যখন দুজনে একা পর্ব-১০

0
3634

#যখন_দুজনে_একা

১০ম পর্ব

রুবা কাঁদছে !
শিহাবের আর তার ছবি গুলো দেখে। সেই ফলে আসা মুহূর্ত গুলো তার সামনে। হাত বাড়িয়ে সে অনুভব করছে শিহাবের অস্তিত্ব।
মাহি কে বিয়ে তো সে করেছে, এটা ছাড়া তার কোন উপায় ও ছিল না । কোথায় যেতো সে এ বাড়ি ছেড়ে। তার মামা রা আর তার বাবার আত্মীয় স্বজন রা তাকে নিতে যেভাবে এবাড়িতে এসে সীন ক্রিয়েট করা শুরু করলো ।
সবাই জানে এসব ছিল তার পালিত পিতা শ‌ওকত সাহেবের সম্পত্তির জন্য লোভ । তার প্রতি শ‌ওকত সাহেবের আদর ভালোবাসা বাবার আত্মীয় স্বজন কখনো ই সহজ ভাবে নেয় নি।
সে তো কোন সম্পত্তি কারো কাছে চায়নি তবে কেন তাকে নিয়ে এত টানাটানি করা শুরু করলো।
কোন উপায় না দেখে তার শ্বাশুড়ি তাকে মাহির সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিল!
যে মাহি তাকে ভাবি বলে দুটো বছর সন্মান দিয়েছে আজ তাকে স্ত্রী হিসেবে মানতে কত বড় যুদ্ধ নিজের সঙ্গে করছে! যে ভাইকে নিজের জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসতো মাহি, আজ সেই ভাইয়ের ভালোবাসার মানুষের প্রতি নিজের আবেগের দ্বায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে তার ।
মাহির এই কষ্ট সে দেখে মাহিকে তার প্রতি সহজ করতে চায় স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক না হোক বন্ধুত্বের সম্পর্ক টুকু হোক ওদের।
সেটা করতেও কত বার নিজের সঙ্গে যুদ্ধ সেও করে।
কাঁদছে রুবা , কাঁদলে যদি বুকটা একটু হালকা হয়।

শিহাব তোমার সন্তান পৃথিবীতে আসবে কিন্তু চোখ মেলে সে তার বাবাকে পাবে না এটা দেখা সবচেয়ে কষ্ট একটা মায়ের জন্য।
আমি কিভাবে সেই দিন টা তে নিজেকে ঠিক রাখবো বলতে পারো?

বালিশে মুখ গুজে কাঁদতে কাঁদতে রুবা ঘুমিয়ে গেল একটা সময়!
কতক্ষণ সময় সে এভাবে ঘুমিয়ে ছিল সে বলতে পারে না হঠাৎ তার শ্বাশুড়ি র ডাকে তার ঘুম ভাঙল।
রুবা মা তুমি এই ঘরে? আমি সারা বাড়ি তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।
উঠো মা ! কি হলো তোমার? তুমি কান্নাকাটি করছিলে!
সাফিয়া বেগম জড়িয়ে ধরলেন রুবাকে।
আমাকে দেখো আমি নিজেকে কিভাবে পাথর বানিয়ে ফেলেছি!
তোমার শ্বশুর কে দেখেছো তো ! মানুষ টা তোমার সামনে আসতে চায় না ! নিজেকে তোমার অপরাধী মনে করে মা।
সাফিয়া বেগম রুবার মাথায় হাত রাখলেন জানো রুবা, আমাদের বিয়ের পর থেকে বন্ধুর মত ছিলাম আমরা। কোন দিন বিয়ের পর তোমার শশুর আমাকে বাপের বাড়ি ও গিয়ে থাকতে দেয়নি ।
আমাকে ছাড়া থাকতেই পারতো না ।
ওর ভাই বোন রা এই নিয়ে কি হাসাহাসি করতো!
সেই মানুষটা আমার সঙ্গে ও এখন কথা বলে না ।কি জানি ভাবে সারাক্ষণ?
শিহাব ছিল তার জান। তুমি তো জানো কত আদর করতো ছেলেকে।
নিজেকে জানের টুকরো ছেলের মৃত্যুর কারণ ভেবে, দুনিয়ার সব কিছু থেকে নিজের মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তোমার শ্বশুর।
আমি সেটাও সহ্য করে যাচ্ছি মা।
তোমার আর শিহাবের সন্তানের অপেক্ষা করছি।
সেই সন্তান কে তোমার শ্বশুরের কোলে দিয়ে বলল, তার শিহাব ফিরে এসেছে ।
আমি জানি সেদিন তোমার শ্বশুর কোন ভাবেই আর চুপ হয়ে থাকতে পারবে না।
তোমাদের সন্তান ই এখন এ বাড়ির সেই জীয়ন কাঠি। সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো।

চলো মা তোমার ঘরে চলো! সাফিয়া বেগম রুবার হাত ধরলেন।
মা এটা কি এখন আর আমার ঘর না মা? রুবা শ্বাশুড়ি কে বলল!
এই পুরো বাড়িটাই তোমার মা! এই ঘর সব ঘর!
মেয়েদের কত বার বাড়ি বদল হয় বলেন তো মা।
আর আমার ভাগ্য টা এমন কেন , সেই ছোট থেকেই বারবার বাড়ি বদল হয় প্রিয়জন বদলে যায়!

তোমাকে আল্লাহ অনেক ভালোবাসে মা তাই তো তোমাকে পরীক্ষা করছে।
মা আমি আর পরীক্ষা দিতে পারছি না আর পারছি না!
রুবা শ্বাশুড়ি কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে যাচ্ছে।
আমার প্রিয় জন হারানোর শুধু ভয় মা !
লক্ষী মা আমার এভাবে কাঁদে না শরীর খারাপ করবে!

সাফিয়া বেগম রুবাকে ধরে ধরে নিয়ে গেলেন মাহির রুমে!
বিছানায় শুইয়ে দিলেন রুবাকে!
মেয়েটাকে আর কত স্বান্তনা দিবেন তিনি ! তিনি জানেন না!

রুম থেকে বের হয়ে তিনি মাহিকে কল দিলেন ! মাহি ফোন রিসিভ করলো না ।
ব্যস্ত আছে হয়তো ছেলে টা!

তিনি আবার রুবার আর মাহির ঘরে ঢুকলেন, রুবার কাছে গিয়ে বললেন অনেক বেলা হয়েছে মা উঠো তো দুপুরের খাবার খাবে!
রুবা না খেয়েই শুয়ে পড়েছে!
সাফিয়া বেগম ওর চুলে কিছুক্ষণ বিলি কেটে দিলেন। ক্লান্ত রুবা আবার ঘুমিয়ে গেলো!
সাফিয়া বেগম নিজের চোখ মুছলো!
নিজের কষ্টের ভাগ তিনি আর কাউকে দিতে চাননা !

মাহি আসুক ও ই পারবে রুবাকে খাওয়াতে!
তিনি নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন!

সন্ধ্যায় মাহি আসলো যখন রুবা তখনো ঘুমাচ্ছে!
মাহি ওর পাশে গিয়ে বসলো, ডাকতে ইচ্ছে করছে না থাক ঘুমাক।
মুখ হাত ধুয়ে সে মায়ের সাথে দেখা করতে এলো!

সাফিয়া বেগম নিজের ঘরে ই ছিলেন!
আজ খুব ব্যস্ত ছিলে মনে হচ্ছে!
হ্যাঁ মা, আজ আমার ওটি ছিল !
তুমি ফোন দিয়েছিলে, কল ব্যাক করার আগেই দেখি চার্জ শেষ । সরি মা ।

ফোন করেছিলাম , রুবা অনেক কান্নাকাটি করছিল!
হঠাৎ ! কি হয়েছে!
ঐ রুমে গিয়েছিল!

এখন কি অবস্থা ঘুমাচ্ছে দেখলাম!
হুম!
দুপুরে কিছু খায় ও নি!
না খেয়ে আছে?
ঠিক আছে মা আমি খাইয়ে দিব ডেকে!

উঠি মা আমি নিচে আছি জীমে ! রুবা উঠলে আমাকে ডেকো!
মাহি চলে যাচ্ছে।
পেছন থেকে সাফিয়া বেগম বলে উঠলো,
মাহি তোর উপর অনেক দ্বায়িত্ব চাপিয়ে দিলাম বাবা!

ঘাড় ফিরিয়ে মাহি বলল, মা আমি দ্বায়িত্ব নিতে কষ্ট পাই না । কষ্ট পাই আমার প্রিয় মানুষ গুলোর কষ্ট দেখলে।
রুবাকে নিয়ে তুমি চিন্তা করো না ওর সব দ্বায়িত্ব আমার!

সাফিয়া বেগম মাথা নাড়লেন!

স্টাডি রুমের পাশে একটা ছোট রুম আছে সেখানে দুই ভাই একটা জীম বানিয়েছিল সেটাতে ঢুকলো মাহি!

অনেক দিন পর আসলো এখানে ।
কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল মাহি। কত স্মৃতি এখানে ভাইয়ার সঙ্গে।
কোথায় যাবে সে, যেখানে ভাইয়ার সৃত্মি নেই!
সব জায়গায় জুড়েই তো ভাইয়া।
এখানের প্রতিটি ইনস্ট্রুমেন্ট এ ভাইয়ার ছোঁয়া !
রুবা সৃত্মি হাতড়ে বেড়িয়েই কেঁদেছে আজ ! ও কাঁদতে পারে না আর! মাহি দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।

এসব ভাবতে ভাবতেই সে ট্রেডমিল চালু করলো ।
মিনিট বিশ দৌড় এর মাঝেই বুয়া এসে হাজির !

কিছু বলবে?
ভাইজান আম্মায় ডাকে উপরে , ভাবির শরীর খারাপ করছে ! কানতাছে!

মাহি ট্রেডমিল বন্ধ করলো , নেমে দৌড়ে উপরে আসলো নিজের ঘরে!

মাহিকে দেখেই মা আতংকিত হয়ে বললেন, মাহি দেখনা বলছে খুব ব্যথা হচ্ছে !
মাহি রুবার কাছে গেল !
দেখি কি হয়েছে? রুবা তাকাও আমার দিকে কোথায় ব্যথা হচ্ছে বলো আমাকে?
রুবা ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে! হাত দিয়ে শুধু তল পেট টা দেখালো!
কখন থেকে ব্যথা?
কিছুক্ষণ আগেই না দেখে গেলাম ঘুমাচ্ছে!
সাফিয়া বেগম বলল সেই তো , আমি ফরিদা কে পাঠালাম উঠেছে কিনা দেখতে ও এসে দেখে ব্যথায় কাতরাচ্ছে।
রুবা রুবা তাকাও আমার দিকে , বেশি ব্যথা ? ব্লিডিং হচ্ছে না তো!
রুবা বলল, না ! কিন্তু অনেক ব্যাথা !
সাফিয়া বেগম বলল, নিঝুম কে ফোন দিচ্ছি!
মা রাখো তো নিঝুম কে! বিরাট ডাক্তার হয়েছে সে!
রুবার ডাক্তার সুরাইয়া ম্যাম কে কল দিচ্ছি।
মাহি ডাঃ সুরাইয়া কে ফোন দিল।
তিনি বললেন এখনি হসপিটালে নিয়ে যেতে!

গাড়ি বের করতে বলো বুয়া তাড়াতাড়ি, মাহি ফরিদা বুয়াকে বলল।
ফরিদা দৌড়ে নিচে নেমে গেল!
তুমি যাও মা রেডি হয়ে নাও!
সাফিয়া বেগম নিজের রুমে র দিকে ছুটে গেলেন!
মাহি ড্রেস চেঞ্জ করে নিল, রিয়াদ ভাই কে কল করে বলল ব্যাপার টা!
রুবাকে ধরে মাহি বলল, উঠো হসপিটালে যেতে হবে ।
রুবা উঠে বসলো।
মাহি ওকে ধরে দাঁড় করালো!
আমার মনে হচ্ছে ব্লিডিং ও হচ্ছে! সব ঠিক থাকবে তো বলো না ? মাহিকে ধরে রুবা বলল!
কিছু হবে না চিন্তা করো না সব ঠিক থাকবে!

রুবাকে তো বলল, সব ঠিক থাকবে কিন্তু কেন জানি মাহির খুব ভয় হচ্ছে।

রুবাকে ধরে ধরে গাড়িতে তুলল তারা ।
সাফিয়া বেগম পেছনে বসে রুবাকে জড়িয়ে ধরে রাখলেন!
আর এক মনে দোয়া পড়ে ফুঁ দিচ্ছেন!
এর মাঝে তিনি নিঝুম কে ফোন দিল!
নিঝুমের মা ফোন দিল , সাফিয়া বেগম ওদের হসপিটালে আসতে বললেন।

ওদের গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে ডাঃ রিয়াদ দৌড়ে এলো দরজার কাছে! হুইলচেয়ার এ ধরে বসালো রুবাকে সবাই!
মাহি ডাক্তার রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল,ম্যাডাম আসছে রিয়াদ ভাই?
আসছে ।
আগে চল মাহি, আল্ট্রাসাউন্ড টা করিয়ে নিয়ে যাই! রিয়াদ বলল, ম্যাডাম এর সাথে কথা হয়েছে আমার।
ওখানে কে আছে এখন?
শাহানা কে সঙ্গে নিয়ে আসছি ও করবে!.
থেঙ্কস রিয়াদ ভাই!
আরে চুপ করতো ! কথায় কথায় শুধু ধন্যবাদ দেয়।

ওরা সবাই রুবাকে নিয়ে আল্ট্রাসাউন্ড এর রুমে নিয়ে গেল ! তীব্র ব্যথায় রুবা ইউরিন এর প্রেসার আছে কিনা বলতে পারছে না !
মাহি মায়ের দিকে তাকালো , ভয়ে সাফিয়া বেগম কাঁপছে!
মাহি মাকে গিয়ে ধরলো ।
মা মা তাকাও আমার দিকে ! শক্ত হতে হবে তুমি ভেঙ্গে পড়লে হবে না!
আর কত শক্ত হব মাহি ? ফিসফিস করে বললেন সাফিয়া বেগম!
মাহি মা কে ধরে নিয়ে বসিয়ে দিল চেয়ারে।
তখন ই নিঝুম ,নাহার খালা, নিঝুম এর বড় বোন রিয়া আসলো!
খালামনি তার মাকে গিয়ে ধরলো!
নিঝুম ওর পাশে এসে বলল, হঠাৎ এমন অবস্থা হলো কিভাবে?
কালকেই তো ভালো দেখে এলাম!
মাহি বলল, আজ সকালে ও ভালো ছিল ! তারপর নিঝুম কে বলল, তোরা মা কে সামলা আমি ওদিকে যাচ্ছি!
মাহি রুবার কাছে ছুটে গেল!
রুবা র আল্ট্রাসাউন্ড করা শেষ ! মাহি রিয়াদ এর কাছে গিয়ে বলল, ভাবি কিছু বলছে আপনাকে!
রিয়াদ একটু থমকে গিয়ে বলল, চল রুবাকে ম্যাম এর কাছে নিয়ে যাই শাহানা আসছে রিপোর্ট নিয়ে!
ভাই কিছু বলছে শাহানা ভাবি?
চল আগে ম্যাম এর রুমে!

রিয়াদ ভাই সত্যি করে বলেন তো , রিপোর্ট কি আসছে?
মাহি শাহানা এখনো রিপোর্ট লিখছে!
আপনি সঙ্গে ছিলেন বলেন আমাকে!

রিয়াদ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাহির কাঁধে শক্ত করে ধরে বলল, মোলার প্রেগন্যান্সি !

মাহি র হাত থেকে তার ফোন টা ছুটে পড়ে গেল!
মাহি মাহি শক্ত হ ভাই !
মাহি চুপ করে আছে! কোন কথাই বলতে পারছে না!
রিয়াদ মাহিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
মাহি দাঁড়িয়ে গেল, ঘাড় ঘুরিয়ে রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি মাকে কি বলব ভাই?
রুবাকে কি বলব বলেন ?

রিয়াদ মাহিকে জড়িয়ে ধরল! মাহি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না কেঁদে দিল!
ঠিক সে সময় নিঝুম সেখানে ঢুকলো!
কি ব্যাপার ? ও এভাবে কাঁদছে কেন রিয়াদ ভাই ? রুবা কোথায়?
নিঝুম রুবাকে লেবার রুমে নিয়েছে তুই ওখানে যা আমি ওকে নিয়ে আসছি!
কিন্তু ও এভাবে কাঁদছে কেন?
আরে যা না রে ভাই আমি আছি তো এখানে! রিয়াদ ঝাড়ি দিয়ে বলল নিঝুম কে।

নিঝুম দৌড়ে লেবার রুমে র দিকে গেল!

মাহি লেবার রুমে র বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে । খুব অসহায় লাগছে তাঁর ! রিয়াদ ভাই ভেতরে ঢুকলেন!
মাহি কিভাবে যাবে মায়ের সামনে, রুবার সামনে তাই ভাবছে!
তার কাউকে ফেইস করার সাহস নাই!

নিঝুম বের হয়ে এলো লেবার রুম থেকে! মাহির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো!
শক্ত হ মাহি! খালাম্মা কে বলছিস?
মাহি বলল, ও কেমন আছে এখন?
ম্যাম তাড়াতাড়ি ডিসিশন নিতে বলছেন তোকে!
আমি ! আমি কি ডিসিশন নিব ?
আফটার অল তুই ওর হাজব্যান্ড ডিসিশন তো তোকে ই দিতে হবে!
মা কোথায়?
ঐ যে চলে আসছে বলে পিছনে তাকালো নিঝুম!
সাফিয়া বেগম মাহি কে দেখে বলে উঠলেন কি ব্যাপার আমাকে ওখানে বসিয়ে রেখে এলে কিছু বলছো না তোমরা, রুবা এখন কোথায়? সব ঠিক আছে তো?
ব্যথা কমছে তো?
মাহি মায়ের হাত ধরলো!
এদিকে এসে বসো মা!
মামা , মামি রা সব চলে আসছে!
ওর চাচীদের ও দেখা যাচ্ছে!

রিয়াদ এবং ডাঃ সুরাইয়া বের হলেন লেবার রুম থেকে!
মাহি শক্ত করে মায়ের হাত টা ধরলো! যেভাবে ছোট বেলায় ভয় পেল ধরতো ও ।
আজ সে সত্যিই ভয় পাচ্ছে ! কি হবে এখন ! সব শুনে মা কিভাবে রিয়েক্ট করবে?

ডাঃ সুরাইয়া সাফিয়া বেগম এর পাশে এসে দাঁড়ালেন । খালাম্মা আপনি আসেন আমার সঙ্গে !
কি হয়েছে ওরা কিছু বলছে না ডাক্তার?
আসেন আমার রুমে!
ডাঃ সুরাইয়ার সঙ্গে সাফিয়া বেগম ঢুকলেন মাহি , নিঝুম, আর নিঝুম এর মা নাহার ঢুকলো চেম্বার এ।
ডাক্তার সুরাইয়া বললেন, বসেন খালাম্মা।

খালাম্মা রুবার প্রেগন্যান্সি টা তে কম্লিকেশন তো আগেই ছিল জানেন । ওর যে সমস্যা এটাকে বলে মোলার প্রেগন্যান্সি ।
এক হাজার জনের মধ্যে একজনের হতে পারে এই সমস্যা। দূর্ভাগ্যক্রমে রুবা র প্রেগন্যান্সি টা সেই।
বাবা এবং মায়ের ক্রোমোজোম এ সমস্যা থাকলে এমন হয়।
এক্ষেত্রে ডিম্বাণু থেকে কোন ভ্রণের সৃষ্টি হয় না হলেও সেটা অস্বাভাবিক থাকে।
রুবার পার্সিয়াল মোলার প্রেগন্যান্সি । এধরনের প্রেগন্যান্সি তে প্লাসেন্টাল টিস্যু থাকতে পারে তাই ভ্রণের গঠন তৈরি হয় কিন্তু বেশিদিন সারভাইব করতে পারে না ।
শুরুর দিকে স্বাভাবিক সব লক্ষন ই থাকে ওর ও ছিল ! বমি হ‌ওয়া , খেতে ইচ্ছা না করা সব ।
কিন্তু আজকে পেইন এবং ব্লিডিং হচ্ছে যা ও সহ্য করতে পারছে না !
আমি অবাক হচ্ছি এত দিন পর এটা ধরা পড়লো দেখে । আগের সোনোগ্রাফি রিপোর্ট গুলোতে এটা আসে নাই !
যাই হোক খালাম্মা খিঁচুনি টাইপ কিছু শুরুর আগে আমাদের ডিসিশন নিতে হবে ।
সাফিয়া বেগম আবাক হয়ে বললেন, আমি কিছুই বুঝলাম না ! বাচ্চা টা নেই?
মাহি এসে মাকে জড়িয়ে ধরলো , মা !
মাহি তুমি বলো?
মাহি মাথা নিচু করে ফেলল !
ডাক্তার সুরাইয়া বললেন, খালাম্মা সহজ ভাষায় বললে এটা কোন প্রেগন্যান্সি ই ছিল না রুবার । সরি।
সাফিয়া বেগম এর এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো পৃথিবীটা দুলে উঠলো!
তিনি নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছেন কিন্তু পারছেন না!
মাহি আমি রুবার কাছে যাব !
মা এখন তুমি যেও না ।
প্লিজ বাবা আমাকে যেতে দে!
ও আমাকে খুঁজছে হয়তো!
আমি যাচ্ছি ওর কাছে তুমি থাকো এখানে ।
ও বাঁচবে তো মাহি?
মা রুবার কিছু হবে না আমি আছি মা বলে মা কে জড়িয়ে ধরলো মাহি।

রুবাকে ওটিতে নিয়ে গেছে ডিএন্ডসি করা হবে ! খালা আর মামিদের কাছে মা কে রেখে মাহি ওটির ড্রেস পড়ে এসে দেখে নিঝুম ও ওটি ড্রেস পড়ে ওটিতে ঢুকছে।
মাহি কে দেখে বলল, খালাম্মা আমাকে ভেতরে যেতে বলল।
মাহি মাথা নাড়ল শুধু!
ওটিতে ঢুকে মাহি দেখে এনেস্থেশিয়া দেয়া হয়ে গেছে রুবাকে !
অচেতন রুবা শুয়ে আছে !
মাহি পাশে গিয়ে ওর কপালে হাত রাখলো! কত সুন্দর একটা মুখ!
কষ্টের তীব্রতায় কেমন ফেকাশে হয়ে গেছে!
মাহি রুবার অচেতন হাতটা ধরে আছে! রিয়াদ ভাই এসে মাহির কাছে ফিসফিস করে বললেন, শক্ত হ ভাই !
মাহি পুরো সময় টা রুবার হাত ধরেই দাঁড়িয়ে রইল!

নিঝুম একটু দূরে দাঁড়িয়ে ওদের দেখছে, কোথায় যেন বুকের কাছে চিনচিন ব্যথা হচ্ছে ওর!

ওটি থেকে সরাসরি রুবাকে পোস্ট অপারেটিভ রুমে শিফট করতে নিল মাহি বলল, ম্যাম আমি সারারাত যেহেতু থাকব ওকে কেবিনে নিয়ে যাই ? প্লিজ । আমি দেখব ওকে ।
ডাক্তার সুরাইয়া বললেন, ঠিক আছে।

সেখানে একটু সময়ের জন্য সাফিয়া বেগম কে নিয়ে এলো মাহি !
তোমার বাবাকে কি বলব মাহি বলো তো? এই মেয়ে টা আর কত কষ্ট পাবে ,আর কত ! তিনি কাঁদছেন!
শিহাবের কোন অস্তিত্ব ই র‌ইলো না মাহি! আমি, তোমার বাবা কত আশা করে ছিলাম একটা শিশু আসবে যাকে দেখে সব ঠিক হয়ে যাবে।
মাহি মায়ের কাছে ফিসফিস করে বলল , তুমি, আমি ,বাবা , রুবা আমরাই ভাইয়ার ফেলে যাওয়া চিহ্ন মা, আর কোন কষ্ট পেতে দিব না রুবাকে আমরা ! তুমি চিন্তা করো না !
অচেতন রুবার কপালে চুমু খেলেন সাফিয়া বেগম।
থাকতে চেয়েছিলেন তিনি ! মাহি জোর করে বাসায় পাঠালো ।
ওর খালা , ছোট মামি , চাচি নিয়ে যাচ্ছে মা কে !
নিঝুম তুই কি থাকবি রাতে ? নিঝুমের মা জানতে চাইলেন।
নিঝুম বলল, তোমরা যাও আমি আসছি পরে।

মাহি তার খালাকে বলল, তোমরা থেকো মায়ের সাথে আজ। আর ঘুমের ওষুধ একটা খাইয়ে দিও মা কে !
এখন মা কে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে আমার!
তুই চিন্তা করিস না আমরা আছি!
তুই রুবার পাশে থাক! যাহ!

ওদের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে মাহি রুবার‌ কেবিনে আসলো! রিয়াদ তার স্ত্রী ডাঃ শাহানা কেবিনে ছিল!
থেঙ্কস রিয়াদ ভাই , ভাবি অনেক কষ্ট করলেন আপনারা!
মাহি এসব কি বলছিস তুই!
তোর এত বড় বিপদে পাশে থাকব না আমরা!
শোন যে কোন সময় দরকার পড়লেই কল দিবি মনে থাকবে তো?
থাকবে!
সবাই একে একে চলে গেলে , মাহি রুবার মাথার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো । কাপালে হাতটা ছোয়ার সঙ্গে সঙ্গে খুব কান্না পেল তার! কি একটা ঘটনা হলো। যে বাচ্চা র জন্য এত কিছুতার কোন অস্তিত্ব ই নেই!
দরজায় শব্দ হতেই মুখ ফিরিয়ে চোখ টা মুছে নিলো মাহি !
নিঝুম এসে ঢুকলো !
মাহি ফিসফিস করে বলল, তোর আজ নাইট শিফট আছে?
না !
তাহলে অনেক রাত হয়ে গেল তো বাসায় চলে যা ।
যাব!
দুজনেই কোন কথা পাচ্ছে না বলার ! চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে!
মাহি স্যালাইন টা র দিকে তাকিয়ে আছে!
নিঝুম মাহির পাশে দাঁড়িয়ে বলল, তুই কিছু খেয়েছিস মাহি?
ক্ষুধা নেই!
আবার দুজনেই চুপ।

কিছুক্ষণ পর নিঝুম বলল, আসি আমি !

মাহি শুধু বলল হুঁ!

শোন নিঝুম ?

নিঝুম ঘুরে তাকালো !

রুবার উপর কোন রাগ পুষে রাখিস না দেখছিস তো ও কতটা শূন্য! কথাটা বলার সময় মাহি র চোখ ভিজে গেল!

তুই আমাকে এতটা নিষ্ঠুর ভাবিস বুঝি? অবাক হয়ে নিঝুম তাকিয়ে আছে মাহির দিকে!

মাহি মাথা নেড়ে বলল ,না !

নিঝুম রুম থেকে বের হয়ে এলো ! দড়জার এপাশে গিয়ে দাঁড়ালো সে, ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে । মনে মনে বলল, রুবা কোথায় শূন্য রে মাহি ? সব কেড়ে নিয়েও ভাগ্য ওকে অনেক কিছু দিচ্ছে । তোর চোখে আমি ওর জন্য ভালোবাসা দেখছি একটু একটু করে !
তাহলে আর রুবা কোথায় শূন্য হলো রে? শূন্য তো আমি ! তোর ভালোবাসা টাও আমার ভাগে আর নেই যে !
কাঁদতে কাঁদতে নিঝুম করিডোর দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here