশি হয়ে গেছে। এটা আগে থেকেই ভেবে রাখা ছিলো। তাই ছোট গল্পটা। অনেকে ছোট বলে আমাকে বকতে পারেন তাই “প্রেমাসক্তি” ধারাবাহিক গল্প দিবো।
নতুন বছর যদিও রাত ১২টার পর শুরু হবে। তবুও #হ্যাপিনিউইয়ার অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো নতুন বছরের জন্য। আপনাদের ইনশাহ্ আল্লাহ গুলো আলহামদুলিল্লাহ তে পরিনত হোক এটাই দোয়া করি।
আল্লাহ হাফেজ ❤️❤️