#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ২৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ফাহিম ও ইভানা একসাথে বসে ছিল ঘরের মধ্যে। আজ ইভানা অনেক খুশি৷ কারণ গ্রাম থেকে ফিরেছে তারা। গ্রামে কা’টানো কিছু দিন এখন শুধু দুঃস্বপ্নের মতো ভুলতে পারলেই হলো৷ ইভানা নিজের চিন্তায় ডুবে ছিল এমন সময় ফাহিম তার গালে চু’মু দিয়ে তাকে অবাক করে দেয়। ইভানা পুরো হা হয়ে যায়।
ফাহিম বলে,
‘বউয়ের চিন্তা বন্ধ করার জন্য এমন করতে হলো কিছু মনে করো না। ‘
ইভানাও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী না। সে আচমকা ফাহিমের গালের কাছ নিজের ওষ্ঠদ্বয় নিয়ে গেল। ফাহিম উত্তেজনায় চোখ বন্ধ করে নেয়। ইভানা এটা দেখে বেশ অন্যরকম একটা হাসি দেয়। অতঃপর কা’মড়ে ধরে ফাহিমের গালে। ফাহিম ব্যাথায় মৃ’দু আওয়াজ করে। ইভানা ফাহিমকে ছেড়ে দিয়ে বলে,
‘আমার সাথে লা’গতে আসলে এমনই হবে। আমি কোন সাধারণ মেয়ে নয়৷ এভাবেই আমি নিজের স্বামীকে নিয়ন্ত্রণ করবো।’
ফাহিম অভিমানে গাল ফুলিয়ে নেয়। শুধু মাত্র তো নিজের স্ত্রীর গালে সামান্য একটা চু’মুই খেয়েছিল। বিনিময়ে কিনা জু’টল কা’মড়। নিজের ভাগ্যের এই নিষ্ঠুরতা নিয়ে বড়ই আফসোস হচ্ছে তার। অগত্যা মন খারাপ করে উঠে যেতে নেবে অমনি ইভানা ফাহিমের হাত ধরে তাকে আটকে দেউ। স্মিত হেসে বলে,
‘আপনি জানেন না অর্ধেক কাজ বাকি রেখে কোথাও যেতে নেই? যদি জেনে থাকেন তাহলে প্লিজ এখানেই থাকুন।’
ফাহিম কি বলবে বুঝতে না পেরে চুপ থাকল। ইভানাকে ফাহিমকে নিজের দিকে টেনে আনলো। ফাহিম এবার বুঝল ইভানার উদ্দ্যেশ্য। তাই সেও ইভানার তালে তাল মিলিয়ে ইভানার ক’টিদেশ ধরে তার মুখটা কাছে নিয়ে এলো। ইভানার কোমল ঠোট নিজের ঠোট দ্বারা দখল করে নিল। ফাহিমের সংস্পর্শে আসতেই তীব্র পুরুষালি গন্ধে পাগল হয়ে যেতে লাগল ইভানা।
নিজেকে পুরোপুরি ফাহিমের কাছে সপে দিতে প্রস্তুত হয়ে গেল সে। এভাবেই পবিত্র সম্পর্কের জোয়ারে ভেসে যেতে লাগল দুজন। মিলনের ঘন্টা বেশ ভালোভাবেই বাজতে লাগল। দুটি প্রাণ, দুটি আত্মা মিলেমিশে একাকার হতে লাগল।
৫১.
ফারহান আজও ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। তার উদ্দ্যেশ্যে কাঙখিত নারীটির দেখা পাওয়া। তার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণতে গিয়ে ক্ষণে ক্ষণে অস্থিরতা গ্রাস করছে ফারহানকে। ফারহান বারংবার সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছে যেন কাঙ্ক্ষিত মুখটির দেখা পায়। আর হলোও তাই৷ কিছু সময়ের মধ্যেই ফারহান দেখতে পেল সেই কাঙ্ক্ষিত মুখশ্রী।
কালো রঙের একটি সালোয়ারের উপর সাদা এফ্রোন পড়ে এগিয়ে আসছে তোহা। তোহার এমন রূপ দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারল না ফারহান। অবশ্য প্রতিদিন প্রতিক্ষণ এভাবেই মুগ্ধতা এসে গ্রাস করে তাকে।
ফারহান যেমন তোহাকে খেয়াল করেছে তোহাও কিন্তু ঠিক তেমনিভাবে খেয়াল করেছে ফারহানকে। বেশ রাগও হচ্ছে তোহার৷ এই ফারহান নামক লোকটাকে এমনিতেই তার আগে থেকে অপছন্দ। তার উপর এখন যেভাবে সময় নেই অসময় নেই যখন তখন তার সামনে এসে যাচ্ছে তাতে রাগ বাড়ছে বই কমছে না।
তোহা আজ প্রায় ৪-৫ দিন থেকে খেয়াল করছে এই ফারহান তার পিছু নিয়েছে। প্রথম প্রথম এড়িয়ে গেলেও এখন আর সেটা সম্ভব হচ্ছে না। সে কারণে তোহা এতদিন যা করার কথা কল্পনাও করে নি তাই করল। সরাসরি ফারহানের কাছে গেল এবিষয়ে তার সাথে খোলাখুলি কথা বলার জন্য।
ফারহান তোহাকে আসতে দেখেই বুঝে গিয়েছিল তার মনোভাব। সেই কারণে নিজেকে প্রস্তুতও করে রেখেছিল।
তোহা একেবারে ফারহানের অনেক কাছাকাছি চলে আসে। তাদের মধ্যে বড়জোর এক হাত সমান দূরত্ব। এমতাবস্থাতেই তোহা ফারহানের সামনে আঙুল তুলে বলে,
‘এক্সকিউজ মি, অনেক দিন থেকে আমি খেয়াল করছি আপনি আমার আশেপাশে এভাবে ঘুরছেন। প্রথমদিকে এড়িয়ে গেলেও এখন সেটা আর সম্ভব নয়। কারণ আমার নিজের নিরাপত্তা বলেও একটা ব্যাপার আছে। খুব ভালো হবে যদি আজকের পর আপনি আর আমার সামনে এসে না দাঁড়ান।’
ফারহান অবাক হয়ে বলে,
‘আপনি ভুল ভাবছেন। আমি আপনার পিছু নিচ্ছি না। আমার এক বন্ধুকে দেখতেই এখানে এসেছিলাম।’
‘আচ্ছা বন্ধুকে দেখতে এসেছিলেন। তো পরশুদিন আমি যেই রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করছিলাম, আবার কাল দুপুরে পার্লারের, আজ সকালে আমার বান্ধবীর বাড়ির সামনে এসব স্থানে আপনার কাজ ছিল?’
ধরা পড়ে গিয়ে চুপ করে থাকে ফারহান। কারণ তার কাছে আর বলার মতো কিছু নেই। তোহা একটু থেমে বলা শুরু করে,
‘আপনি আমার বোনের ভাসুর হন। সেই জন্য আমি আপনার সাথে কোন ঝামেলা চাইছি না। তবে আপনি যদি এভাবেই আমাকে ফলো করতে থাকেন তাহলে আমি আপনার এগেইস্টে লিগ্যাল একশন নেবো। এজ আ ম্যাজিস্ট্রেট আপনার রেপুটেশনের জন্য এটা কত ক্ষতিকর হবে সেটা আশা করি আন্দাজই করতে পারছেন।’
ফারহান একটা কথাও বলে না। তোহা নিজের মতো চলে যায়। ফারহান তোহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। সাথে সাজিয়ে নেয় আগামী দিনের পরিকল্পনাগুলো।
৫২.
ইভানা আজ কলেজ থেকে ফিরে দেখে ফারজানা বেগম বসে বসে টিভি দেখছেন। ইভানাও তার পাশে বসে পড়ে৷ দুই শাশুড়ী বৌমা মিলে সিরিয়াল দেখতে থাকে। সিরিয়ালে নায়িকার বড় জা নায়িকার শাশুড়ীর সামনে নায়িকাকে খারাপ প্রমাণিত করছে। শাশুড়ীও বড় জার কথা শুনে ছোট বউকে যা নয় তাই বলছে। এসব দেখে ইভানার মাথায় রাগ উঠে যায়। ফারজানা বেগম তো সরাসরি গা’লাগালিই শুরু করে বলেন,
‘শ’য়তান শাশুড়ি একখান। সবসময় খালি বড় বউয়ের কতায় নাচে। তোর মাথায় কি ঘিলু নাই?’
এসব কথা শুনে ইভানার বেশ হাসি পায়। ফারজানা বেগম ইভানাকে হাসতে দেখে বলে,
‘তুমিই কও মনে করো ফারহান বিয়া কইরা বউ আনল। যে তোমার বড় জা হইবো। আমি কি টিভির এই কূ’টনি শাশুড়ির মতো হমু নাকি?’
ইভানা সাথে সাথে আপত্তি করে বলে,
‘না, একদমই না। আপনি তো এমন হবেন না। আমার তো মনে হয়, আপনার বড় ছেলের বউও অনেক ভালো হবে। এমন কূ*টনি জা হবে না।’
তাদের কথার মাঝেই ফারহানের আগমন ঘটে। ফারহানকে দেখে ফারজানা বেগম বলে ওঠেন,
‘তুই আইজ হটাত এত তাড়াতাড়ি ফিরলি?’
ফারহান কোন উত্তর না দিয়ে ইভানাকে বলে,
‘ইভানা একটু এদিকে আসবে তোমার সাথে কথা আছে।’
ইভানা হতভম্ব হয়ে চেয়ে থাকে। এই বাড়িতে এসেছে থেকে ফারহানকে সে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলেছে। কোন কথাই বলেনি। ফারহানও কথা বলার আগ্রহ দেখায় নি। কিন্তু আজ হঠাৎ কি হলো যে ফারহান যেচে কথা বলতে চাইছে সেটা ইভানা বুঝতে পারছে না।
তবে ভদ্রতা রক্ষার্থে সে ফারহানের সামনে গেল। ফারহান ইভানাকে একটু দূরে নিয়ে এলো যাতে ফারজানা বেগম তাদের কথা শুনতে না পায়৷ তারপর বলা শুরু করল,
‘আমি জানি আমার কারণে তুমি হয়তো একসময় অনেক অপমানের মধ্য দিয়ে গেছ তাই আমার প্রতি তোমার রাগ হওয়াই স্বাভাবিক। তবে একটা সত্য জানো?’
‘কি?’
‘আমি তোমাকে নয় তোমার বোনকে পছন্দ করেছিলাম। সেটা অনেক আগের ঘটনা। ঢাকা মেডিকেলে আমার একটা বন্ধু ভর্তি ছিল তাকে দেখতে গিয়েই তোহাকে প্রথম দেখি। প্রথম দেখাতেই ওকে ভালোবেসে ফেলি। তারপর অনেক কষ্টে খোঁজখবর নিয়ে তোমাদের বাড়ির ঠিকানা জোগাড় করি। তোমার বাবা তার মেয়ের জন্য পাত্র খুঁজছে শুনেই ঘটকের সাথে যোগাযোগ করি। যেহেতু তোহা ওনার বড় মেয়ে তাই ভেবেছিলাম ওর বিয়ের কথাই হচ্ছে। কিন্তু পরে পাত্রী দেখতে গিয়ে তোমাকে দেখে চমকে যাই। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম তোহার ছোট বোন মেট্রিক পরীক্ষার্থী তাই ঘুনাক্ষরেও টের পাইনি তোমার বিয়ে উনি দেবেন। এরমধ্যে আমার মারও তোমাকে পছন্দ হয়ে যান। উনি আমাকে জোর করতে থাকেন। আমার মাকে অনেক সম্মান করায় তার মুখের উপর কিছু বলতে পারিনি। তাই আমি বাধ্য হই বিয়েতে মত দিতে। কিন্তু মন থেকে তোহাকে ভালোবাসায় এই বিয়েটা করতে আমি চাইছিলাম না। শুধু চাইছিলাম কোন একটা কারণ বের করে যদি বিয়েটা বাতিল করা যায়। আর সুযোগ পেয়েও যাই। বিয়ে বাড়িতে সবাই যখন সবাই তোমাকে আর আমাকে নিয়ে বা’জে কথা বলে তখন সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমি বিয়েটা ভেঙে দেই। এরপর চলে আসি।’
ইভানা সব কথাই রোবটের মতো নিশ্চুপ হয়ে শুনছিল। তার চোখের কার্নিশ বেয়ে দুফোটা জলও বের হয়।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨