মেঘের আড়ালে চাঁদ পর্ব ১০

0
415

মেঘের আড়ালে চাঁদ
(১০)

সাংবাদিক সম্মেলনের একদিন বাকি। আমি কিছু বই নিতে ধানমন্ডি যেতে চাইলাম, নিলয় ঢাকার বাইরে, তপু নামের জুনিয়র অফিসার এসেছে, শিমুল ভাই গাড়ি পাঠিয়েছেন , আমি তৈরি হয়ে নিলাম, এখন আর একটা কুর্তি গলিয়ে, পালাজো/ জিন্স পরে বেরিয়ে পড়ি না! জামদানি থ্রি পিস পরেছি, ম্যাচিং চুড়ি, কানের দুল দিয়েছে ভাবি,
ভাবিকে সব বলেছি, ভেবেছিলাম উনি তো শিশিরের ভাবি, কি না কি বলে বসেন অথচ ভাবি পূর্ণ সমর্থন করলেন। বললেন বাবা বহু আগেই তোমার বিয়ে নিয়ে ভাবতেন, তোমার মানসিক অবস্থার জন্য চাপ দেননি। এবার বোধহয় বাবার স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে, আগের মত অগোছালো থাকলে চলবে না। পরিপাটি থাকতে হবে, সাজতে হবে। সেই কথামত পোশাক আর বেশ কয়েক সেট মালা, চুড়ি পাঠিয়েছেন ভাবি! আমি বক্স খুলেই সেদিন অবাক! আমার পাশে মিজান ও ছিল, ও ভেবেছিল খাবার, পরে আমার নাম লেখা দেখে আমাকেই ধরিয়ে দিল, আমি টেপ কেটে বক্স খুলে এক সাথে বিস্মিত আর খুশি হলাম। মিজান ভাবল, সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি!

মিজান নিজেই আসতে চাইল না। আমি বুঝতে পারছি না, ও একা থাকতে চাইছে, কথাও বলছে না, অথচ গার্ড আর মালির সাথে দীর্ঘ আলাপ করছে! সেদিনের পর থেকে ও কেমন যেন আনমনা! অথচ এমন একটা কথা বলে আমার মন উচাটন করে এখন নিজে মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইলে কেমনটা লাগে?

আমি ওর ভাবনা মাথা থেকে সরিয়ে, বাসা থেকে কি কি আনতে হবে তার লিস্ট মনে মনে গুছিয়ে নিচ্ছি, পুরো রাস্তা মিজানের চিন্তায় গুম হয়ে রইলাম। মিজান কি বয়স নিয়ে ভাবছে? আসলেই কি খুব বেমানান? ওর পরিবার? ওর পরিবার কি মানবে?

বাসায় পৌঁছে দেখি সিকিউরিটি গার্ড অপরিচিত, তাকে পরিচয় দিয়ে ঢুকলাম, তপু নাম এন্ট্রি করালো, লিফটে আনমনে বলল,
•একটু বেশিই বাড়াবাড়ি সিকিউরিটি দেখছি৷ এমনই কি ছিল?
•আমি বললাম, না! এত কড়াকড়ি ছিল না।
•কোন বিপদ ঘটেছে তার মানে। চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে!
চতুর্থ ফ্লোরে নেমে গেলাম ,
ডানে সিড়ি দিয়ে আধ তলা উঠে আমার ফ্ল্যাট, জিগজ্যাগ প্যাটার্নের বাড়ি!

ব্যাগ থেকে চাবি বের করে, লকে হাত দেয়ার আগেই বিদ্যুৎ গতিতে আমার হাত সরালো তপু, দরজা ভালো করে দেখল, আবার ফিরে গিয়ে রেলিঙের উপরদিকটা দেখল, চারকোনা ফাঁকা জায়গা ঘিরে বাড়িটা, সেই ফাঁকায় বাচ্চাদের দোলনা, খেলনা রাখা, কেউ নেই সেখানে ও আবার এলো দরজার কাছে, কি হোলের পাশে খুব হালকা দাগ,
•আপু এটা আগে ছিল?
•উহু!
•আমি বেরই হতাম খুব কম, কি হোলে চাবি ব্যবহার করেছি খুব কম, আর তালাটাও নতুন।আমি একদিন চাবি নিতে ভুলে যাওয়ায় তালা ভাঙতে হয়েছিল, তারপর এই নতুন তালা।
হুম…. খুব মনোযোগ দিয়ে দরজা পরীক্ষা করতে লাগল তপু। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, ও হঠাৎ মোবাইল বের করে টর্চ জ্বালিয়ে দেখে খুব সুক্ষ্ম একটা তার বাধা দরজায়, কেউ তালা খুলে প্রবেশ করতে গেলে পা বেধে পড়ে যাবে, তপু ওয়ালেট বের করে, তারে ঘসা দিতেই এক কোণা কেটে গেল!
•আপু দেখেন
•কি ভয়ংকর! আমি বাড়ি ওয়ালাকে কল করছি।
আমরা পাশের ফ্ল্যাটে বসলাম,
বাড়িওয়ালা এলেন। আমি কারো সাথে মিশতাম না আজ প্রথম কথা হল, পাশের ফ্ল্যাটের মহিলার সাথে। তিনিও অবাক, এত বড় লেখিকা তার প্রতিবেশী, তিনি জানতেনও না! আমি বিনয়ে একটু হাসলাম।

চা বিস্কুট এনে বসলেন আলাপ করতে,
•ফোর ডি এর খবর জানেন?
•কি খবর? কান খাড়া তপুর
•একটা মহিলা থাকতেন আপনার বয়সী, সেপারেশন হয়েছে, বাচ্চারা স্কুলে ছিল, মহিলা বাজার করে বাসায় এসে ঢুকতে গিয়েই ভয়াবহ জখম হন।
•সেকি? কিভাবে?
•তালা খুলে পড়ে যান। পা ও কেটে গিয়েছিল, মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন, আর বাসা তছনছ।
ওরা বেশিদিন হল আসেনি, নতুন। বেচারির বাসা বদল করতে হল। এমনিতেই সেপারেশনের ধাক্কা, তার উপর এই বিপদ।
•তার ফোন নম্বরটা দিতে পারবেন?
• আমার কাছে তো নেই?

বাড়ি ওয়ালা আংকেল বললেন, তার কাছে সেভ করা আছে। তিনি আমাকে মেসেজ করলেন।

মহিলার এই অবস্থার জন্য আমিই দায়ী! আমার তাকে সাহায্য করতে হবে।

বাড়ি ওয়ালা অপ্রস্তুত। অথচ এখানে তার কোন দোষ নেই। আমি বুঝতে পারছি, কেন হচ্ছে এসব। কথা সেরে বাড়ি ওয়ালা আর দারোয়ান কে সাথে নিয়ে আমরা আবার আমার ফ্ল্যাটের সামনে গেলাম, তপু ফরেনসিকের একটা ছেলেকে ডেকেছে, সে চাবি চাইল, ঐ চুলের মত তার সে কেটে ফেলেছে, অদ্ভুত একটা আঠা দিয়ে চৌকাঠে লাগানো ছিল, তালা খুলে আমরা হতবিহ্বল, পুরো ফ্ল্যাটে সিডর হয়েছে যেন, আমার দেয়াল জুড়ে করা বুক সেলফের সব বই মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে, তপু আর ফরেনসিক অফিসার মিলে পুরো বাড়ি তল্লাশি করে কোন হাতের ছাপ পেল না।
তপু নিলয়কে ফোন করল, আমি শিমুল ভাইকে।
আমাকে দ্রুত পূর্বাচল ফিরে প্যাক করে নিতে বললেন শিমুল ভাই। আবার জার্নি শুরু।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here