মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব -২

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ২
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ফারজানা বেগমের কথা শুনে ওনার দিকে বিস্ময়কর ভাবে তাকায় সবাই। ফারহান বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে ফেলে। তারিকুল ইসলাম বলেন,
‘এটা আপনি কি বলছেন? আপনার সত্যি আমার মেয়েকে পছন্দ হয়েছে?’

ফারজানা বেগম মুচকি হাসলেন। অতঃপর ইভানাকে ইশারা করে নিজের কাছে ডাকলেন। ইভানা ফারজানা বেগমের পাশে বসতেই তিনি ইভানার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
‘এই রকম পুতুলের মতো মাইয়াকে কার না পছন্দ হইবো। দেখতে তো মাশাল্লাহ, আমার ফারহানের পাশে খুব মানাবে।’

ইভানা খুশি হলো প্রচণ্ড। তারিকুল ইসলাম অবাক হলেন শুধু। তিনি তো ভেবেছিলেই পাত্রপক্ষের কেউ ইভানাকে পছন্দই করবে না। কারণ এমন উচ্চশিক্ষিত একজন ছেলে কোন দুঃখে একটা মেট্রিক ফেল মেয়ে বিয়ে করবে। তবে এখন তার ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। তিনিও খুশি হলেন। ইশরাত খাতুন সবথেকে বেশি খুশি হলেন৷ আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া আদায় করলেন। নিজের মেয়ের জন্য এত ভালো সম্মন্ধ ঠিক হলে কোন মা খুশি না হয়ে থাকতে পারে।

ফারহান এতক্ষণ চুপ থাকলেও এখন যেন তার ধৈর্য এবং সহ্যের ক্ষমতা পেরিয়ে যাচ্ছে। একজন ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে এখন কিনা তাকে একজন ম্যাট্রিক ফেল করা মেয়েকে বিয়ে করতে হবে! এটা তার সম্মানের জন্য হুমকি। লোকে তো হাসি তামাশা করবে তাকে নিয়ে। নিজের মাকে যথেষ্ট সম্মান করলেও নিজের বিয়ে নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারলো না। কিন্তু সবার সামনে নিজের মায়ের উপর অভিরুচি তার নেই। সেই কারণে চুপচাপই রইল। বাড়িতে গিয়ে মাকে বুঝিয়ে বলবে। কিন্তু তার আগে বিয়ে নিয়ে কথা উঠুক চাইছে না ফারহান। তাই সে সবার সামনে বলে উঠল,
‘আমরা তাহলে এখন উঠি। বাড়ি গিয়ে আপনাদের বাকি কথা জানাচ্ছি।’

ফারহান কথাটা বলতে না বলতেই ফারজানা বেগম তার কথা উড়িয়ে দিয়ে বললেন,
‘বাড়িত গিয়া কেন সিদ্ধান্ত নিতে হইবো? যা সিদ্ধান্ত নেওনের আমি নিয়ে নিছি। এই মাইয়ার সাথেই তোর বিয়ে দিমু।’

ফারহান নিজেকে সামলানোর যথেষ্ট চেষ্টা করল। কিন্তু তার মেজাজ দ্রুত খারাপ হতে লাগল। সে উঠে পড়লো সোফা থেকে। অতঃপর দ্রুতবেগে হাটা ধরল। এখানে থাকলে মেজাজ আরো বেশি খারাপ হবে।

ফারহান চলে যেতেই তারিকুল ইসলাম বুঝতে পারলেন সে হয়তো এই বিয়েটা নিয়ে খুশি নয়৷ তাই তিনি ফারজানা বেগমকে বললেন,
‘আপনারা একটু ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। বিয়েটা তো আপনার ছেলের সাথেই হবে তাই তার মতেরও প্রয়োজন আছে। আমার মনে হয় আপনার ছেলে এই বিয়েতে রাজি হয়।’

‘আমার পোলা আমার বাধ্য। তাই আমি যা কমু ও সেটাই করবো৷ আমি যখন কইছি এই মাইয়াই আমার ছেলের বউ হইবো তখন তাই হইবো।’

কথাটা বলে চায়ের কাপে শেষ চুমুক বসিয়ে দেন ফারজানা বেগম। অতঃপর নিজের ব্যাগ থেকে একজোড়া বালা বের করে ইভানার হাতে পরিয়ে দেন। মৃদু হেসে বলেন,
‘এইডা আমার শাউরী(শাশুড়ী) আমায় দিয়া ছিল। এহন আমি তোমায় দিলাম। তোমাকে আমার খুব পছন্দ হইছে৷ তোমার সাথে আমার মায়ের চেহারার অনেক মিল জানো। তুমি আমার ছেলের বউ হবা।’

ইভানা লাজুক হাসল। ফারজানা বেগম উঠে দাড়ালেন। তারিকুল ইসলামকে উদ্দ্যেশ করে বললেন,
‘আমি তাইলে আইজ যাই। আমার পোলা বাইরে অপেক্ষা করছে। মাইয়া যেহেতু পছন্দ হইছে তাইলে আরেকদিন আইসা বিয়ার দিন তারিখ ঠিক করমু।’

সকলের থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে চলে এলেন ফারজানা বেগম। ফারহান গাড়িতে বসে ছিল। ফারজানা বেগম এসে গাড়িতে উঠতেই ফারহান কোন কথা না বলে গাড়ি চালানো শুরু করল। বাড়ি গিয়ে যা বলার বলবে বলে ভাবল সে।

৩.
আকাশে মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। আজকের আবহাওয়া বেশ সুন্দর। গাড়ি থেকে নেমে এই বাতাস বেশ উপভোগ করলেন ফারজানা বেগম। তিনি নিজের জীবনের অধিকাংশ সময় গ্রামেই অতিবাহিত করেছেন। শেষ বয়সে এসে ছেলেরা শহরে সেটেল্ড হওয়ায় তাদের সাথে শহরে চলে এসেছেন তিনি। শহরে সারাদিন এসির বাতাসে থাকতে থাকতে বেশ বিরক্ত তিনি। অনেকদিন পর বাইরের বাতাস তাই ভালোই উপভোগ করছেন।

‘আম্মু ভেতরে চলো। জরুরি কথা আছে।’

ফারহানের কথায় ধ্যান ভাঙল ফারজানা বেগমের। অতঃপর বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলেন। বাড়িতে এসে তিনি দেখলেন নামাজের সময় হয়ে গেছে। তাই তিনি আর সময় নষ্ট না করে নামাজ আদায় করে নিলেন। নামাজ আদায়ের পরে বসে বসে কোরআন তিলওয়াক্ত করছিলেন।

এমন সময় ফারহান তার কক্ষে প্রবেশ করলো। ফারজানা বেগমের কাছে এসে বলল,
‘তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে আম্মু।’

‘আমি জানি তুই কি কইতে চাস। শোন ঐ মাইয়াকে আমার অনেক পছন্দ হইছে। তুই যদি আমাকে মা হিসেবে সম্মান করস তাহলে আমার সিদ্ধান্ত মাইনা নে।’

‘কিন্তু আম্মু ঐ মেয়ের সাথে আমার কিভাবে যায়?’

‘যায় না কেন? ওর বয়স তো ১৮ হইয়া গেছে। আর তোর বয়সও যে খুব বেশি তা তো আর না। মাত্র ২৭ বছর।

‘বয়সের জন্য না ঐ মেয়ে ম্যাট্রিক ফেল।’

‘তাতে কি? আমি তো জীবনে ইস্কুলের গন্ডি দিয়ে যাই নাই। আমাকে যদি মা হিসাবে মানতে পারো তাইলে ঐ মাইয়ারে বউ হিসাবে মানতে কি অসুবিধা?’

‘আম্মু কিছু বুঝতে পারছ না,,’

‘আমার কিছু বোঝোনের নাই। তোমার বাপ তোমরা অনেক ছোট থাকতেই মারা গেছে। তহন থেইকা আমি একা হাতে তোমারে আর তোমার ছোট ভাইরে মানুষ করছি। এহন তুমি যদি আমার সেই কষ্টের মূল্য দিতে চাও তাইলে বিয়েটা কইরা নেও। আমার আর কিছু বলার নাই।’

ফারহান পড়ে গেল মহা সংকটে। এরকম একটা পরিস্থিতিতে এখন সে কি করবে সেটাই বুঝতে পারছে না৷ সব কেমন ফাকা ফাকা লাগছে।

৪.
ইভানা নিজের রুমে বসে দাত দিয়ে হাতের আঙুল কা’টছে। এটা তার একটা বদভ্যাস বলতে গেলে। যখনই কোন কিছু নিয়ে বেশি চিন্তা করে তখনই সে এমন করে।

ইভানার এখন চিন্তার মূল কারণ হচ্ছে তার বিয়েটা নিয়ে। তখন আনহার কথা শুনে ঠিক করলো না ভুল সেটা নিয়ে চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে। তার উপর এখন তার চিন্তা আরো বৃদ্ধি লাভ করেছে। কারণ ফারহানের মা ইতিমধ্যে তাকে পছন্দ করে তার হাতে নিজের বালা পর্যন্ত পড়িয়ে গেছে। এখন তার ভবিতব্য কি হতে চলেছে তা নিয়ে যথেষ্ট বিচলিত সে। এসব নিয়ে চিন্তা ভাবনা একপর্যায়ে তার মাথায় এলো ফারহানের কথা। ফারহানের ব্যবহারেই ইভানা বুঝে গেছে সে হয়তো এই বিয়েটা করতে চাচ্ছে না। ব্যাপারটা মনে হতেই শয়তানী টাইপ হাসি দিয়ে ইভানা বিড়বিড় করে বললো,
‘বিয়ে তো আপনার আমাকেই করতে হবে। আপনার বউ হয়েই আমি মেট্রিক পরীক্ষায় ফেল করার শোধ তুলব।’

‘কিসের শোধ নেওয়ার কথা বলছিস তুই?’

চিরপরিচিত গলার স্বর শুনে দরজার দিকে তাকায় ইভানা। তার বড় বোন তোহা দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে। ইভানা তোহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
‘তেমন কিছু না আপাই। তুই কখন এলি?’

‘এই একটু আগে। এসেই তোর এই শোধ নেওয়ার কথা শুনতে পেলাম। বাই দা ওয়ে, তোকে নাকি আজ দেখতে এসেছিল।’

‘হুম। দেখ কি একটা অবস্থা। তুই আমার বড় বোন অথচ তোর আগেই আমার বিয়ে হচ্ছে। হি হি হি।’

‘এটা মোটেই মজার ব্যাপার না ইভানা৷ তুই যদি একটু মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতি তাহলে এত তাড়াতাড়ি আব্বু তোর বিয়ের কথা ভাবত না। আমি তোকে কত করে পড়াশোনা করতে বলেছি কিন্তু তুই,,,’

ইভানা কানে হেডফোন গুঁজে বলে,
‘আমার দ্বারা এসব পড়াশোনা হবে না আপাই। আমি তোর মতো ওতো মেধাবী নই৷ তার থেকে ভালো বিয়ে করে নেই।’

‘পড়াশোনা করার থেকে সংসার করা মোটেই সহজ কাজ না। বাড়িতে তো এক গ্লাস পানিও নিয়ে খাস না। শ্বশুর বাড়ি গিয়ে যখন বাড়ির সব কাজ করতে হবে তখন বুঝবি৷ আফসোস করবি আর বলবি এর থেকে পড়াশোনাই ভালো ছিল।’

ইভানা হেডফোনের গানের তালে তালে তাল মিলাতে ব্যস্ত। তোহা আর কিছু না বলে বাথরুম চলে গেল ফ্রেশ হয়ে নিতে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here