মেঘের পরে রংধনু পর্ব-৩০

0
902

#মেঘের_পরে_রংধনু
#পর্ব_৩০
লিখা: Sidratul Muntaz

হসপিটালের নিস্তব্ধ করিডোরে দাঁড়িয়ে ব্যথায় সিক্ত হতে হতে অবশ বনে যাওয়া হৃদয়টি নিয়ে অরিনের আজ খুব করে মনে হচ্ছে, জীবনে চলার পথে হরেক রকম মানুষের হাজার রকম উক্তি শুনে সেদিকে মন না ডুবিয়ে একান্ত নিজের মনের নিঃসংকোচ অনুরক্তিটুকু শুনে চলা খুব জরুরী। এইযে এখন ইমারজেন্সী’তে শুয়ে থাকা এক মৃত্যু পথযাত্রীর জন্য অরিনের বুকের পিঞ্জরে এতো উথাল-পাথাল ঢেউ, এতো যন্ত্রণা, এক নিমেষে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভয়, চরম সর্বনাশের হাতছানি কর্ণকুহরে অবিরাম বেজে চলেছে,কেন? এসবের উৎস কি? কেনো ওই মানুষটিকে নিয়ে অরিনের অনুভূতিরা বিষাক্ত-বেদনায় ছটফট করছে? কিছুদিন আগেও অরিন যাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করছিল আজ তারই মৃত্যুভয় অরিনকে ভেতর থেকে সম্পূর্ণ খাঁক বানিয়ে রেখেছে। সন্তাপের আগুন পুড়তে পুড়তে অরিন যে কবেই ছাই বনে গেছে! নিজেকে একফোঁটা সামলে রাখার শক্তিটুকুও তার মাঝে অবশিষ্ট নেই আজ। ইলহানের কণ্ঠে আর কোনোদিন ‘আমার মায়াপরী’ ডাক শোনা কি হবে না? অরিন মাথা ঘুরে পড়েই যাচ্ছিল। অ্যাংকার অনতিবিলম্বে এসে জাপটে ধরলো অরিনের শরীর। নরম কণ্ঠে ডাকলো,
” অরিন, ঠিকাছো তুমি? অরিন?”
অরিন চোখ পিটপিট করে অ্যাংকারের চেহারাটা একবার দেখে পুনরায় চোখ বুজে নিল। সবকিছু খুব ঝাপসা লাগছে৷ হাত-পা থেকে শুরু করে মাথাটা পর্যন্ত অসহ্য এক যন্ত্রণায় ফেটে যেতে চাইছে। অ্যাংকার বললো,
” চলো, ওয়ার্ডে গিয়ে শুয়ে থাকবে কিছুক্ষণ। তুমি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছো।”
অরিন অচেতনের মতো চোখ বন্ধ করে শুধু কয়েক বার ডেকে গেল,” ইলহান, ইলহান, ইলহান।”
একটু পর অরিন আবিষ্কার করলো সে সাদা বিছানায় শুয়ে আছে। তার সামনে অর্ণভ হাত ভাজ করে একরাশ বিষণ্ণতার ছাপ চোখে-মুখে এঁটে দাঁড়ানো। হালিমা শাড়ির আঁচল মুখে চেপে গুমরে কেঁদে যাচ্ছেন। ফয়সাল সাহেব ফ্যাকাশে মুখে নির্বিকার হয়ে চেয়ারে বসে আছেন। আর মিহরীমা অরিনের ঠিক পাশে ঘুমিয়ে আছে। অরিনের মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। কি হচ্ছে এসব? সবাই এমনভাবে এইখানে বসে আছে যেনো শোকসভা চলছে। অরিনের অসহ্য লাগছে। মন চাইছে সবকিছু চুরমার করে ফেলতে। সবাইকে একবার হাসতে অনুরোধ করতে। এই কান্নাকাটির প্রতিযোগিতা তার একদম সহ্য হচ্ছে না। অরিন দীর্ঘক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। হালিমা বিলাপের স্বরে বলতে লাগলেন,
” এইসব কি হয়ে গেল মা? বিয়ের আগেই এতোবড় সর্বনাশ ঘটতে হলো? এক্সিডেন্টটা এইভাবে আসবে জানলে আমি কখনও তোদের বাসা থেকে বের হতে দিতাম না।”
হালিমা কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। অর্ণভ এইবার চোখ-মুখ খিচে বন্ধ করে রাখলো। কিন্তু ওর চোখ দিয়ে তপ্ত জল অবাধ ধারায় গড়িয়ে চলেছে।অরিন ইলহানের কথা জিজ্ঞেস করার সাহস একটুও পেল না। যদি খারাপ কিছু শুনতে হয়? সেই শক্তি অরিনের দূর্বল মনের নেই। প্রতি মুহুর্তে তার মনটা ঝড়ের রাতের মোমবাতির মতো ধিকধিক করছে। যেকোনো মুহুর্তে নিভে যেতে পারে শিখা। অরিন নিজ থেকে জোরে কয়েকবার শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারছে না। হালিমা দৌড়ে কাছে এলেন। অর্ণভও এলো৷ তারা অরিনকে অক্সিজেন মাস্ক পড়িয়ে দিল। অরিন সবার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় গভীর নিদ্রায় তলিয়ে গেল।
এইবার চোখ খুলে অরিন আশেপাশে অ্যাংকার ছাড়া আর কাউকে পেল না। অরিন বললো,
” অ্যাংকার,তুমি বিদেশ থেকে কবে ফিরলে?”
অ্যাংকার অরিনের কপালে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,” যেদিন ফেরার কথা ছিল তার একদিন আগেই ফিরেছি৷ তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আসার পর নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেছি।”
অ্যাংকার মুচকি হাসলো। অরিন বললো,
” আমার কি হয়েছে অ্যাংকার? কেনো আমাকে বিছানায় শুইয়ে রাখা হচ্ছে? আমি কেনো বার-বার ঘুমিয়ে যাচ্ছি? কেনো সবকিছু এতো অদ্ভুত লাগছে? আমি কি, আমি কি মারা যাচ্ছি?”
” আল্লাহ মাফ করুক। এইসব বলো না। আমি থাকতে তোমার কিছু হতে দিবো না।”
অ্যাংকার অরিনের কপালে একটা গভীর চুমু দিল। অরিন চোখ বন্ধ করে অ্যাংকারের হাতটা চেপে ধরে বললো,” প্লিজ অ্যাংকার,আমাকে ছেড়ে যেও না। আমার সাথে কথা বলতে থাকো।”
” কথা বলতেই তো এসেছি। আমি তোমার কাছেই আছি অরিন। এখন একটা সত্যি কথার জবাব দিবে?”
” কি? কি সত্যি?”
” তুমি কি ইলহানকে ভালোবেসে ফেলেছো?”
অরিন মুখ ভেঙে বাচ্চাদের মতো কেঁদে উঠলো।ওর সেই কান্নায় রাশি রাশি যন্ত্রণাময় শিহরণ প্রকাশ পাচ্ছে। এক নিঃশ্বাসে নিজের অব্যক্ত অনুভূতিগুলো যেনো কান্নার মাধ্যমেই প্রকাশ করতে চাইছে সে! অ্যাংকার বললো,
” কেঁদো না। কাউকে ভালোবাসা তো অন্যায় নয়। কিন্তু সে তোমার ভালোবাসার অযোগ্য ছিল অরিন।”
” আমি জানি না, আমি কিচ্ছু জানি না। আমি শুধু ইলহানকে সুস্থ দেখতে চাই। ও আগের মতো আমার সাথে কথা বলবে, আমাকে গভীর আবেশী কণ্ঠে মায়াপরী বলে ডাকবে, দুষ্টুমি, খুনশুটি সবকিছু করবে, এমনকি সে যদি আমাকে ধোঁকাও দেয় তাও আমি তাকে আর এক চুল পরিমাণ কষ্ট দিতে পারবো না। আমি নিজেই তাহলে পুড়ে যাবো সেই বিরহের দহনে। আমার ইলহানকে আমি আর কখনও কাঁদাতে চাই না।”
অরিন কাঁদতেই থাকলো। অ্যাংকার বললো,
” শান্ত হও অরিন। আমি বুঝতে পেরেছি। ইলহানকে আমিও অনেক ভালোবাসি৷ সে আমার নিঃসঙ্গ জীবনের একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড। এর আগে কখনও কেউ আমার বেস্টফ্রেন্ড হয়নি জানো? ইলহানের মতো কখনও কারো থেকে আমি এতো এটেনশন পাইনি। সে বন্ধু হিসেবে খুব ভালো, খুব! বলতে পারো সে পৃথিবীর সেরা বেস্টফ্রেন্ড। কিন্তু সেরা বয়ফ্রেন্ড হওয়ার যোগ্যতা ওর নেই। আমি তোমাকে ওর চরিত্র সম্পর্কে যা কিছু বলেছি সব সত্যিই ছিল। মেয়েদের সাথে ইলহানের রাশলীলার কত প্রমাণই তো আমি তোমাকে দিয়েছিলাম। কত ভিডিও, ছবি তোমার কাছে গচ্ছিত আছে। মেয়েদের স্বীকারোক্তি পর্যন্ত আছে। ইলহানের এক্স গার্লফ্রেন্ডদের সাথে তুমি নিজেও কথা বলেছো। এসব কি অস্বীকার করতে পারবে?”
অরিন নীরবে কেঁদে যেতে লাগলো। অ্যাংকার বললো,
” যে এতোগুলো মেয়ের মন ভাঙতে পেরেছে সে তোমারও মন ভেঙে দিয়ে চলে যাবে না এর নিশ্চয়তা কি আছে?”
অরিন ধমক দিয়ে উঠলো,” অসম্ভব। মানি না আমি। এই কথা আমি কখনও মানি না যে ইলহান আমার মন ভাঙতে পারে। যদি সত্যিই ইলহান এমন হতো তাহলে আমার সাথে অসদাচরণের প্রতিশোধ নিতে নিজের জীবন বিপন্নতায় ঠেলে দিতো না। আমাকে ভালোবেসে নিজেকে শেষ করতে চাইতো না। ও বদলে গেছে অ্যাংকার। ও আমাকে অনেক ভালোবাসে। শেষবার ও আমাকে কি বলেছিল জানো? আমি না চাইলে আমাদের বিয়েটা কখনও হবে না। সে অস্ট্রেলিয়া ফিরে যাবে। সেখানে গিয়েও ও শুধু আমাকেই ভালোবাসবে। আমার জন্য অপেক্ষায় থাকবে সারাজীবন। কারণ ইলহান তার মায়াপরীর জন্য চিরকাল অপেক্ষা করতে রাজি। যে এইভাবে বলতে পারে সে কি কখনও প্রতারক হতে পারে? এই অসম্ভব কথা আমি বিশ্বাস করি না। ইলহান ভালো, নির্দোষ। নিজের অতীতের পাপের জন্য সে অনুতপ্ত। বরং ওকে কষ্ট দিয়ে আমি অন্যায় করেছি। অনেক বড় অন্যায়। আমাকে মেরে ফেলো অ্যাংকার। আমি পাপী।”
অরিনের কান্না দেখে অ্যাংকার এবার শক্ত করে অরিনের মাথাটা বুকে জড়িয়ে ধরলো। অরিন এক নিঃশ্বাসে শুধু কাঁদতেই থাকলো। অ্যাংকারের চোখের পাতাও ভিজে এসেছে। সে বললো,
” জানি অরিন। আমি সবকিছু শুনেছি৷ তোমার জন্য ইলহানের পাগলামির কথা শ্যানিন আমাকে সব বলেছে। আমার মনে হয়, তুমিই প্রথম মেয়ে। যাকে পাওয়ার জন্য ইলহান এতোকিছু করেছে। এর আগে কখনও কোনো মেয়ের জন্য ওকে লড়াই করতে হয়নি জানো? সবাই স্বেচ্ছায় ওর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। কিন্তু তুমি করোনি। এজন্যই আমারও এটাই মনে হচ্ছে যে ইলহান শুধু তোমাকেই সত্যিকারের ভালোবেসেছে। কিন্তু তোমার মতো অজস্র মেয়ের মন নিয়েও তো সে খেলেছে। তাদের কষ্ট দিয়েছে, কাঁদিয়েছে। করুণাময় হয়তো তোমার মাধ্যমে ইলহানকে সেই ব্যভিচারের শাস্তি দিচ্ছিল। আজকে ওর শাস্তির ঘট পূর্ণ হয়েছে। অরিন, এই শাস্তি শাস্তি খেলা এবার বন্ধ করা খুব জরুরী। আর কত কষ্ট পাবে তোমরা? আমিও তোমাদের এই অবস্থা আর দেখতে চাই না। ইলহানের পর আমার জীবনের দ্বিতীয় বেস্টফ্রেন্ড তুমি। তাই ইলহানের কষ্ট যেমন আমাকে পোড়ায় তোমার কষ্টও পোড়ায়!”
” অ্যাংকার, আই লভ ইউ সো মাচ।”
আনন্দে অ্যাংকারের চোখ থেকে সত্যি জল গড়াতে লাগলো। সে আরও শক্ত করে অরিনকে জড়িয়ে ধরে বললো,
” আই লভ ইউ টু অরিন।”
দুইজন কিছুক্ষণ নিরবচ্ছিন্নভাবে কেঁদে গেল। অ্যাংকার বললো,” তোমরা দুইজন কি ভালোবাসার প্রতিযোগিতায় নেমেছো বলতো? কে কাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে পারে এটা প্রমাণ করাই কি প্রতিযোগিতার শর্ত? ইলহানের এক্সিডেন্ট নিজ চোখে দেখে তুমি স্ট্রোক করে ফেললে। আর ইলহানটাকে দেখো, জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে শুধু অরিনের নাম জপ করে যাচ্ছে। যেনো অরিন ছাড়া এ পৃথিবীতে ওর কিছুই নেই!”
অরিন অবাক হয়ে বললো,” কি ইলহানের জ্ঞান ফিরেছে? ও সুস্থ আছে?”
” এই গুড নিউজ দিতেই তো এসেছিলাম।”
অরিন দ্রুত বেড থেকে নামতে চাইলো। অ্যাংকার বললো,
” আরে আস্তে, সাবধানে!”
অরিনের হাত থেকে স্যালাইন টিউব খুলে দিল অ্যাংকার।অরিন এইবার এক দৌড়ে ছুটে গেল ইলহানের কেবিনে। নুসাইবা ইলহানকে পানি খাওয়াচ্ছিলেন। অরিনকে দেখে ইলহান খাওয়া থামিয়ে দিল। উপস্থিত সবাই অরিনের দিকে তাকালো। সুস্থ ইলহানের সামনে বসে আজ সবার মুখ হাসি হাসি। শোকসভা কেটে গিয়ে আনন্দ সভা বসেছে যেনো। অরিন ধীরপায়ে এগুতে লাগলো ইলহানের দিকে। তার বিশ্বাস হচ্ছে না। সত্যিই কি ইলহান জেগে উঠেছে? ইলহান মুচকি হেসে বললো,
” তুমি কেনো উঠে আসতে গেলে অরিন? আমিই ভেবেছিলাম তোমার কেবিনে যাবো।”
নুসাইবা হেসে বললেন,” আহারে, ভাঙা পা নিয়ে উনি নাকি হবু বউয়ের কেবিনে যাবেন। শখ দেখো ছেলের!”
সকলের মৃদু হাসির গুঞ্জন শুনতে পাওয়া গেল৷ অরিন কাউকে খেয়াল করলো না। তার মা, বাবা, ভাইও যে এখানেই উপস্থিত তারও তোয়াক্কা না করে হঠাৎই ইলহানকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরলো অরিন। শুধু তাই নয়, আবেগে বেসামাল হয়ে ইলহানের নাকে, মুখে, গলায় একনাগাড়ে চুমু দিতে শুরু করলো। ইলহান এতো বেশি অপ্রস্তুত হলো যে সবার চেহারার ভাব-ভঙ্গি খেয়াল করার জন্য আশেপাশে তাকিয়ে অরিনকে সরিয়ে দিতে চাইলো। কিন্তু তৃষ্ণার্ত অরিন কিছুতেই থামলো না। ইলহানের জ্ঞান ফেরার জন্য অপেক্ষমাণ ভয়াবহ যন্ত্রণাময় সাতদিনের হিসাব যেনো আজ একদিনেই মিটিয়ে নিতে হবে তাকে। নুসাইবা খাবারের প্লেট রেখে বললেন,” আমাদের মনে হয় এইখানে আর কোনো কাজ নেই৷ সবার চলে যাওয়া উচিৎ। অরিন, পারলে একটু খাবারও খাইয়ে দিও আমার ছেলেটাকে! শুধু আদরেই কি ওর পেট ভরবে?”
অরিন এই কথা শুনে এতো বেশি লজ্জা পেল যে ইলহানের বেড থেকে ছিটকে সরে একদম কেবিন রুমের কোনায় গিয়ে উল্টো হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। দুইহাত দিয়ে শক্ত করে নিজের লাল টুকটুকে চেহারাটা চেপে ধরে রাখলো। কিছুটা কাঁপতেও লাগলো লজ্জাময় শিহরণে। এই কোণায় এসে সে কেনো দাঁড়ালো নিজেও জানে না। তার মূল লক্ষ্য ছিল শুধু সকলের দৃষ্টি থেকে নিজের মুখ আড়াল করা। প্রত্যেকেই হাসতে হাসতে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। অরিন আশেপাশে তাকিয়ে যখন দেখলো কেউ নেই তখন অবাক হয়ে বললো,
” সবাই কোথায় গেছে?”
” ডাক্তার আনতে।”
” ডাক্তার? কেনো?”
” এইযে তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। ডাক্তার এসে ইঞ্জেকশন মেরে তোমার মাথা ঠিক করে দিবে!”
” মানে কি? আমি পাগল হয়ে গেছি?”
” অবশ্যই। পাগলের মতোই আচরণ করছো। দেখতেও লাগছে পাগলটার মতো। কি অবস্থা হয়েছে তোমার? চুল আঁচড়াও না কয়দিন? চোখের নিচে কালো দাগ পড়লো কিভাবে? ভাসা ভাসা সুন্দর চোখগুলো এমন কোটরে ঢুকলো কিভাবে?”
” আপনার জন্যই তো হয়েছে সব। সাতদিন ধরে বেডে শুয়ে থাকতে কে বলেছিল? দিন-দুনিয়ার কোনো খবর রেখেছেন? এদিকে আমি মরতে মরতে বেঁচে আছি। আমাকে পাগলের মতো দেখানোটা কি খুব অস্বাভাবিক? এখন নিজেই পাগল বলে খোচা মারছেন। অথচ আমি পাগল হয়েছি কার জন্য?”
” আচ্ছা এদিকে এসো৷ তোমাকে দেখি আগে ভালো করে।”
অরিন ইলহানের সামনে এসে বসলো। অভিমানী স্বরে বললো,” যার জন্য চুরি করি সেই বলে চোর।আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই, বুঝেছেন? আমি তো পাগল। ডাক্তার এসে ইঞ্জেকশন দিক আর আমি মরে যাই। সেটাই ভালো হবে।”
” ইঞ্জেকশন দিলে কেউ মরে?”
” জানি না। কিন্তু আপনি আমার সাথে একদম কথা বলবেন না। পাগলের সাথে কিসের কথা?”
ইলহান অরিনের হাত দু’টো শক্ত করে ধরে বললো,
” সবার সামনে কি শুরু করেছিলে ওসব? পাগল ছাড়া আর কি বলবো তোমাকে?”
অরিন হাত-পা ছুটোছুটি করে বলতে লাগলো,
” হ্যাঁ আমি পাগলই তো। কিন্তু কিসের জন্য পাগল হয়েছি সেটা…”
ইলহান অরিনের ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে মুখ দিয়ে শব্দ করলো,” শশশ..”
অরিন চুপ হয়ে গেল। একে-অপরের দিকে নির্ণিমেষ চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর ইলহান প্রথমে অগ্রসর হলো অরিনের শুষ্ক, নরম, অবিশ্রান্ত ঠোঁটে চুম্বন করতে। অরিন আজকে কোনো বাঁধা দিল না। কয়েক মুহুর্তেই দু’জন গভীর ভালোবাসায় সিক্ত এক প্রলম্বিত সুখে হারিয়ে গেল। লিপ্ত হলো গভীর চুম্বনে। প্রথম ভালোবাসার প্রথম গাঢ়, আকাঙ্খিত ও উষ্ণতায় ভরা স্পর্শ! যে স্পর্শে মিশে আছে সীমাহীন সুখ।

চলবে

( নায়ক-নায়িকার মিল হয়ে যাচ্ছে দেখে সবাই এখন ভাববে গল্প শেষ। আরে না ভাই, গল্প মাত্র শুরু। মানে নায়ক-নায়িকার প্রেম মাত্র শুরু। ভূমিকা শেষ হলো বলতে পারেন। বর্ণনা, উপসংহার এখনও বাকি।🤫

কেউ অনুভূতি প্রকাশ না করে যাবেন না।😟)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here