#মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু 🌸
#পর্ব- ১১
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রোজিয়ানা আরফানের কাঁধে নিজের হাত রেখে, আরফানের দিকে ঝুঁকে যায়, সে কিছু বলার পূর্বেই, বর্ণ এসে আরফানের কক্ষে উপস্হিত বর্নকে দেখে আরফান রোজিয়ানাকে নিজের থেকে সরাতে চাইলে, রোজিয়ানা আরফানকে না ছেড়ে বরং আরফানের শার্টের বুতাম লাগাতে লাগাতে, বর্ণকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ তুই এসেছিস বর্ণ? আমরা এতোক্ষন তোকে নিয়েই কথা বলছিলাম। যাক গে ভালোই হলো তুই এসেছিস। ‘
বর্ণ ভ্রু কুচকে তাঁকায় রোজিয়ানার দিকে। রোজিয়ানা রহস্যময় হাঁসি হেসে আরফানকে ছেড়ে বর্ণের দিকে এগোতে এগোতে বলে,
‘ এখন তো আমাকে পাত্তা দে বর্ণ। দেখ আরফানের বিয়ে হয়ে যাবে কালকে। আমি একদম সিংগাল হয়ে যাবো। এখন তুই একমাত্র ভরসা আমার। একটু তো আমার দিকে তাঁকা। ‘
বর্ণের প্রচন্ড বিরক্ত হয় রোজিয়ানার উপর। হাত বাড়িয়ে রোজিয়ানার হাত ধরে, আরফানের কক্ষের বাইরে সদর দরজার কাছে দাঁড় করিয়ে বলে,
‘ জাস্ট স্টপ ইউ নোনসেস্স! কিসব কথা বলছিস? একদম মাথা গরম করাবি না তুই। এখন তুই যা এখান থেকে। আমাদের ইম্পোর্টেন্ট কথা আছে। ‘
কথাটি বলেই রোজিয়ানার মুখ বরাবর দরজা বন্ধ করে দিলো সে। রোজিয়ানা এতে অপমান বোধ করে ধপ ধপ পায়ে সিড়ি বেয়ে নীচে নেমে গেলো।
আরফান বর্ণকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ কিসের জরুরী কথা বলবি? বল এখন। ‘
বর্ণ অধরের কোণে স্মিত হাসি ফুটিয়ে পাঞ্জাবির কলার ঠিক করতে করতে, আরফানের গলার দিকে তাকিয়ে, কিছুটা অবাক হয়ে বলে, ‘ গলায় খুব লেগেছে না? তুই তো খুঁড়িয়েও হাটছিস। মনে হচ্ছে কেউ তোর পুরো বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। ‘
বর্ণের কথা শুনে আরফান সোফায় বসে,নিম্ন গলায় তেজি সুরে বলে, ‘ কি বলতে চাচ্ছিস তুই? ‘
‘ কিছুই না।’
আরফানের কি হলো কে জানে, সে হঠাৎ করে প্রশ্ন করে বসলো, ‘ আচ্ছা তুই বাংলাদেশে কি শুধু নিজের পাপার বিসনেজ সামলাতে এসেছিস, নাকি তোর কোন উদ্দেশ্য রয়েছে। ‘
সঙ্গে সঙ্গে আরফানের পিঠে চা/পড় মে/রে বর্ণ আরফানের পাশে বসে বলে, ‘ একদম ঠিক ধরেছিস, অতীতের বেশ হিসাব বাকি রয়ে গেছে। অতীতে হারিয়ে যাওয়া কোন প্রিয়জনকে ফিরে পেতেই, দেশে ফিরে আসা। ‘
আরফান বিস্ফরক দৃষ্টিতে আশে পাশে তাঁকালো। বর্ণের ধোঁয়াশাময় কথা, অনেক কিছুকে ইংগিত করে। আরফান মিনমিনিয়ে সুরে বলে, ‘ মেয়েটাতো তোকে ধোঁকা দিয়েছে, তাহলে কেন তাকে পুনরায় খুঁজার চেষ্টা করছিস? যা হওয়ার হয়েছে বাদ দে। পাঁচটে বছর কেটে গিয়েছে। এখনো সেসব নিয়ে পরে থাকিস না। ‘
‘ তোর কথা শুনে এখন তো অতীতকে। আমার আরো ঘাটতে ইচ্ছে করছে। হতেও তো পারে কেঁচো খুড়তে গিয়ে সাপ বেড়িয়ে পরলো। ‘
বর্ণ ঘাড় বেকিয়ে অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথাটি বললো। আরফান ঘাবড়ে গেলো। বর্ণ হুট করে হেসে উঠলো পুনরায়। একপ্রকার ঘর কাঁপিয়ে হাঁসলো। আরফানের কাঁধে চাপড় মেরে, তাকে নিশ্চিত করতে বললো, ‘ কালকে তোর বিয়ে ইয়ার৷ প্যারা নিস না। চিল কর। আজকে ব্যাচেলার পার্টি আছে মনে আছে তো? ‘
আরফান দ্রুত মাথা নাড়ায়। বর্ণ তার ফোন ঘাটতে ঘাটতে বলে, ‘ আমার অফিসে আজকে একটা জরুরী মিটিং রয়েছে। মিটিং টা এটেন্ড করে, আমি তোদের সাথে জয়েন করবো। কেমন? তুই রেডি হয়ে থাকিস। ‘
আরফান ‘হ্যা ‘ সূচক জবাব দেয়। বর্ণ দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে যায়। আরফান পরে যায় দুশ্চিন্তায়। বিড়বিড়িয়ে আওড়াতে থাকে, ‘ না, না। বর্ণ অতীত ঘাটলে তো আমি ফিনিশড হয়ে যাবো।’
আরফান তার কাঁধ হেলিয়ে দেয় সোফায়। কাউকে না জানিয়েই, নিজের বাড়ি এসে পড়েছে অর্ষা। তার কেন যেন বর্ণের পাশে রোজিয়ানাকে অসহ্য রকম বিরক্তিকর লাগছিলো। অর্ষা মনে পড়ে যায় কিছুক্ষন আগের কথা। রোজিয়ানা বর্ণকে জোড় করে, নিজের ছবি তুলাচ্ছিলো। তার পাশেই আরফানের মা এবং বর্ণের মা দাঁড়িয়ে ছিলেন। বর্ণের মা খুশি হয়ে আরফানের মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ রোজিয়ানা বিদেশেনি হলেও, বড্ড মিশুকে। আমার কিন্তু বড্ড ভালো লাগে মেয়েটাকে। ‘
‘ তুমি কি তাকে তোমার ছেলের বউ করার কথা ভাবছো নাকি? ‘
আরফানের মায়ের উত্তরে, বর্ণের মা তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলে, ‘ ইচ্ছে তো রয়েছে, কিন্তু আমার ছেলে যা হয়েছে বাপু! বিয়ের কথা শুনলেই নাক ছিটকে যায়।
কিন্তু আমিও এইবার পর্ণ করে রেখেছি বাপু। আরফানের বিয়েটা ভালোই ভালোই হয়ে গেলে, বর্ণকে জোড় করে হোক কিংবা ইমোশোনাল ব্ল্যাকমেইল করে হলেও বিয়ের আসরে বসাবো। ‘
‘ তোমার ইচ্ছে যেন তাড়াতাড়ি পূরণ হয়। ‘
বলেই সৌজন্যপূর্ন হাসি দিলেন আরফানের মা। তাদের কথোপকথন শুনে কেন যেন সেখানে থাকতে ইচ্ছে হলো না অর্ষা। অর্ষা তার রুমে এসে শুয়ে পরলো, ক্লান্তিতে আখিজোড়া কেমন যেন বুজে আসছে তার। মুখে হাত দিয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলো। আজকের অনুষ্টানে তার বাবা- মাও ছিলো, তাদের একপ্রকার এড়িয়েই বাড়িতে চলে এসেছে অর্ষা। তারা এখনো আসেনি। ফোনে টুংটাং মেসেজ আসলো তার কাছে। যথেষ্ট ঘুম থাকা সত্ত্বেও সে মেসেজ চেক করলো। মিরার মেসেজ সে যেন আজ রাতে ব্যাচালার পার্টিতে চলে আসে সময়মতো। না চাইতেও ক্ষীন্ন হাঁসলো সে।
______________
মাথায় ক্যাপ পরে নিজের দলের ছেলেদের নিয়ে রাস্তার এক ধারে বসে পানির বোতল হাতে নিয়ে পান করে যাচ্ছে। রাস্তার এক ধারে কিছু লোক একজন বৃদ্ধ লোককে এক নাগাড়ে মে/রে যাচ্ছে। অর্ষা উঠে গিয়ে বলে, ‘ লোকটাকে সকলে মিলে মা/রছে কেন?’
প্রতিউত্তর তার দলের এক ছেলে সাজিদ উত্তর দেয়,
‘ বৃদ্ধ লোক, ছেলে-মেয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। ক্ষুধার জ্বালায় এক মুদি দোকান থেকে এক পিচ রুটি চুরি করেছিলো, তা নিয়ে কখন থেকে মে/রে যাচ্ছে লোকটাকে। ‘
অর্ষা অস্হিরতার সহিত বললো, ‘ না, না। এইভাবে লোকটাকে মা/রতে দেওয়া যাবে না। তোরা থাক আমি এখুনি আসছি। ‘
রনি হাত ঝাডা মে/রে তাড়া নিয়ে বলে, ‘ কিন্তু আমাদের এখন কাউন্সিলারের কাছে একবার যেতে হবে। এমনিতেই অনেক লেট হয়ে গেছে অর্ষা। ‘
অর্ষা কি আদোও তাদের কথা শুনলো? উহু একদমই নয়। সে এগিয়ে গেলো তাদের কাছে। অপরদিকে বর্ণ তার ব্লেজার হাতে নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। তার পাশে দুজন সেক্রিটারি। একজন দেহরক্ষী এসে, বর্ণের গাড়ির দরজা খুলে দিলো। বর্ণ গাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেও গিয়ে গেলো না। দূরের টং দোকানে ঝামালা হচ্ছে দেখে, সে নিজেও এগিয়ে গেলো। অর্ষা সেখানে গিয়ে সকলকে থামিয়ে, চেচিয়ে বলে, ‘ হচ্ছে টা কি এখানে? একজন বৃদ্ধ মানুষকে এইভাবে মে/রে নিজেদের ক্ষমতা দাপট দেখাতে চাইছেন? আসুন পারলে আমার সাথে আসুন। দেখি আপনাদের কত ক্ষমতা। ‘
অর্ষাকে দেখে সকলে থেমে গেলো। একজন লোক পাশ থেকে বললো, ‘ এতো জর্জ সাহেবের মেয়ে। ‘
অর্ষা সঙ্গে সঙ্গে তেড়ে গিয়ে, তার দিকে আঙ্গুল উচিয়ে বললো, ‘ আমি অর্ষা রেজওয়ান। এইটাই আমার পরিচয়। আমার পরিচয় আমি নিজেই। কোন জর্জ সাহেবের মেয়ে নই আমি। ‘
অর্ষার কথায় লোকটি দমে গেলো। অর্ষা ঘুড়ে সকলের উদ্দেশ্য কড়া গলায় বললো, ‘ আপনাদের মধ্যে আদোও মনুষ্যত্ব রয়েছে? লোকটার পেটের খুদায় একটা রুটি চুরি করেছে বলে, আপ্নারা এইভাবে তাকে মা/রবেন? ক্ষুদার কষ্টা কতটা ভ/য়ংকর আপনারা জানেন? ম/রে গেলে তো সব কষ্ট একেবারেই শেষ হয়ে যায়, কিন্তু ক্ষুধার জ্বা/লা নিয়ে বেঁচে থাকাটা কতটা ভয়ংকর! কল্পনা করতে পারেন আপনারা? তার মধ্যেএই বৃদ্ধ লোকটা নিজের সবটুকু নিজের সন্তানদের দিয়ে বড় করেছে, আজ তারাই তাকে পথে বসিয়ে দিলো। তাদের বিশাল অট্টলিকায় ছোট্ট এক জায়গাতেও লোকটার ঠায় হলো না। আর আপনাকে তাকে সামান্য এক রুটির জন্যে মে/রে যাচ্ছেন। ছিহ! সেম অন ইউ গাইস। ‘
অর্ষার কথা শুনে সকলে মাথা নিচু করে ফেলে। অর্ষার রাগ টগবগ করে যাচ্ছে। বৃদ্ধ লোকটা মাথা নিচু করে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে। অর্ষা লোকটার কাছে গিয়ে, আখিজোড়ার অস্রু মুছিয়ে বলে,
‘ একটুও কাঁদবেন না, আপনি। রনি? ‘
অর্ষার ডাক শুনে রনি গলা উচিয়ে বলে, ‘হ্যা অর্ষা বল। ‘
‘ তুই উনাকে হসপিটালে নিয়ে ট্রিটমেন্ট করা, এবং আমাদের সেই পরিচিত আশ্রমে থাকার সব ব্যবস্হা করে দিবি। ‘
রনি মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘ সব হয়ে যাবে। প্যারা নিস না।’
বৃদ্ধ লোকটি অর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘ সত্যি তুমি অনেক ভালে মা। সুখি হও মা। দোয়া করি। দুনিয়ার সব সুখ মহান আল্লাহ তায়ালা তোমাকে দেখ। ‘
লোকটির কথায় অর্ষা মিষ্টি করে হাঁসে। অতঃপর সকলের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ ড্রামা দেখা শেষ? এখন যেতে পারেন সকলে। ‘
সকলে আস্তে ধীরে চলে যেতে থাকে। রনির সাথে লোকটিও চলে যায়। অর্ষা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনের দিকে তাঁকাতেই, কেউ তার দিকে পানির বোতল এগিয়ে দেয়। অর্ষা তাকিয়ে দেখে বর্ণ। বর্ণ মিষ্টি হেসে বলে, ‘ বহুত ভাষন দিয়েছেন। এখন পানি টুকু পান করুন। বড্ড ক্লান্ত দেখাচ্ছে আপনাকে। ‘
অর্ষা আগ বাড়িয়ে পানির বোতল নিলো। বর্ণ টিস্যু বের করে, অর্ষার ললাটে জুড়ে থাকা ঘামটুকু মুছে বললো, ‘ মিস ঝাঁঝওয়ালী আপনি বড্ড অদ্ভুদ রমনী। আপনার প্রতি নানাভাবে নিত্যদিন মুগ্ধ হওয়া যায়। আমার বড্ড ইচ্ছে করে, দুনিয়ার সকল সুখ আপনার কাছে এনে দিতে। ‘
_______চলবে কি?
[কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু🖤]
লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি