মোহিনী পাঠ-২

Story – মোহিনী
Writer – Nirjara Neera
পার্ট – ২
.
গাড়িতে উঠলে আমার একটা সমস্যা ছিল বমি করা। জায়গা যদি একটু দূর হয় তাহলে আমার বমি স্টার্ট হয়ে যায়। আর এখানে কোনো প্রস্তুতি ছাড়া আসছি। তার উপর এদের সাথে যাচ্ছি। আমার বমি করা নিয়ে ওদের অভিব্যক্তি কেমন হবে তা নিয়ে টেনশনে মরে যাচ্ছিলাম। তার উপর এটা হাইস। এগুলাতে বমি আর বেশি আসে। মনে মনে আল্লাহর কাছে পার্থনা করলাম যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য। পুরা গাড়িতে মারোয়া বক বক করছিল আমার সাথে। বাকি সবাই নিশ্চুপ হয়ে ছিল। মারোয়া কতক্ষণ পরপর আমাকে বলছিলো
-“ম্যাম আপনি শুনতেছেন?”
-“হু! শুনতেছি। তারপর কি হল?”
আমার ঝিমুনি আসতে লাগল। টের পেলাম মারোয়া আমাকে শুকতেছে। কতক্ষণ আমার হাত, কতক্ষণ আমার চুল, এমনকি বুকেও শুকতে যাবে আমি ধরে ফেললাম।
-“মারোয়া তুমি কি করছ?”
-“ম্যাম আপনার গায়ে এত মিষ্টি গন্ধ কেন? আমার শুধু শুকতে ইচ্ছা করছে। কোন পারফিউম এটা?”
আমার হাসি পেল। বললাম
-“এটা পারফিউম না। এটা বেলি ফুলের গন্ধ।”
-“ওয়াও বেলি ফুল! আমিও চাই বেলি ফুল।”
.
মারোয়া আসলেই খুব কিউট।। আমি মনে মনে হাসলাম।
বেশ কিছুক্ষন পর আমি গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঝাকুনি খেয়ে ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ খুলে দেখলাম অচেনা জায়গায় আছি। কোলের দিকে তাকাতেই দেখলাম মারোয়া আমার কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে। মুক্তা এখনো ঘুমে। তবে মারোয়ার আম্মুর ও ঝাকুনি খেয়ে ঘুম ভেঙ্গেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম
-“কি হল?”
মামুন এই প্রথম বার আমার সাথে কথা বলল। সে বলল
-“জানিনা। দেখতে হবে।”
-“ড্রাইভার কে জিজ্ঞেস করো কি হয়ছে।”
-“ড্রাইভার যাচ্ছে দেখতে কি হয়েছে।”
আমরা গাড়িতে বসে রইলাম। মামুন আর ড্রাইভার দেখতে গেল কি হয়ছে? মামুন এসে বলল টায়ার পাংচার হয়ে গেছে। কিছুটা সময় লাগবে ঠিক করতে। গাড়ি থেকে বেড়িয়ে সবাই কে একটু হাটাহাটি করতে বলল। মারোয়ার আম্মু বের হয়ে গেলেন। মুক্তা ঘুম থেকে উঠল না। আমাকেও বাইরে যেতে হবে। কিন্তু মারোয়া কে জাগাচ্ছি ও উঠছে না। ঠিক সে সময় মামুন কিছু একটা করতে গাড়িতে আসল। যখন আমাকে দেখল আমি মারোয়া কে জাগাচ্ছি কিন্তু মারোয়া উঠছেনা তখন সে এগিয়ে এলো। নিজে এসে মারোয়া কে জাগাতে লাগল। তখন আমার অস্বস্থি কিছুটা বেড়ে গেল। কারন মারোয়া আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিল। আর মামুন আমার খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল। আমি নিশ্বাস বন্ধ করে মুর্তির মত বসে রইলাম। ও জাগাতে ব্যর্থ হলে মামুন মারোয়া কে কোলে উঠিয়ে নিয়ে গেল আর যাওয়ার সময় মুক্তা কে শুধু একবার উঠার জন্য ডাক দিয়ে গেল আর তাতেই মুক্তা ধরফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে গেল। আমি কিছুটা অবাক হলাম। মুক্তা যথেষ্ট পরিমাণ ভয় পায় তার ভাইকে। এমন ছেলে অকর্মার ঢেকি হয় কিভাবে। আমিও বের হলাম। প্রায় দুপুর হয়ে এসেছে আর ক্ষুধায় পেট চো চো করছে।
আমার কিছু বলতে হল না। মারোয়া তার মাকে বলল খাওয়ার কথা।
মামুন কোথ থেকে একটা প্লাস্টিক নিয়ে আসল। ও বলল ড্রাইভারের কাছ থেকে নাকি এটা পাইছে।
আমি সুন্দর কর ওটা পরিষ্কার জায়গায় বিছিয়ে নিলাম। মারোয়া আমাকে সাহায্য করছিল। এই মেয়েটা এক মুহূর্তের জন্য আমার পাশ থেকে সরছিল না। আর মুক্তা তো লা জবাব। সে শুধু সেলফি আর ভিডিও করছিল।
সবকিছু রেডি হওয়ার বাদে সবাই খেতে বসল। মারোয়া গিয়ে মামুন কে ডেকে নিয়ে আসল। সবাই খেতে বসলে বললাম
-“ড্রাইভার কে ডাকলে ভালো হতো না।। ওনারও নিশ্চই ক্ষুধা লাগছে?
-“লাগছে নিশ্চই। তবে আমরা খেয়ে নিই। তারপর দেখা যাবে।”
-“খাওয়া শেষ হলে আমি দিয়ে আসব। এখানে বসার দরকার নাই।”
আমি ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকালাম। নিরবে শুধু খাচ্ছে ও।
নাস্তা ভালোই ছিল। হাতে বানানো। কিন্তু খাবার তো খেলাম। এবার যদি বমি করি? আসার সময় তো ঘুমাই ছিলাম। মারোয়ার আম্মুকে বললাম এ কথা। মারোয়ার আম্মু মামুন কে ডেকে দোকান থেকে কিছু আচার এনে দিতে বলল।
গাড়ি ঠিক হয়ে গেছে। সবাই কে উঠতে বলল গাড়িতে। আর মামুন আচার এনে দিলো আর আমার হাতে একটা পলিথিন দিল। পলিথিন হাতে নিয়ে ওর দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকালাম।
ও বলল
-“বমি আসলে এটাতে করিও। না হলে গাড়ি নোংরা হবে।”
লজ্জায় ওর দিকে তাকাতে পারলাম না। পলিথিন টা নিলাম। আর চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসলাম। মারোয়া তার স্পেশাল বকবক শুরু করল। এবার আমিও বকবক শুরু করলাম। উদ্দেশ্য বমি না করা। আমাদের সাথে মুক্তা ও যোগ দিল। হাসি আর কলরবে গাড়ি মুখরিত হয়ে উঠল। আমার মাথা ঘুরছিল। বুঝতে পারলাম বমি আসতেছে। অনেক কষ্টে চেপে রাখলাম। যারা গাড়িতে বমি করে শুধু তারাই জানে বমি তে কত কষ্ট। আমি মাথা রেখে ঘুমাতে চাইলাম। কিন্তু মারোয়ার জন্য পারলাম না। আর চেপে রাখতে পারলাম না। গাড়ি থামাতে বললাম। সবাই আমার দিকে তাকায় রইল। এমনকি মামুন ও। আমি বললাম আমার বমি আসছে। গাড়ি একপাশে থামানো হল। আমি গাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি নেমে গেলাম। একপাশে গিয়ে বমি করতে লাগলাম। মারোয়ার আম্মু ও মারোয়া নেমে এলো। এসময়ও মারোয়া বকবক করতে লাগল। মামুন এসে একটা পানির বোতল দিল। আমি হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। এবার ভালো লাগল।
কিছুক্ষন পর গন্তব্যে পৌছলাম। আলিশান বাড়ি। এরকম বাড়ি টিভি সিনেমা তে দেখছি। দরজায় মারোয়ার মামা জনাব মহিবুল ইসলাম আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। মারোয়া আর মুক্তা তাদের মামাকে জড়িয়ে ধরলেন। মামুন গিয়ে গিয়ে সালাম করল। মারোয়ার অাম্মু ও। আমিও করলাম সালাম। আমাকে না চেনাই মারোয়ার আম্মু পরিচয় করে দিলেন। পরিচয় জেনে ভদ্রলোক আমার কুশল জিজ্ঞেস করলেন। আর কোন কিছু লাগলে উনাকে জিজ্ঞেস করতে বললেন। আমি উত্তরে শুধু মাথা নাড়ালাম।
.
এরপর আমরা ভিতরে ঢুকলাম। খুব সুন্দর বাড়ি। মিসেস মহিবুল মানে মারোয়ার মামি এসে আমাদের রুম দেখিয়ে দিলো। সবার জন্য আলাদা রুম দেওয়া হলেও মারোয়া আলাদা রুম নিতে নারাজ। সে নাকি আমার সাথে থাকবে। আমার অসুবিধা ছিল না। বরং ভালই হল। সবাই রুমে এসে গোসল করতে লাগল। আমিও রুমে এসে শাওয়ারে গোসল করে নিলাম। আসলে শাওয়ার আমি প্রথমবার দেখছি। মারোয়া শিখায় দিল শাওয়ার কিভাবে ব্যবহার করতে হয়। তারপর মারোয়ার আম্মুর রুমে আমরা খেয়ে নিলাম। মামুন আসেনি। সে নাকি এসেই ঘুমাই পড়ছে। আমাদেরও কোনো কাজ নেই। আর আমি বমি টমি করে এত লম্বা জার্ণি তে ক্লান্ত ছিলাম। তাই রুমে এসে ঘুমানোর জন্য শুয়ে পড়লাম। মারোয়া এসে আমার পাশে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম মনে নাই। কে যেন মারোয়া কে ডাকছে আর দরজায় করাঘাত করছে। আমার চোখে প্রচন্ড ঘুম তখন। কিন্তু ঠিকতে না পেরে উঠে গেলাম। টলতে টলতে উঠে গেলাম। ঠিকমত কিছু দেখছি না। কোনো মতে দরজা খুললাম। ঝাপসা চোখে দেখলাম কেউ একজন দরজায় দাড়িয়ে। দু হাত দিয়ে চোখ ঢললাম। এবার স্পষ্ট হল। কালো শার্ট পরিহিত কেউ একজন দাড়িয়ে আছে। ঘুম জড়ানো চোখে ভালো দেখছিনা। আমার চাইতে বেশ লম্বা হবে। সেই মুহুর্তে একটা কাল্পনিক আন্দাজ করলাম। দেখতে ভালো। তবে মামুনের মত না। খোঁচা খোঁচা দাড়ি। কালো শার্ট টা আশ্চর্য্য জনক ভাবে তার শরীরে ফিট হয়ে আছে। যেন উনার জন্যই শার্ট টা তৈরি।
উনি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। ব্যাপারটা আমার ভাল লাগল না। আমি চোখ টেনে ভালো করে দেখতে চাইলাম। আশ্চর্য্য উনি কিছু বলছেন না। শেষে বিরক্ত হয়ে বললাম
-“কি চাই?”
জবাবে শুধু চোখ বন্ধ করে বুক ভরে শুধু একটা নিশ্বাস নিলো। তারপর চোখ মেলে আমার দিকে তাকালো। ঠোঁটের কোনে হালকা মুচকি হাসি ফুটে উঠল। আমার কথার জবাব দিলেন না। নিজেই দরজা ফাঁক করে ভেতরে ঢুকলেন। আর ততক্ষণে মারোয়া ঘুম থেকে উঠে বসেছে। তাকে দেখে মারোয়া ফারহান ভাইয়া বলে ঝাপিয়ে পড়ল উনার কোলে। আমি দরজায় দাড়িয়েছিলাম। মারোয়া কে কোলে নিয়ে ফারহান লোকটা সরাসরি চলে আসতে লাগলো। ততক্ষণে আমার চোখ থেকে ঘুম পালিয়েছে। টান টান চোখে হা করে তাকিয়ে আছি। একদম কাছাকাছি এসে ফারহান চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস নিলো। আর আমি পিছু হটে গেলাম। আমার পিছু হটা দেখে তার ঠোঁটের কোনে মারাত্মক একটা হাসি ফুটে উঠল। তারপর কিছু না বলেই বেড়িয়ে গেল। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। ঠিক সে মুহুর্তে আমার চোখের পাতাটা হালকা নড়তে শুরু করলো। ধুপ করে আমি চোখটা চেপে ধরলাম।।
.
ভীষণ ভয়ানক একটা যুদ্ধ করে ফিরছি বলে মনে হচ্ছে। বুকের ভিতর ঢিপ ঢিপ শব্দ শুনতে পাচ্ছি। তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে ভেতরের দিকে আসতেই আয়নার দিকে চোখ পরল। নিজেকে আয়নায় দেখে আতঁকে উঠলাম। ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম আমার চুল গুলো গোসলের কারনে ভেজা এলোমেলো হয়ে আছে। কিছু চুল সাপের মত প্যাচ দিয়ে গলায় বসে আছে। যেন কোন তাবিজ দিয়েছি। চোখ দুটো বোজা বোজা আর সবচেয়ে বড় কথা আমার গায়ে ওড়না ছিলনা। ঘুম থেকে উঠে ওড়না ছাড়াই দরজা খুলতে বেড়িয়ে পড়েছি। আমার লজ্জায় তক্ষুনি মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু এখন কিছু করার নেই। মনে মনে নিজেকে অভিশাপ দিলাম। যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন থেকে সাবধানে থাকতে হবে।
রাতে সবাই কে ডাইনিং টেবিলে খাবার দেওয়া হল।
এত পদের খাবার দেখে আমার মাথা ঘুরে গেল। অধিকাংশ খাবারের নাম আমি জানিও না। সবাই নির্বিঘ্নে নিচ্ছে। আমি টেনশনে পড়ে গেলাম কি নিব? আমি যেটা চিনি ওইটা নেওয়া দরকার। ডাল ডিম আর মুরগীরর মাংস নিলাম। খেতে যাব তখন একটা অদ্ভুদ অনুভুতি হল। মনে হল কেউ যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। উপরে চোখ তুলতেই দেখলাম কিছুক্ষন আগের সেই ফারহান। মারোয়া কে হাতে ধরে নিয়ে আসছে। এবারও উনি দিকে তাকিয়ে আছে। কি হল? আমার চেহারা এত দেখার কি হল? কিছু আছে নাকি? হাত দিয়ে দেখলাম, মুক্তা কে জিজ্ঞেস করলাম। সে বলল কিছু নাই। তাহলে এত কি আছে দেখার? ওই লোকটা আমার মুখোমুখি এসে বসলেন। মারোয়া দৌড়ে এসে আমার পাশের চেয়ারে বসল। আমি অস্বস্থি তে পড়লাম। লোকটা একটা লাইট ব্লু কালার শার্ট পড়েছিল। বয়সে স্বাস্থ্যে, লম্বায় মামুনের চেয়ে বড় হবে। আমি কোন রকম খেয়ে উঠে চলে এলাম। কিছুক্ষন পর মুক্তা, মারোয়া, মারোয়ার আম্মু এলো। কালকে সবাই শপিং করতে যাবে। সুতরাং মারোয়ারা যাবে। আমাকেও যেতে হবে। কারন আমি কোনো কাপড় আনি নাই। তাই কালকে জলদি যেতে হবে তাই। আমি শুয়ে পড়লাম। সাথে মারোয়া ও। মারোয়া কে লোকটার কথা জিজ্ঞেস করলাম।
-“মারোয়া ওই লোকটা কে?”
-“কোনটা?”
-“যেটার কোলে উঠেছিলে।”
-“ও ওটা ফারান ভাইয়া। আমার মামাতো ভাই।”
-“এটার বিয়ে নাকি?”
-“না। বিয়ে হচ্ছে সাগর ভাইয়ার।”
-“তাহলে এটা?”
-“মেজ মামার ছেলে। ওরা কানাডা থাকে। বাংলাদেশে শুধু মেজ মামা আসেন কাজের জন্য। আসলে আমাদের ঘরে আসেন। ফারান ভাইয়ারা খুব কমই এসেছেন।”
.
ঘুম ভাঙল খুব ভোরে। অথচ এত ভোরে ঘুম ভাঙার কথা না। ঘড়ি দেখলাম। মাত্র সাড়ে চারটা বাজে। বাইরে খুব চেঁচামেচি আর ভাঙচুরের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এই ভাঙচুরের আর আওয়াজের কারনে ঘুম ভেঙে গেল। ভেঙেই যখন গেল তখন নামাজ টাও পড়ে ফেলি। এই ভেবে ঘুম থেকে উঠে গেলাম। মারোয়া এখনো গভীর ঘুমে। রুমের বাইরে আসতেই দেখলাম মারোয়ার আম্মুর রুমের দরজা খোলা। ভেতরে ঢুকলাম। কেউ নেই ভিতরে। গেল এত ভোরে? ওইদিকে চিৎকার, চেঁচামেচির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। ওই দিকেই যায়। কি হয়ছে দেখি। একটু এগিয়ে যেতেই দেখলাম ঘরের প্রায় সদস্য একটা রুম থেকে আসা যাওয়া করছে। আর প্রচুন্ড ভাঙচুরের আওয়াজ আসছে। আমি কানে হাত দিয়ে জানালার দিকে এগিয়ে গেলাম। ওই খানে যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। ফারান ছেলেটা রুমের সব জিনিস নিয়ে ভাঙচুর করছে। আর কি সব জানি বলছে। আর পিছন পিছন মধ্যবয়স্ক দুজন পুরুষ মহিলা হাটছে। সম্ভবত এরা লোক টার মা বাবা। আর অদূরে দাড়িয়ে আছে মারোয়ার মামা মামি। আমি চাই… আমি চাই… এরকম কিছু বলছিল। আর তার মা বাবা মানা করছিল। মানা করাতেই আমার মনে হয় বেশি রেগে গেল। হাতের সামনে বড় দামি টিভি টা নিয়ে আছাড় মারতে উদ্ধত ঠিক সেই সময় আমার দিকে তাকাল। ঠিক তাকাল না বলতে গেলে আমার দিকে চোখ পড়ল। ওর লাল চোখ দুটো দেখে আমার অন্তরাত্মা পর্যন্ত কেঁপে উঠল। ছ্যাত করে উঠলো বুকের ভিতর টা। নিজের অজান্তেই দু’পা পিছিয়ে গেলাম। ফারান এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। টিভি টা আর আছাড় মারলো না। আর জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলেন। আমি পিছু হটতে লাগলাম ভয়ে। এমন সময় কে যেন পিছনে হাত রাখল। আমি চমকে উঠলাম। মারোয়ার আম্মু।
-“কি করছ এখানে?”
আমি ফারানের দিকে ইশারা করে বললাম
-“আ-আন্টি কি হয়ছে এখানে?”
-“চলো কিছু হয়নি এখানে।”
অগত্য চলে আসতে হল। যাওয়ার আগে পিছন ফিরে তাকালাম। ফারান নামক প্রাণি টা এখনো তাকিয় আছে। কি সাংঘাতিক রে বাবা। এভাবে কেউ তাকিয় থাকলে নিশ্চয় যে কেউ হার্ট এট্টাক করবে। আমার গা শিউরে উঠল। ওদিকে আর তাকালাম না। নামাজ পড়ে আবার ঘুমাতে চলে গেলাম। মারোয়া এখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। আমি পাশে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম আসছেনা। কি করব বুঝতে পারছিনা।
এভাবে সকাল সাত টা বেজে গেল। মারোয়া কে উঠালাম। মারোয়া বাথরুমে যেতেই মারোয়ার আম্মু আমাকে টেনে নিয়ে গেলেন কথা আছে বলে। একপাশে নিয়ে বললেন ফারানের সামনে যেন আমি না যায়। আমি কিছু বুঝলাম না। কিন্তু উনার কথা মানলাম। আর আমাকে রেডি হতে বললেন শপিংয়ে যাওয়ার জন্য। কারন এখানে পরার জন্য আমি কোন কাপড় আনি নাই। পড়তেছি সব মুক্তার কাপড়। অবশ্য বাড়িতেও আমার তেমন কাপড় ছিল না।
যেই ভাবা সেই কাজ। মারোয়া আর আমি শপিংয়ের জন্য রেডি হলাম। বাইরে বেড়িয়ে দেখলাম বাড়ির প্রায় সবাই রেডি কেনাকাটা করতে। মামুন মুক্তাকে কিসের জন্য বকা দিচ্ছিল। কিন্তু ওরাও রেডি। সবাই এক সাথে যাত্রা শুরু করলাম। প্রায় ১০/১২ টা কার রেডি ছিল বাইরে। আমরা ওগুলো তে চড়ে আসলাম। শপিংমলে এসে আমার মাথা ঘুরে গেল। এত সুন্দর কাপড় চোপড় আমি আর কখনো দেখি নি। মারোয়ার আম্মু আমার জন্য শপিং করছিল। আমাকে জিজ্ঞেস করতেছিল পছন্দ হচ্ছে কিনা। আমি সায় দিলাম। আর এগুলোর দাম আমার এক বছরের বেতনের চেয়েও অনেক বেশি। আমার মাথা ধরে এলো। কিন্তু সবাই শান্তি মত শপিং করছিল। মারোয়ার আম্মু বেছে বেছে কত গুলো গাউন আর লং স্কার্ট নিলেন। সবগুলো খুব সুন্দর ছিল। মারোয়ার আম্মু মারোয়ার জন্য কিনছিলেন তখন আমি কিছু স্কার্ফ দেখছিলাম। এমন সময় আমার ওড়নায় টান পড়ল। কে যেন টানছে। পেছন ফিরে দেখলাম একটা নয়/দশ বছরের ছেলে। হাতে একটা শপিং ব্যাগ। কিছু না বলে ব্যাগটা আমার হাতে দিল। আমি নিলাম। তারপর জিজ্ঞেস করলাম
-“এটা কার?”
-তোমার।”
-“আমার!কে দিছে?”
-“কে দিছে?
-“ওই ভাইয়া।”
হাত দিয়ে পেছনে কাউকে দেখাল। কিন্তু কাউকে দেখলাম না।
-“কোথায়? আমি তো দেখতেছিনা।”
এমন সময় মারোয়ার ডাক দিল। সামনে ফিরে দেখলাম ছেলেটা নাই। মারোয়া বলল
-“এটা কি ম্যাম?”
-“জানি না।”
-“আমি দেখি?”
-“দেখ।”
মারোয়া খুলে ফেলল। এটা একটা গাউন। তবে সিম্পল। সিলভার কালার এবং নেক ও বর্ডারে কাজ রয়েছে।
আমি মহা চিন্তায় পড়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি মারোয়ার আম্মুকে ড্রেসটা দিয়ে দিলাম।
.
মারোয়ার আম্মু একবার আমার দিকে একবার ড্রেসের দিকে ভ্রু কুঞ্চিত দৃষ্টিতে তাকাতে লাগল। তারপর জেরা করতে লাগল
-“এটা কি?”
-“আমি জানিনা। একটা গাউন। ছেলে একটা এসে দিয়ে গেল।”
মারোয়ার আম্মু আবারো প্রথমে গাউন পরে আমার দিকে তাকালেন।
-“এটা তোমার পছন্দ হয়ছে সরাসরি বললেই তো পারো। তুমি কি মনে করছো আমি তোমাকে অবহেলা করব?”
-“না না আন্টি এটা সত্যি কেউ একজন দিয়ে গেল।”
আমার কথা বিশ্বাস করল বলে মনে হল না। আন্টি ড্রেস বের করলেন।
-“খুব সুন্দর গাউন। তোমাকে ভাল মানাবে। খুব সুন্দর হয়ছে।”
.
আমি আর কিছু বললাম না।
শপিং শেষে বাড়িতে ফিরে আসলাম। দুপুর হয়ে এসেছিল। তবে মারোয়ার আম্মু কাউকে টেবিলে খেতে দিলেন না। নিজের রুমে সব খাবার আনালেন। এই নিয়ে মামুন তার মায়ের সাথে রাগারাগি করল। তার মায়ের সাফ কথা তার মেয়েরা টেবিলে খাবেনা। মামুনের যদি ইচ্ছা হয় তাহলে একা টেবিলে গিয়ে খেতে পারে। তারপর মামুন আর কিছু বলতে পারল না। গাইগুই করতে করতে আমাদের সাথে বসে গেল। আমার মামুনের এই অবস্থায় খুব হাসি পেল। মুখ টিপে টিপে হাসছিলাম। এটা মামুন টের পেয়ে ফোঁস ফোঁস করতে করতে আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করল। আমি তাড়াতাড়ি ঢোক গিলে খাওয়ার দিকে মন দিলাম।
খাওয়া শেষ করে রুমে আসলাম তখনও মারোয়া খাচ্ছিল। বলা বাহুল্য ওর আম্মু খাওয়াই দিচ্ছে। রুমে ঢুকে আমি মারোয়ার জন্য দরজা বন্ধ করলাম না। এই রুমে কেউ আসেনা। কারন এই রুমের বাসিন্দা দুজন ঘরের নিস্প্রয়োজন ব্যাক্তি। শুধু মাত্র মারোয়া দের ফ্যামিলি ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করে না এখানে।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে হেয়ার ব্রাশ টা হাতে নিলাম। চুল আচড়াতে আচড়াতে কিছুটা অন্য মনস্ক হয়ে পড়েছিলাম। তাই খেয়াল করি নি যে রুমে কেউ একজন ঢুকছে। কিছু একটা মাথায় অনুভব হচ্ছে। আমার ঘাড়ে ফিন ফিনে গরম বাতাস পড়ছে। কি হচ্ছে বুঝতে পারছিলাম না। আমি তাড়াতাড়ি সরে যেতে গিয়ে পারলাম না। কেউ একজন পেছন থেকে আমার হাত দুটো চেপে ধরেছে তাই নড়তে পারছিনা। তারপর নাকটা আমার চুলের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে নিশ্বাস নিতে লাগল আর বিড় বিড় করে কিছু একটা বলছিল। আমি ভয়ে কাঠ হয়ে গেলাম। আর হাত ছাড়ার জন্য আপ্রান চেষ্টা করছিলাম। কোনো রকম শক্তি নিয়ে বললাম
-“কে-এ-আ.. আ-প-প-নি? এগুলো কি-ই-ই ক-করছেন?
ফিস ফিসে গলায় বলল
-“একদম চুপ থাকো। আমাকে তোমার সুবাস নিতে দাও মোহিনী। কি মিষ্টি সুবাস তোমার!”
-“আমি মোহিনী না। আমাকে ছাড়ুন। আ-আন্টি!”
আমি ভেজা গলায় মারোয়ার আম্মু কে ডাকার চেষ্টা করলাম।
আমার কথার পাত্তা না দিয়ে ওই লোকটা আবার বলতে লাগল
-“তুমি আজকে দুপুরে টেবিলে আসনি কেন? আমাকে ভয় পেয়েছিলে বুঝি? তুমি ভয় পেয়ো না। আই প্রমিজ আমি তোমার কোন ক্ষতি করবোনা।”
এটা বলেই সে আমার অন্য ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে দিল। চোখে না দেখলেও আমার বুঝতে অসুবিধা হল না এটা কে হতে পারে। এর মাথায় নিশ্চয় সমস্যা আছে। তাই কোন রকম শক্তি যোগাড় করে বললাম
-আ-আ-মাকে ছে-ছেড়ে দিন। আমি মোহিনী না।”
এই বলে আমি ফোঁপাতে শুরু করে দিলাম।
আসলে আমার ভয়ে কান্না চলে আসছিল। কোন ছেলে আমাকে এভাবে স্পর্শ করে নাই। আর এই লোকটার সাহস আমাকে কুড়েকুড়ে খাচ্ছিল।
আমার কান্না শুনে ফারান থেমে গেলো। তবে তা এক সেকেন্ডের জন্য। সে আমার হাত ছেড়ে দিল বটে কিন্তু দ্বিগুণ জোরে আমাকে দু হাতে চেপে ধরল। আমার কাধের উপর মাথা রেখে বলতে লাগল
-“শসসহ! ভয় পেয় না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
-“আম-মার ব্যাথা লা-লাগছে।”
এই কথা বলায় কাজ হলো। হাতের বাধন একটু আলগা হলো। আমি এই সুযোগ টা কাজে লাগালাম। গায়ের সমস্ত এক করে কনুই দিয়র একটা ধাক্কা দিয়ে সামনের বাথরুম এর দিকে পালালাম। ফারান আমার আচমকা ধাক্কায় চমকে উঠেছিল। পরক্ষনে নিজেকে সামলে আমাকে ধরার জন্য সামনে হাত বাড়াল। কিন্তু ততক্ষণে আমি বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছি। ফারান চাপা গর্জনে বলতে লাগল
-“মোহিনী দরজা খুলো। কি করছো তুমি? তাড়াতাড়ি দরজা খুলো।”
আমার প্রাণ গেলেও তো আমি আর দরজা খুলবো না। তাই চুপচাপ এক কোনে বসে রইলাম। কিন্তু ফারান আমাকে হুমকি দিতে লাগল।
-“মোহিনী দরজা খুলো। না হলে ভাল হবে না বলে দিচ্ছি। আমি দরজা ভেঙে ফেলব বলতেসি। আমি তোমাকে দেখতে চাই। দরজা খোল প্লীজ।”
.
আমি আমার জায়গা থেকে এক চুলও নড়লাম না। ভয়ে আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। এবার আর হুমকি দিচ্ছিল না। অনুনয় করছিল। আমি আয়াতুল কুরসি পড়া শুরু করলাম। এর মধ্যে মারোয়ার আওয়াজ পেলাম। ও আমাকে ডাকছে। তার মানে ফারান চলে গেছে। আমি তাড়াতাড়ি দরজা খুলে মারোয়া কে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করলাম। আমার হঠাৎ এই অবস্থায় মারোয়া হতচকিত হয়ে গেল। আমাকে বার বার জিজ্ঞেস করছিল কি হয়ছে আমি কাঁদছি কেন? কিন্তু আমি তাকে কিছু বললাম না। কারন সে বুঝবে না।
এর কিছুক্ষন পর বেশ গন্ডগোল এর আওয়াজ আসছিল। মারোয়া বলল
-“আমি দেখে আসি।”
আমি মানা করলাম। কিন্তু শুনল না। সে চলে গেল। আমার সাহস হচ্ছে না রুমের বাইরে পা দেবার।
কিছুক্ষন পর মারোয়া এলো দৌড়াতে দৌড়াতে। সে হাপিয়ে গেছে। হাপাতে হাপাতে বলল
-“ফারান ভাইয়া কেমন কেমন করতেছে।”
নিঃশ্বাস বন্ধ রেখে বললাম
-“কেমন কেমন করতেছে?”
মারোয়া হাত পা নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলতে লাগল
-“ফারান ভাইয়া সব ভেঙে ফেলতেছে। মামা মামি থামাতে চাইছে কিন্তু পারছেনা।”
কথা শুনে আমি একলাফে উঠে তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে দিলাম। মারোয়া কে সহ বসে আল্লাহর নাম জপতে লাগলাম মনে মনে। কিন্তু চেঁচামেচি কমছে না। এর মধ্যে মারোয়ার আম্মু আসল। প্রথমে শিউর হয়ে তারপর দরজা খুলছি। মারোয়ার আম্মু এসে বললেন তোমার আম্মু ফোন করছে। কথা বল। আমি ফোন হাতে নিলাম।
-“হ্যালো আম্মু আসস্লামু আলাইকুম।”
-“ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছস মা? ভাত খাইছো?”
-“হ্যা আম্মু খাইছি। তুমি খেয়েছো? রিফাত আর আব্বু কেমন আছে?”
-“রিফাত পড়তেছে আর তোর আব্বু শুয়ে পড়ছে। তা বাইরে এত আওয়াজ কেন?” কোন সমস্যা হয়ছে নাকি?”
-না আম্মু তেমন কিছু হয়নি। বিয়ে বাড়ি তাই একটু আওয়াজ।”
-“মেহেদি কবে?”
-“কাল। আম্মু শুয়ে পড়। আমার একটু কাজ আছে। আর টেনশন করিও না। আমি ভালো আছি।”
কথা শেষ করে মারোয়ার আম্মুকে ডাকলাম
-“আন্টি!”
-“হু বলো। কিছু লাগবে।”
-“না। কিছু লাগবে না। একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম।”
-“বল”
-“মারোয়া তুমি একটু বাইরে যাও। আমি এখন ডাকতেছি তোমাকে।”
-“ঠিক আছে ম্যাম। তবে জলদি!”
-“আন্টি ফারান ভাইয়ের কি হয়ছে? এরকম ভাঙচুর করে কেন?”
-“কি বলব আর? আমার মেজ ভাইয়ের একমাত্র ছেলে ফারান। ছোট বেলা থেকে অন্যরকম। টাকার কোন অভাব নেই। তাই সে যা চাই তাই এনে দেয়। কিন্তু এটা তার খারাপ অভ্যাস হয়ে গেছে।
-“কিন্তু এটা কোন অভ্যাস না।”
-“জানি না বাবা। ছেলে পালছে ওরা। ওরা জানে কেমন করে পালছে। কি সমস্যা তার। আমার তো মনে হয় ওর মাথায় সত্যি সমস্যা আছে। আগে জানতাম বেশ মেধাবী ছেলে ছিল। আমারো মারোয়া কেও বেশ আদর করে।”
একটা নিঃশ্বাস ফেলে আবার বললেন
-“বাদ দাও এসব। ওর আশে পাশে যাওয়ার দরকার নেই। মারোয়া মুক্তা কেও মানা করে দিয়েছি। বিয়ে বাড়ি এটা। কি না কি করে ফেলে। বড়ই ঘাড় ত্যাড়ি স্বভাবের ছেলে।”
.
আন্টি চলে গেলেন এগুলো বলে। আমি যথা দ্রুত বিয়ে শেষ করে বাড়ি যাওয়ার জন্য দোয়া করলাম। চেঁচামেচির আওয়াজ আর আসছিল না। তাই রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে উঁকি দিলাম। মারোয়া আসছে ওই দিক থেকে। আমাকে ওর প্রশ্ন করা লাগল না। ও নিজে থেকে বলতে লাগল
-“জানো ম্যাম সবাই মিলে ফারান ভাই কে চেপে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখছিল। তারপর একটা ইনজেকশন মেরে দিছিল। আর সাথে সাথে ফারান ভাই ঘুমাই গেছিল। জানো ম্যাম আমার খুব খারাপ লাগছিল ফারান ভাইয়ের জন্য।”
মুখ কালো করে ফেলল মারোয়া। সত্যি আমারও খুব খারাপ লাগতেছিল। ফারানের অসুস্থতার জন্য আফসোস হচ্ছিল। মনে মনে দোয়া করছিলাম আল্লাহ যেন তারে ভালো করে দেয়।
.
(চলবে)
.
ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here