#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ইভানার চোখ দিয়ে ফোটায় ফোটায় জল পড়তেই আছে। আজ তার খুব কষ্ট হচ্ছে। এতটা অপমানিত সে জীবনে কখনোই হয়নি।
আশেপাশের সবাই এখন ইভানাকে নিয়ে নানারকম আলোচনা সমালোচনার আসর সাজিয়েছে। কেউ বা ইভানার জন্য হা হুতাশ করছে আর কেউ বা আড়ালে আবার সম্মুখে এসেও ঠেস মে’রে কথা বলছে। যা ইভানার মনকে অনেক বেশি পরিমাণে বিষিয়ে তুলছে। ইভানা আর এসব কথা সহ্য করতে পারছিল না। তাই সে দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
ইভানার পেছন পেছন তার না ইশরাত খাতুন, তোহা, তারিকুল ইসলাম, হাশেম আলী, ফারজানা বেগম সবাই ছুটে যান। ইশরাত খাতুন দরজায় মৃ’দু ধা’ক্কা দিয়ে বলেন,
‘দরজাটা খোল ইভানা। দেখ, কিছু হয়নি।’
তোহাও বলে,
‘হ্যা বোন তুই বের হয়ে আয়। আমরা সবাই তোর পাশে আছি।’
তারিকুল ইসলাম নীরব ছিলেন। তার মাথা একদম কাজ করছে না। কারণ আজ এই ঘটনায় তাকেও অনেক অপদস্ত হতে হয়েছে। সেই কারণে তিনি নিজেও অনেক ভেঙে পড়েছেন। এখন নিজের মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি সম্পূর্ণভাবে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। তারিকুল ইসলাম চুপ থাকলেও হাশেম আলী চুপ থাকেন না। তিনি কন্ঠে তেজী স্বরে বলেন,
‘তুই বের হয়ে আয় তানজিলা। ঐ ছেলে তোর মতো হিরার মূল্য বোঝে নি। ও তোর যোগ্যই না। আমি আরো ভালো ছেলের সাথে তোর বিয়ে দেব। তুই চিন্তা করিস না তোর দাদা এখনো বেচে আছে।’
সবার মধ্যে ফারজানা বেগম অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে আছেন। আজ তার নিজেকে বড্ড ছোট মনে হচ্ছে। শুধুমাত্র তার জন্যই একটা নিষ্পাপ মেয়ের আজ এই পরিণতি। নিজের প্রতি বিতৃষ্ণা জাগছে তার মনে। বারংবার মনে হচ্ছে তিনি তার ছেলেকে এভাবে জোর করে ভুল করেছেন। তা নাহলে আজ এত কিছু হতো না।
ফারজানা বেগম কিছু একটা ভেবে এগিয়ে এলেন। দরজার সামনে এসে মনে সাহস জুগিয়ে বললেন,
‘তুমি বারাইয়া আসো ইভানা মা। আজকেই তোমার বিয়া হবে। আমার বড় পোলা পালাইয়া গেছে তো কি হয়েছে, তোমারে আমার ছোট পোলার বউ করে ঘরে তুলমু।’
ফারজানা বেগমের কথায় উপস্থিত সবাই বিস্মিত হয়ে গেল। হাশেম আলী ক্ষেপে গিয়ে বললেন,
‘এসব কি নাটক হচ্ছে? আমার নাতনি কি ফেলনা নাকি? এসব আমি একদম বরদাস্ত করবো না। আপনি আপনার পুরো পরিবার নিয়ে এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। আমরা আপনার পরিবারে আমাদের নাতনির বিয়ে দেবো না।’
তারিকুল ইসলামও নিজের বাবার সাথে সহমত প্রকাশ করে বললেন,
‘আব্বু একদম ঠিক বলেছেন। আপনারা এখন আসতে পারেন। এমনিতেই অনেক কাহিনি হয়ে গেছে। আমি আর নতুন করে কোন ঝামেলা চাইছি না। ভুলটা আমারই ছিল। আমার মেয়ে ফে’ল করেছিল ম’রে তো যায়নি, আমার উচিৎ ছিল ওর দিকে নজর রাখা। তাহলে ও জীবনে এগিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু আমি রাগ করে ওর বিয়ের ব্যবস্থা নিলাম। আর যার কারণে এতকিছু ঘটে গেলো। আমি এখন শুধু এটুকুই চাই আমার মেয়েটা যেন একটু ভালো থাকে। ওর বিয়ে দেওয়ার দরকার নেই সেইজন্য।’
১৫.
ফারজানা বেগম বুঝতে পারেন এখানে উপস্থিত সবাই যা বলছে তা যুক্তিযুক্ত। তাই তিনি সকলের উদ্দ্যেশ্যে বললেন,
‘আমি চলে যাইতাছি। আমার পোলার জইন্যে আপনাগো যেই অপমান হইছে তা শোধাবারার নয়। তাও আমি করজোড়ে মাফ চাইছি আপনাগো সক্কলের কাছে। পারলে মাফ করিয়েন।’
কথাটা বলেই তিনি ফিরে যেতে নিলেন। তোহা এবং ইশরাত খাতুন তখনো দরজায় ধা’ক্কা দিয়ে ইভানাকে দরজা খুলতে বলছিল। আচমকাই ইভানা দরজা খুলে বেরিয়ে আসে।
ইভানাকে দেখে তোহা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
‘থ্যাংকস গড তুই ঠিক আছিস। আমি তো ভাবছিলাম তুই ভুল কিছু না করে ফেলিস।’
‘আমি এতটা দূর্বল নই আপাই, যে এত সামান্য কারণে নিজের ক্ষতি করব। যারা আমাকে জ্বা’লাতে আসবে, তাদের জ্বা’লিয়ে দিতে জানি আমি।’
ইভানার কথার মানে কেউ বুঝতে পারে না। ইভানা বোঝানোর চেষ্টাও করে না। সে দ্রুত পায়ে হেটে ফারজানা বেগমের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বলে,
‘আপনার প্রস্তাবে আমি রাজি আছি। আপনার ছোট ছেলেকে আমি বিয়ে করতে চাই।’
ইভানার কথা শুনে সবাই বিস্মিত হয়ে গেল৷ তোহা বলে উঠল,
‘এটা কি বলছিস তুই? এতকিছুর পরেও তুই ঐ বাড়ির ছেলেকে বিয়ে করবি তোর কি মিনিমাম সেল্ফ রেস্পেক্ট নাই?’
তারিকুল ইসলামও বলে ওঠেন,
‘তোমাকে এই বিয়ে করতে হবে না ইভানা। আমি তোমাকে পড়াবো। তোমাকে যোগ্য করে তুলব।’
ইভানা অকপটে বলে দেয়,
‘আমি বিয়ে করবো মানে করবো। এটাই আমার ফাইনাল ডিশিসন।’
হাশেম আলী খুব রেগে যান ইভানার কথা শুনে। ছোট থেকেই তিনি ইভানাকে অনেক ভালোবাসেন। কখনো তাকে একটা কড়া কথা পর্যন্ত বলেন নি, তার সব আবদার পূরণ করেছেন। কিন্তু আজ আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলেন না। ইভানার সামনে এগিয়ে এসে তাকে কড়া ভাষায় বললেন,
‘তোর বিয়ে করার এতোই শখ? এত কিছুর পরেও বিয়ে করবি? তাহলে যা কর। কিন্তু আমি এই বিয়ে মানবো না। আরে তুই আমার নাতনি, তোর জন্য ভালো ছেলের লাইন লাগিয়ে দেবো। সেখানে তুই কেন এত অপমানের পর যার সাথে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছিল তার ছোট ভাইকে বিয়ে করবি?’
‘আমি এ ব্যাপারে আর কিছু বলতে চাই না দাদা। তুমি আমার জন্য দোয়া করিও, আর কিছু চাই না আমি।’
‘আমার দোয়া তোর উপর সবসময় থাকবে। কিন্তু এই বিয়েটা আমি কখনো মানব না। যা ইচ্ছা কর তুই।’
বলেই তিনি হনহন করে হেটে চলে যান।
১৬.
ফাহিম প্রচণ্ড রেগে যায় তার মায়ের কথা শুনে। কারণ ফারজানা বেগম তাকে ইভানাকে বিয়েটা করে নিতে বলেছে। ফাহিম রাগী গলায় বলে,
‘তুমি কেন আমায় গিনিপিগ বানাচ্ছো আম্মু? আমি কিন্তু ভাইয়া না যে তোমার কথা চুপ করে মেনে নেবো। বিশেষ করে বিয়ের মতো একটা একটা সিদ্ধান্ত।’
‘আমি তোর মা হইয়া তোর সামনে হাতজোড় করছি। দয়া কইরা বিয়াটা কইরা নে। নাইলে যে আমি অনু’শোচনার আগু’নে পু’ড়ে ম’রব চিরকাল। আমার জইন্যে একটা মাইয়া কিরকম অপমানিত হইল। এই বিয়েটা কইরা আমার মাতৃঋণ শোধ কর।’
ফাহিম যতোই মায়ের অবাধ্য হোক আজ সে শক্ত থাকতে পারল না। জন্মের পর থেকে সে দেখেছে তার মা কত কষ্ট করে তাদের দুই ভাইকে মানুষ করেছে। কিন্তু কখনো তাকে এতটা অসহায় দেখে নি৷ আজকে ফারজানা বেগম কেদেই দিয়েছেন। নিজের মায়ের এমন অবস্থা দেখে ফাহিমের মতো শক্ত চিত্তের ছেলেটাও দূর্বল হয়ে পড়লো। এদিকে ফারহানকে তখন থেকে ফোন করে চলেছে সে কিন্তু ফারহান ফোন রিসিভ করছে না। তাই ফাহিম বলে,
‘ঠিক আছে আম্মু। আমি তোমার কথা মেনে নেবো৷ তবে বিয়েটা করার আগে আমি ইভানার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।’
ফারজানা বেগম সম্মতি জানান।
✨
মুখোমুখি বসে আছে ফাহিম ও ইভানা। কিছু সময়ের নীরবতা ভেদ করে ফাহিম বলে ওঠে,
‘আমি জানি না তুমি কেন এই বিয়েটা করতে চাইছ। তবে আজ আমি নিজের মায়ের এই অসহায় অবস্থা দেখে না করতে পারিনি।’
ইভানা নিশ্চুপ। ফাহিম একটু থেকে পুনরায় বলে,
‘আমি এই বিয়েটা তো করে নেবো তবে আমি জানি না কতটুকু তোমায় মন থেকে মনে নিতে পারবো৷ তবে একটা কথা, আমি কিন্তু এখনকার তুমিকে মেনে নেবো না। আমি একজন বুয়েটের স্টুডেন্ট। নিজের স্ত্রী হিসেবে আমি তোমাকে ঠিক সেভাবেই গড়ে তুলব যাতে তুমি আমার যোগ্য হও। যাতে আমি বুক ফুলিয়ে গর্ব করে সবাইকে বলতে পারি তুমি আমার স্ত্রী। আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করব এমনটা করার। বাকিটুকু তোমার হাতে।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
>>আসসালামু আলাইকুম। গল্পটা যেভাবে ভেবেছি সেভাবেই লিখছি। সবাই অপেক্ষা করুন গল্পটা সামনে অনেক সুন্দর হবে ইনশাআল্লাহ। গল্পের নামের অর্থও সামনে গল্পে সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলব। সবাইকে গঠনমূলক মন্তব্য করার অনুরোধ রইল। হ্যাপি রিডিং।