মোহিনী ৭ এবং শেষ পর্ব .

Story : মোহিনী
Writer : Nirjara Neera
Part : ৭ এবং শেষ পর্ব
.
ফারান একনাগারে বলতে লাগল আর আমি হা করে শুনতে লাগলাম।
-“নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছিল। মনে হচ্ছে তোমাকে যদি একটু খানি না দেখি তাহলে মরেই যাব। রুমে ঢুকতেই তোমার মিষ্টি গন্ধ টা আমাকে অভিবাদন জানাতে লাগল। আর আমি অভিবাদন গ্রহন করলাম। তোমার চুলে মন ভরে গন্ধ নিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি ভয় পেয়েছিলে। মনে করেছিলে যে আমি তোমার ক্ষতি করবো। কিন্তু আমি কখনোই তোমার কোন ক্ষতি করতে পারিনা। তাই তো তুমি আমার কাছ থেকে পালিয়েছিলে। আমার এত কষ্ট হয়েছিল। আমার মনে হচ্ছিল সব ভেঙে ফেলে দিই। কিন্তু না। আমি এরকম করতে পারিনা। কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি চাইনা তুমি আমাকে ভয় পাও। আমি চাইতাম তুমিও আমাকে ভালবাসো। আমি আবার আমার বাবার কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা বলছিল তুমি নাকি মিডল ক্লাস মেয়ে। ফ্যামিলি স্ট্যাটাস নেই। নিজস্ব ঘর পর্যন্ত নেই। তাই ওরা মানতে চাইল না। ওরা কি আমার খুশি দেখতে চাই না? আমার প্রচুন্ড রাগ হচ্ছিল। আমার মোহিনী কে আমি পাব না ভাবতেই কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু ওই দিন তুমি আসো নি। আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু ওরা আমাকে অসুস্থ বলে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে চাইত। আমার তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছা স্বপ্নেও আমি তোমাকে দেখতাম। একদিন তুমি এসেছিলে। আমাকে স্পর্শ করেছিলে। আমি বুঝতে পেরেছিলাম। সেটা তুমি। কারন তোমার মিষ্টি গন্ধ টা আসছিল। কিন্তু আমি চোখ খুলতে পারছিলাম না। আমার কষ্ট হচ্ছিল। আমি তোমার কোমল হাত ধরেছিলাম। কিন্তু তুমি চলে গিয়েছিলে। আমার মনে ছিল না আর কিছু। কিন্তু যখন চোখ খুললাম তখন তোমাকে দেখতে খুব খুব ইচ্ছা হচ্ছিল। আর যদি সবাই জানত যে আমি উঠেছি তাহলে আমাকে আবার ঘুম পাড়িয়ে রাখত। তাই কাউকে না জানিয়ে তোমাকে খুঁজতে লাগলাম। আর পেয়েও গেলাম। তুমি আমার দেয়া গাউন পড়েছিলে। তোমাকে দেখতে হুরের মত লাগছিল। আমার ভীষন তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা হচ্ছিল। কিন্তু মারোয়া বলছিল আমি যেন তোমাকে ছেড়ে দিই। দেখ মারোয়া পর্যন্ত আমাদের আলাদা করতে চাইছিল। আমি কি তা হতে দিতে পারি? তোমার হাতে মেহেদি আকা ছিল। লতা পাতার মত ঢেউ খেলানো মুগ্ধকর হাত। সেই মিষ্টি খুশবু সহ কাচা মেহেদির খুশবু আসছিল তোমার কাছ থেকে। আমি মনে ভরে চুমু খেলাম ওই হাত দুটো তে। কিন্তু সবাই এসে আমার কাছ থেকে তোমাকে নিয়ে নিল। আমার ফুপি! সেও বুঝল না যে আমি তোমাকে কত ভালোবাসি। আমি তাকে অনুরোধ করছিলাম যে তোমাকে যেন আমাকে দিয়ে দেয়। কিন্তু ফুপি রাজি হচ্ছিল না। এরপর ওরা তোমাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে গেল। আমি চাইছিলাম না তুমি আমার কাছ থেকে দুরে সরে যাও। কিন্তু ওরা আমাকে আবার জোর করে ঘুম পাড়িয়ে রাখছিল। এর ফাঁকে তোমাকে না জানি কোথায় দিয়ে আসল। আমি তন্ন তন্ন করে তোমাকে খুঁজছিলাম। কিন্তু সেটা যদি বলতাম তাহলে কেউ আমাকে তোমার কথা বলত না। তাই আমি গোপনে কাজ চালিয়েছি। একসময় তোমার ফোন নাম্বার পাই। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয় নি। আমি পরে খোঁজ নিয়ে ছিলাম যে তুমি মারোয়া কে পড়াতে। তাই ফুপির খোজ খবর নিতে শুরু করলাম। খবর পেলাম তুমি প্রতিদিন মারোয়া কে পড়াতে আস। আমি এক মুহুর্তও দেরি করতে চাইলাম না। তোমাকে পেয়েও ছিলাম। কিন্তু মামুন মাঝখানে চলে এলো। এরপর তোমার আমার মাঝে ফুপি এলো। আমাদের মাঝে কেউ আসতে পারবেনা। সে যে কেউই হোক। তোমার আব্বুও আসতে চেয়েছিলো তাই তাকেও সরিয়ে দিলাম। কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি।
.
আমি এতক্ষন হা করে শুনছিলাম। আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না ফারানের কথা। প্রথমে আমার খুব ভালো লাগছিল ওর কথা শুনে। মনে হচ্ছিল ও আমাকে সত্যি ভালোবাসে। কিন্তু পরে তার কথায় বুঝতে পারলাম তার ভালোবাসা টা কখনো কারো জন্য ভালো হতে পারে না। আমার চিন্তা হচ্ছিল সবার জন্য। প্রচুন্ড ভয় লাগছিল ফারান কে। না জানি বাড়িতে কি করে বসবে। এটা অস্বাভাবিক, অসুস্থ ভালোবাসা। এরকম ভালোবাসা শুধু আমি না পৃথিবীর কোনো মেয়েরই কাম্য না। বললাম
-“চলুন দেরি হয়ে যাচ্ছে। আজকে আমাদের বিয়ে না?”
-“হ্যা চলো। আজকে তুমি আমার হয়ে যাবে।”
ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে বাড়ি পৌছে গেলাম। এর মধ্যে আমি আর ফারানের মধ্যে কোন কথা হল না। শুধু ওর বলা কথা গুলো মনে পড়ছিল।
.
গাড়ি যখন বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করল তখন আমাদের বাড়ির মধ্যে লোকজনের আনাগোনা পাচ্ছি লাম। কি হয়েছে? খারাপ কিছু হয় নি তো? গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত এগিয়ে গেলাম। ফারানও আমার সাথে সাথে আসছিল। ভীড় এড়িয়ে উঠানে দেখলাম আম্মু বিলাপ করছে। আশে পাশের মহিলারা আম্মু কে সামলানোর চেষ্টা করছিল। রিফাত ও একপাশে দাড়িয়ে নিঃশব্দে কান্না করছিল। কি হয়ছে? আমি এবার সামনে তাকালাম। সামনে পাটি বিছানো। সেখানে কেউ একজন সাদা কাপড়ে মোড়ানো। চারদিকে ছেলে মেয়েরা কোরআন তেলাওয়াত করছে। আমার বুক কাঁপতে শুরু করল। ধক ধক শব্দ করতে শুরু করল। বাতাসে সাদা কাপড় খানি একটু একটু সরে যাচ্ছিল। আমার গলা দিয়ে না চাইতেও একটা শব্দ বেড়িয়ে এল
-“আব্বু!”
আমার আব্বু শুয়ে আছে সাদা কাপড়ে। আমার পুরা দুনিয়াটা হেলে উঠল। আমি চিৎকার দিয়ে আমার আব্বুর কাছে যেতে চাইছিলাম। কিন্তু কেউ যেন আমার হাত ধরে ফেলল। আমাকে যেতে দিচ্ছিল না।
-“আমাকে ছাড়ো। আমি আমার আব্বুর কাছে যাবো।”
-“না মোহিনী। তুমি আমাকে ওয়াদা করেছিলে তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।”
-“আমার আব্বু ওই খানে শুয়ে আছে আর আপনি আপনার ওয়াদার কথা চিন্তা করছেন? নিকুচি করি আপনার ওয়াদার। আমি আমার আব্বুর কাছে যাব।”
-“না! চলো এখান থেকে।”
-“আমি যাবো না আপনার সাথে।”
ফারান আমাকে জোর করে নিয়ে যেতে চাইছিল কিন্তু ইতিমধ্যে রিফাত আর আম্মুর চোখ আমার দিকে পড়ল। রিফাত এগিয়ে আসল। সাথে আশে পাশের মানুষরা। ফারান সবাই কে হুমকি দিচ্ছিল যে সে একজনকেও ছাড়বেনা। সবাই ভয় পেয়ে ছেড়ে দিতে চাচ্ছিল কিন্তু মামুন কোথ থেকে এসে ওকে ধরল। আর সাহস পেয়ে আশে পাশের মানুষরা ধরল। আমি ওই দিকে নজর না দিয়ে আমার আব্বু কাছে দৌড়ে গেলাম। আমার আব্বু কথা বলছেনা, নিশ্বাস নিচ্ছে না। আমি আব্বু কে ডাকলাম সাড়া দিল না। আমার আর সহ্য হল না। মনে হল সব আমার দোষ। আমার জন্যে আমার আব্বু আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। চারপাশের সবকিছু অন্ধকার মনে হল। এরপর আর কিছু মনে নেই। তবে কথা গুলো কানে আসছিল। সবাই চিৎকার করতে লাগল। আমাকে কোথাও নিয়ে যেতে লাগল আর কিছু শুনতে পেলাম না।
যখন হুশ ফিরল তখন বিছানায় শুয়ে। আমাদের পাশের ঘরের মহিলাটা আমার মাথায় পানি ঢালছিল। ঘরে মধ্যে আগের মত হৈ চৈ না থাকলেও এখনো মরাকান্না শোনা যাচ্ছিল। আমি উঠতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু মাথা ঝিম ঝিম করছিল। আমি ওই মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম
-“আমার আম্মু কই?”
-“আছে ওই রুমে।”
রিফাত আসল। অনেক শুকিয়ে গেছে এই কয়েকদিনে। কোটরাগত চোখ দুটো ক্রমাগত কান্নার ফলে লাল হয়ে আছে। সে এসে আমাকে ধরে তুলল। তারপর আম্মুর কাছে নিয়ে গেল। ওই খানে আম্মু শুয়ে আছে। খাবার দেওয়া হয়েছে। খাবার কোথ থেকে এলো? আম্মুর এই অবস্থায় এত সব রান্না করা সম্ভব না। বুঝতে সময় নিল না। খাবার গুলো নানুর বাড়ি থেকে পাঠানো। আম্মু খাচ্ছেনা। আমারও খেতে ইচ্ছা হচ্ছিল না। কিন্তু রিফাতের জোরাজুরি তে খেয়ে নিলাম। ইতিমধ্যে ঘরের সবাই চলে গেছে। আব্বু কে এলাকার মসজিদ এর পাশে কবর দেওয়া হয়েছে। আমি এখনো জানি না যে আব্বুর কি হয়েছিল। রিফাত কে জিজ্ঞেস করলাম। সে বলল
-“তুই জানিস না কি হয়ছে? তোর সামনেই তো হল!”
-“মানে?”
-“যেদিন তুই আর আব্বু মেডিকেলে গেছিলে ওই দিন ওই লোকটা আব্বু কে কেমন করে মারছে দেখোস নাই?
এই কথা শুনে আমি নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম। আমার দোষে আজ আমার আব্বু এই দুনিয়াতে নাই। ওইদিন আব্বু কে মেরেছিল ফারান। ছি! এই লোকটার জন্য তার মায়া জন্মেছিল। এখন প্রচুন্ড ঘৃনা হচ্ছে। আমার দুচোখ বেয়ে পানি পড়তে শুরু করল। রিফাত আবার বলতে লাগল
-“পুলিশের ফোন আসায় আমি আর আম্মু গিয়েছিলাম। সেখানে আব্বুকে ভর্তি করানো হয়েছিল। আব্বুর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। মাথায় আঘাত পেয়েছিল। দুই দিন হুশ ছিল না। এর মাঝে আমরা পুলিশের সাথে তোর খোঁজ করেছি। ওই লোকটার বাড়িতেও গিয়েছি। কিন্তু ওই লোকটা একটা পাষন্ড সীমার। সে নাকি ওই দিন তোর পিছু পিছু বেড়িয়ে আসতে চেয়েছিলো। কিন্তু তার বাপ তাকে বাধা দেওয়ায় সে তার বাপ কে ধাক্কা দিয়েছে। এবং ধাক্কা খেয়ে হাসপাতালের ছয় তলা বিল্ডিংয়ের উপর থেকে পড়ে গিয়েছিল। ভয় ছিল তোকে নিয়ে। না জানি তোকে কি করছিল। কাল রাতে আব্বুর হুশ আসে। সে তোকে দেখতে বলে আমাদের সবাই কে ছেড়ে চলে গেল।
রিফাতের গলা ধরে এলো। সে চোখের পানি আটকাতে পারছিল না। কারন তাকে একলা সব কিছু সামাল দিতে হয়েছে। আমি জানতাম না এত কথা। এখন শুধু ফারানের জন্য ঘৃনা ছাড়া আর কিছু জন্মায় না।
আমি রিফাত কে জড়িয়ে ধরলাম। সে আমার কোলে মাথা রেখে কাঁদতে লাগল। কি পাপ করেছিলাম যে এতকিছু সহ্য করতে হচ্ছে? সব আমার দোষে। ইশ! কখনো যদি…
যদি! কখনো বেলি ফুল গুলো মাথায় না লাগাতাম
যদি! মারোয়া কে পড়ানোর জন্য হা না বলতাম
যদি! মারোয়ার কথা না শুনতাম
যদি! ওই বিয়েতে না যেতাম
যদি! ওই দিন দরজা না খুলতাম
তাহলে আজ আমার আব্বু জীবিত হইত। আরো অনেক মানুষ জীবিত হইত। আমি আমার স্বাভাবিক জীবনে থাকতাম। সব আমার দোষ।
এ কথায় কান্না আসতে লাগল। কিন্তু চোখ থেকে পানি পড়ল না। চোখের পানি শেষ হয়ে গেছে কাঁদতে কাঁদতে।
অনেকক্ষণ বসে ছিলাম এইভাবে। দরজায় করাঘাত হতেই আমি দরজা খুললাম। মামুন এসেছে। মামুন কেন আসল? আর ওর হাতে এইসব কি? সাথে একজন মৌলানা। আমি ভাবছিলাম। মামুন বলল
-“আসতে দিবা ভেতরে? নাকি এইখানে দাড়ায় থাকবো?”
আমি সরে গেলাম। আমার পিছন পিছন রিফাতও আসছিল। রিফাত মামুন কে সব রেডি কিনা জিজ্ঞেস করছিল। মামুন ও সব রেডি বলে সায় দিল। আমি ওদের দিকে তাকায় ছিলাম। কিছু বুঝতে ছিলাম না কি হচ্ছিল। রিফাত আমাকে বলল
-“আপু তোর সাথে কথা আছে। আম্মুর রুমে চল।”
-“কি কথা?”
-“আগে চল না।”
আমি গেলাম আম্মুর রুমে। আম্মুও উঠে বসছিল। এমনকি মামুন ও এসে সোফায় বসল। আমি প্রশ্ন বিদ্ধ চোখে রিফাতের দিকে তাকালাম। রিফাত বলল
-“আপু আমরা তোর বিয়ে ঠিক করেছি।”
আমার মাঝে যেন বিষ্ফোরন ঘটল। আমি চিৎকার দিয়ে বললাম
-“পাগল হয়ে গেছিস তুই? আমার আব্বুর বিদায়ের একটা দিনও যায় নি আর তুই…”
-“আপু শান্ত হও। আমার কথাটা বুঝ।”
-“কি বুঝব? কি বলতে চাস?”
এবার মামুন বলে উঠল।
-“রেহনুমা তুমি শান্ত হয়ে বস আর রিফাত কি বলছে তা শোন।”
আমি আম্মুর দিকে তাকালাম। আম্মুরও তাই মত। তাই বসলাম। রিফাত বলতে লাগল।
-“আমরা তোর বিয়ে ঠিক করেছি। আজ রাতে এবং এখন হবে মামুন ভাইয়ের সাথে।”
আমি আঁতকে উঠলাম। হা করে তাকালাম মামুনের দিকে। সে সায় দিচ্ছে মানে সে রাজি? মামুন কে আমি আগে থেকে পছন্দ করতাম। কিন্তু ব্যাপারটা এত দূর পর্যন্ত ভাবি নি। তাই আমি বললাম
-“আমি রাজি না। আমি উনাকে বিয়ে করতে পারব না।”
এবার যেন আম্মু রেগে উঠল
-“কেন পারবি না? ওই পাগলের জন্যে! যে তোর বাপকে খাইছে, নিজের ফুপি কে খাইছে, তোর জীবন নষ্ট করছে তার জন্যে? যা করগে তাকে বিয়ে তবে এই খানে আর যেন তোকে না দেখি।”
রিফাত বলে উঠল
-“আম্মু তুমি একটু চুপ কর।”
রিফাত আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-“আমি কিছুই করতে পারি নি। মামুন ভাই আমাকে সাহায্য করেছিল। সেই আমাকে জানিয়েছিল ফারান কে তোকে এখানে নিয়ে আসার কথা। এখানে জমিদার আমাদের বের করে দিচ্ছিল। মামুন ভাই এর কারণে এথানে থাকতে পারতেছি। সেই তোকে বিয়ের কথা বলছে। এতে তোর ভবিষ্যত ঠিক হবে। ওই পাগল কখন কি করে তার ঠিক নেই। আমি কিছুই করতে পারতাম না মামুন ভাই ছাড়া। আমরা ওই লোকটা থেকে প্রতিশোধ চাই। আমার আব্বু মৃত্যুর, মামুন ভাইয়ের মায়ের মৃত্যুর, তোর জীবন বরবাদের প্রতিশোধ চাই। আর এ জন্যে তোকে বিয়ে করতে হবে।”
আমি কিছু বলতে পারলাম না। কেননা মারোয়ার আম্মুর জন্য। রিফাত বলেছিল যেই দিন আমাকে নিতে ফারান মামুনদের ঘরে গিয়েছিল। কিন্তু মামুন আমাকে পালাতে সাহায্য করায় ক্রোধে উন্মত্ত ফারান মামুন কে মারতে চেয়েছিলো। কিন্তু মামুনে মায়ের জন্য তা সম্ভব হয় নি। আর অাঘাতটা মামুনের মা পেল। আর এই জন্যই মামুন ওই দিন আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিল।
এত কথার পর আমার আর কিছু বলার রইল না।
.
আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না আমার কি করা উচিত। এমন টা না যে আমি বিয়েতে রাজি না। কিন্তু কারো ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যে ব্যাপারটা ভালো লাগছেনা। আর তাছাড়া মামুন আমাকে পছন্দ করে বলে মনে হয় না। সে নেহায়েত মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ চাই তা না হলে আমাকে বিয়ে করার কথা হয়তো বলতো না। কিন্তু মামুনের অবদানের কথাও আমি ভুলতে পারি না। আমার ভাই এত সব সামলাতে পারতো না। নিজের অসুস্থতা, বাবার মৃত্যু, তাকে দাফন কাপনের কাজের মত এলাহি কারবার করা সম্ভব ছিল না আমার বয়সে ভাইয়ের পক্ষে। আর ফারান? সে আজ পর্যন্ত দুর্ভাগ্য ছাড়া কিছু বয়ে আনে নি। ওর আর আমার মাঝখানে আমার আব্বুর মৃত্যুর দেয়াল দাড়িয়ে। যেটা ভাঙা কখনো সম্ভব না। আব্বুর শেষ কথা ছিল আমি যেন ফারানের হাত থেকে মুক্তি পাই। মনে হচ্ছে তাই করা উচিত।
.
বউ সেজে বসে আছি। কিছুক্ষনের মধ্যে আমার বিয়ে। মরা বাড়িতে! হাসি পায় শুনলে। মনে পড়ে যায় বিষাদ সিন্ধু গ্রন্থে কারবালার প্রান্তরে কাসেম সখিনার বিয়ের কথা।
মা সাজিয়ে দিয়ে গেছেন। আম্মুর কোনো এক প্রিয় শাড়ি পড়েছি। যেটা নাকি আব্বুর দেয়া আম্মুকে প্রথম উপহার। প্রসাধনি বলতে কিছুই দেয়া হয় নি। আমি একা বসে আছি। পছন্দের মানুষের সাথে বিয়ে হচ্ছে। খুশি হওয়ার বদলে ভয় হচ্ছিল। যদি কোনো অঘটন ঘটে যায়? যদি ফারান জেনে যাই! তাহলে কি হবে? ফারানের আর কোনো খবর পাইনি আমি। কোথায় আছে কে জানে? যেখানে থাকুক অন্তত বিয়ের খবর না পেলেই হল। কেননা যে আগুনের ফুলকি আমি তার চোখে দেখেছি তা দিয়ে সে সব কিছু ভস্ম করে দেবে।
আমার ডাক এলো। আম্মু নিতে এসেছে। যেতে যেতে আম্মু স্বামী সেবার কথা বলছিল। কিন্তু এই কানে ঢুকে সব কথা ওই কান দিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছিল। কারন আমার প্রচুন্ড ভয় করছিল। সামনের রুমে পৌছে দেখলাম নিচে পাটি বিছানো হয়েছে। সেই সাথে বেডশিট। ওখানে মামুন বসে আছে গম্ভির ভাবে। তার মুখোমুখি মৌলানা লোকটা। অনাড়ম্বর বিবাহ অনুষ্ঠান।
.
মৌলানা সাথে তার সহযোগী ও বসাতে। রিফাত দাড়িয়ে আছে। রিফাত কে জিজ্ঞেস করলাম
-“ফারান কোথায়?”
-“দেখবি!”
-“হুম!”
-“তাহলে দেখ।”
এই বলে রিফাত জানালাটা খুলে দিল। এই রুম আর ওই রুমের মধ্যে জানালা দিয়ে সব দেখা যায়। কিন্তু অবাক হলাম। কারন জানালাই আর কেউ না। স্বয়ং ফারান। সে ঢুলছিল। হুশ আছে নাই এই অবস্থা। জানালা খুলতে দেখে ও মনে হল না চোখ খুলল।
কিন্তু ভয়ে আমার জান চলে যাচ্ছিল। আমি কোন ভাবে চাচ্ছিলাম না যে বিয়েটা ফারানের সামনে হোক। কিন্তু এখন ফারান সামনে। তবে আটকানো। মনে হল বাধা অবস্থায়। ব্যপার কি? ফারান কে এখানে রাখার মানে টা কি? জিজ্ঞেস করলাম রিফাত কে। উত্তর দিল মামুন।
-“নিজের প্রিয়জন কে চোখের সামনে হারাতে দেখলে কেমন লাগে তা আমি ওকে বোঝাতে চাই। দেখাতে চাই হৃদয় ভাঙার কষ্ট কতটুকু। কতটুকু কষ্ট মানুষ সইতে পারে।”
আমি চমকে উঠলাম মামুনের কথায়। কারন মামুন কখনো এভাবে কথা বলে না। এবার রিফাতও বলে উঠল
-“ঠিক তাই। ওকে বোঝাতে চাই যে ছেলের সামনে পিতার মৃত্যুর ছটফটানি কেমন লাগে।”
এই সময় কাজি ডাক দিলেন। আম্মু মামুনের পাশে আমাকে বসিয়ে দিলেন। ফারানের গোঙানির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল। হয়তো সে বুঝতে পেরেছে কিছু একটা হচ্ছে।
ফারানের গোঙানিতে আমার বুক ধরফর করছিল। বিয়ের কাজ শুরু হয়ে গেছে। আর ওদিকে ফারান আমাকে ডাকতে শুরু করেছে।
-“মোহিনী এসব কি হচ্ছে? কি করছো তুমি?”
রিফাত জানালার কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল
-“তোমার মোহিনীর বিয়ে হচ্ছে মামুনের সাথে! তাদের দুজন কে বেশ ভালো মানিয়েছে!”
এই কথাটা আগুনে ঘি ঢালার জন্য যথেষ্ট ছিল। মুহুর্তে ফারান ওখানে দাড়িয়ে গেল। কি হচ্ছিল তা বোঝার চেষ্টা করল। যখন বুঝতে পারল আমার বিয়ে হচ্ছে অন্য কারো সাথে তখন সে চিৎকার দিয়ে উঠল
-“মোহিনী চলে আসো ওখান থেকে। ওয়াদা করেছিলে আমার সাথে থাকবে। আর এটা কি পড়েছো? বন্ধ কর সব কাজ! ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।”
আমি ফারানের দিকে তাকালাম। সে বাঁধন খোলার চেষ্টা করছে। ওর চোখে মুখের ঝিমানো ভাব চলে গিয়ে ক্ষিপ্রতা দেখা দিয়েছে। আর ফারানের এই ক্ষিপ্রতা কে আমি খুব ভয় পায়। জানি না ছাড়া পেলে সে কি করবে। আমার খুব ভয় করছিল। ভয়ে আমি মামুনের দিকে তাকালাম। কিন্তু মামুন কে চিন্তিত বলে মনে হল না। সে নির্বিকার চুপচাপ বসে আছে। ওইদিকে ফারানের গর্জন বেড়ে চলেছে। বিয়েও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।
হঠাৎ ফারানের আর কোনো সাড়া শব্দ শুনতে পেলাম না। ওদিকে কাজি সাহেব বলা শুরু করেছেন আপনি কি রেহনুমা হাসান কে বিবাহে রাজি আছে?
-“কবুল! কবুল! কবুল!”
মামুন তিনবার কবুল বলে ফেলল। আর আর আমার হৃদপিন্ড প্রচুন্ড জোরে শব্দ করতে লাগল। আমি ঘামতে শুরু করলাম। এবার কাজি সাহেব আমাকে কবুল বলতে বললেন। কিন্তু আমাদের এখান কার মেয়ে দের কবুল বলতে হয়না। তার বদলে তারা পান ছুয়ে দেয়। আম্মু পান তিনটা বেধে রেখেছিল সামনে। ওদিকে হঠাৎ দরজায় দরাম দরাম বাড়ির আওয়াজ পাওয়া গেলো। ফারান কে বেঁধে রাখা হয়েছিল। তাহলে সে দরজায় আঘাত করছে কিভাবে? তারমানে সে বাঁধন খুলে ফেলেছে। আমি তাড়াতাড়ি পান ছুয়ে দিলাম। এভাবে তিনবার। সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে মোনাজাত করতে লাগল। আমার ভয় হচ্ছিল। কেননা আমার দরজাটা নড়বড়ে কাঠের। ফারান যেভাবে দরজায় আঘাত করছে সেটা অবশ্যই ভেঙে যাবে।
সবাই মোনাজাত করছিল। এদিকে বিকট শব্দে দরজা ভেঙে পড়ল। সবাই চমকে উঠল। মোনাজাত সম্পুর্ন করা হল না। সবাই এক যোগে দরজার দিকে তাকালো। সবাই বলতে আমি, আম্মু, রিফাত, মামুন, কাজি সাহেব আর তার সহযোগী। দরজা ভেঙে ফারান বেড়িয়ে এসেছে। চেহারাটা লাল হয়ে আছে ভয়ানক ভাবে। একে তো হাসপাতাল থেকে পালানো পেশেন্ট যার মাথায় আঘাত রয়েছে তার উপর চোখ দুটো যেন কোটর থেকে বেড়িয়ে আসবে। আর হাতের অবস্থা ভীষন খারাপ হয়েছে। হাত বেয়ে রক্ত পড়ছে। মনে হয় দড়ি কাটতে গিয়ে হাত কেটে ফেলেছে। তার উপর দরজায় ক্রমাগত আঘাত করার ফলে হাতের অবস্থা শোচনীয়। কিন্তু ফারানের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। আমি ভয়ে পিছু হটলাম। কিন্তু মামুন আমার হাত ধরে তার পাশে দাড় করাল। কাজি আর তার সহযোগী কাজ শেষ হয়েছে বলে চলে যাচ্ছিল। কাজি চলে যাওয়ার সময় ফারান কাজি কে পিছন থেকে ধরে ক্রমাগত দেওয়ালের সাথে বাড়ি দিচ্ছিল। কাজির মাথাটা ফেটে গলগলিয়ে রক্ত পড়ছিল। কিন্তু ফারান ছাড়ছিলনা। যেন আমার আর মামুনের বিয়ে পড়ানোর শাস্তি। কাজির সহযোগী ভয়ে এক দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো। আম্মু ভয়ানক দৃশ্য দেখে অজ্ঞান হয়ে গেলো। আমার কথা বলায় বাহুল্য। আমি এক চিৎকার দিয়ে মামুনের পিছনে গিয়ে তাকে শক্ত করে ঝাপিয়ে ধরেছি। আমার শরীর থরথর করে কাঁপছিল। বিচলিত হল না শুধু মাত্র রিফাত আর মামুন। দুজনে এটাই চেয়েছিলো। ফারান কে শাস্তি দিতে চেয়েছিলো। আর এই শাস্তি টা সবার জন্য হয়ে যাচ্ছে।
আমি মামুনের পান্জাবি ধরে একটু করে ওর হাতের নিচ দিয়ে দেখতে চাইছিলাম কি হচ্ছিল। যা দেখলাম তাতে আমার গা গুলিয়ে আসতে লাগল। ফারান কাজি কে ছেড়ে দিল। কাজির নিথর দেহটা নিচে পড়ে গেল। সুক্ষ দৃষ্টি বুলিয়ে কিছু খুঁজছিল। মনে হলো আমাকে খুঁজছে। এরপর ফারানের নজর আমার উপর পড়ল। আমি তখন মামুনের পিছন থেকে সবকিছু দেখছিলাম। ফারান আমার দিকে তাকাতেই আমি মামুনের পিছনে সরে গেলাম। ফারান এত বড় বড় করে নিঃশ্বাস ফেলছিল যে সবাই শুনছিল। ফারান আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। ওর পুরো শরীর কাজির রক্তে লাল হয়ে আছে। এবার আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে রিফাত পথ আটকালো। আমার ভয় করছিলো। কারন আমার ভাইয়ের কিছু হলে আমি নিজেকে কখনো মাফ করতে পারবো না। রিফাত পথ আটকালে ফারান রিফাতের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো। রিফাত বলল
-“চলে যাও এখান থেকে।”
ফারান এক দৃষ্টিতে রিফাতের দিকে তাকিয়ে ওকে ধাক্কা মারল। সাথে সাথে রিফাত নিচে পড়ে গেল। এবার রিফাত পড়ে যেতেই আবার এগিয়ে আসতে লাগল। তারপর ফারান মামুনের মুখোমুখি দাড়াল। এরপর ফারান আমাকে ধরার জন্য হাত বাড়ালে মামুন ধরে ফেলল। তারপর ফারান কে ঝাঁকি মেরে সরিয়ে দিয়ে বলল
-“ও আমার বউ এখন। ওর দিকে হাত বাড়ালেই হাত কেটে দেবো।”
এই কথাই ফারান প্রচুন্ড রেগে গেল। সে চিৎকার করে মামুন কে বলতে লাগল
-“ও কারো বউ না। ও আমার মোহিনী। বউ হবে শুধু আমার বউ। আর কারো না।”
-“মিথ্যা কথা। কিছুক্ষন আগে আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। সুতরাং আইনত সে আমারই বউ। তার উপর একমাত্র আমার অধিকার আছে।”
এই কথায় ফারান মামুন কে নিচে ফেলে দিল। মামুন পরে যেতেই রিফাত এসে পিছন থেকে ফারানের উপর ঝাপিয়ে পড়ল। আমি বুঝতে পারছিলাম না ওই মুহুর্তে আমার কি করা দরকার। আমার ভাই আর ফারান ধস্তা ধস্তি করছিল। আমি জানতাম আমার ভাই পেরে উঠবেনা। এবং ওইটাই হল। ফারান রিফাত কেও ফেলে দিল। এরপর আমার দিকে আসতে লাগল। আর আমি আমি ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে পিছু হঠতে লাগলাম। হটতে হটতে আমার পিঠ ঠেকে গেলো। ফারান একদম কাছাকাছি চলে আসল। রাগে ও থর থর করে কাঁপছে। ওর চোখ দুটোতে কষ্টের ছাপ পড়ে আছে। বিষাদ ভরা কন্ঠে সে আমাকে বলল
-“তুমি আমাকে ধোঁকা দিয়েছো মোহিনী! তুমি আমাকে ধোঁকা দিয়েছ। আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম”
-“আ-আমি কি কিছু করি নি।”
-“সত্যি তুমি কিছু করো নি?”
মাথা নেড়ে সায় দিলাম। আর ফারান তা শুনে বলল
-“তাহলে তুমি আমাকে ভালবাসো!”
আমি শুধু ওর দিকে তাকায় থাকলাম। কিছু বুঝতে পারছিলাম না। ফারান আবার বলল
-“তুমি আমাকে ধোঁকা দিয়েছ, মিথ্যা বলেছো। তোমাকে এখান থেকে আমি অনেক অনেক দূরে নিয়ে যাব। যাতে কেউ আমাদের স্পর্শ করতে না পারে। কিন্তু তার আগে তোমাকে শাস্তি পেতে হবে।”
.
এই কথা বলে ফারান আমাকে এক ঝটকায় কাঁধে তুলে নিল। আমি চমকে গেলাম। কিন্তু পরক্ষনে আমি তাকে বাধা দিতে লাগলাম, কাঁদতে লাগলাম, মারতে লাগলাম কিন্তু কাজ হচ্ছিল না। সে আমাকে আমার রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। তারপর আমাকে জোর করে জড়িয়ে ধরল। আমি চিৎকার করে ওকে ছাড়াতে চাচ্ছিলাম। কারন সেই সময় আমি অন্য কারো স্ত্রী ছিলাম। তাই আমি বলতে লাগলাম
-“দোহাই লাগে আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আরেকজনের স্ত্রী।”
এই কথায় সে আমাকে আরো জোরে চেপে ধরে আমার কাঁধ থেকে আচল টা টেনে ফেলে দিল। অসহ্য লাগছিল সবকিছু। মনে মনে আমার মৃত্যু কামনা করছিলাম। সেই সময় রিফাত চলে আসলো। সে এসেই ফারান কে টেনে ধরলো। ফারান আমাকে ছেড়ে দিয়ে রিফাত কে মারতে উদ্ধত হল। রিফাতও কিছু না দেখে ওর ওপর ঝাপিয়ে পড়ল। আমি তাড়াতাড়ি শাড়ি ঠিক করে গায়ে দিলাম। চারদিকের এমন অবস্থা দেখে আমি কান্না করতে লাগলাম। একসময় ফারান নিচে ফেলে রিফাতের গলা চেপে ধরল। রিফাত নিঃশ্বাস নিতে পারছিল না। রিফাতের গলার রগ গুলি ভেসে উঠেছিল। আমি তাড়াতাড়ি ফারান কে ছাড়তে বললাম। কিন্তু ফারান ছাড়ল না। আমি অনুনয় করতে লাগলাম। আমার একটা মাত্র ভাই। ফারান আমার ভাইকে ছাড়ছিল না। আমাকে কিছু একটা করতে হবে। আমি কি করব! কি করব! ঘরে চোখ বুলালাম। কিছুই চোখে পড়ল না। কিন্তু ঘরের কোনে একটা রড চোখে পড়ল। এটা সব সময় আম্মু আমার রুমের চৌকির নিচে রাখত। আমি সেটা নিলাম। নিয়ে ফারানের পিছনে দাড়ালাম। রিফাতের চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে তবুও ফারান ছাড়ছে না। আমি মনে মনে কাউকে আঘাত করার জন্য মাফ চেয়ে নিলাম। তারপর চোখ বন্ধ করে গায়ের সর্ব শক্তি দিয়ে ফারানের মাথায় আঘাত করলাম। আঘাত করার পর আমি দাড়িয়ে রইলাম কি হয়ছে তা দেখার জন্য। ফারান থেমে গেল। তার হাত রিফাতের গলা থেকে সরে গেল। এর পর ফারান দাড়িয়ে কোন রকম আমার দিকে তাকিয়ে ফিস ফিস করে আমাকে ডাকলো
-“মো-মোহিনী!”
শুধু এইটুকুই। এরপর ফারান ধপাস করে পড়ে গেল। আমি রড ফেলে দিয়ে রিফাত কে উঠালাম। রিফাত কে পানি এনে দিলাম। এরপর ফারান কে নির্জিব দেখে রিফাত চেক করতে লাগল। তারপর রিফাত আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-“আপু তুই কি করছিস এটা? এ তো নিঃশ্বাস নিচ্ছে না।”
-“বিশ্বাস কর আমি কিছু করি নাই। আমি শুধু চেয়েছিলাম ও যেন তোকে ছেড়ে দেয়।”
আমি তাড়াতাড়ি ফারান কে দেখতে লাগলাম। ওর মাথা ফেটে রক্ত বেরুচ্ছে। আমি ফারান কে ডাকতে লাগলাম। আমি কখনো ওকে মারতে চাইনি। আমি কাঁদতে শুরু করলাম। এটা কি হল? কি করলাম আমি! নিজ হাতে মানুষ খুন করলাম। তাকে খুন করলাম যার কারণে বেশ কিছু মানুষের খুশি খুন হয়েছে। আমার খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু খুশি হবার বদলে আমার মাথা ঝিম ঝিম করছে। চিন টিন করে ব্যাথা করছে বুকের কোথাও। আর কখনো কেউ বলবেনা মোহিনী আমি তোমাকে ভালবাসি! কেউ বলবেনা Faran loves mohini forever ever and ever!

পরিশেষ: ফারান স্পট ডেড ছিল। আর মামুন কে দু চার দিন হাসপাতালে রাখা হলে সে সুস্থ হয়ে উঠে। আমি মামুনের স্ত্রী হিসেবে রইলাম। মারোয়া আমার সঙ্গে সঙ্গেই থাকে। আমরা ওই জায়গা ছেড়ে নতুন জায়গায় চলে গিয়েছিলাম। আম্মু আর রিফাত কে এলাকার মানুষরা থাকতে দিচ্ছিল না তাই স্থান পরিবর্তন করল। তারপরও মাঝে মাঝে মনে হয় যেন কেউ কানে কানে ফিস ফিস করে মোহিনী বলে ডাক দিয়ে যায়।
.
সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here