মৃণালিনী পর্ব ২৯

0
692

#মৃণালিনী
#পর্ব ২৯
করুণা চলে গেছে বেশ কিছুক্ষন, নীচের থেকে তার গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, ছাদে দাঁড়িয়েই শুনতে পাচ্ছিলো মৃণালিনী। পাশে দাঁড়িয়ে সৌম্য চায়ে চুমুক দিয়ে যাচ্ছে কোনো কথা না বলেই, মুখটা একটু গম্ভীর হয়ে আছে। স্বামীর গাম্ভীর্যের কারণ আন্দাজ করার চেষ্টা করছিলো মৃণাল, এমন সময়ে সৌম্য নিজেই কথা বললো।

করুণার বাড়িতে কে কে আছে মৃণাল? ওদের অবস্থা কি খুব খারাপ? আমি ওর সম্বন্ধে খুব বেশি কিছু জানিনা।

মৃণাল একটু অবাক হলো, সৌম্য আজ হটাৎ ওর সম্বন্ধে জানতে চাইছে! মনের ভাব প্রকাশ করতে না দিয়েই বললো,

যা শুনেছি, বাবা মা আছেন, আর ওই পিসি, এর বেশি আর কিছু আমিও জানিনা, হটাৎ এ প্রশ্ন কেনো?

মেয়েটি আমাকে একটু অবাক করেছে আজ, একটু প্রগলভ লাগলো, আগের মতো মুখ চোরা নেই আর। চা কেমন খেতে হয়েছে জানতে চাইছিলো!

একটু চুপ করে থেকে সৌম্য আস্তে করে উত্তর দিলো, মৃণালের মনের মধ্যে জেগে ওঠা অস্বস্তিটা নতুন করে ফিরে এলো আবার।

তুমি তখন জিজ্ঞেস করছিলে না, ওকে আমি চা দিয়ে পাঠিয়েছি নাকি, আমি কিন্তু পাঠাই নি জানো! বড়ো মা আমার সামনেই বসেছিলেন, উনিও যদি জানতেন যে ও চা করে নিয়ে এসেছে আমাকে বলতেন নিশ্চয়ই। তারমানে ও বড়ো মারও অজ্ঞাতে তোমার জন্যে চা করে এনেছে!

একটু অন্য মনস্ক গলায় বললো মৃণালিনী, সৌম্যর মুখের মধ্যে দুশ্চিন্তার রেখা ফুটে উঠলো। খানিকক্ষন চুপ করে থেকে বললো,

তোমাকে কিছু কথা বলার ছিলো, তুমি কি কোনো কারণে ওর ওপরে বিরক্ত হয়েছ? ওকে নাকি বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চাইছো! ও এই কথাগুলো আমার কাছে অভিযোগ করছিলো! ওর কথার ভঙ্গি একটু অন্য রকম ছিলো, ঠিক কি রকম সেটা তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না।

মৃণাল একদম অবাক হয়ে গেলো, করুণা ওর অজ্ঞাতে চা নিয়ে এসে ওরই সম্পর্কে সৌম্যর কাছে অভিযোগ করেছে এটা জানার পরে ও এতটাই ক্ষুব্ধ হলো, যে এই মুহূর্তে ঠিক কি করা উচিত সেটা ভেবে উঠতেই পারছিলো না। খানিকক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে এদিক ওদিক তাকিয়ে নিয়ে ও সৌম্যর কাছে গত দুদিনের করুণা এবং হারুর সমস্ত কাহিনী খুলে বলতে লাগলো। করুণার কাছ থেকে পাওয়া দলিলের কথা শুনে সৌম্যর মাথায় প্রায় আকাশ ভেঙে পড়লো, কিন্তু এই মুহূর্তে কোনো প্রমাণ ছাড়া বড়ো মার সামনে আলোকের স্বরূপ প্রকাশ করা যথেষ্টই মুশকিল। খানিকক্ষন চুপ করে থেকে সে মৃণালের দিকে তাকালো,

করুণা কে বাড়ি পাঠিয়ে লাভ নেই, তাতে আলোক দা সতর্ক হয়ে যাবেন। তার থেকে বড়ো মার কাছে ওর বিয়ের কথা বলি, তাতে যদি বাধ্য হয়েও আলোক দার নাম সামনে আসে। আমার মনে হয়না এমনিতে করুণা এতো বড়ো বিপদের ঝুঁকি নিতে চেয়েছে, এর পেছনে অন্য কোনো কারণ নিশ্চয়ই আছে! কারণ টা সম্ভবত আলোক দাই। নিজের বিয়ের কথা শুনলে ও বিয়ে আটকাতে চেষ্টা করে আলোক দার দ্বারস্থ হয় কি না দেখা যাক!

মৃণাল একটু ভাবলো, তারপর একটু চিন্তিত ভাবেই বললো,

কিন্তু তাহলে হারু! হারু কি জন্যে এসব করছে! ও কিন্তু করুণা কে সত্যিই খুব ভালোবাসে! ওর জন্যে কতো বড় ঝুঁকি নিয়েছে বলো তো! করুণা বেশ চালাক চতুর মেয়ে তো! হারু ওকে ভালোবাসে এটা বুঝেই তাহলে ও হারু কে নিজের কাজে ব্যবহার করছে! আমার সত্যি ছেলেটার জন্যে খারাপ লাগছে গো!

সেতো আমারও লাগছে মৃণাল। হারু কতো ছোটো বয়স থেকে আমাদের বাড়িতে আছে জানো! একসময় ওর বাবা আমাদের জমিতে ভাগে চাষ করতো, বাবা মারা যাবার পর না খেয়ে থাকছিলো প্রায়। শেষ পর্যন্ত বড়ো মা বাবা কে বলে ওদের কে ঘরে নিয়ে আসেন। ছোটো বেলায় সারাক্ষন আমার পেছন পেছন ঘুরে বেড়াতো। ছেলেটা একটু সরল, সাদা সিধে, মনের দিক থেকে খুব ভালো। আর করুণার কথা ই যদি বলো, সেও কি খুব চালাক! আসলে তো বোকা ই দেখছি, ও ও তো আলোক দার কথামতই চলছে! হারুর সঙ্গে ওর আর ফারাক কোথায়! আসল ধুরন্ধর তো আলোক দা! করুণা কতো বড়ো বোকা বলতো! বোকা না হলে কেউ আমার কাছে তোমার নামে অভিযোগ জানাতে আসে!

খানিকটা বিরক্তির গলায় বললো সৌম্য, করুণার চোখের দৃষ্টি তার একটুও ভালো লাগেনি তখন।

এটা নিয়ে আমিও তখন থেকেই ভাবছি! ও হটাৎ করে এরকম একটা কাজ করতে গেলো কেনো!! এটাও আলোক দার শেখানো নয় তো?

তোমার কি মনে হয় আলোক দা ওকে এই ভাবে আমার সঙ্গে কথা বলতে বলেছে? তোমার আড়ালে এসে?

মৃণাল এর কথায় অবাক গলায় বললো সৌম্য, তারপর একটু গম্ভীর হয়ে গেলো।

আমার মনে হয় এর পর থেকে তুমি আর কোনো কাজে, আমি থাকলে ওকে ঘরে পাঠিও না, যদি অসুবিধা হয় বা বড়ো মা কিছু আপত্তি করেন, তাহলে আমাকে জানিও, আমি বড়ো মার সঙ্গে কথা বলে নেবো। এমনিতেও ওর হাব ভাব খুব একটা ভালো ঠেকছে না বড়মার সঙ্গে সরমা র ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা মিটে গেলে একবার এটা নিয়েও বসতে হবে।

মৃণাল ঘাড় নাড়লো, দুজনেই চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়েছিলো, হটাৎ করেই নীচ থেকে আসা পোস্ট ম্যানের সাইকেলের ঘণ্টার আওয়াজ শোনা গেলো। ছাদের থেকে নিচের দিকে ঝুঁকে তাকালো সৌম্য,

টেলিগ্রাম! একটু নিচে আসুন,

বলে হাতে ধরা টেলিগ্রাম টা উপরের দিকে তুলে দেখালো পোস্ট ম্যান। টেলিগ্রাম শব্দ টা শুনেই মৃণালের হাত পা থর থর করে কাঁপতে লাগলো, বাবার সুস্থতার কামনায় সে বার বার মনে মনেই ঈশ্বরের কাছে জোড় হাতে প্রার্থনা করতে লাগলো। সৌম্য প্রায় দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলো, সিঁড়ি দিয়ে নামার ক্ষমতাও মৃণালিনীর ছিলো না, সে খানিকটা অসহায় ভাবে ছাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

গোটা বাড়িতে একটা হৈ চৈ পড়ে গেলো, দোতলা থেকে শ্যাম সুন্দর এবং আলোকও নেমে এলো, পারুল বালা এবং কুমুদ কপালে হাত ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে ঠাকুর নাম জপ করতে লাগলেন। একটু পরেই নীচের থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো, নিজেকে কোনো রকমে শক্ত করে মৃণালিনী সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে এসে দাঁড়ালো। পারুল বালার বড়ো ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ এসেছিলো, তাতে পারুল বালার চোখে হালকা জলের রেখা দেখা গেলেও কুমুদ জোরে জোরেই কাঁদতে লাগলেন।

কয়েক মুহূর্ত এই ভাবে কেটে যাবার পরে সবাই আস্তে আস্তে ধাতস্থ হলো, পারুল বালা কে কিভাবে বাপের বাড়ি পাঠানো যায় তার আলোচনা চলতে লাগলো। সৌম্যর কাল ফিরে যাওয়া, তাই আলোকের অনুপস্থিতিতে বাড়িতে শ্যাম সুন্দর ব্যতীত কোনো পুরুষ মানুষ থাকবে না এটা একটা বড়ো চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ালো। শ্যাম সুন্দরের যথেষ্ট বয়েস হয়েছে, শুধু তাঁর ভরসায় এতো জন মহিলা কে রেখে যাওয়া খুব বেশি যুক্তিযুক্ত হবে কিনা সৌম্য চিন্তা করতে লাগলো।

পারুল বালা মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিলেন, সৌম্য বললো,

বড়মা তুমি আর আলোক দা চলে যাও, আমি ছুটির দরখাস্ত সুরেশের হাত দিয়ে বিমলের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি, ও কলেজে জমা দিয়ে দেবে। তোমরা ঘুরে এসো নিশ্চিন্তে, তোমরা না ফেরা পর্যন্ত আমি এখানেই থাকবো।

আলোকের মুখের ভাব পরিবর্তন হলো, সম্পর্কে মৃত ব্যক্তি তার জ্যাঠামশাই হলেও পিসির সঙ্গে বাড়ি যাবার একটুও ইচ্ছে তার ছিলো না। এখানে তার আরও বেশি আকর্ষণ আছে। সে তাড়াতাড়ি বলে উঠলো,

তোমার কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত থাকার দরকার নেই, একদিন থাকলেই হবে, আমি বরং পিসি কে পৌঁছেই কাল ফিরে আসবো।

পারুল বালা সাথে সাথেই আপত্তি জানালেন,

না না সে হবে নে, তুমি একেবারে কাজ সেরেই এসো বাছা! ওসব অশুচ গায়ে এধার ও ধার করতে হবে নে! আমি ও বাড়ি থাকবো, তুমি একেনে, ছোটো ওসব একা হাতে সামলাতে পারবে নে! ওসব হব্যিশ্যির ঝক্কি কম নাকি!

আলোক চুপ করে গেলো, করুণা মুখ শুকনো করে দাঁড়িয়ে আছে মৃণাল লক্ষ্য করলো। হঠাৎই এতো দ্রুত পট পরিবর্তন হলো যে সরমা র বিয়ে বা করুণা কে নিয়ে বড়ো মার সঙ্গে আলোচনা কোনো কিছুই আর হয়ে উঠলো না। এতো কিছুর মধ্যেও মৃণালের মনের মধ্যে আনন্দের স্রোত বইতে লাগলো, পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো হটাৎ করে সৌম্য কে বেশ কিছুদিনের জন্যে কাছে পাওয়ার সুযোগ পেয়ে সে ভেতরে ভেতরে যথেষ্টই আনন্দিত হলো।

কিছুক্ষনের মধ্যেই আলোক পারুল বালা কে নিয়ে বাড়ির উদ্যেশ্যে রওনা হলো, তাঁরা বেরিয়ে যাবার পর পরই সৌম্য কলেজের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লেখা ছুটির দরখাস্ত হাতে সুরেশের বাড়ি যাওয়ার জন্যে বেরিয়ে পড়লো। শ্যাম সুন্দর দোতলায় নিজের ঘরে ফিরে গেলেন, বামুন দিদি কে বাকি রান্না বুঝিয়ে দিয়ে কুমুদও নিজের ঘরে বিশ্রাম নিতে গেলেন।

মৃণাল নিজের ঘরে ফিরে এসে ঘর গোছ গাছ করতে লাগলো। রবিবার দিন তার ঘরের চেহারা অন্য দিনের থেকে কিছুটা আলাদাই থাকে। যেহেতু সৌম্য থাকে, তাই সকালের ঘরের কাজ তার প্রায় কিছুই করা হয়ে ওঠে না। পারুল বালা বেরিয়ে যাবার পরে যেনো বাড়ি সম্পূর্ন নিস্তব্ধ হয়ে পড়লো, তিনি যে বাড়ির কতো টা জুড়ে থাকেন সেটা মনে মনেই অনুভব করতে পারছিলো মৃণাল। আস্তে আস্তে সমস্ত কাজ কর্ম সারা হয়ে যাবার পরেও যখন সৌম্য ফিরে এলো না তখন ঘরের পেছনের দিকের জানলার গরাদে মুখ ঠেকিয়ে দাঁড়ালো মৃণাল।

হালকা শীতের আমেজ জড়ানো রোদ ঝলমলে নিস্তব্ধ উঠোনের দিকে চোখ রেখে অন্য মনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো মৃণালিনী, মাঝে মাঝে গোয়াল থেকে ভেসে আসা গরুর ডাক ছাড়া কোথাও কোনো শব্দ নেই। রান্না ঘর থেকেও কোনো আওয়াজ আসছে না, সম্ভবত বামুন দিদির রান্না শেষ হয়ে গেছে। আলোক কে হটাৎ করেই চলে যেতে হওয়ায় কিছুটা হলেও মনে মনে নিশ্চিন্ত হয়েছিলো মৃণাল, তাই আজ করুণা কে নজরে রাখার কোনো প্রয়োজনও তার ছিলো না। আলোকের না থাকা এবং সৌম্যর হটাৎ করেই থেকে যাওয়া সব মিলিয়ে আজ মন অনেকটাই ভালো ছিলো তার।

বউমা, তোমায় কিচু কবার চেলো!

চমকে উঠে পেছনে তাকিয়েই সে হারুর মা কে দেখতে পেলো, অন্য মনস্ক ভাব কাটিয়ে হারুর মায়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো মৃণালিনী,

ওই মেয়ে কে বাড়ি পাইঠে দাও, বউমা,

হারুর মা মুখে নাম উচ্চারণ না করলেও সে কার কথা বলছে তা বোঝা মৃণালের পক্ষে খুব বেশি অসুবিধাজনক ছিলো না। সে মাথা নাড়লো,

তা বললে কি হয় বউ? সে এমন কি দোষ করেছে বলো! তাড়িয়ে দিলে তো না খেয়ে মরবে! আর বামুন দিদি কতদিন এ বাড়িতে আছেন বলো তো? তিনি কতো কষ্ট পাবেন, সেটাও ভাবো একটু,

হারুর মা চুপ করে রইলো, সেটা হয়ত বামুন দিদির কথা ভেবেই। দুজনেই প্রায় একই সময় থেকে এখানে আছে, সেই ভাবনাই হয়ত তাকে কিছুটা হলেও দুর্বল করলো।

হারু খুব ভালো ছেলে, তুমি ওকে নিয়ে একটুও চিন্তা করো না। করুণা এখানেই থাকবে, কিন্তু তাতে হারুর কোনো বিপদ হবে না তুমি নিশ্চিন্ত থাকো,

ওই তেই তো ভয় মা গো! সে যে ওই মেয়ের কতায় ওঠচে আর বসচে,

মৃণাল এর কথা শেষ হবার আগেই তাড়াতাড়ি বলে উঠলো হারুর মা, মৃণাল একটু হাসলো,

তুমি ওকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিও, আমি বুঝিয়ে বলবো,

মাথা নেড়ে চলে গেলো হারুর মা, মৃণাল বিছানায় বসার আগেই হারু দৌড়ে এলো,

বউ দিদি, আমারে ডাকতে ছেলে? মা কইলো,

হ্যাঁ, রে আলোক দা চলে গেছে, দাদা নিজের কাজে ব্যস্ত থাকে, এখন কিন্তু তোর ওপরে অনেক দায়িত্ব, বুঝলি তো?

হারু মাথা নাড়লো,

করুণা তোকে আর কিছু রাখতে দেয়নি তো?

হটাৎ করেই জিজ্ঞেস করলো মৃণাল, হারু একটু চমকে উঠলো,

না, বউ দিদি, দেয় নে। আগের কাগজগুলো ও আমাকে দেয় নে বউ দিদি, আমি নিজেই চেয়ে নিচিলাম। ও আলোক দাদা বাবু কে কইছিলো ওর রাখার জায়গা নেই, তা তিনি শুনতে ছিলেন না, তাই আমি আমারে দে দেতে কয়েলাম।

মৃণাল মাথা নাড়লো,

হ্যাঁ, সে ভালোই করেছিস, ও আর কোথায় বা রাখতো!

আলোক দাদা বাবু খুব বাজে মানুষ বৌ দিদি, আমি জানি, উনি করুণা কে ভুল বুঝিয়ে এসব করাতেছেন,

মৃণাল অনেকটাই নিশ্চিন্ত হলো, হারুর সততা ওকে মুগ্ধ করছিলো, আস্তে করে হারুর মাথায় হাত রাখলো মৃণাল,

করুণাও ভালো মেয়ে, শুধু খুব বোকা বুঝলি তো? আমি জানি তুই ওকে খুব ভালো বাসিস, তাই চোখে চোখে রাখবি সব সময়। আলোক দা ওকে আর কিছু রাখতে দিলেই আমাকে জানাবি। বড়ো বাবু যদি জানতে পারেন করুণা এসব করছে তাহলে ওকে বাড়ি থেকে দূর করে দেবেন, তুই সেটা হতে দিস না কিন্তু!

হারু মাথা নাড়লো, সে বেরিয়ে যাবার আগেই সৌম্য ঘরে এসে ঢুকলো, তাকে দেখে একগাল হাসলো হারু,

দাদা, আজ রস পাড়ি?

হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, এখন আমি অনেকদিন আছি, প্রতিদিনই খাবো কিন্তু,

শুধু দাদা এলেই পাড়িস হারু, কই বউ দিদি কে তো খাওয়াস না! আমিও তো খেজুর রস খেতে খুব ভালোবাসি,

মৃণাল হেসে বললো, হারু লজ্জা পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

হারুর সঙ্গে তোমার গোপন কথা হচ্ছিলো বুঝি!

হাসতে হাসতে বললো সৌম্য, মৃণালও মুচকি হাসলো।

সুরেশ দা কে দিয়ে এলে? উনি কি কালই কলকাতা যাবেন?

সৌম্য মাথা হেলালো, তারপর একটু চিন্তিত গলায় বললো,

হ্যাঁ, কাল ভোরের ট্রেনেই চলে যাবে, তাহলে রাতে ফিরে আসতে অসুবিধা হবে না। সুরেশ আমাকে বার বার আলোক দার কথা বাবাকে বলার জন্য বলছে! কি করবো ঠিক বুঝতে পারছি না। আজ ও মনোরমা কাকিমার ছেলে বিভাসের কথা বলছিলো, বিভাস নাকি এখন এখানেই থাকছে! কলকাতায় থেকে খুব বেশি চাকরি বাকরির সুবিধা হয় নি বোধ হয়! এই ক্লাবের ব্যাপারে ওর উদ্যমই বেশি, আর ওই জমিতে ওদেরও কিছুটা অংশ আছে, তাই আলোক দাও ওকে যথেষ্টই গুরুত্ব দিচ্ছেন।

মৃণালও চিন্তিত হলো, সেদিনের মনোরমা কাকীমার সঙ্গে বড়ো মার কথোপকথনের দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠলো। সেদিনের পর থেকেই যে তিনি পারুল বালার ওপর বেশ ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন সেটা মৃণাল জানে, চৌধুরী বাড়ি কে হেনস্থা করতে তিনিও এই সুযোগের সদ্ব্ব্ব্যবহার করেন কি কে জানে!!
ক্রমশ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here