#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ইভানা আনহার সাথে দেখা করে হাসপাতাল থেকে বাইরে চলে আসে। তোহাও আসে তার সাথে। দুজনে আনহার ব্যাপারেই কথা বলছিল। হাসপাতালের বাইরে আসতেই ফাহিমের সাথে তাদের দেখা হয়। ফাহিম তোহা ও ইভানাকে একসাথে দেখে বেশ অবাক হয়। ইভানা কাছাকাছি আসতেই বলে,
‘ইভানা তোমার আপু এখানে,,,,’
‘আপাই তো ঢাকা মেডিকেল কলেজেই পড়াশোনা করছে। এখানে এসে দেখা হয়ে গেল।’
‘ওহ। তাহলে তো ভালোই হলো। ইভানা তুমি বরং তোমার আপুর সাথেই তোমার বাড়িতে যাও। আমি ভাইয়ার সাথে দেখা করে তারপর নাহয় চলে যাব।’
তোহা বলে ওঠে,
‘সেকি কথা? আমরা একা যাবো কেন? আপনিও আসুন আমাদের সাথে। বাড়ির নতুন জামাই আপনি।’
‘হুম, যাবো তো। বাট আগে ভাইয়ার সাথে দেখা করতে হবে। আম্মু বারবার ফোন করে ভাইয়ার খবর শুনতে চাইছে।’
তোহা আর কিছু বলতে যাবে তখন ইভানা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
‘ঠিক আছে আপনি যান। আমি আপাইয়ের সাথে চলে যাব।’
ফাহিম আর কথা না বাড়িয়ে দুজনার থেকেই বিদায় নিয়ে থানার উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়। অতঃপর ইভানাও তোহার সাথে তাদের বাড়ির দিকে রওনা দেয়।
ইভানা গভীর ভাবনায় মগ্ন ছিল। তোহা ইভানার ভাবুক চেহারা দেখে প্রশ্ন করে,
‘কিরে এত কি ভাবছিস?’
‘আনহার কথাই ভাবছিলাম আপাই। ফাহিম বলেছিল, ফারহান নাকি বলেছে আনহাই ফারহানের গাড়ির সামনে এসে পড়েছিল। আর এদিকে আনহা বলছে সে যা বলার পুলিশের সামনে বলবে। যদি ফারহানের কথা সত্য হতো তাহলে তো ওর এমন কথা বলার কথা নয়। আচ্ছা তোর কি মনে হয়?’
তোহা ব্যাপারটা নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবে। অতঃপর বিজ্ঞের মতো ভাব নিয়ে বলে,
‘কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা সেটা তো আনহার স্বীকারোক্তিতেই প্রমাণিত হবে। কারণ আনহা নিশ্চয়ই কোন কারণ ছাড়া মিথ্যা সাক্ষী দেবে না।’
‘সেটা তো তুই ঠিকই বলেছিল আপাই। কিন্তু আমি খুশি হবো যদি ফারহান অপরাধী না হয়।’
‘যেই লোকটা তোকে এত অপমানিত করল তুই তার ভালো চাইছিস!’
‘উনি যতোই আমাকে অপমান করুন না কেন, উনি সম্পর্কে আমার ভাসুর হন। আমি দেখেছি আমার শাশুড়ি, ফাহিম সবাই কত চিন্তা করছিল ওনাকে নিয়ে। উনি নির্দোষ হলে সবাই খুশি হবে।’
তোহা ইভানার দিকে মায়াবী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
‘তুই একদম বড়দের মতো কথা বলছিস।’
‘আমি কি ছোট নাকি? আর তাছাড়াও যদি ফারহান সত্যিই অপরাধী হয় তাহলে আমি আনহার পাশে দাড়াবো। ওনার শাস্তির ব্যবস্থা করব।’
এসব কথা বলতে বলতেই দুজনে বাড়ির সামনে পৌছে যায়। গাড়ি থেকে নেমে দুজনেই বাড়িতে প্রবেশ করে।
২৯.
ফাহিম থানায় গিয়ে ফারহানের সাথে দেখা করে। ফারহান এখনো তার বয়ানে শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে৷ সে এখনো বলছে,
‘আমার কোন দোষ নেই, ঐ মেয়েটাই আমার গাড়ির সামনে এসেছিল।’
ফাহিম তার ভাইকে বিশ্বাস করে। ফারহানের হাত শক্ত করে ধরে তাকে আশ্বাস দিয়ে বলে,
‘তুই চিন্তা করিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে।’
অতঃপর থানা থেকে বের হয় ফাহিম। একটি ক্যাব বুক করে ইভানাদের বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়। ইভানাদের বাড়ির সামনে পৌছে ক্যাব থেকে নামে ফাহিম।
ইভানাদের বাড়ির সামনে এসে দাড়িয়ে কলিং বেল বাজায়। কিছু মুহুর্তের মধ্যেই ইভানা এসে দরজাটা খুলে দেয়।
ইভানা সবেমাত্র গোসল করেছে, যার ফলে তার চুল থেকে মুক্তোদানার মতো পানি চিকচিক করছে, লাল রঙের একটি সালোয়ার পড়েছে ইভানা। ফাহিম মুগ্ধ চোখে কিছুক্ষণ দেখল ইভানাকে। ইভানা লজ্জায় মুখ নামিয়ে রইল কিছু সময়। নরম কন্ঠে বললো,
‘ভেতরে আসুন। আপনার অপেক্ষাতেই ছিলাম।’
ফাহিম বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। ইভানার মা ইশরাত খাতুন রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে ফাহিমকে দেখে খুব খুশি হন। বাড়ির নতুন জামাই এসেছে তাই তার আদর যত্নের কোন ত্রুটি থাকতে দিলে চলবে না।
ইশরাত খাতুন বললেন,
‘এসো বাবা, আমার সব রান্নাবান্না প্রায় শেষের দিকে। ইভানা ফাহিমকে তোর রুমে নিয়ে যা। ফ্রেশ হয়ে খেতে চলে আসিস দুজনে মিলে।’
‘আপনার এত তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই। আপনি ধীরেসুস্থে সব ব্যবস্থা করুন। আমি ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নিয়ে আসছি।’
‘আচ্ছা বাবা। ইভানা তুই এখনো দাড়িয়ে আছিস কেন? ফাহিমকে তোর রুমে নিয়ে যা।’
ইভানা ফাহিমের পাশে এসে কোমল গলায় বলল,
‘আসুন।’
ফাহিম ইভানার সাথে যেতে লাগল। ইশরাত খাতুনের চোখ জুড়িয়ে গেল তাদের দুজনকে একসাথে দেখে। তিনি দুহাত তুলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বললেন,
‘ইয়া মাবুদ তুমি ওদের দুজনকে এক করেছ। কত সুন্দর মানিয়েছে ওদের। আমি শুধু এটুকুই চাইব, ওরা সবসময় সুখী থাকুক। তুমি দেখো ওদের এই সুন্দর সম্পর্কটা যেন নষ্ট হয়ে না যায়।’
ফাহিম ইভানার সাথে তার রুমে চলে আসে। ইভানার রুমটা অনেকটাই এলোমেলো ছিল। ইভানা বেশ লজ্জা পায় ব্যাপারটা নিয়ে। কারণ সে তো দেখেছে ফাহিম তার রুম কতো পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখে।
ইভানার মনে হচ্ছিল ফাহিম তাকে এই বিষয়টা নিয়ে কথা শোনাবে। কিন্তু তাকে অবাক করে ফাহিম কোন কিছু না বলেই ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। ইভানা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
৩০.
ফাহিম ইভানাদের ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। আজ বেশ ভালোই জামাই আদর পাচ্ছে সে। গোশত-পোলাও থেকে শুরু করে নানা ধরনের মিষ্টান্নের আয়োজন করা হয়েছে।
ফাহিম এমনিতেই কম খায়। কিন্তু আজ বাধ্য হয়ে নিজের স্বভাবের বাইরে গিয়ে বেশি খেতে হচ্ছে তাকে। ইশরাত খাতুন খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারটা তদারকি করছিলেন। তিনি গোশতের বাটিটা ফাহিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
‘আর একটু দেই।’
‘না। সরি আর খেতে পারবো না।’
‘সেটা বললে তো শুনব না। আর একটু নাও। দেখো পারবে।’
অগত্যা ফাহিমকে বাধ্য হয়ে নিতে হয়। খাওয়া দাওয়া শেষ করে ফাহিম সোফায় বসে রেস্ট নিচ্ছিল। এমন সময় ইভানা তার দাদাকে নিয়ে সেখানে এসে উপস্থিত হয়।
ইভানা তার দাদা ও ফাহিমের মধ্যে সম্পর্ক সহজ করার জন্য দুজনকে পাশাপাশি বসায়।
ফাহিম সৌজন্যতার খাতিরে বলে,
‘ভালো আছেন দাদা?’
‘হুম।’
এরপর আর দুজনের মধ্যে তেমন কথা হয়না। হাশেম আলী এখনো মন থেকে বিয়েটা মেনে নিতে পারেন নি। কিন্তু ইভানার কাছে তিনি শুনেছেন ফাহিম নাকি তার অনেক খেয়াল রাখে, অনেক যত্ন নেয় তার। তাই তিনি নীরবতা ভেদ করে বললেন,
‘শোন তোমাকে একটা কথা বলার ছিল। আমার নাতনী কিন্তু অনেক নরম মনের মেয়ে। আমি ওকে অনেক যত্ন করে বড় করেছি। কখনো বিন্দুমাত্র কষ্ট দেইনি। আশা করি তুমিও ওকে কখনো কষ্ট দেবেনা।’
‘আপনি কোন চিন্তা করবেন না দাদা, আমি কখনো ইভানাকে কখনো কষ্ট পেতে দেবো না।’
কথাটা বলে ইভানার দিকে আড়চোখে তাকায় ফাহিম। ইভানাকে নিজের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হাসে।
হাশেম আলী টিভিটা অন করেন। টিভিটা স্পোর্টস চ্যানেল চলছিল হাশেম আলী সেটা চেঞ্জ করে নিউজ চ্যানেল দেন।
নিউজ চ্যানেলের দিকে চোখ রাখতেই থমকে যায় ফাহিম, ইভানা! কারণ ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে,
‘ম্যাজিস্ট্রেটের ধা’ক্কায় আহত পথচারীর জ্ঞান ফিরেছে। তিনি তার বয়ানে বলেছেন উক্ত ম্যাজিস্ট্রেট নাকি মাতালের মতো গাড়ি চালাতে চালাতে তার দিকে ছুটে আসছিল এবং এই দূর্ঘটনার পুরো দায় সেই ম্যাজিস্ট্রেটের।’
ফাহিম নিউজটা দেখে তৎক্ষনাৎ উঠে দাড়ায়। বিস্ময়ের সাথে বলে ওঠে,
‘এটা কি করে হতে পারে? ভাইয়ার সাথে তো আমার কথা হয়েছিল। ভাইয়াকে দেখে মনে হচ্ছিল না সে মিথ্যা বলছে।’
ইভানা বলে,
‘আপনার ভাই যে মিথ্যা বলছে সেটা তো প্রমাণই হয়ে গেলো। মেয়েটা নিশ্চয়ই অকারণে মিথ্যা সাক্ষ্য দেবে না।’
‘এটা হতে পারে না। আমি চিনি আমার ভাইয়াকে। সে এমন কিছু করতে পারে না। আমি আমার ভাইয়াকে নির্দোষ প্রমাণ করবোই।’
ইভানাও মনে মনে সংকল্প করে নেয়,
‘আনহার সাথে যেই অন্যায় আপনার ভাই করেছে তার শা’স্তিও আমি তাকে পাইয়ে দেব।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨