মেঘের আড়ালে চাঁদ পর্ব:১

0
1460

আমার নতুন রহস্য গল্প

মেঘের আড়ালে চাঁদ

বাড়ির পিছনে বড় একটা আমড়া গাছ আছে, শীতে পুরো গাছের পাতা ঝরে গেছে, ঐ ঝরা পাতা শীতের রোদ আর শুষ্কতায় শুকিয়ে গেছে, ওদিক দিয়ে কেউ আমার বাড়ি এলে এই পাতা মাড়িয়ে আসতে হবে, বিড়াল বা শেয়াল না ভারী কেউ বা কিছু রোজ রাতে আসে, তিন দিন হল, বা তার বেশি ও হতে পারে, আমি রাত জেগে লিখি, কানে হেডফোন গুজে, কিন্তু আমার ব্লুটুথ হেডফোনে সেরাতে চার্জ শেষ বিকেলে চার্জ দিতে মনে নেই, আমি সাধারণত ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমাই। দুপুর একটা, দুটোয় উঠে পড়ি, এক কাপ চা নিয়ে আবার ল্যাপটপ খুলে বসি, তিনটে, চারটের দিকে যখন পেটে ছুচো বুক ডন দেয়, রান্নাঘরে একান্ত অনিচ্ছায় যাই, ম্যাগি সেদ্ধ করে তাতে একটা ডিম ছেড়ে দেই, ব্যাস হয়ে গেল আমার মেইন মিল, বিকেলে নুডলস খাই , তখন হঠাৎ মনে পড়ে, বিধাতা কে ডাকার সময় পার হচ্ছে, দ্রুত নামাজে দাড়াই, তাঁর কাছে আমার এত এত চাওয়া….. আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, তিনি কি আমার প্রার্থনা শুনে হাসেন ?
অনবরত কফি চলছে, আমার লেখার গতি এখন বেশ দ্রুত, টানা বারোটা বেস্ট সেলার বই লিখে আজ আমার একটা লাইন লিখতে এতবার ব্যাক স্পেস কেন দিতে হয়? প্রতি বইমেলায় একটা করে বই, গত বারো বছর ধরে পাঠকের আকর্ষণ মৃত্তিকা মাহমুদ, যাকে ঘরের লোকেরা মিতু ডাকে, তার আজ এত কঠিন রাইটার্স ব্লক কেন হল? মা অবশ্য বলে তোর অতীতের ব্যথা তোকে লেখার রসদ যোগাতো, কিন্তু সেই ব্যথা আজ অনেকটা প্রশমিত, শিশিরের সাথে কাটানো দুটো বছর আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়, তাই বলে আমি শিশিরকে ভুলে গেছি? এটা বলতে চায় মা? ল্যাপটপ সরিয়ে, ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে আসি, আমার ঘরটা পিছনে, ঘরের সামনে বিশাল ডাইনিং প্লাস, ড্রইং হল, তার বিপরীতে আরেকটা ঘর, ঢাকা রংপুর হাইওয়েতে এমন একটা বাড়ি করার কথা কারো মাথায় আসতে পারে এ আমার ধারণার বাইরে, একেবারে হাইওয়ে লাগোয়া না, সামান্য ভিতরে, তাও, মালিককে খুব বেশি কবি কবি ভাব মনে হয়নি আমার, কিন্তু তিনি ভীষণ সন্দেহ বাতিক, এটুকু বুঝেছি, এখানে আমায় কেউ চেনেনা, রোমান্টিক থ্রিলার লেখিকা মৃত্তিকার এখানে তেমন কোন পরিচয় নেই,
বিধবা, বাচ্চা নেই, একটা অসহায় মহিলা! এটাই এই সমাজে আমার পরিচয়, বাড়ির মালিক মনোয়ার সাহেব প্রথম দিন না চিনলেও পরের দিন চিনেছেন, জিজ্ঞেস করলেন লেখার রসদ খুজতে এলে এ বাড়ি আমায় এত কিছু দেবে যে আমি লিখে শেষ করতে পারব না। কিন্তু বিস্তারিত কিছু বললেন না, উনার একটাই শর্ত একা থাকা যাবে না, বাড়ি যথেষ্ট সুরক্ষিত, দারোয়ান আছে, যার বেতন হয় এই ভাড়ার টাকায়, পরিবার থাকলে দারোয়ানের খাওয়ার ব্যবস্থা আমাকেই করতে হত, পরিবার নেই তাই দারোয়ানের বৌ উল্টো এসে মাঝে মাঝে আচার, ভর্তা করে আনে, সেদিন বাসায় গরম ভাত রান্না হয়, তিন জন পেট ভরে খাই, কিন্তু মেয়েটা কদিন আর আসতে পারছে না, গর্ভবতী ছিল, এতদিনে বাচ্চা হয়ে যাওয়ার কথা, কিন্তু তারিক আসেনি এখনো, তার মানে হয়তো কোন সমস্যা, যদিও আমি বারবার বলেছি, টাকা বা অন্য সাহায্য লাগলে, আমার নিজের তো কল করা উচিত ছিল, ফোন হাতে নিয়ে দেখি ব্যাটারি ডাউন, চার্জে বসালাম, ভাবলাম ছাদে ঘুরে আসি, এখানে এসে মাত্র একবার গেছি, সিড়ির হাতলে ধুলো, আমার হাতের ছাপ বসে গেল ,চাবি দেয়ালে ঝুলিয়েছে তারিক, আমি খুলে নিলাম, তালায় তেল দেয়া,পুরনো তালা কিন্তু চট করে খুলে গেল, তারিকের কিছু কাজ খুব ভালো লাগে, ছাদে উঠে দেখি বেশিরভাগ গাছের পাতা ঝরে গেছে, কিছু গাছে রুগ্ন, ধুলো মাখা শুষ্ক পাতা, আমি কল্পনা করার চেষ্টা করি, বৃষ্টি পড়ছে, মাটিতে বৃষ্টির ফোটায় ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধে মন মাতানো পরিবেশ, গাছে গাছে সবুজ কচি পাতা, আমার হাতে চায়ের কাপ, কোলে ল্যাপটপ, ছোট একটা দোলনায় দুলে দুলে লিখছি, আবার সেই শব্দ, পাতার উপর দিয়ে, আমি এক দৌড়ে নেমে গেলাম, তালা দিতে ভুলে গেলাম ছাদের, নিচে নেমে ঘরের দিকে যেতেই মনে পড়ল হায় হায়! ছাদের দরজা খোলা! আবার উঠলাম মনে ভয় আর শঙ্কা নিয়ে, কিন্তু ছাদে কেউ নেই, তালা লাগিয়ে নিচে নেমে এলাম,
রুমে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখি তারিকের মিসড কল, তিনটা, আমি কল ব্যাক করলাম।
•হ্যালো আফা
•কেমন আছ তারিক, তোমার বৌ…
•আফা আমার একটা সোন্দর মাইয়া হইছে
•আলহামদুলিল্লাহ
•জি, কিন্তু আমার বৌয়ের অনেক বেশি রক্ত গেছে, অরে রংপুর মেডিকেলে আনছি।
•আমাকে জানাওনি কেন? এখন কেমন আছে?
•ভালা আগের থেইকা, ডাক্তার কইছে আরো দুই ব্যাগ রক্ত দিতে হইব,ভালা খাওন দিতে হইব, বিশ্বাস করেন গো আফা আমার যত সামর্থ্য ছিল আমি খাওয়াইছি। মা বাপ মরা মাইয়া, আমার মায়ে অরে নিজের মাইয়ার চেয়ে বেশি ভালা পায়!
আমি বিশ্বাস করলাম। কেন জানিনা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হল।
•কাল সকালে আমি যাব।
•না আফা, আপনে এত দূর আইসেন না। ছুটি দিলে আমি আপনারে মাইয়া দেখাইয়া বাড়িত নিমু। আপনে নাম দিবেন।
•আমি?
•জি, স্যার কইছে আপনে অনেক সোন্দর নাম ফিতে পারবেন, আপনে বই পত্তর লেখেন।
•আচ্ছা, তাই হবে, ভালো মত এসো
•আর আপা নিজের খেয়াল নিয়েন। মেইন গেটে যাই হোক আপনি ভিতরের গেট খুলবেন না। দিনেও না
•কেন?
•আমি আসি, কমু আপনেরে। বলে ফোন কাটে তারিক।
আমার খটকা লাগে, তারিক কিছু জানে? এই শব্দের ব্যাপারে? আমাকে কিছু বলেনি কেন? হয়তো ভয় পাব ভেবে বলেনি। আমি রান্নাঘর থেকে আরেক কাপ কফি করে,লিখতে বসে গেলাম, রাত গভীর হচ্ছে, কিন্তু কোন শব্দ নেই, দূর থেকে অজানা পাখির ডাক ভেসে আসে, ট্রেনের আওয়াজ আসে, আমি হেডফোন লাগাই না কানে, রাত দুটো বাজে চোখে ঘুম নেই, লেখার গতি সামান্য বেড়েছে, পূজা সংখ্যার টাকাটা মনে হয় ফেরত দিতে হবে, ঈদের টাও কি হাত ছাড়া হবে? আবার শুরু থেকে শুরু করতে হবে, নিজ খরচে বই প্রকাশ, অঢেল টাকা ঢেলে বিজ্ঞাপন, নিজের ছবি, বইয়ের ছবি তুলে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ফাটিয়ে দিতে হবে, আমি কোনকালেই এসব করিনি, রকমারি তেও বিজ্ঞাপন ছাড়াই আমার বই বেস্ট সেলার, বইমেলা চলাকালীন তৃতীয় মুদ্রণ লাগে…..
চিন্তার জাল ছিড়ে দিল ঐ শব্দ, পা টেনে হাটছে কেউ, আমি লাফ দিয়ে বিছানায় লেপের ভেতর ঢুকে যাই, ছোট বেলার মত, ছোট বেলায় যেমন কাথা আমাদের সব বিপদ থেকে রক্ষা করত!
ধুপ করে একটা শব্দ হল, ভারী কিছু পড়ে যাওয়ার মত শব্দ, তারপর সব নীরব।
পরদিন দুপুর বারোটায় আমার ঘুম ভাঙল, উঠে চা করে, ভিতরের গেট খুলে বের হই, তারিকের নিষেধাজ্ঞা ভুলে যাই, মেইন গেটের তালা অক্ষত, পিছনে চলে যাই, আমার জানালা বরাবর আমড়া গাছের তলায় কি যেন পড়ে আছে, আমি ছুটে যায়,
একজন যুবক অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে, আমি গায়ে হাত দিতেই দেখি ভীষণ জ্বর। জ্বরে বেহুশ, আমি কোনমতে তোলার চেষ্টা করি, পারিনা, না পেরে তারিকের ভাইকে ফোন করি, সে হাসপাতাল থেকে মাত্রই ফিরেছে, কিন্তু আমি ডাকামাত্র চলে এলো, সে এসে এসব দেখে একটু ভয় পেল, আমি বললাম কিছু হবেনা একে ভেতরে আনো। আমি আর তারিকের ভাই তৌফিক মিলে যুবককে ধরে তুলে ভেতরে নিলাম। বালতিতে পানি ভরে আনে তৌফিক, আমি একটা বড় পলিথিন দিয়ে বালিশ ঢেকে দেই, মাথায় পানি ঢালে তৌফিক, আমি তোয়ালে দিয়ে মুছতে থাকি, সাদা তোয়ালে নিমেষে ময়লা হয়ে যায়, মাথায় এত ময়লা ছিল? ইস!
জ্বর পুরো বিকেল, সন্ধ্যা জুড়েও নামাতে না পেরে এলাকার পল্লী চিকিৎসক ডেকে আনি, উনি ওষুধ লিখে বলেন,
•আপনি একা মানুষ। এসবে পড়বেন না। মানবতার খাতিরে এনেছেন, আজ রাত পার করে বিদায় করুন।
•অবশ্যই, আমিও ঝামেলা পছন্দ করিনা।
•আপনার মা কে দেখছিনা।
•রুমে, বিশ্রাম করে।
•ও আচ্ছা। ডাক দেন প্রেসারটা মাপি।
•তৌফিক বলে খালা তো মাত্র গেছে, অহন ডাকলে কষ্ট হইব। কাইল আমি আপনেরে ডাইকা আনুম নে, মাইপা দিয়েন। বলে বিদায় করে ডাক্তার কে।
এটুকু মিথ্যা আমাকে বলতেই হল, একা মেয়ে মানুষ, ঘরে দুই দুটো সোমত্ত পুরুষ, কোন সমাজ এটা মানবে না। তাও আমি জানি কাল চায়ের আসরে রসালো আলাপের মধ্যমণি হব আমি আর এই অজ্ঞান যুবক….

পুরো দেড় দিন পর, শরীরের তাপ নামল, তৌফিক ছিল সারারাত, আমাকে জোর করে ঘুমাতে পাঠালো, আমি তো রাতে ঘুমাতে পারিনা, একদম ঘুম আসেনা, চেষ্টা ও করিনা, আজ কোন শব্দ নেই, সেই ঝরাপাতার উপর হেটে যাওয়ার, তবে কি এই যুবক হাটত? সে বাড়ির ভিতর কিভাবে ঢুকল? আর কতদিন ধরে আছে সে? কোন জায়গার প্রাচীর ভেঙে গেছে? এত উঁচু প্রাচীর, তার উপর তিন ফুট তারকাঁটা, অসম্ভব!
আমি কি মনে করে ঐ ঘরে উঁকি দিয়ে দেখি তৌফিক ঘুমে বেহুশ! আমিই জলপটি পাল্টে দেই, স্যালাইন শেষ হলে, স্যালাইন অফ করে দেই। তৌফিক ভোরে উঠে লজ্জা পায়,
আমার কাছে মাফ চাইছে, আমি বললাম ধুর। খুব খিদে পেয়েছে, বেশি করে পিয়াজ কাঁচামরিচ দিয়ে ভাজা ডিম, ডাল আর পরোটা খেতে মন চাইছে।
•ভাবি তো বাড়িত নাই।
•আরে বোকা! হোটেল থেকে আনবা।
•আপনে হোটেলের খাওন খাইবেন?
•হুম। কোন সমস্যা নেই।
তৌফিক তো জানেনা, আমার আর শিশিরের কত কত রাত ভোর হয়েছে হাসপাতালে, হাসপাতালের খিচুড়ি আর ডিম খেতে খেতে মুখে চড়া পড়ে গেছিল। কিন্তু তাও খেতে হত পুরো দিন যুদ্ধ করার শক্তি অর্জন হত।

নাস্তা কিনে এনেছে তৌফিক, আমি পেট পুরে খেয়ে, বিদায় নিয়ে ঘুমাতে গেলাম নিজের ঘরে, জ্ঞান ফিরলে ডাকতে বললাম। আজ জানিনা কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে, এই ছেলেটা কোন জেল পালানো কয়েদি হতে পারে, কোন সাইকো হতে পারে, কোন ক্রিমিনাল, কোন রেপিস্ট…..
আমাকে একা পেয়ে, হয়তো কোনভাবে ঢুকেছে তারিকের চোখ এড়িয়ে লুকিয়ে ছিল শিকার করবে বলে, কিন্তু কোন কারণে জ্বর এসে যায়, হয়ত আমার দিনের ঘুমের সময় সে জানালার পর্দা সরিয়ে আমায় নিরীক্ষণ করতে….
আমি শিউরে উঠি, ঘুম আসছে না, মাথার কাছেই সাইড টেবিল থেকে হাত বাড়িয়ে ঘুমের ওষুধ নিয়ে তি, চারটা এক সাথে খেয়ে নেই, আধঘন্টা আবোল তাবোল চিন্তা করার পর একসময় ঘুম এসে যায়…..
তৌফিকের ডাকে ঘুম ভাঙে, বিকেল তিনটা বাজে, আমি উঠে ফ্রেস হয়ে বের হই, দেখি টেবিলে কিছু খাবার রাখা, তৌফিক তো জানেনা আমার দুপুরের খাবার ম্যাগি!
ও ঘরে গিয়ে দেখি সে উঠে বসে আছে। কোলের উপর বাটিতে স্যুপ জাতীয় তরল। তারিকের স্ত্রীর জন্য বানানো স্যুপ নিয়ে এসেছে তৌফিক। এরা এত ভালো কেন? আমার চোখ ভিজে আসে। অথচ শিশিরের শেষ সময়ে সবাই এত ক্লান্ত ছিল, শিশির সবাইকে দেখতে চাইত, আমাদের বাসার ডাইনিং এ গেট টুগেদার হবে,বাজার করা হল, আমার রান্না করতে হবে, যদিও আমি বিশেষ পারদর্শী না। আমার গ্রাম সম্পর্কের চাচাতো বোনই সব করত…..ডাক্তার বললেন এর বাইরে পৃথিবীর কোন দেশে কোন চিকিৎসা নেই! তবুও ভারতে আমাদের ভিসা প্রসেসিং চলছে। ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছি। দাওয়াতে তেমন কেউ এলো না, শিশিরের জিহবা তে ক্যান্সার ছিল, তার কথা স্পষ্ট হয়েছিল তিন মাস পর, আমি ছাড়া কেউ বুঝত না, অপারেশন ভালো হয়েছিল, ড্রাগ ইন্টারেকশন ছাড়া তেমন কোন কম্পলিকেশন ছিল না। অথচ তিন মাস পরে রেডিও থেরাপির জন্য যখন পেট স্ক্যান করা হল…. সার্জনের মুখ থমথমে, ভর্তি করা হল…. এলোমেলো খাপছাড়া চিন্তা থেকে বেরিয়ে এলাম তৌফিকের ডাকে।
আফা খাইয়া আসেন তারপর কথা কইয়েন। বিকাল হইয়া গেছে।
আমি অজু করে নামাজ আদায় করে, খেতে বসলাম বেশ কয়েক পদের ভর্তা, বেশ ঝাল ঝাল, তেল পিয়াজের উপস্থিতি কম হলেও অসাধারণ হয়েছে,
ওল ভর্তা খেয়েই বুঝলাম ঘটনা এখন ঘটে যাবে! দেখি একটা পলিথিনে একটু তেতুলের আচার। আচার মুখে দিতেই গলার অশান্তি দূর হল। বাকিটা আলু ভর্তা দিয়ে খেয়ে নিলাম, যে বানিয়ে প্যাক সে অসম্ভব মমতাময়ী!
আচ্ছা আমি কেন এটাই ভাবছি এটা কোন মহিলার কাজ?
•তৌফিক? একটু শুনে যাও।
•জি আফা
•এটা কার রান্না
•আমার ছোট বইন
•আচ্ছা! ( আমার ধারনা সঠিক)
•শোন আজই বাজার থেকে ছোট ছোট বক্স কিনবে, তাতে করে আনবে, পলিথিনেই কতগুলো লেগে থাকছে।
•অসুবিধা নাই আফা আমি রাইতে মুছে খামু। অর পরীক্ষা কাইল, আর রানতে পারবে না।
•কি পরীক্ষা?
•ফাইনাল পরীক্ষা, ক্লাস টেনে উঠব।
•বাহ! এত চমৎকার রান্না করে, বাচ্চা মেয়েটা।
•আমাগো গেরামে কি আর বাচ্চা থাহে কেউ? জন্ম হউতেই মাইয়াগো বয়স বাড়া শুরু অয়।
•তাও কথা, সেটা তো নারী পুরুষ সবারই বাড়ে
•না, আফা, মাস দুয়েক আগে ফয়জুল কাকা আইসা কইল তায়েবা রে বিয়া করব। তার বড় নাতি তায়েবার লগে পড়ে। ভাইজান তো কথা কয় না। আমি ভাগাইছি, বুড়ার খায়েশ।
খুব ভালো করেছ। ওর পরীক্ষার পর একদিন নিয়ে এসো,( এত মায়াবতী একটা মেয়ে যা তা ঘরে যেতে পারেনা। একটা ভালো ঘর চাই।) মনে মনে বলি।

খাওয়া সেরে যুবকের কক্ষে গেলাম। সে এখনো স্যুপ নেড়ে যাচ্ছে। আর কি যেন ভাবছে। আমাকে দেখে চমকে তাকালো। আমি দরজায় দাঁড়িয়ে টোকা দিয়েছিলাম।

কি গভীর কালো চোখ! আমি যেন হারিয়ে যাচ্ছি ঐ চোখের মায়ায়….

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here