#মেঘ_ভাঙ্গা_রোদ্দুর।
# অন্তিম পর্ব।
#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।
দেখতে দেখতে মেহেরের এক্সাম শেষ হয়ে যায়। এর মধ্যেই প্রকাশিত হয় মেহেরের প্রথম বই ” নতুন ভোরের আগমন”। যে বইতে সে লিখেছে তার মায়ের জিবনী। বইয়ের ট্রেইলর অংশ পড়েই বই কেনার আগ্রহী হাজারো পাঠক। একদিকে বই নিয়ে ব্যাস্ত মেহের অন্যদিকে বাসায় তার বিয়ের কথা পাকা হচ্ছে। সৈয়দা মাহবুবা সিদ্ধান্ত নেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তিনি মেহের আর রাহনাফের বিয়ে দিবেন। রাহনাফের ও এখন কাজ কিছুটা কমে আসছে। তাছাড়া তার চাচাতো ভাই এখন রাহনাফকে সাহায্য করছে তার কাজে। রাহনাফ এখন কোচিং এর জব ছেড়ে দিয়ে একটা মাল্টিনেশলান কোম্পানিতে চাকরির জন্যে এপ্লাই করেছে। বর্তমানে টিউশন করে নিজের খরচ বহন করছে। একটা বিয়েতে অনেক খরচ। এই মুহূর্তে এত টাকার যোগান দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয় তাই সে চাচ্ছে বিয়েটা ঘরোয়া ভাবেই হোক।
আফিয়া আহমেদের কেসটা কোটে উঠে। আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। বর্তমানে আহমেদ ভিলায় সৈয়দ নওশাদ ও তার মা থাকেন। রাহি অবশ্য মাঝে মাঝে কল করে তার বাবার খবরটা নেয়। আলিহান তাদের দেখাশুনা করার জন্যে দুটো নার্সকে তাদের বাড়িতে রেখে দিয়েছে। সময় পেলে আলিহান আহমেদ ভিলায় যায় তাদের দেখতে। তাদের প্রয়োজনীয় সব জিনিষপত্র কিনে দিয়ে আসে। সৈয়দ নওশাদ হোইল চেয়ারে বসে শুধু তাকিয়ে থাকে। কারো সাথে তেমন কথা বলে না। সারাজিবন রুপের পিছনে ছুটে খাটি মানুষটাকে অবহেলায় হাড়িয়েছে। মানুষের মনটা বিচার না করে বাহ্যিক সূন্দরর্যটা বিচার করেছে। সাদা কালো ধনী দরিদ্র সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা তো একজনই তাহলে এত বৈষম্য কেন? কেন সমাজে এত এত যাচাই বাছাই চলে,কেন এত সমালোচনার মুখে পরতে হয় সবাইকে। জিবন যৌবন সবকিছু রুপের মোহে পরে আজ শেষ বয়সে তার পাশে কেউ নাই। না আছে ভালোবেসে পাশে থাকার মানুষ আর না আছে ভরসার মানুষ। শুনেছি স্বামি স্ত্রীর সম্পর্কটা নাকি মনের গহীনের সম্পর্ক। যৌবনে সকল চাহিদা মেটানো আর শেষ বয়সে ভরসা হয়ে পাশে থাকার সম্পর্ক! তাহলে আজ সৈয়দ নওশাদের পাশে তার স্ত্রী কেন নেই? সে তো আফিয়াকে কম ভালোবসে নি। তাহলে কেন তাকে আজ একলা ঘরে থাকতে হচ্ছে। যেখানে সে জানেই না তার ভবিষ্যৎ কি?? তবে কি এভাবেই চলবে সৈয়দ নওশাদের জিবন??
সৈয়দা মাহবুবা আজ অনেক খুশি। অবশেষে তার মেয়ে মেহেরের বিয়ে হবে। মেয়ের বিয়ে হবে সুখে স্বামির ঘর করবে, তাদের কোল আলো করে একটা ফুটফুটে সুন্দর সন্তান আসবে এমনটাই তো চায় সব বাবা মা। মেহেরের তো বাবা নেই। তার মা একক মা। তাই তাকে নিয়ে সকল স্বপ্ন ইচ্ছে পূরণের ভাসনাও তো তার মায়ের। সৈয়দা মাহবুবা ব্যাস্ত মেয়ের বিয়ের যোগাড়যন্ত্র করতে। মৌ-তো কোন কাজে হাত লাগাতে পারবে না সব কাজ তাকে একাই করতে হবে। কোমড়ে হাত দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন সৈয়দা মাহবুবা। এই বয়সে এসে এত কাজ তার শরীর ঠিক নিতে পারে না। সারাদিন স্কুলে বাচ্চাদের সাথে কথা বলে বাসায় এসে রান্না করে খাওয়াটাও মুশকিল। তারমধ্যে দুটো ডেঙ্গি মেয়েকে তার বসে বসে খাওয়াতে হয়। কড়াইয়ে গরম তেলে মাছের পিছটা দিয়ে বলতে লাগলেন,
– কত করে বলেছি রান্নটা শিখে নি। আমার কথা তো ম্যাডামের কর্নোপাত হয় না। দুদিন পর বিয়ে তারপর দেখি রাননাটা শিখে না কেমনে?
মেহের রান্নাঘরের পাশে বসে গরম গরম সিঙ্গারা খাচ্ছিল আর মোবাইল টিপছে। কাল তার অটোগ্রাফ দেওয়ার ডেট। তাই সে পাঠক লিষ্ট দেখছিলো। মায়ের কথা কানে আসতেই সে বলে,
– আমি কেন রান্না করে খাওয়াবো হুম। রাহনাফ অনেক ভালো রান্না করতে পারে তাই আমি ঠিক করেছি বিয়ের পর ওকে দিয়েই রান্নাটা করাবো।
মেহেরে কথা শুনে সৈয়দা মাহবুবা ওর দিকে খুন্তি তাক করে। মেহের দ্রুত উঠে, কিছুটা দূরে সরে গিয়ে বলে,
– নিজের মেয়ের থেকে এখন রাহনাফের আদর তোমার কাছে বেশী হলো মা। আমি না তোমার মেয়ে। আমার কষ্টটা একটু বুঝো মা। ইনোসেন্ট মুখ করে বলে মেহের।
– হিরের টুকরো ছেলে রাহনাফ। কপালগুনে ওর মতো একটা স্বামি পাবি। জিবনে তো কিছুই শিখলি না তুই ওই বকবক করা ছাড়া। আর রাহনাফকে দেখ ওকে দেখে শিখে নে। জিবন কাকে বলে। আর কিছু পারিস আর না পারিশ ডিবেট শিখে মুখে মুখে তর্ক করারা শিখেছিস।
সৈয়দা মাহবুবার কথা শুনে মেহের চুপ হয়ে যায়। এখানে কথা বললেই কথা বাড়বে। তাছাড়া মায়ের সামনে রাহনাফকে নিয়ে তো কোন কথাই বলা যাবে না। মেহের চুপচাপ সেখান থেকে উঠে যায়।
৫৮,
রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রিক্সার জন্যে অপেক্ষা করছে মেহের। আজ আকাশটা মেঘলা। কিছুক্ষণের মধ্যে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হবে। বর্ষাকালের এই এক প্রবলেম, কখন যে বৃষ্টি নামে আর কখন রোদ উঠে বুঝা বেশ মুশকিল। আকাশ জুড়ে ঘন মেঘেদের রাজত্ব চলছে। চারিদকে কালো অন্ধকার নেমে আসছে। মনে হচ্ছে সন্ধা নেমে আসছে পৃথীবির বুকে। এখন একটা রিক্সার খুব করে প্রয়োজন মেহেরের। না হলে প্রকাশীতে যেতে লেট হবে। আজ অটোগ্রাফ দিয়ে আসলে কাল থেকেই বই পার্সেল করে পাঠিয়ে দেওয়া হবে সব পাঠকদের কাছে। বিষন্নমনে দাঁড়িয়ে আছে মেহের।একটু পর পর এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে সে। এর মধ্যে কয়েকজন লোক এসে মেহেরের মুখ চেপে ধরে ওকে জোড় করে গাড়িতে তুলে নেয়। তাদের হাত থেকে মুক্তি জন্যে ছটফট করছে মেহের। কিন্তু এতগুলা দানবের মতো লোকের শক্তির কাছে হার মানে মেহের। হাত পা গুটিয়ে নেয় সে। গাড়িতে উঠতেই একজনের কণ্ঠস্বর কানে আসে মেহেরের। ” ভাই এটাই তো সেই লেখিকা “। সামনে বসে থাকা ড্রাইভিং সিটের লোকটা জবাব দেয়, সবই ঠিকঠাক আছে। কন্ঠটা মেহেরের কাছে বড্ড চেনা। সে নিভুনিভু কন্ঠে বলে উঠে, আহসান স্যার। তারপরেই সে লুটিয়ে পরে গাড়ির সিটে।
মেহেরের যখন ঞ্জান ফিরে সে নিজেকে একটা অপরিচিত রুমে আবিষ্কার করে। ধপ করে উঠে বসে সে। মাথাটা ভিষন ব্যাথা করছে তার। মাথায় হাত রাখতেই মনে পরে সেই স্টান্ডের কথা। চট করে উঠে দাঁড়ায়। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নেয় সে। জানালা দিয়ে পাশে তাকাতেই দেখে বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে। জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় মেহের। এখান থেকে কি করে বের হবে সে। তাছাড়া কেই বা তাকে কিডন্যাপ করেছে। জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি পড়া দেখছে। জানালার কাচ বেয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে নিচে। কি অপরুপ সুন্দর লাগছে দেখছে। মেহেরের দরজার কাছে সে লক করতেই দরজা খুলে যায়। এতে একটু বেশীই অবাক হয় মেহেয়। যদি তাকে কিডন্যাপই করা হয় তাহলে তাকে আটকে কেন রাখছে না। এভাবে স্বাধীনতা দিয়ে কি প্রমান করতে চাইছে কিডন্যাপারা। দরজা খুলে বাহিরে আসে সে। পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখে নেয়। এ যেন এক রাজবাড়ি। রাজকিয় সব আসবাবপত্র, সব পুরোনো মডেলের। মেহের অবাক চোখে সবকিছু দেখতে থাকে। এ কোথায় এসে পড়লো সে। নাকি তার দৃষ্টিভ্রম হচ্চে ্দু-হাতে চোখ কচলে আবার সবকিছু দেখতে থাকে। এরিমধ্যে তার চোখ আটকে যায় একটা রুমের ভিতরে। যেখানে দেয়ালে সাটানো আছে আহসানের ছবি। তার পাশেই রয়েছে একটা গিটার। এবার মেহের মনে পড়ে তখন গাড়িতে সে ঠিকই শুনেছিল এটা আহসানের কন্ঠ। মনে মনে নিজেকে আরো শক্ত করে তুলে মেহের। আহসানে উপর তার রাহ হচ্ছে বেশ। এভাবে তুলে আনার মানে কি? সেখান থেকে প্রস্তান করে মেহের। ড্রয়িংরুমে এসে আবার সব কিছু অবলোকন করতে থাকে সে। এর মধ্যে তার চোখ পরে ঘড়ির দিকে। সাতটা বাজে। ভোর নাকি সন্ধা সেটা বুঝতে পারেনি সে। তাহলে কয়ঘন্টা অঞ্জান হয়ে ছিলো সে সেটাও মেলাতে পারলো না মেহের। শুধু জানে তাকে এখান থেকে বের হতে হবে। পালাবার জন্যে রাস্তা খুজছে মেহের।এর মধ্যে মনে হলো ড্রয়িংরুমে কেউ আছে। পিছনে ফিরে তাকায় মেহের। সত্যিই কেউ ছিলো। রেইনকোট পরে কেউ দৌঠে বাহিরের দিকে ছুটলো। মেহেরও কোন উপায় না পেয়ে লোকটার পিছু ছুটতে থাকে। বাহিরে এসে ঘন কালো অন্ধকারের মধ্যে হাড়িয়ে যায় মেহের তার উপর বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ভিজে একাকার সে।লোকটাকে খুঁজতে খুজতে একটা আড্ডাখানায় এসে আশ্রয় নে মেহের। না তাকে কোথাও খুজে পেল না মেহের। তার পিছনে ছুটে চলাও সম্বব না মেহেরে। বৈঠকখানায় দাড়িয়ে উড়না থেকে পানি ঝড়িয়ে সেটা দিয়ে শরীরের পানি মুছছে মেহের। এমন সময় পিছন থেকে ভেসে আসে তার চিরোচেনা কণ্ঠস্বর।
– লেখিকা সাহেবা।
দ্রুত উড়না ঠিক করে পিছনের দিকে ঘুরে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায় মেহেরের। রেইনকোট পরা লোকটা আর কেউ নয় রাহনাফ। মেহের কিছু বলবে তার আগেই রাহনাফ তার বুক পকেট থেকে একটা কাগজ আর কলম বের করে মেহেরের সামনে ধরে বলে,
– একটা অটোগ্রাফ প্লিজ।
মেহের কোন প্রশ্ন করে না, সে অটোগ্রাফ দিয়ে দেয়। রাহনাফ কাগজটা ভাজ করে আবার তার বুক পকেটে পুরে নেয়। স্মিত হেসে বলে,
– বলেছিলাম না লেখিকা সাহেবা আপনার প্রথম অটোগ্রাফটা আমায় দিবেন।
রাহনাফের কথা শুনে মৃদু হাসে মেহের। তখন পিছন থেকে আহসান বলে উঠে,
– ভাবি কি করে জানবে বল, অটোগ্রাফের নাম করে তুই বিয়ে করে নিবি।
আহসানের কথা বেশ অবাক হয় মেহের। সে প্রশ্নের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাহনাফের দিকে তখন রাহনাফ বলে উঠে,
– আসলে অটোগ্রাফটা আমাদের কাবিননামায় নিয়েছি।
– মানে!! চোখ কপালে মেহেরের।
অতঃপর আহসান বলতে শুরু করে।
– আজ আপনার অটোগ্রাফ দিতে যাওয়ার কথা। কিন্তু রাহনাফ তো আপনার প্রথম অটোগ্রাফ চেয়েছে তাই সে আমাকে দিয়ে আপনাকে কিডন্যাপ করার।
আহসানের কথা শুনে মেহেরের কপালে হাত। সে প্রশ্ন করে,
– আপনারা কি একে অপরকে আগে থেকেই চিনতেন।
– রাহনাফ আমার চাচাতো ভাই। আর এই যে বাড়িটা দেখছেন এটা হলো আমাদের বাড়ি।শিকদার বাড়ি এটা।
আহসানের কথা শুনে মেহের চোখ গোলগোল করে তাকিয়ে থাকে বাড়ির দিকে। এটা তো বাড়ি নয় কোন রাজপ্রসাদ। মৃদু হাসে আহসান। সে রাহনাফের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,
– নতুন বউ তার উপর রোমান্টিক ওয়েদার। সময় নষ্ট করাটা ঠিক হবে না। আর হ্যা আশেপাশে সিসি ক্যামেরা আছে কিনা দেখেনিস। নাহলে মান সম্মান সব লাটে উঠবে। ভাগ্যিস সেদিনের ঘটনাটা সবার আগে আমার চোখে পরেছে। আমি ডিলিট না করে দিলে তোদের এই শহর ছাড়তে হতো। কথাগুলো বলেই চলে যায় আহসান।
রাহনাফ মেহেরকে তার কাছে টেনে নেয়। মেহের অভিমানি সূরে বলে,
– একটা অটোগ্রাফের জন্যে এত কাহিনী। আমি তো ভয় পেয়েছিলাম।
মৃদু হাসে রাহনাফ। সে মেহেরের কপালে লেপ্টে থাকা চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে মেহেরের কপালে নিকের ওষ্ঠদ্বয় ছুইয়ে দেয়। মেহের আবেশে তার চক্ষুদ্বয় বন্ধকরে নেয়। রাহনাফ মেহেরের চোখের পাতায় চুমু একে দেয়। তারপর ওকে জড়িয়ে ধরে।
নিজের রুমের জানালা দিয়ে এই রোমান্টিক দৃশ্যবলির সাক্ষী হচ্ছে আহসান আর নিকোটিনের ধোয়া উড়াচ্ছে। মেহেরের সম্পর্কে না জেনেই তাকে মন দিয়ে বসেচে সে। আহসান যেদিন ওদের সম্পর্কের কথা জেনেছে সেদিন থেকে মেহরকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু সে আধো মেহেরে ভুলতে পারছে কি! নিকোটিনের ধোয়া উড়িয়ে মনে মনে বলছে,
– তোমার ঠোঁটের স্বাধ গ্রহন করতে দিলে হয়তো আজ আমায় নিকোটিন টানতো না। নেওয়া হলো না তোমার ঠোঁটের মিষ্টি স্বাধ। আমি না হয় উড়াবো নিকোটিনের বিষাদ।
______________________
কেটে গেছে চারটা বছর। এই চার বছরে পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছুই। মেহের আর রাহনাফের ঘর আলো করে এসেছে দুটো সন্তান। যাদের দিনে ব্যাস্ত সময় কাটলেও লেখালেখি কথা ভুলে নি মেহের। চার বছরে নয়টা বই বের হয়েছে মেহেরের আর সবগুলা বইই বেস্ট সেলার ধরে রেখেছে। রাহিও দেশে ফিরে এসে এসেছে মাস কয়েক আছে। সে এখন রেদওয়ানের সাথে জমিয়ে প্রেম করছে। রাহির দাদি গত হয়েছে বছর দুয়েক আগে। সৈয়দ নওশাদ এখনো আগের অবস্থাতেই আছে। আলিহান আর মৌ ওদের একটা মাত্র ছেলে সন্তানকে নিয়ে আহমেদ ভিলায় থাকতে শুরু করেছে। সৈয়দা মাহবুবা স্কুল থেকে বিদায় নিয়ে [WAB] এ থাকেন। তিনি এখন (WAB] এর সভাপতি। পুরো দেশজুড়ে তার খ্যাতি ছড়িয়ে আছে। মেহের তার শাড়ি পরে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে এমনি সময় তার মেয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। পিছন থেকে ছুটে বসে রাহনাফ। তার হাতে মেয়ের খাবার। মেয়েটা মেহেরের শাড়ি টেনে ধরে বলে,
– আম্মু আমি কাবো না।
মেহের শাড়িটা কোন রকমে তার কোমড়ে গুজে নিয়ে মেয়েটাকে খাটের উপর বসিয়ে রাহনাফের হাত থেকে খাবার নিয়ে তাকে জোড় করে খাওয়াতে থাকে।এটা দেখে রাহনাফ মেহেরের হাত থেকে খাবারের বাটি নিয়ে বলে,
– আমি খাইয়ে দিচ্ছি। দিলেতো আমার আম্মুটাকে কাঁদিয়ে। বলেই মেয়েকে নিয়ে চলে আসে রাহনাফ। ড্রয়িংরুমে এসে ছেলে আর মেয়ের হাতে বল আর ব্যাট দিয়ে তাদের সাথে খেলতে তাকে। আর খেলার ফাঁকেফাঁকে ওদের দুইজনকেই খাইয়ে দেয় রাহনাফ। ততক্ষণে রেডি হয়ে নিচে ড্রইংরুমে পা রাখে মেহের। মেহেরকে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে থাকে রাহনাফ। যতবার সে মেহেরকে দেখে ততবারই তার প্রেমে নতুন করে পরে রাহনাফ।
আজ মেহের ওর তার মায়ের একসাথে প্রোগ্রাম আছে একটা টেলিভিশন চ্যানেলে। একজন লেখক হিসাবে মেহেরের যেমন খ্যাতি রয়েছে তেমন তার পরিচয় নিয়ে সবার মনে রয়েছে কৌতুহল। তার মা আর মেয়েকে নিয়ে একসাথে প্রোগ্রাম রেখেছে চ্যানেল কর্তিপক্ষ। মেহের তার দুই সন্তানকে আদর করে নেয়। তাদের একবার করে বুকে জড়িয়ে কপালে চুমু খায়। পাশ থেকে রাহনাফ হা হয়ে তাকিয়ে থাকলে সে রাহনাফের কাছে গিয়ে তার কপালে চুমু খেয়ে প্রস্তান করে।
টেলিভিশনে গল্প ও আড্ডা চলছে। দেশের হাজারো মানুষ তাদের প্রোগ্রাম দেখছে। মৌ রাহি আর সৈয়দ নওশাদ এক সাথে বসে তাদের প্রোগ্রাম দেখছে। সৈয়দ নওশাদ অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে টেলিভিশনের দিকে। মেহের যদি একবার তার বাবার নামটা বলে।
গালে হাত দিয়ে বসে আছে রাহনাফ। সে চাইলেও প্রোগ্রামটা দেখতে পাচ্ছে না। তার ছেলেমেয়েরা তাকে নিয়ে বাগানে চলে আসছে। এখানে এসে দুজনে মিলে খেলা করছে আর রাহনাফ গালে হাত দিয়ে বসে বসে ওদের খেলা দেখছেন।
গল্প আড্ডা আলোচনা সবই চলছে। সৈয়দা মাহবুবা তার সফল হওয়ার গল্প বলে তাদের। কিভাবে তিনি একজন একক মা হয়ে দুই মেয়েকে লালন পালন করেছেন তার গল্প বলেন। একেবারে জন্যেও তিনি মেহেরের বাবার পরিচয় দেননি। তাকে যতবার জিগ্যেস করা হয়েচে তিনি ততবারই বলেছেন, আমি একজন একক মা। মেহেরের বাবা নেই। যদি ওর বাবার পরিচয়টা সবাইকে বলে তাহলে আর আমি একক মা হলাম কোথায়। পরিশেষে তিনি বলেন,
– আমি একজন ডিভোর্সি নারী। দুই কন্যার মা আমি।আমি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। একজন সু-প্রতিষ্ঠিত নাগরিক আমি। আমার নিজের একটা পরিচয় আছে। হ্যাঁ আমি একক মা। আর আমার মেয়ের পরিচয় সে একক মায়ের সন্তান যার বাবার পরিচয় নেই। কেন সমাজে সবসময় পুরুষদের এত গুরুত্ব দেওয়া হয়। কেন সব সময় বাবার পরিচয়ের দরকার। একা কি বাচা যায় না? আমি সেই সব নির্যাতিত নারীরের উদ্দেশ্যে বলছে, আসুন আমরা নির্যাতন রোধ করি। ঘুরে দাঁড়াই আমারা, নিজের একটা পরিচয় গড়ে তুলি। সমাজে টিকে থাকতে হলে নিজের একটা পরিচয়ের খুব করে দরকার। আসুন আমরা তীব্র নিন্দা জানাই সেই সব পুরুষদের প্রতি যারা নারীদের অবহেলা করে। তাদের প্রাপ্র সম্মান দেয়না তাদের প্রতি। অবশেষে একটা কথা বলি, নিজের ভালো রাখার দায়িত্বটা অন্যের হাতে না দিয়ে নিজের হাতে তুলে নিন। তাহলে দেখবেন জিবনটা কত সুন্দর, কত রঙ্গিন।
_________সমাপ্তি ___________
[আসসালামু আলাইকুম। অবশেষে ইতি টানলাম দীর্ঘ এই গল্পটার। জানি আশা অনুরুপ গল্প উপহার দিতে পারিনি তবুও যারা ধৈর্য সহকারে এতদিন গল্পটা পড়েছেন তাদের জন্যে অগাধ ভালোবাসা। আশা করি আজ কম বেশী সবাই গল্পটা সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করে যাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।]