মোহ মুক্তি ~ ১৫ (শেষ পর্ব)
লেখা : Azyah(সূচনা)
অদ্ভুত নিয়তি।তারই সকল নিয়ম।রক্ত মাংসে গড়া মানুষের সমস্ত পরিকল্পনাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বলে মানুষের নিজের জীবনে তার নিজেরই অধিকার অনেক কম।হবে সেটাই যেটা পূর্বলিখিত।সৌভাগ্যবশত নিয়তি আর মানুষের পরিকল্পনা মিলে গেলে সেটা হয় স্বর্গনুভূতি।ওড়নায় রক্তের ছাপ নিয়ে দাড়িয়ে আছে সন্ধ্যা।শক্ত হয়ে! তারতো পুরনো স্বভাব এটা।তবে আজ মনে অন্যরকম অনুভূতি।আজ অরণ্যের নয় অনুশোচনা হচ্ছে তার।প্রশ্নের মেলা খুঁড়ে খাচ্ছে হৃদয়কে।উত্তর চাচ্ছে। সন্ধ্যার মস্তিষ্ক থেকে কোনো উত্তর আসছে না।সেজে অচল।স্থির হয়ে আছে।চিন্তা চেতনার সমস্ত শক্তি হারিয়ে বসেছে। চোঁখ জোড়া লাল হয়ে আছে তারও।আর সেখানে অরণ্য রক্ত লাল!
জাহানারা বেগম ইতিমধ্যে একবার অজ্ঞান হয়েছেন।হুশ ফিরতেই আবার কেদে উঠছেন। আসিয়া বেগম তাকে ধরে বসে আছেন।কোনো মা কি পারবে সন্তানকে এই অবস্থায় দেখতে?
সন্ধ্যা এগিয়ে গেলো তার দিকে।বললো, “এসব আমার কারণে হয়েছে।শাস্তি দিন আমাকে”
জাহানারা খাতুন কান্না থামিয়ে চোখ তুলে তাকান সন্ধ্যার দিকে। ছলছল নয়নে প্রশ্ন করেন,
“এভাবে কেনো বলছো মা?”
“আমার কাছে আপনার ছেলে মন থেকে ক্ষমা চেয়েছিলো।আমি তাকে ক্ষমা করিনি।”
“এর সাথে অরণ্যের অ্যাক্সিডেন্টের কি সম্পর্ক সন্ধ্যা?” আসিয়া বেগম মেয়ের পানে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন।
“উনি অনেক কষ্ট পেয়েছে মা।এজন্যই কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো।”
বিস্ফোরিত চোখে দুই মা তাকিয়ে আছেন। এতসত কষ্টের মধ্যেও জাহানারা বেগম সন্ধ্যাকে কোনো দোষ দিলেন না।তিনি জানেন।সবটা জানেন! সন্ধ্যার মধ্যে লুকিয়ে থাকা একরাশ কষ্ট সম্পর্কে তিনি অবগত।এখন এসব ভাবার সময় নয়।এখন অরণ্যের সুস্থতা মুখ্য বিষয়।
হাঁটু গেড়ে জাহানারা বেগমের সামনে বসলো। অপরাধীর ন্যায় মুখ করে বললো,
“আমাকে শাস্তি দিন মা”
“আমার ছেলেকে ক্ষমা করে দাও।এটাই তোমার শাস্তি”
ঘণ্টার পর ঘন্টা ব্যতীত হচ্ছে। ডাক্টাররা আসছেন।কিছুই বলছেন না।শুধু এতটুকুই বলে গেলেন অবস্থা ক্রিটিক্যাল।রক্ত লাগবে। সন্ধ্যা কাউকে না জানিয়ে এগিয়ে গেলো। নার্সকে বললো,
“আমার এ পজিটিভ ব্লাড।”
“আপনি পেশেন্টের কি হন?”
মুখ ফুটে বেড়িয়ে যাচ্ছিলো স্ত্রী। শব্দটি গলায় আটকে গেলো।বলতে পারলো না সন্ধ্যা।কোনোদিন স্ত্রী ছিলোই না সে অরণ্যের।নাই অরণ্য তার স্বামীরূপে ছিলো। তৎক্ষনাৎ মাথায় আসলো এখন ভাবাভাবির সময় না।
“আমি ওনার স্ত্রী”
নার্সটি সন্ধ্যাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করলেন।সে নিজেই দুর্বল।রোগা পাতলা দেহ। নার্স বললেন,
“আপনার নিজের শরীরেই রক্ত নেই।আপনি আপনার স্বামীকে কি করে রক্ত দিবেন?”
“আমি পারবো সিস্টার।আমার রক্ত পুষিয়ে যাবে।এখন ওনার বেশি দরকার”
নার্সটি ভেবে চিন্তে উত্তর দিলেন, “ঠিক আছে সাথে আসুন।কিছু টেস্ট করতে হবে।”
নার্সটি সন্ধ্যাকে ইমারজেন্সি টেস্ট রুমে টেস্ট করতে দিয়ে চলে গেলেন।এক ঘন্টায় টেস্ট রিপোর্ট আসবে।এক ব্যাগ রক্ত হসপিটালের ব্লাড ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়েছে।আরো এক ব্যাগ প্রয়োজন।মনের ঝড়কে মনের মধ্যে চেপে রেখেই ঠাই বসে আছে।পাশেই এক মায়ের হাহাকার।ছেলের জন্য। বাবারাও বেশ চিন্তিত।এক ঘন্টা পর রিপোর্ট আসলো।সব ঠিক আছে ব্লাড দিতে পারবে সন্ধ্যা।
একই কেবিনে দুটো আলাদা বেড।একপাশ থেকে রক্ত সরবরাহ করা হচ্ছে অন্যপাশে।ডান পাশের বেডটায় অরণ্য।কেমন নিথর দেখাচ্ছে।মাথা,হাত-পা সাদা ব্যান্ডেজে মোড়ানো।রক্ত বেয়ে উপরে এসেছে।সাদা রঙের ব্যান্ডেজ করেছে রঙিন। একটাবারের জন্য সেখানে ফিরে তাকাইনি সন্ধ্যা।বুকের মাঝে তোলপাড়।বুকে হাত দিয়ে ধুকপুকানি থামানোর চেষ্টা করলো।সামান্য রক্ত দিয়ে কি অপরাধবোধ কমানো যাবে?আজ যে তার কারণে অরণ্যের এই অবস্থা।কি হতো মেনে নিলে তাকে?ভুলতো মানুষই করে। সন্ধ্যাও ভুল করা থেকে বিরত নয়।এভাবেই প্রতি ভুলের শাস্তি দিতে থাকলে মানবজাতি হতো নিঃশেষ।বিরান মরুভূমিতে পরিণত হতো পৃথিবী।তাকে বোঝালেতো সে বুঝে যায়।সেই ঝড়ের রাতেওতো সন্ধ্যার কথা ফেলে দেয়নি।আজও হয়তো ফেলে দিত না।এইযে রাতের গভীরতা বাড়ছে? ভোর হতে শুরু করেছে।অরণ্য এত চুপচাপ?নিঃশ্বাস নেওয়া ব্যতীত তার মধ্যে কোনো নড়চড় নেই।ভালোবাসি কথাটা একবার বলে চুপ হয়ে গেলো।আবার বলবে?বললে সন্ধ্যা মেনে নিবে তাকে?
ব্লাড দিয়েই বাড়ি ফিরেছে সন্ধ্যা।অরণ্যের সকল প্রয়োজনীয় জিনিস নিতে হবে। ঘরটা কেমন নিস্তব্ধ! প্রাণহীন।মনে পড়ে গেলো এইতো কয়েক ঘন্টা আগের কথা।আটকে ফেললেই পারতো অরণ্যকে।রক্ত দিয়ে প্রচুর মাথাটা ঘোরাচ্ছে।ঘরে ঢুকে পড়ে যেতে নিলে রেহানা খালা এসে ধরে ফেলে।
“কি হইলো?”
“মাথাটা ঘোরাচ্ছে খালা”
“স্যার কেমন আছে?”
সন্ধ্যা থামলো,সময় নিয়ে বললো, “ভালো নেই”
“কিছুই হইবো না।আল্লাহ ভরসা।আপনি আসেন আপনারে খাবার দেই।”
“আমি খাবো না”
“না খাইলে স্যারের দেখভাল করবেন কেমনে? স্যাররে সুস্থ করা লাগবো না?”
রেহানা খালার দিকে চেয়ে আনমনে প্রশ্ন করে বসলো সন্ধ্যা,”উনি ঠিক হয়ে যাবেনতো খালা?”
হসপিটালে ফিরে ঠিক একই রূপে সন্ধ্যা।সবার আড়ালে রেলিং ঘেঁষে দাড়ায়।কালো আকাশের দিকে চেয়ে ভেবে নিচ্ছে সবটা।হিসাব মেলাতে ব্যস্ত।মিলছে না।আজ তাঁর মন আর মস্তিষ্ক তার প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে না।তাদেরও বোধহয় অনেক রাগ।বেশ অত্যাচার করে ফেলেছে সন্ধ্যা তাদের সাথে।আজ বেকে বসেছে।জেদ ধরে বসেছে উভয়ই।কাধে হাত রাখলেন আসিয়া বেগম।মেয়ের পাশে এসে দাড়িয়ে বললেন,
“আমি জানি সন্ধ্যা তুমি তোমার এতটুকু জীবনে যা দেখেছো, শুনেছো সেটা তোমার কোনোভাবেই প্রাপ্য ছিল না।কথায় আছে মানুষের হাত বাঁধা যায় মুখ বাধা যায়না।আমরা বাবা মা হয়ে তোমাকে এসব থেকে বাঁচাতে পারিনি।আমাদের ব্যর্থতা এটা।যদি চাইতাম পারতাম।তোমাকে এসব থেকে দূরে একটা স্বাভাবিক জীবন দিতে।পারিনি।সমাজ থেকে রক্ষা করতে পারিনি।আমাদের মাফ করে দিও।বাবা মা হিসেবে আমরা দুজনই ব্যর্থ।”
__
দুদিন হতে চললো।অরণ্যের জ্ঞান ফিরেনি। ডাক্টার বলে গেছেন দুআ করতে। এছাড়া কোনো রাস্তা খোলা নেই।তাদের হাতে কিছুই নেই। চব্বিশ ঘন্টায় জ্ঞান না ফিরলে কোমায় চলে যাবে।মাথায় অনেক আঘাত পেয়েছে সে।সবাইকে বাড়িতে পাঠিয়ে সন্ধ্যা বসে আছে অরণ্যের পাশে।পাশে যান্ত্রিক বাক্সটা “বিপবিপ” আওয়াজ করছে।অরণ্যের হৃদধ্বনি। হাতে ক্যানোলা লাগানো সেই দুইদিন যাবত।অরণ্যের কোমল মুখের দিকে চেয়ে সাহস বাড়লো সন্ধ্যার।
হাতের আঙ্গুল স্পর্শ করে নিজেই বললো,
“উঠবেন না?”
সে জানে অরণ্য শুনতে পাচ্ছে না।অযথাই বলে গেলো।নিজের মনের শান্তি।যদি হুট করে চোখ খুলে বলে। এইতো আমি উঠে গেছি। হাতে আঙ্গুল বোলাচ্ছে সন্ধ্যা। আবিষ্কার করলো চোঁখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে।একটু আধটু করে এই জল কান্নায় পরিণত হলো।নাক ফুঁসছে সন্ধ্যা। ঠোঁট শক্ত করে কামড়ে ধরে আছে।নিজের হেরে যাওয়া দেখছে যে!এই হার মেনে নেওয়া এতই সহজ?এতটা বছর তিলেতিলে গড়ে তোলা শক্ত পাথর হৃদ!ভেঙে গুড়িয়ে যাওয়া এতই সহজ?কিন্তু হচ্ছে সেটাই।ভেঙে পড়ছে।এবার তার দূর্বল হওয়ার পালা।
“আমাকে দুর্বল করে দিব্যি ঘুমাচ্ছেন!”
আকস্মিক অপ্রত্যাশিত কন্ঠস্বরে কেপে উঠে সন্ধ্যা।যেনো কেউ গুঙিয়ে কথা বলছে।ঠান্ডা,শীতল আওয়াজ।বলছে,
“যেখানে ভালোবাসার মানুষের কান্না দেখলে হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হওয়ার কথা সেখানে আমার হৃদয় শান্তি অনুভব করছে কেনো সন্ধ্যা?”
বিস্ফোরিত নয়ন তুলে ধরলো সামনে।অরণ্যের চোঁখ সামান্য খোলা।কথা বলছে! বোঝাই যাচ্ছে বেশ কষ্ট হচ্ছে কথা বলতে। সন্ধ্যা সামান্য ঝুঁকে বললো,
“আপনি উঠেছেন!”
“অনেক আগেই”
“এতক্ষন চুপ করে ছিলেন কেনো?”
“আপনাকে অনুভব করছিলাম”
“আগে চোখটা খুললে…”
সন্ধ্যাকে থামিয়ে বললো, “আগে চোখ খুললে কি হতো? কাদতেঁন না?আমি আপনার দুর্বলতা দেখতে পেতাম না? অপেক্ষায় ছিলাম আমি।”
কান্নার জোর বাড়লো।আজ নিজেকে শক্ত রাখতে পারলো না। অরণ্যের ক্ষত ঠোঁটে হাসির রেখা।অপরদিকে একের পর এক অস্রু দানা বিসর্জন দিচ্ছে সন্ধ্যা।কি অদ্ভুত!প্রিয় মানুষকে কাদতে দেখেও কেউ স্বস্তি পায়?অরণ্য পাচ্ছে।তাদের সম্পর্কটাই অন্যরকম।তার চেয়ে বেশি ধাঁধানো।এর মুখ্য ব্যক্তিত্ব সন্ধ্যা। জ্ঞান ফিরেছে আরো দু ঘন্টা আগে।তার পাশে মাথা ঝুঁকিয়ে শুয়ে থাকা সন্ধ্যার মাথায় যে তার অজান্তে ব্যাথাকাতর হাতও ছুঁয়েছে সেটা সন্ধ্যার অজানা।
“আমাকে মেনে নিয়েছেন?”
“জানি না”
“আমার তাহলে বেচে থেকে কি লাভ?”
চটে গেলো সন্ধ্যা।রাগ মিশ্রিত কণ্ঠে বলল,
“একদম আজেবাজে বকবেন না! বেচেঁ থেকে কি লাভ মানে?বাবা মার কথা ভেবেছেন?কি অবস্থা তাদের?এত সহজেই মরে যাওয়া যায়?ভুলে যাবেন না আপনার জীবনের মালিক আপনি নিজেই নন!”
ব্যান্ডেজের আড়ালে স্মিথ হাসলো অরণ্য।প্রশ্ন করলো,
“খেয়েছেন?”
“নাহ”
“ঘুমিয়েছেন?”
“নাহ”
নিজের উপর জোর খাটিয়ে বেড থেকে একটু সরে শুয়ে পড়ে অরণ্য। সন্ধ্যা বাঁধা দিলেও শুনলো না।ব্যথা হচ্ছে সারা শরীরে।তারপরও মনে এক দারুণ ইচ্ছে।
অহেতুক এক আবদার করে বসে, “আসুন এখানে ঘুমাবেন।আমার সাথে”
“কি বলছেন? ব্যাথা পাবেন আপনি”
“সব ব্যাথা সেরে গেছে”
সন্ধ্যার একটা কথা শুনলো না অরণ্য।কেবিনের দরজা বন্ধ করে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে পড়ল তার পাশে।খুব সাবধানতার সাথে। একটুও স্পর্শ লাগতে দেয়নি তার গায়ে।তার সুবিধে অসুবিধেটাও বেশ খেয়াল করলো।
অরণ্য বললো,
“জড়িয়ে ধরে ঘুমোন। আমার গায়ে শক্তি নেই”
“আপনি ব্যথা পাবেন।”
“পাবো না সন্ধ্যাতারা”
অরণ্যের মুখে “সন্ধ্যাতারা” নামটা শুনে অবাক হলো সন্ধ্যা। জিজ্ঞাসু চোখে তার মুখপানে চেয়ে রয়। ভালোবাসায় মানুষ চোখের ভাষা পড়তে জানে।অরণ্য নিজের ব্যাথার সাথে যুদ্ধ করে সন্ধ্যাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
বললো, “আমি সত্যিই নাম জানতাম না।সেদিন আপনাদের বাড়ির নেমপ্লেটে দেখেছিলাম নামটা।মনে ধরেছিলো বেশ”
বুকে জড়িয়ে রয়ে কখন ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে সন্ধ্যা হিসেব নেই। নিশ্চিতে!আরামে।অনেকদিন যেনো ঘুমোয় না।অরণ্য জেগে।চোখ বুজে আছে। অনেকতো ঘুমিয়েছে সে। আজ একরাত জাগলে কোনো ক্ষতি নেই। সন্ধ্যাকে দেখে পাড় করা যাবে এই রাতটাও।ছেলের চিন্তায় রাত এগারোটায় হসপিটালে এসে উপস্থিত জাহানারা বেগম। আলতো করে কেবিনের দরজা খুলতেই সন্ধ্যাকে দেখতে পেলো অরণ্যের কাছে।মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে অরণ্য।একরাশ সস্তি নিয়ে মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলেন
মারুফ মোর্শেদ স্ত্রীকে বেরিয়ে আসতে দেখে বললেন, “কি হলো?চলে এলে যে?”
তিনি সস্তির হাসি মুখে নিয়ে উত্তর দিলেন, “বলেছিলাম না আপনাকে আমার মন বলছে আমার ছেলে ঠিক হয়ে গেছে। সত্যিই আমার ছেলে এখন ভালো আছে।”
“সত্যি বলছো? চলো আমি দেখবো ওকে”
মারুফ সাহেবকে থামিয়ে দিলেন জাহানারা বেগম।বললেন, “কাল এসে দেখবেন।এখন বাড়ি চলেন”
গুনে গুনে ছয়দিন পর বাড়ি ফিরলো অরণ্য। সুস্থ হলেও অনেক দুর্বল। সাপোর্ট ছাড়া হাটতে পারেনা।তার যাবতীয় দায়িত্ব সন্ধ্যার।দিনরাত এক করে সেটা পালনও করে যাচ্ছে।মুখটা রুক্ষ করে রাখে না আর।সামান্য চঞ্চলতা এসেছে বটে।অরণ্যের যত্নে এক বিন্দু কমতি রাখেনি। অরণ্যকে ঔষধ এগিয়ে দিলো।অরণ্য সন্ধ্যার হাত টেনে ধরে।সামনে বসায়।বলে,
“মেনে নিয়েছেন আমাকে?”
“কি মনে হয়?”
“হয়তো মেনে নিয়েছেন।”
“তাহলে সেটাই”
অরণ্য হাসলো এবং বলে উঠলো, “আমিতো অনেক বড় অপরাধী না সন্ধ্যা?আপনাকে যখন ভালোবাসতাম না তখন অপমান করতাম।আজ ভালোবাসি বলে নিজের স্বার্থটা দেখে নিজের কাছেই রেখে দিয়েছি”
মাথা নামিয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে সন্ধ্যা।অরণ্যের দিকে চায় পরপর।বলে,
“মানুষকে ক্ষমা করার পাশাপাশি দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়াটাও একটা মহৎ গুণ।মানুষ আর তার স্বভাব কখনো এক থাকে না।সময়ের সাথে বদলায়।এভাবেই যদি মানুষ মানুষকে তার করা ভুলের জন্য দূরে সরিয়ে দেওয়া হতো তাহলে সবাই একাকীত্বে ভুগে মারা যেতো। মোহকে মুক্ত করতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম।এখন মনে হচ্ছে একে আবদ্ধ করে রাখার মধ্যেও স্বস্তি আছে”
“আপনার মনে কি ক্ষমার সাথে ভালোবাসাটাও এসেছে আমার জন্য?”
মাথা নুয়ে নিলো সন্ধ্যা। লজ্জায়! সরাসরি স্বাভাবিক কথাই বলতে কাতরায় সে।ভালোবাসার স্বীকারোক্তি দিবে কি করে? অরণ্য পুনরায় প্রশ্ন করলো,
“উত্তর দিন।ভালোবাসেন আমায়?”
সন্ধ্যা নিচু সুরে উত্তর দিলো, “হুম।আর সেটা অনেক আগ থেকেই”
~সমাপ্ত~