মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্বঃ২৭

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ২৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ইভানা কিছু সময় চুপ করে থাকে। নিজেকে যথেষ্ট সামলানোর চেষ্টা করে। এতদিন কিছুটা হলেও সে নিজেকে দো’ষী ভেবে এসেছে ফারহানের সাথে তার বিয়েটা ভা’ঙার জন্য। কিন্তু আজ সে আসল সত্যটা জানল। কিছু সময় চুপ থেকে ফারহানকে বলল,
‘আপনাকে ধন্যবাদ সব সত্য আমাকে বলার জন্য। তবে কি জানেন,এই কথাগুলো যদি আপনি অনেক আগে বলতেন তাহলে পরিস্থিতি অনেক সুন্দর থাকত। অন্তত আজকের মতো এমন হতো না। আমি আজ কিছু বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই।’

ফারহান মাথা নিচু করে বলে,
‘আমি জানি আমি যা করেছি তা ভুল ছিল। কিন্তু আমার তখন কিছু করার ছিল না।’

‘আপনার করার কিছু। আপনি চাইলেই আপনার মাকে সব সত্য জানাতে পারতেন। তাহলে হয়তো আমাকে এত অপমানের মধ্য দিয়ে যেতে হতো না। আর আপনিও হয়তো তোহা আপাইকে…যাইহোক যা হবার হয়ে গেছে। ভাগ্যে যা লেখা থাকে সেটা বদলানো যায়না। তবে আমি নিজের ভাগ্য নিয়ে আফসোস করি না। আমার ভাগ্য তো সোনায় মোড়ানো তাই ফাহিমের মতো এত ভালো একজন জীবনসঙ্গী পেয়েছি।’

ফারহান ইতস্তত বোধ করছিল। নিজের জড়তা কা’টিয়ে বলল,
‘আমার জন্য তোমায় যা যা অপমানিত হতে হয়েছে সবকিছুর জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি।’

ইভানার এই মুহুর্তে অনেক হাসি পেলেও সে হাসল না। বরং বলল,
‘আপনি কেন ক্ষমা চাচ্ছেন? আপনার ক্ষমা চাইতেই কি সব বদলে যাবে? উহুম কিছুই হবে না।’

‘আমি তোমার বোনকে সত্যিই অনেক ভালোবাসি ইভানা, ওকে খুব করে চাই।’

‘আপনি যদি সত্যিই আমার বোনকে ভালোবাসতেন তাহলে নিজের মায়ের কথায় আমাকে বিয়ে করতে রাজি হতেন না। আচ্ছা যদি এমন হতো যে, সেদিন এত ঘটনা ঘটতো না এবং আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়ে যেত তাহলে কি হতো? তখন কি করতেন আপনি?’

ফারহান চুপ থাকে। কারণ তার উত্তর দেওয়ার মতো কিছু নেই। ফারহানকে চুপ দেখে ইভানা মৃদু হেসে বলে,
‘ভালোবাসার মানেই আপনি জানেন না। যাইহোক, আপনার জীবনে আপনি যা খুশি করুন। আপনি যদি আমার আপাইকে এখন কোনভাবে নিজের করে নেন তাতেও আমি কিছু মনে করবো না। কিন্তু আমি চিনি আমার আপাইকে। সে কখনো আপনাকে বিয়ে করার কথা ভাববে না।’

ফারহান মুহুর্তেই রেগে গিয়ে বলে,
‘এতদিন আমি নিজের অনুভূতি সবার থেকে লুকিয়ে রেখেছি। এখন আর নয়। তোমরা বোনকে আমার হতেই হবে আর আমি ওকে নিজের করেই ছাড়ব। ইটস মাই প্রমিস।’

ইভানা আর কিছু বলল না। নিজের বোনের ভরসায় রেখে দিলো সবকিছু।

৫৩.
ফাহিম ক্লান্ত শরীরে ফিরে এলো। একটি প্রজেক্ট নিয়ে বর্তমানে খুব ব্যস্ত সে। এই প্রজেক্ট কমপ্লিট করলে এক্সামে কিছু এক্সট্রা মার্ক পাওয়া যাবে। তাই সে এই প্রজেক্টে মনোনয়ন করেছে।

নিজের রুমে প্রবেশ করে ফাহিম দেখলো ইভানাকে। ইভানা পড়ার টেবিলে বসে চুপচাপ পড়ছে। পুরো ধ্যান তার বইয়ের পাতায়। ইভানার এই রূপ দেখে বেশ খুশি হয় ফাহিম। সে তো এমন ইভানাকেই চেয়েছিল।

ইভানাকে এত মনোযোগ দিয়ে পড়তে দেখে আর ডিস্টার্ব করল না ফাহিম। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়ল বিছানায়। কিছু সময় পর খেয়াল করল ইভানা উঠে এসে বিছানায় তার পাশেই শুয়ে আছে। ফাহিম এক পাশে কাত হয়ে ইভানার মুখের কাছে মুখ নিয়ে আসল৷ ইভানার মুখ দেখেই বুঝল তার মনের অবস্থা ভালো নেই। ফাহিম ব্যকুল হয়ে উঠল। বলল,
‘কি হয়েছে তোমার ইভানা? মন খারাপ কেন?’

‘আচ্ছা আমি একবার খারাপ রেজাল্ট করেছি জন্য কি আপনার যোগ্য না?’

‘এমন কথা কেন বলছ তুমি?’

‘আমার নিজেকে মাঝে মাঝে খুব ছোট মনে হয় নিজের কাছেই। মনে হয় আমি আপনার যোগ্য নয়।’

‘এটা একদম ভুল কথা। মানুষের যোগ্যতার মাপকাঠি কখনো তার পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়ে হতে পারে না। শিক্ষিত তো সবাই হয় কিন্তু সুশিক্ষিত তো সবাই হতে পারে না। এই যে দেখো না, দেশে যে এতো বৃদ্ধাশ্রম আছে সেখানে কি কোন কৃষক, জেলে বা রাস্তার ধারের চা বিক্রেতার মা থাকে? না থাকে না। খোঁজ নিয়ে দেখবে সব উচ্চশিক্ষিত ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সরকারি চাকরিজীবীর মাই ওখানে ঠাঁই পায়। তো এত শিক্ষা দিয়ে তাদের কি লাভ হলো? বউয়ের কথায় বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসা! ঐসব সো কলড শিক্ষিত লোকের থেকে তুমি অনেক ভালো। আমি জানি কখনো তুমি আমাকে এমন কুপরামর্শ দেবে না।’

ইভানা আবেগপ্রবণ হয়ে ফাহিমকে জড়িয়ে ধরল।

৫৪.
ঝর্ণা আজ সপরিবারে এসেছে ফাহিমদের বাড়িতে। ঝর্ণাই মূলত তার মা-বাবাকে জোরপূর্বক নিয়ে এসেছে। ঝর্ণা এসেই ফারজানা বেগমের সাথে গল্পগুজবে মেতে উঠেছে। ঝর্ণার বাবা জিয়াউল ইসলাম জানেন ঝর্ণা কেন আজ এখানে এসেছে। তিনি তো খুব ভালো করেই জানেন তার মেয়েটা সেই ছোট থেকে ফারহানকে ভালোবাসে।

তাই তিনি কথার মাঝে ফারজানা বেগমকে প্রস্তাবটা কিছুটা এভাবে দিয়ে বসলেন,
‘দেখ বুবু আমি তোর ছোট ভাই। তোকে কথাটা বলতে কেমন লাগছে তবুও বলছি। জানি মেয়ের বাবা হিসেবে এমন কথা বলাটা সমীচীন নয় তবুও নিজের মেয়ের জন্যই বলতে হচ্ছে।’

ফারজানা বেগম বলে ওঠেন,
‘তোর যা কওয়ার কইয়া দে।’

‘তোমার ছোট ছেলের বিয়ে তো দিলাই। এখন বড় ছেলের ব্যাপারে যদি ভাবতে তাহলে আমি আমার মেয়ের জন্য প্রস্তাব রাখতাম। তুমি তো চেনোই ঝর্ণাকে। এবার মাস্টার্স কমপ্লিট করতে চলেছে। ফারহানের একদম যোগ্য ও।’

ফারজানা বেগমের কাছে প্রস্তাবটা খারাপ লাগল না। কারণ তিনিও অনেক পছন্দ করেন ঝর্ণাকে। তবে একবার ফারহানের অমত নিয়ে বিয়েতে যা কাহিনি হয়ে গেলো তাতে দ্বিতীয় বার একই ভুল করতে চান না তিনি। সে কারণেই বেশ রয়েসয়ে বললেন,
‘ফারহান তো এহন আর ছোড নাই। বড় হইছে, চাকরিও করে। মায়ের কথামতো তো আর চলব না। আমি ফারহানের মত না নিয়া কিছু বলতে চাচ্ছি না। তবে আমার মত চাইলে আমি কইমু ঝর্ণাকে ছেলের বউ হিসেবে আমার খুব পছন্দ।’

বলেই তিনি তার পাশে বসা ঝর্ণার গালে হাত রাখলেন। ঝর্ণা স্মিত হাসল। রহিমা সবার জন্য চা নিয়ে এসে সবাইকে পরিবেশন করল। চা হাতে তুলে নিয়ে ঝর্ণার মা ফাতেমা খানম বললেন,
‘আমার মেয়ের মধ্যে পছন্দ না হওয়ার মতো কিছু নেই ভাবি। ও তো আর আপনার ছোট ছেলের বউয়ের মতো মেট্রিক ফেল নয়।’

কথাটা বেশ ঠে’স মে’রেই বললেন তিনি। ইভানা তখন সিঁড়ি দিয়ে নেমে এদিকেই আসছিল। ফাতেমা খানমের কথা শুনে বড্ড কষ্ট পেল সে। অতঃপর মন খারাপ করে আবার নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। কেউ তার উপস্থিতি টের পেল না।

ঝর্ণা নিজের মায়ের কথা শুনে বেজায় চ’টে গেল। প্রতিবাদ করে বলে উঠল,
‘আম্মু তুমিও না! তোমার মুখে কি কোন কথা আটকায় না? কোথায় কি বলতে হয় সেটাও জানো না। এইজন্য তোমাকে কোথাও নিয়ে যেতে ইচ্ছা করে না।’

ফাতেমা খানম চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন,
‘স্পষ্ট কথায় কষ্ট নাই।’

ঝর্ণা বিদ্রুপ করে বলল,
‘যখন তোমার মেয়েকে কেউ এমনভাবে স্পষ্ট কথা বলে কষ্ট দেবে তখন তুমি বুঝতে পারবে।’

ঝর্ণা মজার ছলেই কথাটা বলেছিল। তবে তার এই কথাটাই যে কিছু মুহুর্ত বাদে সত্য প্রমাণিত হতে যাচ্ছিল এটা যদি সে জানতো তাহলে হয়তো বলার আগেও কয়বার ভাবত।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here