#মুঠোভর্তি_অনুভূতি💜
#লেখনীতে:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২
—“মিস জারিশা আপনাকে আমি যে কালকে একটা ম্যাথ সলভ করতে দিয়েছিলাম,আপনি তা না করে কেনো চলে গিয়েছিলেন”
যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয় কথাটা মিলে গেলো জারিশার সাথে।কালকের কথা মনে আসতেই লজ্জা লাগছে তার।কালকে সে লাইব্রেরি থেকে পালিয়েছে।জারিশা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।তুরহান উত্তর না পেয়ে ধমক দিয়ে বলে,,,
—কি হলো মিস জারিশা আপনি উত্তর কেনো দিচ্ছেন না!”
জারিশা চমকে উঠে দু কদম পিছিয়ে যায়।ভয় পেয়েছে হুট করে এমন ধমক দেওয়ায়।জারিশার পেছনে দাঁড়িয়ে ওর বন্ধু মহল মুখ টিপে হেসে চলেছে।তুরহান চশমাটা ঠিক করে সবার দিকে তাকাতেই সবাই ভয়ে চুপসে যায়।একে অপরের দিকে চাওয়া চায়ি করে ভেগে যায়।জারিশা পরে বিপাকে সে এখন কিভাবে যাবে!
এই খাটাশ লোক তো তাকে এমনিও যেতে দিবে না।কি করবে এখন।নিচের দিকে তাকিয়ে শাড়ির আচল মোচড়ামুচড়ি করছিলো।তুরহান গম্ভীর কন্ঠে বলে,,
—“মিস জারিশা এরপর থেকে এমন করলে ভয়ংকর শাস্তি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে মাইন্ড ইট।”
কথাটা বলেই হনহন করে চলে গেলো তুরহান।তুরহানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে মুখ ভেঙিয়ে বলল,,,
—“মিসসস জারিশা এরপর থথথথথেকে এএএএমন করলে ভভভয়ংকর শশশশশাস্তুি অপেক্ষা করছে মমমমমাইন্ড ইইইইট।আইছে রে শালার উগান্ডার পোলা ভয়ংকর শাস্তি দিবে আমাকে।”
জারিশা চলে আসে বন্ধু মহলের কাছে।বন্ধু মহল দাঁড়িয়ে গবেষণা করছিলো কিছু একটা নিয়ে জারিশাকে দেখে চমকে উঠে সবাই।লামিজা জোড় পূর্বক হেসে বলল,,,
—“কিরে তুরহান এতো তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিলো তোকে!”
—“জানি নাহ!কিন্তু তোরা আমাকে দেখে চমকে গেলি কেনো?কি হয়েছে বল তো।কিছু কি লুকাচ্ছিস আমার থেকে।”
ফারহা হেসে বলল,,,,”কি লুকাবো তোর থেকে বল তো।কিছু লুকাচ্ছি না সত্যি।”
—“না লুকালেই ভালো।আর লুকালে তো জানিসই আমি কি করতে পারি তাই না”
সবাই জারিশার দিকে তাকিয়ে বোকা বোকা হাসি দিলো।জারিশা বুঝতে পারছে সবগুলো মিলে কিছু তো গোলমাল করার পরিকল্পনা করছে।কিন্তু তা কি সেইটা জানতে হবে জারিশার।
অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছে।নাচ গান সব কিছুর মাঝে লামিজার বিরক্ত লাগছিলো।লামিজা পেছনে আসে ভার্সিটির।মনে পরে যায় কৌশিক মির্জার কথা।মনে পরে যায় ৫ বছর আগের কথা।সময়টা কত ভালো ছিলো।সেই প্রথম দিনের কথা মনে পরে গেলো লামিজার।
৪.
—“লামিজা তোকে না কৌশিক ভাই পছন্দ করে”
লামিজা ভ্রু কুচকে তাকালো রেশমির দিকে।মেয়েটা তাদের পাশের বাসায় থাকে।লামিজা বলল,,,
—“এই কৌশিকটা আবার কে!”
রেশমি অবাক হয়ে গেলো!এই মেয়ে নাকি কৌশিককে চেনে না।এলাকার সব মেয়েদের ক্রাশকে বলে লামিজা চিনে না।রেশমি নিজেও কৌশকে ভীষণ পছন্দ করে।কিন্তু কি আর করার!কৌশিক তো পছন্দ করে লামিজাকে যে কৌশিককে চিনেই না।রেশমি কপাল চাপড়ে বলল,,,
—“তুই থাকিসটা কোথায় বলতো।তুই কৌশিককে চিনিস না।মির্জা বাড়ির একমাত্র ছেলে কৌশিক মির্জা”
লামিজা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,,,
–“তো তাতে আমার কি।তাকে যে সবার চিনতেই হবে এটা কোনো কথা নাকি।আমার ইচ্ছে হয়নি তাই আমি চিনিনি।আমার কোনো ইন্টারেস্টও নেই!”
রেশমি বিরক্ত হলো।এই মেয়ে এমন কেনো!মনে মনে ভীষণ আফসোস করলো রেশমি যে কেনো কৌশিক তাকে পছন্দ করলো না।লামিজার মধ্যে কি এমন দেখলো যে তার জন্য পাগল প্রায়।রেশমি বিরক্ত হয়ে চলে যায়।লামিজা ছাদে বসে ফোন টিপতে থাকে।সামনের বছর এসএসসি পরীক্ষা আর মেয়ে এখন ফোন টিপছে ছাদে বসে।
—“এই যে তোর কি পড়াশোনা নেই নাকি।সারাদিন ফেসবুকে কি করিস তুই”
নাফিসার কথায় বিরক্ত হয় বেশ লামিজা।নাফিসা লামিজার বড় বোন।কখনোই বনে না দু’জনের।একসাথে থাকলেই ঝগড়া বাঁধে।লামিজা উত্তর না দেওয়ায় নাফিসা আবার বললো,,
—‘আম্মু ডাকে তোকে আফসারকে দেখতে বলতিছে।”
—“তুই বাসায় আছিস না।তাহলে তুই দেখ আফসারকে।আমার ভালো লাগছে না!”
—“বসে বসে ফোন টিপতে পারতেছিস।আর আফসারকে ধরতি পারছিস না।আমি এখন কলেজে যাবো।”
লামিজা কথা বাড়ায় না।আফসারের সাথে খেলতে চলে আসে।দুইভাই বোন খেলতে থাকে।
_____________
পরের দিন বিকালে ব্যাচে যাওয়ার জন্য জারিশা লামিজাকে ডাকতে আসে।লামিজা রেডি হয়ে বেরিয়ে পরে ব্যাচে যাওয়ার জন্য।দুজন দেরিতে যাবে বলে ঘুরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।দুজন কোলনিতে হাঁটতে থাকে।এক জায়গায় বসে পরে।
তখন কৌশিক মির্জা তার চ্যালাপেলা নিয়ে আসে।লামিজার সামনে এসে বলে,,,
—“হেই মায়াবতী আমি তোমাকে ভালোবাসি।প্লিজ একসেপ্ট করে নাও।”
লামিজা বিরক্ত হয়।চেনে না জানে না এসে বলছে ভালোবাসে আবার একসেপ্ট ও করতে বলছে পাগল নাকি।জারিশা ভয়ে চুপসে আছে।ও এসবে ভয় পায় ভীষণ।লামিজা বিরক্ত হয়ে বলে,,,
—“এই যে মিস্টার কে আপনি!হু করে এসে আলতু ফালতু কথা বলছেন।পাগল নাকি!”
লামিজা জারিশার হাত ধরে টেনে নিয়ে নিয়ে চলে যেতে থাকে।পেছন থেকে কৌশিক চিল্লিয়ে বলে,,,
—“হ্যা পাগল তো হয়েছি মায়াবতী শুধু তোমার জন্য।তোমার ওই কাজল চোখের চাহুনিতে মরেছি আমি।পাগল তো হয়ে যাচ্ছি তোমার ওই কাজল কালো চোখ দেখে।”
লামিজা শুনেও না শোনার ভান করে।জারিশা লামিজাকে বলে,,
—“এই লোক কে রে!তোর পেছনে পরেছে কেনো শুধু শুধু।লোকটাকে তো সুবিধার মনে হচ্ছে না।”
—“আর বলিস নারে রেশমি কালকে রাতে বলতেছিলো এই লোকটা নাকি আমায় ভীষণ ভালোবাসে।কে জানে!ভালোবাসুক যাইয়ে তাতে আমার কিছু যায় আসে না”
ওরা ব্যাচে চলে আসে।সন্ধ্যায় বাসায় যাওয়ার সময়ও বিরক্ত করেছে কৌশিক।লামিজাও কম কিসে কতোগুলো কড়া কথা শুনিয়ে এসেছে।জারিশা ও ভয়ে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো এক পাশে।লামিজা ভেবে পায় না এতো ভয় পায় কেনো জারিশা।
৫.
—“কিরে তুই এখানে একা বসে কি করছিস আমরা সবাই ওখানে কতো মজা করছি আর তুই এখানে মরার মতো বইসে আছিস ক্যান”
ফারহার কথায় অতীত থেকে বেরিয়ে আসে লামিজা।জোরপূর্বক হেসে বলে,,,
—“আরে একটু মাথা ব্যাথা করছিলো তাই আরকি এখানে বসে আছি।চল চল এখন”
দু’জন চলে আসে সবার কাছে।সবাই মিলে হৈচৈ করে আড্ডা দিয়ে যে যার যার বাড়ির পথে রওনা দেয়।ফারহার বাড়ি তাদের ওইখানে হলেও সে রাদিনের সাথে যাবে।রাদিন আর ফারহা রিলেশনে আছে গত এক বছর যাবত।রিকশা চলছে আপন গতিতে।জারিশা লামিজাকে বলে,,,,
—“এতো বছর পর কৌশিক ভাই আবার ফিরে এসেছে কেনো লামি।”
—“জানি না,জানি না আমি।সত্যি জানি না।কেনো ও আবার ফিরলো।”
লামিজা উত্তেজিত হয়ে পরেছে।জারিশা এক হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করার চেষ্টা করছে।লামিজা ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে বলে,,,
—“ওওও ককককেনো আবার এসেছে জারিশা।ভালোই তো ছিলাম এই তিন বছর।আবার কেনো ফিরে আসলো।”
চলবে~