– ছি আবিরের রুচি দেখেছিস এমন কালো কুচকুচে মেয়ে পছন্দ করেছে বিয়ের জন্য ,আমার তো দেখলেই গা ঘিনঘিন করে ।
– তুমি ঠিকই বলেছো খালামনি ছোট ভাইয়াটা কি যে মেয়ে পছন্দ করেছে । বড়ো দুই ভাবি দেখতে কি সুন্দর আবার খুব বড়ো লোক ঘরের ।
– আমি তো এই বিয়েতে আসতেই চায়নি শুধু বুবুর কথা রাখতে আসা । যেদিন এই মেয়ে দেখতে গিয়েছিলাম সে দিনই আমার দেখে মেজাজ খারাপ হয়েছিল । আবির ছেলেটা লেখা পড়া জানা কতো সুন্দর একটা ছেলে ওর বউ কুচকুচে কালো এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে ।
– ভাইয়া সোজা বলে দিয়েছে এই মেয়ে ছাড়া বিয়ে করবে না বাবা মা কি করবে বলো ?
– কি দিয়েছে এই মেয়ের বাপের বাড়ি থেকে ,যে কালো মেয়ে ঘর সাজিয়ে মালপত্র দেওয়া উচিত ।
– ছোট ভাইয়া গরিব ঘরের মেয়ে বিয়ে করেছে ।আর সোজা বলে দিয়েছে কোনও যৌতুক নেওয়া চলবে না।
– আফসোস ছেলেটার জন্য । আমার দেবরের মেয়ে আনিকা দেখতে কতো সুন্দর তোর মাকে বললাম মেয়েটাকে আবিরের সাথে আনো শুনলোই না।
,
কিরে এখানে কি করিস ? তখন থেকে ডেকে যাচ্ছি ,আবির রেডি তোদের ডাকছে বরযাত্রী যেতে হবে না?
কথা টা বললেন আবিরের মা তাঁর ছোট মেয়েকে ।
তাঁর কথা শুনে আবিরের ছোট বোন আর খালার কথা থেমে গেল । ছোট বোন জয়ী বললো ,
– মা আমার যেতে ইচ্ছে করছে না ।
– সে কি কথা কেন ?
– তোমার ছেলের বউতো একটা পেত্নি তাকে আনতে যাওয়ার কি আছে ।
আবীরের মা পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট বোনকে বললো ,
– দেখেছিস জয়ীর কথা কি বলছে ? কালো হোক পেত্নি হোক এই বাড়ির ছোট বউ। আবীর শুনলে কষ্ট পাবে না বল ?
– জয়ী ঠিকই বলেছে বুবু ! ওর বউ আসলেই খুব কালো। দেইখো একদিন তোমাদের এই কালো বউয়ের জন্য আফসোস করতে হবে ।
সব কিছু শুনে আবীরের মায়ের কপালে ভাজ পড়লো আসলেই কি মেয়েটা লক্ষী !
,
আবীরের আরো দুইটা বড়ো ভাই আছে । তিন ভাই এক বোন। বড়ো দুইভাইয়ের বউ অনেক সুন্দরী এবং বড়ো লোক ঘরের মেয়ে । ছোট বোন এখনও লেখা পড়া করছেন । বাবার বিরাট বিজনেস তিন ভাই মিলে দেখা শুনা করে । সবাই এক পরিবারে থাকে । আবীর ছোট বেলা থেকে একটু ব্যতিক্রম । সবার মতো না। ওর ইচ্ছে ছিল এমন মেয়ে বিয়ে করবে যে দেখতে অসম্ভব সুন্দর দেখতে হবে না বিরাট কোটিপতির মেয়ে হবে না। কিন্তু সুন্দর একটা মন থাকবে যাকে বিয়ে করে সুখে কাটাতে পারবে সারাটা জীবন।
,
আবীরের বউয়ের নাম মায়া । মেয়েটা দেখতে কালো। কিন্তু অদ্ভুত একটা মায়া সারাটা চোখ জুড়ে যেটা আবীরের দেখে ভাল লেগেছে । মায়া আবীরের বন্ধুর বোন । কখনও কারো সাথে কেউ কথা বলেনি। কিন্তু আবীর ওর বন্ধুর বোন মায়া কে ওদের বাড়িতে দেখে পছন্দ করে । তাঁরপর বাবা মাকে জানায়। আবীরের বাবা আমজাদ হোসেন । ছোট ছেলেকে কিছু বললেন না। কারণ ছেলে বড়ো হয়েছে তাকে বাধা দেওয়ার কোনও ইচ্ছে নেই। বড়ো দুই ছেলেকে নিজের বন্ধুর দুই মেয়ের সাথে দিয়ে ঘরে এনেছেন তাই ছোট ছেলের বেলায় সে নিরব ভুমিকা পালন করলেন ।
,
আবীরের বরযাত্রীতে খুব কম লোক গেল । আবীরের কিছু বন্ধু আর কাজিন কয়েক জন। আবীরের ছোট মামা আর খালু । মাত্র হাতে গোনা বিশ পঁচিশ জন। আবীর ভাল করে জানে মায়াকে এই বাড়ির কারো পছন্দ না। কিন্তু সবাই একদিন নিজের ভুল বুঝতে পেরে মায়াকে আপন করে নেবে।
,
বড়ো দুইভাই এবং তাদের বউ সোজা বলে দিয়েছে তাদের সমস্যা আছে যেতে পারবে না। আর আমজাদ সাহেবের কোনও টু শব্দ নেই এই নিয়ে ।
আবীরের মার হয়েছে যতো জালা। এক দিকে আবীর তাঁর ছোট ছেলে অন্য দিকে কেউ রাজি না এই বিয়েতে । কি হবে পরে এটা ভেবে তিনি অস্থির ।
,
ওদিকে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ । এখন বউ আনার পালা। মায়া এখনও ভাল করে আবীর কে দেখেনি। কেমন হবে ওদের বিবাহিত জীবন তাই ভাবতে লাগলো সারাটা পথ। অবশ্য আসার আগে মাকে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিল। বাবা অনেক ছোট থাকতেই মারা যায় । ভাইটাই সব।
,
মায়াকে বাড়িতে আনা হলো। বরন করতে আবীরের মা এগিয়ে এলো। বড়ো দুই বউ যার যার ঘরে । জয়ী ও এলোনা । মায়া শ্বাশুরি কে সালাম করলো। তিনি একটা সোনার নেকলেস মায়াকে পড়িয়ে দিলেন । কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে মেয়েটা কালো কিন্তু নেকলেস পরানোর সাথে সাথে সমস্ত ঘর আলোকিত হয়ে গেল ।
,
আবীরের মা মায়াকে নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন । আবীরের বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন । তাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতেই তিনি সরে গেলেন । তাই দেখে মায়া অবাক হয়ে গেল । আমজাদ সাহেব এবার চেয়ারে বসে বললেন ,
– আমার ছোট ছেলের বিয়ে আমি আমার পছন্দ করা মেয়ের সাথে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু সে তোমাকে বিয়ে করেছে । বিয়ে করেছে ভাল কথা যেদিন তুমি এই বাড়ির সবার মন জয় করতে পারবে সেদিন আমি তোমাকে মেনে নেবো।
এখন তুমি যেতে পারো।
,
সব কিছু শুনে মায়ার চোখ ভিজে গেল । মাথা নিচু করে শ্বশুরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে । আবীরের মায়ের খুব কষ্ট লাগছে কিন্তু স্বামীর মুখের উপরে কথা বলার সাহস নেই। আবীর এ সবের কিছু জানেনা। সে পাশের ঘরে বন্ধুদের নিয়ে ব্যস্ত ।
,
মায়াকে আবীরের এক কাজিন বাসর ঘরে বসিয়ে দিয়ে আসলো। একটু পর আবীর ঘরে ঢুকলো। মায়া আবীরের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতেই আবীর ওর ঘোমটা তুলে ওর চেহারা দেখে অবাক হয়ে গেল । মায়াকে বললো ,
– সে কি তুমি কাঁদছো কেন ?
– মায়ের জন্য খারাপ লাগছে ।
– কয়েক দিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে ।
– আচ্ছা ! আমি এতো কালো তবু ও আপনি আমাকে কেন বিয়ে করলেন ?
– তোমাকে কেমন লাগে দেখতে এটা জানতে হলে আমার চোখ তোমার চোখের জায়গায় লাগাতে হবে ।
এই কথা শুনে মায়া হেসে দিলো। সারা রাত দুজনের গল্প করে কেটে গেলো।
,
সকালে মায়া ফজরের নামাজ পরে কোরআন তেলাওয়াত করলো। আবীর কে জাগিয়ে আজ ফজরের নামাজ পড়িয়েছে। একটু পর মায়া গেল রান্না ঘরে ।যেয়ে দেখে শ্বাশুরি রান্না করছে । মায়া এখনও দুই জা এবং ননদ কে দেখেনি। অবশ্য কেউ দশটার আগে ঘুম থেকে ওঠে না। তিন ছেলে আর স্বামীর জন্য আগে আগে রান্না ঘরে ঢুকতে হয়। বিয়ের এক বছরের মধ্যে বড়ো দুই বউ কখনও দেখেনি। ছোট বউকে দেখে তিনি অবাক হয়ে গেলেন বললেন ,
– তুমি রান্না ঘরে কেন মা নিজের রুমে যাও।
– মা আমি গরিব ঘরের মেয়ে কাজ করতে ভাল লাগে আপনি সরুন আমি রান্না করছি।
এই বলেই জোর করে কাজে লেগে গেল ।একটু পর বড়ো দুই বউ এসে ওকে দেখে অবাক ।মনে মনে বললো সবার চোখে ভাল হওয়া নাটক কিছু দিন যাক তখন দেখা যাবে রান্না ঘরে উঁকি ও দিচ্ছে না।মায়া চা নিয়ে শ্বশুরের ঘরের দিকে গেল মনটা ছটফট করছে তিনি যদি কিছু বলে ওঠেন ।চা নিতেই একটু পর কিছুর শব্দ পাওয়া গেল মনে হচ্ছে কেউ কিছু ভেঙে ফেলেছে । আমজাদ সাহেব চায়ের কাপ ভেঙে চিৎকার করে বললেন ,,,
,
,
#মায়াবতী
#পর্ব এক
লেখা অধরা জেরিন