মিছে মায়া(১ম পর্ব)

তুই একটা বেশ্যা!
আমার জীবনের সব চেয়ে বড় ভুল হইছে তোর মত বেশ্যাকে বিয়ে করে।

বাবার মুখে এমন কথাটি শুনে মা শাড়ির আচল দিয়ে মুখ চেপে ধরে কান্না করতে করতে তার রুমে চলে গেলেন।

ভাতের লোকমা মুখে তুলতে গিয়েও আর তুলতে পারলাম না।সব কিছু সহ্য করতে পারলেও নিজের মাকে এমন গালি দিলে এটা তো সহ্য করা যায় না।আমার এঁটো হাত দিয়েই বাবার গলা খপ করে খুব জোরে চেপে ধরলাম।ধুর কাকে বাবা বলছি ওতো একটা হিংস্র জানোয়ার।চেপে ধরে বললাম….

-আজ তোরে মেরেই ফেলবো।দিন দিন তুই আমার মায়ের উপরে অত্যাচার করে যাবি আর এটা আমি মেনে নিবো?

জানোয়ারটা জবাই করা মুরগীর মত ছটফট করতে লাগলো।এমতাবস্থায় আমার মা দৌড়ে এসে আমার গালে সজোরে একটা থাপ্পড় দিয়ে বসলো।তখনো আমি জানোয়ারটার গলা চেপে ধরে আছি।আমার মা অপর গালে আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে ফেললো।ঝিঁঝি পোকার মত আমার কানটাও এমন হয়ে গেলো।

জানোয়ারটা খুকখুক করে কাঁশতে কাঁশতে ডগডগ করে পানি খেলো।হাত ধুয়ে আমি বারান্দায় গিয়ে সিগারেটে টান বসিয়েছি।

একটা শেষ করে যেই আরেকটা জ্বালিয়ে টানতেছি,হঠাৎ করেই মাথায় খুন চেপে বসে।বাবা নামক জানোয়ারটাকে মূহুর্তেই খুন করে ফেলতে ইচ্ছা করছে।কি করবো বুঝতেছিনা।মাথাটা হুট করেই ব্যথা করতে শুরু করলো।ইচ্ছা হচ্ছিলো নিজের মাথার চুল নিজেই টেনে টেনে ছিরি।

জোৎস্না রাত!
.
ছোট বোনকে ডাক দিয়ে বললাম মায়ের সাথে যদি বাবা কোনো ঝামেলা করে আমায় যেনো ফোন দেয়।

নিশ্চুপ রাস্তার মধ্যে হাটছি।কোথাও কোনো সাড়া শব্দ নাই।একটা কুকুরেরও হুংকার ডাক আমার কাছে আসছে না।আমার মাথায় শুধু বেশ্যা বলে গালি দেওয়াটা ঘুর পাক খাচ্ছে।কানে বার বার এই গালিটা বেজে উঠছে।

সেই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি আমার বাবা নাকি আমার মাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। তারা নাকি একে অপরকে খুব ভালোবাসতেন।

আগে মায়ের সাথে কেমন ব্যবহার করতেন তা আমার জানা নেই। কিন্তু আমার যখন বয়স পাঁচ কি ছয় বছর তখন মাঝে মাঝে বাবাকে দেখতাম মায়ের সাথে খুব বাজে বিহেইভ করতো। মাঝে মাঝে দেখতাম আমার মায়ের কাজের কোন ত্রুটি হলে চড়-থাপ্পড় দিয়ে বসতেন।

আমার ছোটবোন নীরা। ও আমার থেকে ৭ বছরের ছোট। আমি যখন বাসায় থাকতাম না তখন নীরা আমাকে মাঝে মাঝে বলতো বাবা নাকি মায়ের গায়ে অনেক হাত তুলতেন মারধর করতেন।

কিন্তু দিন দিন আর এই মায়ের শরীরে হাত তোলা বিচ্ছ্রি ভাবে গালাগালি শুনা কত দিন দেখবো? আমার বোনটি ক্লাস এইটে পড়ে। আর আমি একবার অনার্স ফাইনাল ইয়ার দিলাম। আমরা দুই ভাইবোন এতটা বড় হয়েছি তারপরও বাবা আমাদের সামনে আমার মাকে গালাগালি করেন। কিন্তু আজকের গালিটা আমার খুব লাগলো।

আসলে সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি আমার মা খুব অসহায়।আমাদের নানা বাড়ি কোথায় তা আমরা ঠিক জানিনা। কে আমাদের নানা কে আমাদের মামা এসব কিছুই জানি না

ঠিক এক মাস আগে আমার বাবা নাকি আমার মাকে মেরে ছিলো। তখন আমি বাসায় ছিলাম না আমি ভার্সিটিতে ছিলাম। বাসায় আসার পর আমার ছোট বোনটি আমার কাছে কেঁদে দিয়ে বলল….

– ভাইয়া আজকেও বাবা মাকে মেরেছে। মায়ের হাতে ব্যথা পেয়েছে নাড়াতে পারতেছে না। তার ডান হাত ফুলে উঠছে বাসায় আজকে রান্না হয়নি।

– বাবা কোথায় এখন?

– জানিনা। মাকে মেরে তারপর বাসা থেকে বের হয়েছে এখনো বাসায় ফিরেনি।

সেদিন রাতে আমরা সবাই না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কিন্তু মা হাতের ব্যথায় কাতরাতে থাকলেন। বাবা সেদিন আর বাসায় ফিরেনি। পরদিন ভোরে মাকে নিয়ে আমরা ডাক্তারের কাছে যাই। গিয়ে চেকআপ করে দেখি মায়ের হাতে ফাটল ধরেছে। ডাক্তার ট্রিটমেন্ট করে আমার মায়ের হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়। পরের দিন বাবা বাসায় ফিরে এসে দেখে মায়ের হাতে ব্যান্ডেজ তারপরও লোকটা একটা বার জিজ্ঞেস করলো না তার হাতে কি হয়েছে। পনেরো বিশ দিনের মতো আমার মা হাত পা নাড়াচাড়া করতে পারেনি। আমার ছোট বোনটা সংসারের সব কাজ করছিল।

বাবা অফিস থেকে বাসায় এসে চুপচাপ খেয়ে আবার বাসা থেকে বের হয়ে যেতেন। আর গভীর রাতে বাসায় ফিরতেন। আমাদের কারো সাথে কোনো কথাবার্তা বলতেন না। এতই চার পাঁচ দিন আগে আমি বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ডাইনিং টেবিলে বসে….

– বাবা আমাদের দুই ভাই বোনের খুব আপন তো আপনি আর মা তাই না?দিন দিন মায়ের উপর অত্যাচার করতেছেন। এটা কি ঠিক? আমরা এমন আর কত দেখব?

সেদিন আমার কথায় বাবা জবাব দিতে পারেনি। আমি শুধু তাকে বলেছিলাম সে যেন আমার মায়ের উপর আর কোন অত্যাচার না করেন।

কিন্তু তার পরেও দিন দিন এমন করে যাচ্ছে। এভাবে আর কত দেখবো?

আজকে বাবা আমার মাকে যে গালিটা এটা দিছে সেই গালিটা আমার সম্পূর্ণভাবে বুকে লাগছে। আমার মন চাচ্ছে তাকে খুন করে ফেলি।

এসব ভাবতে নিশু আমাকে ফোন দেয়। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখি রাত সাড়ে বারোটা বেজে গেছে। প্রথমবার কলটা কেটে দেই। কেটে দিয়ে ফোনটা আমার পাশে রাখি। একটু পরে নিশু আবার আমাকে ফোন দেয়..

– ফোন কেটে দেওয়ার পরে আবার ফোন দিচ্ছো কেনো?সমস্যা কি তোমার?

– মানে? কি হলো তোমার? আর এমন করতেছ কেন আমার সাথে?

– কেমন বিহেইভ করবো?

– তোমাকে আমি কিছু বলেছি নাকি আমাদের মাঝে কিছু হয়েছে?

– আমাদের মাঝে কিছুই হয়নি। কিন্তু চাচ্ছি না তোমার সাথে আমার কোন যোগাযোগ থাক।

– মিহির তোমার কি হয়েছে বলোতো?হঠাৎ করে এমন কথা বলছো কেনো? প্লিজ আমাকে বলো না তোমার কি হয়েছে?

– আমাদের মাঝে কিছু হয়নি বাট আমি চাচ্ছি না আমাদের মাঝে কোন সম্পর্ক থাকুক। কারন আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবোনা তুমি কেনো আমি আমার লাইফে কাউকে আনবো না। আমি স্রেফ একা থাকবো।

– হঠাৎ এমন করে বলতেছ কেন মিহির? আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি তাই না? আর আমাদের সম্পর্ক আজ দু বছর হতে চললো।

– প্লিজ আমাকে আমাকে বিরক্ত করো না। আমাকে একটু একা থাকতে দাও। আমি নিতে পারছি না নিশু। বৈবাহিক জীবনে যতটা কষ্ট তা আমি আমার মাকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না।

– আচ্ছা তোমার মন মানসিকতা ভালো হলে আমাকে জানিও। বা আমাকে একটু ফোন দিও। আজকে সারাদিন তো আমাদের তেমন কথা হল না। এখন ফোন দিলাম কিন্তু এখন বলতে চাইছো না। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো ফোন দিও আমায়।

নিশুর ফোনটি কেটে দিয়ে চুপচাপ করে বসে থাকলাম। সিগারেটের প্যাকেট থেকে সিগারেট জ্বালাতে জ্বালাতে বাসায় ফিরলাম। বাসায় ফিরে দেখি রাত একটা বেজে গেছে। আমার মা এখন আমার অপেক্ষায় বসে আছে। আমি বাসায় ফিরতেই মা বললো…

– আজকে তুই তোর বাবার সাথে এমন করলি কেন বাবা? তুই তো সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসতেছিস তোর বাবা কেমন? এটা তো নতুন কিছু না?!তাই বলে তুই তাকে খুন করতে চাইবি?

– হ্যাঁ আমি জানোয়ারটাকে খুন করে ফেলবো।আর দিনদিন কত এমন দেখবো আর কত তুমি অত্যাচার সহ্য করবে?

– আমি সবকিছু সহ্য করতে পারবো কিন্তু তুই আর তোর বাবার সাথে আমার বিহেইভ করিস না?

– ওই জানোয়ার টাকে আমার বাবা বলো না তো।ও আমার বাবা না। কিসের বাবা?

– আচ্ছা খেতে বস। তখন তো না খেয়ে উঠে চলে গেলি।আর সেই তিন চার ঘন্টা পর এখন আসলি।

– কিছু বলবা আমি ঘুমাতে যাবো।

এসব বলে আমার মায়ের সামনে থেকে আমার রুমের দিকে হাটা দিলাম। একটু পরে জানোয়ারটা দাড়ি চুলকাতে চুলকাতে আমাকে এসে বললো…

– কালকে তোরা সবাই আমার এই বাসা থেকে বের হয়ে চলে যাবি।আমি যেন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে তোদের মুখ না দেখি।

– যাবো তো যাওয়ার আগে তোকে খুন করে যাব বুঝলি? তুই আমার মাকে কষ্ট দিচ্ছিস আর কত দেখবো?

– তোর অনেক সাহস হয়ে গেছে! তোকে আমি জেলে ঢুকাবো।কালকেই তোকে আমি জেলে ঢুকাবো।

– তোরে খুন করেই তো তবে আমি জেলে ঢুকবো এর আগে তো না।

জানোয়ারটা আমার সাথে আর কিছু বলতে পারলো না। আমার রুম থেকে বের হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরেই নিশু আমাকে বারবার ফোন দিতে লাগলো ফোনটি আমি সাইলেন্ট করে পাশে রাখলাম। নিশুর সাথে আমার সম্পর্ক রাখা সম্ভব না আমাদের যতই কষ্ট হোক আমরা আলাদা হয়ে যাবো আমাদের আর কোন সম্পর্ক থাকবে না।

ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি জানোয়ারটা….

[চলবে…..]

#মিছে_মায়া(১ম পর্ব)
Aলেখাঃ Md. Nazmul Huda

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here