মৃণালিনী পর্ব – ৩১

0
711

#মৃণালিনী
#পর্ব ৩১
গত কয়েকদিন যেনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই শেষ হয়ে গেলো, সৌম্যর শুধু মুখ থেকে কথা খসানোর দেরি টুকু ছিলো, পারুল বালা পুরুত মশাই কে বাড়িতে ডেকে নিয়ে এলেন। পাছে তাঁর বিন্দু মাত্র দেরি দেখে সৌম্য আবার বিমলের সঙ্গে বিভার বিয়ের কথা এগিয়ে নিয়ে যায়, বা গ্রামের কেউ বিয়ের ব্যাপারে কিছু মাত্র সমস্যার সৃষ্টি করে,সেই ভয়েই মাঘের প্রচণ্ড শীতের মধ্যেই কুমুদ এর আপত্তি কে একটুও ধর্তব্যের মধ্যে না এনেই তিনি বিয়ের দিন ঠিক করে ফেললেন।

এই একটি ব্যাপারে শ্যাম সুন্দর নিজেও প্রথম বার স্ত্রীর বক্তব্য কে সমর্থন জানিয়ে ছিলেন,

বৌদি, একটু বোশেখের দিকে করলে হতো না? এই ঠাণ্ডায় বিয়ের বন্দোবস্ত করা, এতো লোকের থাকার ব্যবস্থা সেসব একটু মুশকিল হয়ে যাবে না?

পারুল বালা মাথা নাড়লেন,

না, ঠাকুর পো! ওটি হবে নে! মেয়ের বে বলে কতা! মেয়ে পার করতে গেলে ওসব মাঘ, ফাল্গুন দেকতে হয় নে! ওসব তুমি তোমার ছেলের বের সময় সব করেচো, আমি কিচু কইনিকো তকন। আজ যদি ছেলের বাপ মা থাকতো, তবে কি আর তোমার মনের মতো সময় দেকতে পারতে, নেহাত সে ছেলে আমাদের মুকের ওপর কতা কয় না তাই! একটুও দেরি করে আমি নিজের বেপদ নিজে ডাকতে পারবো নে, এই তোমায় একুনি কয়ে দিলুম। যদি তুমি ওই দিনে দাও, তবে আমি আচি, নাহলে তোমরা কত্তা গিন্নি তেই যা পারো করো তালে! তারে আমি পেটে ধরিনি, তা বলে কি তার মঙ্গল অমঙ্গল নিয়ে ভাববো নে!

শেষের কথাগুলো বলতে বলতেই গলা একটু ধরে এলো পারুল বালার, কুমুদ প্রমাদ গুনলেন!

ওকি কথা দিদি! তুমি ওকে পেটে ধরো নি তাই বলে কি তুমি একটুও কম ভালো চাও ওর! সে কথা তোমায় মুখে বলতে হবে! ওই শীত কালে বে বাড়ি মানেই তো লেপ কম্বলের টানাটানি, তাই বলেছিলুম আর কি!

এবার সৌম্য এগিয়ে এলো, বড়ো মার পাশে বসে বললো,

ঠিক আছে বড়ো মা, তোমার ঠিক করা দিনেই হবে, ওসব নিয়ে তুমি চিন্তা কোরো না। এমনিতেও বিমলের সেরকম কেউ নেই, যে কজন বরযাত্রী হবে, তারা সবাই আমারও বন্ধু বান্ধব, তাদের থাকা নিয়ে অত চিন্তার কিছু নেই।

মুহূর্তে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো পারুল বালার মুখ, এর পর আর এ বিষয়ে সেরকম কোনো আলোচনা হলো না। শ্যাম সুন্দর নিজের কাজে চলে যাবার পরে বাড়ির মহিলা মহল সরমার বিয়ের আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে উঠলো।

ক্রমশ বিয়ের দিন এসে পড়লো,ধুমধাম করেই বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হলো সরমার, সানাই, নহবত এর আওয়াজে চৌধুরী বাড়ি গম গম করতে লাগলো। আত্মীয় স্বজনে ভরে উঠলো বাড়ি, মহিলা মহলে জম জমাট আড্ডা বসলো।

একদিকে ভিয়েন বসেছে, অন্য দিকে মহিলারা গোল হয়ে বসে তরকারী কাটছেন আর গল্প চলছে। মৃণালও সেখানেই বসেছিলো, পাশে বসে থাকা বড়ো মা কেই লক্ষ্য করছিলো সে। এতো সহজে যে বিমল দা কে তিনি পাত্র হিসেবে মেনে নেবেন সেটা তার ধারণারও বাইরে ছিলো। কিন্তু সহজেই বিমল কে মেনে নিয়ে তাকে ভুল প্রমাণিত করলেন বড়ো মা। তিনি যে নিজেই এই ব্যাপারে এতটা উৎসাহী হবেন সেটা তার ধারণার বাইরে ছিলো।

সকাল থেকেই পারুল বালার আওয়াজ বিয়ে বাড়ির সানাই এর শব্দ কেও ছাপিয়ে যাচ্ছিলো মাঝে মাঝে। আমিষ থেকে নিরামিষ দুদিকের হেঁসেলেই ছোটা ছুটি করছেন তিনি। বিভিন্ন কাজের জন্যে মাঝে মাঝেই করুণার ডাক পড়ছিলো, অনেকক্ষন ডাকা ডাকির পর ক্ষিপ্ত হলেন পারুল বালা, করুণা হাঁফাতে হাঁফাতে ঢুকলো,

এই যে মা! কতা কানে যায় নে বুঝি! ডেকে ডেকে যে সারা হলুম গো! কোতা থাকো মা গো!

পারুল বালা আরও কিছু বলতেই যাচ্ছিলেন, করুণার পিসি তাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে এ যাত্রা বাঁচিয়ে দিলেন। খানিকক্ষন চিৎকার চেঁচামেচি র পর বড়ো মা দেওয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছেন এ দৃশ্য মৃণালিনী কে চিন্তিত করলো। দাপুটে বড়ো মা কে দেখতে অভ্যস্ত মৃণালিনী মনে মনে উদ্বিগ্ন হচ্ছিলো।

শরীর খারাপ লাগছে বড়ো মা? ঘরে যাবেন? সকাল থেকে খুব বেশি ছোটা ছুটি হয়ে গেছে তো! এই ঠাণ্ডায় এতো জল ঘাঁটাঘাঁটি করবেন না আর।

মৃদু গলায় বললো মৃণালিনী, সঙ্গে সঙ্গেই সোজা হয়ে উঠে বসে মাথা নেড়ে না বললেন পারুল বালা, অতো সহজে বিশ্রাম নেবার মানুষ তিনি নন! কিন্তু চিন্তিত মৃণালের মন মানছিল না, বড়ো মা ঘরে যেতে চাইলেন না দেখে সে দোতলায় সৌম্যর কাছে উপস্থিত হলো, সৌম্যর কথা যে বড়ো মা ফেলতে পারবেন না সেটা ও জানে। ঘরে ঢুকে দেখলো সৌম্য চিন্তিত মুখে বসে আছে, ওকে ঢুকতে দেখে অন্য মনস্ক ভাবে চোখ তুলে তাকালো।

তুমি করুণার দিকে নজর রাখছো তো মৃণাল?

মৃণাল একটু অবাক হলো, বিয়ে বাড়িতে এতো লোকের মাঝে ওকে আলাদা করে নজর রাখা কি করেই বা সম্ভব! তার একটু আগেই করুণার হাঁফাতে হাঁফাতে বাড়িতে ঢোকার দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠলো। সে একটু উদ্বিগ্ন গলায় বললো,

হটাৎ এ প্রশ্ন? তুমি কিছু দেখেছো নাকি? আমি করুণা কে বড়ো মার ডাকাডাকি তে কোথা থেকে ছুটে আসতে দেখলাম। ও মনে হয় বাইরে কোথাও গিয়েছিলো।

হ্যাঁ, ছাদে একটা ত্রিপল টাঙাতে বলেছিলেন বাবা, তারই তদারকিতে ছাদে গিয়েছিলাম। আমি খুব একটা লক্ষ্য করিনি, সুরেশই করলো! আলোক দা আর করুণা চণ্ডী পন্ডপে দাঁড়িয়ে ছিলো। কথা শোনা সম্ভব ছিলো না।

তুমি অতো চিন্তা কোরো না, আলোক দা খুব বেশি কিছু করতে পারবেন না খুব শীঘ্রই। কারণ বড়ো মার সঙ্গে বাড়ি যেতে বাধ্য হওয়াতে তাঁর পরিকল্পনা কিছুটা হলেও পিছিয়েছে। তার মধ্যে সরমা র বিয়ে! বাড়িতে এতো অতিথি! এখন তারা সবাই সরমার বিদায় পর্যন্ত থাকবেন। তাই এতো লোকের মাঝে উনি কিছু নতুন করে করার চেষ্টা করবেন না। তুমি বরং এদিকের কাজ কম্ম মিটে গেলেই করুণার বিয়ে নিয়ে বড়ো মার সঙ্গে কথা বলো।

স্বামী কে আশ্বস্ত করে বললো মৃণালিনী, সৌম্য যে খুব বেশি আশ্বস্ত হলো না, সেটা তার মুখ দেখেই মৃণালের মনে হচ্ছিলো,

তুমি এখানে কেনো এসেছিলে,বললে না তো?

একটু অন্য মনস্ক গলায় বললো সৌম্য, এতক্ষনে মৃণালের মনে পড়লো, ঘরে ঢুকে বিভিন্ন কথায় সে এখানে আসার আসল কারণ ভুলেই গিয়েছিল।

হ্যাঁ, যেকথা বলতে এসেছিলাম, বড়ো মার শরীরটা ভালো মনে হচ্ছে না, কিন্তু উনি কিছুতেই ঘরে যাচ্ছেন না, ওখানেই বসে আছেন। তুমি একটু গিয়ে বলো, তোমার কথা উনি শুনবেন।

সৌম্য উদ্বিগ্ন হলো, তাড়াতাড়ি মৃণালের সঙ্গে নিচে নেমে এলো। তখনও পারুল বালা চোখ বন্ধ রেখেই বসে ছিলেন, সৌম্য তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

বড়ো মা! তোমাকে দেখে সুস্থ মনে হচ্ছে না একটুও, তুমি নিজের ঘরে চল!

দেওর পো র গলা শুনে চোখ খুলে তাকালেন পারুল বালা, একটু নরম গলায় বললেন,

আমার কিচ্ছু হয় নে বাছা! তুমি নিজের কাজ করো।

না, আগে তুমি ঘরে চলো, তারপরে আমি অন্য কাজে যাবো,

একটু কড়া গলাতেই বললো সৌম্য, বাস্তবিকই বড়ো মার অসুস্থতা নিয়ে সে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলো। দেওর পো র গলার স্বরের পার্থক্য পারুল বালাও বুঝতে পারলেন বোধ হয় আর কোনো জেদাজেদিতে না গিয়েই যাবার জন্যে উঠে দাঁড়ালেন। তিনি উঠে দাঁড়াতেই সৌম্য এগিয়ে এলো, হাত সামনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে একটু কৌতুকের গলায় বললো,

এসো বড়ো মা , আমার হাত ধরো, আমি বাসি কাপড়ে নেই আজ!

হাসিতে ভরে উঠলো পারুল বালার মুখ, মুখে বললেন,

তুমি কলকেতায় বারো ভূতের বাড়িতে পড়ে থাকো বাছা, তোমার আর বাসি কাপড়! ওসব আমি কবেই ভুলেচি!

বড়ো মা কে তাঁর নিজের ঘরে পৌঁছে দিয়ে এসে বিয়ের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো সৌম্য, মৃণাল ও দালানে ফিরে গেলো। ওখানে তখন সরমা র গায়ে হলুদের পর্ব শুরু হয়েছে। বিমল এর নিজের বলতে তেমন কিছু ছিলো না, দু একজন দূর সম্পর্কের আত্মীয় স্বজন এবং বন্ধু বান্ধব, তারা সবাই সকালেই কলকাতা থেকে ট্রেনে উপস্থিত হয়েছে। এর পরে ট্রেন সেই সন্ধ্যে বেলায়, লগ্ন যথেষ্ট তাড়াতাড়ি হওয়ায় বিমল নিজেও দুপুরেই গাড়ি নিয়ে এসে পৌঁছে গেছে। বন্ধুরা যেহেতু সৌম্যরও বন্ধু, সেহেতু তারা সবাই পরিচিত, দোতলায় সৌম্যর ঘরে জমজমাট আড্ডা বসেছে।

দুপুরের খাওয়া দাওয়া মিটে যাবার পরে সরমা কে সাজাতে বসেছিলো মৃণাল, তার এতদিনের আনা সমস্ত সাজের উপকরণ এই প্রথম বার কোনো কাজে আসছে। গ্রামে ঘর থেকে বেরোনোর কোনো জায়গা না থাকায় এসব জিনিস তার আয়নার সামনে পড়েই থাকে, সেই বিভাকে একবার সাজানো ছাড়া আর কোনো কাজে আসেনি। সরমা কে সাজাতে সাজাতেই বিভা এসে পাশে বসলো, তাকে দেখে মনে মনেই একটু দুঃখিত হলো মৃণালিনী। বিভা যথেষ্টই বুদ্ধিমতি, নিজের প্রয়োজনেই সে বউ দিদির কাছে থেকে থেকে শিক্ষিত হবার চেষ্টা করছে খুব ভালো ভাবেই, দিনে দিনে সে মৃণালের প্রিয় ছাত্রী হয়ে উঠছিলো।

লগ্ন একদম সন্ধ্যে বেলায় ছিলো, হ্যাজাকের আলোয় শুরু হওয়া বিয়ের অনুষ্ঠান, খুব তাড়াতাড়িই সম্পন্ন হলো। সরমা এবং বিমলের খুশি ভরা মুখ সৌম্য এবং মৃণাল দুজনের মনেই যথেষ্টই খুশির সঞ্চার করছিলো। পারুল বালা অসুস্থ শরীর নিয়েই এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, মেয়ের বিয়ে এতো সহজে হয়ে যাওয়ায় তাঁর মুখে গর্বের ছাপ ফুটে উঠছিলো।

বিয়ে পর্ব মিটলো, পরের দিন সরমার বিদায়ের পরে চৌধুরী বাড়িতে নিস্তব্ধতা নেমে এলো। বিদায়ের সময় সরমার চোখের জল ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা সকলের চোখ ভিজিয়ে দিলেও পারুল বালা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।

ওসব কান্না বন্ধ করো বাছা! বিদায়ের সময় চোখের জলে অমঙ্গল হয়! তোমাকে কি তোমার বাপ হাত পা বেঁধে জলে ফেলে দিয়েচে নাকি! যাও মন দিয়ে সংসার করো!

সরমা চলে যাবার পরে জোরে বলার সাহস না থাকলেও আড়ালে আবডালে পারুল বালার নিন্দে মন্দ চলতে লাগলো। আজ নিজের মেয়ে হলে যে তিনি কখনই এইরকম কথা সরমা কে বলতে পারতেন না সেটা সবাই একবাক্যে মেনে নিলো। এমনকি তাঁর খাস লোক হারুর মাও এ ব্যাপারে একমত হলো।

মনোরমা সরমার বিয়ে নিয়ে খুব বেশি খুশি ছিলেন না, কিছুদিন আগের ছাদে করা পারুল বালার অপমান তিনি ভোলেন নি। কিন্তু তাঁর কোনো সহযোগী তিনি পাচ্ছিলেন না, বিভার মা তাঁর নিজের প্রয়োজনেই পারুল বালার কথা কে শিরোধার্য করে চলছিলেন। আজকের পারুল বালার বলা কথার সমালোচনা তাঁকে কিছুটা হলেও সুযোগ করে দিলো।

জ্যেঠি কখনো মা হয় শুনেছ! যতই মেয়ে মেয়ে করুক, নিজের মেয়ে আর দেওরের মেয়ে কখনো এক হয়নি বাপু! যার নিজের নেই সে আর পরের মেয়ের কদর বুঝবে কি করে!

মৃণাল ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো, তার আশা ছিলো কেউ না কেউ নিশ্চয়ই মনোরমা কে থামিয়ে দেবে। কিন্তু গ্রামে ঘরে মুখরোচক আলোচনা সহজে থামতে চায় না, সবাই চুপ করে মনোরমার কথা শুনছে দেখে শেষ পর্যন্ত মৃণাল মুখ খুললো,

কাকিমা, গলা ছেড়ে লোক দেখিয়ে কাঁদলেই কি আর ভালোবাসা দেখানো যায়! বড়ো মা যে সরমা কে নিজের মেয়েই ভাবেন সেটা বাইরের লোক না জানলেও আমরা বাড়ির সবাই জানি এবং বিশ্বাস করি। এখন বাড়িতে একটা শুভ অনুষ্ঠান চলছে, বাড়ির মেয়ে সবে বাড়ি ছেড়ে গিয়েছে, মন আমাদের সবারই খুব খারাপ। এই সময় এসব আলোচনা ভালো লাগছে না, গল্প করার বিষয়ের তো কোনো অভাব নেই বিয়ে বাড়িতে, আমরা না হয় সেসব নিয়েই গল্প করি।

কড়া গলায় বলা মৃণালের কথাগুলো সবাই কে কিছুক্ষনের জন্য থামিয়ে দিলো, এইসব গ্রাম্য রাজনীতি তে বিরক্ত মৃণাল তার বিরক্তি প্রকাশ করেই ওখান থেকে চলে গেলো। তার যাওয়ার পর সবাই নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো, এই বউ যে ভবিষ্যতে পারুল বালার জায়গা নিতে চলেছে সেই বিশ্বাস সকলের মনেই জন্মালো। হারুর মা তাড়াতাড়ি স্থান ত্যাগ করলো পাছে আবার বউমা কত্তা মা র কানে কিছু তুলে দেয় সেই ভয়েই সে ভীত হয়ে পড়লো।

দুপুরে খাওয়া দাওয়া মিটে যাবার পরে বাড়ির আত্মীয় স্বজনরা সবাই ওপরে উঠে গেলেন, মৃণাল বড়ো মা আর শাশুড়ির জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলো, কিন্তু অনেকক্ষন কেটে যাবার পরেও আজ কুমুদ বা পারুল বালা কেউই খেতে এলেন না।

কুমুদ সেই যে মেয়ের কনকাঞ্জলির পরে শয্যা নিয়েছিলেন, আর ওঠেনি নি। দুপুর পর্যন্ত কেউ খেতে এলেন না দেখে মৃণাল প্রথমে খাবার থালা হাতে বড়ো মার ঘরে এলো, কিন্তু তাঁর ঘরের দরজায় শেকল তোলা ছিলো, পারুল বালা সেখানে ছিলেন না। মৃণাল মনে মনেই চিন্তিত হচ্ছিলো, অসুস্থ শরীরে বড়ো মা কোথায় গেলেন ভাবতে ভাবতেই সে শাশুড়ির খাবার হাতে দোতলায় উঠে এলো। ভেজানো দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেই চমৎকৃত হলো মৃণাল, কুমুদ শুয়ে আছেন চোখের ওপরে হাত চাপা দিয়ে আর তাঁর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে স্বান্তনা দিচ্ছেন পারুল বালা, তাঁর দু চোখ জলে পরিপূর্ণ।

সকালের বলা মনোরমার কথাগুলো মনে পড়তে লাগলো তার, তারা যদি বড়ো মার এই রূপ নিজের চোখে দেখতে পেতেন! শক্ত আবরণে নিজেকে মুড়িয়ে রাখা পারুল বালার এই অন্য রকম রূপটি তাকে মুগ্ধ করছিলো।

বিমল এর বাড়িতে বৌভাতের অনুষ্ঠান করার মতো কেউ না থাকায় সেই পর্ব বাতিল করা হলো। আস্তে আস্তে আত্মীয় স্বজন বিদায় নিলেন, সৌম্য দিন কয়েকের ছুটি নিয়ে এসেছিলো, তাই ফাঁকা বাড়িতে সরমা চলে যাবার কষ্টটা কিছুটা হলেও লাঘব হচ্ছিলো।
ক্রমশ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here