মেঘে ঢাকা চাঁদ পর্ব-১৭

0
1172

#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ (পর্ব ১৭)
সায়লা সুলতানা লাকী

লিখন ওই রাতেই বের হয়ে গেল ওর বড়ো বোনের বাসার উদ্দেশ্যে। রাতে একবার কল দিয়ে লাবন্যকে জানিয়ে দিলো যে রাতে আর বাসায় ফিরবে না, ওরা যেনো ঘুমিয়ে পড়ে। লাবন্যও তাই আর অপেক্ষা করল না রুশকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
সকালে উঠে রুশের স্কুলে যাওয়ার আগে একবার ওর আব্বুকে কল দিয়ে জেনে নিল সে এখন বাসায় আসবে কি না। কিন্তু লিখন জানালো যে ও এখন অফিসে যাবে আর সন্ধ্যায় ওর দাদিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে তাই বাসায় ফিরতে রাত হবে।
লাবন্য বিষয়টাকে সহজভাবে নিতে অাপ্রান চেষ্টা করছে কিন্তু তারপরও মনের মধ্যে খুটখাট চলতেই থাকলো ওর আব্বুর ওদের প্রতি রেসপনসেবলিটি দেখে। এরই মধ্যে লাবন্য খেয়াল করল এখন আর ও হুটহাট রেগে যাচ্ছে না। ধীরে সুস্থে চিন্তা করার একটা ক্ষমতা অর্জন করেছে এই কয়দিনে মনের অজান্তেই। সারাদিন রুশকে নিয়ে স্কুল আর কোচিং এর ঝামেলা শেষ করে বাসায় ফিরে গোসল করে খাওয়া দাওয়া সেরে দুই ভাইবোন যে কখন ঘুমিয়ে গেলো তা টের পেলো না। যখন ঘুম ভাঙলো তখন রাত দশটা বাজে ঘড়ির কাঁটায় । রুশ একটু টিভি ওয়াচ করছিলো সেসময়টাতে আর লাবন্য রুশের স্কুল ইউনিফর্ম গোছাচ্ছিল ঠিক তখনই লিখন বাসায় ফিরল। রুশ ওর আব্বুকে দেখে তেমন একটা রিয়েক্ট করল না। আগে যেমন ওর আব্বু বাসায় ফিরলে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেত আজ সেরকম কিছু দেখতে পেলো না লাবন্য ওর ভাইয়ের ভিতর। অবাক হল ভাইয়ের এমন পরিবর্তন দেখে। লিখন বাসায় ঢুকে কারউ সাথে কোন কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেল, বেশ কিছুক্ষন পর লাবন্য নিজেই গেল ওর আব্বুকে খাবারের জন্য ডাকতে।
“আব্বু ফ্রেশ হয়েছো? আসো খাবে?”
“হুমম হয়েছি, কিন্তু লাবু আমিতো খাবো না, খেয়ে এসেছি।”
“খেয়ে এসেছো? ”
হুমম, তোর দাদি হাজীর বিরিয়ানি খেতে চাইলো তাই ওই বাসার সবার জন্যই কিনে নিয়েছিলাম। ওখানেই খেয়েছি। তোদের জন্য আনব ভেবে বাসায় কল দিলাম শুনলাম রান্না করে ফেলছে বুয়া। আর রুশতো আবার বাহিরের খাবার খুব একটা খেতে পারে না তাই আর আনলাম না। ”
“ভালোই করেছো না এনে। সব খাবার সবার জন্য না।” বলে লাবন্য রুম থেকে বের হয়ে এল।
দুই ভাইবোন বসে রাতের খাবার খেয়ে নিজেদের রুমে গিয়ে পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অবেলায় ঘুমানোতে এখন আর ঘুম আসতে চাইলো না। রুশের সায়েন্স প্রজেক্ট নিয়ে বসেছে দুজন
হঠাৎ করেই লাবন্যের মোবাইলটা বেজে উঠল।
একটা আননোন নাম্বার দেখে একটু ইতস্তত করল রিসিভ করতে, পরে কলটা ধরল-

“হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম ”
“লাবন্য? কেমন আছিস বোন?”
“হোমাপু তুমি! এইতো ভালোই আছি, বেঁচে আছি।”
“একটা দরকারে তোরে কল দিছিরে বোন, কিছু মনে করিস না! একটু বিরক্ত করব।”
না কিছু মনে করব না, বলো আপু।
“আচ্ছা হিমু কি কোনো রিলেশনে আছে? তুই কি কিছু জানিস ওর ব্যাপারে?”
“তাতো বলতে পারব না। অত কিছুতো আমি জানি না।”
“না মানে, তোর সাথেতো অনেক খাতির, তাই ভাবলাম তুই হয়তো বিষয়টা বেশি ভালো জানবি! ”
“না আপু আমি কিছু জানি না। ”
“আচ্ছা দেখ না ও কেমন করছে। এই পঁচিশ ছাব্বিশে বুঝি কেউ বিয়ে করে না? ওকে বিয়ের কথা বলতেই কেমন রাগারাগি করছে কারউ সাথেই ভালো আচরণ করছে না। আমিতো শিওর ওর কোনো রিলেশন আছে, না হলে এত উলটা পালটা রিয়েক্ট করতো না।”
“এসব জিনিস নিয়ে এভাবে না ভেবে তাকেই সরাসরি জিজ্ঞেস করো না আপু। তাতে মনে হয় ভালোই উত্তর পাবা। আমিতো তোমার কোনো উপকার করতে পারব না। আমারতো মাত্রই মা মারা গেল তাই এইসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারছি না। সত্যি বলতে আমিতো মানসিকভাবে প্রস্তুতও না। অবশ্য তোমাদেরতো আর আলোচনা করতে কোন অসুবিধা নাই তোমাদেরতো আর আপন কেউ মরেনি। ও কে আপু ভালো থেকো, রাখি বলে কলটা কেটে দিল।
চুপ করে মনটাকে স্থির করে বসল। মনটা বিষন্নতায় ছেয়ে গেল একটা মুহুর্তে । আপন খালা কি তাদের কেউ না? কীভাবে পারে তারা এই পরিস্থিতিতে ভাইয়ের বিয়ের কথা আলোচনা করতে? ভাবতে ভাবতে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ইদানিং হিমেলের অস্থিরতার কারনটা বুঝে গেল লাবন্য। এ বিষয়েই কথা বলতে চাচ্ছিলো তা এখন অনেকটাই ক্লিয়ার। দেখা যাক এই পরিস্থিতিতে হিমেল কি করে? ভালোবাসার উপর এতটুকু আস্থাতো ও রাখতেই পারে এমনটা ভেবে হাতের কাজে মন দিল।

সকালে নাস্তার জন্য টেবিলে বসতেই লিখন শুরু করল বলা
“তোর দাদির শরীরটাতো ভালো না। বেশ অনেকখানি জায়গায় ঠোসা পড়েছে। তার উপর ডায়াবেটিসের রোগী আল্লাহয় ভালো জানেন শুকাতে কত সময় লাগবে।”

“বড় ফুপুর উচিৎ ছিল দাদির দিকে নজর রাখা। কিন্তু সে তার দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করেন নাই সে বিষয়ে তোমরা কেউ কিছু বলো নাই কেন?”

“কে বলবে? যে বলবে বড় আপা তার কাছেই আম্মাকে দিয়ে দিবে। তাইতো সবাই চুপ করে আছে।”

“বাহ! দারুন বুদ্ধিতো ফুপুর। ইশশশ আমার আম্মুর যদি এমন বুদ্ধি থাকতো তাহলে অনেক কষ্টই লাঘব হত তার দেহেরও মনেরও।”

“বাদ দে সে সব কথা। এখন শোন, আম্মা গতকাল কয়েকবার তোদের কথা বলেছেন, তোদের দেখতে চায়।এখন তাহলে আম্মাকে—”

“আমি আর রুশ গিয়ে দেখা করে আসতে পারি। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের কথা মনে পড়াটাই স্বাভাবিক। এখানে যখন ছিল তখনতো আম্মু বেশির ভাগ সময় গোসল করিয়ে দিত। বেশ কিছুদিন ধরে আমিও করিয়েছি আম্মুকে একটু আরাম দেওয়ার জন্য। মা তোমার, দায়িত্বটাও তোমার কিন্তু কষ্ট করেছি আমরা। ” বলে একটু মুচকি হাসলো লাবন্য।

“না মানে তাই আর কি বলছিলাম যে—”

“আব্বু তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না। আমরা দুইভাইবোন নিজ থেকেই যাব দাদিকে এক নজর দেখে আসব। তুমি রাতে যখন যাবা তখন আমাদেরকে নিয়ে যেও আমরা রেডি থাকবো।” বলে লাবন্য নাস্তা শেষ করে উঠে গেল। লিখন আসলে কি বলতে চেয়েছিল তা আর ও বলার সুযোগই দিলো না।

রাতে ঠিকই লিখন ওদেরকে নিয়ে গেল ওর বড়ো বোনের বাসায়। সেখানে গিয়ে অবাক হল কারন ওর বড় চাচা চাচি ছোট ফুপু সবাই এসেছেন ওর দাদিকে দেখতে। চাচা চাচি সাধারণত কোথাও যান না। তারা লাবন্য আর রুশকে দেখে ওই হাই হ্যালোতেই সীমাবদ্ধ রইলেন। সবার চেহারায় কিছু একটা ছাপ লক্ষ্য করল কিন্তু সেটা কি তা বুঝতে পারলো না লাবন্য।
হঠাৎ করেই বড়ো ফুপু বলে উঠলেন
“আম্মার এখন যে অবস্থা তাতে একজন সার্বক্ষণিক লোক দরকার তাকে দেখে রাখার জন্য । এখন আমারও বয়স হইছে, নিজের সংসারও আছে, বাচ্চাকাচ্চা আছে এখন কি আর এই কাজ আমার দ্বারা সম্ভব হয়? এটা অন্য কেউ করুক। আমি পারব না।”

“হিসাব মতোতো বড় ভাইয়েরই নেওয়া উচিৎ এই দায়িত্ব।” ছোট ফুপু একটু ভয়ে ভয়েই কথাটা তুললেন। আর তখনই বড় চাচি চিৎকার করে উঠলেন
“কি বলো এসব হ্যা, আমার বাসায় এত জায়গা কই পাও? আম্মা গিয়ে থাকবে কোথায়? আমার ছেলে মেয়েরা এখন বড় হয়েছে। ওদের প্রাইভেসি নষ্ট হয় এমন কিছু আমি কোনদিনও করব না।”

“সন্তান হিসেবে বড় ভাইয়ের দায়িত্ব পড়ে আম্মার দেখাশোনা করার তাতো আর কেউ অস্বীকার করতে পারো না।”

“ও কে, তবে তুমি চাকরি বাকরি ছেড়ে সারাদিন তোমার মায়ের সেবা কর”, কথাটা একটু ব্যঙ্গ করেই বললেন চাচি তার হাজবেন্ডের দিকে তাকিয়ে।

“কি যা তা কথা বলছো! চাকরি ছাড়লে সংসার চলবে কীভাবে? তুমি একা কি চালাতে পারবে? এটা কি কখনও সম্ভব? যুক্তিসঙ্গত কথা বলো।” চাচা কিছুটা রেগে উত্তর দিল।

“শোনো ক্লিয়ারকাট কথা বলাই ভালো। আমি রেশমা না। আমি আমি, আমার একটা চাকরি আছে৷ আমার কোনো সময় নাই অহেতুক ঝামেলা ঘাড়ে নেওয়ার। আবার সেই ঝামেলা আমার জন্য ফরযও না। প্রতিটা সন্তানের জন্য ফরয তার বাবা মা’কে দেখাশোনা করার। শ্বশুর শাশুড়িকে না। সোওওও এটা তোমাদের কাজ তোমরাই করো। আমি পরের মেয়ে, আমার উপর চাপানোর বিন্দুমাত্র চেষ্টাও করো না। রেশমার মতো বোকা মেয়ে আর পাও কি না তা দেখো। আমাকে বোকা ভেবে সময় নষ্ট করো না।”

লাবন্যের খুব ভালো লাগল ওর চাচির এমন সহজ স্বীকারোক্তিতে। কেন রকম আগরুম-বাগরুম না বলে সরাসরি বলে দিলেন তিনি দায়িত্বটা নিচ্ছেন না।

লিখন কিছুটা মনোক্ষুণ্ণ হলো বলে মনে হলো। কিন্তু কিছুই বললো না। চুপ করে সবার কথা শুনতে লাগল। এরই মধ্যে ছোট ফুপু বলে উঠল
“আমি একটা প্রস্তাব রাখতে পারি।”
বলে লিখনের দিকে তাকালো।
লিখন ওর চোখমুখের উজ্জ্বলতা দেখে একটু খুশি হয়ে বলল। “বল”

“আমি তোমার বাসায় শিফট হয়ে যাই। আমারতো ছোট সংসার, ছোট বাসা। সেখানেতো আম্মাকে নিয়ে উঠানো সম্ভব না। আম্মাকে নিলে পরে আমার শাশুড়িও এসে থাকতে চাইবে। কিন্তু তোমার বাসায় শিফট হলে আর আমার শাশুড়ি আসবে না থাকতে।”

কথাটা শুনে লাবন্য কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চিৎকার করে উঠল
“ইন্না-লিল্লাহ, ফুপু তুমি তোমার ফ্যামেলি নিয়ে আমাদের বাসায় শিফট হতে চাচ্ছো কেন? থাকবে কোথায়? কি আশ্চর্য, এটা কেমন প্রস্তাব তোমার?”

“শোন বিপদতো সবারই, এখন সবাইকেই একটু মেনে নিতে হবে। তোরাও একটু মানিয়ে নিবি। তুই আম্মার সাথে রুম শেয়ার করবি। আম্মার রুমে থাকবি। আর রৌশন ভাইয়ার সাথে থাকবে। তোর রুম আর রৌশনের রুমে মোটামুটি আমি কষ্ট করে চেপে চেপে থাকতে পারবো।”

“আজবতো! কি অদ্ভুত তোমাদের মস্তিষ্ক। অবাক হলাম। আমাদের বাসায় তোমার এমন চেপে চেপে থাকার কোন দরকার নাই। ওই চিন্তা ঝরে ফেলে দাও। আমার রুমে আমিই থাকবো। আর রুশও ওর মতো করেই থাকবে। আমাদের সংসারে তোমার শিফট হওয়ার কোন দরকার নাই। বোঝাতে পেরেছি ফুপু? আমরা মনে করছি না আমাদের এমন কিছুর দরকার আছে বলে।”

“বড়দের মাঝে তুই কথা বলিস কেন?”

“কারন কথাটা আমাদেরকে নিয়েই হচ্ছে তাই।”
“আমি কি সাধে থাকতে চেয়েছি নাকি? তোদের অসুবিধা হচ্ছে তাই বলছি—”

“এক মিনিট আমাদের কোন অসুবিধা হচ্ছে না। অসুবিধা হচ্ছে তোমাদের, তোমাদের মা’কে নিয়ে, সে এখন তোমাদের দায়িত্ব। আমার বা রুশের না।”

“দায়িত্ব কিন্তু লিখনেরও”
“আব্বু গত বিশ একুশ বছর তা পালন করেছেন নির্দ্বিধায়, কিন্তু তোমরা মাত্র এই কয়দিনও তা পারছো না। আজব সব মানুষ তোমরা!”

“তুই নিজের পড়াশোনা বাদ দিয়ে রৌশনকে নিয়ে পড়ে আছিস এভাবে কি আর জীবন চলবে? তাছাড়া তোর একদিন বিয়ে হবে তুই শশুর বাড়ি যাবি——-”
“থামো ফুপু, আমি বিয়ে করব না। আমি আমার দায়িত্ব খুব ভালো বুঝি, নিজের দায়িত্ব অন্যের উপর চাপাই না। প্লিজ তোমরা আমাদেরকে নিয়ে ভাবনাটা ছাড়। নিজেদেরকে নিয়ে ভাবো।”

শেষ কথাটা একটু জোরেই বলে ফেলল লাবন্য। আর তাই লিখনও খুব জোরে লাবন্যকে ধমক দিয়ে উঠল। বলল “বড় বেশি বেয়াদবি হচ্ছে কিন্তু লাবু।”
আর তাই ও চুপ হয়ে গেল আর কোন কথাই বলল না।

সবাই চুপ আছে দেখে বড় চাচি বলল
“আমার মা হলে বলতাম ওল্ড হোমে পাঠিয়ে দিতে। গাজিপুর একটা সংস্থা আছে সবাই মিলে টাকা ভাগ করে দিয়ে আম্মাকে সেখানে শিফট করতে পারো।এতে কারউ উপরেই আর কোন ঝামেলা পরবে না”।

কথাট শেষ হতেই পাশের রুম থেকে লাবন্য ওর দাদির করুন স্বরে কাঁদার শব্দ শুনতে পেলো। একটু পর সবাই ওদের মায়ের কাঁদার শব্দে আবার চুপ হয়ে গেল। লাবন্য মনে মনে ওর দাদির মনের অবস্থাটা উপলব্ধি করতে চেষ্টা করতে লাগল।চোখ বন্ধ করে ভাবতে গিয়ে আবার ফিরে এল। মনে হল এসবই তার কর্মফল ভোগ করছে। পাপ ছাড়ে না তার বাপকেও। এখন সে যা ভোগ করছে যা পাচ্ছে তা সবই এই একুশ বছরের ফসল। এখানে কারউ কিছু করার নাই।

একটু পর লিখন সরব হলো, “অসম্ভব আমরা এতগুলো তার সন্তান বেঁচে থাকতে আম্মা যাবে ওল্ড হোমে, তা কি করে হয়? বড় আপা আম্মা তোমার এখানেই থাক। আমি বলছিতো প্রতিমাসে আম্মার জন্য যা লাগে তা দিব।একটা লোকও রেখে নাও। তুমি খরচ নিয়ে কিচ্ছু ভেবো না।”

“এখন খরচ দিয়ে পার পেতে চাচ্ছো শালা সাহেব। কিন্তু এভাবে আর কতদিন চলবে? তোমার কাছে ছিল সেটাইতো ভালো ছিল। কারউ কোন অসুবিধা হতো না। তোমার বৌ একাই সব সামলাতো। এখনতো সব বেসামাল হয়ে পড়ল একজন মানুষ না থাকায়।” অন্যরুম থেকে ফুপা আসলেন এতক্ষণে।

“জি দুলাভাই, বিষয়টা যে এতটা কষ্টের তাতো কখনও টেরই পাই নাই।”
“শোনো আমার ছেলেরে বিয়ে করালেই তখন রুম লাগবে। তখন তোমার মা কোথায় থাকবে? তোমরা ছেলেরা থাকতে সে কি এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াবে? তার চেয়ে বরং যেমন চলছিলো তেমনই চলতে দাও। রেশমার জায়গাটা রিপ্লেসমেন্টের ব্যবস্থা কর। তুমিইবা আর কয়দিন এমন করে ঘুরে বেড়াবা! আমার কথাটাকে হেলায় এড়িয়ে যেয়ো না। ভেবে দেখো।”
ফুপার শেষ কথাটায় লাবন্যের বুকটা কেঁপে উঠল। কি সাংঘাতিক কথা শুনালো সে? লাবন্য আর কিছু ভাবতে পারছে না। সমস্ত শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগল।

লিখন একটু নড়েচড়ে বসল, “না মানে বলে।” আবার চুপ হয়ে গেল। লাবন্য চোখ খুলে ওর আব্বুর দিকে তাকাল। লাবন্যের চোখে চোখ পড়তেই লিখন কথা ঘুরিয়ে বলল
“যখন আপনার ছেলেকে বিয়ে দেন তখন দেখা যাবেতা কি করা যায়। এখন আম্মা এখানেই থাক।”
লিখনের কথাতে লাবন্য ভেতর ভেতর চিন্তায় পড়ে গেল।কারন ওর আব্বুর কথাটা ওর কাছে ক্লিয়ার হলো না।
একটু পর বড় অবাক করে দিয়ে বড় ফুপু বলে উঠলেন “এই তোরা কি রাতে খেয়ে যাবি? খাইলে বল ভাত বসাতে বলি।”
কথাটা শুনে লাবন্যের বড় হাসি পেলো, কারন তখন বাজে রাত সাড়ে দশটা ঘড়ির কাঁটায়। ওদের বাসাতে কখনওই কাউকে এমন প্রশ্ন করতো না রেশমা। যখনই কোন গেট টুগেদার হতো সবাই তখন খেয়েই যেতো।
একটু পর না খেয়েই বড় চাচা চাচি চলে গেলেন। লাবন্যও ওর আব্বুর ধমকে একটু গাল ফুলিয়ে বসে ছিল এতক্ষন। লিখনও কি করবে বুঝতে না পেরে সে রাতে ছেলে মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফিরল। নিজের বাসায় এসে ওরা রাতের খাবার খেয়ে যার যার রুমে চলে এল। লাবন্য ইচ্ছে করেই ওর আব্বুর সাথে আর কোন কথা বলল না।লিখনও কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখল।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here