মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব -১৩

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ইভানার রাগ হতে লাগল খুব। তাই সে আর খেতে পারল না। খাওয়া মাঝপথে রেখেই পেট ভড়ে গেছে বলে উঠে যায়। ইভানা উঠে গিয়ে ফাহিমের কাছাকাছি যায়। ঝর্ণা ততক্ষণে ফাহিমের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফারহানের সাথে দেখা করতে চলে গেছে।

ফাহিম ইভানাকে দেখে ভ্রু কুচকে বলে,
‘কি ব্যাপার তুমি এখানে কি করছ?’

‘আপনার এক্স গার্লফ্রেন্ডকে দেখতে এসেছিলাম।’

‘ওহ রিয়্যালি? কোথায় আমাকেও দেখাও, আমিও দেখতে চাই আমার গার্লফ্রেন্ডকে।’

ইভানা প্রচণ্ড রেগে যায়। রাগে তার ফর্সা মুখশ্রীতে অল্প অল্প লাল ভাব দেখা যায়। ফাহিম ইভানার এই রকম মুখের অববয় দেখে বেশ খানিকটা অবাক হয়। তার বোধগম্য হয় ব্যাপারটা বেশ জটিল। তাই বেশি না পেচিয়ে বলে,
‘বলো কোথায় আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড? আমার জানা মতে আমি তো প্রেম ট্রেম কিছুই করিনি।’

‘থাক আর নাটক করতে হবে না। এতক্ষণ তো ঠিকই মজার মজার গল্প করে দাত কেলিয়ে হাসছিলেন। আমি বলতেই নাটক শুরু। তলে তলে টেম্পু চলে আমরা বললেই হরতাল।’

‘এসব আবার কি কথা?’

‘এটা একটা কথার কথা। যাইহোক আপনার এক্স গার্লফ্রেন্ডের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেবেন না?’

‘তুমি ভুল ভাবছ ইভানা। ঝর্ণা আপু আমার চাচাতো বোন। আমার থেকে বয়সে ২ বছরের বড়।’

ইভানা নিজের নির্বুদ্ধিতায় জিভ কে’টে বলে,
‘ধুর। এই সামান্য ভুল বোঝাবুঝির জন্য আমার সব শেষ। ভালোমতো খেতেও পারলাম না।’

ফাহিম বেশ শব্দ করে হাসে। বলে,
‘তার মানে তুমি আমাকে নিয়ে জেলাস হাহ,,’

‘মোটেই না। আমি এমনিই।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আসছি।’

বলেই ফাহিম প্রস্থান করল।

২৫.
ঝর্ণা এসে ফারহানের রুমে প্রবেশ করে। কিন্তু কোনরকম নক করে না। এইজন্য তাকে অনেক কথা শুনতে হবে হয়তো৷ কিন্তু তাতে তার কোন মাথাব্যথা নেই৷ ফারহানের বিয়ে যে এখনো হয়নি সেটাই তার কাছে অনেক। সে এটা নিয়েই খুশি আছে। কারণ নিজের ভালোবাসার মানুষের সান্নিধ্য পাওয়াই অনেক বেশি আনন্দের ব্যাপার।

ঘরে এসে ফারহানকে না দেখে সে ভ্রু কুচকে রইল কিছুক্ষণ। অতঃপর নিজের মনের মতো গান বলা শুরু করে দিল,
❝তুমি আমার কাছে ফুটফুটে ওই রাতের শুকতারা
তাই রাত জাগিয়ে মনের সুখে দেই যে পাহারা,
তুমি আমার কাছে শিশির ভেজা সোনালী সকাল
তোমায় একনজর দেখিয়া আমি হয়ে যাই মাতাল।

তুমি আমার কাছে যুদ্ধে জয়ী সাত রাজার ধন
শত বাধা ডিঙ্গায় পাইছি তোমায় মনের মতো মন,
আমার মনের জোছনা আমি কাউকে দেবোনা
তোমায় গাঁইথা রাখছি মনের মাঝে নিজেও জানোনা,
যতই করো বাহানা তোমায় যেতে দিবো না
আমি পাগল হয়ে ঘুরবো তবু পিছু ছাড়বো না।

তোমার মিষ্টি ওই চুলের সুবাস ভালোলাগে খুব
বড়ো ইচ্ছে করে তোমার মাঝে হারাই দিয়ে ডুব,
আমার মন যে মানে না, আর দূরে থেকো না,
আমার মন যে মানে না, আর দূরে থেকো না
আমার পরান’পাখি তুমি বীণে থাকে আনমনা।
আমার মনের জোছনা আমি কাউকে দেবো না
তোমায় গাঁইথা রাখছি মনের মাঝে নিজেও জানোনা,
যতই কর বাহানা তোমায় যেতে দিবো না
আমি পাগল হয়ে ঘুরবো তবু পিছু ছাড়বো না।

তোমায় একপলক দেখলে এ মন রয় না আমার ঘরে
সে ছটফটাইয়া ঘুইরা বেড়ায় কি জানি কি করে,
আমি কিছুই জানি না, তুমি কেন আসো না,
আমি কিছুই জানি না, তুমি কেন আসো না,
আমার আমার কাছে আঁধার ঘরের আলোরই বন্যা।
আমার মনের জোছনা আমি কাউকে দেবো না
তোমায় গাঁইথা রাখছি মনের মাঝে নিজেও জানো না,
যতই কর বাহানা তোমায় যেতে দিবো না
আমি পাগোল হয়ে ঘুরবো তবু পিছু ছাড়বো না।❞

এরমধ্যে ফারহান রুমে চলে আসে৷ ঝর্ণাকে দেখে স্বভাব অনুযায়ী রাগ প্রকাশ করেই বলে,
‘তুই এখানে কি করছিস ঝড়?’

ঝর্ণাকে ফারহান ঝড় বলেই ডাকে৷ তাই সে নিজেকে সামলে নিলো। বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,
‘তোমার সাথে দেখা করতে এলাম আরকি।’

‘কারো রুমে আসার আগে যে নক করতে হয়, মিনিমাম এই ভদ্রতাটুকুও কি ভুলে গেছিস?’

ফারহানের এমন কথা শোনার পর ঝর্ণা তেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় না। কারণ তার অভ্যাস হয়ে গেছে এসবে৷ ফারহান সব সময়ই তার সাথে এরকম ভাবেই কথা বলে। ফারহান কোন কাঙ্ক্ষিত উত্তর না পেয়ে পুনরায় বলে,
‘এর পর থেকে আমার রুমে আসার আগে নক করে ঢুকবি৷ এভাবে বিনা অনুমতিতে কারো রুমে ঢোকা অন্যায়।’

ঝর্ণা মুখ ভেংচি দিয়ে বলে,
‘ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছ জন্য কি সব সময় রুলস রুলস করবা নাকি? এটা কোন পরীক্ষার হল না আর না আমি কোন স্টুডেন্ট। এটা তোমার বাড়ি আর আমি তোমার,,,আমার কোন রুলস মানার প্রয়োজন নেই।’

ফারহান এমনিতেই রেগে ছিল। ঝর্ণার কথা শুনে তার রাগ আরো বেড়ে যায়৷ সে গর্জে ওঠে বলে,
‘আমার মুখের উপর একদম কথা বলবি না। এটা কিন্তু আমি সহ্য করবো না ঝড়। এক্ষুনি বেরিয়ে যা আমার রুম থেকে।’

ফারহান ঝর্ণাকে আগে অনেক অনেক কথা শোনালেও কখনো এভাবে অপমান করেনি৷ তাই এভাবে অপমান করায় খুব গায়ে লাগে তার। চোখ অশ্রুতে ভিজে যায়৷ অশ্রুসজল চোখেই সে বিদায় নেয় রুম থেকে। একতরফা ভালোবাসা সত্যিই অনেক কষ্ট দেয়।

২৬.
বাড়িতে বৌভাত উপলক্ষে যখন আত্মীয় স্বজনের ভীড় তখন হঠাৎ করে পুলিশের আগমনে সবাই প্রচণ্ড অবাক হয়ে যায়। ফারজানা বেগম ফাহিমকে বলেন,
‘ফাহিম পুলিশের সাথে কথা বইলা দেখ তো ওনারা কেন আইছেন। আমার খুব ভয় লাগতেছে।’

‘তুমি চিন্তা করো না, আমি ব্যাপারটা দেখছি।’

ফাহিম এগিয়ে গিয়ে একজন পুলিশ অফিসারকে প্রশ্ন করে,
‘আপনারা এখানে কেন এসেছেন?’

‘এটা কি ফারহান কবীরের বাড়ি?’

‘জ্বি। আমি ওনার ছোট ভাই৷ কেন কোন প্রব্লেম?’

‘ওনাকে ডেকে পাঠান। ওনাকে এরেস্ট করতে হবে।’

‘কেন এরেস্ট করবেন? কি এলিগেশন ওনার বিরুদ্ধে?’

‘উনি একজন পথচারীকে ধা’ক্কা দিয়ে চলে এসেছেন। তিনি এখন মৃত্যুর মুখে। তাই ওনাকে এরেস্ট করব।’

ফারজানা বেগমের বুক ধক করে ওঠে। এমন কিছু হবে তিনি কল্পনা করতে পারেন নি। ফারহান এরমধ্যে নিচে চলে আসে। ফারহানকে দেখে ফারজানা বেগম বলে ওঠেন,
‘ওনারা কি বলতেছেন ফারহান? তুই কি এমন করেছিস? ‘

ফারহান বলে,
‘আমার কোন দোষ নেই, ঐ মেয়েটা নিজেই আমার গাড়ির সামনে চলে এসেছিল দৌড়াতে দৌড়াতে।’

‘দোষ আছে কি নেই সেটা থানায় গিয়ে দেখা যাবে। এখন চুপচাপ চলুন আমাদের সাথে।’

ফারহান বাধ্য হয় পুলিশের সাথে যেতে। সবাই হা করে তাকিয়ে থাকে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here