মৃণালিনী পর্ব ৩০

0
686

#মৃণালিনী
#পর্ব ৩০
আলোক পারুল বালা কে নিয়ে চলে যাবার পর থেকেই করুণা শুকনো মুখে বাড়িতে ঘুরে বেড়াতে লাগলো, সব কাজেই তার অন্য মনস্কতা সবারই নজর কাড়ছিলো। সেদিন সৌম্যর কাছ থেকে তার সম্বন্ধে করা অভিযোগের কথা জানার পর থেকেই কিছুতেই ভুলতে পারছিলো না মৃণাল। করুণার ওপর সে এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছিলো যে পারত পক্ষে করুণার সঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলাই বন্ধ করেছিলো সে। বউ দিদির মুখ দেখেই বোধ হয় কিছু আন্দাজ করেছিলো করুণা, সেও মোটামুটি চুপ চাপ হয়ে গিয়েছিলো।

প্রায় দিন চারেক পর, সকালে উঠেই মৃণালিনী রান্না ঘরে উপস্থিত হলো, তার নিত্যকার কাজ অর্থাৎ পারুলবালার ঠাকুরের ফুল তোলা তিনি না থাকার জন্যে বন্ধ হয়েছিলো। কুমুদ তাঁর প্রয়োজন মতো পুজোর ফুল নিজেই তুলে নিতেন। বউমা কে দেখে কুমুদ কুটনো কাটতে কাটতে মুখ তুলে তাকালেন,

মা, আমার তো এখন কাজ অনেক কম তাই ভাবছিলাম আলোক দার ঘর টা একটু হারুর মা কে নিয়ে পরিষ্কার করে দিতাম, উনি থাকলে তো খুব বেশি সম্ভব হয় না,

শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বললো মৃণাল, কুমুদ নির্বিরোধী, শান্ত মানুষ, তিনি কোনো ব্যাপারেই খুব বেশি মাথা ঘামাতে ভালো বাসেন না, মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন। হারুর মা কে গলা তুলে ডাকতে যাবার আগেই করুণা এগিয়ে এলো,

বউ দিদি আমার এখন কোনো কাজ নেই, আমি করে দেবো?

মৃণাল ঘাড় হেলালো,

তুই করবি? ঠিক আছে, চল তাহলে!

করুণা যে একা মৃণাল কে আলোকের ঘরে ঢুকতে দিতে চায় না সেটা মৃণালের জানা ছিলো। বউ দিদি সহজেই রাজি হয়ে যাবে এই আশা হয়ত করুণার ছিলো না, তাই মৃণালের সম্মতিতে সে খানিকটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। কিন্তু আলোকের ঘরে কোনো রকম গোপন জিনিসপত্র কিছুই পাওয়া গেলো না, সব টাই যে সে করুণার হাতেই দিয়েছে এটা বুঝে মৃণালিনী নিশ্চিন্ত হলো।

প্রায় দিন পনেরো পরে পারুল বালা আলোক কে সঙ্গে নিয়ে ফিরে এলেন। এসেই ঘর দোর অগোছালো করে রাখার জন্যে সবাই কে বকা বকি করতে লাগলেন। হারুর মা থেকে বামুন দিদি, কুমুদ থেকে মৃণালিনী কেউ তাঁর বকুনির হাত থেকে রেহাই পেলো না। তাঁর এই কদিন না থাকায় সংসার যে পুরোপুরি অচল হয়ে গেছে সেটা বার বার বলতে লাগলেন। তাঁর চিৎকার চেঁচামেচি তে চৌধুরী বাড়ি আবার গম গম করতে লাগলো, প্রায় মুহ্যমান দুপুরের ছাদের মজলিশ নতুন করে প্রাণ ফিরে পেলো।

করুণার মুখে নতুন করে হাসি ফিরে এলো, মৃণালের মনে দুঃখ। সৌম্যর চলে যাবার সময় এগিয়ে আসছিলো, কোনো কারণ ছাড়াই সকাল থেকে মন খারাপ হয়ে ছিলো মৃণালের। বড়ো মার ঘরে ফুলের সাজি রেখে এসে সে সবে দোতলার সিঁড়িতে পা দিয়েছিলো, পেছন থেকে অবনী কাকার ডাক ভেসে এলো। সম্পর্কে শ্বশুর মশাই অবনী কাকার গলা শুনেই মাথায় ঘোমটা তুললো মৃণালিনী,

সৌম্য কোথায়? তাকে একবার ডেকে দাও দিকি বউমা,

মৃণাল কে ডাকতে হলো না, অবনী কাকার গলা যথেষ্টই জোরে, তাঁর গলার আওয়াজ সৌম্যর কাছে দোতলায় পৌঁছে গিয়েছিলো, সে গায়ে জামা গলাতে গলাতে নিচে নেমে এলো। অবনী একটা সাদা খাম হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন, সৌম্য কে নিচে নেমে আসতে দেখে তাকে নিয়ে কথা বলতে বলতে বাইরে বেরিয়ে গেলেন। তিনি বেরিয়ে যাওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পারুল বালা জপের মালা সরিয়ে রেখে কোমরে হাত দিয়ে চিন্তিত মুখে উঠোনে এসে দাঁড়ালেন।

তাঁর দেওর পো টি যে নিতান্তই ছোটো, বয়সে বড়ো হলেও সে যে বুদ্ধিতে একান্তই নাবালক, সেকথা দেওর শ্যাম সুন্দরের মতো পারুল বালাও বিশ্বাস করেন। তাই তাদের সকলের অজান্তে ঘোড়েল অবনী তাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ঠিক কি কি বলে তার মস্তক চর্বণ করছে সেটা জানা তাঁর একান্তই বিশেষ প্রয়োজন বলেই মনে হলো। বেশ কিছুক্ষন পরেও যখন সৌম্য কথা শেষ করে ফিরে এলো না, তখন তিনি আর ধৈর্য্য রাখতে পারলেন না, কিন্তু অবনীর হাতের কাগজের রহস্য ভেদ করার ক্ষমতা তাঁর নেই, তাই ওখানে দাঁড়িয়েই তিনি ওপর দিকে গলা তুললেন, তাঁর চিৎকারে মৃণাল দৌড়ে বারান্দায় বেরিয়ে এলো,

আমাকে ডাকছেন বড়ো মা?

না মা গো! তোমায় ডাকবো কেনো! এ বাড়িতে তো আমার আরও গোটা দশেক বউমা ছড়িয়ে আচে! নিচে নেমে আমায় উদ্ধার কর মা!

বড়মার কথার দাপট আরও বাড়ার আগেই প্রায় দৌড়ে নিচে নেমে এলো মৃণাল, তাকে দেখেই গলার স্বর নিচু করলেন পারুল বালা, প্রায় তার কানের কাছে মুখ এনে বললেন,

দেকো দিকি! অবনী তাকে একা পেয়ে কি মাতায় ঢোকাচ্ছে! সে তো ছেলে মানুষই রয়ে গেলো, এতো ঠেলেও তারে আর বড়ো করতে পারলুম নে! ওই কাগজগুলো তার কাচ তে নে এসো দেকি!

মৃণাল কষ্ট করে হাসি চাপলো, নিজের স্বামী কে ছেলে মানুষ ভাবতে তার যথেষ্টই মজা লাগছিলো, নিজেকে সামলে নিয়ে সে গম্ভীর মুখে বললো,

আমি অবনী কাকার সামনে যাবো বড়ো মা! উনি যদি কিছু মনে করেন?

মনে করলে করবে! আমার বাড়ির বউ সে কোতা যাবে, আসবে, সে কি পাড়ার লোক ঠিক করবে নাকি!

প্রায় তেড়ে উঠলেন পারুল বালা, তিনি আরো কিছু বলার আগেই কুমুদ সামনে এগিয়ে এলেন, তিনি যথেষ্টই বুদ্ধিমতি, ওই ভাবে কাগজ চেয়ে নিয়ে আসা যে সম্ভব নয় সেটা বুঝেই রান্নাঘর থেকে চায়ের কাপ থালায় সাজিয়ে নিয়ে এসেছেন।

এটা নিয়ে যাও মা, ছেলের হাতে ধরিয়ে তার হাতের কাগজ নিয়ে নিও!

শান্ত গলায় বৌমার দিকে তাকিয়ে বললেন কুমুদ, ছোটো জায়ের বুদ্ধি তে মনে মনে সন্তুষ্ট হলেও মুখে প্রকাশ করার বান্দা পারুল বালা নন, তিনি মুখে বিরক্তির ভাব ফুটিয়ে বাইরের দরজার দিকে তাকিয়ে রইলেন। বাম হাতে চায়ের কাপ নিয়ে ডান হাতে মাথার ঘোমটা সামলাতে সামলাতেই দরজার বাইরে বৈঠক খানার দিকে এগিয়ে গেলো মৃণালিনী। তাকে ওই ভাবে আসতে দেখেই সৌম্য ফিরে তাকিয়ে শশব্যস্ত হয়ে এগিয়ে এলো, তাড়াতাড়ি মৃণালের হাত থেকে কাপ নিয়ে বললো,

আরে! তুমি আবার এলে কেনো! দেখো, সাবধানে, পড়ে যেও না!

দেখো বাবা, দরকারি জিনিস, ওতে আবার চা পড়ে যায় না যেনো!

সৌম্যর এক হাতে চায়ের কাপ অন্য হাতে খাম দেখেই তড়িঘড়ি বলে উঠলেন অবনী, মৃণাল এই সুযোগের অপেক্ষা়তেই ছিলো,

দাও, ওটা আমার হাতে দিয়ে দাও,

সৌম্য খাম বউয়ের দিকে বাড়িয়ে দিলো, কাঙ্ক্ষিত জিনিস হাতে পেয়েই আর দাঁড়ালো না মৃণালিনী, সে ঘরে এসে ঢুকতেই পারুল বালা এগিয়ে এলেন।

খোলো দেকি বাছা! পড়ে শোনাও দেকি, কি লেকা আছে ওতে!

খামটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলো মৃণাল, আঠা দিয়ে বন্ধ করা খাম আদৌ খোলা উচিত হবে কিনা মনে মনে সেই চিন্তাই করছিলো, কুমুদ এগিয়ে এলেন।

ওমা! এতো আঠা দিয়ে চিটুনো গো! এ খুলে কাজ নেই দিদি! কি দরকারি কাগজ কে জানে!

পারুল বালা থমকে গেলেন, খামটা সত্যিই আদৌ খোলা উচিত হবে কিনা এই চিন্তা ভাবনার মধ্যেই সৌম্য এসে ঢুকলো, দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতেই সে নিচু গলায় বলা হলেও সমস্ত কথোপকথন শুনতে পেয়েছিলো, এবার বড়ো মা কে উদ্যেশ্য করে বললো,

আহ বড়ো মা! ওটা খুব জরুরি কাগজ, কেউ খুলবে না!

পারুল বালা কিছু বলে ওঠার আগেই বউয়ের হাত থেকে খাম প্রায় ছিনিয়ে নিয়েই সৌম্য ওপরে উঠে গেলো। পারুল বালার সঙ্গে সঙ্গে মৃণাল নিজেও এবার চিন্তিত হলো, এই টুকু সময়ের মধ্যে অবনী কাকা এমন কি গুরুত্বপূর্ন কাগজ সৌম্যর হাতে তুলে দিলেন, সেই খবরের জন্যে সেও রীতিমত ছট ফট করতে লাগলো।

একটু বেলার দিকে শ্যাম সুন্দর নিজের কাজে আলোক কে নিয়ে বেরিয়ে যাবার পরে সৌম্য এসে রান্না ঘরের দাওয়ায় দাঁড়ালো। সেখানে তখন প্রাত্যহিক কাজ কর্ম চলছিলো। বামুন দিদি নিরামিষ রান্না চাপিয়ে ছিলেন, পারুল বালা তাকে বিভিন্ন রকমের নির্দেশ দিতে ব্যস্ত ছিলেন, দেওর পো কে হেঁসেলে ঢুকে আসতে দেখে অবাক হয়ে তাকালেন।

কি রান্না করছো বড়ো মা? খুব সুন্দর গন্ধ আসছে!

বড়ো মা কে উদ্দ্যেশ্য করে কথা গুলো বলতে বলতে এক খানা পিঁড়ি টেনে নিয়ে বসলো সৌম্য। পারুল বালা খুশি হলেন, সারা সপ্তাহ মেসের ভাত খেয়ে থাকা ছেলের জন্যেই তাঁর এসব আয়োজন। সেই ছেলের যদি রান্নার গন্ধ পছন্দ হয় তার থেকে আনন্দের আর তাঁর জন্যে কিই বা থাকতে পারে!

বসো বাছা! তোমার জন্যেই তো করা! একটু খেয়ে বলো দিকি সোয়াদ কেমন!

কাঁসার রেকাবি তে খানিকটা তরকারী তুলে সৌম্যর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন পারুল বালা। তরকারী খেতে বাস্তবিকই ভালো হয়েছিলো, দেওর পো র মুখের তৃপ্ত ভাব তাঁর নজর এড়ালো না, মনে মনেই আনন্দিত হলেন তিনি।

খুব সুন্দর বড়ো মা! কতদিন পরে খেলাম!

সেই তো বাছা! আমাদেরই কপাল! না হলে আর কেউ বাড়ি ঘর ছেড়ে বিদেশ বিভুই এ পড়ে থাকে বাছা! বাপের তো টাকার অভাব নেই কো তোমার! তবে কেনো এতো কষ্ট করা বলো!

সৌম্যর কথায় দুঃখিত গলায় বললেন পারুল বালা, ওই কলকাতায় থেকে চাকরি করা তাঁর কোনো দিনই পছন্দ নয়।

সত্যিই তোমার নিরামিষ রান্নার কথা মেসের খাবার খেতে খেতে খুব মনে পড়ে বড়ো মা! এমন কি বিমলও সব সময় তোমার রান্নার কথা বলে। আমি তো তাও বাড়ি এলেই খেতে পাই, তার তো সে সুযোগও নেই!

চোখ বন্ধ রেখেই চচ্চড়ির ডাঁটা চেবাতে চেবাতে বললো সৌম্য, পারুল বালা মনে মনেই একটু লজ্জিত হলেন। তাঁর বিমল কে বাড়ি আনা পছন্দ নয় বলেই যে বিয়ের পর সৌম্য আর বন্ধু কে নিয়ে আসে না সেটা তিনি জানেন। সুভাষের ঘটনার পর মৃণালিনীর সঙ্গে তাঁর কথোপকথন স্মরণে এলো। এই সুযোগে যদি নিজের করা ভুল একটু হলেও শুধরে নেওয়া যায়, তাঁর দিক থেকে চেষ্টার ত্রুটি রইলো না।

তাকে মাজে মাজে নিয়ে এলেই তো পারো বাছা! একটু হলেও খেয়ে বাঁচে সে! বেচারা বাপ মা মরা ছেলে, কেউ একটুও দেকার নেই কো! আহা! কতো কাল সে একটু ভালো মন্দ খেতে পারে নে!

দূরে দাঁড়িয়ে তাদের কথোপকথন শুনছিল মৃণালিনী, বড়ো মার কথায় চমকে উঠে অবাক হয়ে শাশুড়ির দিকে তাকালো সে। কুমুদ এক মনে মাথা নিচু করে কুটনো কেটে চলেছেন, মুখে তাঁর মৃদু হাসি। সৌম্য যেনো শুনেও শুনছে না, এক মনে চোখ বন্ধ রেখে তরকারির আস্বাদ নিতে ব্যস্ত সে। একটু পরে এঁটো বাটি নামিয়ে রেখে বড়ো মার দিকে তাকালো সৌম্য,

হ্যাঁ, বড়ো মা এমনিও তাকে একবার আনতে হবেই। তুমি যখন ছিলেনা, তখন অবনি কাকা আমাকে একদিন বিভার সম্বন্ধের জন্যে বলছিলেন, তিনি আমাকে বিমলের কথা বললেন। এখানে নাকি যখন বিমল আমার সঙ্গে আসতো তখন তিনি অনেকবার ওকে দেখেছেন! ওই যে সকালে তিনি এসে আমাকে একটা খাম দিয়ে গেলেন, ওটা বিভার কুষ্টি আর ফটো, আমিই তাঁকে বিমল কে দেখাবো বলে চেয়েছিলাম।

মৃণাল মনে মনেই একটু চমকে উঠলো, সৌম্য বিমল দার সঙ্গে সব জেনে শুনেই বিভার সম্বন্ধ করছে এটা তার একটুও বিশ্বাস হচ্ছিলো না।

তা কতা কি কিচু এগোলো বাছা?

উদগ্রীব গলায় প্রশ্ন করলেন পারুল বালা,

আজকাল তো সবাই শিক্ষিতা মেয়ে চায় বড়ো মা, তাই নাকি বিভার কিছুতেই বিয়ে ঠিক হচ্ছে না। তা বিমল অন্য রকম ছেলে, পড়াশুনা জানা, ভালো সরকারি অফিসে চাকরি করে। কিন্তু ওই দোষ বলতে একটাই, বেচারার দেখে শুনে বিয়ে দেবার মতো কেউ নেই। যা করার আমাকেই করতে হবে। তবে অবনী কাকা আমাকে বিমলের সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন, আমি যদিও এখনো সেভাবে ওনাকে কিছু জানাইনি। আমি যা বলবো বিমল তাই করবে! আমার কথায় ও অমত করবে না কখনও!

স্বামীর বলা কথা অবাক হয়ে শুনছিল মৃণালিনী, সৌম্যর কথা কোন দিকে এগোচ্ছে সেটা দেখার জন্যেই উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করেছিলো সে, এমন সময় জোরে কলসি কুঁয়োয় পড়ে যাবার আওয়াজে চমকে উঠে তাকালো। সরমা জল ভর্তি কলসি তুলতে তুলতে হাত ফস্কে দড়ি কলসি দুইই ছেড়ে দিয়েছে কুঁয়ো তে। বাড়িতে একটা হৈ চৈ পড়ে গেলো, আপাতত গল্প স্থগিত রইলো। সরমা করুন মুখে একদিকে দাঁড়িয়ে রইলো। পারুল বালা করুণা কে হারু কে ডাকতে পাঠালেন, কলসি তোলার ব্যবস্থা হতে লাগলো।

ননদের করুন মুখের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা আসল কাহিনী একমাত্র সৌম্য আর মৃণালিনীই বুঝতে পারলো। বিভার সঙ্গেই পাছে বিমলের সম্বন্ধ হয়ে যায় সেই ভয়েই সরমা ভীত ছিলো, সেটা সৌম্যর চোখ এড়ালো না, মুচকি হেসে বউয়ের দিকে তাকিয়ে সে দোতলায় নিজের ঘরে উঠে গেলো। এতো সুন্দর ওঠা প্রসঙ্গটা চাপা পড়ে যাওয়ায় মৃণাল নিজেও মনে মনে যথেষ্টই দুঃখিত হলো।

সকালের গন্ডগোলের পরে সব মিটতে মিটতে যথেষ্টই বেলা হলো। সব কাজ কর্ম সেরে শ্যাম সুন্দর বাড়ি ফিরে আসার পরে বাপ ছেলে একসঙ্গে খেতে বসলো। আজ অনেকদিন পরে পাখা হাতে তাদের সামনে বসলেন পারুল বালা। বড়ো মা কে পাখা হাতে বসতে দেখেই ভেতরে ভেতরে উদ্বিগ্ন হলো মৃণালিনী, সে সিঁড়ির দেওয়াল ঘেঁসে দাঁড়ালো।

সামনের হপ্তায় কি বিমল কে নে আসবে নাকি বাছা! কিছু ঠিক করেছো!

বাবার সামনে এ প্রসঙ্গে বড়ো মা তোলায় একটু থত মত খেলো সৌম্য। কিছু দিন আগেই সে বোনের বিয়ের জন্য বাবার সঙ্গে কথা বলে এসেছিল, এখন পাছে বিভার সঙ্গে বানিয়ে বলা সম্বন্ধের কথা বড়ো মার দৌলতে বাবার সামনে ফাঁস হয়ে যায় সে ভয়েই সে তাড়াতাড়ি কথা ঘুরিয়ে দিতে চাইলো।

হ্যাঁ, বড়ো মা সে অনেকদিন তোমার হাতের রান্না খায়নি! তাকে ঠিক নিয়ে আসবো সামনের শনিবার!

নিজের বোনের কতা টাও একটু ভেবে দেকো! পরের উবগার করেই তো তোমার দিন গেলো বাছা! বাড়িতে আই বুড়ো বোন থাকতে এতো ভালো একখান পাত্তর কেউ হাতছাড়া করে!

বৌদির কথায় জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন শ্যাম সুন্দর, আর একটুও দেরি করলো না সৌম্য,

হ্যাঁ, বড়ো মা, সে কথাই তো ভেবেছি মনে মনে! বাবা কেও বলছিলাম! যে যাই বলুক, বিমলের মতো ভালো পাত্র আমি কোনো মতেই হাতছাড়া হতে দেবো না। তুমি ঠাকুর মশাই কে ডেকে পাঁজি দেখো!

অবনী কাকার প্রসঙ্গ আর সামনে আসতে দিলো না সৌম্য, আপাতত তাঁর কথাতেই সৌম্য সায় দেওয়ায় আর প্রসঙ্গ এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইলেন না পারুল বালাও। তিনি তৎক্ষণাৎ হারু কে পুরুত মশাই কে ডেকে আনার জন্যে পাঠিয়ে দিলেন।
ক্রমশ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here