#মেঘপরীর গল্প
লেখক — মাহমুদ
পর্ব — ৫
।
।
কেন ফিরে এসেছো তুমি?(তন্নি ফোনে কথা বলার সময় শুভ পেছন থেকে কথাটা বললো)
শুভর গলার আওয়াজ শুনে তন্নি পেছন ফিরলো আর শুভকে দেখে ফোনটা কেটে দিয়ে বললো।
-কিছু বললে?
-বললাম কেন ফিরে এসেছো আবার?
-কেন ফিরে এসছি মানে। আমি আমার নিজের মানুষদের কাছে আসতে পারি না বুঝি।
-চালাকি করার চেষ্টা করো না তন্নি। আমি খুব ভালো করেই জানি তুমি কেন ফিরে এসেছো।
-জানই যখন তখন আমায় জিজ্ঞাসা করছো কেন খামোখা।
-তুমি এখান থেকে চলে যাও।
-কেন ভয় পাচ্ছো বুঝি?
-ভয় আর তোমাকে। হাসালে।
-ভয় যখন পাচ্ছো না তখন আমায় চলে যেতে বলছো কেন?
-চলে যেতে বলছি কারণ তুমি যেই খেলাটা শুরু করতে চায়ছো সেটাই তুমি কখনো সফল হবে না। দ্বিতীয়বারর যাতে তোমায় সবার সামনে অপমানিত হতে না হয় তাই চলে যেতে বলছি।
-আমায় নিয়ে তোমায় এতো ভাবতে হবে না। তুমি বরং এটাই ভাবো কিভাবে আমার কাছ থেকে বাচবে। কারণ এবারের খেলাটাই আমিই জিতবো।
-কনফিডেন্স ভালো ওভার কনফিডেন্স নয়। কথাটা মাতায় রেখো।
-কনফিডেন্স বা ওভার কনফিডেন্স যেটাই হোক না কেন জিতবো তো আমিই মি. শুভ।
-গতবার এতো অপমানিত হয়েও তোমার লজ্জা হয়নি না,,,?
-সব সময় লজ্জা পেতে হয় না। নাহলে জীবনের কিছু জিনিস যেমন পাওয়া হয়নি তেমনি কিছু অন্যায় এর প্রতিবাদও করা যায় না।
-তার মানে তুমি খেলাটা শুরু করবেই তাই তো?
-হুম করবো।
-ওকে। কিন্তু একটা কথা মনে রেখো নাশু আমায় খুব ভালোবাসে আর বিশ্বাসও করে তাই তুমি আমাদের সম্পর্কে কোনো রকম ফাটল ধরাতে পারবে না।
-হাহ্ যার ভিত টাই আলগা সেটাতে ফাটল ধরাতে কি সময় লাগে মি. শুভ। আজ থেকে কোনো কিছু করার আগে এটা ভাবে যে তন্নি ফিরে এসেছে। আর এটা ভেবে একটু ভয় পেয়েও প্লিজ। তোমার ভয়ার্থ মুখটা দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। আজ যখন তুমি আমায় প্রতম দেখেছিলে তখন তোমার মুখটা দেখার মতে ছিলো। ভয়ে পুরো চুপসে গিয়েছিলো। আমার বেশ মজা লাগছিলো তোমায় দেখে।
ওদের কথা কাটাকাটির মধ্য নাশু চলে আসে
-কিরে তোরা দু’জন এখানে কি করছিস?(নাশু)
-না মা,,নে(শুভ কি বলবে বুজতে পারছে না)
-আসলে নাশু আমি শুভর কাছে ক্ষমা চাইছিলাম। সেদিন অন্যায়টাতো আমি শুভর উপরই করেছিলাম তাই সবার আগে আমার শুভ কাছেই ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। শুভ তুমি আমায় প্লিজ ক্ষমা করে দাও। আমি হাত জোর করে তোমার কাছে ক্ষমা চায়ছি।(তন্নি)
-ঠিক আছে। নাশু যখন তোমায় ক্ষমা করেছে তখন আমিও তোমায় ক্ষমা করে দিলাম।(শুভ)
-থ্যাংকস শুভ।(তন্নি)
-আচ্ছা অনেক হয়েছে এবার চল। ওদিকে সবাই আমাদের জন্য ওয়েট করছে।
তারপর ওরা সবাই আবার ক্যান্টিনে বসে অনেক সময় ধরে আড্ডা দিলো। আড্ডা শেষে সবাই চলে গেলো। শুভ নাশুকে পৌছায় দিতে চায়লে নাশু তন্নির সাথে যাবপ বলে শুভকে চলে যেতে বলে। এখন শুধু তন্নি আর নাশু রয়েছে।
-তন্নি চল। অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। আর কাকিমা তোকে দেখলে খুব খুশি হবে।
-নারে নাশু। আজ আমায় বাড়ি ফিরতেই হবে। আজ যেতে পারবো না। আর সামনেতো পরীক্ষা তাই থাকতে পারবো না। কিন্তু আমি কাল একবার কাকিমাদের বাড়িতে এসে সবার সাথে দেখা করে যাবো।
-ওহ্। আচ্ছা ঠিক আছে। সাবধানে যা আর কালে দেখা হবে। য়াওয়ার আগে তোর ফোন নাম্বারটা দিয়ে যা।
তন্নি ওর ফোন নাম্বারটা দিয়ে চলে গেলো। আর নাশু রিকশার জন্য ওয়েট করছে। ওহ আপনাদেরতো তন্নির পরিচয়টা ঠিক করে দেওয়াই হয়নি। তন্নি হলো মেঘ এর খালাতো বোন। নাশু যখন ক্লাস সিক্স এ পরে তখন তন্নি ওর খালাদের বাড়িতে মানে মেঘ বাড়িতে পড়ালেখা করার জন্য থাকতে আসে। তন্নির বাড়ি গ্রামে ওদের ওখানে লেখাপড়ার তেমন ভালো ব্যবস্থা নেই তাই অনু কাকিমা ওকে ওনাদের ওখানে রেখে লেখাপড়া করান। ওকে নাশু যেই স্কুলে পড়ে সেই স্কুলে ভর্তি করায়। তারপর থেকেই ওরা বেস্ট ফ্রেন্ড। তুবা, জয়া, নিয়ন, আর অনিক নাশুর ফ্রেন্ড থাকায় ওরা তন্নির সাথে ফ্রেন্ডসিফ করে। আর তারপর থেকেই ওরা ছয় জন খুব ভালো ফ্রেন্ড। ওদের এস এস সি পরীক্ষার পর তন্নির বাবা তন্নিকে ওদের এলাকার একটা কলেজে ভর্তি করিয়ে দেন। তাই তন্নি এখান থেকে চলে যায়। কিন্তু ওদের কারোর বন্ধুত্ব ভাঙ্গে না। সব সময় ওদের যোগাযোগ থাকতো তন্নি সমায় পেলেই মেঘদের বাড়িতে চলে আসতো সবার সাথে দেখা করতে। এভাবেই ওদের ইন্টার পরীক্ষা শেষ হয়। আর পরীক্ষা শেষ হওয়ার কিছু দিন পরই নাশুর বাবা মারা যায়। নাশুর বাবা মারা যাওয়ার কিছুদিন পর ওর আম্মু ওকে এডমিশনের জন্য একটা কোচিং এ ভর্তি করে দেয়। সেখানে তুবা, জয়া, নিয়ন আর অনিক ও ভর্তি হয়। আর ওই কোচিং এই শুভ সাথে ওদের পরিচয় হয়। শুভ খুব মিশুকে তাই খুব তাড়াতাড়িই ওর সাথে সবার ভালো বন্ধুত্ব হয়। আর এই বন্ধুত্ব থেকেই শুভর সাথে নাশুর প্রেম টা হয়ে যায়। কিন্তু ওদের মধ্য সমস্যা হয় তখনই যখন এডমিশনের মাত্র এক মাস আগে তন্নিও ওদের কোচিং এ ভর্তি হয়।
তন্নি কোচিং এ ভর্তি হওয়ার পর থেকেই দেখা যেতো ও প্রায় সব সময় শুভর দিকে তাকিয়ে থাকতো, ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করতো। শুভ একা কোথাও দাড়িয়ে থাকলে তন্নি সবার মাঝখান থেকে উঠে শুভর কাছে চলে যেতো। আর শুভ ওকে এড়িয়ে চলতো আর মাঝে মাঝে ওকে বকাবকি করতো। সবাই বুঝতে পারছিলো ওদের মধ্য কোনো সমস্য হচ্ছে। নাশু শুভর কাছে জানতে চাইলে শুভ নাশুকে বলে যে তন্নির হাবভাব ওর ভালো লাগছে না তন্নি হয়তো ওকে পছন্দ করে। নাশু শুভর কথা বিশ্বাস করে না কারণ তন্নি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড আর ও জানে যে নাশু শুভকে ভালোবাসে। তাই তন্নি এমন কিছু করতেই পারে না। আর নাশু শুভকে বোঝায় যে ওর বুঝতে কোথাও ভুল হচ্ছে। কিন্তু তন্নি নাশুর কাছে বার বার শুভর ব্যাপারে জানতে চায়তো। ওরা দুজন যখন একসাথে থাকতো তখন তন্নি শুধু শুভর কথায় বলতো যেটা নাশুকে অন্য কিছু ভাবাতে বাধ্য করে। একদিন শুভ নাশুকে তন্নির দেওয়া কিছু মেসেজ দেখায়। মেসেজগুলো এমন ছিলো
-শুভ আমি তোমায় খুব ভালোবাসি প্লিজ আমায় ফিরিয়ে দিও না। আমি তোমায় ছাড়া বাচতে পারবো না।
-শুভ তুমি আমায় এইভাবে এড়িয়ে যাচ্ছো কেন আমার তোমার সাথে অনেক কথা আছে। কিন্তু শেষ মেসেজ টা পড়ে নাশু খুব কষ্ট পায়। মেসেজটা ছিলো,,,
-শুভ নাশু অনেক সুন্দরী তাই তুমি ওর পিছে ঘুরছো আর আমি ওর মতো ওত সুন্দরী নয় বলে আমায় এইভাবে অপমান করে ফিরিয়ে দিলে। আমি মন থেকে এটা মেনে নিয়েছি যে আমি তোমায় কখনো পাবো না কিন্তু একটা কথা মনে রেখ নাশুর জীবন থেকে আমি তোমাকে সরাবই। তার জন্য আমায় যা করতে হয় আমি করবো। এই মেসেজটা পড়ে নাশু খুব কাদে আর ঠিক তার একটু পরেই তন্নি আসে নাশুর কাছে আর ওকে শুভর ব্যাপারে অনেক খারাপ খারাপ কথা বলে। শুভ নাকি নেশা করে, ওর নাকি অনেক মেয়ের সাথে রিলেশন আছে, ও নাকি তন্নিকে ইউজ করেছে এমন অনেক কথাই বলে তাও আবার সবার সামনে যার ফলে নাশু রেগে গিয়ে ওর গালে একটা চড় মারে আর অনেক অপমান করে। বেস্ট ফ্রেন্ড এর কাছ থেকে এমন বিশ্বাসঘাতকতা ও মেনে নিতে পারছিলো না। ও ভাতেই পারছিলো না যে তন্নি ওর সাথে এমনটা করতে পারে। ওতো খুব ভালো করেই জানতো যে নাশু শুভকে কতটা ভালোবাসে তারপরও নাশু আর শুভর মাঝে আসতে চাইছে। শুভর সম্পর্কে এতো বাজে বাজে কথা বলে ওদের সম্পর্ক নষ্ট করে দিতে চেয়েছে। ওই ঘটনার পর নাশু দুই-তিন দিন কারোর সাথে কথা বলে নি এমনকি শুভর সাথেও না। ওই দুই দিন খুব কান্না করে ও। পরে ওর খারাপ লাগে তন্নির গায়ে হাত তোলার জন্য। তন্নি যায় করুক না কেন ওর তন্নিকে সবার সামনে চড় মারাটা উচিত হয় নি। ওর ঠান্ডা মাথায় তন্নির সাথে কথা বলা উচিত ছিলো। এইসব ভেবে ও মেঘদের বাসায় যায় তন্নির সাথে কথা বলতে। কিন্তু মেঘদের বাসায় তন্নিকে পায় না অনু কাকিমার কাছ থেকে জানতে পারে তন্নি নাকি দু-দিন আগে কাউকে কিছু না বলে চলে গেছে। নাশু অনু কাকিমাকে তন্নির মায়ের কাছে কল দিয়ে জানতে বলে যে ও আবার কবে ফিরবে। কিন্তু তন্নির মা জানায় যে তন্নি গতকাল রাতে ঢাকায় চলে গেছে। আর একটা মেস এ উঠেছে। ফোন নাম্বার চাইলে বললো তন্নি নাকি মানা করেছে কাওকে ওর নাম্বার দিতে যদি তাও ওর মা কাওকে নাম্বার দেয় তাহলে ও আবার ওর ফোন নাম্বার চেন্জ করবে আর ওর পরিবারের কারোর সাথে আর যোগাযোগ রাখবে না। এই কথা শুনে নাশু খুব কান্নাকাটি করে কারণ ও জানে তন্নি ওর উপর রাগ করেই এইসব করছে। তন্নি হয়তো কখনো নাশুকে ক্ষমা করবে না। নাশু অনেক চেষ্টা করে তন্নির সাথে যোগাযোগ করার কিন্তু পারে না। কিছুদিন চেষ্টা করার পর নাশুও অভিমান করে ওর খোজ নেওয়া বন্ধ করে দেয়। আর আজ দুই বছর পর হঠাৎ করে তন্নি আবার ফিরে এসেছে।
নাশু বাড়ি ফিরে ওর মাকে আজকে কি কি হয়েছে সব বলে। তন্নি ফিরে আসাতে ওর মাও খুব খুশি হয়েছে। নাশু ওর মাকে নিষেধ করে অনু কাকিমাকে বলতে কারণ কাল ওরা কাকিমাকে সারপ্রাইজ দিতে চায়।
-ঠিক আছে দিস সারপ্রাইজ। এখন যা চেন্জ করে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নে।(মা)
-না মা। আমি এখন আর কিছু খাবো না। আজ অনেক কিছু খেয়েছি।(আমি)
-আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে ফ্রেশ হয়ে একটু বিশ্রাম নে।(মা)
-ওকে।
তারপর ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। আর সাথে সাথে ঘুম মামা এসে হাজির। সন্ধ্যায় কাদের চেঁচামিচিতে ঘুৃম ভেঙে গেলো। আর সাথে সাথে মাও আসলো। তার আমার হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বললো
-তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বাইরে আয়। সবাই এসে গেছে।(মা)
-কিন্তু মা। এখন আবার কি?
-তোর জন্মদিন উপলক্ষে বাড়িতে ছোট একটা অনুষ্ঠানের আয়জন করেছি।(মা)
-এসবের কি দরকার ছিলো মা?
-আরে তেমন কিছু না। শুধু আমাদের কিছু নিকট আত্বীয়দের দাওয়াত করেছি। তুই আর কোনো কথা বলিস না। যা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।
বলেই চলে গলো। আর আমি প্যাকেট খুললাম। লাল রং এর জরজেট কাপড়ের উপর গোল্ডেন রং এর স্টন বসানো একটা লেহেঙ্গা। খুব সুন্দর লাগছে। মায়ের চয়েস আছে বলতে হবে। আমি ফ্রেশ হয়ে লেহেঙ্গাটা পরে নিলাম। অনেক ভারী লেহেঙ্গাটা সামলাবো কি করে আল্লাহই জানে।
চলবে,,,,,,