মৃণালিনী পর্ব-১৩

0
859

#মৃণালিনী
#পর্ব ১৩
সকাল থেকেই বাড়িতে তাড়াহুড়ো পড়ে গেছে, সৌম্য আর একটু পরেই ফিরে যাবে কলকাতায়। হারু সৌম্যর বাক্স নিয়ে গাড়ির পেছনে ঢুকিয়ে রেখেছে, ড্রাইভার এসে গাড়ি বার করে রেখেছে, ট্রেনের সময় হয়ে যাবে আর কিছুক্ষন পরেই, তাই ঠিক সময়ে স্টেশনে পৌঁছানোটা জরুরী।

মৃণাল একটু শুকনো মুখে সৌম্যর শেষ মুহূর্তের জিনিসপত্রগুলো হাতের কাছে গুছিয়ে রাখছিলো। লাইব্রেরীর বইয়ের মধ্যে সরমার লেখা চিঠিটাও ঢুকিয়ে দিলো সুযোগ মতো, বই পাল্টানোর আগে বিমল দা সেটা বার করে নেবে।গত কাল সারাদিনে একবারের জন্যেও দোতলায় না আসার জন্যে নিজেদের ঝগড়া মেটানো সম্ভব হয়নি। গত দুদিন ধরে যে কষ্ট মনের মধ্যে রেখে সে চলছিলো, তার পরে সন্ধ্যেবেলায় সৌম্যর মুখে ওইসব কথা শুনে নিজেও এতটাই দুঃখ পেয়েছিলো যে রাতে আর মিটমাট করার কোনো ইচ্ছে জাগেনি। সৌম্যও একটুও চেষ্টা করেনি মিটিয়ে নিতে, বড়ো মার বলা কথা আর তার সঙ্গে সারাদিনে একবারের জন্যেও বউয়ের ওপরে না আসা, দুজনের মধ্যেই যথেষ্ট জমে থাকা ক্ষোভ নিজেদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করছিলো।

বাবা, সব নিয়ে নিয়েছো তো ঠিক করে?

জিনিসপত্র গোছাতে গোছাতে তাকিয়ে দেখলো মৃণালিনী, পারুল বালা ঘরে ঢুকে এসেছেন। বড়ো মা কে দেখেই শশব্যস্ত বলে উঠলো সৌম্য,

তুমি আবার উঠলে কেনো সিঁড়ি ভেঙে, আমি নিজেই তোমার ঘরে যেতাম তো,

সে বললে কি হয় বাছা, তুমি এখন কতদিন আসবে না, তোমার খাবার দাবারের ব্যবস্থা করে দিতে হবে নে! হারুর হাত দিয়ে গাড়ির পেছনে সব গুছিয়ে দিয়েছি, মনে করে খেয়ো কিন্তু,

চমকে উঠলো মৃণাল, সৌম্য এখন অনেকদিন আসবে না! কই তাকে তো কিছু জানায়নি সৌম্য! মনের ভেতরে জমে থাকা কষ্টটা যেনো আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেলো ওর, বড়ো মা না বললে তো সে কিছুই জানতে পারতো না!

তুমি এই সপ্তাহে বাড়ি আসবে না? কই আমাকে বলোনি তো কিছু!

পারুল বালা বেরিয়ে যাবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সৌম্যর দিকে তাকিয়ে ভাঙা গলায় প্রশ্ন করলো মৃণালিনী, কান্নায় তার গলা বুজে আসছিলো। সৌম্য একটু থতমত খেলো, সে নিজেও বাড়ি আসবে বলেই ঠিক করেছিলো, বড়মা যে কালকের বলা কথা কে এই সপ্তাহেই শুরু করার জন্যে চাপ দেবেন এটা ভাবে নি সে। কিন্তু এখন আর বড়ো মার কথার অবাধ্য হওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু বড়মার আদেশের কথা বউ কে জানতে দিয়ে সে বড়ো মা কে বউয়ের চোখে হেয় করতে চায় না।

হ্যাঁ, আমার কাজের চাপ বেড়েছে, তাই এখন আর প্রতি সপ্তাহে আসা সম্ভব হবে না,

যতটা সম্ভব গম্ভীর গলায় বললো সৌম্য, মৃণালিনী আর একটা কথাও উচ্চারণ করলো না, সে যথেষ্ট অভিমানী, যেখানে অনুরোধের কোনো দাম নেই, সেখানে সে অনুরোধ করে না।

সৌম্যর বাড়িতে ঢোকা বা বেরোনোর সময় বাড়ির সবাই উপস্থিত থাকে, সেখানে শ্বশুর মশাইয়ের সামনে স্বামী কে বিদায় জানানোর জন্যে মৃণালিনীর উপস্থিত থাকা পারুল বালা পছন্দ করেন না বলে এই সময়টা মৃণাল তার ঘরের লাগোয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে। গাড়ি যখন দরজা দিয়ে বেরোয় তখন সৌম্য গাড়ির জানলা দিয়ে ওপরে তাকায়, মৃণালের সঙ্গে চোখাচোখি হয় তার, শুধু এই মুহূর্তটির জন্যেই সে উদগ্রীব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে প্রতিবার।

এবারও গাড়ি ছাড়ার পরে ওপর দিকে তাকালো সৌম্য, কিন্তু মৃণালিনী সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো না এই প্রথম বার। সারাটা রাস্তা মন খারাপ হয়ে থাকলো সৌম্যর, তার মৃণাল কে না জানিয়ে কলকাতায় থেকে যাবার সিদ্ধান্তে যে সে খুবই আঘাত পেয়েছে সেটা সৌম্য এখন স্পষ্টই বুঝতে পারছিলো। কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই, বড়ো মা যথেষ্ট ক্ষুব্ধ হবেন যদি সে এই সপ্তাহে বাড়ি আসে।

সৌম্য বেরিয়ে যাবার পরে নিজের ঘরে এসে চুপ করে বসেছিলো মৃণাল, এতো তাড়াতাড়ি সৌম্যর এতটা পরিবর্তন বোধহয় আশা করে নি সে। যে সৌম্য শুধু তাকে দেখার জন্যেই প্রতিদিন কোনো না কোনো অজুহাতে তাদের বাড়িতে উপস্থিত হতো, সে এতো দিন মৃণাল কে না দেখে থাকতে পারে এটা তার একবারের জন্যেও মনে হয়নি। সৌম্যর প্রতিদিন তাদের বাড়িতে উপস্থিত হওয়া নিয়ে বাড়ির ঠাকুর চাকররা নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করতো, মুখে কিছু না বললেও নিজেও সে সবটাই বুঝতো। সেখানে বিয়ের মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই এই সৌম্য কে তার সম্পূর্ন অচেনা লাগছিলো।

বউ দিদি নিচে চলো, মা ডাকছে,

সরমা র কথায় চমক ভাঙলো মৃণালের, ননদের পিছু পিছু রান্না ঘরের দরজায় উপস্থিত হলো সে। বামুন দিদি রান্না করছে, করুণা হাতে হাতে এগিয়ে দিচ্ছে জিনিসপত্র, হারুর মা পুকুর ঘাট থেকে মেজে আনা বাসন একধারে ঝুড়িতে উপুড় করে রাখছে, আর সবার সব কিছু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মালা জপতে জপতে নজর রাখছেন পারুল বালা। কুমুদ একধারে বসে কুটনো কাটছিলেন, বউ কে আসতে দেখে নরম গলায় ডাকলেন,

এদিকে এসো বউমা, কথা বলার ছিলো তোমার সঙ্গে,

মৃণাল কোনো কথা না বলেই ওনার পাশে একটা পিঁড়ি টেনে নিয়ে বসলো। পারুল বালা মালা জপতে জপতে এদিকেই মন দিলেন, কুমুদ এর আবার বউয়ের সঙ্গে কি কথা!

দিদি এখন তো করুণা কে পেয়ে গেছেন তাই তোমার দায়িত্ব অনেক কমে গেছে, সৌম্যর সব কাজ তো এখন ওই করছে, তোমাকে আর ছোটাছুটি করতে হচ্ছে না। আমারও তো বয়স বাড়ছে, আমিও আর ছোটাছুটি করে ওপর নিচ করতে পারিনা বাপু, তাই এবার থেকে আমার কাজ গুলো তুমিই করবে বুঝলে তো? আর শোন তেলের যা দাম, সৌম্য না থাকলে তোমার আর সরমার আর রাতে আলাদা ঘরে শোয়ার দরকার নেই, দুজনেই আমার ঘরে এসে শুয়ে পড়বে। তাতে একটা লণ্ঠনেই হয়ে যাবে, আর তোমারও ভয় লাগবে না, ঠিক বলিনি দিদি?

শেষ কথাগুলো বড়ো জা এর দিকে তাকিয়ে বললেন কুমুদ, পারুল বালা জপ করছিলেন তাই কথা না বলে শুধু মাথা হেলালেন, আপাত দৃষ্টিতে তিনি কোনো খারাপ কিছু অভিসন্ধি পেলেন না কুমুদ এর কথায়। মৃণাল মাথা হেলালো, এমনিতেও এই ব্যাপারে শুধু নির্দেশ পালন করা ছাড়া তার আর কিছু করার নেই!

যাও তাহলে বউমা আমার বিছানাটা সেই সকাল থেকেই পড়ে রয়েছে, ছেলে বেরোবে বলে আর সময় দিতে পারিনি আজ, তুমি স্নান সেরে ঘর টা একটু গুছিয়ে ফেলো গে!

মাথা নেড়ে উঠে এলো মৃণালিনী, বাসি কাপড় তার ভোর বেলায় উঠেই ছাড়া হয়ে গিয়েছিলো, এখন সে স্নান সেরে পারুল বালার ফুল তুলতে যাবে। অন্য দিন আরও আগে তার এসব কাজ হয়ে যায়, কিন্তু সোমবার দিনটা অন্য রকম, সৌম্যর যাবার তাড়া থাকায় সে বাসি কাপড় ছেড়েই সৌম্যর কাজে লেগে পড়ে। এখন সৌম্য চলে গেছে, আর কোনো তাড়া নেই, সে ধীরে ধীরে হাতের কাজ সারতে লাগলো। মনের মধ্যেকার চাপা কষ্ট তার মুখের মধ্যে প্রকাশ পেতে লাগলো, কোনোটাই কুমূদের নজর এড়ালো না। পারুল বালার শ্যেন দৃষ্টি কেও সে ফাঁকি দিতে পারলো না, তার করুন মুখ দেখে মনে মনে যথেষ্টই পুলকিত হচ্ছিলেন তিনি।

রাতের দিকে যখন কাজ করো তখন তো মাঝে মাঝে বউমা কে ডেকে নিলেই পারো, সে তো এখন থেকে পাশের ঘরে আমার সঙ্গেই থাকছে, কে আর জানতে আসছে তখন! বাইরের লোক জানা নিয়েই তো আপত্তি তোমার ছেলের, বাইরের লোক না জানলেই হলো,

রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ হয়ে যাবার পরে খাটে বসে পান সাজতে সাজতে স্বামী কে উদ্যেশ্য করে বললেন কুমুদ, শ্যাম সুন্দর একটু অবাক হয়ে গেলেন।

তোমার সঙ্গে থাকবে সে! কেনো? বেশ তো সরমা আর সে থাকছিল! কি হলো আবার?

তেলের যা দাম! মিছিমিছি দুটো লণ্ঠনে কাজ কি! একটা জ্বালালেই চলে যায় যখন!

বিষয়ী মানুষ শ্যাম সুন্দরের প্রস্তাবটা মন্দ লাগলো না, সত্যিই তো তেলের খরচ যদি বেঁচে যায় সে তো ভালোই। তিনি একটু অন্য মনস্ক হয়ে পড়েছিলেন, অনেক কাজ জমে আছে, কয়েকদিনের মধ্যেই খুব বড়ো একটা কেস আছে সেটা নিয়ে চিন্তিত হয়ে আছেন একটু।

কি হলো! বললে না তো কিছু! বউ মা আসবে তো?

স্বামীর দিকে পান টা এগিয়ে দিয়ে বললেন কুমুদ,পান টা মুখে দিয়ে একটু অন্য মনস্ক হয়েই জবাব দিলেন শ্যাম সুন্দর,

হ্যাঁ, পাঠিয়ে দিও তাকে! আমি এমনিতেও সময় পাচ্ছি নে একদম! আজকাল আলোক কে যেনো ঠিক বিশ্বেশ হচ্ছে না, বউদি কে কিছু বলো না, যতই হোক তাঁর ভাইপো!

কুমুদ মাথা নাড়লেন, তিনি তো নিজেই জানাতে চান না পারুল বালা কে, উল্টে এই কথায় তাঁরই সুবিধা হলো। বড়ো জা কে এড়িয়ে কি করে বউ কে স্বামী কে সাহায্য করতে ডাকা যায়, গত রাত থেকেই তার পরিকল্পনাই তো করে চলেছেন তিনি। বড়ো জায়ের বিরুদ্ধে স্বামী কে অভিযোগ করে কোনোদিনই তাঁর কোনো লাভ হয়নি, তাই অনেকদিনই সে পথে যাওয়া বন্ধ রেখেছেন। উকিল স্বামীর সঙ্গে থাকতে থাকতে অল্প হলেও কিছু বুদ্ধি তিনিও ধরেন বৈ কি!

পাশা পাশি দুটো ঘর তাঁদের স্বামী, স্ত্রীর। সারাদিন এই ঘরে থাকলেও রাতে শ্যাম সুন্দর অনেক রাত অবধি কাজ করেন বলে তিনি পাশের ঘরে শোন। সেই ভোর থেকে উঠে কাজ কর্ম সেরে আর রাতে জেগে থাকতে ইচ্ছে হয় না কুমুদ এর। দুজনের ঘরের মাঝখান দিয়ে যাতায়াতের রাস্তা আছে, এঘর থেকে ওঘরে যাওয়ার জন্যে বাইরের বারান্দায় বেরোনোর দরকার পড়ে না। তাই ওই ঘর থেকে মৃণাল এই ঘরে এলে বাইরের কারোরই পক্ষে সেটা জানা সম্ভব হবে না!

যাই, তাকে পাঠিয়ে দিই তাহলে!

কুমুদ উঠে নিজের ঘরে চলে গেলেন। মলিন মুখে নিজেদের ঘর থেকে চাদর, বালিশ নিয়ে সরমা আর মৃণালিনী ধীরে ধীরে মায়ের ঘরে উপস্থিত হলো। তাদের পড়া যে মোটামুটি বন্ধই হয়ে গেলো সেটা তারা দুজনেই বুঝতে পারছিল, একই ঘরে শুয়ে কুমুদ কে ফাঁকি দেওয়ার কোনো উপায় তাদের জানা ছিলো না। মনটা খুব খারাপ লাগছিলো মৃণালের, আর মাত্র দিন কুড়ি পরেই তার পরীক্ষা দেওয়ার কথা প্রাইভেটে, অথচ সৌম্য এক মাসের আগে আর বাড়ি আসবে না। যদিও বা আসে তাহলেও কিছু না পড়ে সে পরীক্ষা দেবেই বা কিভাবে!

ঘরে বড়ো করে পাতা পালঙ্ক, তার একদিকে পালঙ্কের বাটামে হেলান দিয়ে পান মুখে বসে ছিলেন কুমুদ, দুজনে এসে তাদের বালিশ চাদর রেখে ম্লান মুখে বসলো। দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছিলেন কুমুদ, বউ মা নাহয় ছেলে চলে যাওয়ার দুঃখে দুঃখিত, কিন্তু মেয়ের দুঃখী মুখের কারণ তিনি বুঝতে পারছিলেন না।

যাও মা, তোমার শ্বশুর মশাই তোমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন, কিসব কাজ আছে বুঝি ওনার!

মৃণাল চমকে উঠলো, কাল সৌম্যর বলার পরেও বাবা ডেকে পাঠিয়েছেন! তার কি যাওয়া উচিত হবে! সৌম্য জানলে আরও বেশি বিরক্ত হবে না তো!

কি হলো? যাও!

উনি কাল বারণ করে দিয়েছিলেন, বাবা জানেন সবটাই। আমার কি যাওয়া উচিত হবে! উনি জানতে পারলে রাগ করবেন!

শাশুড়ির কথার উত্তরে একটু দ্বিধা জড়ানো গলায় বললো মৃণাল।

আরে! জানবে কি করে? তুমি তো ঘরের ভেতর দিয়ে যাবে! আর সৌম্য বারণ করেছে কারণ সে চায়না তুমি আলোকের সামনে বসে এসব দেখো, এখন তো আলোক নেই, তাই তোমার যেতে কিছু অসুবিধা নেই, শুধু দিদি না জানলেই হলো!

নিচু গলায় বললেন কুমুদ, তার পরেও মৃণাল ইতস্তত করছে দেখে আসল কথাটা আর লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেন না তিনি,

আসলে তোমার শ্বশুর মশাই মনে করেন আলোক হিসাবে কিছু গরমিল করছে, কিন্তু তিনি দেখার সময় পাচ্ছেন না। তবে একথা দিদি জানুক সেটি তিনি চান নে, কারণ আলোক হলো গিয়ে দিদির ভাইপো, এসব কথা তিনি সহ্য করতে পারবেন নে।

এই কথা শোনার পর আর কোনো দ্বিধা রইলো না মৃণালের, সৌম্য রাগ করলেও শ্বশুর মশাইয়ের সম্পত্তি সে বেহাত হতে দিতে পারে না কিছুতেই। সে দ্রুত উঠে শ্বশুর মশাই এর ঘরে গিয়ে ঢুকলো,

বাবা, মা বললেন আপনার কিছু সাহায্যের প্রয়োজন,

বৌমার গলার আওয়াজে মুখ তুলে তাকালেন শ্যাম সুন্দর,

হ্যাঁ, বউমা, ওই ওপরের তোরঙ্গের থেকে খাতাগুলো নামিয়ে আনো, ওতে আলোকের করা হিসেব গুলো আছে, ওগুলো তোমার সময় মতো, একটু একটু করে আবার মিলিয়ে নিও!

কথা শেষ করেই আবার কাজে মনোনিবেশ করলেন শ্যাম সুন্দর, মৃণাল খুব উৎসাহ নিয়ে খাতা গুলো মেলাতে লাগলো। যেকোনো পড়াশোনা সংক্রান্ত ব্যাপারেই তার খুব উৎসাহ, মনের মধ্যেকার কষ্টগুলো একটু একটু করে সম্পূর্ন ভুলে গিয়ে হিসাব মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো মৃণালিনী।

যাও এবার ঘুমিয়ে পড় গে বউমা, অনেক রাত হলো,

শ্বশুর মশাইয়ের কথায় খাতা থেকে মুখ তুলে তাকালো মৃণালিনী,

আপনি কি এখন ঘুমিয়ে পড়বেন বাবা?

হ্যাঁ, আমার হয়ে গেছে,

তাহলে আমি লন্ঠন টা ওঘরে নিয়ে যাই বাবা? আমার ঘুম আসছে না আমি একটু গল্পের বই পড়তাম,

ঠিক আছে, নিয়ে যাও তাহলে,

বলে বিছানার দিকে এগিয়ে গেলেন শ্যাম সুন্দর, উনি অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করেন বলে ওনার লন্ঠন এ অনেক বেশি তেল ভরে হারুর মা। শাশুড়ি ঘুমিয়ে পড়েছেন, লন্ঠন হাতে মৃণাল নিজের ঘরে ঢুকে এলো, যা তেল আছে তাতে আজ অনেকক্ষন পড়তে পারবে ও। পারুল বালা নিচের ঘরে থাকেন, হাঁটুর ব্যথায় ওপরে ওঠেন কদাচিৎ, আর গল্পের বই না পড়ার বই সেটা বোঝার মতো ক্ষমতা কুমুদ এর নেই, তাই আজ অনেকটাই নিশ্চিন্ত হয়ে পড়তে বসলো মৃণালিনী।
ক্রমশ
(কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার জন্যে এতদিন পোস্ট করতে পারিনি, আমি ক্ষমাপ্রার্থী 🙏)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here