মেঘভেলায় প্রেমচিঠি” পর্ব ৫

0
442

“মেঘভেলায় প্রেমচিঠি”

৫.

অন্ধকারে ঘেরা ঘরটায় ফ্লোরে পড়ে গোঙানির তীব্র শব্দে ফেটে চৌচির মেয়েটি। দুর্বল শরীরে করুণ আর্তনাদ করে ওঠে কন্ঠস্বর। কী বিভৎস রকমের দমবন্ধ আঁধার! শুঁকনো মরুভূমির ন্যায় গলাটা ঢোক গিলে একটু ভিজিয়ে নেয়। লাভ হয়না, দুইদিনের ক্ষুধার্ত পেট আর ক্লান্ত দেহে জ্ঞান যায় যায় তাঁর।
রুমের দরজাটা খুলে কেউ ভেতরে প্রবেশ করলো।
আলোর দিশারি ছুটে নিক্ষেপ হলো সঙ্গে সঙ্গে। এক রত্তি আলোয় তেমন কিছু দেখা যায় না। চোখ টেনে টেনে খুলে দেখার চেষ্টা করে মেয়েটি ৷ দরজাটা আবারও বন্ধ হয়, তিমিরে ডুবে যায় কক্ষ। দুই তিন সেকেন্ডের মাথায় শরীরে কারো ছোঁয়া অনুভব হয় তাঁর। আত্মচিৎকারে থমকে দাঁড়ালো, বৈরী হলো বাতাস। হঠাৎ আক্রমণে নিজেকে বাঁচাতে উদ্বীগ্ন হয়ে উঠলো মেয়েটি। সামনের ব্যাক্তির নোংরা দৃষ্টি আর হাসিটা ধীরে ধীরে আরও এগিয়ে আসছে।

চিৎকার দিয়ে ঘুম ভেঙে গেলো রোদসীর। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো, কী হচ্ছে আশেপাশে। চোখ কচলে নেয়। নাহ, কিছু হয়নি তাঁর। হাত পা ঠিক করে দেখে। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। বাসের লোকজন হা করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। অপ্রস্তুত হয়ে উঠে বাস থেকে নামে। আজ হাঁটতে ভালো লাগছিলো না বলে, সে বাসে করে বাসায় যাচ্ছিলো। কীভাবে যেন ঘুম এসে গেলো চোখে। জানালায় মাথা ঠেকাতেই চোখ আপনাআপনি লেগে আসে। তারপরই খারাপ একটা স্বপ্ন দেখে। ফস করে নিঃশ্বাস ফেলে রোদসী মনে মনে ভাবলো, ‘স্বপ্নটা কেনো আমার পিছু ছাড়ে না! না জানি আর কতদিন বয়ে বেড়াতে হবে এসব। ‘ কপালের ঘাম মুছে নিয়ে বিষাদে ভরা মুখটা নিয়ে বাসায় আসে। কিন্তু তৎক্ষনাৎ মুখের আদল পরিবর্তন হয়ে যায়। একি! বজ্জাত ছেলেটা তাঁর বাসায় কী করছে! ডাগর চোখে সন্দিগ্ধ হয় সে। তারপরই বুঝতে পারে নিশ্চয়ই ছেলেটা নিজেই কোনো কান্ড ঘটিয়েছে। রোদসী কানের পিঠে চুল গুঁজে জুতাজোড়া খুলে কোমরে হাত রেখে সোফার সামনে এসে দাঁড়ায়। শহর তখন গুণগুণ করে কেয়ার হাতের মিষ্টি দই খাচ্ছে। মিষ্টি জাতীয় জিনিস তাঁর অবশ্য খুব প্রিয়। সে আট দশটা রসগোল্লা এক বসাতেই শেষ করে দিতে সক্ষম। মিডিয়াম সাইজের শরীরটা দেখলে মোটেও তা আন্দাজ সম্ভব নয়। রোদসী প্রথমে খকখক করে হালকা কেশে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলো৷ কিন্তু শহর জনাব এতোটাই মগ্ন সে খেয়াল করেনি। রোদসী চট করে হাত থেকে বাটিটা টান দিয়ে নিতেই ভ্রু কুঞ্চন করে তাকায় শহর। মুখের পাশে লাগা দইটুকু মুছে উঠে দাঁড়ায়। রোদসী খোঁচা দিয়ে বলে,

‘সকালে একশো টাকা নিয়ে পেট ভরেনি, এখন এসেছেন আমার বাড়ির দই খেয়ে টাকা উসুল করতে!’

শহর মুখ ভেঙচিয়ে দিলো। নাক উঁচু করে বলল,

‘আমার সাইকেলে বসার মতো সৌভাগ্য যে তোমার হয়েছে, তাই তো বেশী! তাঁর জন্য এক হাজার টাকা দিলেও কম হবে। ‘

রোদসী আঙুল উঁচু করে কিছু বলতে নিলেই সেখানে কেয়া এসে দাঁড়ালেন৷ রোদসী আর শহরকে দেখে বললেন,

‘এই রোদি,তোর হাতে ওর বাটি কেনো? ছেলেটার কাছ থেকে কেঁড়ে নিয়েছিস তুই! ‘

ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো রোদসী। শহর ঠোঁট উল্টে নিষ্পাপ ভঙ্গিতে বলল,

‘আন্টি, ও বোধ হয় আমার আপনাদের বাসায় আসাটা পছন্দ করেনি। তাই খাবারটা এভাবে নিয়ে নিলো। আমি বরং আসি আন্টি। ‘

কেয়া উত্তেজিত হয়ে বললেন,

‘দাঁড়াও দাঁড়াও বাবা! তুমি বসো। এই রোদি, ছেলেটা তো আমার জন্যই এসেছে। ঘরের রিমোটটা কতদিন ধরে নষ্ট। তোরা সবাই তো বই মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকিস। আমি সারাদিন বসে কী করবো! ছেলেটা কত ভালো, বাসায় এসেই রিমোটটা ঠিক করে দিলো। লক্ষ্মী একটা ছেলে। এমন একটা ছেলে যদি আমার হতো! ‘

শহর মিটমিট হাসলো। প্রশংসায় পঞ্চমুখ কেয়া হোসেন। রোদসী বুঝতেই পারছে না, এমন একটা শয়তানকে কী করে কেউ ভালো বলে! কেয়া আরও বললেন,

‘শহর বাবা, দই মনে হয় একটু কম হয়ে গেছে। রোদি যা তো ফ্রিজ থেকে আরও দই এনে দে। আমার রান্না পুড়ে যাচ্ছে। ‘

রোদসী রাগে দুঃখে থম মেরে যায়। কোথায় তাঁকে বসিয়ে একটু পানি এনে দিবে। তা না, তাঁকে উল্টো অর্ডার দিচ্ছে। আবারও ধমক দিতেই রোদসী ক্ষিপ্ত হয়ে দই এনে শহরকে দেয়। কেয়া বকতে বকতে চলে যেতেই শহর গর্বে বুক ফুলিয়ে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বলে,

‘এই যে রোদচশমা! একটু পানি দিও তো। গলাটা বড্ড শুকিয়ে গেলোরে! ‘

রোদসী খোমা কালো করে বিরবির করে বলে,

‘ওরে পোলারে! জীবনে মনে হয় পানি খায়নি। ইচ্ছে তো করছে জন্মের মতো পানি খাইয়ে দেই। ‘

জোরজার করার মতো করে পানির গ্লাসটা ঠাস করে সামনে রেখে হনহনিয়ে রুমে চলে গেলো। বাহির থেকে আওয়াজ আসে, শহরের উচ্চশব্দের হাসির।

পরদিন ছাঁদ থেকে ঘুরে এসে ঘরে বসে বসে শরৎচন্দ্রের ‘শ্রীকান্ত’ বইটা পড়ছিলো। বইয়ের ভেতরে যখন সে নাকমুখ লাগিয়ে অপূর্ব শব্দের মাঝে বিলীন হচ্ছে তখন হঠাৎ-ই তাঁর রুমে আসেন দিলারা। রোদসী ভদ্রতাসূচক বইটা টেবিলে রেখে সালাম দিয়ে বসতে বলে। তিনি সন্তষ্ট চিত্তে হেঁসে পাশে বসলেন। রোদসী বুঝতে পারলো মায়ের সঙ্গে গল্প করছিলেন কিছুক্ষণ আগেই এসেছেন। আচমকা এক আবদার করে বসলেন,

‘রোদসী মা, তোমাকে একটা কথা বলতে এলাম। ‘

‘বলুন আন্টি। ‘

‘তুমি যদি আমার ছোট ছেলে শিশিরকে একটু সময় করে পড়াতে তাহলে খুশি হতাম৷ ‘

অপ্রস্তুত হয়ে তাকালো রোদসী। অন্য কিছু বলতে নিলেই পাশে কেয়া এসে বলেন,

‘এতো বলার কী আছে আপা! কাল থেকেই রোদি গিয়ে পড়িয়ে আসবে! ‘

রোদসী দিলারার আড়ালে করুণ দৃষ্টিতে তাকায় কেয়ার দিকে। তিনি কড়া চোখে তাকিয়ে শাসিয়ে দিলেন। দিলারা বেতনের কথা বলে বাসায় চলে গেলেন। রোদসী হতাশ চোখে তাকিয়ে রইলো। ঘর থেকে বের হওয়াই তো কষ্টের তাঁর কাছে! তাঁর উপর আবার বাড়িতে ওই শয়তান ছেলেটাও তো থাকে!

পরদিন শিশিরকে পড়ানোর জন্য উপরের ফ্ল্যাটটায় গিয়ে কলিং বেল চাপতেই একজন দরজা খুলল।কিন্তু রোদসী যা দেখলো তাতে হকচকিয়ে গেল সে।

চলবে –
লেখিকা-নাঈমা হোসেন রোদসী।

মন্তব্যে দেখে বুঝতে পারছি না,গল্প কী ভালো লাগছে না?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here