মোহ মুক্তি ~ ১৪ লেখা : Azyah(সূচনা)

0
710

মোহ মুক্তি ~ ১৪
লেখা : Azyah(সূচনা)

ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে সকাল নয়টা দশ মিনিটে।সকালের প্রারম্ভ। শুভ্র পর্দা ভেড়ানো জানালা দিয়ে এক চিলতে রোদ এসে পড়ছে।ঘরের অন্ধকারকে আংশিক আলোকিত করতে। পিটপিট করে চোখ খুলে সন্ধ্যা।পরিশ্রান্ত ক্ষুদ্র নয়নযুগল ঘুমের রেশ কাটায়নি এখনও।বাহিরের রৌদ্রের প্রখরতা।যেনো রাতে কোনো ঝড় হাওয়া বয়ই নেই।কেমন এক রাত ছিলো! বৃষ্টির ছিটেফোঁটাও ছিলো না।অথচ হাওয়া বইছে এমন যেনো উড়িয়ে,তলিয়ে নিয়ে যাবে সবকিছু।তাদের পরিস্থিতির সাথে মেল রেখেই হয়তো আবহাওয়া রূপ বদলেছিলো তার।অরণ্য নামক ঝড়কে থামিয়েছে খোদ সন্ধ্যা।তার পরপরই যেনো প্রকৃতির ঝড়টাও থেমে গেলো। নাহয় উভয়ই তাণ্ডব করতো।

উদাসীন মন নিয়ে উঠতে চাইলো সন্ধ্যা।তবে তার তর্জনী আঙ্গুল আটকে অরণ্যের হাতের মুঠোয়। কাল আবদার করেছিলো।সন্ধ্যা রাজি হয়নি।তার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই তার আঙ্গুল চেপে ধরেছিলো হয়তো।বারবার বলছিলো পালিয়ে যাবে সন্ধ্যা।হাত পা গুটিয়ে শুয়ে আছে। নেহাইতি বাচ্চাদের মতন দেখাচ্ছে এতবড় একজন স্বপুরুষকে।হাত। ছাড়িয়ে উঠে পড়ে সন্ধ্যা।এখন বাহিরটা সামলানো লাগবে। অরণ্য তাদের বাড়িতে আছে।এটা কতক্ষণইবা বাবা মার কাছে লুকায়িত থাকবে?

ফ্রেশ হয়ে মার কাছে গিয়ে কাজে হাত দিলো।বললো,

“মা কাল রাতে উনি হঠাৎই চলে এসেছে।রাতের বাস ছিলো ঢাকা পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায়। তোমরা ঘুমিয়ে ছিলে তাই আর ডাকিনি”

সন্ধ্যার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লেন আসিয়া বেগম।ঘরে জামাই এসেছে এটা কিনা সে জানে না। আশ্চর্য্যতম ভঙ্গিতে বললেন,

“ঘুমিয়ে ছিলাম বলে ডাকিস নি!এটা কোনো কথা?খেতে দিয়েছিস রাতে জামাইকে?কি দিয়েছিস?….কিযে করিস না তুই।আমাকে ডাক দিলেই হতো”

মাকে উতলা হতে দেখে সন্ধ্যা বললো, “মা!এত চিন্তা করার কিছুই নেই।খাবার গরম করে দিয়েছি রাতে।কোনো সমস্যা হয়নি”

“তারপরও সন্ধ্যা!নতুন জামাই প্রথমবার থাকতে এসেছে।আমরা কিনা পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিলাম।তোর ডাক দেওয়া উচিত ছিলো।”

“উনি কিছু মনে করেননি”

“তুই রাখ এসব।তোর বাবাকে ডাক।ঘরে নাস্তা রেডি করছি বাহির থেকেও কিছু আনাতে হবে।”

মাকে বুঝিয়ে কোনো লাভ হলো না।পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলেছেন।একেক পদের নাস্তা তৈরি করছেন দ্রুত গতিতে।বাবাকে ইতিমধ্যেই বাহিরে পাঠিয়ে দিয়েছেন।চা বানিয়ে হাতে ধরিয়ে অরণ্যকে দিয়ে আসতে বললেন।মায়ের এমন হুরুস্থুল কান্ড দেখে সন্ধ্যা তাকে থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ।চা নিয়ে ঘরের দিকে যায়।অরণ্য উঠে পড়েছে।

“আপনার চা”

“বাড়ি যাবো কখন?”

চা হাতে না নিয়েই অরণ্য বলে উঠলো। কাল রাতের কথাটা ভুলেনি এখনও।নাই ভুলেছে সন্ধ্যার দেওয়া প্রতিশ্রুতি।সকাল হতে না হতেই বাড়ি যাওয়ার তাড়া।

সন্ধ্যা বললো, “বিকেলে যাবো”

“আপনি কিন্তু কথা দিয়েছেন আজ সকালে যাবেন”

“মা আপনার জন্য দুপুরের খাবারের আয়োজন করছেন।যদি না খেয়েই চলে যান তারা কষ্ট পাবেন”

“তারা জানলো কি করে?”

“আমি জানিয়েছি”

“বাড়ি ফিরবেনতো?”

“আমি আমার কথার এদিকওদিক করি না।তবে হ্যা কিছু মানুষ বদলে যায়।ভুলে যায় তাদের বলা কথাগুলো।”

খোঁচা দিয়ে বললো কথাটি সন্ধ্যা।অরণ্য বেশ বুঝেছে। সেইতো কথার বিপরীতে কাজ করছে আজকাল। বিয়েরদিন রাতে তাকে কখনো মেনে না নেওয়ার কথা বড় গলায় বলেছিলো।আজ কি হলো? মানুষ পরিবর্তনশীল।এই পরিবর্তন কখনো হয়ে উঠে অন্যের চোখের কাঁটা।তার পরিবর্তন ভালো দিকে ইঙ্গিত করলেও সেটা মানুষ মানতে চায় না।মনে রাখে পুরনো কথা।খারাপের কাছে ভালো হেরে যায়।বিচার করে তাকে খারাপটা দিয়েই।হাজার খানেক ভালোর মধ্যে একটি খারাপ শির উঁচু করে দাঁড়ায়। দাবিয়ে দেয়।

__

বাড়ি ফিরেছে সন্ধ্যা।দুটো দিন হয়েছে অরণ্যের সাথে চলে এসেছে।এখানকার আবহাওয়া অন্য।অরণ্যের স্বভাব ভিন্ন। কথা সুন্দর করে বলে। ধমকায় না।রাগ করা যেনো ভুলে গেছে। সন্ধ্যার নিঃশ্বাস নেওয়াটাকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখছে সে।তবে এতে কোনো লাভ হয়নি। সন্ধ্যা আগের মতোই আছে। নির্বিকার,নির্লিপ্ত,উদাসীন।তার সখের বেলীগাছটা। নেতিয়ে গেছে অযত্নে।গতরাতেই পুরো বারান্দা অরণ্য বেলি ফুলে ভরিয়ে দেয়। অথচ সন্ধ্যার এতেও কোনো বিশেষ আগ্রহ নেই। একি তার রাগ?অভিমান?কিছুই বুঝে ওঠার সুযোগ নেই।
দুপুরে একই সঙ্গে লাঞ্চ করছে আবিদ আর অরণ্য।অরণ্যের খাওয়ায় তেমন রুচি নেই।আবিদের জড়াজড়িতে খাবার মুখে তুলে।

এরই মধ্যে আবিদ প্রশ্ন করে,

“সব ঠিক করেছিস?”

“চেষ্টা করছি”

“বেশি দেরি করিস না।দেরি করলে তোরই লস”

“আচ্ছা আবিদ। তুইতো আমার আগে বিয়ে করেছিস সংসার করছিস। বউকে বোঝার কোনো উপায় আছে?”

“আছে আবার নেই।”

“সন্ধ্যাকে বোঝার উপায় নেই”

আবিদের খাওয়া শেষ।হাতটা ধুয়ে নেয়।অরণ্যকে সময় নিয়ে খাওয়ার সুযোগ দেয়।আজকাল সে ব্যস্ত।তার মন অস্থির। সন্ধ্যাকে তার অজান্তে ভালোবেসেছে এটা জানে না হয়তো।মানুষ মানুষের স্বভাবে পরিণত হয়।তারপর মায়ায়।এরপর হয় ভালোবাসা।আবিদ পূনরায় অরণ্যের সামনের চেয়ারটায় এসে বললো,

“তুই বলেছিলি প্রথমে দর্শনধারী পড়ে গুণবিচারী। হ্যা তোর কথাও ঠিক।কিন্তু তোর উচিত ছিলো না দর্শনধারী হওয়ার পাশাপাশি চুপ হয়ে থাকা?নিজের কাজকর্মে সন্ধ্যাকে বুঝতে না দেওয়া তুই ওর প্রতি ইন্টারেস্টেড না।আজ যখন তার প্রতি তোর মায়া জন্মেছে।আজ তার থেকে বেশি আশা করে ফেলেছিল।ভুল মানুষ দ্বারা হয়।হয়তো সন্ধ্যার মনে এই ভয় আজ নাহয় মায়ায় পড়ে তাকে কাছে টানলি। কাল এই রূপের কারণেই তাকে ছুঁড়ে ফেলতে পারিস”

অরণ্য সাথেসাথে উত্তর দিলো, “আমি সন্ধ্যাকে কোনোদিন দূরে ঠেলে দিবো না”

“সত্যি বলছিসতো?”

করুন চেহারায় অরণ্য বললো, “আমি এতটাও খারাপ না আবিদ।”

“তাহলে এটা উপলদ্ধি করা সন্ধ্যাকে।ক্ষমা পেলেও পেতে পারিস”

কি অদ্ভুত!একসময় ঘৃণার পাত্র এখন এসে সবচেয়ে মূল্যবান হয়ে উঠেছে।কয়লা কখনো তুচ্ছ হয়না। নিকৃষ্ট হয় মানুষের মন।নিচু। অত্যাধিক নিচু! অপ্রয়োজনীয় কিছু বালির মতন হাত থেকে ফসকে পড়তে থাকলে সেটাকে রক্ষা করার জন্যও লড়াই করে। মূল্য বেড়ে দ্বিগুণ হয়। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির সবটাই সেরা।অথচ এই সৃষ্টিই একে অপরকে লাঞ্ছনা করে যাচ্ছে বহু বছর ধরে।

উপর উপর দিয়ে যাদের শক্ত দেখা যায় মনের দিক দিয়ে তারা বেজায় নরম হয়।অরণ্যের আনা গাছগুলোকে ছুঁয়ে দেখা হয়নি।বারান্দা থেকে কাপড় নামাতে গিয়ে হুট করে ওরা সন্ধ্যাকে ডাকলো নিজের দিকে।বিনা শব্দে, বিনা বাক্যে।এদের সাথে কিসের রাগ?তারা কি কারো রাগ ক্ষোভ সহ্য করার পাত্র।তারা ভালোবাসার পাত্র।কাপড়গুলো বিছানায় রেখে পানি দিতে লাগলো গাছগুলোতে।আলতো হাতে ছুঁয়ে দেখলো ফুলগুলোকে।কি তরতাজা! প্রানবন্ত।এমনি মানুষের জীবন হতো?কোনো চাওয়াপাওয়া নেই। গাছতো দিয়ে যায়।বিনিময়ে কিছুই চায় না। সন্ধ্যার আবার হিসেব আলাদা।না তার নিজের কিছু প্রয়োজন না সে কিছু দিতে ইচ্ছুক।এরই মধ্যে আকাশ গর্জন করে উঠলো।রূপ এমন ধারণ করেছে যেনো বৃষ্টি নামার আগের মুহূর্ত।ফোনটা হাতে থাকায় একটি ছবি তুলে নেয়।

নিজের পেজে লিখে ফেলে,

“এক বৃষ্টিময় সন্ধ্যার আগ মুহূর্ত!”

ঝড়ের গতিতে ক্যাবিন ত্যাগ করে অরণ্য। ব্যাগটা ফেলে গিয়েছে।কোনো রকম বাইকের চাবি হাতে নিয়ে ছুটেছে।সামনে মানুষ।কোনো তোয়াক্কা না করে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো।আবিদ খবর পেলে সেও ছুটে অরণ্যের পেছনে।কোনো লাভ হলো না।অরণ্য পাগলা ঘোড়ার মতন বাইক দিয়ে ছুটেছে।ইতিমধ্যে রাস্তায় বৃষ্টি। সাইসাই বাতাস। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই চলছে অরণ্য।পারলে বোধহয় উড়ে চলে যেতো।বৃষ্টি হচ্ছে।এই সন্ধ্যার সময়।যে করেই হোক বাড়ি পৌঁছাতে হবে।দারুন ভয় জেগেছে মনে। বৃষ্টি প্রিয় অরণ্যের আজ বৃষ্টিকে অভিশাপ মনে হচ্ছে। সম্পুর্ণ ভিজে একাকার হয়ে বাইক এসে থামে বাড়ির নিচে।এলোমেলো লিফটের বাটন চাপলো।লিফট আট তলায় আছে।নিচে আসতে অনেক সময় নিবে।বাইকের চাবি শক্ত করে হাতে চেপে দৌড় লাগায় উপরে।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অনবরত কলিং বেল বাজিয়ে যাচ্ছে।কোনো সাড়াশব্দ নেই।বুকের ভেতর অদ্ভুত রকমের ভয় হানা দিতে লাগলো।সে যা ভাবছে তাই নয়তো?দ্রুত প্যান্টের পকেট হাতড়ে চাবি খুঁজতে লাগলো। আতঙ্কিত হয়ে ভুলেই গেছে চাবি তার হাতে।বাইকের চাবির সাথে ঘরের একটা একস্ট্রা চাবি সাথেই থাকে।হুশ আসতেই খুলে ভেতরে ঢুকে গেলো।সম্পূর্ণ অন্ধকারে ঢাকা ঘর।শুকনো ঢোক গিলে পা বাড়ায় ঘরের দিকে।ঘরটাও ঠিক পুরো বাড়ির মতন অন্ধকার। মনে হচ্ছে না কেউ আছে। কোমরে হাত রেখে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে অরণ্য।হৃদপিণ্ডের গতি অত্যাধিক।তার আগেই আন্দাজ করা উচিত ছিলো সন্ধ্যা এক কথার মানুষ।যেহেতু মুক্তি দেবে বলেছে। দেবেই!

হুট করেই বারান্দা থেকে চুরির আওয়াজ ভেসে আসলে চমকে উঠে অরণ্য। বারান্দার দিকে গিয়ে চোখ বড়বড় হয়ে গেলো।সন্ধ্যা জমিনে বসে।মাথা একদিকে ঝুঁকিয়ে আছে।চোখ জোড়া বন্ধ।ধপ করে পা গুটিয়ে বসে পড়ে অরণ্যও। সন্ধ্যার গালে হাত রেখে অত্যন্ত বিচলিত কণ্ঠে বললো,

“সন্ধ্যা!সন্ধ্যা..”

কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।অরণ্য আরো ঘাবড়িয়ে যায়। গালে সামান্য চাপড়ে তাকে জাগানোর চেষ্টায়,

“সন্ধ্যা!”

গালে মৃদু ব্যথা অনুভব করে চোখ মেলে তাকায় সন্ধ্যা। গভীর তন্দ্রায় ছিলো এতক্ষন।কানে হেডফোন গুজে দিব্যি বৃষ্টি বিলাসে মত্ত ছিলো। চোখ খুলে অরণ্যকে দেখতে পায়।তাকে বাহুতে আগলে বসে আছে। মুখশ্রীতে অত্যাধিক ভয়ের ছাপ। সন্ধ্যাকে চোখ খুলতে দেখে মন মস্তিষ্ক যেনো নিথর হয়ে গেলো।এক মুহুর্ত দেরি না করে মিশিয়ে নেয় নিজের সাথে। দুহাতের বাঁধন শক্ত করে মাথা নুয়ে ফেলে অরণ্য।অনেকটা ঘাবড়ে গিয়েছিলো সে।ভেজা শার্ট! ভেজা চুল বেয়ে টপটপ পানি পড়ছে সন্ধ্যার ঘাড়ে।অরণ্যের বুকে লেপ্টে মস্তিষ্ক থেমে গেছে যেনো।সাথে শ্বাস প্রশ্বাসও।

সন্ধ্যাকে জড়িয়ে রেখেই বললো, “এভাবে বসে ছিলেন কেনো এখানে হ্যা?কতটা ভয় পেয়েছি জানেন?ভেবেই বসেছিলাম চলে গেছেন”

অরণ্যের শব্দগুলো কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই সজাগ হয়ে উঠে সন্ধ্যা। নিজেকে আলতো করে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলে,

“কানে হেডফোন ছিলো আর ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।”

বলে ঘরের দিকে চলে যায় সন্ধ্যা।পেছন থেকে অরণ্য এসে হাত টেনে ধরলো। পূনরায় জড়িয়ে ধরতে চাইলে সজোড়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় তাকে।চোখে মুখে রাগের। ছাপ নিয়ে বললো,

“স্পর্শ করবেন না আমাকে!”

“সন্ধ্যা আম সরি”

“আপনাকে মেনে নিচ্ছি না আমি”

“ওকে!মেনে নিয়েন না।পাশে থাকেন শুধু সারাজীবনের জন্য”

“ভুলে যাবেন না মিস্টার অরণ্য মোর্শেদ আমি একজন কুৎসিত নারী।আর আপনি সুদর্শন পুরুষ।সমাজে মুখ দেখাবেন কি করে?সময় আছে ভেবে নিন কাউকে সারাজীবনের জন্য পাশে চাওয়ার আগে।পড়ে পস্তাতে হবে”

যেই চোখ আগে নির্বিকার চেয়ে থাকতো সেখানে আজ আগুনের ঝলকানি।নিচু গলায় স্বর উঠেছে উচুতে। চিৎকার করে কথা বলছে সন্ধ্যা।রাগের অনুভূতিটাও আছে তার।এখানে শান্ত বনে গেলো অরণ্য।বারণ করা সত্ত্বেও সন্ধ্যার হাত চেপে বিছানায় বসিয়ে দিলো।নিজেও বসলো জমিনে পা ভাজ করে। সন্ধ্যার হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় আগলে নিয়েছে।চোখে চোখ রেখে বললো,

“আমি ভুল করেছি।ভুল না পাপ করেছি।আমি মানছি সন্ধ্যা।আমাকে শাস্তি দিতে চান?দিন। মারুন আমাকে।যতক্ষন ইচ্ছে আমাকে মেরে যান।কিন্তু একটা সত্যি কথা শুনুন আমি সত্যিই নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছি।আমি যা করেছি সেটা অন্যায়।একটা সুযোগ দেন?”

“কোনো সুযোগ নেই”

“আমাকে ভুলটা শুধরে নিতে দিবেন না?আমি সত্যিই আপনাকে কখনও অভিযোগ করার সুযোগ দিবো না”

“আমার হাতটা ছাড়ুন”

সন্ধ্যা অরণ্যের কোনো কথা শুনতে চাচ্ছে না। অরণ্য তাকে যেতে দিতে নারাজ।বড্ড অধিকার খাটিয়ে হাত আরো শক্ত করে চেপে ধরে।কিছু সময় সন্ধ্যার মুখটার দিকে চেয়ে রইল। ক্রোধ! সমস্ত মুখ জুড়ে ক্রোধ।অথচ মায়াবী।

“আপনার নীরবতা,আপনার কৃষ্ণ বর্ণ,আপনার অপূর্ণতা সবকিছুকে ভালোবাসি।আর হয়তো তার চেয়ে বেশি ভালোবাসি আপনাকে”

“আমি আপনার ভালোবাসার যোগ্য না”

“আপনি আমাকে আপনার জীবন সঙ্গী হিসেবে চান সন্ধ্যা?”

“নাহ!”

হাত ছেড়ে উঠে দাড়ায় অরণ্য। মুখটা স্বাভাবিক করে ফেলেছে।স্মিথ হাসলো।হেসে বললো,

“ভেবেই ছিলাম এটা।আসলে আমি যা করেছি সেটা ক্ষমার যোগ্য না।থাক!.. এর চেয়ে ভালো হয় আপনাকে মুক্ত করে আমি নিজেও মুক্ত হয়ে যাই ”

গলা কাপছে অরণ্যের। সন্ধ্যার নজর তার দিকে।বলে বেরিয়ে গেলো।হুট করে সন্ধ্যা উঠে বললো,

“কোথায় যাচ্ছেন?”

“জানি না।যদি ফিরি দেখা হবে”

এক মুহুর্ত দাড়ায় না অরণ্য।দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লো। সন্ধ্যা সিড়ি বেয়ে নিচ অব্দি গিয়েছে তার পিছু পিছু।কাজ হয়নি।হুট করে কোথায় হারিয়ে গেলো।গতির সাথে তাল মেলাতেই পারলো না সন্ধ্যা।

চারিপাশে মানুষের সমাগম। অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বাজছে।গোল হয়ে দাড়িয়ে মানুষজন দেখছে পড়ে থাকা মানুষটিকে। সাদা শার্ট রক্তে রঙিন।কপালের আঘাত কালো বর্ণ ধারণ করেছে।ইট পাথরের রাস্তাটাও রক্তাক্ত।মাত্রই বাইক এক্সিডেন্ট হয়েছে।পকেট থেকে এন আইডি কার্ড বের করে নাম পড়লো “অরণ্য মোর্শেদ”। পালস চলছে, ধীর নিঃশ্বাসওটাও।দ্রুত অক্সিজেন মাস্ক পড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হলো হসপিটালে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here