#মোহঘোর
#পর্বঃ৮
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
বদ্ধদৃষ্টিতে আবিষ্ট হয়ে বসে আছে ইনজাদ। ক্যাফের অবারিত প্রান্তে তার উন্মুক্ত সরল দৃষ্টি। পলক না ফেলে সে চেয়ে আছে মগ্ন হয়ে। ক্যাফে সংলগ্ন ফুটপাতে হাজার মানুষের একের পর এক চলাচল। ইনজাদের ভাবের কোনো পরিবর্তন হলো না। এমন নয় সে কারো জন্য অপেক্ষা করছে বা কাউকে দেখার প্রবল বাসনা তার হৃৎপ্রকোষ্ঠে উথালপাথাল করছে। আসলে সে ভাবছে। একরত্তি এক বিষবাণকে ভাবছে।
ইনজাদের পাশে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসেছে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মেহমাদ। মেহমাদ সংকীর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইনজাদের দিকে। তার অনঢ়, অবশ চাহনিতে কোনো পরিবর্তন না করেই প্রশ্ন ছুড়ল—
“কী হয়েছে খুলে বলবি? না কি এভাবে ধ্যাণ ধরে বসে থাকবি! জব পেয়েছিস কই বন্ধুদের ট্রিট দিয়ে তাদের দোআ নিবি, তা না করে কী এমন বোবা ব্যাঙ হয়ে বসে আছিস!”
ইনজাদ পলক ফেলল। রাস্তার ওপারে তার দৃষ্টি। ঝাল মুড়িওয়ালার সামনে দুটো স্কুল ড্রেস পরা বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছে। তার অপর পাশে একটা কিশোর ছেলে। তার কাঁধে স্কুল ব্যাগ। দুটো মেয়ে হেঁটে গেল। একজনকে দেখে চমকে গেল ইনজাদ। মুহূর্তে তার ভাবনায় ছেদ পড়ল। পলক ফেলে আবার তাকাতেই মনে হলো সে ভুল দেখেছে। ধাতস্থ করে নিল নিজেকে। মেহমাদ চমকিত হলো। সেই সাথে বিরক্ত। নাকের ডগা ফুলিয়ে বলল—
“তুই কিছু বলবি না আমি চলে যাব?”
ইনজাদ হালকা করে ঘাড় ঘুরালো। নরম চোখে চেয়ে মুক্ত গলায় বলল—
“কী বলব?”
মেহমাদ ফোঁস করে দম ফেলল। ঠোঁট চেপে ধরল। নিজের রাগ সংবরণ করে বলল—
“সন্ন্যাসীর মতো আচরণ করছিস কেন তাই বল। জব পেয়ে খুশি হসনি? না কি সেলারি পোষাবে না?”
ইনজাদ তাচ্ছিল্য হাসল। হেয়ালি গলায় বলল—
“দুটোর কোনোটাই নয়। সমস্যা অন্য। সমাধান করতে পারবি?”
মেহমাদ দম্ভ করে বলল—
“প্রেমে পি.এস. ডি. করছি আমি। সেই সম্পর্কে হলে বল।”
বিস্মিত হলো ইনজাদ। তার চোখের কোটর নিজের অগোচরেই প্রশস্ত হলো। কপালে পড়ল ভাঁজ। চোয়ালে এলো দৃঢ়তা। কণ্ঠে উদ্বেলতার সাথে কৌতূহল। আগ্রহী গলায় বলল—
“তোর এমন মনে হলো কেন?”
মেহমাদ শার্টের কলার টেনে ভাব নিল। আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল—
“আমার গার্লফ্রেন্ডদের সিরিয়াল কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা আমি নিজেও জানি না। এসব তো আমি চোখ বন্ধ করে বুঝে যাই। তোর সামনে তো চোখ খোলা রেখে বসে আছি।”
হতচকিত ইনজাদ গম্ভীর গলায় বলল—
“প্রেম নয়, দোটানা।”
“খুলে বল। দেখি কিছু করতে পারি কি না।”
ইনজাদ মাথা ঝাঁকাল। প্রথম দিন থেকে ঘটা সব ঘটনা খুলে বলল। এমনকি নিজের ভাবনার কথাও। মেহমাদ শান্তভাবে সব শুনল। মৌনতা কেটে বিজ্ঞের মতো বলল—
“তুই প্রেমে পড়েছিস।”
দ্রুত অস্বীকার করে ইনজাদ। তার বক্তব্য সে শুধু চিন্তিত রেহাংশীকে নিয়ে। তাকে সে ভালোবাসে না। নুপূরকে পছন্দ করে সে। সে ম্যাচিউর। একে অপরকে বোঝার ক্ষমতা তাদের আছে। রেহাংশী নিছক এক বাচ্চা মেয়ে। তাকে নিয়ে ইনজাদ শুধুই শঙ্কিত।
“মোটেও না। রেহাংশীকে আমি ভালোবাসি না।”
মেহমাদ আড় চোখে চেয়ে ধারালো কণ্ঠে বলল—
“আমি কখন বললাম তুই রেহাংশীকে ভালোবাসিস?”
হতভম্ব হয়ে যায় ইনজাদ। নিজের চেতন মনকে দমাতে পারলেও অবচেতন মন তার কথা বলেই ফেলে। ইনজাদ প্রসঙ্গ কাটাতে বলল—
“ফাজলামি করিস না। আমি এমনিতেই বলেছি।”
হা হা করে হেসে উঠে মেহমাদ। ফিচেল গলায় বলল—
“বন্ধু, প্রেমে পড়া বারণ। কিন্তু তবুও মানুষ প্রেমে পড়ে। প্রেম তো এক নেশা, আসক্তি। পৃথিবীর সবচেয়ে নিষিদ্ধ নেশা। এই নেশায় যে একবার পড়ে, শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত সে বুঝতেই পারে না এই নেশার তীব্রতা কতটা গভীর, নিচ্ছিদ্র আর অসীম। বের হওয়া মুশকিল।
প্রেম! দুই অক্ষরের সবচেয়ে নিখুঁত, ধারালো, হিংস্র শব্দ। প্রেম! দুই অক্ষরের সহজ, মোলায়েম, মন্থর অনুভূতি। প্রেম! দুই অক্ষরের নিষ্ঠুর, নির্দয়, নির্মমতার প্রতীক। যার সত্যিকার আস্বাদনে কেউ জীবন পার করে দেয়, আর কারো অলক্ষ্যে তার সামনেই থেকে যায় তার প্রেম। প্রেম, বড্ড অসহায়! বড্ড পোড়ায়! নির্ঘুম রাতের সাক্ষী হয়। প্রেম, চন্ডি হয়, হয় রণতূর্য! ”
কথা বলতে বলতে গাঢ় হয়ে যায় মেহমাদের কণ্ঠ। ইনজাদ ভারমুক্ত গলায় বলল—
” এখন এসব প্যাঁচাল পারিস না। আই এম কনফিউসড! আমি বুঝতে পারছি না। আমার মস্তিষ্ক সাড়া দিচ্ছে না রেহাংশীকে। নুপূর! যাকে দেখে প্রথমবার আমার কিছু অনুভূত হয়েছে। রেহাংশী! যার চোখের চাহনি, যার কথা, যার প্রতিটি পলক আমাকে ভাবতে বাধ্য করে। যে আমার অবচেতন মনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। যতবার আমি চোখ বন্ধ করে নুপূরকে ভাবতে চাইছি ততবার রেহাংশীর বাচ্চা চেহারটা আমার সামনে ভেসে ওঠছে। ওই চোখের তীক্ষ্ম চাহনি, ওই ধারালো কন্ঠ। যা ছিন্নভিন্ন করছে আমাকে। কিন্তু যখনই আমি বাস্তব ভাবি আমার মন সায় দিচ্ছে না। আই এম ফেড আফ ইয়ার!”
মেহমাদ টেবিলের ওপর থেকে ঠান্ডা পানির গ্লাস নিয়ে ইনজাদকে এগিয়ে দেয়। ইনজাদ উৎসুক নজরে তাকায়। মেহমাদ আলতো করে ঘাড় কাত করে বলল—
“গিলে নে। আমি বলছি। ”
ইনজাদ পানি পান করে। শান্ত হয়ে বসে বুক ফুলিয়ে শ্বাস নেয়। মেহমাদ দুই হাত রাখে টেবিলের ওপর। গলার স্বর অবারিত করে বলল—
“শোন, প্রেমে মানুষ দুইভাবে পড়ে। এক, লাভ এট ফার্স্ট সাইট। মানে প্রথম দেখায় প্রেম। এটা অনেকটা ফ্যান্টাসি টাইপ। আমাদের ফিল্মি জগতে এমনটা হয়। নায়ক নায়িকাকে প্রথমবার দেখেই কুপোকাত। তারপর কো-ইন্সিডেন্টলি তাদের বারবার দেখা হয়। এবং তাদের সম্পর্ক দৃঢ় হয়।
দুই, সেটাকে আমি নাম দিয়েছি ” ভালোবাসার পর প্রেম”। এটা একদম আমার নিজস্ব মতামত। তুই একটু ভাব, প্রেম আর ভালোবাসা অনেকটা এক হলেও দুটো আলাদা ভাবার্থ বহন করে। প্রেম করলেই প্রেমিকা হয়। যার চোখের নেশা আমাদের নেশার্ত করে না, করে তার ঠোঁটের আদুরে ছোঁয়া। কিন্তু, যাকে আমরা ভালোবাসি তার ঠোঁট নয়, ওই চোখেই যেন জনম জনম চেয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়। প্রেমিকার পাশ ঘেঁষে বসলে তাকে আরেকটু কাছে এনে দৈহিকক্রিয়ায় মত্ত হতে ইচ্ছে হয়, কিন্তু ভালোবাসার মানুষটির পাশে বসে তার চুলের ঘ্রাণেই বিবশ হতে ইচ্ছে হয়। প্রেমিকার সাথে মোবাইলে কথা বললে তাকে দেখার তৃষ্ণা জাগে। ছুঁতে ইচ্ছে করে তাকে একান্তভাবে। কিন্তু ভালোবাসার মানুষটির কণ্ঠ শুনেই বলতে ইচ্ছে হয় সময় থমকে যাক এই ধরার, আমি তোমাতেই হবো এই পলেই বিলীণ। প্রণয় নিষিদ্ধ জেনেও হাজারো প্রণয়ী- প্রণয়িনীর জন্ম এই মেদিনীর বুকে। কিন্তু পবিত্র ভালোবাসার চিহ্ন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আগের যুগের কথা ভাব, বাবা- মায়ের পছন্দেই ছেলে- মেয়েদের বিয়ে হতো। তারা সংসার করত, সন্তান জন্ম দিতো। হাজার দিবস একে অন্যের সাথে কাটিয়ে দিতো। তাদের ভালোবাসা দিন দিন বাড়ত, কখনো কমত না। কারণ, তারা ভালোবাসার পরে প্রেমে পড়েছে। আগে প্রেম নয়। প্রেম ক্ষণস্থায়ী এক মোহ। মোহঘোর! যার অস্তিত্ব আমাদের চর্মচক্ষুতে, হৃদয়াক্ষীতে নয়। নুপূর তোর সেই প্রেম, তোর মোহঘোর, যার প্রভাব শুধুই তোর চোখে। আর রেহাংশী তোর ভালোবাসা, যার দৃশ্যতা তোর হৃদয়াক্ষীতে, চর্মচক্ষুতে নয়। তাই তোর বদ্ধ দৃষ্টিতেই তার দেখা মিলে।”
অস্থিরচিত্তে ফোঁস ফোঁস করতে থাকে ইনজাদ। তার অন্তরিন্দ্রিয়ে অসিত জলদের ছড়াছড়ি। বিদঘুটে এক বজ্রধ্বনিতে কম্পিত হচ্ছে সে। কিন্তু বর্ষণ হচ্ছে না। ইনজাত ভীত, উৎকন্ঠিত, উৎপীড়িত। শরীরের প্রতিটি লোমকূপে কী প্রকটরূপে আবির্ভুত হচ্ছে যন্ত্রণা! নিষ্পেষিত সে, দলিত সে। যন্ত্রণায়তুমি কাতরাতে কাতরাতে বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছে। এক অজানা যোষিতার বিষাবাণে তারা সর্বাঙ্গ বিষাক্ত। বাঁচতে হলে সেই বিষের প্রতিষেধক তার প্রয়োজন। তাই তাকে ফিরতে হবে। সেই যোষিতার কাছেই ফিরতে হবে। উদ্ভ্রান্তের মতো উঠে দাঁড়ায় ইনজাদ। মেহমাদ চকিত গলায় বলল—
“কোথায় যাচ্ছিস?”
“বাড়ি। ওকে ভালোবাসি কি না জানি না। কিন্তু এই বিয়ে আমি হতে দেবো না।”
“কী করবি? নিজে বিয়ে করবি? আনটি তো আগেই কেল্লাফতে করে রেখেছে।”
“দরকার পড়লে আমার চেয়ে ভালো কাউকে নিয়ে আসব ওর জন্য।”
মেহমাদ রহস্য হাসল। সম্মতি দিয়ে বলল—
“অল দ্যা বেস্ট। আশা করি তুই তোর মনের কথা শুনবি।”
ইনজাদ ব্যস্ত হয়ে ছুটলে সড়ক পথে। শহরাঞ্চলের কোলাহল আজ তার কাছে শান্ত, নির্বিকার, নিশ্চল। সে উদ্ভ্রান্ত, উন্মাধ, উন্মত্ত।
মেহমাদ রহস্যচ্ছলে বলল—
” প্রেম! এক নিষ্ঠুর মায়াজাল,
ক্ষণিকের মোহ, বোঝে না জীবনের টান
তূরন্ত বেগে ছুটে চলা পথিক
মোহঘোরে যার হারায় দিকবিদিক!”
,
,
,
রওশন আরার সুখের শেষ নেই। খুব করে পান চিবুচ্ছেন তিনি। রান্নাঘরের ছোট্ট জানালা দিয়ে বাতাস আসছে। মেঝেতে চালের গুড়ার ছড়াছড়ি। দুটো পিড়ির ওপর বসে আছে সোমা আর রেহাংশী। তাদের হাতভর্তি মন্থন করা চালের গুড়ার অংশ। দুইজন খুব মনোযোগ দিয়ে পিঠা বানাচ্ছে। নকশী পিঠা। খেজুর কাঁটার নিখুঁত ব্যবহার করে পিঠা বানিয়ে যাচ্ছে তারা। ঝিনুক বেগম চুলোয় রান্না বসিয়েছেন। গরম তেলে পানি পড়ায় ছ্যাত ছ্যাত আওয়াজ হচ্ছে।
রেহাংশী সোমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল—
“সোমা আপা, বিকালে নদীর পাড়ে যাবা? পারুল আসছে। ওর সাথেও দেখা করে আসব।”
সোমা চিন্তিত মুখে দুঃখী গলায় বলল—
“নাগো ছোডো আফা। আইজ না। কাইল যামুনে। আইজ তাত্তারি বাড়ি যাওয়া লাগব। মেহমান আইব।”
“ও আচ্ছা। তাহলে কাল যাব। তুমি তাড়াতাড়ি আইসো।”
“আইচ্ছা। ”
রওশন আরা শান দেওয়া গলায় খেমটি মেরে বললেন—
“এত ফুসুরফুসুর ক্যান? তাত্তারি কাম শেষ কর। আরো কত কাম বাকি।”
“করতাছি, করতাছি। তুমি এত চিল্লাইয়ো না দাদি।”
সোমার কথায় রওশন আরা চোখ রাঙিয়ে চাইলেন। রেহাংশী কথা বাড়াতে মানা করল। রান্নাঘরের চৌকাঠে এসে দাঁড়ায় নুপূর। থমথমে গলায় বলল—
“রেহাংশী, একটু আমার ঘরে আয় তো।”
রেহাংশী মাথা তুলে বলল—
“তুমি যাও আমি আসছি।”
“হুম।”
,
,
,
“ইনজাদের সাথে তোর কীসের সম্পর্ক?”
দ্বিধান্বিত চোখে তাকাল রেহাংশী। এমন অহেতুক প্রশ্নের কূল- কিনারা পাচ্ছে না সে। চোখ -মুখ কুঁচকে এক অবিশ্বাস্য কথা বলে ফেলল সে।
“স্বামী হয় আমার।”
দাপিয়ে উঠে নুপূর।
“এসব কী ধরনের বাজে কথা?”
“তুমিই তো জিজ্ঞেস করলে।”
“তুই আজকাল অনেক বেশি কথা বলিস।”
“আর তোমরা? তোমরা কিছু বলো না! একটা অজানা মানুষের সাথে আমার কীসের সম্পর্ক?”
“পায়েল তোকে ওর সাথে কথা বলতে দেখেছে। কী কথা বলছিলি?”
“প্রেমের কথা বলছিলাম।”
“রেহাংশী!”
গলা চড়িয়ে চিৎকার করে উঠে নুপূর। রেহাংশী শান্ত। পায়েল বিছানায় বসা থেকে উঠে বলল—
“অজানা-ই যখন, তখন এত কীসের কথা?”
রেহাংশী ফুঁসলে উঠে বলল—
“তুমিও তো দরজা বন্ধ করে নুহাশ ভাইয়ার সাথে কথা বলো। কই, আমি তো তোমাকে কখনো জিজ্ঞেস করিনি এত কীসের কথা তোমার তার সাথে।”
পায়েল বজ্রের মতো চমকে উঠে রেহাংশীকে চড় মারার জন্য হাত তুলতেই তার হাত ধরে নুহাশ। কটমট কর চেয়ে বলল—
“সুযোগ পেলেই ওর গায়ে হাত তোলা তোমার অভ্যাস হয়ে গেছে পায়েল। দুই বোনের কী আর কোনো কাজ নেই? কে কার সাথে কী করল, কে কী করল শুধু এসব-ই! তোরা যা করেছিস তার ধারেকাছেও নেই রেহাংশী। তবুও আঙুল কেন বারবার ওর দিকে ওঠাস?”
নুহাশের ছোড়া বুলিতে তেঁতে উঠে নুপূর। ক্ষোভিত গলায় বলল—
“নুহাশ! একদম ওর হয়ে দালালি করবে না। ও কী বলেছে শুনেছ?”
“নুহাশ নয়। নুহাশ ভাইয়া বলবি। তোর থেকে প্রায় দুই বছরের বড়ো আমি। আর পায়েল থেকে গুনে গুন সাত। তাই নুহাশ বলার পর সাথে ভাইয়াও বলবি দুজনে।”
দুই বোন আশ্চর্য হয় নুহাশের কথায়। নুহাশ রেহাংশীর হাত টেনে বের হয়ে আসে সেখানে থেকে।
নিজের কক্ষের সামনে আসতেই নুহাশের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় রেহাংশী। নুহাশ মনমরা গলায় বলল—
“যা ঘরে যা। তোকে আমি কী বলেছিলাম মনে আছে?”
“ফুফু আমাকে কখনো মেনে নেবে না নুহাশ ভাইয়া। পায়েল আপুকে তিনি মাথায় করে রাখবেন।”
“আর তোকে আমি মাথায় করে রাখতাম।”
“আমি চাই না আমার জন্য সবাই তোমার কাছ থেকে দূর হয়ে যাক। পরের দেওয়া কষ্ট বুক পেতে সয়ে নেওয়া গেলেও, আপনজনের ঘৃণাও যে মৃত্যুসম যন্ত্রনা দেয়। আমি কখনো চাইব না তা তুমিও সহ্য করো। পায়েল আপুকে বিয়ে করে নিয়ো তুমি। ও তোমাকে খুব ভালোবাসে। তোমরা ভালো থাকবে।”
রেহাংশী সিক্ত নয়নে ছোটে নিজের কক্ষে। নুহাশের মাও সহ্য করতে পারে না রেহাংশীকে। তার ধারণা রেহাংশীর কারনেই তার স্বামী পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। একদিন রেহাংশীকে নিয়ে বাইরে বেরিয়েছিল নুহাশের বাবা। পথে গাড়ির ধাক্কায় তার পায়ের হাড় ভেঙে যায়। রেহাংশী তার হাত থেকে ছিটকে পড়ে পাশের খড়ের গাদায়।
চলবে,,,