#যখন_দুজনে_একা
১ম পর্ব
মাহির মায়ের ঘরে ঢুকে দেখে মা , মামি, খালা ,চাচী সহ সব মুরুব্বি মহিলাদের সঙ্গে রুবা বসে আছে!
মা বিছানায় শুয়ে আছে চুপচাপ!
অন্য রা নিচু গলায় কথা বলছে।
রুবা কে দেখে মনে হলো না সবার গল্প সে শুনেছে !
তবে অন্য দিনের চেয়ে আজ সে পুরোই অন্যরকম সাজে । আজ বহুদিন পর রুবা শাড়ি পড়েছে । কমলা রঙের জমিনে নীল পাড়ের একটা গাদোয়াল শাড়ি আজ ছোট মামি তাকে পড়িয়ে দিয়েছে।
অনেক দিন পর এত রঙিন সাজে সেজেছে রুবা , না চাইতেও রুবার দিকে চোখ পড়ে গেল মাহিরের।
মাহির ঘরে ঢুকতেই সবাই ওর দিকে তাকাল । শুধু রুবা আগের মত ই মাথা নিচু করে নিজের হাতে কি জানি দেখছে।হাত ভর্তি আজ মেহেদী র আলপনা।
মা র শরীর টা এখন কেমন ?
এতক্ষণ এ সাফিয়া বেগম চোখ মেলে চাইলেন !
তোমার শরীর এখন কেমন মা ?
আমি ভালো আছি বাবা !
আমি শুনলাম তোমার শরীর খারাপ লাগছে !
প্রেসার টা মেপে দেখি!
প্রেসার ঠিক আছে !
তবুও মেপে দেখি !
ঠিক আছে , দে!
মাহির মায়ের প্রেসার মাপছে , অন্যরা সবাই উৎকণ্ঠা নিয়ে সেদিকেই তাকিয়ে আছে শুধু রুবা ছাড়া।
আলহামদুলিল্লাহ মা তোমার প্রেসার আজ পার্ফেক্ট।
আমি জানতাম আজ আমি ভালো থাকবই ,সাফিয়া বেগম হেসে বলল।
ঐ দিকের কি অবস্থা মাহি? সবার খাওয়া দাওয়া শেষ ?
হ্যাঁ কখন শেষ !
তুই খেয়েছিস, বাবা?
আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না আমি খেয়ে নিব !
চাচী, খালাম্মা ওদিকে ছোট চাচা আর খালু তো অস্থির হয়ে উঠেছে যাওয়ার জন্য !
তোর খালুর কথা রাখ মাহি উনার আসার সময় ও অস্থিরতা আবার যাওয়ার সময় ও অস্থিরতা !
ঠিকই আছে তো নাহার, অনেক রাত হয়ে গেছে , সাফিয়া বেগম বলে উঠলেন ! তোমরা যারা চলে যাবে যাও সারাদিন তোমাদের ও খাটনি গেছে !
আর কি ব্যাপার রুবা এখানে এভাবে বসে আছে কেন !!
রুবা তোমার শরীর খারাপ লাগছে না তো ? তোমাকে খেতে দিয়েছে ? তারানা , তারানা কোথায় তুমি? সাফিয়া বেগম ছোট ভাইয়ের বউ কে ডাকলেন।
মা আপনি অস্থির হবেন না প্লিজ আমি ঠিক আছি!রুবা বলে উঠলো!
ড্রয়িং রুম থেকে মাহির ছোট মামি তারানা ডাক শুনে ছুটে এলো !
কি হয়েছে বড়পা?
তারানা, রুবার দিকে একটু খেয়াল করো ওর খাবার টা টাইমলী দাও।
আর ওকে রুমে দিয়ে আসো!
এই কথায় শুনে রুবা একটু কেঁপে উঠল !
আপনি চিন্তা করবেন না আমি এখনি রুবা কে খেতে দিচ্ছি বড়পা।
রুবা তুমি আমার সাথে আসো তো ! কি কান্ড এত রাত হলো তোমাকে না খাইয়ে বসিয়ে রেখেছি!
রুবা ছোট মামি শ্বাশুড়ি তারানা র সঙ্গে গেল !
আসো তুমি এদিকে রুবা !
মামি !
বলো রুবা?
আপনি আমার জন্য অস্থির হচ্ছেন কেন? এই ঘর এই সংসার কি আমার অপরিচিত?
না না রুবা তা কেন হবে !
মামি একটা রিকুয়েস্ট , আমি কিছুই খেতে পারব না । আমার গা গুলাচ্ছে দু বার বমি ও হলো !
রুবার মাথায় হাত রেখে তারানা বলল, একদম কিছু না খেয়ে থাকলে তোমার শরীর খারাপ করবে যে মা!
কিছু হবে না মামি!
আপনি প্লীজ মা কে কিছু বলবেন না !
আচ্ছা যাও ঠিক আছে , বলব না ! তারানা রুবার গালে হাত রেখে আদর করে দিলো।
এমন সময় মাহি এসে ওখানে দাঁড়াল ! মামি!
মাহির আওয়াজ পেয়ে,
রুবা রান্না ঘর ছেড়ে খাবার ঘরের এসে দাঁড়ালো !
খুব অসহায় লাগছে নিজেকে তার। সে কোন ঘরে যাবে এখন ! নিজের ঘরে ,নাকি শ্বাশুড়ি র ঘরে চিন্তা করছে ?
মাহি তোমার খাওয়া হয়েছে?
আমার খেতে ইচ্ছে করছে না মামি !
কি আশ্চর্য সবাই একই কথা বলছো তোমরা !
কেন , ভাবি খায়নি?
সারারাত না খেয়ে থাকলে ওর শরীর খারাপ করবে মামি!
মাহি, আজ রুবাকে একটু ওর মত থাকতে দাও ! প্লিজ!
মামি , আমি আপনার কাছে সেই কথাই বলতে এসেছি !
মানে?
আজ ভাবিকে ওর মত থাকতে দেয়া যায় না ?
আজ রুবা ওর মত রাত টা কাটাক! প্লিজ মামি প্লিজ !
এই প্রথম রুবা কে ভাবি না বলে রুবা বলে সম্বোধন করলো মাহি!
তারানা কিছুক্ষণ মাহির দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, আমি বুঝেছি মাহি তোমার কথা কিন্তু বড়পা কি বলে সেটাই আসল কথা !
আপনি মা কে বুঝিয়ে বলেন , প্লিজ!
কিছুক্ষণ পর তারানা সাফিয়া বেগমের রুমে ঢুকলো , ওর পিছুপিছু রুবা ও এসে দরজায় দাঁড়াল !
বড়পা একটা কথা বলার ছিল !
সাফিয়া বেগম আলমারি তে কি যেন খুঁজছেন !
সবাই খেয়েদেয়ে চলে গেছে তো তারানা ?
হ্যাঁ হ্যাঁ সবাই গেছে !
তুমি আর মিনহাজ এ বাসায় থেকে যেও আজ !
ঠিক আছে বড়পা ! বলছিলাম কি ?
ও আচ্ছা তুমি যেন কি বলছিলে?
তারানা একটু থমকে গেল! অন্য সবার মত সেই ও বড়পা কে খুব ভয় পায় !
বলো তারানা , আমি শুনেছি?
আপা ,আজ রুবা আপনার সাথে থাকুক রাতে? ভয়ে ভয়ে কথাটা বলল তারানা।
সাফিয়া বেগম , তারানা র দিকে তাকালেন স্থির দৃষ্টিতে !
রুবা আস্তে করে দরজার ওপাশে সরে গেল!
তারানার উদ্দেশ্যে সাফিয়া বেগম বলে উঠলেন, সব কিছু স্বাভাবিক নিয়মে হতে দাও তোমরা ! আমি চাই রুবার জীবন টা আবার স্বাভাবিক নিয়মে ফিরুক!
ওর জীবন টা রঙিন আলোয় ভরে উঠুক।
রুবা , রুবা ভেতরে আসো!
শ্বাশুড়ি র ডাকে রুবা ঘরে ঢুকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
আমার কাছে আসো মা? সাফিয়া বেগম হাত বাড়িয়ে রুবাকে কাছে টেনে নিলেন।
একটা বড় পান্নার কাজ করা হার রুবার গলায় নিজে হাতে পড়িয়ে দিলেন তারপর কপালে চুমু খেলেন।
তারানা মামির দিকে তাকিয়ে বললেন, রুবা কে রুমে দিয়ে আসো তারানা ! কোথায় জানো তো ।
মাথা নেড়ে তারানা রুবার হাত ধরলো!
মাটির দিকে তাকিয়ে রুবা মামি শ্বাশুড়ি র পিছনে পিছনে যাচ্ছে!
সারাদিনে এই প্রথম রুবার চোখ দিয়ে পানি ঝরে পড়ছে। হঠাৎ খুব কান্না আসছে ওর।
তারানা রুবা কে রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে গেল !
যাওয়ার সময় বলে গেল , শরীর খারাপ লাগলে তাকে যেন ডাকে ! মামি যখন রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছে রুবা খেয়াল করলো উনার চোখ ও ভেজা।
রুবা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে রুমের মাঝখানে !
সব সময় রুম টা যেমন থাকে আজ ও তাই ! ছিমছাম গোছানো। পরিচ্ছন্ন টানটান করে বিছানার উপর চাদর বিছানো। দেয়ালে খুব সুন্দর একটা সমুদ্রের পেইন্টিং। বড় পড়ার টেবিল। পাশেই সেলফে অনেক গুলো বই পরিপাটি করে সাজানো। সোফার এক কর্নারে একটা ভায়োলিন রাখা। কোথাও একটু অগোছালো কিছু নেই।
রুবা বিছানার কর্নারে গিয়ে বসলো ! আগে যতবার এসেছে এই ঘরে ব্যাপারটা অন্যরকম ছিল। কিন্তু আজ সব পাল্টে গেছে।
আজ এই ঘরে তার আর মাহির বাসর রাত !
আজ বিকেল পর্যন্ত যে মাহি তার দেবর ছিল ,সেই মাহি সন্ধ্যা থেকে তার স্বামী ।
( চলবে )