মোহ মুক্তি ~ ৯
লেখা : Azyah(সূচনা)
কারো সাথে থাকলে সেটা বিরক্তির কারণ হয়।আবার সেই মানুষটা বা সেই মানুষগুলো পাশে না থাকলে অসস্তি হয়।এটা কেমন অসুখ?এর কি কোনো চিকিৎসা আছে।রোগ দিয়ে নিজেই আরোগ্যকারী হয়ে উঠেছে যেনো।আজ সকালটাও ভালো যায়নি।রেহানা খালা নাস্তা বানিয়ে দিতে এসেছেন ঠিকই খাওয়ার সৌভাগ্যটা হলো না। অল্পদিনে স্বভাব আর দিনচারিতা সবই বদলেছে।সবকিছু ঠিক সময় মোতাবেক হাতের কাছে পাওয়ার অভ্যাস।এই অভ্যাস মানুষকে খুব শীগ্রই ধরে ফেলে। বশ করে ফেলে। আগেওতো অরণ্যের দিন এভাবেই কাটতো।সকালে না খেয়েই বেরিয়ে যেতে হতো।দুপুরে টিফিন আসতো অফিসে। রাতটাই শুধু ঘরে বসে আরাম করে খেতো।আজ হুট করে অভ্যাসের পরিবর্তন?এটা কি শুধুই অভ্যাস?নাকি কোনো হীনতা!
“কেমন আছেন?”
“ভালো আছি”
“ঠিকতো?”
“হ্যাঁ।আমি সবসময় ভালো থাকি”
“কোনোদিন মন খারাপ হয়না আপনার?”
“হয়না”
সংকীর্ণ এক পাথরের ন্যায় সন্ধ্যা।ভাব জমানোর সকল চেষ্টা বৃথা যাচ্ছে।বাতাসের মতন আসে দুয়েকটা কথা বলে চলে যায়।সেতো কথা না।প্রশ্নের উত্তর দেয় শুধু।মাত্র কয়েক শব্দে।ধাঁচে বোঝার উপায় নেই তার মনের অবস্থা।তাকে বোঝার সমস্ত রাস্তায় সে কারফিউ জারি করে রেখেছে।
হুট করে ফোনটা বেজে উঠতে কেপে উঠলো অরণ্য। কথোপকথনের মধ্যেই হুট করে ফোনের শব্দে ঘাবড়িয়ে গেছে।ঠোঁট গোল করে নিঃশ্বাস ছারে।কল রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে হিমশীতল কন্ঠ ভেসে এলো,
“হ্যালো”
“আমি সন্ধ্যা বলছি”
যেনো সন্ধ্যাবেলার মতনই আঁধার নেমে আসে অরণ্যের মুখে।গত বিকেলেই তাকে দিয়ে এসেছে। হঠাৎ কন্ঠ শুনে অস্থিরতা বিরাজ করছে এই মুহূর্তে।
“বলেন”
“আপনাকে ফোন করেছিলাম এটা বলতে যে।আপনার অফিসের তিন/চারদিনের কাপড় ইস্ত্রি করা আছে।ঘরের কাপড়ও আপনার কাবার্ড এ ধুয়ে ভাজ করে রেখেছিলাম।ময়লা কাপড়গুলো বিনে রেখে দিয়েন রেহানা খালা এসে ধুয়ে দিবে।আর খাবারও রেহানা খালাই রান্না করবে।শুধু রাতের খাবারটা আপনি একটু কষ্ট করে ওভেনে গরম করে নিয়েন।”
সন্ধ্যা এক নিঃশ্বাসে সবটা বলে গেলো।এক,দুই বাক্যে সম্পূর্ণ কথা শেষ করা মেয়ে নাকি এতটা কথা বললো?তার চেয়ে অদ্ভুত হচ্ছে তার কন্ঠস্বর!বোঝা যাচ্ছে বেশ আছে সে।আজ গলার আওয়াজ চাপা নয়!
“এতকিছু একদিনে বলে ফেললেন?প্রয়োজন হলে আমিই জিজ্ঞেস করে নিতাম”
“আমি নিজে থেকে বলে দিলাম যেনো বারবার আপনাকে কল করে বিরক্ত না করা লাগে।আপনি কয়টাদিন সস্তিতে থাকেন।”
শেষ কথাটি হৃদয় ভেদ করেছে। কাঁটার মতন লাগলো। সস্তি?গতরাত থেকে এক পাহাড় সমান অসস্তিতে ভুগছে সেই খেয়াল কি সন্ধ্যার আছে?নেই!একদম নেই।সে দিব্যি বাবা মার সাথে ভালো আছে। থাকবেই না কেনো?এবাড়িতে তাকে সুখের মুখ কেউ দেখাতে পারেনি।ভালো ব্যবহারটুকু তার ভাগ্যে জোটে নি।তবে তার ভালো থাকাটা আর নিজের খারাপ থাকাটা যেনো একসাথে মিলে পিষে ফেলছে অরণ্যকে।
“খুব সস্তি দিচ্ছেন!”
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে রইলো সন্ধ্যা।অরন্য হুট করেই ফোনটা কেটে দেয়।তার কণ্ঠের কাতরতা বুঝতে সময় নেয়নি সন্ধ্যা।কিন্তু কেনো? ব্যাকুলতা অরণ্যকে মানায় না।
__
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়েছে।একতলা বাড়িটার সামনেই বাবা শখ করে একটা বসার জায়গা বানিয়েছিলেন।শহরের বাড়িতেও গ্রামীণ ছোঁয়া।ঝিঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে চারপাশ থেকে।হলদে বাতি সারা বারান্দাজুড়ে।ওই আলোতেই পা তুলে সেই জায়গায় বসে পড়ে সন্ধ্যা।আগে মা এদিকটায় বসেই চুলে তেল দিয়ে দিত।বাবার সাথে চায়ের আড্ডায় পুরোনো দিনের ঘটনা শোনা হতো।এইতো কিছুদিন আগেও সবকিছু ঠিকমতোই চলছিলো।আজও চলছে। কিছু ভিন্নতাতো এসেছেই বটে।কিন্তু সন্ধ্যাতারা সেটাকেও মানিয়ে নেয়।মনে পড়ে এই জায়গার কথা, বাবা মার কথা।তবে তার মতে কোনকিছুতেই অতটা আবেগ প্রবন হতে নেই।আবেগ, অনুভূতি মানুষকে ধীরেধীরে গ্রাস করে ফেলে।
হীন,
“মানুষের পরিবর্তন মাঝেমধ্যে চোখে লাগে।সেটাকে চোখেই আবদ্ধ রাখুন।সেসব হৃদয়ে ধারণ করতে নেই”
হৃদয়ে তীর ছুঁড়ছে একের পর এক।সেই ধনুক এর মালিক সন্ধ্যা। মাত্র নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলো তার পেজে।যেনো সেটা অরণ্যকেই উদ্দেশ্য করে বলা। সেই তো হচ্ছে পরিবর্তন।নিজের বদলে যাওয়া রূপ নিজেও উপলদ্ধি করছে।তাহলে কি তার এই বদলে যাওয়াকে দেখেও চুপ রয়ে যাবে সন্ধ্যা?এটাই কি বোঝালো? তর সইতে না পেরে দ্রুত মেসেজ করে ফেলে,
“কেনো মানুষের পরিবর্তন চোখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে? পরিবর্তন ভালোও হতে পারে?”
“হতে পারে।সেই ভালো আপনার আর আমার জন্য কতটুকু ভালো সেটা ম্যাটার করে”
“আপনি স্বার্থপরের মতন করে বলে ফেললেন কথাটি।”
“পৃথিবীতে প্রত্যেকটা মানুষ স্বার্থপর”
অসত্য কিছুই বলেনি সন্ধ্যা।সেই রাতে আর কথা না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলো অরণ্য। সন্ধ্যার প্রত্যেকটা কথা তার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।সবচেয়ে বড় স্বার্থপর সে নিজে।অরণ্যের বিবেক সত্যি বলে সে স্বার্থপর।
সন্ধ্যার একটি মাত্র গাছের দায়িত্ব যেনো এখন অরণ্যের।বাড়ি ফিরেছে মাত্র। চাবি দিয়ে দরজা খুলেই একরাশ অন্ধকার নেমে আসে চোখের সামনে।সুইচ টিপে ঘরের আলোয় জ্বালিয়ে নেয়। ব্যাগটা পাশে রেখেই কোনার ঘরটায় গিয়ে সর্বপ্রথম গাছে পানি দেয়।রাতে গাছে পানি দিতে নেই।মা বলেছিলো।কিন্তু নিজে একবার গাছটাকে যত্ন করে ছুঁয়ে না দিলে সস্তি পায় না।আজ পানি দিতে গিয়ে দেখলো একটি ফুল ঝরে পড়ে আছে।মনটা বিষণ্ণতায় ভরে যায়।সেতো দুইদিন পানি দিলো। তারপরও? ঝড়ে যাওয়া বেলির ধর্ম এটা হয়তো অরণ্য জানে না।
লম্বা শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে অরণ্য।আজ পুরোনো দিনগুলোর স্মৃতিচারণ হয়ে গেলো। ফ্ল্যাট কিনেছেন বেশিদিন হয়নি।তার দ্বিতীয় প্রমোশন আর জমানো টাকায় জাদুর শহর ঢাকায় নিজের নামে নিবন্ধিত একটি ছাদ। আশ্রয়!আগে থাকতো বন্ধুদের সাথে শেয়ারে। ব্যাচেলর!প্রতিদিন এসে রান্না করে দিয়ে যেতো একজন।রাতে এসে রেস্ট করার আগে আরো এক দফা খাবার গরম করার ঝামেলা! ফ্ল্যাট কেনার পরও ঠিক তেমনি।মধ্যে পরিবর্তন এসেছিল। আজ আবারও সেখানে এসে থমকে!পুরনো দিনগুলো অবশ্যই অনেক স্মৃতিজড়িত।কিন্তু নতুন অভ্যাসটা?আজ আর পুরনো দিনগুলোকে স্মৃতি হিসেবে রাখা ইচ্ছে।নতুন অভ্যাসটা নিয়েই থাকতে চাচ্ছে। সন্ধ্যা নেই।পুরো দুইদিন হতে চললো বাবার বাড়িতে।ঠান্ডা মাথায় সব ভাবতে ভাবতে উত্তেজিত হয়ে উঠে।ফোন হাতে নিয়ে মাকে ফোন লাগায় এই রাত্রিবেলায়।
“হ্যালো”
“আমার কথা শোনো মা।এগুলো কোনো কথা?আমি সারাদিন খাটাখাটনি করে ঘরে আসি।এরপরও যদি আমার এসে খাবার গরম করা লাগে। ঘর গোছানো লাগে।এসব কি ভালো লাগে?”
“আবার কি হলো? সন্ধ্যা কোথায়?”
“বাপের বাড়ি গিয়ে পড়ে আছে।এজন্য বিয়ে দিয়েছো আমাকে?”
“তো বাবার বাড়ি যাবে না?”
“যাবে অবশ্যই।থাকথাকির কি দরকার?”
জাহানারা বেগম ফোনের অন্যপাশে মুচকি হাসলেন।অরন্য সেটা বুঝেও উঠতে পারলো না।ছেলে বোধহয় এবার লাইনে আসছে।তিনিও বলে ফেললেন,
“বিয়ে করিয়েছি দুজন মিলে সুখী সংসার করার জন্য।শুধু তোর দেখভালের জন্য না।মেয়েটার সাথে মনেহয় ঠিকঠাক কথাও বলিস না।আবার এত আশা করছিস কি করে?”
মাকে দু চারটা কথা শুনিয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।রাগটা সন্ধ্যার উপর।তার অনুপস্থিতি মন মস্তিষ্ক নিথর করে রেখেছে। নির্লিপ্ত সন্ধ্যার বিচরণও কেমন যেনো কোলাহলপূর্ণ ছিলো।আজ পরিবেশ অদ্ভুত।তার চেয়েও বেশি উদ্ভট তার চিন্তাধারা।
“মা ওকে ফোন দিয়ে বলে দিও বাড়ি ফিরতে।আমার এসব রোজকার যন্ত্রণা ভালো লাগছে না।আমি রাখছি।”
জাহানারা বেগমও বলে উঠেন সামান্য উচ্চস্বরে, “নিজের বউকে নিজে গিয়ে নিয়ে আসবি।”
বিগত কিছু দিনের চেয়ে এই দুটো দিন ভালোই কেটেছে সন্ধ্যার।যে হাসিগুলো বিলীন ছিলো সেগুলো কিছু অংশে কড়া নাড়ছে সন্ধ্যার ঠোঁট কোণে।তারপরও কেনো জেনো গভীর রাতে বক্ষস্থল ভার হয়ে থাকে।কত কাজ বাকি রয়ে গেছে।কোনোটাই করার ইচ্ছে নেই। উঠোনের সিড়িতে বসে নির্বিকার আকাশের দিকে চেয়ে থাকা হয়ে উঠেছে সন্ধ্যার প্রতিরাতে কাজ।আচ্ছা তার বেলী গাছটার কি অবস্থা?খুব যত্ন নিতে হয় এদের।নাহয় নেতিয়ে পড়ে।রেহানা খালাকেও বলে আসা হয়নি একটু যত্ন নিতে।তাছারাও অরণ্য!তার কথা মনে হয়।একা আছে।অবশ্যই ভালো আছে।শান্তিতে আছে।কেনো নিজের অজান্তেই তার বিরক্তির কারণ হয়ে উঠলো সন্ধ্যা? ফোনের স্ক্রিনটা অন করে সন্ধ্যা।সামনে ভাসছে অরণ্যের নাম্বার।পলকহীন চোখে চেয়ে আবার ফোনটা চোখের সামনে থেকে সরিয়ে নেয়।
নিজেকে নিজে বলে উঠে, “নিজেকে দুর্বল করিস না।এখানে তোর নিজস্ব বলতে কিছুই নেই।”
মানুষ একাকীত্বে নির্জীব জিনিসের সাথে কথা বলে।এই আকাশ,চাঁদ,তারা!কোনোদিন কি এদের থেকে উত্তর এসেছে?তারা কি কথা বলতে জানে?তারপরও পৃথিবীতে বসবাসরত বোকা মানুষ তাদের সাথে নীরবে কথা বলে যায়। সন্ধ্যার অবস্থাও ঠিক তাই।
তার মধ্যেই ফোনটা বেজে উঠে,
“আসসালামু আলাইকুম”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।কেমন আছো মা?” জাহানারা বেগম খুব অদূরে স্বরে বলে উঠলেন।
“আছি ভালো।আপনি কেমন আছেন?”
“আমিও বেশ আছি।পায়ের ব্যাথাটা একটু বেরেছে।”
“আপনি ডাক্তার দেখিয়েছেন?”
জাহানারা বেগম হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “আর ডাক্তার! ডাক্টার দেখিয়ে কত ঔষধ খেলাম।দুয়েকদিন ঠিক থাকে আবার একই অবস্থা।”
“তারপরও।দরকার হলে সপ্তাহে সপ্তাহে ডাক্তার দেখিয়ে আসবেন।ভালো থাকা দিয়ে কথা।”
“আমিতো ভালোই আছি মা।কিন্তু আমার ছেলেটা ভালো নেই”
অরণ্যের কথা আসতেই চমকে উঠে সন্ধ্যা।তার চেয়ে বেশি আশ্চর্য্য!ভালো নেই?কিন্তু কেনো?তার সবচেয়ে বড় বোঝাটাই এখন তার আশপাশে উপস্থিত নেই। জাহানারা বেগমের কথার পরিপ্রেক্ষিতে সন্ধ্যা প্রশ্ন করে,
“মানে?ভালো নেই কেনো?”
“তুমি বাড়ি গিয়ে আছো তাই।একা বাড়িতে হিমশিম খাচ্ছে।”
“আপনাকে এটা কে বললো?”
“কে বলবে আর? অরণ্যই বলেছে।আমি জানি মা তোমারও ইচ্ছে হয় তোমার বাবা মার সাথে সময় কাটাতে।কিন্তু অরণ্য চাচ্ছে তুমি বাড়ি ফিরে যাও।নিজে থেকে বলতে হয়তো লজ্জা পাচ্ছে।”
“জ্বি”
“তুমি বরং এক কাজ করো।তোমার বাবা মাকে সাথে করে বাড়ি নিয়ে যাও।তাদের সাথেও থাকা হলো আবার অরণ্যের সাথেও”
এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে সন্ধ্যা। পূনরায় আকাশের দিকে তাকায়। এতো দ্রুত ইচ্ছেটা পূরণ করার কি দরকার ছিলো?একটু ধৈর্য্য ধারণ করতে দিত।ভাবনার সাথেসাথেই এই অবাস্তবিক ঘটনা না ঘটলেও পারতো। পরবর্তী মুহুর্তেই নিজের অন্তরস্থল থেকে উত্তর আসে,
“মাঝেমধ্যে কিছু ইচ্ছে মুখ ফুটে বলার আগে পূরণ হয়ে গেলে তাতে কোনো ক্ষতি নেই”
__
সপ্তাহ ঘুরে আবার শুক্রবার।চোখ ডলতে ডলতে দরজার দিকে এগোচ্ছে অরণ্য।এমনেতেই দিনকাল ভালো যায় না।সকাল সকাল কলিং বেলের আওয়াজ খারাপের মধ্যে আরো খারাপ ঢেলে দিয়ে গেলো।রেহানা খালাকে বারবার বারণ করেছিলো কাল।দেরিতে আসতে।সকাল সকাল যেনো ঘুমটা নষ্ট না হয়।সে আর হলো! ঘুমুঘুমু চেহারা নিয়ে দরজা খুলে দাড়িয়েছে। চেহারাটাও ফুলে আছে।চোখের সামনে সব পরিষ্কার হতেই মাথা ঝাড়া দিলো অরণ্য।চোখের সামনে যা দেখছে তাই কি সত্যি?নাকি আজকাল অর্ধ জেগে স্বপ্ন দেখা শুরু করে দিলো?সং হয়ে দাড়িয়ে আছে দরজার সামনে। সন্ধ্যাকে ভেতরে ঢুকার সুযোগটুকু দিচ্ছে না।অন্যদিকে অরণ্য তার মস্তিষ্ক সজাগ করার চেষ্টায়।
“আপনার ঘুমে বিরক্ত করলাম হয়তো”
মলিন কণ্ঠস্বরে পুরোপুরি সজাগ হলো অরণ্য।চোখ দুটো এখন স্পষ্ট দেখছে। নাহ সপ্ন নয় বাস্তব। কালকে মাকে বলার সাথেসাথেই যে চলে আসবে আশা করেনি। মুখে চওড়া হাসি টেনে আবারো মিয়ে গেলো। হাসিতেও রয়েছে অদৃশ্য বাঁধা।হাসা যাবে না।সরে দাঁড়ায় সঙ্গেসঙ্গে।
সন্ধ্যা ব্যাগটা কাধ থেকে নামিয়ে রাখলে অরন্য বলে,
“আপনি একা এসেছেন?”
“হ্যা”
“কিভাবে?”
“রিকশা করে”
“আমাকে ফোন করতেন।”
“বিরক্ত করতে চাইনি।আপনি কি এখন নাস্তা করবেন?বানিয়ে দিবো?”
দিন যত কাটছে সন্ধ্যার স্বভাব অসহনীয় হয়ে উঠছে। একরোখা মনে হতে শুরু করেছে।খুব সুন্দর করে কথা এড়িয়ে যায়।কোনোদিন তার সাথে তিন চার বাক্যের বেশি কথা হয়েছে কিনা সন্দেহ আছে।সেতো কোথাই আগ বাড়াতে চায় না।সুযোগ বুঝে কেটে পড়ে।সেকি আসলেই এমন?নাকি ইচ্ছে করে অরণ্যকে ভোগায়?
সন্ধ্যাকে দেখে হৃদয়ের যে উচ্ছাস জেগেছিল তা তার কথার মাধ্যমেই উধাও।তপ্ত নিঃশ্বাস আর দুখে ভরা মন নিয়ে বললো,
“মাত্র এসেছেন।ফ্রেশ হয়ে আসুন। রেহানা খালা এসে নাস্তা তৈরি করে দিবে।”
“আপনিতো রেহানা খালাকে বারোটার পর আসতে বলেছেন।সেই সময় পর্যন্ত না খেয়ে থাকবেন?”
আশ্চর্য্য চোখে অরণ্য পুনরায় প্রশ্ন করে, “আপনি কি করে জানলেন?”
“কল করেছিলাম খালাকে। তিনিই জানালেন।”
বাড়ির ট্রাউজার আর টি শার্ট পরে সরু রাস্তায় হাঁটছে অরণ্য। হাতে পলি ব্যাগ।মাত্রই হোটেল থেকে গরম গরম পরোটা আর ডিম ভাজা নিয়ে বাড়ি ফিরছে।আর ভাবছে! পড়ালেখা শেষ হওয়ার পর এই কাজটা কমই করা হয়েছে।অফিসে জয়েনিং এর পর অফিসে বসেই নাস্তা সেরে নিত।আজ আবার করতে হচ্ছে। সন্ধ্যাকে দিয়ে এই মুহূর্তে নাস্তা তৈরি করতে দিতে নারাজ সে।তাকে এক ধমকে বসিয়ে রেখে সকালের নাস্তা নিতে এসেছে।
দরজা খুলে ঘামার্ত অরণ্যকে দেখেই বুঝতে পারে সন্ধ্যা। চারতলা সিড়ি বেয়ে এসেছে।বাড়ির লিফট কাজ করছে না বাড়ি ফেরার পথেই দেখেছে সে। অরণ্যকে ঘরে ঢুকতে দিয়ে পানি এগিয়ে দিলো।খাবার সার্ভ করতে করতে বলল,
“আমিই বানিয়ে দিতে পারতাম নাস্তা”
“এক কথা কয়বার বলবো?আপনি মাত্র বাড়ি ফিরেছেন।আবার নাস্তা বানাতে বলবো আপনাকে? এতোটা নির্দয় আমি না।”
হাত থামিয়ে সন্ধ্যা বলে উঠে, “আমার উপর দয়া দেখাবেন না। আমি সেটার যোগ্য নয়”
চলবে..