#মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু 🌸
#পর্ব- ১০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অন্ধকার নিস্তব্ধ কক্ষে বর্ণের তপ্ত ঘন ঘন নিঃশ্বাস উপচে পরছে অর্ষার কাঁধে। বর্ণ হাত বাড়িয়ে রং দিয়ে রাঙ্গিয়ে তুলে অর্ষার মুখশ্রী। অর্ষার হাতে নিজের হাত পুরে দেয়ালার সাথে মিশিয়ে, দেয়ালে তাদের রংয়ের হাতজোড়ার ছাপ দিয়ে দেয়। অর্ষার চুল উপচে পরছে বর্ণের মুখশ্রীতে। অর্ষা কি ভেবে হুট করে বর্ণকে সরিয়ে চলে যেতে নিলে, কোন কিছুর বাঁধা পেয়ে থেমে যায়। আখিজোড়া নাড়িয়ে সে দেখতে পায় তার লম্বা ঘন চুলের কিছু অংশ বর্ণের পাঞ্জাবির বুতামের সাথে ঝটলা পেঁকে রয়েছে। অর্ষা হাত দিয়ে ছাড়াতে নিলে, বর্ণ হাত দিয়ে বাঁধা দেয়। ভ্রু নাড়িয়ে মায়াবী ভাবে তাকিয়ে সুধোয়,
‘ আমি এবং আপনি একই সুত্রে গাঁথা মিস ঝাঁঝওয়ালী। আপনি চাইলেও এই বন্ধন হতে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবেন না। ‘
‘ কি চান আপনি? কি বলতে চান আপনি? ‘
কিছুটা হতাশা নিয়ে প্রশ্ন করে অর্ষা। অর্ষার প্রশ্নের বিপরীতে পাঞ্জাবির পকেটে হাত রেখে, অর্ষা চারপাশে ঘুড়তে ঘুড়তে হুট করে বর্ণ বলে উঠে,
‘ যদি বলি আপনাকে চাই আমি। দিবেন আমায়?’
অর্ষা বর্ণের কথা শুনে চমকে তাঁকায় বর্ণের দিকে। আখিজোড়া আবদ্ধ হয়ে উঠে ঘোর অন্ধকারে। ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে। অতীতে কোন এক প্রিয় মানুষটার মুখে কথাটি শুনেছিলো সে। আজ এতো বছর পর সেই স্বরে, সেই বাণী! সবকিছু গুলিয়ে ফেলছে অর্ষা। দুনিয়ার সকল কিছু বাদে সম্পূর্ণ বর্ণ কেন কথাটি তাকে বললো? অর্ষার হৃদস্পন্দন কেঁপে উঠলো এক অদ্ভুদ উত্তেজনায়। বর্ণ হয়তো অর্ষার মনের ভাব সম্পূর্ণ বুঝতে পারলো। তাই সামান্য হেসে বললো, ‘ আই ওয়াস জাস্ট কিডিং মিস ঝাঁঝওয়ালী। ডোন্ট বি সিরিয়াস ওকে? ‘
‘ আপনি বড্ড হেয়ালী করেন বর্ণ আহমেদ। রহস্যের বেড়াজালে আমার অন্তরটাকে প্রতিনিয়ত দগ্ধ করে তুলছেন আপনি। ‘
অর্ষা নিম্ন সুরে বর্ণকে উদ্দেশ্য করে বলে, প্রতিউত্তরে বর্ণ অর্ষার দিকে হাত বাড়িয়ে অর্ষার চুলের খোঁপা করার সেই ক্লিপটি ধরিয়ে দিয়ে বলে,
‘ চুল বেঁধে নিন, আপনাকে খোলা চুলে বড্ড সুন্দর লাগে। আপনার প্রেমে পরা এক ধরণের পাপ। সেই পাপ অন্য কেউ করুক আমি চাই না। ‘
অর্ষা রাগ দেখিয়ে ক্লিপ খানা নিয়ে, কোমড়ে হাত রেখে বলে, ‘ আমার মতো ছেলে-মেয়ের মানুষের প্রেমে আদোও কেউ পরতে পারে? যেখানে এলাকার ছেলেরা আমার ভয়ে নিঃশ্বাস অব্দি আটকে রাখে, সেখানে আমার প্রেমে নাকি কেউ পরবে! হাহ! সে নিশ্চিত পাগল। ‘
কিছুটা তাচ্ছিল্যের সুরেই বলে অর্ষা।
‘ তবে বোধহয় আমি তোমার এক পাগল প্রেমিকা প্রেয়সী। যে তোমার অপেক্ষায় জীবন শেষ অব্দি অপেক্ষা করে যাচ্ছি। কি সুন্দর না? ‘
বর্ণের কথার বিপরীতে একপ্রকার বিষম খেয়ে প্রশ্ন করে অর্ষা,
‘ কি সুন্দর? ‘
‘ হুট করে লাইন গুলো মাথায় চলে এলো, তাই বলে ফেললাম। তাছাড়া আর কিছুই না। আমি বরং যাই। সকলে খেলছে। আপনি তো রং খেলে ভুত হয়ে গিয়েছেনই, আপনিও চলুন এখন। ‘
বর্ণ অর্ষার হাত ধরে একপ্রকার বাইরে নিয়ে আসে। অরু রোজিয়ানাকে নিয়ে, নিজের রংখেলায় ব্যস্ত ছিলো। বর্ণ এবং অর্ষাকে একসাথে দেখে, অরু রোজিয়ানাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ ওইতো বর্ণ ভাইয়া! অর্ষা আপুর সাথে। ‘
বর্ণকে দেখেই রোজিয়ানা এবং অরু তাদের কাছে চলে আসে। বর্ণ অর্ষার হাত ধরে আছে দেখে, রোজিয়ানা বর্ণের হাত ধরে আবদারের সুরে বলে,
‘ তুই এখানে? এদিকে আমি তোকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। চল সকলে রং খেলছে। তুই ও চল আমার সাথে। ‘
রোজিয়ানা বর্ণের হাত ধরায়, অর্ষা নিজের হাত ছাড়ানোর প্রচেষ্টা করতে থাকে, কিন্তু বর্ণ তার হাত না ছেড়ে, রোজিয়ানার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে,
‘ তুই অরুদের সাথে রং খেল। আমার অন্য কাজ রয়েছে। ‘
‘ কি কাজ এখন তোর আবার? যে আমাকে টাইম দিতে পারছিস না তুই। ‘
মন খারাপের সুরে বলে রোজিয়ানা। অরু তা দেখে মুখ ভেংচি কেটে, ধীর কন্ঠে বলে উঠে,
‘ মেয়েটার ন্যাকামির শেষ নেই বাপু। ন্যাকি একটা। ‘
‘ আরে রোজিয়ানা মা তুমি এখানে? ‘
বর্ণ পিছনে ঘুড়ে দেখে তা মা, আরফানের মায়ের সাথে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রোজিয়ানা বর্ণের মায়ের কাছে গিয়ে বর্ণের মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘ কেমন আছেন আন্টি? ‘
‘ আমি তো খুব ভালো রয়েছি। আগে তো বর্ণের ফোন থেকে প্রায় আমার সাথে কথা বলতে, এখন তো ফোনই দাওনা। ‘
রোজিয়ানা বর্ণের দিকে তাকিয়ে আফসোসের সুরে বলে, ‘ আর কি বলবো আন্টি? এই দুই বন্ধু দেশে এসে, আমাকে ভুলেই গেছে। আরফান যে কিনা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তার বিয়ের দাওয়াত অব্দি আমাকে দেইনি। সে তো আমি এসে নিজ থেকে বিয়েতে আনইনভাইটেড গেস্ট হয়ে এন্ট্রি নিয়েছি। ‘
আরফানের মা রোজিয়ানার গালে হাত রেখে বলে,
‘ একদম ঠিক করেছো মা তুমি। আরফানকে এর জন্যে আমি দেখো কি করি। তোমাকে তো আমিও অনেক আগে থেকে চিনি, অথচ তোমাকেই দাওয়াত দিলো না। আচ্ছা বর্ণ বাবা শুনো? ‘
আরফানের মায়ের ডাক শুনে বর্ণের থেকে একপ্রকার জোড় করেই হাত ছাড়িয়ে নিলো অর্ষা। বর্ণ আরফানের মায়ের কাছে যেতেই, তিনি বললেন,
‘ তুমি কিন্তু বাবা রোজিয়ানার খেয়াল রাখবে। এত্তো দূর থেকে মেয়েটা এসেছে। ‘
আরফানের মায়ের কথার বিপরীতে রোজিয়ানা গিয়ে, বর্ণের গলা একপ্রকার জড়িয়ে ধরে জবাব দেয়, ‘ ডোন্ট ওয়ারী আন্টি বর্ণ আমার অনেক ভালো করে খেয়াল রাখবে। কি বলিস বর্ণ? ‘
বর্ণ বিরক্তিরসহিত রোজিয়ানাকে ছাড়িয়ে নিয়ে, পিছনে তাঁকাতেই দেখে অর্ষা উপস্হিত নেই। কোথায় গেলো সে? অপরদিকে রোজিয়ানাকে স্টেজ থেকে লক্ষ্য করে যাচ্ছে আরফান। রোজিয়ানার মতলব কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না। পাশ থেকে মিরা আরফানের গলার দিকে হুট করে প্রশ্ন করে উঠে, ‘ তোমার গলায় কিসের দাগ আরফান? ‘
মিরার প্রশ্ন শুনে চমকে উঠে আরফান। গতকাল রাতে অর্ষা তার গলা চে/পে ধরায় অর্ষার নখের
আ/চ পরে গিয়েছে তাতে৷ আরফান নিজের গলার দাগটুকু বৃথা চেষ্টা করে বলে, ‘ তেমন কিছু না। আসলে। ‘
মিরা আরফানের গলার দিকে তাকিয়ে, গলার হাত দিয়ে, ক্ষিপ্ত সুরে বলে, ‘ তোমার গলা দেখে মনে হচ্ছে, কেউ খুব আদরের সাথে খা/মচি মেরেছে গলায়। ‘
‘ কি বলছো কি তুমি মিরা? ‘
বিরক্তি সাথে সহিত প্রশ্ন করে আরফান। মিরা তার মুখশ্র ঘুড়িয়ে ফেলে। নেত্রপল্লবে অশ্রু ধরা দিচ্ছে, কালকে রাতে সে অর্ষাকে শেষবারের মতো আরফানের কক্ষে দেখেছিলো, তবে কি অর্ষা? না না। অর্ষা এমন কেন করবে? সে তো তার বোন হয়। নিজেকে নিজেই শান্তনা দিয়ে নিষ্চুপ রাখে মিরা।
_______________
আরফান রং খেলা উৎসব শেষে, নিজের রুমে এসে একটি চিরকুট হাতে পায়। তা সে হাতে নিয়ে দেখে তাতে লেখা, ‘ এখুনি ভয়ে পালিয়ে যাও আরফান। নাহলে কালকে বিয়ের আসরে মুখ লুকিয়ে পালাতে হবে তোমাকে। ‘
চিরকুট টা দেখে ভয়ে ঢুগ গিলে সে। আয়নার পাশে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে, সঙ্গে সঙ্গে পাশ ফিরে তাঁকায় সে। রোজিয়ানাকে দেখে ভয়ের সহিত চিরকুট দেখিয়ে বলে, ‘ তুমি এই ঘরে কি করছো? এই চিরকুট কি তুমি লিখেছো? ‘
রোজিয়ানা আরফানের কাধে হাত রেখে, আরফানের ললাটে জুড়ে ঘামটুকু মুছে বলে,
‘ চিল বেবী! জাস্ট কুল! আমি এই চিরকুট কেন লিখতে যাবো? হ্যা তুমি আমাকে চিট করেছো, সো হোয়াট? তুমি বিয়ে করে নিচ্ছো, বাট বর্ণ তো আছে। ওর থেকে পাত্তা না পেয়েই তো, তোমার৷ সাথে রিলেশনে গিয়েছিলাম। সো চিল। তুমি নিশ্চিন্তে বিয়ে করতে পারো। ‘
আরফান কিছু বলার পূর্বেই…….
লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি
চলবে কি?
[ আপ্নারা বড় পর্ব চান, অথচ ঘটনমূলক কমেন্ট করতে পারেন না😅!]