#মোহঘোর
#পর্বঃ১২
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
ত্রিনার চতুর, জমঙ্গ, গাঢ় দৃষ্টি। রেহাংশীকে বিছানায় বসিয়ে তার পাশেই ঘেঁষে বসেছে নিজে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে রেহাংশীকে দেখছে। শান্ত, নীরব, স্থির। যেমনটা শিকারী শিকার করার পূর্বে অবলোকন করে!
নাকের উপরে থাকা চশমাটা ঠিক করে পূনরায় মনোযোগ সহকারে রেহাংশীকে দেখছে ত্রিনা। বিব্রত হয় রেহাংশী। এত কাছে বসে একজন মানুষ এভাবে দেখাতে তার কেমন অস্বস্তি হচ্ছে!
ত্রিনা বিস্ময় নিয়ে চট করে বলল—
“তোমার লিপস্টিকটা কোন শ্যাডের? আর এইটা কী রঙ? আমি না বুঝতে পারছি না। তুমি কী জানো?”
রেহাংশী হালকা করে মাথাটা ঘুরিয়ে নরম চোখে তাকাল। ত্রিনা ব্যস্ত হলো রেহাংশীর আঁখিপল্লবে। দীর্ঘ, ঘন, কৃষ্ণকালো পল্লবের দিকে বড়ো করে তাকিয়ে বলল—
“এই তুমি আইল্যাশ লাগিয়েছ? না কী মাশকারা দিয়েছ?”
অপ্রস্তুত হয় রেহাংশী। এসব জিনিস তার হাতের নাগালে নয়। ব্যবহার তো দূর, কখনো ভাবেইনি। নিঃশব্দে ঋণাত্মক মাথা ঝাঁকায় রেহাংশী। ত্রিনা হতাশ হয়। চট করেই এক পশলা বৃষ্টির মতো হেসে ফেলে। অধর বিস্তৃত হয় খুশিতে। বলল—
“তুমি না কিউট। এই তোমাকে আমি কী বলে ডাকব? ভাবী বলব না রেহাংশী? তুমি তো বয়সে আমার থেকে একটু ছোটো হবে। ”
রেহাংশী ঠোঁট চিপে হাসে। ত্রিণা ব্যস্তমুখে বলল—
“তোমার হাসিটাও না সুন্দর। আরেকটু ঠোঁট ছড়িয়ে হাসবে, তাহলে আরও সুন্দর লাগবে। এই শাড়িটা তোমাকে কে দিয়েছে?”
রেহাংশী শাড়ির দিকে তাকাল। জননান্তিকে ভিজে উঠল তার চোখ। মুখটা স্বাভাবিক রেখে বলল—
“এইটা আমার মায়ের বিয়ের শাড়ি।”
“তাই! ও মা, এতদিন রেখে দিয়েছ?”
“হুম।”
“জানো, তোমার নুপূর আপুও না খুব সুন্দর। কিন্তু আমার তোমাকেই পছন্দ। তোমাকে না একদম বারবি ডলের মতো লাগে! ”
রেহাংশী ছোট্ট করে হাসল। মেয়েটা তার থেকে বড়ো হলেও কেমন অদ্ভুতভাবে কথা বলে! হয়তো বাবা-মায়ের ভালোবাসার চাদরে থাকলে এমন-ই হয়! ত্রিনা গরগর করে ফের বলল—
“এই তুমি ইনজাদ ভাইয়াকে কী ডাকবে? নুপূরের সাথে বিয়ে হলে তো দুলাভাই ডাকতে, কিন্তু এখন তো সে তোমার বর! জানো, আমার না একটা কথা মনে পড়ছে। দুলাভাই যখন বর। হাউ ফানি!”
খিলখিল করে হেসে উঠে ত্রিনা। রেহাংশী অপ্রস্তুত হয়। লজ্জায় তার চোখে নেমে আসে। মেয়েটা কীসব বলছে! তৎক্ষণাৎ দরজায় কড়া পড়ে। ইনজাদের ভরাট কণ্ঠস্বর ভেসে আছে।
“ত্রিনা, দরজা খোল।”
ত্রিনা চটজলদি দরজা খুলে দেয়। ইনজাদ ভেতরে ঢুকতেই তাকে দেখে রেহাংশীর দেহ জমে যায়। স্থির, নিষ্কম্প দেহের ভেতর অদ্ভুত শিউরণ হচ্ছে। ইনজাদ একপলক তাকাল রেহাংশীর দিকে। বুক ভর্তি শ্বাস নিল। রেহাংশীর নতজানু মুখ উঁচু হলো না। আড় গলায় বলল—
“তুই যা এখন।”
ত্রিনা প্রসন্ন হাসে। ইনজাদের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল—
“তোমার বউটা কিন্তু একদম পুতুলের মতো। মনে আছে আমাকে একটা পুতুল গিফ্ট করেছিলে? ওই যে পিংক কালারের। একদম ওইটার মতো।”
মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসে ত্রিনা। ইনজাদ সচল চোখে রেহাংশীর দিকে তাকাল। তার হাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। রেহাংশী হাতের তালু ঘষে যাচ্ছে।
“তুই যা এখন। খেয়ে ঘুমা। আর তোর হুলিয়া চেঞ্জ হয় না কেন? কী পরিস এগুলো? এই ছেলেদের পোশাক পরা ছাড়বি কবে ?”
“বিয়ের পর। সরো, সরো যেতে দাও।”
ত্রিনা তূরন্ত বেগে বেরিয়ে যায়। দরজা লক করে দেয় ইনজাদ। রেহাংশীর শ্বাস ভারী হতে থাকে। আচমকা কম্পন শুরু হয় তার শরীরে। শাড়ির আঁচল মুঠোয় নিয়ে অভাবিতরূপে কচলাতে থাকে। পায়ের আঙুল ঘষে যাচ্ছে একে অপরের সাথে। ইনজাদ মৃদু চোখে তা দেখছে। মেয়েটা ভয় পাচ্ছে! তার বিষবাণ ভয়ও পায়!
ইনজাদ আরেকটু এগিয়ে আসে। ঘনঘন শ্বাস নিতে থাকে রেহাংশী। ইনজাদের ফর্সা বাড়ন্ত পদযুগলের দিকে চেয়ে তার শরীরের কম্পন বাড়তে থাকল। গলা শুকিয়ে আসছে। নিজেকে সংকুচিত করার প্রয়াসে মনে হচ্ছে কোনো বলয়ে নিজেকে আবদ্ধ করে নেবে। ইনজাদ বিনা শব্দ করে রেহাংশীর সামনে বসে। জড়ীভূত দেহে একটু একটু করে চোখের পল্লব উপরের দিকে ওঠায় রেহাংশী। ইনজাদের মুখচ্ছবি সম্পূর্ণ দৃষ্টিগোচর হতেই হেসে ফেলে ইনজাদ। সেই হাসিতে হৃৎস্পন্দন থেমে যায় রেহাংশীর। পৌষের শীতের মতো জাড়কাটা দিয়ে উঠে তার কোমল দেহ। ইনজাদ অতি স্বাভাবিক গলায় বলল—
“ক্ষমা করবে আমাকে?”
ইনজাদের এই কণ্ঠ শূলের মতো বিঁধলো রেহাংশীর থমকে যাওয়া হৃৎপিন্ডে। এক মুহূর্তের জন্য তার শ্বাস নিতে কষ্ট হলো। অধর ছড়াল সে। ইনজাদ বিষণ্ণ সুরে বলল—
“আমি জানি ক্ষমা পাওয়ার মতো কিছু আমি করিনি। তবুও আশা তো রাখতে পারি। কারো প্রাণ তো কেড়ে নেইনি। নিজের প্রাণ অন্য কাউকে দিয়ে বসেছিলাম। ভাবতে পারিনি সেই প্রাণ ছাড়া এই দেহের কী হবে?”
“চাচী কোথায়?”
ইনজাদ ঠোঁট গুজ করে বলল—
“আম্মার প্রেশার ফল করেছে। এখন ভালো আছে। শুয়ে আছে ঘরে। চাচী নয়। এখন আর তার সাথে তোমার প্রতিবেশীর সম্পর্ক নয়। আমার প্রশ্নের জবাব দিলে না যে?”
রেহাংলী থমকাল। চোখ তুলে পূর্ণ নজরে ইনজাদকে দেখল। দেখা হয়নি মানুষটাকে এত ভালো করে। হলুদাভ ফর্সা গায়ের রঙে লম্বাটে আনন। ততটাও লম্বা নয়, আবার গোল বললেও সঠিক হবে না। পুরু, দীর্ঘ, ভ্রমরকালো ভ্রু। তার নিচে দুটো গভীর, গম্ভীর, সুডোল চোখ। চোখের মনি পুরোপুরি কালো নয়। হঠাৎ করে কেউ তাকালে বাদামি ভেবে নেবে। পুরু ওষ্ঠাধর। যাতে লেগে আছে অস্পষ্ট হাসি।
ইনজাদ হতাশ গলায় বলল—
“ডিসাইড করেছ আমার সাথে আর কথা বলবে না? তাহলে তো সেদিন মরে গেলেই ভালো হতো।”
আঁতকে উঠে ইনজাদের মুখ চেপে ধরে রেহাংশী। দমকা গলায় বলে উঠে—
“এসব কী বলছেন? কেন বলছেন?”
ইনজাদ সেই পদ্মকোমল হাত মুখ থেকে সরিয়ে তার তালুতে ছোট চুমু খেলো। বিদ্যুৎ বয়ে গেল যেন রেহাংশীর কম্পিত দেহ ভেদ করে। সে হাত ছাড়ল না ইনজাদ। নির্মল গলায় বলল—
“তোমার মুখ দেখে যাওয়ার পর আমার জবটা হয়েছে। যেখানে একজন ইমপ্লয়ির তিন থেকে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা লাগে, সেখানে আমার তো সার্টিফিকেট ছাড়া কোনো এক্সপেরিয়েন্স নেই। তবুও জবটা আমিই পেলাম।”
রেহাংশী স্নেহসিক্ত গলায় বলল—
“আল্লাহ যার ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন তাই হবে। এতে অন্য কারো হাত নেই।”
“তাহলে তুমি কেন ভাবো যা হচ্ছে তা তোমার কারণে হচ্ছে?”
রেহাংশী চুপ হয়ে যায়। যুক্তির মায়ার জালে আবদ্ধ হয় সে। ইনজাদ হৃষ্ট দৃষ্টিতে তাকায় রেহাংশীর নরম, তুলতুলে মুখের দিকে। চোখচ্ছেদ জলার্দ্র। ইনজাদ হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে একটু উঁচু হয়। রেহাংশীর হাত নিজের বুকের বা’পাশে ধরে আরেক হাত দিয়ে অতি সন্তর্পণে তার চোখের পল্লব ছুঁইয়ে দেয়। জলসিক্ত সেই আঁখিপুটের ভেজা স্পর্শ ইনজাদের আঙুলের ডগায়। সেই পানি রেহাংশীর ঠোঁটে এঁকে দেয়। নিজের ঘাড় নামিয়ে আনে রেহাংশীর গালের কাছে। তীক্ষ্ম নাকের ডগার ঘষা মেরে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়। রেহাংশীর অন্তর্দেশে জলপ্লাবনের ধারা ঝিরিঝিরি করে বইতে লাগল। অনতিক্রম্য সংকোচ যেন অনুপলেই উবে গেল। দীর্ঘ তৃষ্ণা নিয়ে ইনজাদকে ঝাপটে ধরল। ইনজাদ অপ্রমেয় প্রণয়ে দুরদিগম্য, দুর্ভেদ্য বলয়ে আবদ্ধ করল রেহাংশীকে। বক্ষের সমস্ত জায়গাজুড়ে বিষবাণের বিষে আড়ষ্ট হয়ে গেল সে। রেহাংশীর কাঁধের কাছে উষ্ণ শ্বাস বিক্ষিপ্ত হচ্ছে। তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনাস্বাদিত, হঠাৎ আগমন ঘটা এক তীব্র, প্রকট, পরিস্ফুটিত অনুভূতিরা সুড়সুড়ি দিতে লাগল। ইনজাদ চাপা স্বরে বলল—
“এইটুকুর অধিকার তো আমার আছে। লাইসেন্স পেয়েছি তো।”
ক্রন্দনে আচ্ছন্ন রেহাংশী। তার নেত্রদ্বয়ের স্ফীত ধারায় ভিজে উঠল ইনজাদের টিশার্ট, খামচে ধরল বুকের কাছে। ইনজাদ হাতের বেড় দৃঢ় করে ফিচেল গলায় বলল—
“গেঞ্জি ছিঁড়ে ফেলবে না কী আমাকে?”
“আপনাকে।”
“ইশ! তাহলে এত হ্যান্ডসাম বরটা মিস হয়ে যাবে তোমার।”
রেহাংশী ভরা যমুনার বাঁধ ভেঙে দেয়। ইনজাদ মজার ছলে রেহাংশকে জড়িয়ে নিয়েই মেঝের ওপর শুয়ে পড়ে। হতভম্ব রেহাংশী তড়িঘড়ি উঠে বসে।
মাথার নিচে হাত দিয়ে তার উপর শিয়র রাখে ইনজাদ। চটপটে হাসে। সেই হাসিতে ভ্রু কুঁচকায় রেহাংশী। সংকোচ নিয়ে বলল—
“হাসছেন কেন?”
ইনজাদ নিমীলিত আঁখিতে আবেশিত গলায় বলল—
“ঘুম পাচ্ছে আমার। কতদিন শান্তিতে ঘুমাই না!”
মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় ইনজাদের কোমল, সুশ্রী, বিমর্ষ মুখের দিকে আয়তলোচন দুটো স্থির করে রাখে রেহাংশী। অজ্ঞাত স্বর বের হলো তার গলা থেকে। কেমন বিদুর শোনাল তা। বলল—
“কেন?”
চট করে চোখ মেলে ইনজাদ। ঘাড় কাত করে মোহনীয় সুরে বলল—
“যদি বলি তোমার জন্য! বিশ্বাস করবে?”
ব্রীড়াতে কাতর হয় রেহাংশী। জমে হিমালয় হয়ে এলো সে। চোখ নামিয়ে নিল। পাঁজরে পাঁজরে সংঘর্ষ চলছে। ইনজাদ উঠে বসে। রেহাংশীর একদম কাছে। তার গালে হাত রাখে। চোখ তুলে তাকাল রেহাংশী। মৌনতায় নেমে এলো চোখের বার্তা। একে অন্যের মোহে আচ্ছন্ন হওয়ার মাহেদ্রক্ষণ। ইনজাদ তার তৃষ্ণার্ত ওষ্ঠাধর ছুঁইয়ে দেয় রেহাংশীর সমান্তরাল, মসৃণ ললাটে। চক্ষু মুদন করে মেয়েটি। শ্বাসক্রিয়া বাড়তে থাকে। নীরব ঘাত-প্রতিঘাতে একে অন্যকে পর্যদুস্ত করার নিরন্তর প্রচেষ্টা। ইনজাদের হৃৎকুঠিরে আগুনের শিখা জ্বলে ওঠে। অভেদ্য, দুর্গম, নিচ্ছিদ্র দূর্গ জয়ের অভীপ্সা জাগ্রত হয় তার পুরুষ মনে। অধরের স্নেহার্দ্র ছোঁয়া ললাট চুইয়ে নেমে আসে চোখের পাতায়। বসন্তের প্রজাপতি উড়তে থাকে রেহাংশীর অন্তঃকরণে। ইনজাদ হাসে। শব্দহীন তৃপ্তিকর হাসি। রেহাংশীর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল—
“এক বিষবাণে আমার ঘুম কেড়ে নিলে! এখন তো পুরো বিষকুন্ড আমার। যখন প্রতিটি শিরা-উপশিরায় তোমার বিষ প্রবাহিত হবে, বাঁচব তো আমি?”
লজ্জায় রাঙা হয় রেহাংশীর বদন। অধরে ধরে কাঁপন।মুগ্ধ নয়নে তা হৃদয় জুড়িয়ে উপভোগ করছে ইনজাদ। তার অপ্রতিরোধ্য ওষ্ঠাধরের সাহস বৃদ্ধি পায়। প্রাণনাশিণীর কাছে নিজেকে সোপর্দ করতে ব্যাকুল সে। কিন্তু বাতাস কাঁপিয়ে বেজে উঠল মোবাইল ফোন। পা ছড়ায় ইনজাদ। পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে ব্যগ্রতা নিয়ে তার রিসিভ করেই ধমকে উঠে বলল—
“তোর খেয়ে-দেয়ে কোনো কাজ নেই! অসময়ে ফোন করিস কেন?”
মেহমাদ বিরক্তি নিয়ে বলল—
“ফিকিরি আলাপ করবি না। তাড়াতাড়ি ঢাকা আয়।”
ইনজাদ চমকিত গলায় বলল—-
“বিয়ে করেছি বাসর করিনি এখনো! আর তুই বলছিস ঢাকা যেতে! মাথা খারাপ তোর?”
নিজের কথায় নিজেই হতভম্ব হয়ে যায় ইনজাদ। রেহাংশীর চমকিত মুখের দিকে তাকিয়ে একটা ভোলা ভোলা হাসি দিয়ে বলল—
“জাস্ট আ মিনিট।”
ইনজাদ উঠে গিয়ে জানালার কাছে দাঁড়ায়। কালো আকাশের এক ভরাট চাঁদ। সেদিকে চেয়ে কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলল—
“পাগল হয়েছিস? কী বলছিস তুই?”
“দেখ ভাই, আমার কিচ্ছু করার নাই। আঙ্কল কাল রাতের ফ্লাইটেই সিংগাপুর যাবে। তাই বিকেলের মধ্যেই রেস্টুরেন্টের উদ্বোধনের কাজ শেষ করবে। তুই দুপুরের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছা।”
ইনজাদ বিষিয়ে উঠা গলায় বলল—
“মানে কী এসবের? বিয়ে করেছি মাত্র। কত ঝামেলা শেষ করেছি জানিস! বউয়ের সাথে এখনো দুটো কথা বলতে পারিনি আর তুই বলছিস ঢাকা যেতে। রেস্টুরেন্ট শুরু করতে তো আরও এক সপ্তাহ লাগার কথা!”
“ভাইরে ভাই! বউ পালিয়ে যাচ্ছে না তোর। তবে কাল যদি ঢাকা না আছিস তোর চাকরি নির্ঘাত পালাবে। আর কিছু জানি না। বাকি টা তোর ইচ্ছে। ইচ্ছে হলে আয়, নাহলে বাসর কর। যেইটা তোর খুশি। পরে আমাকে কিছু বলতে পারবি না।”
মেহমাদ লাইন কেটে দেয়। হাতের ঘড়ির দিকে দৃষ্টি ফেলে ইনজাদ। ব্যস্তময় চাহনি তার। রেহাংশী ভয় জড়িত গলায় বলল—
“কী হয়েছে?”
ইনজাদ নিরদ্বেগ স্বরে বলল—
“আমাকে সকালেই ঢাকা যেতে হবে।”
“সকালেই চলে যাবেন?”
ইনজাদ তাকাল। রেহাংশীর চোখ জোড়ায় বিস্ময়ের সাথে উদ্বেলতা। ইনজাদ মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে অবিচলিত গলায় বলল—
“চিন্তা কোরো না। তোমাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাচ্ছি না। তুমিও আমার সাথে যাবে। চেঞ্জ করে হাত-মুখ ধুয়ে নাও। আমি বাবার সাথে কথা বলে আসছি।”
ইনজাদ দ্রুতপায়ে দরজা কাছে যেতেই রেহাংশীর নিমগ্ন কণ্ঠস্বর—
“আমার কাছে তো আর শাড়ি নেই।”
ইনজাদ ফিরে তাকাল। উর্বরমস্তিষ্ক এতসময় ঘোরের মধ্যে ছিল। না হলে মেয়েটা শাড়ি পরে আছে তা একবারও লক্ষ্য করল না সে! শাড়ির ভাঁজে শরীরে বাড়ন্ত ভাব আসলেও মুখটা সেই বাচ্চাদের-ই। ইনজাদ নরম হাসল। বলল—
“তুমি বসো, আমি ত্রিনাকে পাঠাচ্ছি।”
মেয়েটাকে শাড়িতে দেখেই যেন আরেক দফা প্রেমে পড়তে ইচ্ছে হলো ইনজাদের। তবে নিরুদ্বেগ সে। রহস্য হাসে ইনজাদ। যা তার তা শুধু তার-ই। অন্য কারো সেখানে কোনো অধিকার নেই।
চলবে,,,
(বি. দ্র:
‘তোমার নামে’ নিয়ে অনেকের আগ্রহ দেখলাম! তবে গল্প পোস্ট করলে এদের মধ্যে অর্ধেক ঘুমিয়ে পড়বেন। প্লট তো ঠিক করা শেষ, তবে আমি লিখছি না। ব্যাপারটা এমন নয় যে আমি দুটো একসাথে লিখতে পারব না। আমি শুধু পাঠকদের সক্রিয়তা দেখলাম।
‘মোহঘোর’ এ পাঠক নেই। হয়তো আপনাদের ভালো লাগছে না। তবে ‘হতাশাবাদী’ আর ‘অধৈর্য’ লেখিকা তুষ্ট। আমি আমার মতো করে লিখতে পারছি। এই উপন্যাসটা আমার অনেক পছন্দের। তাই এর সাথে হেরফের হবে না। তবে আমি খুশি নই। পাঠক প্রতিক্রিয়া ছাড়া লেখার কী মূল্য বলুন? আমার হাজার ফলোয়ারে মাত্র দুইশত রিয়েক্ট! ‘তোমার নামে’ এর পোস্টে সত্তর প্লাস আগ্রহী পাঠক। কিন্তু ‘মোহঘোর’ এ বিশ হতেও অনেক কষ্ট। কষ্টিত নই আমি, না হতাশ। নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দিতে হয়। আমি শুধু মনে করব আমার লেখা পাঠকদের হৃদয়কে ছুঁতে পারছে না।
‘তোমার নামে’ আমার মস্তিষ্কেই থাক। কখনও যদি মনে হয় পাঠক সত্যিই সক্রিয় লিখে ফেলব। তার আগে নয়।
রিপ্লাই করি না বলে কেউ মন খারাপ করবেন না। অবশ্য তা দু’একজন। তবুও বলছি, গল্প পোস্ট করার আধা ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা পর হয়তো একটা মন্তব্য বা গঠনমূলক মন্তব্য আসে; ততক্ষণে আমি অফলাইন হয়ে যাই। তাই দুঃখিত। ভালো থাকবেন।
হ্যাপি রিডিং। ধন্যবাদ।)